কালো মেয়েটি
পর্ব:০৭ এবং শেষ
লেখা: রাকিব মাহমুদ
অনামিকার দেখা নেই। আমি শুধু শুধু অপেক্ষা করে যাচ্ছি হয়তো অনামিকা আমায় ভুলে নতুন করে স্বপ্ন দেখে। হয়তো আজ অনামিকা অন্য কারো মুখের হাসির কারন। হয়তো আজ অনামিকা নতুন করে স্বপ্ন দেখে অন্যকাউকে নিয়ে। উচিৎ শিক্ষা হয়েছে আমার। আজ আমার ভুলের জন্যই আমাকে কাঁদতে হয়। সত্যি একা হয়ে গেলাম আমি। আমি খারাপ ভিষন রকম খারাপ কারো ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য হয়তোবা আমার নেই।।
রাত্রি বেলা ব্যালকনিতে সিগারেট টানসি আর ভাবছি কতই না সুন্দর দিন ছিল যখন অনামিকা আমার জীবনে ছিল। আমাকে কত শাশন করতো কত কেয়ার করতো। আমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে শুধু ঘরির দিকে তাকিয়ে থাকা অনামিকা হয়তো আজ ঘড়ি দেখতেই ভুলে গিয়েছে।
আজ আকাশে হালকা মেঘ। জোছনা আছে তবে মেঘের সাথে লুকুচুরি খেলছে। নেই কোন তারার মেলা। আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখছি মেঘ আর জোছনার লুকুচুরি খেলা। আর ভাবছি জোছনাও একা নয় তার সাথে লুকুচুরি খেলার জন্য রয়েছে মেঘ। আজ কত আনন্দ করছে জোছনা ও মেঘ। একতদিন দেখা ছিল না জোছনার! দেখা ছিল না মেঘেরও। আজ কতদিন পর ওদের দেখা তাই হয়তো অনেক মজা করছে ওরা। আজ যদি অনামিকা আমার জীবনে আবার ফিরে আসতো তাহলে হয়তো এরকম আনন্দ আমার জীবনেও আসতো। আফসোস ভাগ্য আমার সহায় নয়।।
তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। মাঝে মাঝে তাকাচ্ছি অনামিকাদের ব্যালকনির দিকে। ব্যালকনিটায় রয়েছে হাজারো স্মৃতি। একজন মানুষকে যতটা ভুলে থাকা সম্ভব স্মৃগগুলো সেভাবে ভুলে থাকা সম্ভব নয়। যদি স্মৃতি গুলো ভুলে থাকা যেতো তাহলে হয়তো জীবনে কষ্ট নামক শব্দটি থাকতো না। আমিও স্মৃতি গুলো ভুলতে পারছি না। বার বার অনামিকার মায়াবী মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মিস করছি খুব অনামিকার হাসি। আজ ইচ্ছে করছে খুব অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে বলতে আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি সত্য তোমায় ভালোবাসি। কিচ্ছু চাইনা আমার শুধু তোমাকে চাই। ইচ্ছে করছে খুব অনামিকার হাতে হাত রেখে হাটতে। মিস করছি অনেক বেশি অনামিকার সাথে পাশাপাশি বসে জোছনা দেখার সময় গুলো। আমার রাত গুলো আস্তে আস্তে ঘুমহীন হয়ে গেল।
অপেক্ষা করতাম অনামিকার একটা ফোনের জন্য। অপেক্ষা করতাম অনামিকার ঐ মায়াবী মুখটা একটি বার দেখার জন্য।।
সেদিন বিকেল বেলা ব্যালকনিতে বসে চা খাচ্ছি। ব্যাস্ত শহরে সবাই তখন নিজের কাজে ব্যাস্ত। আমাকে ও আমার কষ্ট গুলো কে দেখার মতো কেউ নেই। চা শেষ করে সিগারেট জালাতেই অনামিকাদের ব্যালকনিতে একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। হ্যাঁ অনামিকা ওদের ব্যালকনিতে এসেছে। আসি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। অনামিকা ভুল করেও আমার দিকে তাকালো না। আমি ডাকছি অনামিকাকে অথচ অনামিকা না শুনার ভান করে চলে যাচ্ছে। আমি মাফ চাইতেছি তুবও কোন কথা শুনলো না আমার। চলে যেতে লাগলো অনামিকা। আমি আমার হাতের সিগারেটের আগুন আমার হাতে চেপে ধরলাম নিজেকে আরও বেশি পোড়ানোর জন্য। চিৎকার করছি এক প্রকার তবুও আমার দিকে তাকাচ্ছে না অনামিকা। আমার হাত তখনও পুড়েই চলছে। মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল এসে গাল বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো। আমার হাত পুড়ে ঠোসা পড়ে গিয়েছে।।
কিছুদিন পর নিরঘুম রাত কাটানোর জন্য হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রায় এক মাস বিছানায় থাকতে হয়েছে আমাকে। আম্মু আমার কষ্ট সইতে না পেরে আমাকে বললেন ওনার ভুল হয়েছে। ওনি অনামিকাকে ঘরের বউ করতে চায়। আমি না করে দিলাম। অনামিকা আমাকে চায় না সেখানে জুর করে কি হবে আর। মা কে বলে দিলাম যা হ’বার হয়ে গিয়েছে নতুন করে জীবন শুরু করবো নিজেকে গুছিয়ে নিব। আম্মু কান্না কন্ঠে বললেন ঠিক আছে। কিছুদিন পর বন্ধু মামুন আসলো আমার কাছে ক্ষমা চাইলো। আমি আর বলবো যা হবার হয়ে গিয়েছে। আমি হাসি মুখে বলে দিলাম কোন ব্যাপার না বন্ধু। হাসি মুখে মেনে নিলাম সব বুকের ভেতরটা তখনও জলছে। তবুও নতুন করে জীবন শুরু করলাম বুকের ভেতর কষ্টটা চেপে রেখে।।
চার বছর পরের ঘটনা। তখন আমিও নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। সেদিনের পর থেকে কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি। শুধু মনযোগ দিয়ে পড়াশুনায় করেছি। বর্তমানে আমার পড়াশুনা শেষ। একটা চাকুরিও করছি। বর্তমানে আমি একজন ব্যাংকার। বিয়ে করিনি এখনও। অনামিকার সাথে সেদিনের পর ভার্সিটি ছাড়া কোথাও দেখা ও কথা হয়নি। নিজেকে এতটাই ব্যাস্ত রেখেছি যে সেদিনের পর আর রাত্রি বেলা ব্যালকনিতে যাওয়া হয়নি। বারান্দায়ও কখনো অনামিকার মায়াবী মুখ খানা দেখার জন্য যাওয়া হয়নি। আজ আমাদে অফিসে নতুন একটা মেয়ে অফিসার এসেছে। সবাই বলছে মেয়েটি অনেক মেধাবী অনেক ভালো রেজাল্ট তার। আমি তাকে দেখে অনেক বেশা অবাক হলাম। কি মায়াবী মুখ কি মায়াবী হাসি। হ্যাঁ অনামিকাকে দেখছি আমি। অনামিকা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অফিসের সবাই বলাবলি করছে আমরা একে অপরকে চিনতাম নাকি। আমি ও অনামিকা কোন জবাব দিলাম না কোন কথার। কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম আমি। সন্ধায় অফিস থেকে বাসায় ফিরছি তখন অনামিকার সাথে দেখা হলো। আমায় ডাকলো অনামিকা।।
– কেমন আছো (অনামিকা)
– যেমনটা থাকার কথা! আপনি?
– আমিও।আমি সত্যি দুঃখিত।।
– কেন?
– সেদিন তোমার ডাকে তোমার কাছে না আসার জন্য।।
– কোন ব্যাপার না।।
– আচ্ছা বিয়ে করেছো?
– করলে তো শুনতেন আপনাদের পাশের বাসায় তো আমাদের।।
– হুম! নতুন কেউ আছে জীবনে।।
– না! মেয়ে মানুষকে বিশ্বাসস করিনা।।
– আমাকেউ না?
– জানিনা।।
অনামিকা আমার হাত ধরলো এবং বললো “আজও তোমকেই ভালোবাসি” এই কালো মেয়েটির সাথে সারাজীবন থাকা যায় না।।
আমি অনামিকার দিকে তাকিয়ে আছি শুধু। দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরার অবস্থা। হ্যাঁ কান্না শুধু দুঃখের নয় কিছু কান্না সুখেরও হয়।। আমিও অনামিকার হাতে ধরে বললাম হ্যাঁ আমি পারবো এই কালো মেয়েটির হাত ধরে সারাজীবন থাকতে। এই মানুষটির মধ্যে আমার জন্য যতটা ভালোবাসা দেখেছি তা অন্য কারো মধ্যে কখনো দেখতে পাইনি।। অনামিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। আমি আস্তে করে অনামিকার কপালে একটা কিস করলাম।।
রাতের ব্যাস্ত শহরে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়তো তাহসিন অনামিকার প্রেম কাহিনীর দিকে অন্য কারো খেয়াল নেই। রাতের রাস্তায় আমি আর অনামিকা হাতে হাত রেখে হাটছি। ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগছে ভিষন ভালো লাগছে। হালকা আলোতে অনামিকাকে মন্দ লাগছে না। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম আমি ও অনামিকা।।
বাসায় পৌছে মা আমার মুখেন দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন আজ আমার বাপজানরে খুঁশি খুঁশি লাগছে। আমি আম্মুকে অনামিকার ব্যাপারে বললাম। আমার জবাবে আমি আরও বেশি অবাক হলাম। আম্মু নাকি অনামিকাদের বাসায় যেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন এবং অনামিকাকে বুঝিয়ে বলে এসেছেন যে আমি আজও অনামিকার জন্য কষ্ট পাই।। আমি আম্মুর কথা শুনে কতটা খুঁশি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।।
আর বেশি অপেক্ষা করলাম না। পরিবারিক ভাবে বিয়ে করলাম আমি ও অনামিকা। হ্যাঁ কালো মেয়েটিকে বিয়ে করে আমি যতটা সুখে আছি তা হয়তো কম মানুষ পায়। একজন নেককার স্ত্রী পাওয়া সত্যি খুব ভাগ্যের ব্যাপার। হ্যাঁ অনামিকা কালো তবে ওর চেহারার দিকে তাকালে আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়। অনামিকার চোখের দিকে তাকালে আমি পৃথিবীর সেরা সুখ পাই।
বিয়ের পর অনামিকাকে আমার আরও বেশি ভালো লাগে। কারন আমাকে অনেক পাল্টে ফেলছে অনামিকা। আজ আমি সিগারেট খাই না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি। আমাকে গভীর রাতে ডেকে তাহাজ্জুতের নামায পড়ায় আমার স্ত্রী অনামিকা। চাকুরিটা ছেড়ে দিয়েছে অনামিকা। বাসার সব কাজ অনামিকা করে। আমার আম্মুর সাথে অনামিকার মা-মেয়ের সম্পর্ক। দুজনই দুজনকে ভিষন ভালোবাসে। সব মিলিয়ে একটি সুখের সংসার করছি আমরা। মা হতে চলেছে অনামিকা আর আমি বাবা। ইনশাআল্লাহ সন্তানকে আলেম/আলেমা বানাবো।
একটা নেককার স্ত্রী পারে পুরো পরিবারকে নেককার করে তুলতে। হোক না সে কালো মনটা যে ভিষন ভালো।।
সবাই দো’আ করবেন আমাদের জন্য।।
________ সমাপ্ত
নোট: রূপে নয় গুনেই মানুষের আসল সৌন্দর্য। কালো কিংবা ফর্শা সবই মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। আসুন সৌন্দর্য দিয়ে নয় গুন দিয়েই মানুষকে মূল্য দিতে শিখি।
একটি কথা তিতো হলও সত্যি যে বর্তমান সমাজে টাকা ছাড়া ছেলে আর রূপ ছাড়া মেয়ে আজ অবহেলিত।
আমাদের উচিৎ এগুলো ত্যাগ করা। তবেই সুন্দর হবে আমাদের সমাজ আমাদের দেশ। মেয়েদের উদ্দ্যশ্যে বলবো আপনি দেখতে যেমনই হন অবশ্যই উক্ত গল্পের অনামিকার মতো ধার্মিক হবেন এবং সহ্যশক্তি রেখে জীবন কে জীবনের মতো চলতে দিন। মনে রাখবেন আপনার উপর নির্ভর করছে একটি পরিবার। একজন নেককার নারী পারে পুরো পরিবারকে জান্নাতি পরিবার হিসিবে গড়ে তোলতে। আর ছেলেদের উদ্দ্যেশ্যে বলবো ভাই অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়লার নীকট নেককার স্ত্রী চাইবেন। রূপ দেখে কাউকে জীবন সঙ্গী করার কথা ভাববেন না অবশ্যই গুন দেখে জীবন সঙ্গী করুন।
আর একটি কথা বিয়ে ব্যাতিত সকল প্রকার প্রেম ভালোবাসা হারাম। তাই আপনি যদি এসবে না জড়িয়ে থাকেন তাহলে আর জড়ানোর চেষ্টা করবেন না। মহান আল্লাহ তায়ালার নীকট নেককার জীবন সঙ্গী চাইবেন। আর কেউ এসবে জড়িয়ে থাকলে প্রিয় মানুষটিকে না ছেড়ে অতি দ্রুত সম্ভব সম্পর্কটি হালাল করে ফেলুন।
আর যারা দাম্পত্য জীবনে আছেন তারা অবশ্যই ইসলামিক নিয়ম কানুন মেনে চলবেন মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম মেনে চলবেন। আপনার সহধর্মিণীকেউ আমল করার তাগিদ দিন। এবং যারা অন্যান্য ধর্মের তারা তাদের ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলুন। মানুষকে সৌন্দর্য দিয়ে নয় গুন দিয়ে বিবেচনা করুন। আমার সকল পাঠক/ পাঠিকাদের জন্য রইলো অনেক অনেক দো’আ ও শুভ কামনা রইলো। দেখা হবে পরের কোন গল্পে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনাই শেষ করছি আজকের লেখা।।
ভাই অনামিকার আপুর ভালবাসার গভীরতা শুনে, অনামিকা আপুকে দেখতে ইচ্ছে করছে।