কাঠগোলাপ এবং তুমি পর্ব ১২

#কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ১২

কলিং বেল বেজেই চলেছে। রাজ্যের মা শক্তি পাচ্ছেন না উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতে। রাজ্য নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

“বেল বাজছে মা। বসে আছো কেনো??”

ছেলের কথায় হুশ ফিরে তাঁর। দৌড়ে যায় দরজা খুলতে। দরজার বাইরের মেয়েটা কে দেখে চমকে উঠেন তিনি। মেয়েটা হাসি মুখে বলে,

“ভালো আছেন আন্টি??”

“আলহামদুলিল্লাহ্! তুমি কেমন আছো হীর??”

হীর উত্তর দেওয়ার আগেই তার পেছন থেকে নীশু এসে জড়িয়ে ধরে রাজ্যের মাকে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সাথে সাথে। নীশুর মনে হচ্ছে এতক্ষণে সে তার জান ফিরে পেয়েছে। একটু আগের কথা মনে হতেই তার শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে। রাজ্যের মা নিজেও কেঁদে ফেলেন। নীশু কে নিয়ে দ্রুত ফিরে আসেন আগের জায়গায়। কিন্তু কেউ তাঁর খেয়ালে নেই। তিনি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন,

“দেখ রাজ্য কে এসেছে!”

রাজ্য খানিকটা বিরক্ত হয়ে তাকায়। নীশু কে দেখে সে আপনাআপনি দাঁড়িয়ে যায়। নীশু দৌড়ে রাজ্যের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। রাজ্যের মনে হচ্ছে তার আত্মা টা বুঝি নিজের দেহ পেয়েছে। পরক্ষণেই রাস্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে হতেই ছিটকে যায় নীশুর থেকে। নীশু মুখ ছোট করে তাকালে রাজ্য কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে তার গালে। নীশু কাঁদকাঁদ চেহারা বানিয়ে কিছু বলতে যায়। কিন্তু সুযোগ না দিয়ে আরো একটা থাপ্পড় অপর গালে দেয়। নীশু এবার দুগালেই হাত ধরে রাখে।

রাজ্যের মা ছুটে এসে নীশুকে জড়িয়ে ধরে। তিনি রাজ্যের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন,

“এসব কী হচ্ছে রাজ্য?? মেয়েটা কে মারছিস কেনো তুই??”

রাজ্য ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে নীশুর দিকে তাকিয়ে বলে,

“যে যার যোগ্য।”

রাজ্যের মা রাজ্যকে ধমকে নীশু কে তার ঘরে নিয়ে যায়। তাকে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। রাজ্য ঘরের কোনে হীর কে দেখে অবাক হয়। মেয়েটা কি সত্যি এলো নাকি ভুল?? রাজ্যের অবস্থা হীর হয়তো খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই মুখে বিরাট হাসির রেখা ঝুলিয়ে বললো,

“কেমন আছো রাজ্য??”

রাজ্য চুপ করে আছে। তার গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না। সে কল্পনা করে নি কখনো হীরের সাথে তার দেখা হবে। মেয়েটা কেমন বদলে গেছে। আগের থেকে কালো হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালচে ভাব এসেছে। ঘুমোয় না নাকি! খাওয়া দাওয়া কি কমিয়ে দিয়েছে?? মনে হচ্ছে বাতাস এলেই উড়ে যাবে। রাজ্য কে চুপ থাকতে দেখে হীর আবারও বলে উঠে,

“আমাকে দেখে চমকে যাওয়ারই কথা। তাই বলে থমকে যাবে??”

রাজ্য আমতা আমতা করে বলল,

“না, তেমন কিছু না। হটাৎ! এতদিন পর?”

“বসে কথা বলি।”

“ওহ্! স্যরি স্যরি! প্লিজ বসো না!”

হীর মুচকি হেসে সোফায় বসে রাজ্যকেও বসতে বলে। রাজ্য হীরের দিকেই তাকিয়ে আছে। এক ভয়ংকর আত্মগ্লানি তাকে চেপে ধরেছে। মেয়েটার সাথে সে অন্যায় করেছে। ভয়ংকর অন্যায়। তার পরেও কেমন হাসি মুখে কথা বলছে তার সাথে! মেয়েরা কি এমনই?? নাকি শুধু হীর এমন?? রাজ্যের এখনো মনে আছে আড়াই বছর আগের ঘটনাটা। এক গাদা লোকের সামনে হীরকে অপমান করার কথা। শুধু মাত্র তাকে সে প্রপোজ করার জন্য। হীর শেষ পর্যন্ত ভার্সিটি ছেড়ে চলে গিয়েছিল অন্য কোথাও। আজ এত বছর পর তাকে দেখে অবাক হওয়ারই কথা। হীরের কথায় রাজ্য আড়াই বছর আগে থেকে বর্তমানে ফিরে আসে।
হীর ভ্রু কুঁচকে বললো,

“রাজ্য! আর ইউ ওকে??”

“হুমম। আ‘ম ওকে!”

“তো বললে না যে, কেমন আছো??”

“ভালো! তুমি??”

“যেমন রেখে ছিলে।”

রাজ্য করুন দৃষ্টিতে হীরের দিকে তাকালে হীর শব্দ করে হেসে উঠে বলে,

“আ‘ম জাস্ট কিডিং! টেইক ইট ইজি!”

রাজ্য বিস্ময় দুঃখে নিচে তাকিয়ে আছে। তার খুব অসস্থি হচ্ছে। হীরের কথায় সে উপরে তাকায়। হীর গলা ঝেড়ে বললো,

“জিজ্ঞেস করলে না তো আমি কিভাবে নীশুকে পেলাম??”

রাজ্য খানিকটা অবাক হলো। তবে কিছু বলার আগেই হীর বলে ফেলে,

“তোমার মাঝে কি কিছু হয়েছে??”

রাজ্য অনিমেষ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় হীরের দিকে। হীর কিছু টা বিব্রত হয়ে বলে,

“আম‘ স্যরি! যদি তোমাদের পার্সোনাল ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করে থাকি।”

রাজ্য কিছু বলেনি। শুধু দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দেয়। হীর ঠান্ডা গলায় বললো,

“একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ নয় রাজ্য। এর জন্য সেক্রিফাইস, ভালোবাসা, মান অভিমান সব কিছুরই দরকার। আবার একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বোঝা যায় এর মানে ঠিক কতটা গুরুতর! তাই তোমরা ভেবেচিন্তে কাজ করো। আজকের ঘটনায় নীশুর অবশ্যই দোষ ছিল। তার মোটেও উচিত হয়নি এসব কিছু করার। তবে তুমিও কিন্তু তাকে সময় দিতে পারো। তার সবটা মেনে নিতে সময় অবশ্যই লাগবে। আজ যদি সে আমার গাড়ির সামনে না পড়ে অন্য কারো গাড়ির সামনে পড়ত তাহলে খুব খারাপ কিছুও হতে পারতো। এই দোষটা সম্পূর্ণই নীশুর। তোমার উচিত ছিল তাকে সবার সামনে না মেরে ঘরে গিয়ে ব্যাপারটা মিট করার।
এখানে দোষটা অবশ্যই তোমার।”

রাজ্য কথা গুলো শুনে বিড়বিড় করে বললো,

“এই মেয়েকে সোজা করার পথ আমি পেয়ে গেছি। থ্যাংক ইয়ু হীর!”

.

রাজ্য সন্ধ্যা পর্যন্ত হীরের সাথে বসে কথা বললো। থাপ্পড়ের পর একবারও দেখা হয়নি নীশুর সাথে। সে ইচ্ছে করেই করে নি। অবশ্য নীশু বেশ কয়েক বার উপর থেকে উঁকি ঝুঁকি দিয়েছিল। সে দেখেও না দেখার মত করে হেসে খেলে হীরের সাথে সময় কাটিয়ে দেয়।

বেশ রাত করেই সে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ঘরে ডুকে। নীশু আয়নার সামনে বসে চুলে বিনুনি করছে। রাজ্য খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে খাবারের প্লেট ঠিক জায়গায় থাকলেও নীশু নেই। সে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ্য ইচ্ছে করেই জোরে শব্দ করে তাকে ডাকছে। নীশু বিরক্তিকর শব্দ করে এসে বললো,

“আমি কি কানে কালা?? আস্তে বললে শুনতে পাই না??”

“মায়ের থেকে শুনলাম খাওনি। কেনো??”

“ক্ষিদে নেই।”

“ক্ষিদে নেই কেনো?? তুমি রোবটা নাকি?? না খেলেও চলে।”

রাজ্য উত্তরের অপেক্ষা না করে প্লেট হাতে নিয়ে বসে পড়ে। নীশু ভেবেছিল সে হয়তো তাকে খাইয়ে দিবে। কিন্তু এমন কিছু হয়নি। রাজ্য ভাত মেখে নিজের মুখে পুরে। শব্দ করে চিবোতে চিবোতে বলে,

“মেয়েরা সাধারণত একটা কারণেই রাতে ভাত খায় না। স্বামীর আদর খাওয়ার জন্য। তুমি কি এমন কিছু ভাবছো?? তাহলে সে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে খেতে বসো।”

সত্যি বলতে নীশুর আসলেই ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে। কিন্তু রাজ্য তাকে একবারও জিজ্ঞেস করেনি খাবে কিনা?? এখন সে কি রাজ্যের থেকে প্লেট টা ছিনিয়ে আনবে। অবশ্য এটা ছাড়া উপায়ও আর নেই।

.
.
.
(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here