কিডন্যাপার পর্ব ১+২

কিডন্যাপার (পর্ব:১+২)
#S_A_Priya

সার্জিকেল ব্লেড। বায়োলজি প্র‍্যাক্টিকেল ক্লাসে কিনেছিলাম।সেটা দিয়ে প্রথমে বাম হাতের রগ কাটি।ডান হাত কাটার সাহস পাচ্ছি না।কারণ, অলরেডি বাম হাত কাঁপতে শুরু করেছে।দেরী না করে ডান হাতে ব্লেড টি মুখে নিয়ে দাত দিয়ে চেঁপে ধরলাম।হ্যাঁ এখন ডান হাত কাটতে পারবো। ধীরেধীরে মাথাটা ঝুকে ডান হাত মুখের সামনে ধরলাম।,,,,এই তো শেষ।দুই হাত থেকে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরছে।এবার মুখের ভেতরেই ব্লেড চেঁপে ধরলাম।কষ্ট হচ্ছে প্রচুর।ফিল করছি ভেতরের অনেক জায়গাই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।আমি অতলে তলিয়ে যাচ্ছি।আর বসে থাকতে পারছি না।মাথাটা ক্যামন যেন টলছে। স্টাডি টেবিলের চেয়ারটায় বসা ছিলাম।টেবিলের সাথে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে টেবিলের নিচে পড়ে গেলাম।আমি যে সেন্সলেস হচ্ছি ফিল করছি।


জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।তার মানে আমি বেঁচে আছি।এদিক ওদিক খুঁজে কাউকে দেখছি না।হাত দুটো ব্যান্ডেজ করা। হ্যাঁ স্যালাইন ও চলছে।এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানা নেই।আপাততঃ এসব কথা থাক কেউ না আসা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে এতো ব্যাডলি রিয়্যাক্ট করি টোটালি আউট অফ সেন্স।আর টিক সেই সময় কিছু একটা করে ফেলি।পরে গিলটি ফিল করি যে এটা আমি কি করলাম।যখন মা- বাবাকে অতিরিক্ত মিস করি তখন সুইসাইড এটেন্ড নেই।গল্পে ফিরে আসছি তার আগে আমার বায়োডাটা দেই।আমি নীলা চৌধুরী।প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ফিজিক্স নিয়ে সেকেন্ড ইয়ার।মা বাবার একমাত্র মেয়ে।ক্লাসের টপ সুন্দরীদের মধ্যে একজন।মিশুক টাইপের না একটু চুপচাপ স্বভাবের।মা হাউজ ওয়াইফ আর বাবা একজন স্বনামধন্য আর্কিটেক্ট।ওপেন হার্ট সার্জারি হবার পর বাবা কয়েকদিন ছিলেন আমাদের মাঝে।একদিন সকালে বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখি বাবা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন।জাগাতে গিয়েও জাগাতে পাড়লাম না।তখন আমি ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।বাবার মৃত্যুর চার মাস পর মা হার্ট অ্যাটাক করেন।ডিপ্রেশন রোগে আক্রান্ত মা তখন বাবার সাথে হেন্ডশেক করলেন।তখন থেকেই আমি একা।আমার সহ্য শক্তি কম।নিরবে নিভৃতে আত্মহত্যা আমার টার্গেট ছিলো।কীটনাশক খেয়ে ছিলাম সেদিন।স্টমাক ওয়াশের ১২ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে।মুহূর্তেই বাড়ির দারোয়ান আঙ্কেল, বুয়া ওদেরকে দেখতে পাই।উনাদের ওসিলায় সেযাত্রায় বেঁচে যাই।বাবার দেয়া বাসা ভাড়া তখন আমার একমাত্র সম্বল।তাও প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা।ব্যাংকে যা ছিলো মা-বাবার চিকিৎসায় শেষ।ভাবনায় ছেদ পড়লো কেউ একজন এদিকেই আসছে।হ্যাঁ সাদা এপ্রোন পড়া একজন নার্স।আই কন্ট্রাক্ট হল।উনার চোঁখের ভাষা বুঝা মুশকিল।মুখের ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে কথা বলার অবস্থায় নেই। আশা করছি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বা তীর্যক মন্তব্য করে আমাকে বিব্রত করবে না।স্মিত একটা হাসি দিয়ে ফোনটা বের করে বেডের পাশে থাকা ফাইলটা হাতে নিলো।উনি কল দিচ্ছেন।ওপাশ থেকে কল রিসিভড করতেই নার্সের রিপ্লে কংগ্রাচুলেশনস!!
কে হতে পারে?

আমার সিক্সথ সেন্স বলছে জ্ঞান ফিরে আসায় কাউকে সুখবর টা দিলো।আপাততঃ নার্সের কার্যকলাপ দেখাশুনা ছাড়া কিছুই করার নেই।দেখতে পারছি ইঞ্জেকশন রেডি করছে।হ্যাঁ এদিকেই আসছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই ইঞ্জেকশন টা হাতে পুষ করলো।চোঁখের দিকে না তাকিয়েই বলল,
_৩দিন পর জ্ঞান ফিরেছে আর একমাস বেডরেস্ট।
কথাগুলো বলেই চলে গেলো।
এক মাস বেডরেস্ট? আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।তার আগে জানতে হবে হসপিটাল অব্দি পৌঁছে দিলো কে?একটা প্রশ্ন বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কে হতে পারে?
যেইহোক পরে ভাবা যাবে।মা বাবা বেঁচে থাকলে এই দিনটা দেখতে হতো না।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস। বাবা বেঁচে থাকলে আনলিমিটেড অর্থ উপার্জন করতেন কিন্তু এখন সম্ভব না। শুন্য বাড়িটাতে শুধুমাত্র আমি আর দারোয়ান আঙ্কেল।ও হ্যাঁ মাঝে মাঝে আমার একমাত্র চাচা আলতাফ চৌধুরী ফোন করে বলেন,
_মানি ট্রেন্সফার করে তিনশো, চারশো (যখন যা পারেন) ডলার পাঠিয়েছি।টেক্সট ম্যাসেজ করে কোড নাম্বার পাঠাচ্ছি। মানি এক্সচেঞ্জের অফিস থেকে টাকা তুলে নিস।
এই যা।চাচা উনার ফ্যামিলি নিয়ে ইউ, এস,এ। এক ছেলে এক মেয়ে চাচার।আমাকে নিতে চাইলে মানা করি।এক কথায় মা বাবার স্মৃতি রেখে যেতে চাই না।


আজ বেডরেস্ট এ থাকার ১৪ দিন।এভাবে আর পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে।বন্দীদশা থেকে বের হতে হবে, যে করেই হোক।পালানো ছাড়া সেকেন্ড কোনো অপশন দেখছি না।রিস্ক নিতেই হবে।হাত দুটি ক্যামন যেন নিস্তেজ। কিন্তু হাটতে তো পারি।একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। আমার পরনে নতুন থ্রী-পিজ। এতদিন খেয়াল করি নি।কে হতে পারে? যে আমার এত খেয়াল রাখছে?যে করেই হোক জানতে হবে।আচ্ছা উনি কি আমায় করুণা করছেন?না কাইন্ডনেস?জানিনা।
এনিওয়ে, আমাকে হয়তো আর খুঁজে পাবে না। তবে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।পালানো সহজ হবে। কেবিনে আমি একাই আছি।শুন্য হাতে যাওয়া যাবে না কিছু একটা নেয়া দরকার।অন্তত পার্স থাকলে সেকেন্ড কিছুর প্রয়োজন নেই।এদিক ওদিক খুঁজে সেল্ফের উপর রাখা শপিং বেগে চোঁখ আটকে গেলো।এগিয়ে গিয়ে বেগটা হাতে নিলাম।হ্যাঁ একটা থ্রী-পিজ ছিলো।যেই হোক পছন্দ আছে বলতে হবে।হাতে বেগ রাখার শক্তিটুকুও নেই।কনুই বরাবর রাখলাম।ডান বাম না থাকিয়েই সোজা বেড়িয়ে পড়লাম। গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে একবার হসপিটালের দিকে তাকালাম।হসপিটালের নাম দেখে বুঝলাম, আমি আমার শহরেই আছি।পরিচিত জায়গা। এখান থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা হেঁটে গেলে।হেঁটে যেতে পারবো।এই অবস্থায় টাকা পয়সা থাকার কথা না।মুহূর্তেই গলায় হাত চলে গেলো।হ্যাঁ ডায়মন্ডের লকেট ছিলো।বার্থডে তে বাবার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।গলায় নেই।অবশ্য থাকার কথা না।যতটুকু জানি ওটিতে যাওয়ার আগে স্বর্ণালংকার খুলে রাখা হয়।হঠাৎ একটা মাইক্রো আমার সামনে এসে ব্রেক করলো।লাইটিং ফ্লাশটা এতটাই বাড়িয়ে দিলো যে চোঁখদুটি অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে গেলো।তবে স্পষ্ট দেখেছি গাড়ির ভেতরে মাক্স পড়া একটা লোক।পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলাম তার আগেই লোকটা রুমাল দিয়ে নাক চেঁপে ধরে।


জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটা একাকী রুমে আবিষ্কার করলাম।আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না কারণ আমার হাতে স্যালাইন।আমার সিক্সথ সেন্স বলছে,কেউ আমাকে আগে থেকেই ফলো করছিল।তবে যেই হোক, একটা কথা ভাবাচ্ছে,লোকটা কিডন্যাপার না ডক্টর ?ব্রেইন হ্যাং হবে বলে মনে হচ্ছে।একের পর এক প্রশ্ন জমতেই আছে।
দরজাটা লকড করা না,একটু ফাঁকা। তবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রুমটা বেশ বড় না আবার ছোট ও না।মাঝারী সাইজের।রয়েল ব্লু আর সাদা রঙের রুমটায় ম্যাচিং পর্দা।ব্লু বেডশীট,সাথে ম্যাচিং করা বালিশের কবার।একটা ড্রেসিং টেবিল,একটা আলমারি।আলমারির উপরে একটা বার্বি ডল।সাদা ড্রেস টায় স্যুট করছে অনেক। হোয়াইট এঞ্জেল বললে ভুল হবে না।টেবিলের উপর জগভর্তি পানি,ম্যাগাজিন আর কিছু ম্যাডিসিন ছাড়া অন্য কিছু দেখছি না।আচ্ছা আমার কি চিৎকার করা উচিত?না থাক ওভার রিয়্যাক্ট করা উচিত হবে না।যা করার ফ্রেস মাইন্ডে করতে হবে।বালিশ থেকে মাথাটা তুলতে চাইলাম, কিন্তু হাতে স্যালাইন।স্যালাইন শেষ হতে অনেক দেরী আছে।ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই।কাজেই স্যালাইন টা খুলতে হবে।বালিশের উপর থেকে মাথাটা তুলে স্যালাইনে হাত দিতে যাবো তখনি কেউ একজন বলল,
_’স্টপ ইট প্লিজ।

চলবে,,

#কিডন্যাপার (পর্ব :২)
#S_A_Priya

চোঁখ তুলে তাকাতেই মনে হল হাইভোল্টেজ এর শক খেলাম।লোকটার গায়ের রং ফর্সা।পরনে এস কালার টি শার্ট,অফ হোয়াইট প্যান্ট,পায়ে এক জোড়া স্লিপার,ডান হাতে স্প্রাইটের বোতল,বাম হাতে একটা ভালো ব্রান্ড এর হাত ঘড়ি।ড্যাশিং লোকিং।হাইট ৬ ফিট তো হবেই।যে কেউ ওর প্রেমে পড়বে।দেখে মনে হচ্ছে হাই সোসাইটির লোক।যাইহোক, লোকটার লাইফ স্টাইল ফলো করার মতো সময় না এখন।লোকটার দিকে তাকাতেই ভ্যাবাচেকা খেলাম। এতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।কিছুটা সংকোচ বোধ করলাম।যতটুকু সম্ভব নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
_’মাক্স পরা লোকটা আপনি?
স্মিত একটা হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।টেবিলে স্প্রাইটের বোতল রেখে চেয়ার টেনে বসলো।ম্যাডিসিন হাতে নিয়ে বলল,
_এক মাস চলবে।
লোকটার কথায় সায় না দিয়ে বললাম,
_হসপিটাল অব্দি পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে,,,আর বলতে না দিয়েই বলল,
_’হ্যাঁ আমি ছিলাম।
_কি চান?র‍্যানসাম, র‍্যাপ নাকি অন্যকিছু?
নিচের দিকে তাকিয়ে ম্যাডিসিন ঘাটাঘাটি করছিল।কথাটা শুনে আমার দিকে তাকালো।চোঁখ ফিরিয়ে নিয়ে স্মিত একটা হাসি দিলো। বলল,
_’র‍্যানসাম!! কে দেবে?কে আছে আপনার?আর বাজে কিছু করার জন্য আপনার ফাঁকা বাড়িটাই যথেষ্ট।
_সামথিং এলস?
লোকটা আমার কথায় সায় না দিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে বলল,
_’ম্যাডিসিন খাবেন এখন।
লোকটার কথা শুনে মেজাজের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।চোঁখ দুটো অটোমেটিক্যালি বড় হয়ে গেলো।মুহূর্তেই নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।শান্ত রিয়্যাকশান দিচ্ছি। বললাম,
_কাম টু দ্যা পয়েন্ট?
লোকটা চেয়ার থেকে উঠে একগ্লাস পানি আর কিছু পিল মুখের সামনে ধরে ইঙ্গিত করলো হা করুন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঔষধ খেয়ে নিলাম।
তারপর বলল,
_’ফোর্স করোনা।রেস্ট নিন আসছি।
এই ব্যাটা তো দেখছি মোস্ট ফাউল।লেইম এক্সকিউজ দিচ্ছে। আই উইল নেভার গিভ আপ।


প্রায় ১০ মিনিট পর লোকটা আসলো। হাত থেকে স্যালাইন খুলল।ওয়াসরুম দেখিয়ে দিয়ে বলল,
_’ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ আসুন।
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলো।বলল,
_আলমারিতে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা আছে।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।চলে গেলো।বেড থেকে নিচে নামলাম।আলমারি খুলে থ্রী-পিজ হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকলাম।
রুম থেকে বের হয়ে আবারও বড় ধরনের শক খেলাম।বিশাল অট্টালিকা। এতো বড় বাড়িটাতে লোকটা একাই থাকে?হয়তো।কাউকে দেখছি না। নিচের দিকে তাকালাম। ব্যাটা কিডন্যাপার ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল।আমাকে হয়তো খেয়াল করেনি।সিড়ি বেয়ে নিচে নামলাম।এত বড় বাড়িতে এই প্রথম পা রাখলাম। তাও নিজের অজান্তে।ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই ব্যাটা কিডন্যাপার চোঁখের ইশারায় বসতে বলল।টেবিলে জুস,কোল্ড ড্রিংকস, কেক,ব্রেড ইত্যাদি সফট জাতীয় খাবার।বলল,
_আপাততঃ এগুলো চলবে।
মুখের ভেতরকার অবস্থা অনেকটা ভালো।ব্যাটা কিডন্যাপার অন্য কিছু খেতে দিচ্ছে না।অবশ্য নিজেও এগুলো খাচ্ছে।
খাওয়া শুরু করলাম।ভাবতে লাগলাম,লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করলো, আবার আমার প্রতি যত্নশীল।সুইসাইড এটেন্ড নেয়ার পর লোকটা হসপিটাল অব্দি পৌঁছে দিল।তারমানে কি ধরে নিবো? লোকটা আগে জানতো যে, আমি সুইসাইড এটেন্ড নিচ্ছি?নাকি কিডন্যাপ করতে গিয়েছিলো?লোকটা টেবিলে থাবা দিতেই ভাবনায় ছেদ পড়লো।জিজ্ঞেস করলো,
_এনিথিং রং?
মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম।আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই।কিউরিসিটি নিয়ে আমার ঘুম হবে না।২পিছ কেক সাবাড় করলাম।জুসের গ্লাসে চুমুক দিলাম।জুসটা ভালো।ডেকোরেশন ও চমৎকার।হয়তো নিজে বানিয়েছে।জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করি না।আসল কথায় আসা যাক।বললাম,
_’কিডন্যাপ করার কারণ?
জুসের গ্লাসে মনোযোগ ছিল।কথাটা শুনে একবার আমার দিকে তাকালো।আবারও গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলল,
_’চ্যালেঞ্জ।
কথাটা শুনে কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকলাম।লোকটার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছি।তারপর বললাম,
_’আপনার চ্যালেঞ্জার কে?
চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আই নো ইউ ডোন্ট হেভ এনি ফল্ট বাট আই এম হেল্পলেস।
ব্রেইন হ্যাং হবে মনে হচ্ছে।লোকটা চ্যালেঞ্জ ধরে কিডন্যাপ করেছে তাতে আমার কোনো দোষ নেই?মেজাজের তাপমাত্রা আবারো একশত ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিছু বলতে যাবো তখনি বলল,
_’ডোন্ট ওরি, এভরিথিং উইল বি অল রাইট।
ব্যাটা কিডন্যাপার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবার দাঁতে দাঁত চেঁপে বললাম,
_’অ্যান্সার টু দ্যা পয়েন্ট।
লোকটা কিছু না বলে জোসের গ্লাসটা নাড়াচাড়া করছে।কিছু বলছে না। তারমানে কি আমার অ্যান্সার পাবো না?এভাবে হবে না।যা করার ফ্রেস মাইন্ডে করতে হবে।বললাম,
_হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?
চোঁখ তুলে তাকালো। এবার হয়তো আমার প্রশ্নের উত্তর পাবো।বলল,
_আপাততঃ ফোর্স করো না।
_কখন পাবো?
_রাত ১১টায় আপনার সব উত্তর পেয়ে যাবেন।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৯টা বেজে ২৫মিনিট। দ্যাটস মিনস, দেড় ঘন্টা ওয়েট করতে হবে।কিছু বলতে যাবো তখনি বলল,
_আই ডোন্ট হেভ টাইম টু টক।


রুমে চলে আসলাম।দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।ভাবতে লাগলাম,লোকটা কিডন্যাপ করলো,তার পেছনে আমার কোনো দোষ নেই,আবার বলল চ্যালেঞ্জ।চ্যালেঞ্জার কে?কিসের চ্যালেঞ্জ?ব্যাপারটা ক্যামন যেনো।আবার লোকটা আমাকে আটকে রাখেনি।বাড়িতে ও কাউকে দেখছি না।একটা কথা বুঝে গেছি। আমার উপর নজর না রাখার কারন হল, ব্যাটা কিডন্যাপার আমার বাড়ি চেনে।না হলে আমার উপর কারফিউ জারি করতো।আচ্ছা যদি খারাপ কিছু ঘটে?না তার আগেই পালাতে হবে।একটা কথা ভাবাচ্ছে,পালিয়ে যাবো কোথায়?চাচার কাছে যেতে হলে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।কিন্তু তার আগে আশ্রয় নেবো কোথায়?অনুভব করলাম চোঁখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।না এভাবে হবে না আমাকে শক্ত হতে হবে।স্ট্রং প্ল্যান করতে হবে।ব্যাটা কিডন্যাপার হয়তো জানেনা মৃত্যু ভয় আমার নেই।লড়াই করে মরবো।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।হ্যাঁ আর মাত্র ৫ মিনিট। লোকটা আসার শব্দ পেলাম। দরজায় দাড়িয়ে বলল,
_আসবো?
অনুমতি দিলাম।দুই মগ কফি নিয়ে আসলো।এক মগ কফি এগিয়ে দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। কফিতে চুমুক দিলাম।ব্যাটা তো বিশাল এক্সপার্ট।বেশ ভালো বানিয়েছে। বললাম,
_’চমৎকার।
স্মিত একটা হাসি দিল।হাসিটা অনেক স্যুট করেছে ব্যাটাকে।বললাম,
_’অ্যান্সার পাবো?
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।বললাম,
_কাহিনীটা শুরু করুন।
কফির মগে চুমুক দিলো।মুখটা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্টপ থাকবেন প্লিজ।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।লোকটা বলতে শুরু করলো,
_আপনাকে কিডন্যাপ করার রিজন হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জার একদিকে ইয়োর স্যার অপরদিকে আমার ফ্রেন্ড।সাদিক।
সাদিক স্যার?স্যার আমাকে শুধু প্রপোজ করেন নি, ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।রিজেক্ট করেছিলাম।শুধু স্যার না আজ পর্যন্ত যতোটা প্রপোজাল এসেছে সবগুলো রিজেক্ট করেছি।ব্যাটা আবারো বলল,
_ওর কাছ থেকে জানতে পারি আপনি কাউকে এলাও করেন না।অবশ্য আমাকেও করতেন না।তাই কিডন্যাপ করি। আপনাকে ফলো করছি ৪মাস ধরে। সেদিন কিডন্যাপ করতে গিয়ে দেখি আপনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল।দ্রুত হসপিটালে নেই।দেন ইমার্জেন্সী তে পাঠাই।
বাট কিডন্যাপ করার কারন? আর সাদিক স্যারের কাছে কিসের চ্যালেঞ্জ? জিজ্ঞেস করতে যাবো তখনি বলল,
_সাদিকের কাছে চ্যালেঞ্জ ধরি যে, আপনাকে আমি পাবো।যে করেই হোক।সেদিন আপনি সুইসাইড এটেন্ড নিচ্ছিলেন, ঐ দিন আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।হয়নি।আজ রাতেই হবে।
লোকটার কথা শুনে মাথাটা ঘুরছে। লোকটা কি বলল বুঝে উঠতে পারছি না।বিয়ে হবে মানে?আর ভাবতে পারছি না।চোঁখে ঝাপসা দেখছি।তারপর? আর মনে নেই।

জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম লোকটার পাশে একটা মেয়ে।বয়স পাঁচ বা ছয় হবে।ফর্সা গায়ের রং।মেয়েটার পরনে মিনি স্কার্ট তার সাথে টি শার্ট।টি শার্টে মিকি মাউসের ছবি আঁকা।স্ট্রেইট করা চুল।কুলে একটা ডল।ডলটাকে আঁকড়ে ধরেছে।মেয়েটার চুল থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত সবকিছুতেই কিউটনেস রয়েছে।হেব্বি সুইট।সেন্স ফিরেছে ব্যাটা কিডন্যাপার খেয়াল করেনি।উঠে বসতে দেখে লোকটা মেয়েটা কে বলল, _’মামনি তোমার রুমে যাও।
“মামনি”?? তারমানে লোকটা ম্যারিড?

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here