##কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গেচুরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে আমাকে রেখে ছলনায়
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না, লাগে না জোড়া
লাগে না, লাগে না
………………………………
এতোক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে গানটা শুনছিলো আস্থা।কে গেয়েছে আস্থা তা জানেনা,কারণ কন্ঠস্বর সে ভালোভাবে শুনতে পাইনি।গানটা সে আন্দাজ করেছে গিটারের শব্দ শুনে।আস্থা আন্দাজ করে যা বুঝে শব্দটা উপর তলা থেকে এসেছে কারণ নিচের তালায় গিটার বাজানোর মতো কেউ নেয়।তার রুমের ঠিক উপরেই তাজের রুমটা।তাই আস্থা যা বুঝতে পারে এটা তাজ ছিল।কিন্তু আজ হঠাৎ এতো রাতে গিটার বাজিয়ে তাজের গান গাওয়ার কারণটা আস্থার ঠিক বোধগম্য হলোনা।
পরেরদিন বিকেলবেলা,
আজো আস্থা ছাদে এসেছে তবে আজ সে বই আনেনি।সে ফোনে গান ছেড়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে নিচে রাস্তা দেখতে থাকে।
হঠাৎ করে আস্থা অনুভব করে তাকে কেউ ডাকছে।সে ঘাড় গুড়িয়ে পেছনে তাকাই কিন্তু হুট করে তাজকে যে সে ঘাবড়ে যায়।আস্থা তাড়াতাড়ি কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলে।
” আপনি!আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আপনার এই হুটহাট আগমনে কোনদিন না আমার হার্ট এট্যাক হয়।”
” দুঃখিত আমি তোমাকে ভয় লাগাতে চাইনি।আর তোমাকে আমি সেই কখন থেকে ডেকে চলেছিল কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনছিলেই না।”
” ও আসলে কানে হেডফোন ছিলো তো তাই শুনতে পাইনি।আপনি কি কিছু বলবেন?”
” তুমি কালকে ফ্রী আছো?”
তাজের কথা শুনে আস্থা শক খাই।সে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজেয়ে নেয়।তার কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে।
” কি হলো?”
” না কিছু না।কিন্তু আপনি হঠাৎ এই প্রশ্ন করছেন যে?”
” তুমি না সেইদিন বলেছিলে বই পড়তে?আমি ভেবেছি এবার থেকে বই পড়ার অভ্যাস করবো।কিন্তু আমার তো বই সম্পর্কে কোন ধরণা নেই।তাই ভাবলাম তুমি যেহেতু বই পড়ো,তোমাকে নিয়ে কাল লাইব্রেরিতে যাবো বই কিনতে।তুমি কি যাবে আমার সাথে?”
তাজের কথা শুনে আস্থা কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।সে কোনদিনও ভাবেনি তাজ তাতে এরকম কিছু কোনদিন বলবে।যে কারণেই হোক সে তার ভালোলাগার মানুষটার সাথে সময় কাটাতে পারবে,এরকম সুযোগ আস্থা কেন ছাড়বে।তাই সে খুশি মনে হ্যাঁ বলে দেয়।
” তাহলে কাল বিকেলবেলা যাবো।তুমি তৈরি থেকো।”
” আচ্ছা।”
হালকা হেসে তাজ নিচে নেমে যায়।আস্থা কিছু একটা ভেবে মাথা নিচু করে হাসে।
পরেরদিন বিকেলবেলা,
দুপুরের পর থেকেই আস্থা তৈরি হতে বসে পড়ে।সে কি পড়বেনা তা নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করে।অবশেষে আস্থা একটা কালো রঙের জামা পড়ে।চুলগুলো একপাশে এনে একটা বেনী করে নেয়,সাথে কানে মাঝারি সাইজের দুল করে।আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হাসে আস্থা।বিছানা থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।আস্থা যখনই উপরে উঠতে যাবে তাজকে ডাকার জন্য তার আগেই সে নিচে নেমে আসে।
” ও আপনি চলে এসেছেন।আমি তো আরো আপনাকে ডাকার জন্য যাচ্ছিলাম।”
” যাওয়ার জন্য তৈরি?”
” একদম।”
” তাহলে চলো।”
আস্থা আগে আগে তার পেছন পেছন তাজ নিচে নেমে আসে।নিচে নেমে তাজ পার্কিং লটের দিয়ে যেতে নিলে আস্থা জিজ্ঞেস করে,
” কোথায় যাচ্ছেন?”
” বাইক আনতে?”
” উ….রিক্সা করে যাই?”
” রিক্সা?”
” হুম।চলুন না রিক্সা করে যায়।”
কিছুক্ষণ ভেবে তাজ উওর দেয়, “আচ্ছা চলো রিক্সা করে যায়।বলা তো যায় না যদি বাইক আবার মাঝরাস্তা খারাপ হয়ে যায়।তুমি দাঁড়াও আমি রিক্সা নিয়ে আসছি।”
আস্থা গেটের কাছে এসে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণের মধ্যে তাজ রিক্সা নিয়ে এলে আস্থা তাতে উঠে বসে।রিক্সা আপন গতিতে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করে।আস্থা খেয়াল করে তাজ একদম কোণায় গিয়ে বসেছে।
” আপনি আরো এদিকে চেপে বসুন।পড়ে যাবেন তো।”
” না আমি ঠিক আছি।তুমি ঠিক করে বসো।”
” আমি তো খুব ভালো করে বসেছি।কিন্তু আপনি একদম কোণায় গিয়ে বসেছেন।যদি রিক্সা হুট করে কোথাও থামে বা উঁচু নিচু জায়গা দিয়ে যায় তাহলে পড়ে যাবে।তাই বলছি আরেকটু ভিতরের সাইডে চেপে বসুন।”
আস্থার কথা শুনে তাজ আর কিছু বলতে পারেনা।সে আরেকটা কাছে এসে বসে,তবে একদম আস্থার কাছাকাছি নয়।
কিছুক্ষণ পর,
” আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলবো?কিছু মনে করবেন নাতো?”
” বলো কি বলবে?”
” আচ্ছা আপনার কি কোন তাড়া আছে?”
” না সেরকম কিছু নেই।কিন্তু কেন?”
” সামনে একটা নদীর পাড় আছে।লাইব্রেরিতে যাওয়ার আগে ওখানে একটু নিয়ে যাবেন আমাকে?আমার না সময়ের অভাবে অনেকদিন আসা হয়নি।জায়গাটা আমার খুব পছন্দের।নিয়ে যাবে?বেশি সময় থাকবোনা,জাস্ট পনেরো মিনিট থেকে চলে আসবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।এই যে মামা সামনে যে নদীর পাড়টা আছে ওখানে রিক্সা দাঁড় করিয়েন।”
কথাটা বলে তাজকে আস্থার দিকে তাকিয়ে তাকে একটা হাসি উপহার দেয়।তাজ যে তার আবদার পূরণ করেছে এতে আস্থা খুবই খুশি হয়েছে।
পাশাপাশি হাঁটছে তাজ আর আস্থা।যদিও বা আস্থার তাজের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তাও সে খুশি মনে সেটাকে মেনে নিয়ে হাঁটছে।
” কেমন লাগছে এখানে এসে?”
” খুব ভালো লাগছে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।আর সরি আপনার সময় নষ্ট করছি আমি।”
” সরি বলার কি আছে?আমারো এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।আসলেই জায়গা অনেক সুন্দর।”
” জায়গাটা পছন্দ হয়েছে আপনার?” উৎফুল্ল হয়ে প্রশ্ন করে আস্থা।
” হুম বলতে গেলে অনেকটাই।আসলেই তোমার চয়েস অনেক ভালো।”
” আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে বলুন তো?”
তাজ ঘাড় গুঁড়িয়ে আস্থাকে একবার দেখে নেয় তারপর মুখে হাসি রেখেই বলে,
” সত্যি বলছি তোমাকে এই কালো জামাতে খুবই সুন্দর লাগছে।এতো মনোমুগ্ধকর লাগছে যে দেখা যাবে এই নদীর পাড়েই কোন ছেলে তোমার মায়াতে পড়ে গিয়েছে।”
তাজের কথা শুনে আস্থা নিঃশব্দে হাসে।সে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলে, ” আমি তো চাই কেউ আমার মায়াতে পরুক,আমাকে ভালোবাসুক।এই পড়ন্ত বিকেলে আমার পাশে হাঁটুক।কিন্তু সেই কেউটা অন্য কেউ নয় আপনি।আমি তাই আমি আমাকে ভালোবাসুন।আচ্ছা আপনি কি শুধু আমার ভালোলাগা?আপনাকে কি আমি ভালোবাসতে পারিনা?আপনাকে ভালোবাসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?আমার তো মনে হয়না কোন ক্ষতি হবে।তাহলে আপনাকে ভালোবাসতে বাঁধা কিসের?এই পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে একজন রমণী যে আপনার প্রেমে পড়েছে সেটা কি আধো কখনো আপনি জানতে পারবেন তাজ?আচ্ছা আমি কি আপনাকে আধোও নিজের করে পাবো?কি করিলে বলো পাইবো তোমারে?”
” এইযে কোথায় হারিয়ে গেলে?”
তাজের কথায় আস্থা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।কবে যে তার চোখে পানি জমে গিয়েছে আস্থা সেটা বুঝতে পারেনি।তাজের আড়ালে আস্থা নিজের চোখটা মুছে নেয়।
” হুম বলুন।”
” কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?”
” কোথাও না।আসলে আমি একটু অন্যমন্সক হয়ে গিয়েছিলাম।”
” পাগল মেয়ে,হাঁটার সময় কি মানুষ অন্যমন্সক হয় নাকি?এতে তো কতো বিপদ হতে পারে।আচ্ছা এগুলো বাদ দাও কি খাবে বলো?”
” কিছু খাবোনা।”
” ফুসকা খাবে?”
” না,আমি বাইরে ফুসকা খাই না।বাড়িতে মা বানালে তবে খাই।”
” আইসক্রিম?”
” না।আইসক্রিমও খেলে ঠান্ডা লেগে টলসির ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
” আচ্ছা তাহলে চলো বাদাম খাই।এবার এটা বলোনা বাদাম খেলে তোমার পেট ব্যথা করে।”
” হাহাহাহা…না বাদাম খাওয়াতে কোন বারণ নেই।চলুন বাদাম খাই।”
তাজ গিয়ে দু প্যাকেট বাদাম নিয়ে আসে।
” কেমন লাগছে এই পরিবেশটা আপনার?”
” খুবই ভালো।তোমার একটা ধন্যবাদ পাওয়া উচিত এতো সুন্দর একটা জায়গায় কিছু মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া জন্য।আমি কখনো এখানে আসিনি।তুমি না বললে তো এই সুন্দর জায়গা আর মুহূর্তগুলো মিস করতাম।”
তাজের কথা শুনে আস্থার খুব ভালো লাগে।যাক তার জন্য তার ভালোলাগার মানুষটা কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে পেরেছে।
আরো কিছুক্ষণ হেঁটে আস্থা আর তাজ আবারো রিক্সায় উঠে বসে লাইব্রেরি যাওয়ার জন্য।
চলবে…..কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পড়ার টেবিলে বসে খাতায় ডিজাইন করছে আস্থা।এরিই মধ্যে সে শুনতে পাই মেসেজ আসার শব্দ তবে আস্থা তার কাজ ছেড়ে উঠেনা।সে পুরোটা শেষ করে আধাঘন্টা পর উঠে।বই খাতা সব গুছিয়ে রেখে ফোনটা হাতে নেয় সে।মেসেজ অপশনে যায় কিন্তু মেসেজটার দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
” আস্থা,আমি তাজ।তোমার সাথে কিনে আনা বইগুলোর মধ্যে একটা পড়ে শেষ করলাম।খুব ভালো লেগেছে,তাই ভাবলাম তোমাকে একবার বলি।তোমার চয়েজ আসলেই ভালো।তুমি আসলেই ভালো জিনিস তোমার পছন্দের তালিকায় রাখো তা প্রমাণ পেয়ে গিয়েছি।তাই তো তুমি এতো সুন্দর গুছিয়ে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারো।”
মেসেজটা দেখে আস্থা যে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।তাজ নিজে থেকে তাকে মেসেজ দিয়েছে,এটা আস্থার বিশ্বাস হচ্ছে না।আস্থা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে।তারপর যখন তার হুস আসে সে তাড়াতাড়ি মেসেজ টাইপ করে।
” আপনার বইগুলো ভালো লেগেছে?”
মেসেজ দেওয়ার ২/৩ মিনিট পর ফিরতি বার্তা আসে।
” হুম।একটা পড়েছি,ভালো লেগেছে।আশা করি বাকিগুলোও ভালো লাগবে।ভাবছি এগুলো পড়া শেষ হলে তোমার সাথে গিয়ে আরো কিছু বই কিনবো?তখন কি তোমার সময় হবে?”
” আরে হবে না কেন?অবশ্যই হবে।আপনি শুধু বলবেন কখন যাবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার পড়া শেষ?”
” হ্যাঁ কিছুক্ষন আগেই শেষ হলো।”
” রাতের খাবার খেয়েছো?”
” না এখনো নয়।আপনি?”
” হুম খেয়েছি।আচ্ছা তুমি যাও খেয়ে নাও।শুভ রাত্রি।”
” শুভ রাত্রি।”
তাজ মেসেজ সিন করে তবে আর কোন রিপ্লাই দেয়না।আস্থা কিছুক্ষণ বসে থাকে এই আশায় যে তাজ তাকে হয়তো আরো কিছু বলবে কিন্তু যখন দেখলো সে কোন মেসেজ দিচ্ছে না তখন কিছুটা হতাশ মন নিয়ে আস্থা ফোনটা রেখে দেয়।তবে সে মনে মনে এটা ভেবে খুশি যে তাজ তাকে নিজের থেকে মেসেজ দিয়েছে।হোক না সেটা ছোট কোন কারণে।
.
.
” তুই কাল মিস্টার তাজের সাথে কোথাও গিয়েছিলিস নাকি?”
” হুম গিয়েছিলাম তো।”
” কোথায় গিয়েছিলি?”
” ওই বই কিনতে।উনি বই পড়া শুরু করেছেন তার জন্য বই কিনতে গিয়েছি।”
” ও আচ্ছা।”
” কিন্তু তুই কিভাবে জানলি আমি ওনার সাথে কাল গিয়েছিলাম?”
” না আসলে কাল রাস্তায় তোদের দেখলাম রিক্সা করে কোথাও যাচ্ছিস।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
” আচ্ছা।জানিস কাল উনি না আমাকে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে।”
” নিজে থেকে?”
” না নিজে থেকে নয়,আমি ওনাকে বলেছিলাম আর উনিও না করেনি।জানিস নাইরু কাল আমি একটা জিনিস ফিল করেছি।”
” কি?”
” আমি তাজকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
আস্থার কথা শুনে নাইরা কিছু একটা ভাবে তারপর বলে,
” সত্যি?নিজের মন থেকে ভালোবাসিস তো?”
” হুম সত্যি।আমি এখন বুঝতে পেরেছি আমি ওনাকে ভালোবাসি।”
” ওনাকে বলেছিস?”
” কি বলিস।ওনাকে কেন বলতে যাবো?”
” কেন বলবি মানে?তুই ওনাকে ভালেবাসিস,এটা ওনাকে বলবিনা?”
” ওনাকে বলেই বা কি লাভ?উনি আমাকে বুঝবে না।আমি জানি উনি এটা আমার আবেগ বলে দূরে ঠেলে দেবেন আমাকে।থাক না আমার ভালোবাসাটা আমার মধ্যেই।”
” এই যে মহারাণীরা আপনারা আমাকে ফেলে চলে এসেছেন কেন?” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে কথা।
” তো কি করবো?তুমি তো মেয়ে লিখতে ব্যস্ত ছিলে তাই আমরা চলে এসেছি।” নাইরা বলে।
” তো লিখবোনা।”
” আসোনি কেন কাল?”
” আরে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো।”
” তো তোর দেরি হবে নাতো আমাদের হবে?রাতের দুটো-তিনটে পর্যন্ত যদি মোবাইল গুঁতান আপনি তাহলে কি করে তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন।”
” আরে বাবা তোরা দু’টো চুপ থাক তো।আর ঝগড়া করিস না।”
” করবো না।আগে আমাকে বল এতোক্ষণ কি কথা বলছিলি তোরা?আমি তখন মনে হয় শুনলাম তোরা ভালোবাসা নিয়ে কিছু একটা বলছিলি।এখন তাড়াতাড়ি বল কি বলছিলি।”
” আমাদের আস্থু প্রেমে পড়েছে।”
” কি?সত্যি নাকি?কে সে ব্যক্তি আমিও একটু শুনি।”
” তাজ।” মাথা নিচু করে বলে আস্থা।
” ওহো।আমি তো জানতাম,তুই একদিন না একদিন ঠিকই তাজ ভাইয়ার প্রেমে পড়বি।দেখছিস তো আমার কথায় মিলে গেলো।”
” আচ্ছা বাদ দে এখন ওসব।ওসব নিয়ে এখন আর কথা বলিস না অন্যকোন কথা বল।”
অন্যদিকে,
বিল্ডিং এর ডিজাইন নিয়ে বাকিদের সাথে আলোচনা করছে তাজ।এরই মাঝে তার ফোন বেজে উঠে।সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তাজ সাইডে এসে ফোনটা রিসিভ করে।
” আচ্ছা আমি এখুনি আসছি।”
তাজ তাড়াতাড়ি ভার্সিটির গেটের দিকে আস্তে থাকে।মাজ রাস্তায় তার নাইরার সাথে দেখা হয়ে যায়।
” কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার তাজ?”
” আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?”
” জেনেছি কোন একভাবে।তা এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছেন?”
” আমার একটা জরুরি কাজ আছে।সেখানেই যাচ্ছি।”
” ও আচ্ছা তাহলে যান।পরে কথা হবে।”
তাজ আর কিছু না বলে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে পড়ে।
” নাইরা।”
নাইরা পেছন ফিরে দেখে অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে।অগ্নি দেখে নাইরা বিরক্ত হয়।
” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।”
” ওই লোকটা কে হয় তোমার?”
” তা জেনে আপনার কাজ কি?”
” আমার তোমাকে অন্যকারো সাথে দেখলে ভালো লাগেনা,কষ্ট হয় আমার।”
” আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।”
” সত্যি কিছু যায় আসেনা তোমার?”
” না কিছু যায় আসেনা।”
” নাইরা তুমি কি বুঝোনা?নাকি বুঝেও না অবুঝের মতো থাকো?” অসহায় কন্ঠে বলে অগ্নি।সে নাইরার এই অবহেলা আর নিতে পারছেনা।
” কি বুঝবো?”
” ভ….” বলতে চেয়েও অগ্নি আর কিছু বললোনা।
” কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?কি বলতে চেয়েছিলেন?”
” কিছু না।ভালো থেকো।”
চোখে জল নিয়ে নাইরার সামনে থেকে চলে যায় অগ্নি।
.
.
বিকেল বেলা ছাদে যাওয়ার জন্য আস্থা ঘর থেকে বের হলে দেখতে পাই তাজ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে।তাজকে দেখে আস্থা থেমে যায়।তাজের মুখটা আস্থার কাছে কিরকম যেন শুকনো শুকনো লাগছিলো।
” কোথা থেকে আসছেন আপনি?”
” কাজ ছিল একটা।” গম্ভীর স্বরে বলে তাজ।
” ও আচ্ছা।আচ্ছা আপনার বই পড়া শেষ?কবে যাবেন আবার বই কিনতে?”
” জানিনা।”
আস্থা আর কিছু বলবে তার আগেই তার উপরে চলে যায়।আস্থা তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
” ওনাকে এরকম লাগছে কেন?ওনার কি কিছু হয়েছে?” মনে মনে ভাবে আস্থা।
আস্থা আর ছাদে গেলোনা।উল্টো পায়ে দৌড়ে ঘরে চলে এলো।
” মা?ও মা?মা?”
” কি হয়েছে কি?এভাবে চিৎকার করছিস কেন?”
” শোন আজ স্পেশাল কিছু বানাও।”
” মানে?এখন আবার তোর কি খেতে মন চাইছে?”
” যেকোন কিছু একটা বানাও।এই যেমন পায়েস,বিরিয়ানি,কাবাব এরকম কিছু।”
” এখন এগুলো বানানোর মতো কিছু বাড়িতে নেই।তোর খেতে হলে অন্যকিছু খা।আমি কাল তোকে এসব বানিয়ে দেবো।”
” কাল বানিয়ে কি হবে?আমার তো আজ এখনই চায়।আচ্ছা তুমি যাও আমিই কিছু করছি।”
” এই মেয়েটার মাথায় কখন যে কি আসে ও নিজেও জানেনা।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আস্থা চিন্তা করতে থাকে কি করা যায়।হুট করেই কিছু মনে পড়তেই আস্থা দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
আধাঘন্টা পর,
অবশেষে নুডুলস বানাতে সক্ষম হয়েছে আস্থা।অন্যসময় আস্থা লুকিয়ে নিজের জন্য রান্না করে নিজেই খেতো কিন্তু এখন সে অনেক যত্ন করে বানিয়েছে।চারটা বাটিতে নুডুলসগুলো নিয়ে আস্থা উপরের তলায় চলে আসে।
মূলত আস্থা রান্না করেছে তাজের বাসায় আসার জন্য মূলত এটাই তার এখানে আসার একমাত্র পথ।
” এগুলো তুই খাবার কি নিয়ে এসেছিস?”
” নুডুলস।নাই ট্রে-টা ধরো।”
” তোর মাও না।”
” না আন্টি মা বানাইনি আমি বানিয়েছি।”
” কি বলিস কি?তুই বানিয়েছিস।বাহ্ তাহলে তো খেয়ে দেখতে হবে আমাদের আস্থা কেমন রান্না করতে পারে।”
” আচ্ছা আন্টি বাসায় আর কেউ নেই?”
” আছে তো।আয় ভেতরে আয়।”
জুতো খুলে আস্থা তাড়াতাড়ি তাজের বাসায় ঢুকে পড়ে।
চলবে……