কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব -১০

#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_১০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

সকাল চুপচাপ বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কি করবে বা কি করা উচিত কিছুই মাথায় আসছেনা।ধ্রুব তখনো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তাকেই দেখছে।সকাল শুকনো ঢোক গিলে ভাবে এতো দেখার কি আছে?এই লোক কি বুঝতে পারেনা এমনভাবে তাকিয়ে থাকলে সকালের ভিষণ লজ্জা লাগে।আজকে যা ঘটেছে তা সকালের ভাবনার বাহিরে ছিলো।এমন কান্ডকারখানা হওয়াতে সে মানষিকভাবে বেশ ক্লান্ত,মনটাও কেমন ভারাক্রান্ত।রাত গভীর,সকালের ছোট শরীরে এতো ধকল নিতে পারেনা,সে বেশ ক্লান্ত,কিন্তু আশ্চর্যের কথা হচ্ছে তার একটুও ঘুম পাচ্ছে না,বুকটা কেমন দিমদিম করে কাঁপছে,না চাইতেও চোখজোড়া তার সদ্য হওয়া স্বামীর উপরেই গিয়ে স্থির হচ্ছে।ধ্রুবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য কতো আকুলতা,আর সেই ধ্রুব এখন স্বয়ং তার স্বামী।সকালের কেমন জানি অনুভূত হচ্ছে।ধ্রুব তাকে মিতুর রুমে যেতে দিলোনা কেনো?আর এভাবে তাকিয়েই বা আছে কেনো?কনকনে ঠান্ডার মাঝে নিজের কান দিয়ে উঠা গরম বাতাসের অস্তিত্ব টের পায়।আচ্ছা সে কি লজ্জা পাচ্ছে?নিজের লজ্জার বহর দেখে আরো লজ্জায় ডুবতে ইচ্ছে করছে।

ধ্রুব লাজুকলতার মতো নেতিয়ে পড়া কিশোরীর দিকে তাকিয়ে থাকে।সে বেশ বুঝতে পারছে সকাল ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে।তার তাকানোর কারনেই যে লজ্জার হার দ্বিগুণ হচ্ছে এটা বুঝতে পেরেও চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না বরং এই ছোট্ট মেয়েটার হাত ধরে লজ্জার নদীতে ডুবাতে ইচ্ছে করছে।ধ্রুব আস্তেধীরে সকালের কাছে যায়।সকাল ধ্রুবর দিকে তাকায়।চোখে মুখে আ/তংক বিরাজমান।ধ্রুব বিছানায় বসে বললো,
“বসো।”

সকাল বেশ দূরুত্ব রেখেই বসলো।আঁড়চোখে একবার ধ্রুবকে দেখে ভ/য়ে জিব দিয়ে গলাও ভিজিয়েছে।ধ্রুব সকালের সব কান্ডই লক্ষ করছে।সে বললো,
“তুমি কি আমাকে ভ/য় পাচ্ছো?”

সকাল কিছু বলেনা।সে আসলেই চেয়েছিলো ধ্রুব জীবনে আসুক,মা/তাল বাতাসে তাকে দুলিয়ে দিয়ে যাক সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটাই সকালের সামনে বসে আছে যাকে কিনা তার অনেক ভ/য় লাগছে,কিন্তু সকাল কি সত্যিটা বলবে?যদি ধ্রুব রে/গে যায়।এসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতেই ধ্রুব বললো,
“আমি ভ/য় পাওয়ার মতো কেউ না।আর এমন কিছু করবোও না যা ভ/য়ের কারণ হবে।”

ধ্রুবর সহজ সাবলীল কথায় সকাল সত্যিটাই বলে,
“ভ/য় লাগছে।”

“কেনো?”

সকাল ধ্রুবর শীতল চোখের দিকে তাকায়।
“বারবার মনে হচ্ছে আপনিও যদি ওই লোকটার মতো হিং/স্র হয়ে আমাকে কষ্ট দিতে আসেন।”

ধ্রুব মনে মনে এটাই ভেবেছিলো আর তার ধারনাই ঠিক হলো।সকালের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“হাত ধরলেও কি ভ/য় পাবে?”

সকাল অবুজ নয়নে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়।ধ্রুবর একপা ফ্লোরে আরেকপা বিছানায় মুড়ে বসেছে,সে একটু সকালের দিকে এগিয়ে আসে।খুব সাবধানে সকালের ডান হাতটা নিজের দু’হাতে আঁকড়ে ধরে।সকাল চমকে যায়,মৃদু কেঁপেও উঠে।ধ্রুব সকালকে বললো,
“আমাকে আর শাহীনকে এক ভাবার কিছু নেই।আমি শাহীনের মতো হিং/স্র কখনোই হবো না।আমি তোমাকে খুব চাইতাম,হয়তো ভালোওবাসি আর এটাও জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো তাই বিয়েটা যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেনো আমরা দুজন মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো।তাই না সকাল?তুমি আমাকে মেনে নিবে তো?”

সকাল মুগ্ধ চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে।ধ্রুব তাকে মেনে নিতে বলছে!সকাল মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়।ধ্রুব সকালের হাসির রেশ ধরে নিজেও হাসে।সকালের হাতে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে আলতো ঘষে বললো,
“আমাদের মধ্যে যা হবে সবকিছুতেই তোমার সম্মতি নিয়েই হবে।ঠিক আছে?”

ছোট সকাল এতো সম্মান পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়।আলতো স্বরে বললো,
“আচ্ছা।”

ধ্রুব আর কিছু বলেনা।মাথা ঝুকিয়ে চুপ করে সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।সকাল তার দৃষ্টি অনুসরন করে লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে লজ্জা লুকাতে চায়।কিন্তু লুকাতে পারে না ধ্রুব ঠিকি লজ্জামাখা মুখটা দেখে নেয়।আস্তে করে বলে,
“আমার বউটা এতো ছোট কিন্তু এই ছোট বউয়ের এতো বড়ো বড়ো লজ্জার বহর।”

সকাল ঠোঁট টিপে হাসে।ধ্রুব মুগ্ধ চোখে সকালকে দেখে।
“স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কখন মধুর হয় জানো?”

সকাল চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।ধ্রুব বলে,
“স্বামীকে স্বামী ভাবার আগে বন্ধু ভাবতে হবে।বন্ধু ভেবে নিজেকে ভেঙে বলার ক্ষমতা রাখতে হবে।দুজনের সম্পর্ক হাত আর চোখের মতো হবে যেনো হাত আ/ঘাত পেলে চোখের পানি পড়ে আর চোখের পানি পড়লে হাত মুছে দেয়।বুঝেছো?”

“জ্বী।”

ধ্রুব ছোট সকালের দিকে তাকিয়ে ভাবে,এই ছোট মেয়েটাকেই সে নিজের মতো করে গড়ে নেবে,বুঝিয়ে পড়িয়ে,শিখিয়ে দেবে।
“দুজনের সম্পর্ক বন্ধুর মতো হবে।একে অপরকে বিশ্বাস করবে।সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে,বিশ্বাস,ভরসা,ভালোবাসা।”

সকাল ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে।ধ্রুব বললো,
“আমাকে এখনো ভ/য় পাচ্ছো?”

“না।”

“গুড গার্ল।”

ধ্রুব বিছানার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুয়ে পড়ো।রাত তো অনেক হলো।”

ধ্রুব উঠে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।সকাল আস্তে করে বিছানার ডান পাশে শুয়ে পড়ে।ধ্রুবর বিছানায় কেমন ধ্রুব ধ্রুব ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে।সকালের দম বন্ধ হয়ে আসে,হাত পা অসার হয়ে যাচ্ছে।ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে ড্রীম লাইট জ্বালিয়ে বিছানার কাছে আসে।সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সকাল!ওপাশে যাও।স্বামীর বাম পাশে নাকি শুতে হয়।”

সকাল আধো আধো আলোয় বিছানার বামপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।ধ্রুব শুয়ে বললো,
“কালকে তোমার মা বাবা আসতে পারে,উনাদের যা বলার আমি বলবো তুমি একদম ভ/য় পেওনা,কেমন?”

সকালের মনে হচ্ছে তার মা বাবার পরে ধ্রুবই তারা ছায়াস্থল।ধ্রবই তাকে আগলে রাখবে।ধ্রুব তাদের দুজনের মাঝে কোলবালিশ দিয়ে একটা কম্বলই দুজনের গায়ে দিয়ে দেয়।ড্রিম লাইটের আধো আলোয় ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ঘুমিয়ে পড়ো।”

“আচ্ছা।”

সকাল ধ্রুবর কথামতো চোখবন্ধ করলেও তার ঘুম আসেনা।পাশে যে প্রিয় পুরুষ!তার গা থেকে ভেসে আসা তীব্র ঘ্রাণে সকালের দম বন্ধ হয়ে আসছে।কেমন অচেনা শিহরণ গলা চে/পে ধরছে।

ধ্রুব ঘুমাতে পারেনা।আটাশ বছরের জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে তার বিছানায়।এমনকি এই মেয়েটাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নিজের সামনে উপস্থাপন করতেও কোনোবাধা নেই,মেয়েটা যে তার জন্য সম্পূর্ণ হালাল,তার বউ।আঠাশ বছরের উত্তাল যৌবন কেঁপে উঠে জানান দেয় গভীর প্রণয়ের।শরীর কাঁপিয়ে য/ন্ত্রণা হয়।সকালকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা শরীর বি/ষিয়ে দিচ্ছে।ধ্রুব চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে পরে থাকে।কোনোভাবেই সকালকে ছুঁবে না।আজকে যদি সে সকালকে ছুঁয় তাহলে তার আর শাহীনের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবেনা।সকাল তাকে আর কখনো ভালো চোখে দেখবেনা।হ্যাঁ চাইলে সকালকে কাছে টানা সম্ভব একটা পুরুষ চাইলে একটা মেয়ে কখনোই আটকাতে পারবে না কিন্তু ধ্রব যে এমন মিলন চায় না।সে চায় সম্মতির মিলন,যে মিলনে সইচ্ছায় সকাল নিজেকে ধ্রুবর কাছে সপে দেবে।ধ্রুব চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করে।একসময় ঘুমিয়েও যায়।ভোরে ঘুম ভেঙে তার সকালের মিষ্টি মুখটা দেখে সে মুচকি হাসে।তখনি সকাল চোখ খুলে তাকায়।ধ্রুবকে দেখে বেশ চমকে যায়।ধ্রুব বললো,
“আরে আরে!আমি তোমার জামাই কালকে বিয়ে হয়েছে।ভুলে গেছো?”

সকাল ধ্রুবর বলার ভঙ্গিমায় হেসে ফেলে।ধ্রুব সকালের গালে আলতো হাত রেখে বললো,
“তোমাকে দেখেই যেনো জীবনের বাকিটা রাত থেকে ভোর হয়।”

সকাল কথা বলেনা।ধ্রুবর হাতের ছোঁয়ায় চোখ বন্ধ করে রাখে।ধ্রুব সকালের গাল টেনে দিয়ে বললো,
“ইশ!আমার আদুরে বউ।”

সকাল মনে মনে ভাবে লোকটা এতো লজ্জা দেয় কেনো?

ধ্রুব নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।সকালের বাবা মা বিকালে আসবে।অফিসে যাওয়ার আগে সকালের সাথে দেখা করতে চাইছিলো কিন্তু মেয়েটা কাছে আসতে নারাজ সেই যে রান্নাঘরে গিয়েছে আর বের হয় নি।ধ্রুব শান্তিমতো অফিস করতে পারলো না এতো পরিমাণ ছটফট লাগছে যে কাজ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।শেষমেশ সে এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো।বসের কাছে গিয়ে বললো তার ভিষণ পেট ব্যাথা অফিস করা সম্ভব না।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় আসে।সে ভেবেছিলো দুপুরে তো সকাল রুমে আসবেই কিন্তু তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করে সকাল মিতুর সাথে ঘুমিয়ে গেলো।মুখ ভোতা করে ধ্রুব বসে থাকে ঘন্টার পরে ঘন্টা।এই জন্যই বাচ্চা বিয়ে করতে চায়নি কই জামাই এসেছে পাশে ঘুরঘুর করবে তা না অন্যরুমে ঘুমাচ্ছে।সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিকালে স্নেহা আসে।মনোয়ারা দরজা খুলে দেয়।সবাই তখন ড্রয়িংরুমে বসে আছে।স্নেহা মনোয়ারাকে দেখে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বললো,
“আন্টি ধ্রুবর শরীর এখন কেমন?”

মনোয়ারা চমকে স্নেহার কথার মানে বুঝার চেষ্টা করে।পিছনে ফিরে সুস্থসবল ধ্রুবকেও দেখে নেয়।স্নেহাকে ভেতরে আনতে আনতে বললো,
“কই!আমাকে তো কিছুই বলেনি।”

সবাই তখন স্নেহার কথা শুনছে।সে বললো,
“কি বলেন?ধ্রুব না বললো তার ভিষণ পেট ব্যাথা তাইতো অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসলো।”

সবাই তখন ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুবর তখন ঠিকি পেঠ ব্যাথা শুরু হয়।স্নেহা ধ্রুবর পাশে বসে খুবই স্মার্টলি ধ্রুবর কপালে হাত রেখে বললো,
“কি ব্যাপার?কমেনি?”

ধ্রুব আড়চোখে সকালের দিকে তাকায়।সকাল কিছু না বলে রুমে চলে যায়।ধ্রুব সবার দিকে তাকিয়ে বেশ লজ্জা পায় কেনোনা সবাই মুচকি হাসছে।ধ্রুবর ইচ্ছা করছে টিটেবিলের নিচে লুকিয়ে যেতে।শিট!শিট!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here