কাছে পাশে পর্ব ৬

#কাছে_পাশে
#পর্ব_৬
#Hiya_Chowdhury

রোদ কোনো ভাবে খেয়ে উঠে। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের। ভীষণ রকমের রাগ উঠে গেছে। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রোদ। আর সাথে ফুলদানি টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

-ওর আমার হাতে খেতে সমস্যা..! শুভ্রর হাতে খাবে। কেন আমার হাতে খেলে কি হবে? আমার হাতে কি বিষ আছে?

ভাঙ্গচুরের শব্দ শুনে রোদের আম্মু আর রোদের চাচিমা দৌড়ে আসে। রোদের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ করা।

-রোদ কি হয়েছে বাবা? তোর রুম থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেলাম।

-কিছু না আম্মু। ঐ ফুলদানি টা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে।

-আমি দেখবো তুই দরজা খোল।

-আরে আম্মু কিছু হয় নি তো। তুমি যাও আমি এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।

-আরে রোদ শোন……

রোদ দরজা খুললই না। উল্টো রুমের লাইট অফ করে দেয়। আর রোদ বেলকনিতে চলে যায়।

সারা রাত একটু ও ঘুমায় নি রোদ। চোখ গুলে ফুলে টুকটুকে লাল হয়ে আছে। জুহি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর রিমি ঝিমি রুমে যায়।

-এই যে ছোট আপি রা উঠো। সকাল হয়ে গেছে।

-ওহ আপু আরেক টা ঘুমাই না।

-একদম না। উঠো বলছি নয়তো এখন আমি নিচে গিয়ে মামনি কে সব বলে দেবো।

-কি বলবে? (রিমি ঝিমি দুজনেই লাফিয়ে উঠে বসে)

-তোমরা ড্রিঙ্ক করেছো এটা।

-এই আপু এটা ভুলে ও বলবেন না। আব্বু আম্মু রা শেষ করবে আমাদের।

-তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো।

-আচ্ছা বাট আপু রাতে কি আমাদের কে ডিনার করার জন্য আম্মু রা ডাকে নি?

-নাহ শুভ্র ভাইয়া বলে দিয়েছে তোমরা ছোট মানুষ সারাদিন ঘুরে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছো তাই আর কিছু বলে নি মামনি।

-ওহ তাহলে বাঁচা গেলো।

-হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও।

-ওক্কে আপু।

তারপর জুহি রোদের রুমে যায়। জুহি ভেবেছিলো দরজা বন্ধ কিন্তুু নাহ হালকা একটা ধাক্কা দিতে দরজা খুলে গেলো। রুমে ঢুকেই থ হয়ে যায় জুহি। ফুলদানি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।

জুহি ভালোই বুঝতে পেরেছে এটা রোদের কাজ। কিন্তুু কেন এমন করলো সেটাই বুঝতে পারলো না জুহি। তারপর জুহি খুব সাবধানে ফ্লোর থেকে কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

জুহি পুরো রুম খুঁজে দেখে কোথাও রোদের নাম গন্ধ ও নেই।

-সকাল সকাল এই মশাই গেলো টা কোথায়? ফ্লোরে পড়ে আছে ফুলদানির ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো আর রুমে উনি নেই? আশ্চর্য! (মনে মনে)

জুহি বেলকনিতে গিয়ে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় রোদ কে বেশ মায়াবি লাগছে। জুহি আস্তে আস্তে রোদের পাশে।

-‌এই যে ভাইয়া উঠেন নিচে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।

কয়েকবার ডাকার পর রোদ চোখ খুলে। চোখের সামনে জুহি কে চমকে উঠে।

-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছেন?

-কিছু না। কেন এসেছিস? (রোদের রাতের কথা মনে পড়ে যায়। তাই সে চোখ ফিরিয়ে নেয়)

-আপনাকে নাস্তা করার জন্য ডাকতে।

-শুভ্র কে ডাকিস নি। (দাঁতে দাঁত চেপে)

-ডেকেছি তো।

রোদের আরো রাগ উঠে যায়। আর অন্যদিকে জুহি খেয়াল করে রোদের চোখ মুখ ফুলে আছে। আর চোখ গুলা লাল হয়ে গেছে।

-এই ভাইয়া আপনি কি রাতে ঘুমান নি? মনে হচ্ছে রাতে কান্না করছেন! চোখ গুলা লাল হয়ে আছে। তা ভাইয়া বিয়ের জন্য কেঁদেছেন বুঝি। আচ্ছা সমস্যা নাই আমি মামনি কে বলে দিবো আপনাকে বিয়ে করানোর জন্য।হিহিহি….

সব কথা শেষ করে জুহি রোদের দিকে তাকাতেই দেখে রোদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর কথা শুনেই রেগে গেছে। জুহি চুপ মেরে যায়।

-যেভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে চোখ গুলা দিয়েই আমাকে গিলে খাবেন।

-তোর কথা শেষ হলে এখন যেতে পারিস।

-আচ্ছা আপনি নাস্তা করতে আসেন। বাপরে এতো রাগ করার কি আছে।

জুহি এক দৌড়ে চলে যায়। কারণ রোদ আরো বেশি রেগে যাচ্ছে। কখন জানি মেরে ওর হাড্ডি গুড্ডি সব এক করে দেয়।

রোদ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। জুহির দিকে আর তাকালোই না। কারণ রাগ উঠলে নিজেই কি করে বসবে ঠিক নেই।

রোদ অফিসে শান্তি মতো থাকতেই পারছে না। মন টা কেমন জেনো উশখুশ করছে। এই মনে হচ্ছে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে কথা বলছে। প্রচন্ড রকমের হিংসা হয় রোদের। সাথে রাগ ও। হয়তো এটা সবার ক্ষেত্রে ই এক। নিজের ভালোবাসার মানুটি কে যদি অন্য কারো সাথে দেখা যায় কেউ ই তা মেনে নিতে পারে না।

কারণ সবাই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি একান্তই তার নিজের হোক। সে সুখ দুঃখ হাসি কান্না দুষ্টুমি সব তার সাথেই করুক। কিন্তুু সেটা যদি সম্পূর্ণ উল্টো হয় তাহলে হিংসা রাগ অভিমান এসব হওয়া টা স্বাভাবিক।

রোদের অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। মন থেকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে মনযোগ দিয়ে কাজ করছে রোদ। সব কাজ শেষ করে রোদ বাসায় আসে। রোদ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতেই দেখে কাব্য শান্ত রিমি ঝিমি শুভ্র আর জুহি সবাই এক সাথে বসে ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছে। রোদ ও গিয়ে ওদের সাথে বসে।

-ভাই তুই ও এসেছিস চল এবার সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি।

-ওকে চলো।

রোদ না করলে ও সবাই ওকে জোড় করে খেলতে বসায়। হাতে কাছে একটা কাঁচের বোতল নেয়।

-শোনো ঐ টা বোতল টা ঘুরে ঘুরে যার দিকে যাবে তাকেই ট্রুথ অর ডেয়ার ২ টা থেকে একটা চয়েস করতে হবে। আর তোমরা তো খেলার নিয়ম জানোই।

-হুম।

প্রথমে আসে শান্তর পালা। রিমি বলে উঠে।

-শান্ত বল কি নিবি?

-ট্রুথ….

-তুই যে ভিতুর ডিম সেটা আমি জানতাম ই ট্রুথ নিবি।

-দেখ রিমি একদম ইনসাল্ট করবি না।আমি মোটে ও ভিতু না। (রেগে)

-আহা রিমি থাক না। ট্রুথ ও তো খেলার ই অংশ সবাই যদি ডেয়ার নিবে তাহলে ট্রুথ কে নিবে? (জুহি)

-ওখে,,যাই হোক প্রশ্ন করছি উওর দে শান্ত। আচ্ছা ধর সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে একটা কমলার গাছ আছে। তো তোকে সেই কমলা গাছ টার থেকে একটা কমলা পেড়ে নিয়ে আসতে হবে। তুই কিভাবে নিয়ে আসবি?

-ডানা দিয়ে উড়ে উড়ে নিয়ে আসবো।

-ডানা কি তোর শশুড় মশাই এসে তোর পিঠে সুপারগ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিবে?

-সমুদ্রের মাঝখানে কমলা গাছ কি তোর জামাই লাগিয়ে দিয়ে আসবে?

-আরে আমি তো প্রশ্ন করছি!

-আমি ও উওর দিলাম।

এরকম রিমি আর শান্তর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় কারো শশুড় তো কারো জামাই। অবস্থা নাজেহাল।

-হয়েছে শান্ত আর রিমি এবার কথা অফ করো।

-কথা আমি বলছি নাকি জুহি আপু বলো তো? ঐ বাচাল মেয়ে টা ই না বলছে।

-তুই বাচাল। (রেগে)

-ওহো তোরা থামবি প্লিজ।

-আচ্ছা থেমে গেলাম হুহ।

-হুহ ২…..

এভাবে খেলতে খেলতে শুভ্রর পালা আসে। জুহি শুভ্র কে বলে।

-ভাইয়া বলো কি নিবে? আমি জানি তুমি অনেক সাহসী সো ট্রুথ তো নিবে না।

-আচ্ছা ডেয়ার নিলাম।

-এইইইই জুহি আপু তুমি থামো। আমি শুভ্র ভাইয়া কে বলবো উনি কি করে দেখাবে।প্লিজ আপু প্লিজ। (কাব্য)

-আচ্ছা কাব্য তুমি ই বলো।

-শুভ্র ভাইয়া তুমি জুহি আপু কে প্রপোজ করো।

-কিহ…….!

রোদ ছাড়া সবাই কাব্যের কথা শুনে অবাক। রোদ তো কাব্যের উপর রেগে গেছে। এসবের কোনো মানেই হয় না।তাই রোদ বলে উঠে।

-এসব কি কাব্য? (রেগে)

-খেলা ই তো ভাইয়া। দেখি না শুভ্র ভাইয়া কেমন সাহস।

-আচ্ছা রোদ ভাইয়া তুমি কেন এমন করছো বলো তো। (ঝিমি)

রোদ আর কিছুই বললো না।

-শুভ্র ভাইয়া দেখি তো তোমার কত্তো সাহস? (রিমি)

-আচ্ছা দেখ। বাট কি দিয়ে প্রপোজ করবো রে কাব্য?

-ওয়েট….

কাব্য দৌড়ে গিয়ে নাস্তার টেবিল থেকে একটা কাটা চামচ নিয়ে আসে। তারপর এটা শুভ্রর হাতে দেয়।

-এই নাও ভাইয়া এটা দিয়ে প্রপোজ করো।

-ফুল বাদ দিয়ে শেষে কিনা কাটা চামচ…?

সবাই হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কাব্যর কান্ড দেখে। রোদ ও জোড় করেই হাসছে। ভিতরে ভিতরে রেগে আগুন।

শুভ্র ও জুহি কে প্রপোজ করে আর জুহি ও তা হেসে হেসেই এক্সেপ্ট করে এটা দেখে রোদ জ্বলে যাচ্ছে। নাহ এখানে আর বেশি সময় থাকা যাবে না। রোদ উঠে চলে যায়।

-কিরে রোদ কোথায় যাচ্ছিস? খেলবি না?

-ভালো লাগছে না আমার।

রোদ নিজের রুমে পায়চারী করছে। একটা কিছু করতেই হবে। নিজের চোখের সামনে জুহি কে শুভ্রর সাথে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না এসব।

রোদ চলে আসায় ওরা ও আর খেলে নি। যে যার রুমে চলে যায়। কেউ ফোনে চ্যাটিং করছে কেউ বা গেমিং করছে কেউ বা ফোনে কথা বলছে। জুহি কে রোদ তার রুমের সামনে দিয়ে যেতে দেখেই রোদ জুহি কে ডাক দেয়।

-জুহি…..

-হ্যাঁ ভাইয়া। বলেন।

-আয় আমার সাথে।

-কোথায়?

-ছাঁদে।

-এখন ছাঁদে?

-হুম চল।

-আচ্ছা চলেন।

রোদ আর জুহি ছাঁদে যায়। রোদ খুব শান্ত ভাবেই জুহি কে বলে।

-দেখ জুহি তুই শুভ্রর সাথে মিশবি না। ওর সাথে তেমন কথা বলবি না। দূরে দূরে থাকবি।

-কেন?(অবাক হয়ে)

-আমার ভালো লাগে না তাই।

-আপনার কি ভালো লাগে কি লাগে না সেটা জেনে আমার তো কোনো কাজ নেই। সো সরি। আপনার কথা আমি রাখতে পারলাম না।

-জুহি…..(রোদ জুহির কথায় ভীষণ রেগে যায়। রেগে গিয়ে জুহির হাত দুটো পিছনে চেঁপে ধরে)

-আহ ভাইয়া ছাড়ো প্লিজ আমার হাতে লাগছে। (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

-লাগুক। তোর শুভ্রর সাথে কিসের কথা? ওর হাতে খাবি আমার হাতে খাবি না। ওর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলবি আর আমার সাথে বলবি না। কি সমস্যা হ্যাঁ? তুই বুঝিস না তোকে শুভ্রর সাথে এসব করতে দেখলে আমার জ্বলে যে? বুঝিস না তুই?

-মনে আছে আপনার? ছোট বেলায় যখন আমি আপনাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে নিষেধ করতাম তখন আপনি কি করতেন? আমাকে বকা দিতেন! আমাকে নানা ভাবে অপমান করে আরো বেশি কথা বলতেন! একদিন তো একটা মেয়ের সামনে আমাকে থাপ্পড় দিলেন। কই তখন তো আপনার জ্বলে নি?! সেই সময় তো আপনি আমার কথা শুনেন নি! তাহলে আজকে আমি কেন আপনার কথা শুনবো…? আপনি যা যা আমার সাথে করেছেন তা যদি এখন আমি আপনার সাথে করি? কেমন লাগবে ভেবে দেখেছিলেন কখনো?

রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়……..

চলবে————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here