কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব -১৮+১৯

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ১৮ : #অভিমান
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

প্রয়াস ভেবেছিলো তিয়াসা কান্না থামিয়ে হাসবে। তারপর শুয়ে পড়বে চুপচাপ। কিন্তু তা হলো না।
তিয়াসা খুশি হলো না, হাসলো না। এমনকি কান্নাও থামালো না। নিঃশব্দ অশ্রুপাত তার কপোল ভিজিয়ে দিতে লাগলো।
আজ তার এই অভিমান এত সহজে গলে যাবার নয়। প্রয়াস সবসময় তাকে তাড়ানোর জন্যই ব্যস্ত থাকে। সবসময়।
এইতো একটু আগেও সে তার মাথা আঁচড়ে দিলো কত সুন্দর করে। অথচ সে কী করলো! খুশি হওয়ার বদলে মুখটা কেমন করে রাখলো। হাত দিয়ে অগোছালো করে দিলো চুলগুলো।
ওকে একটুও সেদিনের মতো ‘গুড’ বলল না।
অথচ ওর বাসার যে দারোয়ান আঙ্কেল ছিল। তার মেয়েটা কত ভালো বন্ধু ভাবতো ওকে। একসাথে খেলত, হাসত।
তাহলে প্র‍য়াস এমন কেনো!

তিয়াসা থামছে না দেখে অবাক হলো প্রয়াস।
বিহ্বলিত হয়ে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তিয়াসার কিশোরী মনের অভিযোগগুলো কিছুতেই ঠাওর করতে পারলো না।
খানিকটা ইতস্তত করে ওর দিকে ঝুঁকে ওর মুখটা দু’হাতের মাঝে নিয়ে চোখের জল মুছে দিলো অবশেষে।
সেই সুবাদেই তিয়াসা তাকালো চোখ তুলে। অভিমান, অভিযোগে ভরা ছলছল লোচনদ্বয়ের সাথে দৃষ্টি আবদ্ধ হলো প্রয়াসের।
সে ভরাট গলায় বলল, “ঘুমাতে বললামই তো।”
তিয়াসা ঠোঁট উলটালো, নাক ফুলালো। অশ্রুপূর্ণ চোখদুটো সংকুচিত হয়ে এলো খানিক। হয়তো এখনি বড়োসড় কান্না জুড়ে দেবে সে।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল প্রয়াস৷ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল, “স্যরি। আর হবে না।”
হঠাৎ একথাটা কেন বলল প্রয়াস নিজেও তা জানে না। অহেতুক অনেক কথাই বললো, অনেক কাঠখড় পোড়ালো। এর বিনিময়ে শান্ত হলো মেয়েটা। এতক্ষণ পরে সেই নির্মল, কোমল হাসি দেখা গেল তার মুখে। ধাতস্থ হলো প্রয়াস। কে বলবে একটু আগে সে এত কেঁদেছিল!
তিয়াসাকে শুইয়ে গায়ে চাদরটা টেনে দিলো ও।
প্রলম্বিত এক শ্বাস ফেলে বাতি নিভিয়ে ড্রিমলাইট জ্বাললো। অপরপ্রান্তে এসে শুয়ে পড়তেই তিয়াসা দূরত্ব বেশ খানিক কমিয়ে কাছে এগিয়ে এলো ওর। প্রয়াস ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই ও হাসলো হৃষ্টচিত্তে।
আচমকাই থামকালো প্রয়াস। মৃদু নীলাভ আলোতে সেই স্নিগ্ধ চাহনি, কোমলপ্রাণ হাসি, শীর্ণ তনু বেশ মোহনীয় লাগলো। বুকে কেমন অস্থিরতা তৈরি করে ফেলল মুহূর্তেই। অন্যরকম চিন্তাগুলো মন মস্তিষ্কে ভিড়তেই মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করলো ও। অতি সন্তর্পণে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো নাসাপথে।
এভাবে চলতে থাকলে অনর্থ হয়ে দেরি হবে না বোধহয়।

🌸
প্রজেক্টের কাজ থেমে ছিল এই ক’দিন। এভাবে চললে ঠিকমতো কোনো কাজই ঠিকঠাক হবে না সেটা জানে ইভান। গতদিনের ঘটনার ক্যান্ডেল নিশ্চয়ই ওর মুখোমুখি হতে চাইবে না। এদিকে আজকের মিটিংয়ে তার থাকাটাও জরুরি।
কী করবে সেটাই ভেবে পেলো না ইভান।
কখনই সিদ্ধান্ত নিতে এত হিমশিম খেতে হয়নি তার।

লিফট ষষ্ঠ ফ্লোরে এসে থেমেছে ইতিমধ্যে। ইভান নামলো। কিছুটা সামনে এগুতেই মুখোমুখি হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। চোখ চড়কগাছে উঠিয়ে থেমে দাঁড়িয়ে গেলো ক্যান্ডেল। ইভানও থামলো।
চোখে চোখ পড়তে মুহূর্ত ব্যয় হলো না।
বুকটা ধ্বক করে উঠলো ক্যান্ডেলের। গায়ে কাটা দিলো।
হন্তদন্ত করে দৃষ্টি সরালো ক্যান্ডেল।
ইভানও সরালো। ঠোঁটের কোণা কামড়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলো কিছু।
ক্যান্ডেল ভাবতেও পারেনি লোকটার সাথে নিজের কোম্পানিতে দেখা হয়ে যাবে ওর। যাওয়ার কথা তো ছিল ওর। যদিও ও সামনে যেতে পারতো কিনা সেটাও সন্দেহ।
ইভান ওর দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো ক্যান্ডেলের। চোয়াল শক্ত করে, আড়ষ্ট হয়ে অন্যত্র দৃষ্টি স্থির করলো ও। বুকের ধুকপুক দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকলো।

ইভান নিজেও ভিতরে ভিতরে বিরক্তি, অস্বস্তি, অস্থিরতায় ভুগছে। সেগুলোকে একপাশে ঠেলে দিয়ে স্থবির দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্পষ্টভাবে বলল, “গাড়িতে ওয়েট করছি আমি। ফাইলগুলো নিয়ে নিচে আসো। দেরি হচ্ছে।”

ক্যান্ডেল আড়চোখে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। উলটো ঘুরে সোজা হাঁটা ধরলো। একপ্রকার পালিয়ে যাওয়ার মতোই। সে জানেনা এই ‘Pervert’ লোকটার সাথে এই প্রজেক্ট শেষ করা তার আদৌও সম্ভব হবে কিনা।

কাঁটায় কাঁটা পনের মিনিট পেরিয়েছে। ইভান স্ট্রেয়ারিংয়ে হাত রেখে হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যান্ডেল এখনো আসেনি। না আসাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। কিন্তু অন্যদিকে মিটিংটাও জরুরি। আর দেরি হলে ক্যান্সেল হয়ে যাবে।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ইভান। নামার জন্য সীটবেল্ট খুলতে যেতেই অপরপাশের গাড়ির দরজা খোলার আওয়াজ কানে এলো ইভানের।
চোখ তুলে তাকালো ইভান।
ক্যান্ডেল বসে পড়েছে পাশের সীটে। মুখটা যথাসম্ভব জালানার দিকে ফিরিয়ে রেখে কোলের উপর থাকা ফাইলগুলো দু’হাতে চেপে ধরে আছে শক্ত করে। দম আটকে আসছে। তবুও যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে ও। যদিও সব জড়তা আর অস্বস্তি প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।
ইভানের দৃষ্টিগোচর হলো সবটাই। সে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে একহাতে নিজের কোটটা নিয়ে সেদিনের মতো ওর মাথার উপর দিয়ে দিলো। ঘোমটার মতো আড়ালে চলে গেলো ক্যান্ডেলের পুরো মুখটা। আশ্চর্যান্বিত হলো ক্যান্ডেল।
তবে সেদিনের মতো জেদ ধরে ফিরিয়ে দিলো না কোটটা। বরং কোটটার মধ্যেই ঘাপটি মেরে বসে রইলো।
যাক, আগের তুলনায় অস্বস্তিটা কমে গেছে অনেক অংশে। অন্তত এখন শান্তিতে শ্বাসটা নিতে পারবে ও।

কিন্তু কোটটা দিয়েছে বলে যে ক্যান্ডেলের মনে ইভানের প্রতি কৃতজ্ঞতার উদয় হয়েছে তা নয়।
কারণ এই অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তো তার বেহায়াপনার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। একটা মেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করছে দেখেও সে কী করে এমন অসভ্যতা করতে পারলো!
আর এখন এসব করে সাধু সাজা হচ্ছে!
ভ্রুকুচকে এলো ক্যান্ডেলের। মনে মনে স্থির করে নিলো এই লোককে ও উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে!

🌸
পড়ন্ত বিকেল। হলুদাভ সূর্য ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে পশ্চিমাকাশে। অল্প সময়ের মধ্যেই আজকের অস্বস্তিকর দিনটার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে সে বিলীন হবে পৃথিবীর বুকে।
মিটিং শেষে এবার ফেরার পালা। ক্যান্ডেল আগেই গাড়িতে উঠে বসেছে। পূর্বের ন্যায় গাঁট হয়ে আছে সে।
ইভান ঢুকলো ড্রাইভিং সীটে। ক্যান্ডেলের দিকে একপলক তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ক্যান্ডেল আড়চোখে তাকালো একবার। অস্বস্তি, লজ্জা, রাগে মিলেমিশে একাকার হয়েছে সে। কিছু প্রশ্ন করার জন্য ছটফটিয়ে যাচ্ছে মনটা। কিন্তু করতে পারছে না।
বেশ কয়েকবার কথাগুলো গুছিয়েও বলতে গিয়ে কথা বেরোচ্ছে না।
অবশেষে ধাতস্থ করলো নিজেকে। গোপনে লম্বা করে শ্বাস টেনে নিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে শক্ত চোখে তাকালো ইভানের দিকে।
তার গম্ভীর দৃষ্টি সামনের দিকে নিবদ্ধকৃত।

ক্যান্ডেল এবার মুখ খুললো। বলে উঠলো, “আমার বেডরুমে কেন গিয়েছিলে তুমি? আর-আর.. ওইসময় কেন…”
চোখাচোখি হতেই থেমে গেল ক্যান্ডেল। মহীর সমস্ত লজ্জা এসে ভর করলো ওর উপর৷ দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকালো। ঘামতে লাগলো ও।
তবুও নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলো।
“তুমি যেমনটা ভাবছ তেমন না।” যথেষ্ট স্বাভাবিক ভাবে বলল ইভান।
ক্যান্ডেল ভ্রুকুটি করে তাকালো ইভানের দিকে। তার দৃষ্টি ফের সামনের দিকে।
ক্যান্ডেল চোয়াল শক্ত করে বলল, “তো কীরকম?”
“আমি বুঝিনি রুমটা তোমার ছিল। এমনকি ওটা কার রুম সেটাও জানতাম না। আমি জাস্ট বিছানায় ঘুমাচ্ছিলাম। পরে তুমিই হুট করে এসে পড়েছ।”
“মিথ্যুক।”
“মিথ্যা বলিনা আমি।”
“হাহ্! মিথ্যা বলিনা আমি!” ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে অনুকরণ করলো ক্যান্ডেল। তারপর বলল, “আমি নিজের চোখে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি আর তাকিয়েও…৷ Pervert.”
শেষ শব্দ উচ্চারিত হতেই গাড়ি থামিয়ে দিলো ইভান। থমথমে মুখে তাকালো ক্যান্ডেলের দিকে। শীতল স্বরে বলল, “কী বললা মাত্র!”
“Pervert এর মতো কাজ করেছ, তো বলবো না? আবার মিথ্যাও বলে যাচ্ছ! মিথ্যুক।”
“আমি ভুল করি নি আর মিথ্যাও বলছি না।” কটাকটা গলায় বলল ইভান।
“তোমার এসব বানানো কথা বিশ্বাস করবো আমি? তোমাকে খুব ভালো করে চিনি আমি।”
“শাট আপ।”
“ইউ শাট আপ। আমার সাথে অসভ্যতা করে আবার আমাকেই শাট আপ! এখন এতো গায়ে লাগছে তো কাজটা করার সময় মনে ছিল না! কেন করেছ?”
“আমি কিছুই জানতাম না।”
“ভিজে বিড়াল সাজছ! আমি দেখিনি ভেবেছ? সব দেখেছি। তুমি ইচ্ছে করেই সব করেছ। এখন অস্বীকার করছ! তোমার মা যে বারবার আমাকেই বলে যাচ্ছে অথচ সে কী জানে তার ছেলে কেমন? আমি চাই সে জানুক। সব সত্যিটা জানুক। তুমি কতটা মিথ্যাবাদী সেটা জানুক। আসলে যে তুমি ওই রুমে ইচ্ছে করে..”

“হ্যাঁ, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তোমার সব দেখার তাই দেখেছি। খুশি তুমি শুনে?” রাগের মাথায় শক্ত কণ্ঠে বলে বসলো ইভান।
বিমূঢ় হয়ে থম মেরে গেল ক্যান্ডেল। লাল হয়ে গেল পুরো মুখ।
ইভান সমস্বরে ফের বলল, “আরো শুনতে চাও? Explain করে বলব?”
লজ্জায় শরীর শিউরে উঠলো ক্যান্ডেলের। চোখের পাতায় অনুরণন শুরু হলো।
ইভান ওর দিকে ঝুঁকে আসতেই চমকে গেল ও।
তাকালো ত্রাসিত ভঙ্গিতে।
ইভান শীতল দৃষ্টিতে কণ্ঠের ঠাঁট বজায় রেখে বলল, “আমি ঘুমাচ্ছিলাম, I swear! ঘুম ভেঙেছিল তোমার দরজা বন্ধ করার আওয়াজে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই…। পুরোটাই এক্সিডেন্ট ছিল। আমার কোনোরকমের ইনটেনশনই ছিল না তোমাকে ওভাবে দেখার বা ছোটো করার। কিন্তু আমি এটাও খুব ভালোভাবে জানি যে তুমি এসবের কিছুই বিশ্বাস করবা না, এন্ড সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথাও নেই। কে আমাকে বিশ্বাস করে না করে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি জানি আমি কোনো ভুল করিনি। কিন্তু যেহেতু আমি নিজের ইচ্ছায় কিছু করিনি তাই আমি এসবের ব্লেম নিতেও রাজি না।”
ভাবাবেগহীন ভাবে কথাগুলো শেষ করে নিজের স্থানে ফিরলো ইভান।
ক্যান্ডেলের বুকের ভিতর তখনো দামামা বাজছে। লজ্জায় পুরোদস্তুর শিরশির করে উঠেছে এতসময়ে। সে আর এক মুহূর্তে বিলম্ব না করে পার্সটা নিয়ে হম্বিতম্বি করে নেমে গেল গাড়ি থেকে। এদিক ওদিক না তাকিয়ে হাঁটতে গিয়েই বিপদ বাধালো সে। একটা গাড়ির সামনে গিয়ে পড়লো। গাড়িটা সময়মতো ব্রেক কষলেও ডানপায়ে বেশ ভালোই আঘাত পেয়ে বসলো ক্যান্ডেল।
ধপ করে পড়ে গেল রাস্তার মাঝে।
ততক্ষণে গাড়ির মালিক বেরিয়ে এসেছে। একইসাথে ভয় আর রাগ কাজ করছে তারমধ্যে। তবে মেয়েমানুষ দেখে রাগ খানিক দমিয়ে তপ্ত গলায় বলে উঠলো, “দেখে হাঁটতে পারেন না।”
ক্যান্ডেল মাথা তুললো না। জায়গায় জড়থবু হয়ে বসে রইলো। একটু আগে বলা ইভানের কথাগুলো আর এখন এই হতে হতে বেঁচে যাওয়া এক্সিডেন্ট সব মিলিয়ে মাথা ঘুরছে এখন। হাঁপানি রোগীর মতো হাঁপাচ্ছে সে।
“আশ্চর্য তো!” বিরক্ত হলেন লোকটা।
লোকটার কথার মাঝখানেই ইভান এসে দাঁড়ালো সেখানে। ভ্রুকুটি করে ঝুঁকে বসলো ক্যান্ডেলের পাশে। গাঢ়, শাণিত কণ্ঠে বলল, “গাড়ি থেকে নামতে বলেছি তোমাকে?”
ইভানের স্বরে চমকে উঠলো ক্যান্ডেল। লজ্জায় হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে আবার বসে পড়লো সে।
“বউকে দেখেশুনে রাখতে পারেন না? ঝগড়াঝাটি রাস্তার মধ্যে করে পরে এক্সিডেন্ট ঘটাবেন আর দোষ হবে গাড়ি চালকের।”
লোকটার কথায় কান দিলো না ইভান। কথাও বাড়ালো না। টুপ করে ক্যান্ডেলের একহাত কাধের উপর টেনে নিয়ে কোলে তুললো ওকে।
শিউরে উঠলো ক্যান্ডেল। এতটা সংস্পর্শে আসায় হাতপা ঠান্ডা হয়ে এলো ওর। চোখ রসগোল্লার মতো করে দৃষ্টি নামিয়ে রাখলো ও। দম বন্ধ হয়ে, চোখ ঘোলাটে হয়ে আসতেই স্পষ্ট বুঝতে পারলো যে ও এখন বেহুশ হওয়ার পথে। সবই অতিরিক্ত ভয়ের দরুন।

🌼
কলিং বেলের আওয়াজে নিচে নেমে এলো ত্রয়ী। এই সন্ধ্যেটার সময় কে এসেছে সেটাই বুঝতে পারলো না। ওর মা-বাবার যে আজ আসার কথা না! তারা তো বিশেষ কাজে দুইদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে গেছে। তাহলে? নাকি কাজ সেড়ে চলে এসেছে!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে এসে দরজা খুললো ত্রয়ী। তখনি দরজার অপর পাশে নীলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল যেন। মিনমিন করে নীমিলিত স্বরে প্রশ্ন করে বসলো, “আপনি, এই সময়ে!”

অফিসের সাদা শার্টের উপরে হালকা ঢিলে করা কালো গলাবন্ধনী আর বুকের কাছে গোজা হাতদুটোর মাঝে কালো কোটটাই জানান দিচ্ছে যে সে অফিস থেকে সরাসরি এখানে এসেছে।
যদিও তার গহন চাহনিযুক্ত গুমোট মুখটা দেখে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে সে রেগে আছে। আর কেন রেগে আছে সেটাও ত্রয়ী জানে।
সে আবারো ফোন ধরেনি তার। সে কী করে বুঝাবে যে তার কথা বলতে লজ্জা লাগে। তারউপর সেদিন সে যা করেছেন তাতে ওর আরোই লজ্জা লাগে। এইযে সামনে দাঁড়াতেও লজ্জা লাগছে এখন।
এজন্যই এলোমেলোভাবে বারকয়েক পলক ফেলে দৃষ্টি সরিয়েছে সে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে নখ খুটে মিনিট পার করেও যখন সামনের মানুষটার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না তখন সে আরো বেশি দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেল। বুকের ধুকধুকানি ক্রমাগত বাড়তে লাগলো।

নীল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। সে জানে এই মেয়ে আর কথা বলবে না। এমন মাথা হেট করে কুলুপ এঁটেই রইবে।
সে বিনাবাক্যে ঘরে ঢুকতেই সরে দাঁড়ালো ত্রয়ী।
নীল সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। গিয়ে ঢুকে পড়লো ত্রয়ীর ঘরটায়।
বিমূর্ত হয়ে তাকিয়ে দেখলো ত্রয়ী। সদর দরজা বন্ধ করে কয়েক মিনিট ইতস্তত করলো।
তারও কি যাওয়া দরকার? নাকি এখানেই থাকা দরকার! কিন্তু যাওয়ার পরে যে প্রশ্নগুলো করবে সেগুলোর উত্তর ও কীভাবে দেবে!
তার চেয়েও বড়ো বিষয়, লোকটার সামনে যেতেই তো ওর ভীষণ লজ্জা করে।

কয়েক মুহূর্ত স্নায়ুযুদ্ধের পর এগিয়ে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢাললো ত্রয়ী। ঠোঁট কামড়ে একটা প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলে গুটিগুটি পায়ে উপরে উঠে এলো। দাঁড়ালো দরজার সামনে।
নীল তখন ওর বিছানার অপরপাশে বসা। কোটসহ গলাবন্ধনীটা ডানপাশে বালিশের উপর রাখা।
ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে বাপাশের ঘরটার দিকে তাকালো ত্রয়ী।
তৃণা আপু কি এখনো ঘুমোচ্ছে! নাকি উঠেছে?
ঘাড় ফিরিয়ে সামনে তাকালো ত্রয়ী। পা ঠেলে ঠেলে এসে দাঁড়ালো নীলের পাশে, খানিক দূরত্ব রেখে।
নীল ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দৃষ্টি নত করে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো ত্রয়ী।
শক্ত হাতে ধরার পরেও গ্লাসটা দিব্যি কাঁপছে। পানির কণাগুলো আন্দোলিত হচ্ছে।
নীল দেখলো। অতঃপর গ্লাস এড়িয়ে সরাসরি ত্রয়ীর হাতের কবজি চেপে ধরলো।
চমকে উঠলো ত্রয়ী। তার কেঁপে ওঠার দমকে গ্লাসের অর্ধেক পানি ছিটকে গিয়ে শার্টে পড়লো নীলের। ভিজে গেল গলা থেকে বুক পর্যন্ত।
তবুও তোয়াক্কা করলো না। টেনে এনে সোজা কোলে বসালো ত্রয়ীকে।
ত্রয়ী চোখ ছানাবড়া করে তাকাতেই অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সহিত প্রশ্ন করলো, “ইগনোর কেন করছ আমাকে?”

(চলবে…)গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ১৯ : #অনুভবে
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

চমকালো ত্রয়ী। চোখের পাতা কেঁপে উঠলো ওর। দুরুদুরু বুক, অগোছালো দৃষ্টি নামিয়ে হাতে ধরে রাখা গ্লাসটার দিকে তাকালো। লোকটা এভাবে হুট করে কোলের উপর বসিয়ে দেবে কল্পনাও করেনি ও।
কোল থেকে উঠে পড়ার জন্য উদ্যত হতেই পিঠের উপর হাত রেখে কাছে টানলো নীল।
ভড়কে গেল ত্রয়ী। তাকালো অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে।
নীল থমথমে গলায় জানালো, “উত্তর না দিয়ে একচুলও নড়তে পারবা না।”

চোখ চড়কগাছ করে ফেললো ত্রয়ী। মানে কী! কী উত্তর দেবে ও!
দোটানায় পড়লো যেন। সামান্য ফোন না ধরা নিয়েও যে এমন কিছু হতে পারে সেটা আন্দাজই করতে পারেনি ও। বিস্তারিত না ভেবেই কাজটা করেছে।
যদিও এটা একপ্রকার ইগনোরের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে করেনি। এটা এখন কীভাবে বুঝাবে!

পূর্বের ন্যায় ত্রয়ীকে নিশ্চুপ হয়ে থাকতে দেখে অধৈর্য হয়ে উঠলো নীল। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে নিজের হাতের মুঠোর গ্লাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে। পারলে বুঁদ হয়ে সে ওই গ্লাসেই ডুবে যায়।

“বলো?” ভীষণ রাশভারী গোছে প্রশ্ন ছুড়লো নীল।
ত্রয়ী জবুথবু হয়ে ক্ষীণ স্বরে কোনোমতে বলল, “আর হবে না।”
হাতের গ্লাসসহ পানি মৃদুভাবে কাঁপছে ওর।
“কী আর হবে না?”
“ফোন…ফোন ধরবো।”
“আর যদি না ধরো তাহলে?”
“ধরবো।”
“সত্যি?”
“হু।”
“এর আগ পর্যন্ত ধরোনি কেন?”
এপ্রশ্নের উত্তর করলো না ত্রয়ী। চেয়ে রইলো নিম্ন পানে।
“তোমার কী আমাকে ভালো লাগে না?”
বুকটা ধ্বক করে উঠলো ত্রয়ীর। থতমত খেলো খানিক। এর আগেও লোকটা এই প্রশ্ন করেছিলো। তখন উত্তর না দিয়েই কেটে পড়তে পেরেছিলো। কিন্তু এখন কী বলবে!
এমন নয় যে সে তাকে অপছন্দ করে, কিন্তু পছন্দ করে কিনা সেটা সে বলতে পারবে না। সে জানেনা।
তাই এই প্রসঙ্গ পুরোপুরি এড়িয়ে গেল। হালকা নড়েচড়ে উঠে নিচু গলায় বলল, “আমি দাঁড়াই। এভাবে বসে থাকতে…! আমি বরং দাঁড়াই।”
“আমি চাই তুমি এভাবেই থাকো।” নীলের দরাজ কণ্ঠস্বরে ভ্যাবাচেকা খেলো ত্রয়ী। পাগোল নাকি লোকটা! এভাবে কোলে বসে থাকবে! ও কি বাচ্চা নাকি? তৃণা আপু এসে দেখলে!

নীলের হাত আলগা হয়ে এসেছিলো বলে হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলো ত্রয়ী। নীল কিছু বুঝে উঠার আগেই কিছুটা দূরত্ব রাখতে পিছিয়ে গেল ও।
আস্তে করে গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল, “আপনি থাকেন আমি চা নিয়ে আসি।”
“চা খাবো না আমি।”
নীলের কথা যেন কানেই শুনলো না ও৷ বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, “আমি নিয়ে আসছি।”

নীল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। চা যে সে আনবে না, এমনকি ফের এঘরমুখোও হবে না এটা নীল জানে।

🌻
প্রয়াস ল্যাপটপ খুলে বসেছে বেশ কিছুক্ষণ। তেমন কোনো কাজ নেই, তবুও।
মাথার মধ্যে শুধু একটা জিনিসই ঘুরছে। যদিও সেটা খুবই সামান্য বিষয়। তাও সে ভাবছে।

ওই নিকৃষ্ট লোকগুলোকে থানায় নেওয়া হয়েছে। শুধু ওই মধ্যবয়স্ক লোকটা, যার সাথে তিয়াসার বিয়ের কথা ছিল, ও পালিয়ে আছে।
ওকেও ধরা হবে আশা করা যাচ্ছে।
যেহেতু এখন আর কোনো সমস্যাই নেই সেহেতু এখন তো তিয়াসাকে অঞ্জলি দেবী নিজের কাছেই নিয়ে যেতে চাইবেন। কিংবা নিয়ে যাবেনও।

সেদিন তার সাথে কথা বলার পরই তাকে তিয়াসার কাছে, মানে এখানে নিয়ে আসতো প্রয়াস, কিন্তু সে বেশ অসুস্থ থাকায় হস্পিটালে নিতে হয়েছিল।
এখন মোটামুটি সুস্থ।
তাই কাল আসতে চেয়েছেন। নিশ্চয়ই তিয়াসাকে নিয়ে যাবার জন্যই!
কিন্তু তিয়াসা কি যাবে? যদি যায়?
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো প্রয়াসের। হঠাৎই বিরক্ত হয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে ল্যাপটপের স্ক্রিন নামালো।

সোফাতে মাথা হেলিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো বারান্দার দিকে। বারান্দার লাইট বন্ধ। তাও তিয়াসা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই সেখানে আছে। কী করছে কে জানে!
রুম থেকে শুধু শাড়ির আঁচলের এককোণা দেখা যাচ্ছে।
প্রয়াস উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো বারান্দায়।
“কী করছ তুমি এখানে?”
প্রয়াস প্রশ্ন ছুড়তেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তিয়াসা। চোখাচোখি হতেই সেই দীপ্তিময় হাসি ফুটলো তার অধরকোণে।
অজানা কারণেই বুকের ভেতর কেমন ধ্বক করে উঠলো প্রয়াসের। অবিন্যস্ত ভাবে দৃষ্টি ফিরাতেই তিয়াসা নিজের ডান হাতটা আস্তে আস্তে রেলিঙের পাশে থেকে এনে মেলে ধরলো প্রয়াসের সামনে।
প্রয়াস তাকালো।
হাতে জোনাকিপোকা তার। সবুজ আলো টিপটিপ করে জ্বলছে নিভছে।
যা হাতে পেয়ে দৃশ্যতই হীরা পাওয়ার সমান খুশি এই মেয়ে। এজন্যই এই জিনিসটা নিয়ে প্রায় একঘণ্টার বেশি এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সে।
প্রয়াসকে দেখাতে গিয়েই জোনাকিপোকাটা উড়ে যেতে লাগলো৷ হাসি উবে গেল তিয়াসার। তড়িঘড়ি করে সেটাকে আটকানোর চেষ্টা করলো। রেলিঙ পর্যন্ত যেতে যেতেই সেটা পুনরায় হাতে পেয়েও গেল তিয়াসা।
সেজন্যই আবার অধর ছড়িয়ে হাসলো ও।
জোনাকির সবুজ আলোর ছটায় বড্ড মোহনীয় লাগলো সেই হাসিমাখা মুখ।
প্রয়াস স্থির, স্থবির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো কতোসময়। তোলপাড় শুরু হলো হৃদ মাঝারে।
সে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তিয়াসার পিছনে। একহাত রেলিঙে রেখে বুক ঠেস দিলো ওর পিঠের সাথে।
তিয়াসা সহাস্যমুখে ঘাড় ফিরিয়ে ওর দিকে তাকাতেই অন্যহাত দিয়ে আলতো করে গালের পাশের চুলগুলো গুজে দিলো কানের পিছনে।
তিয়াসা চোখ পিটপিটালো। মিষ্টি হাসিটা এখনো শোভা পাচ্ছে অধরকোণে।
সেখানেই দৃষ্টি থেমে আছে প্রয়াসের। নিজের অজান্তেই বিমোহিত হলো সে। রেলিঙ থেকে হাত নামিয়ে শাড়ি ভেদ করে কোমড় জড়ালো তিয়াসার। কাছে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে কোমল ঠোঁটজোড়া আবদ্ধ করলো নিজের ঠোঁটের মাঝে।

আচমকা রেখার ডাকে সম্বিত ফিরলো প্রয়াসের। এতক্ষণের ভ্রম কাটতেই বেজার চমকে দু’পা পিছিয়ে গেল সে। পিঠ ঠেকলো দেয়ালে।
হতবুদ্ধি হয়ে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে তিয়াসার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিজের ভিতরে এমন একটা ফালতু চিন্তা আসার বিষয় ভাবতেই অস্বস্তি শুরু হলো ওর। কালবিলম্ব না করে দ্রুতপদে ঘরে ঢুকে গেল ও।

তিয়াসা সমস্ত মনোযোগ একত্র করে জোনাকি দেখতে ব্যস্ত ছিল। সে ব্যস্ত রইলোও। রেখার ডাকে তার হেলদোল হয়নি। এমনকি এতক্ষণ তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা যে তার রূপে মুদ্ধ হয়ে কীসব চিন্তা করে ফেলেছে তাও সে জানতে পারেনি।

ঘরে ঢুকে রেখার মুখোমুখি হতেই খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল প্রয়াস। অপ্রস্তুত ভাবটা প্রকাশ পেয়ে গেল না চাইতেও।
রেখা হাসার চেষ্টা করে বলল, “ও আপনেরা ওইখানে ছিলেন!”
প্রয়াস হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। কপালে অজানা কারণেই অমসৃণ ভাঁজ এসে গেছে তার। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কারো সামনে দাঁড়াতেই অসহ্য লাগছে তার।

“রাত্তিরের খাওন রেডি। আপনেরা আসেন।”
প্রত্যুত্তরে শুধু মৃদুভাবে মাথা নেড়ে সায় জানালো প্রয়াস।
রেখা বেড়িয়ে যেতেই একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়ালো। তিয়াসার কাছাকাছি গেল না। তাকালোও না।
শুধু স্লাইডিং দরজাটায় টোকা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, “নিচে আসো খেতে।”

🌸
ক্যাথি চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন হস্পিটালের ওয়েটিং রুমে। ক্যান্ডেল ভর্তি এখানে।
ফোনটা করেছিল জয়িতা। তাকে ইভান জানয়েছিল ক্যান্ডেলের ছোটখাটো এক্সিডেন্ট হয়েছে রাস্তা পার হতে গিয়ে।

এ অব্দি নাহয় ঠিক ছিল। কিন্তু চিন্তার বিষয়টা অন্য। মেয়ে তার এই নিয়ে তিনবার বমি করে ভাসিয়েছে। এত বমি করার কী কারণ? তিনি যা ভাবছেন তা নয় তো!
আশঙ্কিত হলেন তিনি।
এর উপর সকালে রাশেদার বলা কথাগুলোও তার কানে বাজছে।
ইনিয়েবিনিয়ে গতদিন নাকি ক্যান্ডেল তাকে কিছু প্রশ্ন করেছিল। যদিও ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে করেছিল তাও রাশেদা, এমনকি তিনিও আন্দাজ করতে পেরেছেন যে প্রশ্নগুলো ক্যান্ডেলের নিজের জন্য ছিল।
সে রাশেদাকে বলেছিল যে তার এক ফ্রেন্ড ভুল করে, নিজের অজান্তে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছিল। এছাড়াও আরো কিছুও করেছিল।
যেহেতু মেয়ের দিক থেকে ছেলেটা পুরো সায় পেয়েছে তাহলে কী ছেলেটা কিছুই করবে না?
রাশেদা বলেছে, অবশ্যই করবে।

যাইহোক রাশেদা কী বলেছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো একটা টেস্ট করানো। তাছাড়া ইভানের মা তো আগেই বলেছিল যে ওদের মধ্যে গভীরভাবেই সম্পর্ক আছে।
সেই গভীরের অর্থ যে এত গভীর তা তিনি মাত্র বুঝলেন। থাপড়ে মেয়ের গালদুটো লাল করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।
শুধু মেয়েকে না, সাথে মেয়ের বাপকেও। ওই বজ্জাত লোকের কথাতেই মেয়েকে বাহিরের দেশে রেখে এই দশা হয়েছে। প্রথম থেকেই দেশে থাকলে আজকে এই সমস্যা হতো?
হতো না।
এখন পরিস্থিতি আরো বেসামাল হয়ে পড়ার আগে কিছু করতেই হবে।

🌼
নীলের ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। বেশ অপেক্ষা করিয়ে হলেও ত্রয়ী এলো। চা-সমেত এসে হাজির হলো।
নীল স্মিত হাসলো।
তবে ত্রয়ী চা-টা হাতে দিতে যাওয়ার সাহস করলো না। ঘরে ঢুকে কোনোদিকে না তাকিয়ে বিছানা থেকে একটু দূরে, একপাশের টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে নিচুস্বরে বলল, “আপনার চা।”

নীল বিছানা ছেড়ে উঠে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে।

ত্রয়ী না তাকিয়েও আচ করতে পারলো সেটা। তাই আড়চোখে অন্যত্র চাইলো ও। ছটফটিয়ে উঠলো ভেতরে ভেতরে। তার এমন ভাব যেন এই বুঝি চায়ের সাথে বিস্কুটের জায়গায় ওকেই ডুবিয়ে খেয়ে ফেলে নীল।
নেহাতই ভুল ভাবনা নয় যদিও।

টেবিলটার সাথে ঠেস দিয়ে চায়ের কাপ হাতে তুলে নীল নজর গাঁথলো ত্রয়ীর দিকে।
আয়েশী ভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিতে না দিতেই কপাল কুচকে ফেললো। পরমুহূর্তেই হাসি ফুটলো অধরকোণে। প্রশ্ন করলো, “এটা তুমি বানিয়েছ?”
“হু।” ছোট করে উত্তর দিলো ত্রয়ী।
নীল হাসিটা ধরে রেখেই আবার চুমুক বসালো।
চা-টা ঠান্ডা হয়ে গেছে পুরোপুরি। তবুও খেতে খারাপ লাগছে না।
যদিও গরম হলে আরো অসাধারণ হতো।
কিন্তু গরম থাকবে কী করে! সে জানে যে তার ত্রপাময়ী চা বানিয়ে আধাঘণ্টা ধরে ইতস্ততই করে গেছে।
এদিকে চা যে ততসময় সবুর করে নি।

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভুলবশত নীলের দিকে আড়চোখে একপলক তাকালো ত্রয়ী। তখনি চোখ পড়লো সরাসরি লোকটার বুকের দিকে।
ভিজে শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খুলে রেখেছে সে। প্রশস্ত বুকের বেশ খানিকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে এতে।
অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে দেখে, অপ্রস্তুতভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো ত্রয়ী। হাঁসফাঁস লাগলো আচানক।
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরালো। ফের পালানোর ধান্ধায় কিছু বলার উদ্দেশ্যে নীলের মুখের তাকাতেই চোখাচোখি হলো। ধড়ফড়িয়ে দৃষ্টি নত করলো ত্রয়ী।
তাড়াহুড়ো ভাবটা লুকিয়ে নমনীয় স্বরে প্রশ্ন করলো, “আপনি কি রাতে খেয়ে যাবেন? আমি খাবার দিচ্ছি তাহলে।”
“কোথায় যাব?”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ত্রয়ী। তবুও বলল, “আপনার বাসায়।”
“বাসায় তো যাব না। আজ রাতে থাকছি আমি। তোমার সাথে।”

বুকটা ধ্বক করে উঠলো ত্রয়ীর। চকিত ভঙ্গিতে নীলের দিকে তাকাতেই তার ফিচেল হাসি ঝংকার তুললো বুকের ভেতরটায়।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here