কালো মেঘে রোদ্দুর পর্ব ৬

#কালো মেঘে রোদ্দুর (পর্ব:৬)

♡আরশিয়া জান্নাত

“মিস মোহনা আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। এখনকার ছেলেদের মতো স্মার্টলি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। আপনাকে আমার প্রথমদিনই বেশ ভালো লেগেছে। আমি জানি আপনার উপর আপনার পরিবারের দায়িত্ব আছে। একা একা সবটা সামলানো খুব কঠিন বটে! আপনার পাশে একটা শক্ত হাত থাকা খুব জরুরি। আমি আপনার পাশে দাঁড়াতে চাই, আপনাকে জীবনসঙ্গী করতে চাই।”

“আপনার কথার যৌক্তিকতা আছে মানছি। তবে বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। আপনি কিংবা আপনার পরিবার নিশ্চয়ই এমন কাউকে বৌ করে ঘরে তুলবেন না যে জব করবে আর তার ফ্যামিলিকে চালাবে। বিয়ের আগে সবাই বললেও বিয়ের পর বেশিরভাগ বদলে যায়। তখন দেখা যাবে আমার জব নিয়ে আপনাদের ইস্যু হবে কিংবা আমি যে সবটা আমার সংসারে দিব তা নিয়েও মনোমালিন্য হবে। এসব কিছু যদি নাও হয় তবে অন্য কিছু না কিছু হবেই। এখন কিছুর দরকার হলে আমি কারো পারমিশন ছাড়াই হুটহাট বেরিয়ে যাচ্ছি, কিংবা গ্যাস বিল কারেন্টের কার্ড আনতে চলে যাচ্ছি।আমার সংসারে পুরুষ নেই তাই অনেককিছুই আমাকে দেখতে হয়। আমি যদি অন্য একটা পরিবারে যাই তবে এসব তো করতে পারবো না। সেই পরিবারের কিছু কমন এক্সপেক্টেশন থাকবে আমাকে ঘিরে সেগুলি যদি আমি ঠিকঠাক পূরণ করতে না পারি সংসারে অশান্তি লেগেই থাকবে। তারচেয়ে বরং এভাবেই চলতে থাকুক।”

“বুঝলাম আপনার কথা। তাই বলে কি কখনোই বিয়ে করবেন না? এভাবে আজীবন কুমারী থাকবেন?”

“কুমারী থাকবো তা বললাম কবে? কিছুটা সামলে উঠি, আমি না থাকলেও যেন আমার পরিবার চলতে পারে সেই অবস্থায় দাঁড়াই। তারপর নিশ্চয়ই বিয়ে করবো।”

“মিস মোহনা আপনি ছাড়াও কিন্তু আপনার পরিবার চলতে পারবে। এই পৃথিবীতে কেউ কারো উপর নির্ভরশীল না। রিযিকদাতা আল্লাহ তাই না?”

“রিযিকদাতা আল্লাহ তবে তাই বলে তো ঘরে বসে থাকা যায় না। রিযিক অনুসন্ধান করতে হয়। আমি না থাকলে আমার মা কিংবা ছোটবোনকে অনুসন্ধান করতে হবে। তবে যতদিন আমি বেঁচে আছি আমিই করি।”

“আপনার সঙ্গে যুক্তিতর্কে আমি পারবোনা। আপনি সময় নিয়ে ভাবুন তারপর আমাকে জানান। আমি আপনার জবাবের অপেক্ষায় থাকবো।”

মোহনার খানিকটা বিরক্তই লাগলো। না বলার পরো আবার কিসের সময় দিচ্ছে লোকটা! তার কি ধারণা মোহনার সিদ্ধান্ত বদলাবে? মানুষ ভাবে কি নিজেকে? অবশ্য তার মা যা শুরু করেছে তাতেই সাহস পেয়েছে আলাদা কথা বলতে আসার। আজ মা কে কড়া করে কিছু কথা বলতেই হবে!


নানান ছলছুতো শেষে অবশেষে ফারিন আজ বলেই দিলো এই রিলেশনটা সে আর কন্টিনিউ করতে চাইছে না। রাইয়্যানের বিয়ে নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানি তার আর সহ্য হচ্ছে না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। এতোদিন নরম করে বুঝিয়েও যখন কাজ হয় নি তাই ঝাঁঝালো গলায় সাফ সাফ জানিয়ে দিলো সে এইসব প্যারায় আর নেই। তাছাড়া সে সবে লাইমলাইটে এসেছে দু তিনটা বিগ প্রজেক্টের সিনেমার হিরোইন হিসেবে সাইন করেছে এখনই বিয়ে করা মানে সব বরবাদ। রাইয়্যান ছেলেটা দেখতে শুনতে যথেষ্ট ভালো হলেও ওর ন্যাচারটা সত্যিই ব্যাকডেটেড। নাহয় এতো আর্লি কেউ বিয়ে করতে মরিয়া হয়?
অন্য সময় হলে রাইয়্যান অনেক রিকোয়েস্ট করতো, কিংবা ফারিনের সিদ্ধান্ত বদলানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আজ সে কিছুই করলো না। ফারিন এখন আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে। তাকে বেঁধে রাখার সাধ্য কি তার আছে?
গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অসীমে দৃষ্টি রেখে ভাবনা জগতের তলদেশে হারিয়ে গেল রাইয়্যান। সেই প্রথম প্রপোজ করা থেকে শুরু করে ফারিনের সাথে কাটানো সোনালি মুহূর্তগুলো চোখের সামনে এক এক করে ভাসতে লাগলো। শহরের বেশ কিছু বিলবোর্ডে ফারিনের বিজ্ঞাপনের ছবি দেখে বুকের বা’পাশটা চিনচিন করতো। মনে হতো ঝকঝকে সেই দুনিয়ায় ফারিন ডুবে যাবে না তো? সেই দুনিয়ায় যদি আমাকে বেমানান ভেবে ছুড়ে ফেলে? অবশ্য তার ধারণাই ঠিক হলো। ফারিন তাকে ছুড়েই ফেললত অবশেষে,,,,,

“এই যে শুনছেন?”

ধ্যান ভাঙতেই তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে। এই মেয়েটার রহস্য বুঝে আসেনা তার। সবসময় কোত্থেকে এসে জুড়ে বসে। এমন না আজ পর্যন্ত তার সঙ্গে সে ভালো করে দুটোকথা বলেছে। সবসময় এড়িয়েই যায় তাও মেয়েটা পিছু ছাড়ে না। কেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সবসময় তাকিয়ে থাকে। একটু কথা বলার জন্য কত কি করে।

“আপনার কি সবসময় মন খারাপ থাকে? কেমন মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন! কি এতো টেনশন বলুন তো?”

“বললে কি হবে? সমাধান করতে পারবেন?”

“সমাধান করতে পারবো গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না। তবে সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারি। কাউকে ছোট ভাবা ঠিক না কখন কে কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না!”

“তাই নাকি?”

“অবশ্যই তাই।”

“চা খাবেন?”

“আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি? এক বছরে এই প্রথম আপনি আমায় চা খাওয়ার কথা বললেন! চিমটি কেটে দেখিতো। উহু স্বপ্ন না এটা!!”

“ড্রামা কুইন!”

“হতে তো চাই আপনার কুইন কিন্তু বানিয়ে দিলেন ড্রামাকুইন। হুহ!”

“কিছু বললেন?”

“না না কিছু বলিনি। তা বললেন না তো কি নিয়ে এতো দুঃশ্চিন্তা?”

রাইয়্যান ম্লান করে হাসলো। মোহনা সেই বিষয়ে আর ঘাটলো না। সে যখন বলতে চাইছেনা জোর করে লাভ
নেই। এই মোমেন্টটা উপভোগ করাই শ্রেয়। জীবনে আর আছে কি এই স্বল্পমেয়াদি সুন্দর মূহূর্ত ছাড়া?



আজাদ সাহেব বেশ উচ্ছাসিত গলায় বললেন, ঘটনা একটা ছিল তা অনেক আগে থেকেই টের পেয়েছিলাম। কিন্তু সলিড তথ্য আর প্রমাণ ছিল না। আজ সবটাই যোগাড় হয়েছে।

ইলহাম জিজ্ঞাসুচোখে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজাদ সাহেব তার সামনে নোটবুক খুলে বললেন, তোর মায়ের ধারণা তার বড় ছেলে তার পছন্দে বিয়ে করবে। আমি যখন বলেছি ছেলেমেয়েদের পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে সে কেমন তেলেবেগুনে জ্বলেছিল। এবার যখন তার অতি আদরের ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করতে চাইবে দেখবো তো কি বলে।

“তুমি বলতে চাইছো ভাইয়া কারো সঙ্গে কমিটেড?”

“তা আর বলতে?”

“ওহ মাই গড বলো কি! কার সঙ্গে জানো কিছু?”

“বললাম ই তো এতোদিন ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পারিনি এখন সব হয়েছে। এবার দেখবি কি করি আমি। তোর মাকে বুঝতেই দিবো না এটা ওদের লাভ ম্যারেজ। তারপর বুঝাবো মজা। হাহাহা”

“তোমার প্ল্যান কি বলোতো বাবা! আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। আর মেয়েটার নাম কি? কি করে কোথায় থাকে?”

“মেয়েটার নাম মোহনা। বড় লক্ষী মেয়ে, আমার ছেলের সেকরের চোখ বলতে হয়। হীরা চিনতে ভুল করেনি। আমি চাই তোর মা কোনো ভেজাল করার সুযোগ না পাক। একেই আমার বড় বৌমা করে ঘরে তুলবো আমি।”

“ভাইয়াকে বলেছ কিছু?”

“ওকে বলার কি আছে? সে যখন আমাদের থেকে লুকিয়েই রেখেছে আমিও কিছু বলবোনা। ওদের মা বেটাকে সারপ্রাইজ দিবো। শোন তুই কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বলবিনা। এটা আমাদের মাঝে টপ সিক্রেট থাকবে।”

ইলহাম হেসে বললো, যথা আজ্ঞা পিতামহারাজ।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here