কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় পর্ব ৫

কাঠগোলাপের সাদার মায়ায়
পর্ব-৫
যত দিন যাচ্ছিলো আমার অস্থিরতা তত বেড়েই যাচ্ছিল। আমি নিলয় কে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু সে বান্দা আমায় দেখলে এড়িয়ে চলে। সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে যদি আমাকে দেখে তাহলে হয় নিচে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে নাহলে সোজা ঘরে চলে যায়। এই ব্যপার টা আমাকেও খুব অস্বস্তিতে ফেলছিল। আমি কী একটু বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি ওর সাথে! যে ও আমায় এভাবে এড়িয়ে চলে। রোজ বিকেলে আন্টির সাথে গল্প করতে যাই ঠিক ই কিন্তু ওর সাথে আমার দেখা হয় না। ও ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করে, নাকি ইচ্ছে করে আমার জন্য ঘর থেকে বের হয় না তা আমি জানি না। এভাবে অনেকগুলো দিন চলে গেল। একটা সময়ে আমার মনে হলো আমি একটু বেশীই গায়ে পড়া আচরণ করছি বলে ও আমাকে এমন এড়িয়ে চলছে। ব্যাপার টা আমাকে আরও বেশি পীড়া দিচ্ছে। আমার অস্থিরতা ঘরের মানুষের চোখেও পড়লো। বাবা ব্যস্ত মানুষ তাই তার চোখে না পড়লেও মায়ের চোখে পড়েছে। মা একদিন জিজ্ঞেস করলো, নিলয় দের বাসায় রোজ রোজ কেন যাস প্রত্যাশা?
আমি একটা কিছু বলে মা’কে ম্যানেজ করার চেষ্টা করি তবুও মা অন্যচোখে তাকায়। ভাইয়াও জানতে চায় আমি কোনো কিছু নিয়ে প্রবলেমে আছি কি না। কিন্তু কাউকে ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারি না। একটা সময় মনে হয় কাউকে আমার মনের কথাগুলো বলা দরকার। না বলতে পারলে দমবন্ধ হয়ে মরে যাব তখন ছুটে গেলাম কলেজের বন্ধু ইলার কাছে। সব শুনে ইলা বলল, শোন প্রত্যাশা আমার মনে হয় ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। আরে ও তো শহুরে ছেলে! একটা স্মার্ট গার্লফ্রেন্ড না থেকে পারে না। দেখ সেজন্য হয়তো তোকে পাত্তা দিচ্ছে না।

ইলার কথায় কষ্ট লাগলেও মেনে নিতে চেষ্টা করলাম। সত্যিই তো, ওর হয়তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাই আমায় পাত্তাই দিচ্ছে না। চেষ্টা করলাম নিলয় কে মন, মস্তিষ্ক সব জায়গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। কিন্তু সেটা আমার জন্য সম্ভব ছিলো না। ভাবলাম নিলয় কে ভালোবাসার কথা বলব। যা হয় হোক।
কিন্তু ব্যাপার টা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ ছিলো না। নিলয় আমার সাথে ঠিকঠাক কথাই যেখানে বলে না সেখানে ওকে কী করে নিজের ভালোবাসার কথা বলি!

এক বিকেলে আন্টির সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ বললাম,
“আন্টি আমার একটা সাবজেক্টের কিছু ব্যাপার জানার দরকার ছিলো। একটু কী নিলয় ভাইয়ার সাথে কথা বলা যাবে?”

আন্টি চোখ কপালে তুলে বলল, ওমা একি বলছ! কেন যাবে না, যাও নিলয় তো ওর ঘরেই আছে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

“আন্টি আপনি একটু নিলয় ভাইয়াকে বলে দিলে ভালো হয়। ”

আন্টি আমার কথা শুনলেন। আমাকে নিয়ে নিলয়ের ঘরে গেলেন। নিলয় একমনে কম্পিউটারে কিছু একটা দেখছিলো। আন্টি গিয়ে বলল,

“এই নিলু প্রত্যাশার নাকি কোন একটা সাবজেক্টে খুব সমস্যা। একটু দেখিয়ে দে না ওকে। ”

নিলয় সরু চোখে তাকালো। আন্টি অপেক্ষা করলেন না চলে গেলেন।

আমি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই প্রথম আমার কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। নিলয় আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল,

“তুমি না বিজনেস স্টাডিজে পড়ছ? আমি কী করে তোমার প্রবলেম সলভ করে দেব?”

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। বুক দুরুদুরু করছে। এটাকে কী বলে আমি জানিনা। তবে ঝগড়া করা আমি আর এই আমির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
আমি বললাম, আসলে আমি মিথ্যে বলেছি। আপনার সঙ্গে আমি অন্য কথা বলতে এসেছিলাম।

নিলয় চোখ, মুখ শক্ত করে বলল, মিথ্যে বলা আমি পছন্দ করি না। আই হেট লায়িং এন্ড আই লায়ার।

মুহুর্তের মধ্যে সব অনুভূতি উবে গেল। বুক দুরুদুরু, অন্য রকম ফিলিং সব।

আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, আর আপনি বুঝি সত্যবাদী যুধিষ্ঠির?

“আমি মোটেও মিথ্যে বলি না। এমনকি প্রয়োজনেও একটা মিথ্যে বলি না।”

“শুনুন আমি আপনার মতো ভদ্দরলোক নই। আমি খুব খারাপ তাই কারনে অকারনে প্রচুর মিথ্যে বলি। এবার খুশি তো?”

নিলয় আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখলো। বলল,

“ইয়েস আই নো। ”

“কী জানেন আপনি?”

“তুমি খারাপ। ”

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে হলো নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। কেন আমি এই ইবলিশ টা’র জন্য মরছি!

নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম, আপনার ফেসবুক আইডি টা দিন তো কাজ আছে।

নিলয় এমন ভাব করলো যেন কিছু শুনতেই পেল না। আমি আবারও বলার পর একটা কাগজে লিখে দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।
***
আমার আজ আকাশে ওড়ার দিন। ফেসবুকে নিলয়কে যখন তখন জ্বালিয়ে মারব এই খুশিতে নাচতে নাচতে ঘরে ফিরে এলাম। ফেসবুকে লগ ইন করে নিলয়ের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে প্রফাইল স্ক্রল করতেই সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। প্রতিটা ছবিতে একটা কমন মেয়ে আছেই। দুজনের বেশ হাসিহাসি ছবি প্রায় ছবিতেই। একটা ছবিতে দেখলাম একটু বেশীই ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে। আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেরে কতক্ষণ মাথা চেপে বসে রইলাম। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর ছিলাম যে ওটা ওর গার্লফ্রেন্ড। যদিও মনে মনে এমন আশঙ্কা ছিলো, তবুও এতো কেন রাগ লাগছে বুঝলাম না। মাথাটা দপ দপ করছিল। কোনো কিছুতে শান্তি পাচ্ছি না। শেষমেস আবারও নিলয়ের প্রফাইলে ঢুকলাম। শালার ব্যটা ততক্ষণে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নিয়েছে তাই রাগ খানিক টা কমলো। তবুও মাথা ঠান্ডা করার জন্য ভয়ংকর একটা কাজ করলাম। নিলয়ের প্রফাইল থেকে ঢং করা মেয়েটার আইডি খুঁজে পেয়ে একটা ম্যাসেজ দিলাম। চুন্নিটাকে লিখলাম, শাকচুন্নি পরের জামাইর সাথে হা হা, হু হু করিস। সামনে পেলে তোর দুটো দাঁত ভেঙে ফেলতাম। আর যদি কখনো দেখি আমার জামাইর সাথে দাঁত কেলিয়ে ছবি দিয়েছিস তাহলে তোর দাঁত ভেঙে, চুল কেটে থালা হাতে বসিয়ে দেব রাস্তায়।

ম্যাসেজ টা লিখে মনে মনে এতো শান্তি পেলাম যা বলে বোঝাতে পারব না। হৃষ্টচিত্তে আলু, পটলের তরকারি দিয়ে এক থালা ভাত শেষ করে এসে লম্বা ঘুম দিলাম।

সকালে দেখলাম শাকচুন্নি ম্যাসেজ দিয়েছে। লিখেছে,

“কে তুমি?”

আগপিছ না ভেবেই আমি লিখে দিলাম, তুই যার সাথে হা হা, হি হি করিস আমি তার বউ। আমাদের বিয়ে ঠিক হইছে। সামনের ফাল্গুনে বাচ্চাসমেত তোর সাথে দেখা করতে আসব। ”

এই ম্যাসেজ টা লিখে সেন্ড করে চুন্নিটাকে ব্লক করে দিলাম। তারপর নিজে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে ডাইনির মতো হাসলাম।

মেজাজ টা’ও বেশ ফুরফুরে লাগলো। অনেকদিন পর সেজেগুজে কলেজে গেলাম। বন্ধুদের সবাইকে ফুসকা ট্রিট দিলাম। সবাই জিজ্ঞেস করলো কিসের ট্রিট তখন মনে মনে একটা চাপা আনন্দ অনুভব করলেও কাউকে কিছু বলতে পারলাম না।

কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার পর যে অন্যকিছু অপেক্ষা করবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।

চলবে…

(ব্যক্তিগত সমস্যার অবসান ঘটেছে আলহামদুলিল্লাহ। এবার নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করব। যারা গল্প পড়েন তারা বেশী বেশী কমেন্ট ও শেয়ার করুন। পেজের রিচ তাতে একটু বাড়বে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here