কথা দিলাম পর্ব -৩০+৩১

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

এমন সময়……আধভিকের একটা কথা কানে আসলো। যেটা ওর থেকে দূরে দাঁড়ানো একটা গুন্ডা অপরজন কে বলছিল।

__একদিকে ভালোই হলো। মেঘ না চাইতেই জল! বস বলেছিলো মেয়েটাকে ধরে আনতে ছেলেটাকে মেরে। এখানে মেয়েটাকে তো নিজের হাতেই তুলে দিলো ছেলেটা। আমাদের আর কিছু করতেই হলো না। ভালোই হয়েছে বস এখানে আসেনি, এসে করতোই বা কি?

__দাদা সর…

কথাটা শেষ করার আগেই যে গুন্ডাটা কথা বলছিলো তাঁর মাথায় আঘাত লাগলো। মাথার পিছনে হাত রেখে পিছন ফিরে তাকাতেই সে দেখলো, আধভিক হকি স্টিক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেটা তাঁরাই নিয়ে এসেছিলো। গুন্ডাটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্যজন আধভিককে মারতে যায় আর আধভিক সাথে সাথে হাতে থাকা হকি স্টিকটা দিয়ে সপাটে গুন্ডাটার মুখে মারে।

এরপর আধভিকের চোখ যায় সামনের দিকে। সিয়ারাকে নিয়ে লোকটা বেশ দূরে চলে গেছে। আধভিক চোখ মুখ শক্ত করে ওদের দিকে জোর পায়ে হাঁটা শুরু করে। সিয়ারা এখন আর পিছন দিকে তাকিয়ে নেই। ও ধরেই নিয়েছে ওর পরিণতি খুব ভয়ানক হতে চলেছে। আধভিক যে ওকে এতটা অবিশ্বাস করবে, নীচু মানসিকতার মনে করবে এটা ও ভাবেনি। এসব ভাবতেই ভাবতেই হঠাৎ ওর হাতে একটা শোঁ করে হাওয়া অনুভব হলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর হাত ধরে থাকা গুন্ডাটা চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। গুন্ডাটার পাশে একটা হকি স্টিক পরে আছে। সিয়ারা পিছন দিকে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে আধভিক এসে দাঁড়িয়েছে।

আধভিক পরে থাকা গুন্ডাটার দিকে তাকিয়ে আছে আর সিয়ারা আধভিকের দিকে। ওর মনে হচ্ছে আধভিক ওর কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো শুনেই ওকে বাঁচাতে এসেছে। এই বিষয়ে সিয়ারা আধভিককে প্রশ্ন করতে গেলেই আধভিক সিয়ারার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ওর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। সিয়ারা একটু উঁকি দিয়ে দেখে অনেকগুলো গুন্ডা ওদের দিকেই তেড়ে আসছে।

আধভিক: এক পা নড়বে না এখান থেকে। আসছি আমি।

সিয়ারা: (বাঁধা দিয়ে) ওরা অনেকজন আধভিক। তোমার ক্ষতি করে দিতে পারে ওরা।

আধভিক: আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে কি? করার চেষ্টা করেছে। এর ফল তো ভুগতেই হবে। (দাঁতে দাঁত চেপে)

সিয়ারা আধভিকের কথার মানে বুঝলো না। গুন্ডাগুলো সামনে এসে ওদের সাথীদের মাটিতে লুটিয়ে পরে থাকতে দেখে আধভিককে হুমকির সুরে বললো,

__তুই একা আমাদের সাথে লড়তে পারবি বলে ভাবছিস? এক নিমিষে তোকে শেষ করে দেবো আমরা। অবশ্য এটাই আমাদের বসের আদেশ।

আধভিক কোনো কথা না বলে শুধু ওদের দিকে হাত এগালো। সঙ্গে সঙ্গে সবাই ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে গেলে আধভিক বাঁকা হেসে নিজের জ্যাকেটের স্লিভস গুটিয়ে ফেলে। তারপর ভ্রু কুঁচকে না বোধক মাথা নেড়ে জ্যাকেটটা খুলে সিয়ারার হাতে দিয়ে, হাত বাড়িয়ে আঙুলের ইশারায় ওদের আহ্বান জানায়। এরফলে গুন্ডাগুলোও তাঁর দিকে তেড়ে আসে, আধভিক এগিয়ে গিয়ে হকি স্টিকটা তুলে নিয়ে এক এক করে মারতে শুরু করে।

সিয়ারা একটু পিছিয়ে নিজের ফোন বার করে আভাস বাবুকে ফোন করে সবটা জানালে উনি জানান যে ওনাদের আস্তে দেওয়া হচ্ছে না। “সীমানা” অর্থাৎ যেখান থেকে নেপাল বর্ডার দেখা যায় ওখানে একটা গুন্ডার গাড়ি ওদের আটকে রেখেছে। সিয়ারা আর কিছু বলবে তার আগেই সিয়ারার চোখ যায় আধভিকের দিকে আর ও দেখে তিন চার জন মিলে আধভিককে ঘেরাও করে একসাথে আক্রমণ করেছে। সিয়ারা কিছু বলবে তার আগেই লাইন কেটে গেলো। টাওয়ার খুব অল্প থাকলেও কথা হচ্ছিলো, কিন্তু ওর মনে হলো কেউ ফোনটা কেটে দিলো। সেসব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে সিয়ারা চিৎকার করে উঠলো আধভিকের নাম ধরে,

সিয়ারা: আধভিক!!

আধভিক উপুড় হয়ে মাটিতে পরে যাওয়ায় সেই তিন চার জন মিলে ক্রমাগত আধভিকের পিঠে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। সিয়ারা ঘাবড়ে গিয়ে কিছু না ভেবে আধভিকের দিকে দু পা এগিয়ে গেলেই আধভিক ইশারায় আসতে বারণ করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সোজা হয়ে পাশে গড়িয়ে গিয়ে নিজের দু হাত সামনে ক্রস করে নিয়ে ওদের হকি স্টিকগুলো আটকে দেয় আর বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়। গুন্ডাগুলো পিছিয়ে যেতেই আধভিক উঠে দাঁড়ায় আর আবারও মারতে শুরু করে। সবাইকে মেরে আধভিক দাঁড়িয়ে থাকলে দেখে যেই ছেলেটা সিয়ারার হাত ধরেছিলো সে উঠে দাঁড়িয়েছে।

সিয়ারা: (আধভিকের বাহু জড়িয়ে) আধভিক, চলো এখান থেকে। অনেক হয়েছে। ওদিকে ওদের যে হেড তাঁরও জ্ঞান ফিরে আসছে। চলো…

আধভিক সিয়ারার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে ওই গুন্ডাটারদিকে রীতিমতো তেড়ে গেলো। ও পালাতে চাইছিল কিন্তু আধভিক ওকে পিছন থেকে ধরে মারতে শুরু করলো। মারতে মারতে মাটিতে ফেলে ওকে বললো,

আধভিক: আমার জীবনের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করেছিস তুই। (হাতটা ভেঙে দিয়ে)

গগণবিদারী চিৎকার শুনে সিয়ারা নিজের কান চেপে ফেলে দু হাত দিয়ে। কিন্তু আধভিক? তাঁর এসব বিষয়ে কোনো হুঁশ নেই। সে আবারও বললো,

আধভিক: তোর বসকে জানিয়ে দিবি সাহস থাকলে আমার সামনা সামনি আসতে। আমার জীবনের দিকে যদি দ্বিতীয়বার হাত বাড়ায় তাহলে তোদের যা অবস্থা করেছি তার থেকেও বহু গুণে খারাপ অবস্থা করবো তোদের বসের।

কথাটা বলে আধভিক উঠে দাঁড়িয়ে পিছিয়ে যায়। কিন্তু আধভিক খেয়াল করেনি যে, পিছিয়ে গিয়ে ও একেবারে রাস্তার ধারে যে মাটির অংশ আছে সেখানে চলে গেছে। পিছনেই ঢালু জমি এবং লম্বা লম্বা গাছ। আধভিকের চোখ যায় গুন্ডাগুলোর যে হেড তাঁর দিকে। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছে। তাঁর উদ্দ্যেশ্যে আধভিক চিৎকার করে বলে,

আধভিক: আর এটাও বলে দিস যে, যতটা বোকা তোদের বস আধভিক রায় চৌধুরীকে ভাবে ততটা বোকা আধভিক রায় চৌধুরী নয়। এতো সহজে ওর পাতা ফাঁদে পা দেওয়ার ছেলে আমি নই।

সিয়ারা: আধভিক!!

হুট করে সিয়ারার ডাক শুনে আধভিক সিয়ারার দিকে তাকাতে না তাকাতেই সিয়ারা ওকে একপ্রকার ধাক্কা মারে পিছন দিকে। আধভিক সামনে এগিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পরতে পরতেও পরে না। তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে দেখে সিয়ারা পা পিছলে নীচে পরে গেলো।

আধভিক: সিয়ারা!!

আধভিক সিয়ারার হাত ধরতে এগিয়ে আসলেও হাত ধরতে পারে না। ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টির কারণে ধস নেমেছে মাটির অংশ জুড়ে কারণ নীচটা পুরোই মাটির। এবং বেশ গভীর। আধভিকের হাত পা কাঁপতে শুরু করে। কানে সিয়া রার কিছুক্ষণ আগে বলা কয়েকটা কথা বাজতে থাকে,

“অনেক পস্তাতে হবে তোমাকে এরজন্য আধভিক, অনেক! এরপরে তুমি আর চেয়েও আমাকে পাবে না। চেয়েও না! আজ থেকে আমি তোমার জন্য মৃত।”

আধভিক দু হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পরে। গুন্ডাদের যে হেড ছিলো সে ওখান থেকে কোনো মতে পালিয়েছে। আধভিক নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে “সিয়ারা” বলে।

অন্যদিকে,

যেই মুহুর্তে সিয়ারা এবং আধভিকের গাড়ি আটক করা হয় ঠিক সেই মুহুর্তে এদিকে আভাস বাবুদের গাড়ি আটক করা হয় “সীমানা” তে। সিয়ারার ফোন আসার পরেই হঠাৎ করে আভাস বাবুর ফোন কেড়ে নিলে উনি রাগে গর্জে ওঠেন

আভাস বাবু: দেখুন, আপনি আমাদের ছেড়ে দিন। আমাদের শুটিংয়ে যেতে হবে। কেন আপনারা আমাদের আটকে রেখেছেন?

__কি বললি? আমাদের সাথে গরম নিয়ে কথা? এক তো ফোন করেছিস বারণ করার পরেও, এখন আবার গরম দেখিয়ে কথা বলছিস? তোকে তো…

আভাস বাবুকে বুকে হাত দিয়ে একটা ধাক্কা মারে একটা গুন্ডা। আভাস বাবু টাল সামলাতে না পেরে পিছন দিকে পিছিয়ে গিয়ে পরে যেতে নেন কিন্তু পরেন না। ওনাকে একজন ধরে নেয়। এই একজন টা কে তা জানতে গিয়ে আভাস বাবু পিছনে তাকাতেই দেখেন, দেবাংশু ওনাকে পিছন থেকে ধরেছে।

দেবাংশু: অনেক্ষণ ধরে তোদের বাড়াবাড়ি দেখছি। ভেবেছিলাম কিচ্ছু বলবো না কিন্তু এইবার দেখছি না বললে হবে না।

__কি করবি তুই? হ্যাঁ? কি করবি?

গুন্ডাটা দেবাংশুর কলারে হাত দিলে দেবাংশু গুন্ডাটার হাতের দিকে তাকিয়ে এমন ঘুষি মারে যে সে উপুড় হয়ে রাস্তায় গিয়ে পরে। দেবাংশুর দিকে পিছনে ফিরে তাকালে দেখে দেবাংশু জ্যাকেটের হাতা ফোল্ড করছে। গুন্ডাটা ওঠার আগে ওর একজন সাথী কে চোখ দিয়ে ইশারা করে উঠে দাঁড়ায়। দেবাংশু ওর দিকে তেড়ে গেলে সাথে সাথে পিছন দিয়ে দিয়ারার চিৎকার শুনতে পায়।

দিয়ারা: দেব দা!!

দেবাংশু পিছন না ফিরেই বুঝতে পারে দিয়ারাকে ধরার জন্যেই সে ইশারা করেছিলো। দেবাংশু ধীরে ধীরে পিছন ফিরে দেখে দিয়ারার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে একজন। দেবাংশু থেমে যায়, আর তখনই ও যেই গুন্ডাটাকে মেরেছিল সে এসে ওকে ঘুষি মারে। দেবাংশু চুপচাপ সেটা মেনে নেয়। আরেকবার ঘুষি মারলে দেবাংশু পুরোপুরি দিয়ারার মুখোমুখি হয়। দিয়ারার কান্না দেখে দেবাংশু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকায় জানো ভস্ম করে ফেলবে এখুনি। ছেলেটা সেটা দেখে বাঁকা হেসে দেবাংশুর দিকে বন্দুক তাক করে দিয়ারার গলা এক হাতে পেঁচিয়ে। ইশারা করে দেবাংশুকে পিছিয়ে যেতে কিন্তু দেবাংশু বাঁকা হাসলে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলে এবং নিমিষে দেবাংশু নিজের হাত দিয়ে ছেলেটির হাতে মারে। ফলে বন্দুকটা ছিটকে পরে যায় আর দেবাংশু দিয়ারাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে সবাই যেদিকে দাঁড়িয়ে সেদিকে চলে যায়।

__তোকে আমি শেষ…

কথা শেষ করার আগেই একটা ফোন আসে। সাথে সাথে গুন্ডাটা বলে,

__এই সবাই গাড়িতে ওঠ!!

তাড়াহুড়ো করে ওরা গাড়িতে উঠে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়। কেউ কিছুই বুঝতে পারে না ওরা কেন এভাবে চলে যায়।

দেবাংশু: ঠিক আছিস তুই?

দিয়ারা: হ্যাঁ!

আভাস বাবু: চলো, চলো। সিয়ারা আমাকে ফোন করে জানালো যে ওদের উপরও নাকি আক্রমণ হয়েছে। তাড়াতাড়ি চলো।

আভাস বাবুর কথা শুনে সবাই অবাক হলেও দেরী করলো না। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো এবং বেরিয়ে পরলো। বেশি জোরে গাড়ি চালাচ্ছে না ড্রাইভার কারণ বৃষ্টি পরছে। কিছুটা দুর এগিয়ে আসতে না আসতেই হঠাৎ সবাই সিয়ারার নাম ধরে আধভিকের চিৎকার শুনতে পায়। আভাস বাবু বলেন,

আভাস বাবু: ওই যে সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওটার পিছনেই গাড়ি দাঁড় করাও।

সবাই দেখতে পায় একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওই গাড়ির পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই সবাই তাড়াতাড়ি নেমে পরে গাড়ি থেকে। আভাস বাবু একটু এগোতেই যা দেখেন তাতে চিৎকার করে বলে ওঠেন,

আভাস বাবু: ভিকি?? না!!

আভাস বাবু এগোতে নিলেই দেবাংশু ওনাকে ধরে নেয় কারণ পাশ দিয়ে প্রচুর গাড়ি যাচ্ছে এবং আসছে। এক তো ওয়ান ওয়ে রাস্তা তার মধ্যে এতক্ষণ সব গাড়ি বন্ধ ছিলো। এর উপর বৃষ্টির মধ্যে তাঁরা একদিকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সব মিলিয়ে খুব সাবধানে এগোতে হবে নাহলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আভাস বাবু: দেবাংশু আমাকে ছাড়ো, ভিকি! ভিকি ওই ঢালু রাস্তায় নেমে গেলো। ওর যদি কিছু হয়ে যায়?? ছাড়ো আমায়।

দেবাংশু: আংকেল এখন এমন করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। আপনি দাঁড়ান আমি দেখছি। দিয়া তুই সাবধানে নিয়ে আয় আংকেল কে।

আভাস বাবু কে দিয়ারার কাছে রেখে দেবাংশু এগিয়ে যায় কিন্তু আধভিককে দেখতে পায় না। বৃষ্টি থামার নাম করছে না, আর এই বৃষ্টিতে জঙ্গলের মধ্যে কিছু স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে না। এইখান থেকে গড়িয়ে যদি পরে যায় তাহলে অনেকটা ঢালু জমি বেয়ে আরেকটা রাস্তায় উঠবে। পাহাড়ের খাঁজ কেটে রাস্তা হওয়ায় একটাই রাস্তা। যেই রাস্তায় ওরা দাঁড়িয়ে আছে সেই রাস্তাটাই নিচে নেমে গেছে। এখন যদি গড়িয়ে গিয়ে কেউ ওই রাস্তায় গিয়ে ওঠে তাহলে যেভাবে গাড়ি চলাচল করছে তাতে নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। আর বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভার হয়তো দেখতেই পাবে না সেভাবে।

দেবাংশু: আধভিক যেভাবে চিৎকার করলো সিয়ার নাম ধরে তাতে আমি নিশ্চিত বড়ো কিছু ঘটেছে। তার উপর আভাস আংকেলও তো দেখেছে আধভিক নিজে নীচে নেমে গেছে। তার মানে সিয়া এইখান দিয়ে পরে গেছে..??

দেবাংশুর মন আঁতকে উঠলো রীতিমতো। কিছুক্ষণ আগে সে যেই হিসেবটা করলো তাতে সিয়ারা যদি সত্যি পরে যায় তাহলে তো তাহলে তো…সব শেষ!

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বিঃদ্রঃ গল্পের ট্র্যাক অনুযায়ী অর্থাৎ এতদূর গল্প যেভাবে এগিয়েছে তাতে গল্পটার স্যাড এন্ডিং হওয়া উচিত পাঠকগণ।’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দিয়ারা গিয়ে দেবাংশুকে কাঁধে হাত দিয়ে ডাকতেই দেবাংশু চমকে উঠলো। দিয়ারাকে কাঁদতে দেখে দেবাংশু পাশে তাকাতেই দেখলো আভাস বাবু রাস্তায় বসে আছেন নিস্তেজ হয়ে। ওনার মাথায় সিয়ারার কথাগুলো ঘুরছে,

“জানি না হয়তো শেষবারের জন্য আপনাকে এই ডাকটা ডেকে নিলাম। শুধু এটুকু বলবো, আপনার ছেলে আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে, সেভাবে ভালো না বাসলেও তাঁর থেকে কম ভালোবাসিনি আমি। আফসোস, ও আমাকে বুঝলো না।”

দেবাংশু ওনার কাছে গিয়ে বসতেই উনি বললো,

আভাস বাবু: আমার ছেলেটা এতো অবুঝ কেন বলো তো? মেয়েটা কত চেষ্টা করছিল ওকে সবটা বলার, সবটা বোঝানোর কিন্তু ও বুঝলো না। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, আজকে সকালে ওর কথা শুনেই আমার মনটা কেমন জানো কু ডাকতে শুরু করেছিল। মনে হচ্ছিলো সিয়া মা হয়তো অনেক দূরে চলে যাবে!

আভাস বাবু কানে সিয়ারার কথাগুলো সমানে বাঁজছে।

“ধরে নিন না আপনার ছেলে যাকে ভালোবেসে ছিলো সে একজন বিশ্বাসঘাতক ছিলো। মরে গেছে সে, আর ফিরবে না।”

আভাস বাবু: সিয়া মা যদি সত্যি আর না ফেরে তাহলে আমার ছেলেটার কি হবে? আজ ও যদি নিজের দোষে সিয়া মাকে হারায় তাহলে যে ও নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না। এতদিন যা’ও আটকে রেখেছিলাম তা’ও আর পারবো না। শেষ করে দেবে ও নিজেকে। দুটো জীবন শেষ হয়ে যাবে আর এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম।

আভাস বাবু ডুকরে কেঁদে উঠলে দেবাংশু নিজেকে শক্ত করে আভাস বাবুকে ভরসা দিয়ে বলে,

দেবাংশু: আমি নীচে যাচ্ছি আংকেল। আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হবে।

দিয়ারা: এইভাবে একের পর এক তোমরা যদি খুঁজতে যাও তাহলে কীভাবে হবে? ভিকি দা সেই যে নেমেছে এখনও ফিরলো না। এর থেকে বরং পুলিশকে ফোন করো। তুমি যেও না প্লিজ। (কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)

দেবাংশু: আমি এদিক দিয়ে নামবো না রাস্তা দিয়ে যাবো। কিচ্ছু হবে না আমার, আসছি আমি। (দিয়ারাকে আশ্বাস দিয়ে)

দেবাংশু উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক পা এগোতেই দুর থেকে কিছু একটা দেখতে পেলো। বৃষ্টির গতির পরিমাণ কমে গেছে অনেক। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এখন শুধু কিন্তু কুয়াশা ছেয়ে আছে তাই সে ঠিক দেখতে পাচ্ছে না। নিজে আর একটু এগিয়ে যেতেই দেবাংশু বুঝতে পারলো আর একটু জোর দিয়ে বললো,

দেব: দিয়া! আধভিক আসছে।

দেবাংশুর কথা শুনে দিয়ারার সাহায্য নিয়ে আভাস বাবু উঠে দাঁড়ালেন। আভাস বাবু দেবাংশুর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলেন আধভিক অনেকটাই এগিয়ে এসেছে তাঁদের দিকে। আধভিক নিজের কোলে সিয়ারাকে নিয়ে এগিয়ে আসছে। ওদের কাছে এসেই আধভিক বললো,

আধভিক: বেশি কিছু হয়নি। মাথায় চোট পেয়েছে। ডক্টরকে কল করে হোটেলে ব্যাক করতে হবে রাইট নাও, ফাস্ট!! এখানে থাকাটা ঠিক হবে না বেশিক্ষণ।

আধভিকের কথার কেউ অমান্য করলো না এবং তাড়াতাড়ি সেই গাড়িতে উঠে পড়লো যে গাড়িতে আভাস বাবুরা ছিলেন। গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দেয় ওরা সবাই। পুরোটা রাস্তা আধভিক সিয়ারার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে রাখে।

তিন ঘণ্টা পর,

সিয়ারা নিজের রুমে শুয়ে আছে। দিয়ারা গিয়ে চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছে সিয়ারার ড্রেস। এখন ডক্টর চেক আপ করছেন। আধভিক এখনও ভেজা গায়েই দাঁড়িয়ে আছে সিয়ারার ঘরের বাইরে, লবিতে একটা জানলার বাইরে তাকিয়ে। সেই সময় আভাস বাবু ফ্রেশ হয়ে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

আভাস বাবু: কীভাবে পেলে ওকে?

আধভিক একটু নড়ে চড়ে উঠে বলতে শুরু করলো,

ফ্ল্যাশব্যাক……………………………….

আধভিকের মাথায় আসে যে এখান থেকে নীচে গড়িয়ে গিয়ে মেইন রাস্তায় উঠবে সিয়ারা। তখন কোনো গাড়ি চলে এলে…আর ভাবতে পারলো না আধভিক। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে যে জায়গাটুকু ধসে গেছে, ওই জায়গাটার পাশ দিয়ে নামতে শুরু করলো। তাড়াহুড়ো করায় আধভিকের পা পিছলে যায় এবং ও গড়িয়ে পরে যেতে থাকে কিন্তু বাঁচার জন্য চট জলদি একটা গাছ ধরে নেয়। ধীরে ধীরে গাছটা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখতে থাকে সিয়ারাও গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে আটকে গেছে কি না। কিন্তু দেখতে না পাওয়ায় আধভিক আবারও নীচে নামে।

আধভিক: সিয়ু কোথায় তুমি? আ’ম স্যরি! তোমার কথা না শুনে আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। বাট আজকে যা হয়েছে সেটা, সেটা….

আধভিকের হঠাৎই চোখ গেলো রাস্তার উপর। সে প্রায় নীচে নেমে এসেছে তাই রাস্তা দেখা যাচ্ছে এখন। আধভিক দৃশ্যটা দেখা মাত্রই একপ্রকার ছুটলো কারণ সিয়ারা রাস্তার উপর অচৈতন্য অবস্থায় পরে আছে। যেকোনো সময় গাড়ি চলে আসতে পারে। আধভিক গিয়ে সিয়ারার কাছে পৌঁছতেই পিছনে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি আসছে। সাথে সাথে সিয়ারাকে টেনে নিয়ে পিছনে সরে এলো ও।

আধভিক: এই সিয়ু, সিয়ু! এই জান, চোখ খোলো না?

আধভিক সিয়ারার গালে হাল্কা ভাবে থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকতে থাকে। সিয়ারার চোখে মুখে বৃষ্টির জল পরায় সিয়ারা কপাল কুঁচকে পিটপিট করে চোখ খুলে আধভিকের দিকে তাকায়। প্রথম দেখায় সব ঝাপসা লাগলে চোখ বন্ধ করে আবারও চোখ খুলতেই সিয়ারা স্পষ্ট আধভিককে দেখতে পায় কিন্তু কিছু বলার আগেই নিমিষে সিয়ারার চোখের সামনে আবারও সব ঝাপসা হয়ে যায়।

সিয়ারাকে চোখ খুলতে দেখে আধভিক স্বস্তি পায় কিন্তু আবারও সিয়ারা অজ্ঞান হয়ে গেলে আধভিক লক্ষ্য করে সিয়ারার কপালে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো উপর থেকে গড়িয়ে পরার সময় কোনো পাথরে আঘাত পেয়েছে। আর সেই কারণেই হয়তো গতি হারিয়ে মাঝ রাস্তায় না উঠে, রাস্তার একটা পাশে এসে পরেছিলো। আধভিক কান্নারত অবস্থায় সিয়ারার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

আধভিক: আ’ম রিয়েলি রিয়েলি স্যরি সিয়ু! আমি ভাবিনি এতো কিছু ঘটে যাবে। আমি তোমার সব কথা শুনবো জান, সব কথা। আমার ভুল হয়ে গেছে অনেক বড়ো। আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি অতীতকে আগলে রেখে বর্তমানকে অবহেলা করেছি। আর না, আমি আর তোমাকে কষ্ট দেবো না, অবহেলা করবো না। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ! তোমাকে ছাড়া বাঁচা, সত্যি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আধভিক সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সিয়ারাকে কোলে তুলে নেয়। হাঁটতে থাকে রাস্তার একদম পাশ ধরে। ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে যখন দেখে বৃষ্টি তাঁর গতি হারিয়েছে তখন সে নিজের গতি বাড়ায়। দূর থেকে ধীরে ধীরে ওর চোখের সামনে স্পষ্ট হয় দেবাংশু দাঁড়িয়ে আছে এবং ওর পিছনে দিয়ারা আর ওর ড্যাড আভাস বাবু।

প্রেজেন্ট………………………………..

আধভিক একটা হতাশা সহিত নিশ্বাস ছাড়ে। আভাস বাবু আধভিকের অবস্থা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছেন সে অনুতপ্ত ভীষণ পরিমাণে। তবে কি এইবার সব ঠিক হবে? নাকি আবারও এলোমেলো হয়ে যাবে সব?

দিয়ারা: ভিকি দা!

আধভিক পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দিয়ারাকে নিজের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,

আধভিক: সিয়ু ঠিক আছে দিয়া? জ্ঞান ফিরেছে ওর?

দিয়ারা: হ্যাঁ ঠিক আছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। দেবদা আছে ওর কাছে।

আধভিক: আমি দেখা করে আসছি।

আধভিক সিয়ারার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই দিয়ারা আধভিকের বাহু ধরে ওকে বাঁধা দিলো। আধভিক দিয়ারার দিকে তাকাতেই দেখলো দিয়ারা নীচের দিকে তাকিয়ে আছে।

আধভিক: আমাকে আটকাচ্ছিস কেন দিয়া? যেতে দে আমায়।

দিয়ারা: যাওয়ার আগে আমার কথাগুলো শুনে যাও ভিকিদা।

দিয়ারার এমন গাম্ভীর্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর শুনে আভাস বাবু ও আধভিক দুজনেই অবাক হয়। তবে আধভিক এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না তাই দিয়ারার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

আধভিক: আমি তোর সব কথা পরে শুনবো। আগে আমি সিয়ুর সাথে দেখা করতে চাই।

দিয়ারা: দি তোমাকে দু বছর আগে নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে যায়নি ভিকিদা। ও বাধ্য হয়েছিলো তোমাকে ছেড়ে যেতে।

দিয়ারার কথাটা আধভিকের কানে আসতেই আধভিকের পা থেমে যায় নিজের জায়গায়। সঙ্গে সঙ্গে আধভিকের কানে কিছু মুহুর্ত আগে সিয়ারার কথা ভেসে ওঠে।

“আমি তোমাকে দুবছর আগে নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে যাইনি আধভিক। বাধ্য হয়েছিলাম তোমাকে ছেড়ে যেতে।”

আধভিক: তুই জানিস এই বিষয়ে?

দিয়ারা: হ্যাঁ জানি আর তোমাকেও জানাতে চাই। অনেক তো এড়িয়ে গেলে, এইবার সত্যের মুখোমুখি তোমাকে হতে হবে।

দিয়ারা এক এক করে সবটা বলতে শুরু করে ঠিক তেমন ভাবে, যেমন ভাবে সিয়ারা ওকে বলেছিলো ওর সাথে দেখা হওয়ার দিন। যেই মুহুর্তে সে উল্লেখ করছিলো, ঠিক কীভাবে সিয়ারা মায়ের কাছে তাঁর ভালোবাসার ভিক্ষা চাইছিলো, সেই সময় দিয়ারার চোখের কোণ হয়ে, গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল।

সবটা শোনার পর আধভিক পিছিয়ে যায়। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে গাল হয়ে। মূহুর্তেই তা আড়াল করে নেয় আধভিক।

দিয়ারা: দি এই কথাগুলো তোমাকে বলার চেষ্টা করছিলো সেই পার্টির দিন থেকে। ইভেন পার্টির দিন ও জেনে বুঝে ওরকম একটা ড্রেস পড়েনি। ওর কাছে তোমার নাম করে কেউ ওই ড্রেসটা পাঠিয়ে ছিলো। তাই নিজের অস্বস্তি বোধ হওয়া সত্বেও ড্রেসটা পরেছে। শুধুমাত্র তোমার জন্য। দি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।

আধভিক: আর আমি সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিনি।

আধভিক নিজের চোখের জল আবারও মুছে নেয় কথাটা বলে। আভাস বাবু ওর দিকে এগিয়ে এসে বলেন,

আভাস বাবু: আমি জানতাম তোদের দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। নাহলে এইভাবে তোরা দুজন কষ্ট পেতিস না।

আধভিক: যখন প্রথমবার ও আমাকে দূরে সরিয়েছিলো তখনও যেমন কষ্ট পেয়েছিল এখনও তো কষ্ট পেতে পারে? এই বিষয়টা আমার মাথাতেই আসেনি। আমি ভাবিইনি যে ও আমার জন্য ঠিক ততটাই কষ্ট পেয়েছে যতটা আমি ওর জন্য পেয়েছি। কারণ আমি কখনও ওকে, ওর ভালোবাসাকে বিশ্বাসই করিনি। ও চলে যাওয়ার পর সবসময় এটাই ভেবেছি যে, আমিই ওকে ভালোবেসে ছিলাম। অন্যের কথা শুনে…

আধভিক থেমে গেলো। পিছন ঘুরে নিজের ঠোঁট চেপে কোনো মতে কান্নাটা রোধ করে, বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের কোণ থেকে জল মুছে নিয়ে সামনে ফিরলো। দিয়ারাকে বললো,

আধভিক: থ্যাংক ইউ আমাকে পুরো বিষয়টা জানানোর জন্য। নাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না ওর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখই নেই আমার। বুঝতেই পারতাম না, মুখেই বলে এসেছি ভালোবাসি। আদতে ভালো বাসতেই পারিনি। (তাচ্ছিল্য হাসলো) ভালো তো বেসেছে সিয়ারা। মুখে না বলে কাজে করে দেখিয়েছে, দোষ না থাকা সত্বেও সব মেনে নিয়েছে মুখ বুজে। এসব জানার পরেও ওর সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমার।

আভাস বাবু: এইটা করে তুই আরও বেশি করে প্রমাণ করে দিবি তুই সিয়ারাকে ভালো বাসিসনি। কেন জানিস? কারণ তুই সব সত্যি জেনে, নিজের ভুল জেনে তা শুধরানোর চেষ্টা না করে পালিয়ে যাচ্ছিস। সিয়ারা কিন্তু তা করেনি ভিকি। তুই তো নিজেই বললি ও দোষ না করেও মুখ বুজে সব মেনে নিয়েছে। কেন? কেন মেনে নিয়েছে?

দিয়ারা: কারণ দি তোমাকে ভালোবাসে, সবটা ঠিক করতে চেয়েছিলো। ও বুঝেছিলো তুমি এখনও ওকেই ভালোবাসো আর ওকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছো ওর মতোই। এখানে আসার আগে দিও তোমার মতই ভাবছিলো যে ও কষ্টে আছে, তুমি ভালো আছো। কিন্তু যখনই বুঝলো ওর ধারণা ভুল, ও ভুল বুঝছেন তোমাকে তখনই সবটা ঠিক করতে মরিয়া হয়ে উঠলো।

আভাস বাবু: হাল ছেড়েই দিয়েছিল মেয়েটা তবে আমি যেই বললাম তোকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে, একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলো। আর তুই এটুকুতেই হার মেনে যাবি? সত্যি কি তুই সিয়ারাকে ভালোবাসিস না?

দিয়ারা: শুধু কি মুখেই বলেছো তুমি দি কে ভালোবাসো? তাই সব জানার পরেও ওকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে না?

আধভিক: আমি কখনও বলে বোঝাতে পারবো না হাউ মাচ আই লাভ হার! ও আমার জীবন! ওকে ছাড়া আমার পুরো পৃথিবীটাই থেমে গেছিলো। বাঁচবো না ওকে ছাড়া আমি। (জোর দিয়ে)

আভাস বাবু: তাহলে কিসের অপেক্ষা করছিস? যা ওর কাছে।

আধভিক: আমি ওর কাছে গেলে ওর শুধু আমার বলা খারাপ কথাগুলোই মনে পড়বে ড্যাড। আজকেও আমি ওকে অনেক খারাপ কথা শুনিয়েছি। আর পার্টির দিন আমি যা যা বলেছি সেসব মনে করলে নিজেরই নিজেকে…

আধভিক দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। চাঁপা কণ্ঠে বলে,

আধভিক: আমি পারবো না ড্যাড। আমি পারবো না ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। (মুখ থেকে হাত সরিয়ে) রাগের মাথায় আমি যা বলেছি তারপর আমি নিজের কাছেই নিজে ছোটো হয়ে গেছি। আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হচ্ছে না সেখানে ওর সামনে কীভাবে যাবো? কি বলবো? এসব যদি নাও জানতাম তাও আমি যেতাম না ওর সামনে। বাইরে থেকে দেখেই চলে আসতাম আমি।

আভাস বাবু আর দিয়ারা বুঝতে পারে আধভিক মারাত্মক পরিমাণে অপরাধ বোধে ভুগছে। সে নিজের ভুলগুলো নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছে যার ফলে একরাশ আত্মগ্লানি এসে ওকে ভর করেছে। কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আধভিক আর সিয়ারা যে একে অপরকে ছাড়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সেটা অনেক আগেই আভাস বাবু বুঝেছেন। উনি আধভিকের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

আভাস বাবু: ভুল কি শুধু তুই সিয়ামাকে বুঝেছিস? সিয়ামা তোকে ভুল বুঝছে না?

আধভিক অবাক চোখে তাকালো আভাস বাবুর দিকে। আভাস বাবু ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আধভিক নিজের ঘরে চলে গেল। আভাস বাবু একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন আর সামান্য হাসলেন।

দিয়ারা: ভিকিদা সবটা সামলে নেবে তো আংকেল? (ভয়ে ভয়ে)

আভাস বাবু: আশা করছি সামলে নেবে। ও চেঞ্জ করতে গেছে যা মনে হয়, কিন্তু এত দেরি করলো। ঠাণ্ডা না লেগে যায়। এই ঠান্ডার পরিবেশে ভিজে গায়ে এতক্ষণ ছিলো।

দিয়ারা: ও দিয়ের কাছে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

আভাস বাবু দিয়ারার কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে তাঁকাতেই দিয়ারা বললো,

দিয়ারা: ভিকিদার কথা অনুযায়ী দি হয়তো এখন রেগে আছে ওর উপর। তাই আবহাওয়াও গরম দির ঘরে। এইজন্য দিয়ের কাছে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে বললাম। হে হে, আমি আসি।

দিয়ারা ফুরুৎ করে সরে যায় ওখান থেকে আর আভাস বাবু হেসে ফেলেন। তারপর নিজের ঘরে চলে যান। এদিকে, আধভিক ধীরে ধীরে সিয়ারার ঘরে দরজা খোলে সাহস করে। চেঞ্জও করেনি এখনও অবধি সে। চেঞ্জ করতে গিয়েও ঘুরে সিয়ারার ঘরের কাছে চলে এসেছে। আভাস বাবুর কথাটা মাথায় যাওয়ার পর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না আধভিক, অস্থিরতা কাজ করছে।

সিয়ারা ধীরে ধীরে উঠে বসেছে। ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো সোফায় দেবাংশু পিছন দিকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে ওর, তাই একটু জল খাওয়ার জন্য এগাবে তখনই দেখে ওর ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার সাথে চোখে চোখ পড়তেই ওর বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে। এই মানুষটাকেই তো জ্ঞান ফেরার পর সবার আগে খুঁজেছে সিয়ারা। তবে আগের কথাগুলো মনে পরতেই সিয়ারার মনে ভির করে অভিমানের কালো মেঘ। চোখ ফিরিয়ে নেয় সে আধভিকের দিক থেকে।

আধভিক: (মনে মনে — চোখ ফিরিয়ে নিয়েছো মেনে নিচ্ছি সিয়ু। মুখ ফিরিয়ে নিও না। আমি যেই ভুলটা করেছি তুমি করো না সেটা। আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনার। আমাকে ফিরিয়ে না দিয়ে, ফিরিয়ে নিও তোমার জীবনে।)

সিয়ারা জলের গ্লাস নেওয়ার জন্য একটু এগোতেই আধভিক ভিতরে ঢুকে, তাড়াতাড়ি করে জলের গ্লাসটা নিয়ে ওর হাতে দেয়।

আধভিক: সিয়ু আমি…

সিয়ারা: আমাকে এই নামে ডাকার অধিকার আপনার নেই মিস্টার রায় চৌধুরী। আমাকে কেউ “সিয়ু” নামে ডাকুক সেটা আমি চাই না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here