কাকাঠগোলাপ এবং তুমি শেষ পর্ব

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ১৪

রাজ্য সকালে ঘুম থেকে উঠে নীশুকে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। মেয়েটা সত্যি সত্যি চলে যায় নি তো। ফ্রেশ না হয়েই সে নিচে নামে। নীশু সবে মাত্র হীরকে খাবার দিতে যাচ্ছিল। তখনই রাজ্য চিৎকার করে নীশু নীশু বলে ডাকতে থাকে। নীশু কে এভাবে ডাকার জন্য সবাই তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাজ্য মাথা চুলকিয়ে বললো,

“আমার কফি কই নীশু? তুমি জানো না আমার কফি না হলে সকালে চলে না।”

“আগে তো কখনো কফির জন্য এভাবে চিৎকার করেননি।“

“আগে করিনি বলে কি এখন করতে পারবো না। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। দ্রুত কফি পাঠিয়ে দাও।”

নীশু সবাই কে খাবার বেড়ে দিয়ে রাজ্যের জন্য কফি নিয়ে যায় রুমে। নীশু কফি টেবিলে রেখে বললো,

“আমি না বলে চলে যেতাম না। শুধু শুধু চিৎকার করলেন। এখন আবার ভাবতে যাবেন না যে আমি যাবো না। আমি আজই চলে যাবো। কখনো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি আমাদের বাড়িতে যাবেন না। আমি আর ফিরবো না আপনার জীবনে।”

কথাটা শেষ করে নীশু চলে যায় নিচে। রাজ্য দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কফি হাতে ব্যালকনিতে চলে যায়। একটু পর নীশু এসে আলমারি থেকে তার জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। রাজ্য আড়চোখে দেখেও কিছু বললো না। নীশুর কাপড় গোছানো শেষে ছলছল ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

“জানি আপনি আমাকে আটকাবেন না। আপনি তো খুশিই হবেন। হীর আপুকে বিয়ে করতে পারবেন। ঠিক আছে! আমিও আর আসবো না।”

চোখের পানি মুছে নীশু চলে যায় তার ব্যাগ নিয়ে। বাড়ি গিয়ে সে হারে হারে টের পাচ্ছে রাজ্যকে সে কতটা ভালোবাসে! হুম! নীশু ভালোবেসে ফেলেছে রাজ্য কে। কিন্তু বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলেছে।

বাড়িতে তার খেতে বসলে মনে হয় রাজ্য বুঝি বলছে “নীশু! একা একা খাচ্ছো কেনো?? এসো তো আমি খাইয়ে দেই।” কাপড় পড়তে গেলে মনে হয় এই বুঝি রাজ্য এসে বললো,

“এই কাপড় পড়ছো কেনো নীশু?? ভালো কাপড় নেই ঘরে?? চলো আমি ভালো কাপড় পড়িয়ে দেই।”

নীশু ভার্সিটিও যেতে পারছে না। ঠিক মতো ক্লাস কোচিং করতে পারছে না। তার শুধু মনে হয় এই বুঝি রাজ্য আসলো। তাকে সেজেগুজে ভার্সিটি আসতে দেখে ধমকে ধমকে নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুদের সাথে কথা বললে মনে হয় রাজ্য তাকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। এই বুঝি এসে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারছে। নীশু রাজ্যের থাপ্পড় গুলো কেও ভালোবেসে ফেলেছে।

বেশ কদিন নীশু হ্যালুসিনেশন ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু লাস্ট কদিন ধরে মনে হচ্ছে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তার সুস্থ হওয়ার একমাত্র ওষুধ হলো রাজ্য।

নীশু মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য ফোন রিসিভ করলে কি বলবে। ডায়াল পেডে রাজ্যের নম্বর উঠাতেই চমকে উঠে নীশু। সে ফোন দেয়ার আগেই রাজ্য তাকে ফোন দিল।

দেখতে দেখতেই প্রথম বারের মতো ফোন কেটে যায়। দ্বিতীয় বার রিং হতেই কাঁপা হাতে ফোন উঠায় নীশু। ওপাশ থেকে রাজ্যের আওয়াজ শুনেই কেঁদে ফেলে নীশু। রাজ্য ওপাশ থেকে বললো,

“নীশু! নীশু! শুনতে পাচ্ছো নীশু?? হ্যালো!”

“হু…!!”

“নীশু কাল সন্ধ্যায় আসতে পারবে তুমি?? একটু আর্জেন্ট দরকার ছিল।“

নীশু খুশিতে ডগমগ হয়ে সবে মাত্র উত্তর দিতে যাচ্ছিল তখনই রাজ্য বলে উঠে,

“না না! তুমি ভেবো না আমি তোমাকে উল্টা পাল্টা বুঝাতে আনছি। তুমি শুধু এসে ডিভোর্স পেপারে একটা সই করে দিয়ে যাবে। আসলে তোমার সই না হলে আমি হীরকে বিয়েটা করতে পারছি না। তুমি বুঝেছো??”

নীশুর কান্না চেপে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের সব ধুমড়ে মোচড়ে যাচ্ছে। তবুও ভাঙা গলায় বললো,

“আমি আসবো!”

নীশু কথা শেষ করার সাথে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়ে। মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে পাথর দিয়ে আঘাত করে করে ঝাঁঝড়া করে দিয়েছে।

পরদিন বিকেলে কাব্য ফোন দিয়ে কাঁদকাঁদ সুরে বললো,

“নীশু ভাবী! তুমি প্লিজ চলে এসো। ভাই কারো কথা শুনছে না। তুমি বললে ঠিক শুনবে। তুমি ভাইয়াকে বলো হীরকে যেন বিয়ে না করে।”

নীশু কোনো উত্তর দেয়নি। কয়েক ঘন্টায় তার জীবনে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। রাত অনেক হয়েছে। মা-বাবা সবাই এসে তাকে ডেকে গেল। সে বের হয়নি ঘর থেকে। তার বাবা ঘরের দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলেন। তখনই ঘরের দরজা খুলে নীশু বেরিয়ে আসে। পড়নে টকটকে লাল রঙের শাড়ি। মাথায় বিয়ের দোপাট্টা। বেরিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“দোয়া করো বাবা! আমার জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে যাচ্ছি আমি।“

“অস্ত্র সস্ত্র কই মা??”

“ওগুলোর দরকার নেই তো বাবা। তুমি শুধু দোয়া করো আমার জন্য।”

বলেই এক ছুটে বেরিয়ে যায় নীশু। বেশ খানিকটা পথ দৌড়িয়ে যাওয়ার পর টেক্সি নেয়। রাজ্যের বাড়িতে গিয়ে তার চোখে পানি চলে আসে। বাড়ি তে মনে হচ্ছে কেউ নেই। নীশু দ্রুত
রাজ্যের রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু রাজ্যের রুমে যে আরো বেশি অন্ধকার! নীশু রাজ্য বলে চিৎকার করতে যাবে তখনই কেউ তার মুখ চেপে ধরে। নীশু চিৎকার করতে গিয়েই পারছে না। যে তার মুখ চেপে ধরেছিল সে তাকে উঠিয়ে নেয় কোলে। আর চলে যেতে থাকে অন্য কোথাও। নীশুর আত্মাটা উড়েই গিয়েছিল মাঝপথে বাড়ির সবাই কে ছাদে পেয়ে ফিরে আসে। তাকে কোল থেকে নামাতেই চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। সবাই চিৎকার করে বলে উঠলো,

“হ্যাপি বার্থ ডে, নীশু! হ্যাপি বার্থডে!”

রাজ্যের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুখে মুচকি হাসি ধরে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। কেক কাটা হয়ে গেলে সবাই সবার মতো আড্ডা দিতে থাকে। এমন সময় নীশুর পেটে কারোর ঠান্ডা স্পর্শে কেঁপে ওঠে সে। ঠান্ডা হাত দুটোর মালিক তাকে ফের কোলে উঠিয়ে নেয়। তারপর সবাই কে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় ছাদ থেকে। নীশুর বুঝতে দেরি হলো না সবটা রাজ্যের প্লান। ঘরে গিয়ে নীশুকে কোল থেকে নামালে সে রাজ্যের কাঁধ বরাবর দুহাত রেখে পা উঁচু করে বললো,

“আপনি জানেন আপনি ঠিক কতটা বাজে!”

“আমি কতটা বাজে সেটা তুমিও জানো না। চলো, আজ জানিয়ে দেই।”

কথাটা শেষ করে নীশুকে বিছানায় ফেলে দেয়। মেতে ওঠে তার ভালোবাসায়। তবে এই ভালোবাসায় কোনো হিংস্রতা ছিল না। নীশু বাড়ি এসে হিরকেও পায়নি। সে তো চলে গেছে সেকবেই।

রাজ্য ফিসফিস করে নীশুর কানে কানে বললো,

“নীশু আজতো তোমার জন্মদিন! তো কি চাই তোমার??”

নীশু রাজ্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“কাঠগোলাপ এবং তুমি!”

||সমাপ্ত||

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here