কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব -০৪+৫+৬+৭

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সকালে নিজের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় মেহেক।কারণ সে নিজের মাথা সৌন্দর্যের কাঁধে পায় অর্থাৎ কাল রাতে ঘুমের ঘোরে সে সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা দিয়ে দিয়েছে।মানে কাল সারারাত মেহেক সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল।

” এইযে ম্যাডাম,বাস থেকে নামুন।আমাদের আরেক জায়গায় যেতে হবে তো।”

বাস কন্ট্রাকটরের কথায় মেহেক নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।সে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য তখনো ঘুমাচ্ছে।মেহেক চিন্তা করতে থাকে যে সৌন্দর্যকে ডাকবে কিনা।কিন্তু মেহেকের চিন্তা করতে করতেই সৌন্দর্যের ঘুম ভেঙে যায়।সৌন্দর্য চোখ খুলে প্রথমেই মেহেকের দিকে তাকাই।হঠাৎ সৌন্দর্যের তাকানো দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায়।সে সৌন্দর্যের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয় বাস থেকে নেমে পড়ার জন্য।সৌন্দর্যও নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয়।সৌন্দর্য নিজের সিট থেকে বের হয়ে মেহেককে নিচে নেমে যাওয়ার জন্য জায়গায় করে দেয়।মেহেকও কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে পড়ে।মেহেক নেমে গেলে সৌন্দর্য মুচকি হাসে।আসলে তার ঘুম অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছিল।সে আগে থেকেই জানে মেহেক তার কাঁধে মাথা রেখে গত রাতে ঘুমিয়েছিল।কিন্তু সকালে যখন মেহেকের ঘুম ভাঙেছে তখন সে ঘুমানোর ভান করে ছিল কারণ সে মেহেককে লজ্জায় ফেলতে চাইনি।এস কিছু ভাবতে ভাবতে সৌন্দর্য বাস থেকে নেমে পড়ে।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,হঠাৎ কিছু দেখে তার মুখে হাসি ফোঁটে।কারণ কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।সৌন্দর্য ভেবেছিল মেহেক হয়তো চলে গিয়েছে কিন্তু মেহেক যে তার জন্য অপেক্ষা করবে সেটা সে ভাবেনি।সৌন্দর্য এসে মেহেকের কাছে দাঁড়ায়।

” কি হলো মিস মেহেক?কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?”

মেহেক কি বলবে বুঝতে পারছেনা।সে আসলে সৌন্দর্যের জন্যই অপেক্ষা করছিল কিন্তু এখন সেটা সৌন্দর্যকে বলতে তার হেজিটেশন ফিল হচ্ছে।

” ওই আসলে আমি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে উওর দেয় মেহেক।

সৌন্দর্য বুঝে যায় মেহেক মিথ্যা কথা বলছে।কারণ এই জায়গায় কোন গাড়ি সে পাবেনা।

” ও আচ্ছা।কিন্তু এখানে তো বাস ছাড়া অন্যকোন গাড়ি আসা যাওয়া করেনা।”

মেহেক বুঝে যায় সৌন্দর্য তার মিথ্যা ধরে ফেলেছে।
তাও সে হার মানলোনা।

” আসলে আমি নতুন তো তাই আরকি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছি।”

মেহেক সৌন্দর্যের দিকে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।কিছুদূর গিয়ে সৌন্দর্য মেহেককে ট্যাক্সতে তুলে দেয়।

” ভালো থাকবেন মিস্টার সৌন্দর্য।আর এতো সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।”

” মাই প্লেজার।সাবধানে যেও।”

মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।সৌন্দর্য ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ট্যাক্সি স্টার্ট দিতে বলে।ট্যাক্সি অর্ধেক যাওয়ার পর মেহেকের মনে পড়ে আরে সে তো সৌন্দর্যের নম্বরটাই নিতে ভুলে গিয়েছে।সৌন্দর্যের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের কোন মাধ্যম জানা না থাকায় মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে মুগ্ধের বিয়ের কথা।আশ্চর্য হলেও কাল রাতে একবারেও মেহেকের মুগ্ধের কথতা মনে পড়েনি।কিন্তু এখন মুগ্ধের কথা মনে পড়লে মেহেক কান্না পাচ্ছেনা বরং হাসি পাচ্ছে,বিদ্রুপের হাসি।মেহেক মুচকি হেসে চিন্তা করতে থাকে কতটা বোকা ছিল সে যে একটা মরিচিকার পেছনে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে।মেহেক ভেবে নেয় সে আর এসব মিথ্যা সম্পর্কে কোনদিনও জড়াবেনা আর মন দিয়ে পড়াশোনা করে সবাইকে দেখিয়ে দেবে সেও কোন অংশকে কম না।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতে মেহেক নিজের বোনের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজে তখন।মেহেক ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ে।মেহেকের বোন তার শশুর বাড়ির লোকেদের নিয়ে একটা বিল্ডিং এ থাকে।বিল্ডিং এর দোতালা পুরোটা তাদের নিজেদের।

মেহেক সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে আসে।তার মনের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করছে না জানি তার বোনের শশুড়বাড়ির লোক তার আসাতে কি রকম ব্যবহার করে।মেহেক কাঁপা কাঁপা হাতে বেল দেয়।কিছুক্ষণ পর একটা ১৮/১৯ বছরের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

” কাকে চাই?”

” আপুনি….. মানে সৃষ্টি আপু আছে?”

” হ্যাঁ ভাবী আছে কিন্তু আপনি কে?আর ভাবীকে আপনার কি দরকার?”

মেহেক কিছু বলবে তার আগেই মেহেকের বোন বেরিয়ে আসে।বোনকে দেখে মুচকি হাসে মেহেক।আর ছোট বোনকে এতোদিন পর দেখে সৃষ্টি মেহেককে জরিয়ে ধরে।

” কেমন আছিস মৃদু?আর তুই হঠাৎ আসলি?আসার আগে একবার বলবিনা।আমি তোর দুলাভাইকে পাঠাতাম।”

” তার কোন প্রয়োজন ছিল না।”

” ভাবী তুমি একে চেনো?” দরজা খুলে দেওয়া মেয়েটা বলে।

” অনু এ হচ্ছে আমার ছোট বোন মেহেক।আর মৃদু এ হচ্ছে আমার একমাত্র ননদ রিফা।”

” আরে ভাবী আগে বলবেনা।আসলে তোমাকে আমি আগে দেখেনি তো তাই চিনতে পারিনি।সরি হ্যাঁ।”

” সমস্যা নেই আপু।”

” এই তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?আয় আয় ভিতরে আয়।”

” হ্যাঁ এসো।ভাবী তুমি মৃদুকে নিয়ে এসো আমি মাকে ডেকে আনছি।”

রিফা ভেতরে চলে যায়।সৃষ্টি মেহেকের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে আসে।মেহেক ভেবেছিল তাকে দেখে তার বোনের শশুড়বাড়ির লোকেরা রাগ করবে বা তার বোনের সাথে সমস্যা সৃষ্টি করবে কিন্তু এখন মেহেকের এসব কিছু মনেই হচ্ছেনা।মেহেকের বোনের শশুড় বাড়িটা ভিতরে ডুপ্লেক্স সিস্টেম মানে ঘরের ভিতরে সিঁড়ি আছে।সবার সাথে কুশলবিনিময় শেষ মেহেককে রিফা তার থাকার রুমটা দেখিয়ে দেয়।রুমে এসে মেহেক ধপ করে শুয়ে পড়ে।এতোক্ষণ জার্নি করে তার অনেক টার্য়াড লাগছে তার।সে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ওয়াশরুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।১২টার দিকে মেহেকের ঘুম ভাঙে।ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে নিচে নামার জন্য রুম থেকে বের হয় সে।মেহেক হাঁটতে হাঁটতে তার বোনের রুম খুঁজছে।তার সামনে যে রুম আসছে সে সেই রুমে উঁকি মেরে দেখছে।হঠাৎ একটা রুমের দরজা খোলা দেখতে পাই মেহেক।দরজাটা হালকা করে খোলা ছিল,মেহেক দরজার হাত দিতে নিঃশব্দে দরজাটা খুলে যায়।মেহেক ধীরপায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।ভিতরে প্রবেশ করতে মেহেকের চোখ সর্বপ্রথম পড়ে দেয়ালে টাঙানো বড় ছবিটার উপর।ফরমাল ড্রেসে, ঠোঁটে হাঁসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।বেশ লম্বাটে ছেলে।ফর্সা মুখে মুখে হাল্কা চাপ দাড়ি বিরাজমান।চোখে কালো ফ্রেশের চশমা,যার তার কারণে চোখের চাহনি বোঝা যাচ্ছেনা।মেহেক ছবিটা দেখতে এতোটাই মত্ত ছিল যে কেউ যে তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা মেহেক বুঝতেই পারেনি।

” এইযে কে আপনি?আর আমার রুমে কি করছেন?”

গম্ভীর কারো কন্ঠস্বর কানে আসলে মেহেকের ধ্যান ভাঙে।সে পেছন ফিরে তাকাই তবে যা দেখে তাতে মেহেক চিৎকার দিতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।মেহেক মুখে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে তার সামনে থাকা বলিষ্ঠ দেহ বিশিষ্ট মানুষটা দিকে তাকিয়ে রয়।ছেলেটা শরীরে শুধু একটা টাওয়াল ছাড়া আর কিছু নেই,পুরো গা উন্মুক্ত তার।মেহেক লজ্জায় চোখমুখ খিঁচে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।এদিকে ছেলেটা এখনো অবাক হয়ে মেহেক যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটায় তাকিয়ে আছে।

খাবার সময় যখন মেহেক টেবিলে বসতে যাবে তখন সে খেয়াল করে সেই টাওয়াল পড়া ছেলেটা তার বরাবর সামনের চেয়ারটাতে বসে আছে।ছেলেটাকে দেখে মেহেকের আবারো তার উন্মুক্ত বুকের কথা মনে পড়ে যায়।আর এটা মনে পড়তেই মেহেককে আবারো লজ্জায় ঘিড়ে ধরে।

” কিরে মৃদু দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস।”

” হুম বসছি আপুনি।”

মেহেক শত লজ্জা নিয়ে ছেলেটার সামনের চেয়ারে বসে পড়ে।অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহেক ছেলেটার পরিচয় পেয়ে যায়।ছেলেটার হচ্ছে তার বোনের ছোট দেবর।নাম আদরিক স্পর্শ।

খাবার পর্ব শেষ হলে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মেহেক আবারো নিজের রুমে ফিরে আসে।কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠার পর তার এখন ঘুম আসছেনা,তাই মেহেক বসে বসে ফোনে মুভি দেখছে।

” কি করছিস মৃদু?”

কারো কথায় মাথা তুলে তাকাই মেহেক।দেখে তার বোন এসেছে।

” আরে আপুনি আয়।কিছুনা ওই মুভি দেখছিলাম।বস তুই।”

সৃষ্টি বিছানায় বসলো।তার সে মেহেকের হাতে হাত রেখে বলে,

” একটা সত্যি কথা বলবি মৃদু?”

” কি আপু?”

” তুই সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?তুই হঠাৎ করে ঢাকা শহরে এলি কেন?”

” কিছু হয়নি আপুনি।আর তুই চিন্তা করিস না আমি বেশিদিন তোর শশুড় বাড়ি থাকবোনা।”

” এক থাপ্পড় দেবো,আমি কি তোকে ওইভাবে বলেছি নাকি?আচ্ছা যা তুই না বললে আমি তোকে জোর করবোনা তবে তোর কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”

” হুম।”

সৃষ্টি চলে যায় আর মেহেক ভাবতে থাকে তার ফেলে আসা তিক্ত অতিতের কথা।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ড্রয়ংরুমে রিফার সাথে বসে আছে মেহেক।সে আসতে চাইনি তবে রিফা তাকে জোর করে নিচে নিয়ে এসেছে।

” শোনো আমি আবার কাউকে আপনি করে বলতে পারিনা সো আমি তোমাকে তুমি করেই বলছি।”

” ঠিক আছে আপু।”

” ধুর রাখোতো আপু।নাম ধরে ডাকো,আমার নাম অনুজা রিফা।”

” আচ্ছা।”

” হুম।তো তোমাে পুরো নাম কি?আমি তো ভালো করে তোমার নাম জানিনা।”

” মৃদুলা মেহেক।”

” বাহ্ খুব সুন্দর নাম।আমি তোমাকে মেহু বলে ডাকবো,ওকে?”

” হুম।”

” খালি হুম হুম করো কেন?আমার সাথে এইসব হু হা চলবেনা।আমি খুব পকর পকর করি তাই তোমাকেও করতে হবে।”

” আচ্ছা।”

” ধুর।আচ্ছা এবার বলো তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”

” এবার অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।”

” কি বলো?আমিও তো অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারেে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।ওয়াও…..তার মানে আমরা ক্লাসমেট।তাহলে তো আমি তুমি না তুই করে বলবো।আর শোন তুইও তুই করে বলবি।”

” আচ্ছা।”

” ধুর মরা,খালি আচ্ছা আর হুম করে।অন্যকিছুও বল।”

” কি বলবো?”

” আচ্ছা এটা বল তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?”

রিফার কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।

” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”

” উহু….কিছু না।”

” নেই নাকি?”

” না নেই।আপনার….না মানে তোর আছে?”

” হুম আছে।” লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে রিফা।

” তা কে সে?”

” তার নাম হচ্ছে ইভান।”

” বাড়িতে জানে?”

” না আমরা যে প্রেম করি তা বাড়িতে জানেনা তবে ইভানকে বাড়ির সবাই চেনে।”

” তা কিভাবে?”

” আরে ইভান আব্বু বন্ধুর ছেলে।”

” তো তোর ইভান কি করে এখন।”

” সে পড়াশোনা করছে এখনো।মেডিকেল স্টুডেন্ট, ফোর্থ ইয়ারে আছে এখন।আর হ্যাঁ ইভান ভাইয়ার(স্পর্শ) বন্ধুও।”

” ও আচ্ছা।”

মেহেক আর রিফা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু রিফার কথা শেষ হলোনা।হঠাৎ বেল বেজে উঠে।রিফা মেহেককে বসতে বলে দরজা খুলে দেয়।দরজার খোলার সাথে সাথে মেহেক হালকা একটা চিৎকারে শব্দ শুনতে পাই।

” দাভাই…….”

ততক্ষণে মেহেক বোন সৃষ্টি আর তার বোনের শাশুড়ীও নিচে চলে এসেছে।

” কিগো ননদীনি হঠাৎ এভাবে চিৎকার করলে কেন?”

” ভাবী দাভাই এসেছে।” দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উওর দেয় রিফা।

” ও সৌ এসেছে।ওকে ভিতরে আসতে দাও অনু।বেচারা অনেক দূর থেকে এসেছে।”

রিফার তার দাভাইয়ের হাত ধরে তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।

” দাভাই দেখো আমাদের বাড়িতে কে এসেছে।”

মেহেক এতোক্ষণ ফোনে কিছু করছিল,রিফার কন্ঠ শুনে সে রিফার দাভাইয়ের দিকে তাকাই।কিন্তু রিফার দাভাইকে দেখে মেহেক ছোটখাটো একটা ঝটকা খায় কারণ রিফার দাভাই মানে তার বোনের আরেক দেবর আর কেউ নয় বরং সৌন্দর্য।সৌন্দর্যও মেহেকে দেখে আশ্চর্য হয়।

” আপনি!”

” তুমি!”

একসাথে বলে উঠে মেহেক আর সৌন্দর্য।তারা দুজন যে দুজনকে আশা করি তা তাদের রিএকশেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

” দাভাই এ হচ্ছে মেহু ভাবীর ছোট বোন আর আমার নতুন বান্ধবী।”

” হ্যালো বেয়াইন সাহেবা।”

” হ্যালো।”

” অনুু সৌ কে এখন ছেড়ে দাও ওরা পরেও পরিচিত হতে পারবে।সৌ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নাও।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো।” বলে সৃষ্টি।

” জ্বি ভাবী।”

জ্বি বলে সৌন্দর্য চলে তো যাচ্ছে তবে তার চোখ এখনো মেহেকের উপর বিদ্যমান আর মেহেকও অবাক চোখে সৌন্দর্যে দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ” যদি সৌন্দর্য এই বাড়ির ছেলে হয় তাহলে সৌন্দর্যের বাড়িতে আসতে এতোক্ষণ কেন লাগলো?সে আর সৌন্দর্য তো একসাথে ঢাকায় এসেছিল।তাহলে সৌন্দর্য দেরি করো কেন এলো?”

” কিরে মেহু কি ভাবছিস?”

” আচ্ছা উনি কে হয় তোর?”

” আরে এটা আমার দাভাই মানে আমার মেঝো ভাই।”

” তোরা কয় ভাই বোনরে?”

” কেন তুই জানিস না?”

” না,বলনা।”

” আমরা তো ৩ ভাই আর ১ বোন।বড় ভাইকে তো তুই চিনিস তোর জিজু লাগে।আর এখন যাকে দেখলি সে হলো আমার মেঝো ভাই আর দুপুরে যাকে দেখেছিস সে হলো ছোটভাইয়া।”

” ও আচ্ছা।”

” আচ্ছা মেহু চল ছাদে চল।”

” ছাদে কেন?”

” ঘরে আর ভালো লাগছেনা,চল ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তুই তো আমাদের ছাদ দেখিসনি।চল চল।”

রিফা মেহেকের হাত ধরে তাকে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।ছাদটা দেখে মেহেকের মন ভালো হয়ে যায়।ছাদটা বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করো সাজানো।প্রত্যেকটা গাছে ৩/৪ টা করে ফুল ফুটে আছে।আর ছাদের দুপাশে আছে দুটো দোলনা।

” মেহু তুই একটু দাঁড়া আমি কাপড় গুলো বাসায় রেখে আসছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

রিফা কাপড় গুলো নিয়ে নিচে নেমে যায়।মেহেক হেঁটে হেঁটে ফুলে গাছগুলো দেখছে।হঠাৎ মেহেকের চোখ যায় ছাদের কর্নারে।কেউ দাড়িয়ে আছে সেখানে আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মেহেক উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আসলে লোকটা কে তবে মেহেককে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তার আগেই লোকটা মেহেকের দিকে ফিরে তাকাই।লোকটাকে দেখে মেহেকের হার্ট এক সেকেন্ডের জন্য ধক করে উঠে।লোকটা আর কেউ নয় বরং স্পর্শ।স্পর্শ মেহেকের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।স্পর্শের গম্ভীর ভাব দেখে মেহেকের খুব আজব লাগছে।

” কি এটিটিউটরে বাবা।ওনার থেকে তো ওনার বড় ভাই সৌন্দর্য ডের ভালো আছে।এসেছি পর্যন্ত মনে হয়না দুদন্ড কথা বলতে শুনেছি।” নিজে নিজে বলে মেহেক।

মেহেক দোলনায় বসে দোল খেতে থাকে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একজোড়া হাত এসে মেহেকের চোখ চেপে ধরে।হঠাৎ এরকম কিছু হওয়াতে মেহেক ঘাবড়ে যায়।

” কে?”

মেহেকের কন্ঠ শুনে লোকটা মেহেকের চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।হাত সরতেই মেহেক দোলনা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে।মেহেক পেছনে ফিরে দেখে সৌন্দর্য কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” সরি সরি মেহেক আমি ভেবেছিলাম বোনু,তাই আরকি।”

” সমস্যা নেই মিস্টার সৌন্দর্য।”

” চলো বসে কথা বলি।”

মেহেক আর সৌন্দর্য দোলানায় বসে।মেহেক যথাসম্ভব সৌন্দর্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।

” তাহলে ভাবীই তোমার সেই বোন।”

” হুম।”

” ভাবীর একটা বোন আছে শুনেছিলাম কিন্তু কখনো দেখিনি।তাই তোমাকে চিনতে পারিনি।তুমি কি আমাকে চিনেছিলে?”

” না।আমিও আগে কোনদিন আপনাদের দেখিনি।আমি দুলাভাইকে ছাড়া আপনাদের পরিবারের আর কাউকে তেমন একটা চিনিনা।”

” আচ্ছা।তা তুমি কি সবসময় এরকম চুপচাপ থাকো নাকি আমার সাথেই চুপ করে থাকো।”

” না তেমন কিছুনা।”

” হুম।আচ্ছা তুমি হঠাৎ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলে কেন?এর আগে তো কখনো আসোনি।”

” আছে কিছু কারণ।সময় হলে একদিন জানতে পারবেন।” মুচকি হেসে বলে মেহেক।

” তুমি বড়ই রহস্যজনক একটা মানুষ।”

সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেক আবারো মুচকি হাসে।সে ভাবতে থাকে,

” আসলেই কি আমি রহস্যময় মানুষ?তাহলে তো মুগ্ধ আর রিয়া আমাকে নয় আমি ওদের ঠাকাতাম।কিন্তু এরকম তো কিছুই হয়নি।উল্টো ওরা আমাকে ঠকিয়েছে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”

” কি হলো মেহেক?কোথায় হারিয়ে গেলে?”

” কিছুনা।আচ্ছা আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেন?”

” হুম বেসেছি তো আর এখনো বাসি।”

” ও আচ্ছা তার মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।”

মেহেকের কথা শুনে চুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য।সৌন্দর্যের হাবভাবে দেখে মেহেক তার উওর পেয়ে যায়।সে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

” জানেন মিস্টার সৌন্দর্য ভালোবাসা হচ্ছে কাশফুলের মতো।”

” তা কিভাবে?”

” কাশফুলের যেমন শুধু শরৎকালে দেখা মেলে তেমনি সত্যি কারের ভালোবাসাও দেখা মেলে ভাগ্য থাকলে।কাশফুল যেমন শুভ্র,ভালোবাসাটাও সেইরকম শুভ্র,স্বচ্ছ।”

” তোমার এই জ্ঞানী জ্ঞানী কথাগুলো বাবা আমার এই ছোট মাথায় ঢুকছেনা।তবে তোমার কথাগুলো শুনে ভালোলাগলো।”

মেহেক প্রতিউত্তরে কিছু বলেনা।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো তার জীবন নাম বইয়ের আগে শেষ করে আসা পৃষ্টা গুলো মনে করতে থাকে।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

চুল খোঁপা করতে করতে নিচে নামছে মেহেক।সে আশেপাশে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘরে গিয়ে মেহেক দেখে তার বোন সৃষ্টি রান্না করছে।মেহেক গিয়ে সৃষ্টির পাশে দাঁড়ায়।

” কি রান্না করছিস আপুনি?”

” আরে মৃদু তুই উঠে পড়েছিস।কি খাবি বল?তোর পছন্দের নাস্তা বানাবো?”

” না এতো কিছু করতে হবেনা।তুই প্রতিদিন যা বানাস তাই বানা।আচ্ছা দুলাভাই কোথায় রে?কাল দেখলাম না।”

” আরে তোর দুলাভাইয়ের কাল আসতে একটু লেট হয়েছে।হসপিটালে একটা অপারেশন ছিল।”

” ও আচ্ছা।তো দুলাভাই এখন কোথায়?”

” তোর দুলাভাই এখনো ঘুম।আচ্ছা শোন না মৃদু একটা কাজ করে দেনা বোন।”

” এভাবে বলছিস কেন আপুনি?তুই বল কি করতে হবে আমি এখুনি করে দিচ্ছি।”

” তুই এই কফির কাপ দুটো একটু উপরে দিয়ে আসবি?আসলে আমিই যেতাম কিন্তু তোর দুলাভাই আবার বের হবে কিছুক্ষণ পর,ওর খাবার বানাতে হবে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে আসছি।কিন্তু কার কার ঘরে দেবে?”

” একটা দিবি সৌ এর ঘরে আরেকটা আদুর ঘরে।”

” এরা আবার করা?”

” আরে সৌ মানে সৌন্দর্য আর আদু মানে স্পর্শ।”

” ও আচ্ছা আগে বলবি তো।”

” আচ্ছা যা এবার।ওরা সকালে কফি টাইমলি না পেলে আবার রেগে যায়।”

” হুম যাচ্ছি।দে কফির মগগুলো।”

কফির মগগুলো নিয়ে মেহেক আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে।উপরে উঠে সে দ্বিধায় পড়ে যায় প্রথমে সে কার রুমে যাবে।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক ঠিক করে সে প্রথমে স্পর্শের রুমে যাবে তারপর সৌন্দর্যের রুমে।মেহেক ধীর পাশে স্পর্শের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে ভাবতে থাকে নক করবে কি করবেনা।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক দরজা নক করার জন্য হাত উঠাতেই সে খেয়াল করে তার দুটো হাতেই কফির মগ।আশেপাশে তাকিয়ে মেহেক একটা ছোট টেবিল দেখতে পাই।মেহেক সৌন্দর্যের মগটা টেবিলটাতে রেখে দরজায় নক করে।দরজা নক করার কিছুক্ষণ পর স্পর্শ দরজা খুলে দেয়।স্পর্শকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় মেহেক।ব্ল্যাক কালারের একটা টিশার্ট পড়েছে আর সাথে হাটুর সমান একটা প্যান্ট।অর্ধেক মুখে তার শেইভিং ক্রিম লাগালো,হয়তো শেইভ করেছিল স্পর্শ।স্পর্শের এই অদ্ভুত লুক দেখে মেহেক অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে রেখেছে।

” কি হলো হাসছো কেন?” গম্ভীর কন্ঠে বলে স্পর্শ।

” কই নাতো।” হাসি আঁটকে বলে মেহেক।

” এখানে তোমার কাজ কি?”

” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।”

স্পর্শ একবার মেহেকের হাতের দিকে দেখে।হঠাৎ করেই স্পর্শের ভ্রু-কুচকে উঠে।

” তোমাকে কফি কে আনতে বলেছে?”

” আপুনি পাঠিয়েছে আসলে….”

” এটা আমার মগ না।এটা মেঝো ভাইয়ার মগ।”

এটা শোনার পর মেহেক পাশের টেবিলে রাখা মগটার দিকে তাকাই।স্পর্শও মেহেকের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাই এবং নিজের মগটাকে দেখতে পাই।কফির মগটা তুলে নিয়ে একবার মেহেকের দিকে তাকাই স্পর্শ।অতঃপর তার মুখের উপর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে মেহেক চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুলে মেহেক।

” হু…..কি এটিটিউট।অভদ্র ছেলে কোথাকার।” মুখ ভেঙিয়ে আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মেহেক।

স্পর্শের রুমের সামনে থেকে সরে এসে মেহেক সৌন্দর্যের রুমের সামনে দাঁড়ায়।দরজায় টোকা দেওয়া পরেও যখন কেউ দরজা খোলে না তখন মেহেক দরজাটা একটা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দেয়।ভেতরে কাউকে দেখতে না পরে মেহেক আস্তে করে ঢুকে পড়ে।কফির কাপটা টেবিলে রেখে যখনি মেহেক চলে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পড়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে থাকা ছবির ফ্রেমটায়।মেহেক ফ্রেমটা উঠে নিয়ে।ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।সৌন্দর্যের পড়নে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি,সাথে সাদা পায়জামা।পায়ে ব্ল্যাক কালারের জুতা,হাতে মেন’স ওয়াস আর সেই সাথে মুখে লেগে আছে একটা মিষ্টি হাসি।ছবিটা দেখে মেহেকের ঠোঁটের কোণের হাসি ফুটে উঠে।

” তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুরাণী?”

হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে ভয় পেয়ে যায় মেহেক।তার হাত থেকে ফ্রেমটা পড়ে যেতে নিলেও মেহেক সেটা ধরে ফেলে।যার ফলে ফ্রেমটা মরতে মরতে বেঁচে যায়।মেহেক ফ্রেমটা টেবিলে রেখে জোরপূর্বক মুচকি হেসে পেছন ফিরে তাকাই।কিন্তু পেছন ফিরে সে সৌন্দর্যকে দেখে হা।কারণ সৌন্দর্য অর্ধেক জামা-কাপড় পড়ে আছে।মানে সে প্যান্টের বদলে টাওয়াল পড়ে আছে তাও পিংক কালারের।সেই সাথে গায়ে শার্ট থাকলেও তার বোতাম খোলা,যার কারণে সৌন্দর্যের গায়ের মাঝের অংশ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।সৌন্দর্যকে এভাবে দেখে মেহেক ঢোক গিলে।

” কি হলো?তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুপাখি?”

” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে মেহেক বলে।

” আচ্ছা আমি আসি।আমার কাজ আছে।”

মেহেক তাড়াহুড়ো করে যেতে নিলে পায়ের সাথে পা লেগে সে পড়ে যায় তবে নিচে নয়,সে গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের বুকে।আচমকা এরকম কিছু হওয়ায় মেহেক ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর মেহেক পিটপিট করে চোখ খোলে।চোখ খোলার সাথে সাথে মেহেক দেখতে পাই সৌন্দর্যের উন্মুক্ত বুক।সৌন্দর্যকে এতোটা কাছে থেকে দেখে মেহেকের তো জান যায় যায় অবস্থা।মেহেক বারবার ঢোক গিলছে।মেহেক সৌন্দর্য বুক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।সৌন্দর্য তখন মেহেক দিকেই তাকিয়ে ছিল,হঠাৎ সৌন্দর্যের চোখে চোখ পড়তেই মেহেক আরো লজ্জা পেয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় তার ডান হাতটা সৌন্দর্যের বুকের উন্মুক্ত জায়গায়।এটা মনে পড়তেই মেহেক তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে দূরে আসতে চাইলে ব্যথায় সে চেঁচিয়ে উঠে।

” আহ্…… ” চুলে হাত দিয়ে।

” কি হয়েছে মেহেক?”

” আমার চুল।”

সৌন্দর্য খেয়াল করে মেহেকের চুল তার শার্টের বোতামের সাথে আটকে আছে।সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি চুলটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।এটা দেখে মেহেক চেষ্টা করে।আর অনেক টানাটানির পর মেহেক চুলটা ছাড়াতে সফল হয়।চুলটা খুলে যাওয়া পর আর একমিনিটও মেহেক সৌন্দর্যের রুমে থাকেনা।

এদিকে সৌন্দর্য এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।হঠাৎ তার চোখ যায় নিচে মেঝের দিকে।কিছুটা একটা দেখে প্রথমে তার ভ্রু-কুচকে উঠলেও পরক্ষণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

অন্যদিকে,

নিজের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে মেহেক।তার চোখের সামনে এখনো সৌন্দর্যের অর্ধেক পরিহিত শার্টের দেহটা ভেসে উঠছে।মেহেক ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে তা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।মেহেক মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিন্তু পরমুহূর্তেই ফট করে চোখ খুলে ফেলে আর বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে।

” হায়….কেন যেন আমি ওনার রুমে গেলাম।এখন চোখ বন্ধ করলেই ওনার কথায় মনে পড়ছে।আর শয়তান বেটাও শার্ট পড়েছে ঠিক আছে বোতাম গুলো লাগাবেনা।দূর ছাতার মাথা।”

মনে মনে সৌন্দর্যকে বকা দিতে দিতে হঠাৎ মেহেকের কিছু মনে পড়েছে আর সে হোহো করে হেসে উঠে।অনেক চেষ্টা করার পরও মেহেক নিজের হাসি কনট্রোল করতে পারছিলনা।

” স্পর্শ বুইড়া দাদু,হাহাহা……”

আসলে মেহেক স্পর্শের হাফ শেভিং ক্রিম লাগানো চেহারাটার কথা মনে পড়েছে।আর তা মনে পড়তেই মেহেকের হাসি পাই।

” কিন্তু যাই বলো এটার ভিতরে কোন রসকস নাই।কেমন যেন চুপচাপ আর গম্ভীর।আমার সাথে এসেছি পর্যন্ত ভালো করে একটা কথাও বলেনি।আরে ওনার কথা কি বলছি আমিও তো এরকমি।অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।আচ্ছা একবার কি ওনার সাথে কথা বলে দেখবো?না না বাবা দরকার নেই এই বুইড়া দাদুর সাথে যেছে কথা বলতে যাওয়ার।আমার কি ঠেকা পড়েছে নাকি?হু…..।তার থেকে সৌন্দর্য অনেক ভালো।কি সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে।”

মেহেক এসবই ভাবছে তখন তার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়।মেহেক বিছানার অপর পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে মেসেঞ্জারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ হাসিমুখে মেসেজটা ওপেন করে কিন্তু মেসেজটা দেখেই তার মুখের হাসি উবে যায়।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক,থমথমে তার মুখ।ফোনের মধ্যে শোভা পাচ্ছে মুগ্ধ আর রিয়ার বিয়ের,বৌভাত আর তাদের হানিমুনে যাওয়ার ফটো।ছবিগুলো দেখে মেহেকের পুরোনো ক্ষতগুলো আবারো তাজা হয়ে উঠে।মেহেক যখন ছবিগুলো দেখছিল তখন আবারো ওই আইডি থেকে আরো কিছু ফটো আসে।ছবিগুলো সব সেলফি আর তা তুলেছে রিয়া।ছবিগুলোতে মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে আর রিয়া ছবি তুলছে।মেহেকের বুঝতে দেরি হলোনা যে এটা আর কেউ না বরং রিয়া।মেহেক চিন্তায় করতে পারছেনা যে কোন বন্ধু এমনো হতে পারে।মেহেক বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই মেয়েটা একসময় তার কাছের বন্ধু ছিল।কথাটা সত্য আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল,সময়ের সাথে সাথে মানুষের চরিত্রও পালটে যায়।একটা ছবিতে মেহেকের চোখ আটকে যায়।ছবিটাতে মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মেহেকের মনে পড়ে এই মানুষটা তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে,তার সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার করছে সে।হঠাৎই মেহেকের মুখ কঠিন হয়ে উঠে।সে দাঁতে কিড়মিড় করতে করতে আইডিটা প্রথমে ব্লক করে তারপর একাউন্টটাই ডিলিট করে দেয়।একাউন্ট ডিলিট করার পর মেহেক অনেক শান্তি শান্তি লাগছে কারণ এই একটা মাত্রই পথ ছিল যার মাধ্যমে রিয়া আর মুগ্ধ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো।কারণ ইতিমধ্যেই মেহেক তার আগের সিম বদলে নতুন সিম নিয়েছে।ফোনটা একপাশে রেখে কার্বাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ার জন্য চলে যায় মেহেক।

প্রায় ১ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মেহেক।তার চোখমুখ ফোলা ফোলা যার অর্থ মেহেক কান্না করেছে।আসলে মেহেক অনেক চেষ্টা করেছে কান্না না করার জন্য কিন্তু বেহায়া মন তো আর তা বোঝেনা।

” কেন আমি মুগ্ধের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন?সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে,আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।সে মিথ্যুক,ছলনাময়ী মানব,সে বিশ্বাঘাতক।না আমাকে ওর কথা ভুলতে হবে যেভাবেই হোক ভুলতেই হবে।ও যদি আমাকে ভুলে মুভ অন করতে পারে,তাহলে আমিও পারবো।পারতে হবে আমাকে।” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেকে কথাগুলো বলে মেহেক।

বারান্দায় বসে একমনে কিছু ভাবছে মেহেক।হঠাৎ সে শুনতে পাই কেউ তার দরজায় কড়া নাড়ছে।

” মৃদু এই মৃদু?”

” আসছি আপুনি।”

মেহেক দরজা খুলে দেখে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।

” কিরে কফি দিয়ে আর নিচে নামলিনা কেন?খাবার খাবি না নাকি?”

” হুম আসছি,তুই যা।”

” হুম তাড়াতাড়ি আয়,তোর দুলাভাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

সৃষ্টি চলে যায়।মেহেক কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর উঠে নিচে চলে যায়।নিচে এসে মেহেক দেখে অলরেডি সবাই চলে এসেছে।

” আরে শালিকা যে,এসো এসো।কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।”

” কেমন আছেন দুলাভাই?”

” আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো সেটা বলো।”

” আমিও ভালো আছি।”

” গুড।আচ্ছা বসো বসো খেয়ে নাও।সৃষ্টি মেহেকে খাবার দাও।”

” হ্যাঁ দিচ্ছি।মৃদু তুই বস।”

মেহেক পুরো টেবিলে চোখ ঘুড়িয়ে দেখে শুধু দুটো চেয়ার খালি আছে।একটা তার দুলাভাইয়ের পাশে অপরটা স্পর্শের সামনে বা বলা যায় সৌন্দর্যের পাশে।কোন উপায় না পেয়ে মেহেক সৌন্দর্য পাশে বসে পড়ে।মেহেককে দেখে সৌন্দর্য একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়,তার বিনিময়ে মেহেকও একটা কিউট স্মাইল দেয়।চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই মেহেকের চোখ আটকে যায় স্পর্শের উপর।মেহেক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয় কিন্তু স্পর্শ সৌন্দর্যের মতো না হেসে উল্টো চোখ নামিয়ে খাবার খেতে থাকে।স্পর্শের এই বিহেভে মেহেক অনেকটা অপমান বোধ করে।

” হু….ঢং।কি হতো একটু হাসলে?হাসলে কি ওনার দাঁত খুলে পড়ে যাবে?নাকি ওনার হলুদ দাঁত দেখা যাবে?আরে হ্যাঁ এটাও তো হতে পারে উনি হলুদ দাতঁ দেখানোর ভয়ে হাসছেন না।এরকম হলে তো…..হাহাহা….” মনে মনে এসব কথাগুলো ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মেহেক।

” কিরে মেহু এভাবে নিজে নিজে হাসছিস কেন?ভুতে ধরেছে নাকি?” পাশ থেকে ফিসফিস করে কথাটা বলে রিফা।

রিফার কথায় হাসি বন্ধ করে চুপচাপ খাবার খেতে থাকে মেহেক।খাবার শেষ হলে সবাই যে যার কাজে চলে যায়।সৌন্দর্য আর স্পর্শ চলে যায় ভার্সিটি আর রিফা তার রুমে চলে আসে।মেহেক রুমে না গিয়ে বরং তার বোনকে সাহায্য করছে।থালাবাসন ধোঁয়া হলে মেহেক তার বোনকে বলে—

” আপুনি শোন,তোর সাথে কিছু কথা আছে।”

” হ্যাঁ বল।”

” আপুনি আমি এখানে বেড়াতে আসিনি।আমি একেবারে ঢাকা চলে এসেছি।”

” হুম।”

” মানে আমি এখর ঢাকা শহরে থাকবো আর এখানেই পড়াশোনা করবো।”

” হুম।তারপর?”

” তারপর মানে?তুই এমনভাব বলছিস যেন তুই আগে থেকে জানতিস।”

” জানতাম না তবে আন্দাজ করেছিলাম।তুই চিন্তা করিস না আমি তোর দুলাভাই আর আমার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে কথা বলে নিয়েছি।তুই এখানে থেকেই পড়াশোনা করতে পারিস।তোর দুলাভাই এতে আরো খুশি হয়েছে।”

” আমি তোদের এখানে বেশিদিন থাকবোনা আপুনি।আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসা খুঁজে সেখানে শিফট হয়ে যাবো।”

” বেশি কথা বলিস না।এখানে তুই কিছুই চিনিস না।তাই বলছি কয়েকমাস আমাদের এখানে থাক তারপর বাকিসব চিন্তা করিস।”

মেহেক আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।

বিকেলবেলা,

বারান্দায় বসে উপন্যাসের বই পড়ছে মেহেক।সে বই পড়তে এতোটায় মগ্ন ছিল যে খেয়ালই করেনি তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

” ভাউ…….”

” আ…..” চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায় মেহেক।

মেহেক পেছন ফিরে দেখে রিফা তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

” রিফুনি……এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আ….কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।”

” হাহাহাহা…..ভীতু মেহু।এতে কেউ ভয় পাই নাকি?”

” কেউর টা জানিনা তবে আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।আরেকটু হলে তো মনে হয় আমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যেতো।”

” হাহাহা…..ভীতু মেয়ে।তা এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছিলিস?”

” বই পড়ছিলাম আর কিছুনা।”

” আচ্ছা চল।”

” কোথায়?”

” শপিংয়ে যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

” আমি যাবোনা।তুই যা।”

” চুপ।কোন কথা না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিফা চলে যায়।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রেডি হতে থাকে।

অন্যদিকে,

রিফা এসে সৌন্দর্যের দরজার সাথে পায়চারি করছে।রিফা যখনি ঘুরে সৌন্দর্যের দরজায় টোকা দিবে তার আগেই দরজা খুলে সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।সৌন্দর্যকে দেখে রিফা সেখান থেকে চুপিচুপি কেটে পড়তে নিয়ে সৌন্দর্য তাকে থামিয়ে নেয়।

” কিরে বোনু কি হয়েছে?” কিছুটা গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে সৌন্দর্য।

” না কিছুনা।” জোরপূর্বক হেসে রিফা বলে।

” বোনু সত্যি করে বলতো কি চাই তোর?”

” ওই আসলে দাভাই মানে……”

” এতো মানে মানে না করে সোজা সোজা বল কি চাই তোর?” মোবাইলের দিকে তাকিয়ে।

” আসলে আমি একটু শপিংয়ে যাবো।তুমি যাবে আমার সাথে।”

” না আমার সময় নেই।কাজ আছে আমার।”

” প্লিজ দাভাই চলোনা প্লিজ প্লিজ।দেখো আমরা দুটা একা মেয়ে।ফিরতে যদি রাত হয়ে যায় তখন?”

” দুটা একা মেয়ে মানে?দুজন কোথা থেকে এলো?তোর সাথে আর কেউ যাচ্ছে নাকি?”

” হুম মেহু যাচ্ছে তো।ও বেচারি একা বাসায় কি করবে?তাই ওকেও নিয়ে যাবো।”

সৌন্দর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা চিন্তা করে।

” আচ্ছা যা তৈরি হয়ে নে।বের হওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিস।”

” ও থ্যাঙ্ক ইউ দাভাই।ইউ আর সো সুইট।”

” হয়েছে হয়েছে আর এতো মাখন লাগাতে হবেনা।”

” তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে দাভাই।তুমি তো আমার মিষ্টি দাভাই তোমাকে কি আমি মাখন লাগে পারি?তুমিই বলো?”

” হয়েছে হয়েছে এবার যা।দেরি হলে কিন্তু আমি যাবোনা।”

” এই না না আমি যাচ্ছি।” বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে রিফা।

রেডি হয়ে ড্রয়ংরুমে বসে সৌন্দর্যের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর রিফা।বিগত ১৫ মিনিট যাবৎ তারা অপেক্ষা করে যাচ্ছে তবে সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।অবশেষে আরো ৫ মিনিট পর সৌন্দর্য এলো।

” এতোক্ষণে তোমার আসার সময় হলো।হা…..চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

” হুম চল।”

তারা তিন বের হবে সেই সময় কেউ তাদের উদ্দেশ্য বলে—

” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here