কালো মেঘে রোদ্দুর পর্ব ৪+৫

গল্পের নাম: কালো মেঘে রোদ্দুর (পর্ব:৪)

লেখিকা: আরশিয়া জান্নাত

“আরেহ আপনার সমস্যা কি? মাথায় কি সিট আছে নাকি?”

“সে তো আছেই আর সেই সিট দখল করে আপনি বসে আছেন।”

“মানে? এটা কেমন কথা!”

“নাহ কিছু না। আচ্ছা আপনি কি সবসময় এমন ভ্রু কুঁচকে রেগে থাকেন নাকি আমার বেলাই অটোমেটিক এটা হয়?”

রাইয়্যান মুখ স্বাভাবিক করে বললো, লিসেন আপনাকে দেখে তো এডুকেটেড ভদ্র ফ্যামিলির মেয়েই মনে হচ্ছে। আপনার মতো মেয়েদের এমন করা মানায়?

“কেমন করেছি?”

“এই যে আমাকে ফলো করছেন! লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছেন যেখানেই যাচ্ছি! আমার লোকেশন ট্র্যাক করছেন কিভাবে সেটাও রহস্য হেই আপনি কোনো স্পাই না তো?”

মোহনা মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলল, শালার জানের এতো ভয় বাপরে বাপ! তার পিছে নাকি স্পাই ঘুরবে। এইটুকু বুঝেনা যুগ বদলেছে। এখন ছেলেরা না মেয়েরাও ভালোবাসার মানুষকে ফলো করে।

“ওহ হ্যালো”

“শুনুন আমি একদম সহজ কথায় বলি। আমি মোটেও আপনার স্পাই নই। আপনাকে আমার প্রচুর পছন্দ হয়েছে, যেখানেই যাচ্ছি আপনাকেই দেখতে পাচ্ছি। আমার দিনরাত সব আপনার ভাবনাতেই অতিবাহিত হচ্ছে। আপনাকে ভেবে আমার সকাল হয় আপনাকে ভেবেই রাত হয়। আর আপনার রেগুলার রুট সেইম তাই লোকেশন ট্র্যাক করার দরকার নেই। কয়েকদিন খেয়াল করলেই যে কেউ বুঝে যাবে।”

“ওকে ফাইন আপনার কথা আমি মানলাম। ফার্স্ট অফ অল আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। শুধুই বাহ্যিকভাবে বিবেচনা করে ভালো লেগেছে বলে দিলেন। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার অলরেডি একজন আছে যাকে আমি খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছি। তাই অহেতুক আমার পিছে না ঘুরাটাই আপনার জন্য বেটার।”

“আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে!!”

রাইয়্যান আর কিছু বলে হাঁটা দিলো। মোহনা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো বরাবরের মতো। “লোকটা সবসময় এভাবে মন ভেঙে দিয়ে চলে যায়”

আইরিনের বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। বহু কল্পনাজল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বের হলো আইরিনের আসলেই কোনো অ্যাফেয়ার নেই সে কেবল চুজ করতে পারছিল না বলেই এতোকিছু। কিছুদিন আগে একটা ভালো প্রপোজাল আসে আইরিনেরো বেশ পছন্দ হয় তাই আর দেরি না করে সরাসরি বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলে দুই পরিবারের মানুষ। ইলহামের আফসোসের শেষ নেই। একটা দারুণ এডভেঞ্চারিং ঘটনা ঘটতে ঘটতে ঘটলো না এর চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কি হতে পারে? তার বড় ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে কোনো প্যারা নেই। সে যাকে এনেই দাঁড় করাবে বাবা-মা টু শব্দটুকু করবে না। আর বাকি আছে তার ছোটবোন। সে তো আঁতেল। বইয়ের বাইরে একটা জগত আছে এও ঠিক জানে কি না সন্দেহ। ইলহামের ইচ্ছে পালিয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু তেমন কাউকেই পটানো যাচ্ছেনা। মেয়েরা এখন বেশি ম্যাচিওর। কেউই টাকা ছাড়া এক পাও নড়তে নারাজ। বাস্তবতার জ্ঞান শুনতে কারই বা ভালো লাগে? তবুও সে আশায় আছে কিছু একটা তো করবেই।


মোহনা সচরাচর বেলকনীতে বসে না। রাতে একলা বসতে তার ভয় লাগে। একাকিত্বের ভয় কিংবা হতাশার ভয়। একা থাকলে জীবনের হিসাব সামনে এসে ধরা দেয়, যেখানে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তিটাই বেশি। এতো অপ্রাপ্তির ভীড়ে দমবন্ধ হয়ে আসে বলেই যতোটা সম্ভব নিজের মুখোমুখি এড়িয়ে চলে। অন্যদিন এই সময়টাতে তার দুচোখে ঘুমের ঢল নেমে আসলেও আজ একফোঁটা ঘুম নেই। এমন বাচ্চামো করার বয়স তার নেই সে ঠিকই জানে। তবুও তো মন ভাঙার প্রভাব তো পড়বেই। তার কিশোরী জীবনের প্রথম প্রেম ছিল হোসেইন ভাইয়া। শ্যাম বর্ণের মায়াবী চেহারার এক ছেলে। মানুষের মন ভালো করার ম্যাজিক জানতো সে নিশ্চিত। যখনই দেখা হতো চিরচেনা হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে বলতো, বুঝলি মোহনা তোর নামটা তোর সাথে যায় নাই। তোর নাম হওয়া উচিত ছিল রোদ টাইপ কিছু মানে আলো বুঝায় সেরকম আর কি। নামটা খুব ফ্যাক্ট বুঝলি!
হোসেইন নামক ছেলেটার প্রতিটি কথাই মোহনার নিকট ছিল মহাজ্ঞানী ভাষণ। অথচ এই হাসিখুশি মানুষটা যে ভেতরে ভেতরে যন্ত্রণায় কাতরে মরেছিল বোঝার সাধ্যি ছিল না তাঁর। যেদিন সে জানতে পারলো দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে হেরে যাওয়ার পথিক তার হোসেইন ভাইয়া দৌড়ে গিয়েছিল হাসপাতালে এক পলক দেখতে। হাসপাতালের মতো বিদঘুটে জায়গাটায়ও সেদিন হোসেইন ভাইয়া হাসিমুখে বলেছিল, বুঝলি মোহনা জীবনটা খুব সুন্দর। যারা পায় তারা এর মর্ম বোঝেনা। আর যারা মর্ম বোঝে তারা বেশিদিন উপভোগ করার সুযোগ পায় না। তাই সবসময় জীবনটা ইনজয় করবি। হাসিমুখে লড়াই করবি।

হ্যাঁ মোহনা তো লড়াই-ই করছে। ক্লান্ত পরিশান্ত জীবনটাকে তো ছেঁটে ফেলেনি। এখনো ছুটে যাচ্ছে যতদূর যাওয়া যায়। হাসিমুখেই তো সবটা বয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। তবুও তো বিষাদের ছায়া পিছু ছাড়েনা। মাঝেমধ্যে ভাবতে ইচ্ছে করে হোসেইন ভাইয়া যদি তার আয়ু টা পেতো সে কি পারতো তখনো হাসিমুখে থাকতে? হয়তো পারতোই, হাসিমুখে যে মরতে পারে তার জন্য কোনোকিছুই অসম্ভব না।
“আমার জীবনে প্রেম আসেই না পাওয়ার পয়গাম নিয়ে। এতোবছর পর যাকে মনে ধরলো সে অন্য কারো। এই জীবনে কিছুই কি একান্তুই আমার হবেনা?”
___________________

“আপু বিকেলে তোর স্টুডেন্টের মা এসেছিল।”

“মাঈশার আম্মু? কেন?”

“রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মাঈশার ভাই টাই আছে নাকি?”

“সবসময় ফান করিস না তো বিরক্ত লাগে। তোর ঔষধ শেষ হইছে? শেষ হবার দুইদিন আগে অন্তত জানাইস”

“ঔষধের কথা ছাড়ো আপু। শুনো ঐ মহিলা অনেক প্রশ্ন করছিল জানো। একদম ডিটেইলসে সব জিজ্ঞাসা করছিল।”

“এটা এদের পারিবারিক অভ্যাস। প্রথমদিন ওর ভাইও সেইম কাহিনী করেছে।”

“উফফ তুমি বুঝতেছ না। আই থিংক ওদের তোমাকে খুব পছন্দ বিয়ের প্রপোজাল দিতে পারে!”

“দিলেও কি? আমি এখন বিয়েশাদীতে নাই।”

“মা কিন্তু অমত করবেনা। অলরেডি মামাকে ফোন করে এই বিষয়ে কথা বলেছে। তাদের ইচ্ছে ভালো সম্বন্ধ পেলেই তোমার বিয়ে দিয়ে দিবে।”

“হুম তারপর তোরা মামার ঘাড়ে গিয়ে উঠবি। চিকিৎসা আর করা লাগবেনা এমনিই মরে পরে থাকবি!”

“আমাদের কথা ভেবে তুই কেন বয়স পার করবি?”

“পিহু একদম চুপ। এই বিষয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করিনা সেটা তুই ভালো করেই জানিস। অথা থাপ্পড় খাইস না।”

“তুমি রাজপুত্তুর পছন্দ করো আপু। আমাদের জীবনে তেমন কেউ আসবেনা। তাই উচ্চাকাঙ্ক্ষা না রেখে যেই আসে তাকে বরণ করে নেওয়াটাই বেটার।”

“এই তোর ধারণা আমার প্রতি? আমি রাজপুত্তুরের স্বপ্ন দেখি?”
পিহু চুপ করে মেঝেতে তাকিয়ে রইলো।


“তোমার বোনের বিয়ে হচ্ছে তো আমি কি করতে পারি? আমাদের অফিসিয়ালি কিছু তো হয়নি। আমি এখন কি পরিচয়ে বিয়ে এটেন্ড করবো?”

“দেখো তুমি চাইলে আমি এনাউন্স করতে পারি। তাছাড়া আমার গেস্ট হিসেবে এটেন্ড করতেই পারো এভাবে ওভাররিয়েক্ট করছো কেন? আজ নয় কাল সবার সঙ্গে মিট করাতে তো হবেই তাই না?”

“দেখো রাইয়্যান আমি তোমার ফ্যামিলির সাথে এখনই মিট করতে চাইছিনা। প্লিজ ফোর্স করো না।”

“একটা সত্যি কথা বলবা ফারিন? তুমি কি আমার সাথে কোনো কমিটমেন্টে যেতে চাচ্ছো না? তোমার কি ইচ্ছে নাই আমাদের বিয়ে হোক?”

“উফ সবসময় বিয়ে বিয়ে করো কেন? সবকথার শেষ কথা বিয়েতেই কেন আটকায়?”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার সঙ্গে লাইফ লিড করতে চাই। বিয়ে করতে চাওয়াটা এখানে অস্বাভাবিক কেন মনে হচ্ছে?”

“দেখো আমি ফ্রিডম থাকতে পছন্দ করি। বিয়ে করলেই সেটা চলে যাবে। তাছাড়া তুমি জানো আমি মিডিয়াতে আছি, এখানে বিয়ে বা অ্যাফেয়ারের গল্প লিক করলে পাবলিক গ্লেজ থাকেনা। আমি বাংলাদেশের টপ রেটেড একট্রেস হতে চাই। সো এখনই বিয়ে করে ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাই না। আর তোমার মা তো যেই উনি কখনওই ছেলের বৌকে মিডিয়াতে এলাউ করবেন না,,,,”

“তুমিতো শুরু থেকেই এটা জানতে তবে কেন রিলেশনে জড়িয়েছ?”

“I really love you Raiyan And I also love my career too. এখন তুমিই বলো আমি কোনটা ছেড়ে কোনটাকে প্রায়োরটি দিবো!”

“It’s up to you..”

রাইয়্যানের দিকে চেয়ে ফারিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
#কালো মেঘে (রোদ্দুর পর্ব:৫)

♡আরশিয়া জান্নাত

রাইয়্যানের মন আজ একটুও ভালো নেই। সবকিছুই আজকাল অসহ্য লাগে, মেজাজ খিটখিট করে। অযথাই যাকে পায় বকে দেয়। একটু আগে একটা স্টাফকে আচ্ছামতো বকে দিয়েছে। রাগে গা যেন জ্বলসে যাচ্ছে। কিন্তু সে বুঝে পায় না এতো রাগার কি আছে। ফারিন বরাবরই স্বাধীনচেতা মেয়ে। সবসময় নিজের ক্যারিয়ারকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। রাইয়্যানের ফ্যামিলিতে ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি নিয়ে অনেক খারাপ ধারণা আছে। আজ পর্যন্ত কখনওই তাদের বাসায় কেউ বাংলা মুভি দেখেনি। মায়ের ধারণা বাংলাদেশের মুভি মানেই নষ্ট গল্প, তাদের কথাবার্তার ধরণ সাউন্ড সিস্টেম কোনো শালীন পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে দেখতে পারবেনা। তার মা একটু বেশিই খুঁতখুঁতে বলা চলে। সেই মায়ের সামনে যদি ফারিনকে দাঁড় করায় পরিস্থিতি কতোটা জটিল হবে অনুমান করা কঠিন না। তবে ফারিন যদি রাজী থাকতো রাইয়্যান সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে দাঁড়াতো নিশ্চিত। কিন্তু তার পাশের মানুষটাই যে নড়বড়ে!


“তোমাকে আজ একটা কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করাতে হচ্ছে। জানিনা কিভাবে নিবে তবে এইটা জানানো আমার কর্তব্য।”

“আঙ্কেল পিহুর অবস্থা কি বেশি খারাপ ও কি বেশিদিন বাঁচবে না?”

“দেখো অসুখ যেমন আছে চিকিৎসাও আছে। তবে কথা হচ্ছে তার খরচ এফোর্ট করার সামর্থ্য কার কতখানি। তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে আমি তো সবটাই জানি, এই মূহুর্তে তোমাকে কেমন করে বলি ওকে বাইরের কোথাও নিয়ে যাও।”

“ধারণা দিতে পারবেন কত টাকা লাগতে পারে সব মিলিয়ে?”

“বিশ পঁচিশ লাখ ধরে রাখো”

মোহনা চেয়ারে বসে পড়লো। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এতো টাকা সে কোত্থেকে পাবে। তার কাছে এক লক্ষ টাকা মানেই বিশাল এমাউন্ট সেখানে বিশ পঁচিশ লক্ষ কোথায় পাবে?

“ভেঙে পড়ো না, এখন তো অনেকেই টাকা ডোনেট করে। তুমি সাহায্য চেয়ে দেখো। আমার পরিচিত একজন আছেন, তিনি খুব দয়ালু মানুষ তার সঙ্গে আলাপ করে দেখবে একবার?”

মোহনা ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলো। যেন সে অথৈ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সাহায্যকারী কেউ নেই। এখনই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবে। মরে গেলেও তো হতো, অতি আদরের বোনটাকে মরতে দেখার চেয়ে নিজে মরে যাওয়াটাই তো অনেক সহজ।
“এতো অসহায় করে কেন পাঠাইলা মালিক? তোমার সব রহমত কি বড়লোকদের উপর? তাদের কঠিন অসুখ দিলেই পারো গরীবের ঘরে কেন এতো বড় অসুখ দিলা??”

বিশাল বড় এক বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো মোহনা। বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছে অনেক টাকা খরচ করে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। মেইন গেইটার কারুকাজ দেখেই অস্বস্তিতে গলা শুকিয়ে আসে, গেইট ধরলেই যদি কেউ এসে ধমকে উঠে?

মধ্যবয়স্ক দারোয়ান এসে বললো, কাকে চাই?

“জ্বি এটা কি আশরাফ মাহমুদের বাড়ি? তিনি কি আছেন?”

“হ্যাঁ এটা উনারই বাড়ি। আপনি একটু উপরে মুখ করে তাকান সিসি ক্যামেরায় আপনার চেহারাটা উঠুক। তারপর ভেতরে আসেন আপনার বৃত্তান্ত বলে অপেক্ষা করেন”

মোহনা শুকনো মুখে মাস্ক খুলে ক্যামেরার দিকে মুখ করে ভেতরে ঢুকলো। তার নাম ফোন নাম্বার আরো টুকটাক তথ্য দিয়ে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। বাড়ির একপাশে লম্বা লন। সবুজ ঘাসের গালিচার মতো। সাদা পাথরের ফাউনটেইনটা যেন এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশালদেহী একটা কুকুর দূরেই বেশ আয়েশ করে বসে আছে। মোহনার কুকুরভীতি না থাকলেও এই কুকুরটা ভাগ্য দেখে হিংসেই হলো। নিশ্চয়ই রোজ মাংস জুটে এর কপালে।
প্রায় একঘন্টা অপেক্ষা করার পর ইন্টারকমে তার ডাক পড়লো। সে ইতস্ততবোধ করে বললো,চাচা আপনি আমার সঙ্গে একটু যাবেন আমিতো কিছুই চিনিনা।

“আরেহ চিন্তার কিছু নেই একটু সামনে গেলেই লোক পাবা। সাহেব বড় ভালো মানুষ। যে কাজে আসছো নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। আল্লাহ ভরসা”

“আপনি মিস মোহনা? এদিকটায় আসুন।”

মোহনা লোকটার পেছনে যেতে লাগলো। খানিকটা পথ যেতেই একটা কাঁচের ঘরের ভেতর তাকে বসিয়ে লোকটা চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে একজন ভদ্রলোক প্রবেশ করলেন।মোহনা দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। ভদ্রলোক হেসে বলো, আমি খুবই দুঃখিত অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছি। দাঁড়িয়ে কেন বসো।
ডক্টর ইরফাজের কাছে আমি তোমার বোনের সম্পর্কে শুনেছি। এইটুকু মেয়ের হার্টের অসুখ ভাবা যায়? অবশ্য এখন অসুখের বাছবিচার নেই, ছোটবড় সবারই হতে পারে। যাই হোক তোমার ব্যাঙ্ক একাউন্ট আছে? থাকলে একাউন্ট নাম্বারটা ওকে দাও। তোমার বোনের ট্রিটমেন্ট নিয়ে আর কোনো টেনশন করতে হবেনা। তবে একটা শর্ত আছে।

এতোক্ষণে গিয়ে মোহনার মন শান্ত হলো। নাহয় কেউ একজন তাকে এতো সহজে এতোগুলো টাকা দিবে এই ব্যাপারটা সে কিছুতেই হজম করতে পারছিল না। শর্তের কথা বলতেই মনে হলো না এটাই সত্যি ঘটনা স্বপ্ন নয়। মোহনা গলা ঝেড়ে স্পষ্ট গলায় বললো, কি শর্ত?
তার গলা শুনে আশরাফ সাহেব হোহো করে হেসে উঠলেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় মোহনা চমকে গেল। এখানে হাসির কি বলেছে বুঝে আসেনা তার।
ভদ্রলোক হাসতে হাসতে বললো, তোমার গলা শুনে না হেসে পারলাম না আ’ম স্যরি ফর দ্যাট।
আল্লাহ আমাকে অঢেল সম্পদ দিয়েছে। টাকার হিসাব আমি রাখি না। আমার শান্তির অভাব, সেই শান্তিটা আসে কাউকে নিঃস্বার্থে সাহায্য করলে। আমার শর্ত একটাই আমি যে তোমাকে সাহায্য করেছি এই কথাটা কখনো মিডিয়াতে বলবেনা। ইনফ্যাক্ট এমন কাউকেই বলবেনা যে কথাটা প্রচার করতে পারে। তবে হ্যাঁ যদি কখনো এমন কাউকে পাও যার সাহায্যের প্রয়োজন আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। আমি চেষ্টা করবো সাহায্য করতে। যদি কখনো জানতে পারি এই শর্ত ভঙ্গ করেছ আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

মোহনা বুঝে উঠতে পারছেনা সামনের লোকটার কথাগুলোর অর্থ কি এসব কি আসলেই সত্যি? কেউ তাকে এই শর্তে এতোগুলো টাকা দিচ্ছে? এটা কোনো শর্ত হলো? মানুষ তো এখন প্রচারণার জন্যই কত কি করে আর তিনি?! এই পৃথিবীতে এখনো এমন মানুষ আছে? কৃতজ্ঞতায় মোহনার চোখ ভিজে আসে। সে বুঝতে পারেনা কিভাবে বলবে এই ঋণ সে কখনোই শোধ করতে পারবেনা, এই আশরাফ মাহমুদ লোকটা তার কাছে ফেরেশতার চেয়ে কম মনে হচ্ছে না।আল্লাহ বুঝি অবশেষে তার দিকে মুখ তুলে চাইলো?
আশরাফ সাহেব দেখলেন, একটা মেয়ে নিরবে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে তার বড্ড মায়া হলো। তার বড় মেয়েটা বেঁচে থাকলে বোধহয় ওর বয়সী হতো।
___________________

“এখন তো আর টেনশন নেই তোর; বিয়েটা করতেই পারবি। অমত করার কারণ তো দেখছি না আর?”

“মা তোমার কাছে বিয়ে ছাড়া আর কোনো টপিক নাই? আগে ওরে ঠিকঠাক সুস্থ হইতে দাও। আর সুস্থ হবার পর এমন তো না ইনকামের পথ খুইলা গেছে!”

“তুই কাউরে ভালোবাসোস আম্মা? মারে ক। আমার কোনো আপত্তি নাই সত্যি।”

মোহনা কানে ইয়ারফোন গুজে বেরিয়ে গেল। সে তার মাকে কিভাবে বলবে সে একজনকে অসম্ভব ভালোবাসে কিন্তু সেই মানুষটা তাকে ভালোবাসা দূর ভুলেও ফিরে তাকায় না। এমন কারো কথা বলে লাভ আছে??

চলবে,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here