কথা দিলাম পর্ব -৪০+৪১

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দিয়ারা: কি ব্যাপার? তুমি ওভাবে চলে এলে কেন ওখান থেকে?

দেবাংশুকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দিয়ারা ওর কাছে এসে, ওর পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করে। দেবাংশু হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে চুপচাপ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো চোখ বন্ধ করে জ্যাকেটের পকেটে হাত গুঁজে।

দেবাংশু: এমনি।

দেবাংশুর এই ছোট্ট উত্তর দিয়ারার পছন্দও হলো না। একটু ভ্রু কুঁচকে দেবাংশুর দিকে এগিয়ে গেলো এবং সামনের দিকে ঝুঁকে দেবাংশুর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

দিয়ারা: তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি রেগে আছো। কি বিষয়ে রেগে আছো তুমি?

দেবাংশু নিজের নজর পাহাড়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ারার নজরের সাথে মিলালো। দিয়ারা এখনও একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে মাথা কাত করে।

দেবাংশু: আমি রাগ করে আছি নাকি নেই সেটা নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন?

দিয়ারা: বাহ রে! যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করে আমি তাঁকে নিয়ে চিন্তা করবো না?

দিয়ারা কথাটা ঠোঁটে হালকা হাসির রেশ নিয়ে বললো আর দু তিনবার পর পর চোখের পলক ফেললো। দেবাংশু দিয়ারার এমন চাহুনি সহ্য করতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ ঘুরিয়ে নেয়। দিয়ারার ঠোঁটে এবার হাসি ফুঁটে ওঠে।

দিয়ারা: আচ্ছা বলতে হবে না কেন রেগে আছো। তোমার যখন মন চাইবে তখন বলো। আর, থ্যাংক ইউ!

দিয়ারা কথাটা বলে দু পা এগিয়ে গেলে দেবাংশু ওর হাতটা টেনে ধরে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই। দিয়ারা দেবাংশুর দিকে ফিরে দেখে দেবাংশু এখনও অন্যদিকেই তাকিয়ে আছে। দিয়ারা অপেক্ষা করতে লাগলো কখন দেবাংশু কিছু বলবে।

দেবাংশু: সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করিস তুই তাই না?

দিয়ারা বুঝতে পারছে দেবাংশুর হাত ক্রমশ ওর হাতের কব্জিতে জেঁকে বসছে। দিয়ারা দেবাংশুর হাতের উপর হাত রেখে তৎক্ষণাৎ বললো,

দিয়ারা: আমাকে কখনও কোনো কিছু বলতে হয় না দেবদা। আমার উপর যখনই কোনো খারাপ দৃষ্টি পরে, সেটার সাথে ভিকি দা ডিল করে নেয়। তাই আমি বুঝেও পাত্তা দি না। আর আমি একজন মডেল, এসব তো সহ্য করতেই হয়।

দেবাংশু: তাই বলে তুই এটাকে প্রশ্রয় দিবি? (রেগে)

দেবাংশু দিয়ারার দিকে ঘুরে জোর গলায় প্রশ্নটা করলে দিয়ারা একটু অবাক হয়ে গেলো। এরকম ভাবে কেউ কখনও ওর বিষয় নিয়ে রিয়্যাক্ট করেনি।

দিয়ারা: কাম ডাউন দেবদা। আমাদের প্রত্যেকটা মেয়েদেরকেই এরকম কিছু জিনিসের সম্মুখীন প্রতি নিয়ত হতে হয়। সবার দৃষ্টিভঙ্গি তো এক নয় তাই না? খারাপ নজর কখনও পোশাক বা বয়স দেখে হয় না। খারাপ মানসিকতার সাথে দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ থাকলেই পোশাক বা বয়স যাই থাক না কেন নজর খারাপ পড়বেই। এটা আমরা আটকাতে পারবো না।

দেবাংশু: তাই বলে প্রটেস্টও করবো না রাইট? তোর দিকে প্রথম থেকেই উনি খারাপ নজরে তাকিয়ে আছে এটা বুঝতে পেরেও তুই চুপ করে ছিলি। কেন? কারণ তুই ওনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারবি না। ওয়াও, গ্রেট! জাস্ট আনবিলিভবেল! (প্রচণ্ড পরিমাণ বিরক্ত হয়ে)

দেবাংশু অন্যদিকে ঘুরে গেলে দিয়ারা একটু অবাক হয়েই দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে থাকে। ও বুঝে উঠতে পারছে না দেবাংশু এতটা রিয়্যাক্ট কেন করছে? সে যে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছু জানে না তা তো নয়। দেবাংশুর এরকম ব্যবহারের সাথে সে আধভিকের সিয়ারার সাথে করা ব্যবহারের মিল পাচ্ছে। আধভিক ঠিক এমনই যত্নশীল সিয়ারার প্রতি। সে দিয়ারার প্রতিও যত্নশীল কিন্তু সেটা দাদার মতো। আধভিক কখনওই দিয়ারা কে এসে বকাবকি করেনি, চুপচাপ নিজের মত করে সেই ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেবাংশু? দেবাংশু একপ্রকার জ্বলছে লোকটার উপর। ও’কে দেখে মনে হচ্ছে সে পারলে এখনই হাতের সামনে পেলে মেরে ফেলবে লোকটাকে।

দিয়ারা: (মনে মনে: দেবদা কি জেলাস ফীল করছে? … ধুর! কি সব ভাবছি আমি। ও কেন আমার বিষয়ে জেলাস ফীল করবে?)

দিয়ারা নিজের চিন্তা ভাবনাকে মাটি চাপা দিতেই দেবাংশু বলে উঠলো,

দেবাংশু: স্ক্রাউন্ডেল! ও’কে তো আমি…

দিয়ারা দেখলো অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরটা হোটেলের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন এবং মাঝে মধ্যেই দিয়ারার দিকে তাকাচ্ছেন। দেবাংশু সেটা দেখে এগিয়ে যেতে নিলেই দিয়ারা ওর সামনে দাঁড়িয়ে পরে আর বোঝানোর চেষ্টা করে।

দিয়ারা: দেবদা প্লিজ, এখানে কোনরকম সিন ক্রিয়েট করো না। আমরা সবটা ঠাণ্ডা মাথায় সর্ট করতে পারি। একটু বোঝার চেষ্টা করো? (অনুরোধ করে)

দেবাংশু ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে দিয়ারার দিকে তাকালো। তারপর একটু কিছুক্ষণ চুপ থেকে দিয়ারার একদম কাছে চলে আসে। দিয়ারা কিছু বোঝার আগেই দিয়ারার দুই কাঁধে নিজের দুই হাত রেখে ওর মুখের সামনে ঝুঁকে বলে,

দেবাংশু: বল কীভাবে ঠাণ্ডা মাথায় সর্ট করবো? কতটা মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে? এতটা নাকি…?

দেবাংশু দিয়ারার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলে মাথাটা একদিকে একটু সরিয়ে ওই ব্যক্তিটির দিকে তাকায় যে ওদেরকে দেখছিলো। দেবাংশু একভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ওইদিকে। এদিকে দিয়ারা স্তব্ধ হয়ে গেছে দেবাংশুর হঠাৎ করে এভাবে কাছে আসে। দেবাংশু আবার ওর চোখে চোখ রাখলে দেখে দিয়ারা একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অবাক ভাবে। দেবাংশু এক গালে হেসে একটা চোখ টিপ দেয় দিয়ারাকে আর দিয়ারার চোখ আরো বড়ো হয়ে যায়। দেবাংশু এইবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় আর দিয়ারাকে টিজ করে বলে,

দেবাংশু: তুই নাকি মডেল? তাহলে আমাকে এত নীচু হতে হলো কেন? উফ! কোমরটা ব্যথা হয়ে গেলো, ভাগ্যিস বেশিক্ষণ…থাক আর বললাম না।

দিয়ারা বুঝলো না হঠাৎ করে এতো জোরে দেবাংশু এই কথাগুলো বললো কেন। দিয়ারা চট করে একবার পিছনে তাকাতেই দেখলো অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অর্থাৎ যে ওকে দেখছিলো সে চুপচাপ চলে গেলো মাথা নীচু করে হোটেলের দিকে।

দিয়ারা: তুমি..তুমি কি করলে?

দেবাংশু: কি করলাম? তোকে নাটা বললাম আবার কি?

দিয়ারা: মানে টা কি? আমি নাটা? (রেগে)

দেবাংশু: হ্যাঁ তা নয় তো কি?

সিয়ারা: কি হলো দিয়া? এরকম ভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?

সিয়ারা আর আধভিক পিছন থেকে এসে কথাটা বললে দিয়ারা ঘুরে ওর দিদির কাছে এসে দেবাংশুর নামে অভিযোগ করে বলে,

দিয়ারা: দি, দেবদা আমাকে নাটা বলছে!!

এই কথাটা শুনে আধভিক দেবাংশুর দিকে তাকালে দেবাংশু আধভিককে একটা চোখ টিপ দেয়। আধভিক হেসে দেবাংশুর তালে তাল মিলিয়ে বলে,

আধভিক: হ্যাঁ তো ভুলটা কি বলেছে? তোরা দুই বোনই তো বাচ্চা!

সিয়ারা: আর তোমরা বুড়া!

দিয়ারা: লম্বা তাল গাছ! আর আমাদের লম্বা ছেলেই পছন্দ কারণ তাহলে আমরা একটু শান্তিতে হিল পরতে পারবো।

সিয়ারা: নাহলে তো তোমরা ছেলেরা আমাদের থেকে বেঁটে হয়ে যাও হিল পরলে। সো প্লিজ, আমাদের টিজ করে না কোনো লাভ নেই।

দিয়ারা: চল দি।

দিয়ারা সিয়ারার হাত ধরে ওখান থেকে চলে গেলো। আধভিক আর দেবাংশু কিছু বলার সুযোগই পেলো না। তাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

আধভিক: কি ব্যাপার বল তো তোর?

দেবাংশু: কি ব্যাপার মানে?

আধভিক: মানে এটাই যে তুই এত কেন রিয়্যাক্ট করলি কিছুক্ষণ আগের বিষয়টা নিয়ে?

দেবাংশু একটু থতমত খেয়ে গেলো আধভিকের প্রশ্নে। ও নিজেই জানে না ও কেন এতোটা রিয়্যাক্ট করলো। দেবাংশুকে চুপ করে থাকতে দেখে আধভিক বললো,

আধভিক: তোকে দেখে মনে হচ্ছিলো, তুই মেনে নিতে পারছিলি না দিয়ার দিকে কেউ বাজে ভাবে তাকাচ্ছে। ঠিক যেমন আমিও মেনে নিতে পারি না সিয়ারার দিকে কেউ বাজে নজরে তাকালে, কারণ আমি জানি …. ও আমার!

দেবাংশু চমকে আধভিকের দিকে তাকালে আধভিক মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। দেবাংশু বিষয়টা সামলানোর জন্য বললো,

দেবাংশু: তুই এসব আমাকে কেন বলছিস? দেখ আমি ওকে আগে থেকেই চিনি তাই জন্যেই রিয়্যাক্ট করেছি। ও সিয়ারার বোন তাই…

আধভিক: সত্যি কি তাই দেব? কই সিয়ুর সাথে তো কখনও এভাবে রিয়্যাক্ট করিসনি? করেছিস? আমি যদিও জানি না তোদের বিষয়টা বাট আমার মনে হয় না আজ যেই ব্যবহারটা দিয়ার সাথে করলি সেটা তুই কখনও সিয়ুর সাথে করেছিস বলে। কারণ আজকে হয়তো তোর অনুভূতিটা অন্যরকম ছিলো।

দেবাংশু: ভিকি তুই বেশি বলছিস। আমি সেইম রিয়্যাক্টই করি। (অন্যদিকে তাকিয়ে)

আধভিক: ওহ, আচ্ছা। আসলে আমি তো করিনি তাই বললাম আর কি! মানে দিয়াকে আমি বোনের চোখে দেখি তাই ওর দিকে কেউ বাজে নজরে দেখলে আমি মেনে নিই না, উচিত শিক্ষা দিয়েদি কিন্তু এরকম রিয়্যাক্ট কখনও করিনা ওর উপর। এছাড়া সব মেয়ের জন্যেই আমি এটা করবো মানবিকতার খাতিরে শুধুমাত্র সিয়ু বাদে। কারণ ওকে কেউ বাজে নজরে দেখলে আমার মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে অমূল্য সম্পদকে কেউ বাজে নজরে দেখছে যেটা আমি মেনে নিতে পারি না। আমার বুকের ভিতরটা জাস্ট জ্বলে যায়। অ্যাট দ্যাট টাইম আই ফেলট ভেরি ইন্সিকিউর। আর সিয়ু যদি সেটাকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে তো হয়েই গেছে, মানে তুই আজকে যেমন রিয়্যাক্ট করলি তেমনই রিয়্যাক্ট করে ফেলি ওর উপর। যাই হোক, তুই তো বললি তোর ক্ষেত্রে এমনটা নয় সো লেট ইট বি। আমি হোটেলে যাচ্ছি তুইও আয়।

আধভিক চলে গেলে দেবাংশু আধভিকের কথা গুলো ভাবতে থাকে। সত্যি তো, আজ যখন ওই ব্যক্তিটা দিয়ারাকে বাজে নজরে দেখছিলো তখন ওর বুকের ভিতরটাতে জানো আগুন জ্বলছিল। এমনকি এখানে আসার পর থেকে যখনই সে এই দৃশ্য দেখেছে এবং পার্টিতে অর্জুন চ্যাটার্জী কে যখন দিয়ারার কাছাকাছি দেখেছে তখনও একই অনুভূতি হয়েছে। দেবাংশু বুঝতে পারছে না কেন হচ্ছে ওর সাথে এমন…আগে তো কোনো মেয়ের জন্য এমন হয়নি তাহলে দিয়ারার জন্য এমন কেন হচ্ছে?

দেবাংশু: (মনে মনে — কেন আমি ওর পাশে অন্য কাওকে সহ্য করতে পারছি না? কেন ওকে কেউ খারাপ নজরে দেখলে আমার এতটা রাগ হচ্ছে? আর…আর কেন ও সাথে থাকলে আমার এতটা ভালো লাগে? উফ! সারাদিন এই মেয়েটা আমার মাথায় ঘুরছে। কেন গড কেন??)

অন্যদিকে,

দিয়ারা: দি, শোন না।

সিয়ারা: হ্যাঁ বল, কিছু বলবি?

দিয়ারা: হ্যাঁ। মানে…আজকে দেবদা…

দিয়ারা সবটা সিয়ারাকে খুলে বললে সিয়ারা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে। দিয়ারা সিয়ারার রিয়্যাকশন দেখে ঘাবড়ে যায়। ভাবে এই বুঝি দি বকে দেবে খুব করে।

দিয়ারা: দি আমি জানি না আমি ঠিক ভাবছি কি না। আসলে আমি ভিকিদাকে দেখেছি একই বিষয়ে একইরকম ভাবে রিয়্যাক্ট করতে তোর সাথে, তাই বললাম আর কিছুই না।

সিয়ারা: কিন্তু তুই এত ভাবছিস কেন? তোর তো অর্জুন চ্যাটার্জীকে পছন্দ তাই না? (শান্ত ভাবে)

দিয়ারা: দি প্লিজ! কখন বললাম আমি এটা? উনি একজন নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার তাই জন্যেই আমি এক্সসাইটেড ওনার সাথে কাজ করার জন্য আর কিচ্ছু না। তখনই তো বললাম।

সিয়ারা: তাহলে কি তোর দেবকে পছন্দ?

দিয়ারা: হ…

সিয়ারার প্রশ্নটা শুনে দিয়ারা থেমে গেলো। কি উত্তর দেবে সে বুঝে উঠতে পারছে না কারণ সে নিজেও জানে না সে দেবাংশুর জন্য যেই অনুভূতি অনুভব করে তার নাম কি।

সিয়ারা: আমি বুঝতে পারছি তোর অবস্থাটা। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নিবি না দিয়া। আগে বোঝার চেষ্টা কর নিজের অনুভূতিটাকে। বেশি কিছু না, তোর সাথে যা যা ঘটছে সেগুলোকে লক্ষ্য কর ভালো ভাবে আর সেটা নিয়ে একটু সময় নিয়ে ভাব। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তোর নিজের কাজকর্ম নিয়ে একটু সময় নিয়ে ভাব, দেখবি উত্তর পেয়ে গেছিস। চল এবার।

সিয়ারা চলে যায় হোটেলের দিকে। ওরা তখন হোটেলে না গিয়ে একটু অন্য দিকটায় এসেছিলো। সিয়ারা যা বলে গেলো সেগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে দিয়ারাও পা বাড়ালো হোটেলের দিকে সিয়ারার পিছু পিছু।’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারা নিজের ঘরে এসে দেখলো আধভিক চুপচাপ বসে আছে সোফায়। দরজাটা বন্ধ করে সিয়ারা আধভিককে জিজ্ঞেস করলো,

সিয়ারা: কি নিয়ে চিন্তা করছো?

আধভিক: হম? তেমন কিছু না।

সিয়ারা বেশি কিছু না বলে আধভিকের পাশে গিয়ে বসলো। আধভিকের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে বললো,

সিয়ারা: আমার একদম মন চাইছে না অভ্রর মুখোমুখি হতে। আমি চাই না ওর খারাপ নজর আমাদের উপর আর পরুক।

আধভিক: (তাচ্ছিল্য হেসে) তুমি ভাবছো এখানে ও আমাদের নজরে রাখেনি?

সিয়ারা: (সোজা হয়ে) মানে? তুমি বলতে চাইছো ও এসেছে এখানে? কিন্তু কোথায়?

আধভিক: ও আসেনি, কিন্তু ওর লোক আছে এখানে আমাদের উপর নজর রাখার জন্য। আমি যদি খুব ভুল না হই তাহলে ওর লোকের মাধ্যমেই ও আমাদের অ্যাকসিডেন্ট করার প্ল্যান করিয়েছিল। আর কলকাতা ফিরতেই ও সবার আগে আমার সাথে দেখা করতে আসবে কারণ ও জেনে গেছে আমার আর তোমার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে।

সিয়ারা: তার মানে ও আবার কোনো ষড়যন্ত্রের প্ল্যান করছে। ও আবার তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে আভি? (আতঙ্কে)

সিয়ারাকে ভয় পেতে দেখে আধভিক ওকে বুকে টেনে নেয়। আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,

আধভিক: আমাকে যদি মেরে ফেলার হতো তাহলে অনেক আগেই মেরে ফেলতো। ওর উদ্দ্যেশ্য অন্যকিছু যেটা জানতে হবে আমাকে আর সেটা এইবারই সম্ভব। কারণ এতদিন আমি এসব নিয়ে মাথা খাটাইনি। কিন্তু এখন খাটাবো, দেখি কত দূর যেতে পারে ও।

সিয়ারা: তুমি বলেছিলে তুমি ওদের জিততে দেবে না। কিন্তু এখন তো সেটাই করছো আভি। কেন রিস্ক নিচ্ছো?

আধভিক: আমি ওদেরকে জিততে দেবো না সিয়ু। এখনই যদি আমি গিয়ে অভ্রকে চার্জ করি তাহলে আসল অপরাধীকে খুঁজে বার করতে পারবো না তাই প্রমাণের জন্য আমাকে দেখতে হবে ও কি করছে। নজর রাখতে হবে ওর উপর। আগেরবার আমি ভেবেছিলাম ওর প্ল্যান ওয়াইজ চলে ওকে বুঝাবো ও জিতছে আর সেই সময় ও ভুল করবে। বাট ও সেটা বুঝে গেছিলো আর প্ল্যান চেঞ্জ করেছিলো। এর মানে ওর লোক সবসময় নজর রাখছে আমাদের উপর বা ওর প্ল্যান সেভাবেই ভাবা ছিলো, আমাকে জাস্ট মিথ্যে বলেছিলো যে ওখানে কেউ আসবে যে তোমাকে চায়।

সিয়ারা: ওকে ধরাটা খুব একটা সহজ হবে না আভি। ও অনেক প্ল্যান করেই এগোচ্ছে। কি সুন্দর ভাবে পার্টির বিষয়টা সাজিয়ে ছিলো যেটা আমাদের মাথাতেও আসেনি।

আধভিক: আমরা সব বুঝেই যখন গেছি তখন কোনো কিছু ঘটলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক ভাবতে হবে।

সিয়ারা: (হেসে উঠে) কি বললে? ভাবতে হবে?

সিয়ারা কথাটা বলে হাসিতে ফেটে পরলো একপ্রকার। আর আধভিক সেটা দেখে চোখ সরু করে বললো,

আধভিক: ঠিক আছে ঠিক আছে। এভাবে হাসতে হবে না। আগে ভাবিনি, এখন ভাববো। এতে হাসির কি আছে হ্যাঁ? উফ! থামবে? সিয়ু!!

সিয়ারা আধভিককে বিরক্ত হয়ে দেখে নিজের হাসি চেপে ওর মুখের দিকে তাকালো। আবার হাসতে গেলে আধভিক সিয়ারার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। সিয়ারা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালেন আধভিক সরে এসে মুচকি হাসে আর বলে,

আধভিক: এর থেকে বেশী কিছু হবে হাসলে। হাসো এবার!

সিয়ারা: (বাহুতে ঘুষি মেরে) অসভ্য একটা, হুহ!

সিয়ারা লজ্জা পেয়েছে এটা বুঝতে পেরেছে আধভিক ওর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায়। তাই হেসে সিয়ারার কোমরে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে আনে আধভিক। কিন্তু তাও সিয়ারা নীচের দিকেই তাকিয়ে আছে। সিয়ারার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আধভিক আর সিয়ারা আধভিকের বুকের সাথে মিশে যায়।

আধভিক: আমি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি চিন্তিত দেব আর দিয়াকে নিয়ে।

সিয়ারা: তুমিও ওদের বিষয়টা টের পেয়েছো?

আধভিক: হম। আজকে কিছুক্ষণ আগে যে ঘটনাটা ঘটলো সেটা তে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে।

সিয়ারা: দেব আর তুমি অনেকদিন ধরেই বন্ধু। তুমি নিশ্চয় জানো ও কেমন? ও কি সহ্য করেছে? আমার মনে হয় আমার দিয়াকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত। আমি চাই না আমার বোন কোনরকম কষ্ট পাক। (সোজা হয়ে বসে)

আধভিক: তুমি এমনটা কেন ভাবছো যে অন্যান্য মেয়েদের ক্ষেত্রে দেব যেমন বিহেভ করেছে দিয়ার ক্ষেত্রেও তাই করবে? আমি আমার বন্ধুকে অনেকদিন আগে থেকেই চিনি তাই আমি এটুকু বলতে পারি, দেবের জীবনে দিয়া সব মেয়েদের মত নয়। ও আলাদা দেবের কাছে, ইয়েস শি ইজ ডিফারেন্ট। (আত্মবিশ্বাসী হয়ে)

সিয়ারা: সেটা আমিও লক্ষ্য করেছি। কিন্তু আমি যদি দিয়াকে সতর্ক করি তাহলে ও হয়তো সেভাবেই এগোবে।

আধভিক: কিন্তু সেটা করলে যদি দিয়া পিছিয়ে যায়। দেখো এই দুই বছরে আমি দিয়াকে যতটুকু দেখেছি তাতে বুঝেছি ও এসব বিষয়ে একটু ভয় পায়। মানে, ও ঠকতে ভয় পায়। এমন একজনকে চায় যে ওকে ভীষণ ভালোবাসবে, ওকে বুঝবে। ও তো এটাই বলেছে আমাকে সবসময়। তাই এখন যদি তুমি দেবের ব্যাপারে সতর্ক করো তাহলে ও পিছিয়ে যেতেই পারে।

সিয়ারা: দিয়ার কি এই দুই বছরে কাওকে পছন্দ হয়নি? মানে ও তো বেশ নাম করা মডেল। কেউ প্রপোজাল দেয়নি এটা হতে পারে না।

আধভিক: প্রচুর প্রপোজাল পেয়েছে কারণ ওর বিহেভিয়ারটাই অমন। ও সবার সাথে হেসে, ভালোভাবে কথা বলে যাতে বেশির ভাগ প্রডিউসার, ডিরেক্টর সেটাকে অন্য কিছু ধরে নেয়। একচুয়ালী সেটা নয়, ও মনে করে অ্যাস আ মডেল অ্যান্ড হিউম্যান ওর বিহেভিয়ার সবসময় ভালো হওয়া উচিত সবার প্রতি। আর সত্যি, এতে আমার ফ্যাশন হাউজ অনেক অনেক নতুন কাজ পেয়েছে। বেশিরভাগ প্রোডিউসার, ডিরেক্টর, ফ্যাশন হাউজের মালিকরা ওর এই বিহেভিয়ারকে পছন্দ করেছেন।

সিয়ারা: তাহলে এখন কি করা উচিৎ? দিয়া নিজেও জানে না ও দেবের জন্য কি ফীল করে।

আধভিক: দেখো, আমার মনে হয় দিয়াই হয়তো দেবকে ভালোবাসা কি সেটা রিয়েলাইজ করাতে পারবে। যেমন ভাবে বিষয়টা এগোচ্ছে, তেমন ভাবেই এগোতে দাও তাই এটাকে।

সিয়ারা কিছু না বললেও ও বিষয়টা পুরোপুরি মেনে নিতে পারে না। সেটা আধভিক বুঝতে পারে কিন্তু ওর ও কিছু করার নেই। এখন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেও চায় না দেব বা দিয়া কেউ কষ্ট পাক কিন্তু ওদের ভালোর জন্য এটুকু রিস্ক নেওয়াটা দরকার। ওরা যদি একে অপরের জন্য সঠিক না হয় তাহলে সেটা সময়ই বুঝিয়ে দেবে। আর সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে ওদের।

আধভিক: সিয়ু! চলো বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। আমাদের তো কালকে সন্ধ্যের ফ্লাইট, ঘোরা তো হবে না আর।

সিয়ারা: হম? এখন কোথায় যাবে?

আধভিক: আগে তো চলো। রেডি হয়ে নাও আমি অপেক্ষা করছি বাইরে।

আধভিক বেরিয়ে গেলে সিয়ারা রেডি হয়ে নেয় এবং একসাথে ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে,

দিয়ারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখছে। রোদ ওঠায় বেশ ঝলমলে হয়ে রয়েছে পুরো পরিবেশ। ঠান্ডাটাও একটু কম লাগছে তাই জন্য। হঠাৎই দিয়ারার কিছুক্ষণ আগের ঘটনার মনে পরে যায় আর ও মনে মনে হেসে ওঠে দেবাংশুর ব্যবহারের কথা ভেবে। নিজের দিদির কথা শুনে ও লজ্জা পেতে শুরু করে মনে মনে ভাবে, “আমি কি সত্যি কিছু অনুভব করি দেবদার জন্য?”

এদিকে দেবাংশু নিজের নিকন এর ডিএসএলআর নিয়ে পাহাড়সহ পরিবেশের ছবি তুলছিলো। সেই সময় ওর চোখে পরে দিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে এবং সে আপন মনেই হাসছে। দেবাংশু নিজের অজান্তেই দিয়ারার একের পর এক ছবি তুলতে লাগলো। তারপর আস্তে করে ওখান থেকে সরে গেলো।

পরেরদিন,

আধভিক, সিয়ারাসহ সবাই ফ্লাইটে উঠে পরেছে। এই ফ্লাইটে আধভিক আর সিয়ারা পাশাপাশি বসেছে এবং আভাস বাবু দিয়ারা ও দেবাংশু একসাথে বসেছে। দিয়ারা একটু অস্বস্তিবোধ করছে দেবাংশুর পাশে বসায় তাই উশখুশ করছে। তখনই হঠাৎ ওর চোখ যায় নিজের পাশের দিকে যেখানে সেই অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরটা বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

দেবাংশু: কি আছে ওই পাশে যে ওইদিকে তাকিয়ে আছিস? ওয়েট, ওঠ!

দিয়ারা: হ্যাঁ? (অবাক হয়ে)

দেবাংশু: উঠতে বলেছি। (দাঁতে দাঁত চেপে)

দিয়ারা সিট বেল্ট খুলে উঠে দাঁড়ালে দেবাংশু দিয়ারার সিটে বসে পরে। সেই দেখে দিয়ারা হালকা হেসে দেবাংশুর সিটে বসে সিট বেল্ট লাগাতে থাকল দেবাংশু বলে,

দেবাংশু: অস্বস্তি হলেও এখানে আমার পাশেই বসতে হবে। ঠিক আছে? (রেগে)

দেবাংশু কথাটা বলেই মুখটা অন্য পাশে ফিরিয়ে নেয়, যেদিকে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর বসে আছেন। দিয়ারা ধীরে ধীরে দেবাংশুর জ্যাকেটের হাতাটা একটু টেনে ধরে ওর হাতের উপর হাত রাখে নিজের। যেটা অনুভব করে দেবাংশু ওর দিকে তাকায়।

দিয়ারা: থ্যাঙ্ক ইউ।

একটা ছোট্ট হাসি উপহার দেয় দিয়ারা নিজের কথা শেষ করে। তারপর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। খেয়াল করে না এদিকের মানুষটার বুকে একপ্রকার ঝড় উঠে গেছে। দেবাংশু কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকে দিয়ারার দিকে আর দিয়ারার হাসিটা ওর চোখের সামনে ভাসতে থাকে। নিজের মাথাটা একটু ঝাঁকিয়ে নিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায় দেবাংশু আর মনে মনে নিজেকে বকে দেয়।

দেবাংশু: (মনে মনে– এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দেবে এবার। কিন্তু চেয়েও তো দূরে থাকতে পারি না ওর থেকে। ওর কথা বলা, ওর হাসি, ওর সবকিছু বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে এখন। ওহ গড! কি হচ্ছে এসব, কেন হচ্ছে?)

দেবাংশু সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ওর চোখের সামনে কিছুক্ষণের মধ্যে দিয়ারার “থ্যাঙ্ক ইউ” আর ওর হাসিটা ভেসে ওঠে। দেবাংশু চোখ না খুলেই হালকা হাসে দিয়ারার কথা ভেবে।

কলকাতা,

কলকাতা ফিরে এসে একদিন রেস্ট নিয়ে আধভিক নিজের ফ্যাশন হাউজে নিজের কাজে ফিরে আসে। বেশ কয়েকটা মিটিং পেন্ডিং পরে আছে ওর। মিটিংগুলো শেষ করে ডিলগুলো ফাইনাল করতে হবে। সকাল থেকে নিজের ডেস্কে বসে সে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি তো নিচ্ছে কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছে না কাজে।

আধভিক: সিয়ুকে একটা ফোন করবো? ও কি উঠে গেছে ঘুম থেকে? এতোটা অস্থির লাগছে কেন আজকে আমার? উফ! যেদিন থেকে এই মেয়েটা আমার জীবনে এসেছে এমন একটা দিন যাইনি যখন আমার ওর কথা মনে পরেনি।

আধভিক নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই সিয়ারার সাথে ওর দেখা হওয়া থেকে নিয়ে শুরু করে সব কিছু মনে পরতে থাকে। সে ভালোবাসে এভাবে সিয়ারাকে অনুভব করতে যখন সিয়ারা তাঁর কাছে উপস্থিত থাকে না। দরজায় নক করার আওয়াজে আধভিক চোখ খোলে।

আধভিক: কাম ইন!

__হেই ভিকি!!

আধভিকের কেবিনে একটা মেয়ে ঢুকে আসলে আধভিক মেয়েটিকে দেখে একপ্রকার লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় আর বড়ো সরো ঢোঁক গেলে।

আধভিক: হ..হেই! হেই তানিশা! তু..তুই এখানে কি করে?

তানিশা: কেন? আমি কি আসতে পারিনা ভিকি?

আধভিক রেগে তানিশার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সোহমের দিকে তাকায় যে মাথা নীচু করে অপরাধীর ন্যায় চুপচাপ হয়ে আছে। আধভিক নিজের জায়গা ছেড়ে সামনে সামনে আসতে আস্তে বলে,

আধভিক: না না আমি একদমই সেটা মিন করতে চাইনি। আমি বলতে চাইছিলাম যে, তুই এখানে? হোয়াট আ লাভলি সারপ্রাইজ! (জোর করে হেসে)

তানিশা আধভিকের মুখ থেকে কথাটা শুনে এগিয়ে গিয়ে আধভিককে জড়িয়ে ধরলো যাতে আধভিক একটু অস্বস্তি বোধ করলো কিন্তু অবাক হলো না। সেও ভদ্রতার খাতিরে তানিশার পিঠে আলতো ভেবে হাত রেখে সামনে তাকাতেই তাঁর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো কারণ সামনে সিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারার দিকে তাকিয়ে সোহমের দিকে তাকাতেই আধভিক দেখলো সোহমও বড়ো বড়ো চোখ করে একবার সিয়ারার দিকে তাকালো এবং তারপরে আধভিকের দিকে তাকিয়ে বললো,

সোহম: হয়ে গেলো! গল্প শেষ! শুরু হওয়ার আগেই মনে হয় আবার শেষ হয়ে যাওয়ার ঘণ্টা বেজে গেলো।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here