কালো রাত্রির খামে পর্ব -০৫+৬

#কালো_রাত্রির_খামে (০৫)
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________________

সেদিন ছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে আদিলের ফেরার দিন। সে এবং তার এক বন্ধু এক সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরেছিল। তাদের রিসিভ করতে এসেছিল আরও দুই বন্ধু। সেদিন সবাই ভীষণ খুশি ছিল। কারো মনে দুশ্চিন্তা ছিল না। সেদিন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা হয়েছিল। খুবই গাঢ় বন্ধুত্ব ছিল সবার মাঝে। কত না বলা কথা জমে ছিল, কত আড্ডা দেওয়া বাকি ছিল, কিন্তু শেষমেশ আর কেউই কারো সঙ্গে আড্ডা দিতে পারলো না। গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিল তারা চারজন। গাড়ির ভিতর কী হৈ-হুল্লোড়। কয়েকজন বন্ধু একসাথে হলে এমন একটা হৈ-হুল্লোড় হয়েই থাকে। কিন্তু সেই হৈ-হুল্লোড়ের স্থায়িত্ব ছিল খুব অল্প সময়। এবং তাদের কারোরই আর সেদিন বাড়ি ফেরা হয়নি। এয়ারপোর্ট ছেড়ে গাড়ি কিছুদূর আসা মাত্রই একটা বৃহৎ ট্রাকের ধাক্কায় গাড়িটা উল্টে গিয়ে অনেক দূর ছিটকে পড়লো। রাস্তা তলিয়ে গেল তাজা র’ক্তে। আদিলের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগে সে তার প্রিয় বন্ধু, যে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছিল তাকে দেখতে পেয়েছিল। ওর চোখ বন্ধ ছিল এবং দেহ ছিল নিথর। আদিল ডাকতে চাইলো ওকে। কিন্তু দুর্বলতা তার ওষ্ঠ পর্যন্ত নড়তে দিলো না। সে ডাকতে পারলো না, তার আগে তার নিজেরই চোখ মুদে গেল।

হাসপাতালে নেওয়ায় তারা দুজন অবশ্য বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু বাকি দুজন মারা গেল। অনেক মাস অসুস্থ ছিল আদিল। এরপর সে শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে সুস্থ হলো না। প্রিয় বন্ধুদের হারানো আর ওই ভয়ংকর দুর্ঘটনা তার মানসিক সুস্থতার পথে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালো। তবে অন্য বেঁচে যাওয়া বন্ধু শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ। সে মাঝে মাঝে আসে আদিলকে দেখতে। অনেকক্ষণ সময় কাটায় একসাথে। ও যখন চলে যায় আদিল কাঁদে। আদিলের অবস্থা প্রথম দিকে খুব খারাপ ছিল। ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সে নিজ থেকেই বাইরে যাওয়া বন্ধ করেছে। সারাক্ষণ ঘরের ভিতর বন্দি করে রাখে নিজেকে। পারভীনও তাকে তার মতো থাকতে দিয়েছেন।

পারভীন আজ ঘুম ভেঙে গেলে দেখলেন বসার ঘরের লাইট জ্বলছে। এসে দেখলেন আদিল সোফার সামনে ফ্লোরে বসে চিপস খাচ্ছে আর টেলিভিশন দেখছে। তার সাথে শুধু চিপস না, বিস্কুট, চকলেটের প্যাকেটও আছে। এখন রাত কটা বাজে? ঘড়ির দিকে তাকালেন তিনি। রাত তিনটা এখন। পারভীন বিরক্ত করলেন না ছেলেকে। ছেলেটা যা করে শান্তি পায়, তাই করুক।

___________________

ছোটোখাটো একটা বিষয় নিয়ে ক্লাসের সহপাঠীদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল শ্রাবণীর। আর তাই তারা ওর ব্যাগের ভিতর ময়লা ঢুকিয়ে রেখেছে। শ্রাবণী স্কুলে থাকতেই ময়লাগুলো দেখেছে, কিন্তু সে ময়লাগুলো বাড়ি অবধি টেনে আনলো। রুমের মেঝেতে ফেলে রাখলো সেগুলো।
রাত্রি টিউশনি শেষ করে এসে দেখতে পেল মেঝেতে চিপস, চানাচুর ইত্যাদির প্যাকেট, ইটের টুকরো, কলার খোসা পড়ে আছে। সে অবাক হয়ে তাকালো শ্রাবণীর দিকে। শ্রাবণী অঙ্ক করছে। সে জানতে চাইলো,
“এগুলো কোত্থেকে কুড়িয়ে এনেছো?”

শ্রাবণী বললো,
“কুড়িয়ে আনবো কেন? এগুলো উপহার।”

“কী বলছো?”

“ভুল কী বলছি? গরিবরা এরচেয়ে ভালো উপহার আর কী পাবে?”

“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না। সহজভাবে বলো।”

শ্রাবণী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“ক্লাসের কিছু মেয়ে এগুলো আমার ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রেখেছে। ওরা আমাকে পছন্দ করে না। কারণ আমি গরিব।”

“কী বলছো? গরিব বলে কেউ তোমাকে কেন অপছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তুমি কিছু করেছো। কী করেছো?”

“তুমি ভাবো সবক্ষেত্রে আমারই দোষ। হ্যাঁ ওদের সাথে আমার হালকা ঝগড়া হয়েছিল। কিন্তু ওরা আমাকে সত্যিই পছন্দ করে না। ওরা আমাকে নিয়ে মজা করে। আমি ওদের হাসির পাত্র।”

রাত্রি কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে বললো,
“যদি তোমার দারিদ্র্যতার জন্যই তুমি ওদের কাছে হাসির পাত্র হও, তবে জেনে রাখো, ওরা মনের দিক থেকে তোমার থেকে আরও বেশি দারিদ্র।”

শ্রাবণী বলে উঠলো,
“এসব বলে তুমি আমাকে মানাতে পারবে না।”

শ্রাবণী হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর ঘর থেকে একদম বাইরে। উঠোন পেরিয়ে গেটের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ ধা’ক্কা লাগলো কারো সঙ্গে। শ্রাবণী দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ভাবে হাঁটছিল। তাই ধাক্কা লাগার পিছনে কে দায়ী সেটা বিচার করা গেল না। তবুও শ্রাবণী লোকটার গায়ে দোষ চাপাতে একবার ভাবলো না। শানিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“চোখে দেখেন না মশাই?”

বলে অবশ্য সে থেমে থাকলো না, এগিয়ে গেল গেটের দিকে। গেট খুলতে গিয়েও আবার থামলো। তাকিয়ে দেখলো লোকটা বাড়ির ভিতরে ঢুকছে। তার কাছে একটা বড়ো ব্যাগ। শ্রাবণী হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করলো,
‘আরও একজন গরিব এসে জুটলো।’

এই বাড়িটা যেন গরিবদের জন্যই নির্মিত। অবশ্য ভালো কোনো মানুষ এমন বাড়িতে থাকতে আসবেই বা কেন? এমন ভাঙাচোরা বাড়িতে সবাইকে মানায় না।
গেট বাইরে বেরিয়ে অয়নের সাথে দেখা হলো। সে জানতে চাইলো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”

“সুমি আপুর কাছে।”

এখানে মাত্র একটা বাড়িই আছে যেখানে শ্রাবণীর যাতায়াত। সুমি আপুরা তাদের চেয়ে অনেক সচ্ছল। তবে তার এবং তার পরিবারের মাঝে কোনো অহংকার নেই। শ্রাবণীর ভালো লাগে সুমিকে।

__________________

আজও আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু রাত্রির কাছে কোনো ছাতা নেই। বৃষ্টি নেমে পড়লেই বিপদ। রাত্রি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরেই পা চালাচ্ছিল। একটা বাইক এসে থামলো তার সামনে। সেই স’ন্ত্রাসী! আজ আবার কী কারণে এসেছে?

“উঠুন।”

রাত্রি তার কথাতে খুব অবাক হলো। উঠুন মানে? রাত্রিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানবীন বললো,
“বাইকে উঠতে বলেছি। বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির আগে আপনাকে পৌঁছে দিই।”

রাত্রি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ছেলেটা একজন স’ন্ত্রাসী, অথচ আচরণ এমন যেন সে সমাজকর্মী। সমাজের মানুষের উপকার করাই যার জীবনের ব্রত। রাত্রি বললো,
“তার প্রয়োজন নেই, আমি চলে যাব। খুব বেশি দূরে না।”

“আমি জানি কতদূর, কিন্তু আপনি জানেন না আপনাকে আমার বাইকে অবশ্যই উঠতে হবে।”

তানবীনের শেষের কথাতে রাত্রি বুঝতে পারলো তার মাঝে স’ন্ত্রাসী সত্ত্বাটা ফিরে এসেছে। সে বললো,
“না, আসলে…আশা করছি বৃষ্টির আগে সেখানে পৌঁছতে পারবো।”

“আপনি চান আমি রেগে যাই?”

একজন সন্ত্রাসী রেগে যাক এটা হয়তো কেউই চায় না, রাত্রিও চায় না। সে না বোধক মাথা নাড়লো।

“তাহলে উঠুন।” তানবীন বললো।

রাত্রি বুঝতে পারছে না কী করবে। এরকম ভাবে একজনের বাইকে কিছুতেই উঠে পড়া ঠিক না।
রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে দেখে তানবীন বললো,
“আপনি বোধহয় সেদিনের কথা ভুলে গেছেন।”

“কোনদিন?” রাত্রির হঠাৎ ভয় করছে। সে বুঝতে পারছে তানবীন কোন দিনের কথা বলছে।

তানবীন হেসে বললো,
“মনে হচ্ছে আপনি ওরকমভাবে আর কাউকে কোনোদিন মা’র খেতে দেখেননি।”

রাত্রি কিছু বললো না। হৃৎপিণ্ডে ঢিপঢিপ শব্দ উপলব্ধি করছে। তানবীন বললো,
“আবার যদি কখনও দেখতে চান তাহলে বলবেন। আমি দেখানোর ব্যবস্থা করবো। দেখতে চান?”

“না।”

রাত্রি ভয় পাচ্ছে দেখে তানবীনের হাসি পাচ্ছে, কিন্তু সে হাসছে না। বললো,
“তাহলে, কী সিদ্ধান্ত নিলেন? যাবেন আমার সঙ্গে? না কি যাবেন না?”

“আসলে ভাইয়া, আমি খুব কম বাইকে চড়েছি। বলা যায় চড়িইনি। আমার বাইকে যাতায়াত করার অভ্যাস নেই।”

“অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ এখন থেকে আপনাকে বাইকেই যাতায়াত করতে হবে।”

রাত্রি প্রশ্নচোখে তাকালো। কিন্তু তার প্রশ্ন চোখকে গ্রাহ্য করলো না তানবীন। বললো,
“উঠুন। এবারই শেষ বার বলছি। আর বলবো না। টেনে তুলবো।”

রাত্রি আশেপাশে তাকালো। কিছু মানুষ রয়েছে আশেপাশে। এদের সামনে যদি একজন স’ন্ত্রাসী তাকে টেনে তোলে বাইকে সেটা খুব জঘন্য ব্যাপার হবে। রাত্রি বাইকে বসলো। তবে যতটা দূরত্ব রেখে বসা যায়। আসার পথে সে একবারও স্পর্শ করলো না তানবীনকে। রাত্রির বলতে হলো না তার আগে তানবীনই বাইক থামিয়ে ফেললো।
আশ্চর্য! তানবীন জানে কী করে সে এ বাড়িতে পড়াতে আসে? জানতে চাইলো না রাত্রি। দ্রুত বাইক থেকে নেমে গেল। গেটের দিকে এগিয়ে গেলে তানবীন বললো,
“ধন্যবাদ কি দেবেন না?”

রাত্রি দাঁড়িয়ে গেল। খুব খারাপ কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তার। ছেলেটা রীতিমতো জোর করে নিজের বাইকে নিয়ে এসেছে তাকে, আর এখন আবার ধন্যবাদের কথা বলছে? রাত্রি পিছন ফিরে শুকনো মুখে বললো,
“ধন্যবাদ!”

বলে গেটের দিকে এগোলো আবার। হঠাৎ আবার থামলো। তানবীন কী-হোলে চাবি ঢুকাতেই যাচ্ছিল, কিন্তু রাত্রির প্রশ্ন থামালো তাকে।

“আপনি আসলেই স’ন্ত্রাসী তো?”

তানবীন রাত্রির দিকে তাকালো। হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসি চেপে রাখলো। বললো,
“কেন? স’ন্ত্রাসী হলে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন?”

“না না আসলে এমনিতেই জানতে চাইলাম।” রাত্রি ভাবলো হয়তোবা তার তানবীনের স’ন্ত্রাসী হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা উচিত হয়নি।

তানবীন বললো,
“যদি তেমন ব্যাপারই না হয় তাহলে জানতে চাইবেন না। হতেও পারি স’ন্ত্রাসী আবার নাও হতে পারি। তবে ভয়ংকর নই।”

বলে সে বাইক স্টার্ট করে চলে গেল।
রাত্রি বুঝতে পারলো তানবীন আসলেই স’ন্ত্রাসী। না হলে এত ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলবে কেন? যে ভালো সে নিজেকে ভালো বলবে না কেন? আসলে তো সে ভালো না। রাত্রি গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।

আদিল প্রচণ্ড রেগে গেছে। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার একটা বিড়ালকে উপর থেকেই খাবার দিচ্ছিল। রাত্রিকে একটা ছেলের বাইকে করে আসতে এবং ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে সে দেখেছে। তার মুখে রাগের তীব্র প্রতিফলন লক্ষণীয়।

রাত্রি ডোর বেল বাজালো। কিন্তু আজ অপ্রত্যাশিত ভাবে আদিল দরজা খুললো। আদিল এর আগে কখনও দরজা খোলেনি। আজ শুরুতেই আদিলের সাথে দেখা হওয়ায় একটু ঘাবড়ে গেল রাত্রি।
আদিলের আঁখি ক্রুদ্ধ। রুষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“ছেলেটা কে?”

“কার কথা বলছেন?”

“যার বাইকে করে এসেছেন, যার সাথে কথা বললেন। কী হয় আপনার?”

“কেউ হয় না আমার।”

“তাহলে আপনি কেন তার বাইকে করে আসবেন? কেন তার সাথে কথা বলবেন? আপনি চলে যান, পড়াতে হবে না।”

আদিল মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
স্তব্ধ হয়ে গেল রাত্রি। সামান্য কারো বাইকে আসার জন্য আদিল এমন করলো? আচ্ছা, সে যদি কোনো রিকশায় আসতো তাহলেও কি আদিল এমন করতো? কেন যেন আজ ভীষণ অপমান বোধ হলো। সে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
রাত্রি নিচ তলায় এসে দাঁড়িয়ে রইল। বৃষ্টি থামলে তাকে বের হতে হবে। প্রায় দশ মিনিট কেটে গেলেও বৃষ্টি থামলো না। হঠাৎ আদিলকে দেখা গেল। একটা ছাতা নিয়ে এসেছে। ছাতাটা রাত্রির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এটা নিন।”

মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে এখন ছাতা নিয়ে এসে ভালো মানুষি দেখানো হচ্ছে? আদিল স্বাভাবিক না, রাত্রি জানে আদিলের কোনো কিছুতে তার রাগ করা উচিত না। কিন্তু আজ প্রচণ্ড রাগ বোধ হচ্ছে তার। সে ছাতা না নিয়েই বেরিয়ে গেল বাইরে। আদিলও সঙ্গে সঙ্গে ছাতা মেলে বাইরে বেরিয়ে এসে ছাতা ধরলো রাত্রির মাথায়। এবং সে নিজে ভিজতে লাগলো। রাত্রি ছাতাটা আদিলের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
“আপনি ভিজছেন কেন?”

“আপনি ভেজাচ্ছেন বলে।”

আদিল ছাতাটা আবারও রাত্রির মাথায় ধরলো। রাত্রি বললো,
“আমি আপনাকে ভেজাচ্ছি না।”

“ঠিক আপনি ভেজাচ্ছেন না। আমাকে বৃষ্টি ভেজাচ্ছে। কিন্তু আমার ভেজার কারণ আপনি, আর আপনার ভেজার কারণ রাগ। আদিলের প্রতি আপনার এত রাগ?”

“আমি কারো উপর রাগান্বিত নই।”

“কিন্তু আমি চাই আপনি রাগ করুন। আপনি রাগবেন, আপনি বকবেন, আপনি মা’রবেন।”

রাত্রি শুধু বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে। কেন যেন এই মুহূর্তে আদিলকে একদমই মানসিক রোগী মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে সুস্থ, সে স্বাভাবিক।
আদিল আরেকটু কাছে এগিয়ে বললো,
“আপনি আরও একটা কাজ করবেন রাত্রি। ভালোবাসবেন! খুব বেশি না, একটুখানি ভালোবাসতে পারবেন না আদিলকে?”

(চলবে)#কালো_রাত্রির_খামে (০৬)
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________________

আদিলের দেওয়া ছাতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে রাত্রি। যদিও সে অনেক ভিজে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও আদিলের দেওয়া ছাতাটা আনতেই হলো। সে এখন মনে-প্রাণে চাইছে আদিল ভালো হয়ে যাক এবং এই পাগলামি বন্ধ করুক। যদিও একবারও মনে হয়নি সে পাগলামির বশে এসব করছে। কিন্তু এসব আসলে তার পাগলামিই। ভালো হয়ে গেলে নিশ্চয়ই আর কখনও এরকম করবে না। ভালো হোক সে আর নিজের পরিবারের কষ্ট ঘুচাক। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকলো রাত্রি। ঢুকেই বসার ঘরে শেফালি চাচিকে দেখতে পেল। শেফালি পেশায় একজন ঘটক। তবে ভালো কোনো পাত্রের সন্ধান তার আওতায় কখনও কেউ পায়নি। শেফালি তাকে দেখামাত্র ডাকলো,
“তুমি আসছো? এদিকে আসো। তোমার জন্যই তো বসে আছি।”

রাত্রি এগিয়ে গিয়ে বললো,
“কেমন আছেন চাচি?”

“এই তো তোমাদের দোয়ায় আল্লাহ ভালোই রাখছে। তবে তোমরা যে খুব একটা ভালো নেই সেটা আন্দাজ করতে পারছি।”

প্রিয়ারা এলেন রান্নাঘর থেকে। তার একহাতে চায়ের কাপ অন্য হাতে পিরিচ। কেউ বাড়িতে আসলে একেবারে না খাইয়ে কি পারা যায়? এক কাপ চা আর সাথে চার টুকরো বিস্কুট। এরচেয়ে বেশি বিস্কুট আর ছিল না।

শেফালি নিজের ব্যাগ খুঁজে একটা ছবি বের করলেন। ছবিটা রাত্রির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
“দেখো তো ছবিটা।”

রাত্রির মুখ গম্ভীর হলো। আবার কোন ছেলের ছবি দেখতে হবে তাকে? যেখানে বিয়েই হবে না সেখানে সে বার বার ছবি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। সে বললো,
“না চাচি, এসবের আর দরকার নেই।”

শেফালি চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খেয়ে বললেন,
“আরে দেখোই না। ভালো ছেলে। দেখো দেখো।”

রাত্রি দেখলো। দেখতে মন্দ নয়, তবে বয়স বেশি মনে হচ্ছে। শেফালি বললেন,
“ভালো ছেলে, বুঝছো? অনেক টাকাপয়সা। আগে একটা বিয়ে করছিল। কিন্তু বউয়ের সাথে অনেক ঝগড়া-ঝাটি। দুইটা ছেলে সন্তান। বউ একটা ছেলে নিয়ে আলাদা থাকে।”

“ডিভোর্স হয়েছে?” রাত্রি প্রশ্ন করে।

“না, ঠিক ডিভোর্স না। আলাদা থাকে আরকি। বোঝোই তো বাসায় মানুষ নাই। বেচারার একা থাকতে কষ্ট হয়। তাছাড়া ছেলেটার দেখভাল করার জন্যও তো একটা মানুষ লাগে। সে আমার সাথে যোগাযোগ করছে। বলছে একটা ভালো মেয়ে খুঁজে দিতে। বিয়েতে কোনো টাকাপয়সা খরচ করা লাগবে না।”

রাত্রির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,
“এসব প্রস্তাব কোত্থেকে নিয়ে এসেছেন? আমি এমন কাউকে বিয়ে করবো না যে বিবাহিত।”

“আরে রাগ হও কেন? আমি তোমার ভালোর জন্যই প্রস্তাব নিয়ে আসছি। তোমার বাবা টাকার অভাবে তোমার বিয়ে দিতে পারছে না। জীবনে পারবে কি না তারও ঠিক নেই। তোমার কথা ভেবেই তো প্রস্তাবটা নিয়ে এসেছি। তুমি কি সারাজীবন অবিবাহিত থাকতে চাও?”

“থাকলে থাকবো। কিন্তু আর কখনও আপনি আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন না।”

রাত্রি নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরের মেঝেতে আবারও পানি। তবে বৃষ্টি কম হয়েছে বলে পানির পরিমাণও কম। তবুও এটা কষ্টের!

শেফালি প্রিয়ারাকে বললেন,
“দেখছেন মেয়েটার কী দেমাগ? ভালো একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছি অথচ মেয়েটা…ও কি রাজপুত্র বিয়ে করতে চায়? রাজপুত্ররা রাজকন্যা বিয়ে করে। ওকে কোন রাজপুত্র বিয়ে করবে?”

প্রিয়ারারও ভালো লাগছে না শেফালির কথাবার্তা। তিনি অথবা এনামুল শিকদার কেউই চাইবেন না রাত্রির বিয়ে এমন জায়গায় দিতে। তিনি বললেন,
“আপনাকে আর প্রস্তাব নিয়ে আসতে হবে না আপা। প্রয়োজন হলে আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো।”

শেফালি উঠে দাঁড়ালেন। সম্পূর্ণ চা খাননি তিনি। বললেন,
“তোমার স্বামীরে বোঝাও আর মাইয়ারেও বোঝাও। তোমাদের যা অবস্থা তাতে এমন জায়গাতেই মেয়ে বিয়ে দিতে হবে।”

“আচ্ছা, আমরা ভেবে দেখবো আপা। আসেন আপনাকে এগিয়ে দিই।”

প্রিয়ারা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন শেফালিকে। শেফালি আরও নানান কথা বললেন। কিন্তু সেসব তিনি কানে তুললেন না, কেবল শুনেই গেলেন। ফেরার সময় শুনলেন নিচতলার স্বামীটা বউকে মা’রছে। তাদের মাঝে অশান্তি লেগেই থাকে। প্রিয়ারার মনে পড়ে জীবনের একটা সময় তিনিও এমন অশান্তিতে ছিলেন। তার প্রথম স্বামী ছিল একজন খারাপ মানুষ। নেশায় আসক্ত ছিল। তারপর হঠাৎ একদিন সে মারা যায় স্ট্রোক করে। প্রিয়ারা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলেন।

__________________

বৃহস্পতিবার রাতে কেউ শ্রাবণীকে বই পড়তে বসাতে পারবে না। এই রাতে যেন সে স্বাধীন। যেখানে এখন তার বই নিয়ে বসার কথা সেখানে সে রাত্রির ছোটো বাটন ফোন দিয়ে ‘Snake Game’ খেলছে। প্রায় অনেকক্ষণ হলো সে গেইমটা খেলছে। রাত্রি অবশ্য বলেছে কিছুক্ষণ পর যদি সে মোবাইল রেখে বই পড়তে না বসে তাহলে আজ রাতে সে রাত্রির হাতে মা’র খাবে। সে রাত্রিকে কথা দিয়েছে সে পড়তে বসবে। কিন্তু রাত্রি জানে শ্রাবণী পড়তে বসবে না।

দরজায় ক’রাঘাতের শব্দ শুনে রাত্রি দরজা খুলতে এলো। মিথিলাও বের হয়েছিল রুম থেকে। রাত্রি দরজা খুলেছে দেখে আবার রুমে ঢুকে গেল। অয়ন বাজার নিয়ে এসেছে। রাত্রি ব্যাগ মেলে দেখলো। উপরেই ডিমের প্যাকেট দেখা গেল।

“ডিম কিনেছিস কেন?” রাত্রি জানতে চাইলো।

“আমি কী জানি? বাবাই তো টাকা দিয়ে ডিম, আলু কিনতে বলেছে।”

অয়ন সোফায় শুয়ে পড়লো। ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে। তবুও ফ্যান অন করেনি। রাত্রি ফ্যান অন করলো। অয়ন বললো,
“ফ্যান অন করলে কেন? শুধু শুধু বিদ্যুৎ বিল বেশি করার দরকার কী?”

“তাই বলে কি গরমে মরবো আমরা?”

“আমরা মরে গেলেও কারো কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা মূল্যবান সম্পদ নই।”

অয়ন হঠাৎ উঠে নিজের রুমে চলে গেল। তার রুমটা খুব নগণ্য। দুটো চেয়ার আর দুটো কাঁথা এবং বালিশ ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই। গরম আর শীতকাল নেই, বারো মাসই অয়ন কেবল দুটো কাঁথা বিছিয়েই শোয়। তার কষ্ট হয় না। তার বইপুস্তক ও অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী সব মেঝেতে রাখা। খুব বেশি ফ্যান সে চালায় না। ঘরের জানালা খুললে যতটুকু বাতাস আসে তাতেই সে দিব্যি শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তার রুমের ফ্যানটা অবশ্য নয় দিন ধরে নষ্ট। সে কথা সে কাউকে জানায়নি আর নিজেও ঠিক করেনি। সে খুব সহনশীল ছেলে। যা অনেকে সহ্য করতে পারে না তা সে পারে।

রাত্রি রাতে প্রিয়ারাকে রান্না করতে সাহায্য করলো। মিথিলাও চাইলেই সাহায্য করতে পারে, কিন্তু কখনোই কারো কোনো কাজে সে সাহায্য করে না। একমাত্র রাত্রিই প্রিয়ারার কাজে সাহায্য করে থাকে।

আজ রাতে একটু শান্তি করে খেতে পারলো শ্রাবণী। কতদিন পর যে ডিম, আলু দিয়ে ভাত খেলো। সাথে একটু মসুর ডাল হলে অবশ্য ভালো হতো, কিন্তু ঘরে মসুর ডাল নেই।
রাত্রি খেতে বসলো প্রিয়ারার সঙ্গে। তখন সকলের খাওয়া শেষ। প্রিয়ারা একটা ডিম রাত্রির প্লেটে তুলে দিলেন আর নিজের প্লেটে রাখলেন শুধু আলু। এটা দেখে রাত্রি একটু অবাক হলো। অয়ন ডিম ছয়টাই এনেছিল। রাত্রি জানতে চাইলো,
“অয়ন তো ছয়টা ডিমই এনেছিল, তাহলে আপনি…”

“সকালের জন্য রেখে দিয়েছি একটা। শ্রাবণী তো সকালে খেতে চায় না। ওকে ডিমটা ভাজি করে দেবো।”

রাত্রি হঠাৎ প্রিয়ারার মাঝে মায়ের রূপ দেখতে পেল। এই মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে এ সংসারে এসেছিল। এই মানুষটি আজ এখানে না থাকলে অনেক কিছুই হয়তো অগোছালো থাকতো। সে যেন মাথার উপর ছায়া হয়ে আছে। যে ছায়া তাদের প্রখর রোদ থেকে আড়াল করে রেখেছে। রাত্রির চোখে পানি আসে। সে ডিমের অর্থেকটা ভেঙে প্রিয়ারাকে দিলো। প্রিয়ারা বলে উঠলেন,
“আরে কী করছো? আমি কি বাচ্চা না কি?”

“আমরা কেউই তো বাচ্চা নই। তাই বলে কি আমাদের ডিম খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে? খান।”

প্রিয়ারার চোখ ভিজে যায়। আজকাল ছোটো ছোটো অনুভূতিও তাকে খুব আবেগ তাড়িত করে তোলে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় এ পরিবারের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে, আবার মাঝে মাঝে মনে হয় বাসে না। যখন যা উপলব্ধি করেন তখন সেভাবে আনন্দ পান, আবার দুঃখ পান। এই মুহূর্তে তিনি আনন্দিত। তার চোখে আনন্দ জল। তিনি শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন গোপনে।

__________________

আজ মালিহাকে পড়াতে যেতে হবে না। কারণ তারা সপরিবারে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। পারভীন কল করে জানিয়েছিলেন। রাত্রি ভাবছে আজ লতা রানি নামের মহিলার বাসায় গিয়ে একবার কথা বলে আসবে। মহিলা বলেছিল তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা ছেলে আছে। ছেলের জন্য ইংরেজি টিচার খুঁজছে সে। ওখানে একবার গিয়ে দেখা উচিত। রাত্রি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। কাল বৃষ্টি হলেও আজ রোদের তেজ প্রখর। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর হাঁটতেই শরীর ভিজে গেল ঘামে। ছাতা নিয়ে বের হওয়া উচিত ছিল। ছাতার কথা মনে উঠতেই আদিলের কথা মনে পড়ে গেল তার। কিন্তু সে আদিলকে নিয়ে ভাবতে চাইল না। লতা রানির বাসা রাত্রির বাসা থেকে বেশি দূরে নয়। হেঁটে যেতে দশ মিনিট। কিন্তু এসে রাত্রিকে নিরাশ হতে হলো। লতা রানি ইতোমধ্যে অন্য একজনকে ছেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে। রাত্রির মন খারাপ হয়। যদি অন্য কাউকেই নিয়োগ দেবে তাহলে তাকে কেন বলেছিল? রাত্রি হালকা কথাবার্তা শেষ করে এসে পড়লো ও বাড়ি থেকে। কেন যেন অসহায় বোধ হচ্ছে। টিউশনিটা পেলে ভালো হতো।
সামনেই একটা গাছ। গাছের নিচে একটা বেঞ্চ। রাত্রি কখনও বসে না। আজ কী মনে হতেই সে ওই ছায়া নিবিড় বেঞ্চটিতে বসলো। খারাপ লাগছে না। এ জায়গাটায় বাতাসের চলাচল ভালোই। আশপাশ নিরিবিলি বলে আরও ভালো লাগছে। রাত্রি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। খুব কাছেই শোনা গেল একটা কণ্ঠস্বর,
“রাত কেন দিনের বেলা এত ঘোরাঘুরি করে?”

রাত্রি সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেললো। পাশে তাকিয়েই চমকালো ভীষণ রকম। ছেলেটা কখন তার পাশে বসেছে? কখনই বা এলো? ছেলেটা কি সাপ? নিঃশব্দে চলাচল করে? রাত্রির একটা বিষয় ভীষণ খটকা লাগছে। ছেলেটা কী করে জানলো সে এখানে? এটা কি কাকতলীয় ভাবে দেখা হওয়া? না কি ছেলেটা তাকে ফলো করছে? লোক লাগিয়েছে না কি পিছনে? রাত্রি আশেপাশে তাকালো। কিন্তু দ্বিতীয় কোনো লোক দেখতে পেল না।

“কী খুঁজছেন?” তানবীন জানতে চাইলো।

রাত্রি তাকালো। মানুষটার মুখে চিরায়ত শান্ত ও ভদ্র ভাবটা অক্ষুণ্ণ। রাত্রি হঠাৎ খেয়াল করলো তানবীন তার খুব কাছে বসে আছে। এক হাতেরও কম দূরত্ব তাদের মাঝে। রাত্রি উঠে দূরে সরে গেল। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো,
“জানলেন কীভাবে আমি এখানে?”

“না জানার কী আছে? গুপ্তচর লাগিয়েছি যে আপনার পিছনে।” অত্যন্ত শান্ত তানবীনের গলা।

রাত্রি ভয় পেল মনে মনে। যা ধারণা করেছিল তাই। সে বললো,
“আমার পিছনে গুপ্তচর লাগিয়েছেন কেন? আমি তো কোনো অন্যায়-অপরাধ করিনি।”

“আপনি কীভাবে জানেন অপরাধ করেছেন কি করেননি?”

রাত্রি মনে করার চেষ্টা করলো। না এমন কোনো কাজ সে করেনি যা অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। অবশ্য যার কাছে সে কথাটা বললো সে নিজেই তো অপরাধী। বললো,
“না, আমি কোনো অপরাধ করিনি।”

“তাই?”

রাত্রি ভ্রু কুঁচকালো। ছেলেটা এমনভাবে বলছে যেন আসলেই সে কোনো অপরাধ করেছে এবং এখন তা অস্বীকার করছে।

তানবীন বললো,
“আচ্ছা, ধরে নিচ্ছি কোনো অপরাধ করেননি।”

রাত্রির এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। ছেলেটা বার বার তার সামনে চলে আসছে কেন? সে চায় না কোনো সন্ত্রাসী ধরনের ছেলের সামনে পড়তে, কিন্তু ছেলেটা নিজেই তার সামনে আসছে। রাত্রি হুট করে বললো,
“আর কিছু বলবেন? আমি চলে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে অবশ্য সে তানবীনের কোনো কথার অপেক্ষা করলো না। যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই তানবীন ডাকলো,
“রাত শুনুন।”

ভুল সম্বোধন শুনে দাঁড়ালো রাত্রি। শুধরে দিয়ে বললো,
“আমার নাম রাত্রি।”

“রাত আর রাত্রির ভিতর পার্থক্য কী?” জানতে চাইলো তানবীন। তবে তা রাত্রি শুনতে পেল না। সে চলে গেল দ্রুত পা ফেলে। সারা পথে সে মাথা থেকে চিন্তাটা সরাতে পারলো না। ছেলেটা কেন তার উপর নজর রাখছে? না, বিষয়টা একদম ভালো কিছু নয়। ইদানীং সব খারাপ খারাপ ঘটছে তার সঙ্গে।

বাড়িতে আসার পর মোবাইল বের করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত কিছু দেখতে পেল রাত্রি। একটা চিরকুট। হলুদ রঙের কাগজে কালো কালিতে খুব সুন্দর একটা হাতের লেখা ফুটে আছে।

‘রাত্রি, পৃথিবীতে রাত কেন নামান? আমার বুকের আকাশেতে মিটিমিটি তারা কেন জ্বালান?’

চিরকুটটা দেখে রাত্রি চিন্তায় পড়ে গেল। কে রাখলো তার ব্যাগে এই চিরকুট? আদিল? কবে? কখন রাখলো? রাত্রি ধরেই নিয়েছিল এটা আদিলের কাজ, কিন্তু হঠাৎ তার মনে পড়লো তানবীনের কথা। তানবীন তার পাশে এসে বসেছিল। এই চিরকুট কি তবে তার দেওয়া?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here