কাছে দূরে পর্ব ৪০

#কাছে_দূরে 🥀
#moumita_meher
#পর্ব___৪০

—-‘ রাতুল,ইনান,মির!’

—-‘ হ্যালো মি. হিরো?’

বিস্মিত কন্ঠে একাধারে সবার নাম নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো সাবাব। রাতুল,ইনান এবং মির তিনজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেসে উঠলো। মুখে লম্বা হাসির রেখা টেনে তিনজনেই এসে ঝাপটে ধরলো সাবাবকে। সাবাব বিস্ময় কাটিয়ে তিনজনকে জড়িয়ে ধরে দৃঢ় হাসলো। ইনান তরীর দিকে চোখ ইশারা করে বলল,

—-‘ এই পেত্নী এখানে কি করে রে?’

তরী ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালো। সাবাব তরীর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল,

—-‘ আমার হবু বউয়ের দেখভাল করছে।’

রাতুল ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-‘ এখানেও বুয়া গিরি?’

তরী চেতে উঠলো। রাতুলের পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে বলল,

—-‘ তোর বাসায় কবে গিয়েছি বুয়া গিরি করতে?’

তরীর কথায় জবাব না দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো রাতুল। তরীকে আলগাভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,

—-‘ কেমন আছিস?’

—-‘ আ’ম ফাইন। তোদের খবর বল?’

মির বলল,

—-‘ আমাদের খবর অসাধারণ। আজ সাবাবের বিয়ের দাওয়াত খেয়ে বাড়ি নিয়ে নিজের বিয়ের দাওয়াত খাবো।’

সাবাব চোখ কপালে তুলে বলল,

—-‘ হোয়াট! নিজের বিয়ের দাওয়াত মানে?’

বাকিদেরও একই রিয়াকশন। মির রিলাক্স মুডে জবাব দিলো,

—-‘ মানে আর কি? বাবা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। কিন্তু মায়ের এমন তাড়া দেখে মনে হচ্ছে আজই নিজের বিয়ের দাওয়াতটা পেয়ে যাবো।’

মিরের কথা শুনে আবারও হেসে উঠলো সবাই। তরী হাসতে হাসতে বলল,

—-‘ তো সমস্যা কি ভাই? করে ফেল না?’

মির দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,

—-‘ আজ তুই ভাই না ডাকলে তোর আর আমার বিয়ের দাওয়াত টা একসাথেই খেতাম।’

রাতুল ফিক করে হেসে দিলো। ইনান হাসতে হাসতে মিরের গলা জড়িয়ে দাঁড়ালো। সাবাব মুখ টিপে হাসতে লাগলো। বাকি সবার মাঝে তরী কিছু বুঝতে না পেরে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। তরী যে কিছু বুঝতে পারেনি সেটা মির ঠিক আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই অসহায় মুখে বলল,

—-‘ বুঝিসনি তো কিছু?’

তরী ঠোঁট উল্টে না সূচক মাথা নাড়ল। মির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

—-‘ ভাগ্যিস কিছু বুঝিসনি।’

মিরের কথায় আবারও হাসতে লাগলো সবাই। তরী অসহায় মুখ করে সবার দিকে তাকাতে লাগলো। সাবাব তরীর কাঁধে হাত রেখে বলল,

—-‘ গত চার বছরেও যখন ওর কথার মানে তুমি বুঝতে পারোনি তখন রিলাক্স থাকো মাত্র পাঁচ মিনিটে ওর কথার এক অক্ষরও তুমি বুঝতে পারবেনা।’

রাতুল আর ইনান সাবাবের কথায় হাসতে হাসতে গাট্টা মারলো তরীর মাথায়। তরী দু’জনের হাতে গাট্টা খেয়ে ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু দু’জনের হাসির দরুন আর তরীর রিয়াকশনে পাত্তা দিতে পারলো না।

—-‘ বাই দ্য ওয়ে ডুড, আমাদের ভাবিজি কোথায়?’

মিরের প্রশ্নে হাসির বেগ চেপে সবাই মুখ উঁচিয়ে তাকালো। রাতুল এবং ইনান একসাথেই মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ হ্যাঁ রে। তোর হুরপরী কোথায়? আর আমাদের বিয়ের কনে? তার সাথেও তো দেখা করা উচিৎ কি বলিস?’

তরী সাবাবের রুমের দিকে ইশারা করে বলল,

—-‘ হুরপরী সাবাবের রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আর সানিয়া মেই বি ওর রুমেই হবে।’

সাবাব হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ হ্যাঁ। তার আগে তোরা এদিকে আয়? মা-বাবার সঙ্গে দেখা করবি তো।’

সবাই একসাথে বলে উঠলো,

—-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ।’

সাবাব সবাইকে নিয়ে গেলো তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে। আজিম সাহেবের সঙ্গে কারোর ভাব না জমলেও নাজমা বেগমের সঙ্গে সবার ভাব জমে গেলো। সবাই নাজমা বেগমের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ গল্প করে চলে গেলো সানিয়ার রুমে। সানিয়ার সাথে তাদের আড্ডার আসর জমলো আধঘন্টা। অবশেষে সাবাব সবাইকে নিয়ে হীরের কাছে হাজির হলো। হীর এখন মোটামুটি সুস্থই আছে। রাতে ডক্টরের ঔষধের ডোজে ভালো কাজ হয়েছে। সে বিছানায় বসেই গল্প করছিলো তার বন্ধুদের সাথে। সাবাব তার বন্ধুদের নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একরকম চমকে উঠলো সবাই। আদ্র, মিলি এবং এশা তাদের দেখতেই দাঁড়িয়ে গেলো। সাবাব সবাইকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে বলল,

—-‘ আরে আরে? কি হলো, সবাই দাঁড়িয়ে গেলে কেন? বসো। বসো।’

মিলি স্মিত হেসে জবাব দিলো,

—-‘ সমস্যা নেই ভাইয়া। তোমরা কথা বলো আমরা বরং পরে আসবো। এই চল চল?’

—-‘ ওয়েট ওয়েট ওয়েট। কাউকে কোথাও যেতে হবেনা। সবাই থাকো। ওরা হলো আমার ফ্রেন্ড। হীরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। তোমরাও পরিচিত হয়ে নাও?’

এশা চোখ জোড়া সরু করে বলে উঠলো,

—-‘ ভাইয়া, উনার কি সবাই বডি বিল্ডার? ওয়াও নাইস!’

কথাটা বলতে দাঁত কেলিয়ে হাসলো এশা। পাশ থেকে আদ্র খোঁচা মেরে বলে উঠলো,

—-‘ চুপ করে বেয়াদপ মহিলা।’

আদ্রর হাতে খোঁচা খেয়ে এশা চুপসে গেলো। মুখে হাত চেপে সটান হয়ে দাঁড়ালো। এশার কথায় মুখ টিপে হাসলো রাতুল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

—-‘ না, আমরা কেউ বডি বিল্ডার তো নই। তবে পার্সোনাললি আপনি চাইলে আমি জিমে ভর্তি হয়ে যেতে পারি।’

এশা থতমত খেলো রাতুলের কথায়। রাতুলকে খোঁচা মেরে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো মির,

—-‘ ডোন্ট মাইন্ড। ও একটু মজা করে নেয় মাঝেমধ্যে।’

এশা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ নো নো ইট’স ওকে ভাইয়া।’

‘ ভাইয়া!!’

রাতুল,ইনান এবং মির একসাথেই বলে উঠলো। এশা চোখ জোড়া বড় করে তাকালো। এশার রিয়াকশনে মুখে হাত চাপলো তিনজনই। রাতুলের পেছন থেকে মির তার কাঁধে হাত রেখে বলল,

—-‘ রিলাক্স ডুড, আমার মতো তোরও বিয়ে হবেনা।’

রাতুল ফুস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-‘ ইয়াহ।’

সাবাব সবার কান্ড দেখে হেসে উঠলো। রাতুলের কাঁধে হাত রেখে বলল,

—-‘ মেয় হু না? জাস্ট চিল। ওকে গাইস.. লেটস ইন্ট্রডিউস। এই হলো রাতুল,ইনান এনং মির। আর গাইস ওরা হলো হীরের ফ্রেন্ড আদ্র,এশা এবং মিলি।’

রাতুল লাজুক হেসে এশার উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ হ্যালো এশা।’

এশা মুচকি হেসে জবাব দিলো,

—-‘ হ্যালো ভাইয়া।’

—-‘ আবার ভাইয়া!’

রাতুল একহাতে মুখ আর অন্যহাতে বুক চেপে ধরে সাবাবের দিকে তাকালো। সাবাব রাতুলকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলল। অতঃপর হীরের দিকে ইশারা করে বলল,

—-‘ আর এই হলো হীর। হীর ওরা আমার ফ্রেন্ড। সে হাই?’

হীর সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

—-‘ হাই রাতুল ভাইয়া,হাই ইনান ভাইয়া, হাই মির ভাইয়া।’

হীরের ‘হাই’ গ্রহণ করে সবাই একসাথে বলে উঠলো,

—-‘ হ্যালো ভাবি।’

হীর চোখ জোড়া গোলগোল পাকিয়ে বলল,

—-‘ অ্যা!’

—-‘ উপস সরি। গালতি সে মিস্টেক।’

সাবাব মুখে হাত চেপে অসহায় চোখে তাকালো সবার দিকে।

____________________

‘বর এসেছে।’

কথাটা সোরগোলের মাঝে কানে ভেসে আসতেই একটা পুরো জনগোষ্ঠী ভীড় করলো গেইটের সামনে। সাবাব এবং তার বন্ধুরা তার সাথেই গিয়েছিলো বরকে গাড়ি থেকে নিয়ে আসতে। ফলে তারা সবাই এখন বরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর এপাশ থেকে কনে পক্ষের বেশিরভাগ আত্নীয়স্বজনরা ভুলে গেছেন সাবাব এবং তার বন্ধুরা কনের বাড়ির লোক। সাবাব এতো হৈচৈ এর মাঝে বুকে একহাত জড়িয়ে অন্যহাতে মুখ চেপে ধরে সবার কাহিনী দেখছে। পাশ থেকে রাতুল বোকা গলায় বলে উঠলো,

—-‘ হ্যাঁ রে বন্ধু? বিয়ে খেতে এসে কি বর পক্ষের হয়ে টাকা দিতে হবে নাকি?’

—-‘ ধুর ব্যাটা চুপ কর না। দেখছিস মহিলাগন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে…’

সাবাবের কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ইনান,

—-‘ ভাই, ভাবি!’

ইনানের ‘হা’ সূচক রিয়াকশনে কপাল কুঁচকে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো সাবাব। সামনে চারপাঁচ টা মেয়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তার স্বপ্নের রাজকন্যা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিকে বারবার ঝিলিক দিচ্ছে তার অসাধারণ হাসি। চোখের দৃষ্টি মাটিতে বিদ্ধ হতেই চিকচিক করে উঠলো চোখের পাপড়ি। এক ঝাঁক চুল চুম্বন করে গেলো তার লাল আভায় ঘিরে থাকা গালটা। ডান হাতের ন্যায় তাদের শাস্তি স্বরূপ কানের পাশে গুঁজে দিতেই টুংটাং আওয়াজ করলো কানের ঝুমকো খানা। ডানহাতটা নেমে এসে কাঁধে ঠেকল। আন্দাজেই শাড়ির আঁচলটা খানিক টেনে দিলো। চোখ পড়ল গলার ভারী নেকলেসটার উপর। আরে, এটা তো সেই নেকলেস টা যেটা তারা দু’জন মিলেই পছন্দ করেছিলো। কি দারুন মানিয়েছে পরীটাকে। শাড়িটা পারপেল রঙের। অসাধারণ মানিয়েছে। হীরের হাতটা কোমরের কাছে নেমে আসতেই সাবাবের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আকর্ষণীয় কিছু দর্শন হওয়ার ভয়ে মাথা নীচু করে ফেললো। কিন্তু কি ভেবে বেয়াড়া মনটা সায় দিলো। কারন তার অধিকার আছে সব কিছুতে। এই ভেবে স্বস্তি নিয়ে আবার তাকালো। হীর শাড়ির আঁচলটা হাতে ভাজ ভাজ করে উঠাতেই গলা শুঁকিয়ে এলো সাবাবের। হীর কোমর বন্ধনী পড়েছে। শাড়ির আঁচল ভেদ করে জ্বলজ্বল করছে সেখানে। সাবাব ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নিলো। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে মুখ উঁচিয়ে তাকালো হীরের দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই চোখাচোখি হয়ে গেলো দু’জনের। হীর যেন চমকে উঠলো। ধরা পড়া চোরের ন্যায় দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে লুকিয়ে পড়লো কারোর আড়ালে। সাবাবের মনের ভেতর শীতল হাওয়া বইছে। সে মনের অজান্তেই হেসে উঠলো। ডান হাত টা উঠিয়ে মাথা চুলকে বর প্রবেশ করানোর মহৎ চিন্তায় মনোনিবেশ করলো।

—-‘ না না না। এ মানবো না। ত্রিশ হাজার টাকা ছাড়া বরের বিয়ে করার চিন্তা বাদ দিতে হবে।’

বর পক্ষ উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো। মুহুর্তেই ত্রিশ হাজার টাকা কোথা থেকে টপকে পড়বে। আজকালকার মেয়েগুলো ভীষণ চতুর। বুঝেশুনেই দান চেলেছে। সাবাব ঠোঁট কামড়ে তাকালো সামনে। আর কতক্ষণ এদের ঘ্যানঘ্যান শুনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?
আর বরপক্ষও কেন এতো ড্রামা শুরু করলো কে জানে? টাকা দিয়ে দিলেই হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর তাড়াতাড়ি বিয়ে করো। কেন যে বুঝেনা।

—-‘ এই ভাই দশ হাজার টাকা দিয়ে দে তো।’

বর পক্ষের কেউ একজন বলে উঠলো কথাটা। আর অমনি ক্ষেপে গেলো মহিলাগন। সোরগোলে হট্টগোলে ভুবন কাঁপতে লাগলো যেন। সাবাব মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে সেই লোকের দিকে যে এক্ষনি বললো দশহাজার টাকা দিয়ে দাও। লোকটা সবার ক্ষোভে পরে পাশে লুকিয়ে গেলো। মেয়েরা আরও চেঁচামেচি হট্টগোল শুরু করে দিলো। সাবাব মূর্তিমান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে সাবাবের রিয়াকশন দেখে মুখ টিপে হাসছে হীর। মেয়েদের চেঁচামেচির দরুন তার কানের যে বারোটা বেজে গিয়েছে তা ঠিক আন্দাজ করে পারছে হীর। রোদে দাঁড়িয়ে সিদ্ধ হয়ে এমনিতেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে তার। পারপেল রঙের শেরওয়ানি পড়েছে সে। দেখে মনে হচ্ছে বিয়েটা বোনের নয় তার নিজেরই। মাথার সিল্ক চুলগুলো এক ভাজে গোছানো আছে। বিরক্তিতে কপাল খানা কিঞ্চিৎ কুঁচকে আছে। এক হাত কপালে ঠেকিয়ে ক্রমশই বিরক্তি চেপে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট খানা কামড়ে ধরে রেখেছে। ঘন পল্লব ঘেরা চোখ দুটো সরু আকার নিয়েছে। —-‘ ইশশশ’ হীর হঠাৎ অদ্ভুত শব্দ উচ্চারণ করে লাজুক হাসলো। সাবাবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পুনরায় লুকিয়ে পড়ল আড়ালে।

কনে পক্ষের কাছে পেরে উঠলো না বরপক্ষ। দাবি করা টাকাই তাদের বুঝিয়ে দিতে হলো। মেয়েরাও টাকা হাতে পেয়ে খুশি মনে বরকে বরন করে ভেতরে ঢুকতে দিলো। বরকে আসনে নিয়ে বসিয়ে কনেকে ডাকা হলো। অতঃপর কাজীকে নিয়ে আসা হলো। প্রথমে খাতিরদারি করে অবশেষে বিয়ে পড়াতে বসলো। বর কনেকে ভীড় করে সব মেহমানরা জায়গা নিয়ে বসল। হীর দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো মনির পাশে। দুজনের আলাপচারিতাও হচ্ছে কিছু। তা দেখে হন্তদন্ত হয়ে তেড়ে এলো সাবাব। হীরের হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো কাজির সামনে। সবাইকে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে ফট করে বলে ফেললো,

—-‘ আগে আমাদের বিয়ে পড়ানো হবে কাজী সাহেব।’

সাবাবের এমন অদ্ভুত কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো সবার। হীর হোঁচট খেয়ে পড়লো যেন। নাজমা বেগম,আজিম সাহেব,মনিকা,শীলা,সানিয়া,নেহাল সবাই হা হয়ে তাকালো সাবাবের মুখের দিকে। আজিম সাহেব বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলেন,

—-‘ সাবাব? হঠাৎ কি ইয়ার্কি শুরু করলে তুমি?’

সাবাব শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো,

—-‘ আমি কোনো ইয়ার্কি শুরু করছি না বাবা। আমি হীরকে বিয়ে করবো। আজ এবং এক্ষনি।’

সানিয়া চকিত নজর বুলালো দু’জনের দিকে। নেহাল সানিয়ার দিকে একবার তাকাচ্ছে আবার হীর,সাবাবের দিকে একবার তাকাচ্ছে। পেছন থেকে মনিকা এগিয়ে এলো। ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালো দু’জনের দিকে। অতঃপর বলে উঠলো,

—-‘ বিয়ে করবে মানে? এভাবে কি বিয়ে হয় নাকি? এই বললাম আর বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়েতে কত নিয়ম কানুন থাকে! আর সবচেয়ে জরুরি ছেলে মেয়ের দু’জনের মত। তুমি বলছো বিয়ে করবে কিন্তু হীর? ও তো কিছু বলছেনা।’

সাবাব মনিকার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। মাথা টা খানিক নীচু করে ভ্রু চুকলে জবাব দিলো,

—-‘ হীরের মত থাকুক বা না থাকুক, ডাজেন্ট ম্যাটার মনি। আমি ওকে বিয়ে করব, ব্যস। ইট’স এনাফ।’

—-‘ হোয়াট! ভাইজান? আপনি কিছু বলবেন না? আপা?’

নাজমা বেগম কিংকর্তব্যবিমুঢ়! তিনি কোনো বাক্য আওড়াতে পারছেন না। তবে তিনি মনে মনে বিশ্বাস করেন, হীর তার ছেলের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদে থাকবে। হীরের জন্য সাবাব সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।

#চলবে_

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here