কাঠগোলাপ এবং তুমি পর্ব ১১

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ১১

নীশু হ্যাঁচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে আনলে রাজ্যের ভাবনার জগতের অবশান হয়। নীশুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ কুঁচকে সে বললো,

“এভাবে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেনো?? দেবো নাকি আরেক কামড়?? এবার কিন্তু হাত কামড়ে ছিড়ে ফেলবো।”

“তারপর সেটা গলায় ঝুলিয়ে লোকজন কে দেখিও তুমি কতটা রাক্ষুসী মেয়ে!”

“তখন যদি জিজ্ঞাসা করে আমি রাক্ষুসী হলাম কিভাবে?? আমি বলবো, আপনার অত্যাচারে।”

“আমি অত্যাচার করি?? নাহ্?? তা কয়দিন তোমায় খেতে দেয়নি?? কয়দিন ঝাটা পেটা করেছি??”

নীশু মুখ ভোঁতা করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ্য এক পা দু‘পা করে এগিয়ে যায় তার দিকে। আর জিজ্ঞেস করতে থাকে অত্যাচারের কথা। নীশু কিছু না ভেবেই ভোঁ দৌড় দিতে চায়। কিন্তু রাজ্য তার হাত ধরে ফেলে। হাতটাকে নিজের হাতে রেখে গাড়িতে আটকে ধরে। নীশু হাত মোচড়িয়ে আনার চেষ্টা করতেই রাজ্য খুব জোরে চেপে ধরে। নীশু “আহ্” শব্দ করতেই আবার ঢিলে করে দেয়। রাজ্য ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“মুখের বুলি হাওয়া হয়ে গেছে?? কি অত্যাচার করি বলো না কেনো এখন??”

নীশু মিনমিন করে বলল,

“আপনাকে বলবো না। আমি পুলিশকে বলবো।”

“কাকে বলবে?? পুলিশ কে??”

“হুমম।”

“ওহ্ আচ্ছা! চলো পৌঁছে দেই আমি।”

“না, আমি একা একা যাবো।”

কথাটা বলে নীশুর সজোরে রাজ্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটা শুরু করে।
রাজ্য পেছন থেকে ডাকলেও নীশু সাড়া না দিয়ে হাঁটতে থাকে। রাজ্য দ্রুত পা চালিয়ে নীশুর হাত ধরে ফেলে। নীশু রাগান্বিত স্বরে বলল,

“হাত ছাড়ুন।”

“এসব কি ধরনের ছেলেমানুষী, নীশু?? বাড়াবাড়ি না করে বাড়ি চলো।”

নীশু খানিকটা আওয়াজ করেই উত্তর দেয়,

“আমি বাড়াবাড়ি করছি?? আপনি করছেন না??”

“ঠাস করে গালে যখন একটা পড়বে তখন বুঝতে পারবে বাড়াবাড়ি কে করছে।”

নীশু দ্বিগুণ আওয়াজে বললো,

“আপনি আমাকে মারলে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো??”

“কি করবে তুমি??”

নীশু উত্তর দেওয়ার আগেই একটা লোক তাদের সামনে আসে। পরপর আরো কিছু মানুষও চলে আসে। রাজ্য ঘাবড়ে গিয়ে নীশুর হাত ছেড়ে দেয়। নীশু সুযোগ পেয়ে হনহন করে চলে যায়। রাজ্য পেছন থেকে নীশু নীশু বলে চিৎকার করছে ঠিকই তবে এগুতে পারছে না। কারণ মানুষ গুলো রাজ্য কে ঘিরে রেখেছে। নীশু হাঁটতে হাঁটতে রাজ্যের চোখের আড়াল হয়ে যায়। এদিকে রাজ্যকেও সরতে দিচ্ছে না তারা।
তার ইচ্ছে করছে নীশুকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে এডিস মশার আবাস্থলে রেখে আসতে। নতুবা কোনো উঁচু গাছের আগায় ঝুলিয়ে আসতে।

রাজ্যের লোকগুলো কে ম্যানেজ করতে গিয়ে অনেকটা সময় লাগে। কোনো মেয়েকে রাস্তায় ছেলেদের সাথে ঝগড়া করতে দেখলেই চলে। সাধারণ পাবলিক গুলোও তখন হাতে নোবেল পায়। রাজ্যের ইচ্ছে একদিন এসব পাবলিক দের চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে মারার।

নীশু হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এসেছে। সব কেমন অচেনা লাগছে তার কাছে। কখনো একা সে পথ চলতে শেখেনি। বরাবরই তার বাবা নতুবা ভাই কোথাও নিয়ে গেছে। বলতে গেলে ভার্সিটি ছাড়া অন্য কোথাও যায়ও না নীশু। তার এখন কান্না পাচ্ছে। ভয়ও করছে খুব। কেন যে তখন রাজ্যের সাথে ঝগড়া করতে গেলো! এখন নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে নীশুর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে নীশু। কারণ পরবর্তী গন্তব্য কি সে জানে না। হাতে ফোনটাও নেই। শ্বশুরবাড়ি তে সে ফোন নিয়ে আসেনি। আর নতুন ফোন কেনাও হয়নি। হটাৎ আরো আওয়াজে আৎকে উঠে নীশু। পেছন থেকে কেউ বলল,

“কি হয়েছে ম্যাডাম?? সাহায্য লাগবে??”

নীশু তাকিয়ে দেখে তাদের ঝগড়ার সময় প্রথম যে লোকটা এসেছিল সেই লোকটাই এখানেও। নীশু ভয় পেয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। তার কাছে শেষ অবলম্বন তার পা দুটো। তাই দেরি না করে দৌড়াতে শুরু করে দেয়।

রাজ্য শহরময় তন্ন তন্ন করে নীশুকে খুঁজেও যখন পায়নি তখন ক্ষান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। গমগম করা বাড়িটা এখন শোক সভা বসিয়েছে।
রাজ্যকে দেখেই চমকে উঠে নীশুর বাবা। ফর্সা চেহারায় গাড় ক্লান্তির ছাপে মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। খাড়া হয়ে থাকা চুলগুলো উশকো খুশকো হয়ে কপাল জুড়ে ছিটিয়ে আছে। কয়েক ঘন্টায় ছেলের অবস্থা শোচনীয়। তাই তিনিও আর কিছু না বলে পুলিশ স্টেশনে যায় মেয়ের খোঁজে।

.
.
.

(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here