#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
নাইরা অগ্নিকে পার্কে আসতে বলেছে বিকাল চারটায কিন্তু অগ্নি তিনটা থেকেই এসে দাঁড়িয়ে আছে।সে মনে মনে এটাই চিন্তা করছে যে নাইরা তাকে কি বলবে।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নাইরা পার্কে এসে পৌঁছেছে।নাইরা এসেই কোন ভনিতা না করে অগ্নিকে জিজ্ঞেস করে,
” ভালোবাসেন আমাকে?”
হুট করে নাইরার মুখে এধরণের কথা শুনে ঘাবড়ে যাক অগ্নি।সে বুঝতে পারছেনা কি বলবে এখন।
” কি হলো আমার প্রশ্নের উওর দিন।”
” হ্যাঁ।” মাথা নিচু করে উওর দেয় অগ্নি।
” কবে থেকে?”
” তুমি ভার্সিটিতে আসার কিছু মাস পর আমি তোমাকে দেখি।প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমার ভালো লেগে যায় আর আস্তে আস্তে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।তবে আমি বলছিনা তুমি আমাকে ভালোবাসো।তোমায় আমাকে ভালোবাসতে হবেনা।”
” প্রপোজ করুন।”
” কি!” চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে অগ্নি।
” বলছি তাড়াতাড়ি প্রপোজ করুন,আমার হাতে এতো সময় নেই।”
নাইরার মুখে এতোদিন এই কথাটাই শুনার অপেক্ষা করছিলো অগ্নি কিন্তু আজ যখন নাইরা তাকে তার কাঙ্ক্ষিত কথাটা বললো সে কি করবে তা বুঝতে পারছেনা।
” কি হলো বলবেন?নাকি আমি চলে যাবো?”
” না না বলছি আমি।আই লাভ ইউ নাইরা।”
” আই লাভ ইউ টু।” কোন ভনিতা ছাড়ায় সোজাসুজি বলে দেয় নাইরা। ” এতটুকুই বলার ছিল আমার।এবার আপনি আপনার কাজে যেতে পারেন।আর শুনুন এই বিষয় সম্পর্কে কাউকে বলতে যাবেন না আবার।আমি না বলা পর্যন্ত ব্যপারটা যাতে সিগরেট থাকে।ভালো থাকবেন।”
নাইরা চলে যায়।অগ্নি অনেক আশা নিয়ে নাইরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু নাইরা একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাইনি।অগ্নি এতোদিন এইদিনটার অপেক্ষায় ছিল।আজ তার আশা পূরণ হয়েছে,তার তো আজ খুশি হওয়ার কথা।কিন্তু কেন যেন অগ্নি মন থেকে তেমন একটা খুশি হতে পারছেনা।কোথাও যেন তার কিছু একটা ভালো লাগছেনা।তবে অগ্নি সেদিকে ওতোটা মনোযোগ দেয়না,সে মুখে হাসি বজায় রেখে পার্কে থেকে বেরিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে,
ছাদে দাঁড়িয়ে আপন মনে বাইরে গাড়ির আসাযাওয়া দেখছে আস্থা।হুট করেই তার চোখ যায় গেটের বাইরে।রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে মাত্রই গেটের ভেতরে পা রেখেছে তাজ।নিচে তখন কিছু ছেলেদের সাথে খেলছিলো অনিক।অনিক তাজকে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে আসে।হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাজকে কিছু বলছে অনিক কিন্তু কি বলছে তা নাইরা শুনতে পাচ্ছেনা।কিছু মিনিট পর তাজ মাথা নাড়িয়ে অনিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বিল্ডিং এর ভিতরে প্রবেশ করে।
আস্থা এখনো নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে।তার মন বলছে সে আবারো কোন না কোন ভাবে তাজের দেখা পাবে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আস্থার ভাবনাই সত্যি হলো।তাজ একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে বেরিয়ে এসেছে।তারপর সেও ছোট বাচ্চাগুলোর সাথে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে।এবার আস্থা বুঝতে পারলো অনিক তাজকে আসলে কি বলছে।
আস্থা উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতার সাথে তাজকে দেখছে।কি সুন্দর ছোট বাচ্চাদের সাথে খুশি মনে খেলা করছে।কতটা মায়াময় লাগছে তাজকে।
” আপু তুমিও এসো।”
নিচে থেকে চিৎকার করে বলে অনিক।অনিকের কথা শুনে তাজ এবার উপরের দিকে তাকায়,সে ততক্ষণ আস্থাকে খেয়াল করেনি।তাজের তাকানো দেখে আস্থা একটু অস্বস্তিবোধ করে।
” কি হলো আপু আসোনা।”
” না তোরা খেল,আমি খেলবোনা।”
কিন্তু অনিক দৌড়ে উপরে চলে আসে আর আস্থাকে টেনে নিচে নামিয়ে আনে।
নিচে এসে অনিক আস্থাকে বল ধরিয়ে দেয়।আস্থার মনে অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।আস্তে করে বলটা ছুঁড়ে মারে যা তাজের কাছে পৌঁছায় না।এটাতে আস্থা আরো অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
” আপু তুমি বলও মারতে জানোনা।দাও ওটা আমাকে দাও।তাজ ভাইয়া তুমি আপুকে ব্যাটা দাওতো।”
তাজ আস্থাকে ব্যাটা দিয়ে দেয়।অনিক বল ছুঁড়ে মারে কিন্তু সেটা আস্থা মারতে পারেনা।আস্থার অবস্থা দেখে অনিক অনেক আপসোস করে।
” দাও এদিকে দাও,আমি তোমাকে শিখেয়ে দিচ্ছি।”
এরপর তাজ আস্থা শিখিয়ে দেয় কি করে ব্যাট ধরতে হয় আর খেলতে হয়।আস্থা পুরোপুরি না বুঝতে পারলেও কিছুটা সে বুঝতে পারে।এরপর আস্থা আবারো খেলা শুরু করে।দুই-তিন বার মিস হওয়ার পর অবশেষে আস্থা বল মারতে পারে।বল মারতে পারাতে আস্থার খুশি কে দেখে সে ছোট বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করে দিয়েছে।আস্থার বাচ্চাপনা দেখে নিজের অজানতেই হালকা তরে হাসে তাজ।
হুট করে অসাবধানতার কারণে বল এসে আস্থার হাতে লাগে।বলটা জোরে মারার কারণে আস্থা হাতে কিছুটা ব্যথা পায়।ব্যথায় আস্থা চোখ মুখ কুচকে ফেলে।সবাই তাড়াতাড়ি আস্থার কাছে এসে দাঁড়ায়।
” আপু তুমিও ব্যথা পেয়েছো?”
” আরে না না আমি ব্যথা পাইনি।আমি ঠিক আছি।”
” দেখি আমাকে দেখাও।”
” আরে আমি ঠিক আছি তো।আপনারা খেলুন।”
” বেশি কথা বলো তুমি।দেখি হাতটা দেখি।”
আস্থার হাতটা টেনে সামনে নিয়ে আসে তাজ।বল লাগা জায়গাটা ইতিমধ্যেই কিছুটা লাল হয়ে গিয়েছে।লাল দেখেই তাজ বুঝতে পেরে যায় আস্থা ভালোই হাতে ব্যথা পেয়েছো।তাজ অনিককে বলে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে মুভ নিয়ে আসতে।অনিকও আর দেরি না করে দৌড়ে বাসা থেকে মুভ নিয়ে আসে।অনিকের হাত থেকে মুভ নিয়ে যত্ন সহকারে আস্থার হাতে লাগিয়ে দেয় তাজ।এদিকে এসবে আস্থার কোন খবর নেই।সে একদৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
” কেন আপনি আমার এতোটা কেয়ার করেন কেন?আমি তো জানি আপনি যা করেন তা শুধু মানবিকতা থেকে করেন,একজন ভালো মানুষের দায়িত্ব পালন করেন আপনি।কিন্তু আমার মন যে তা মনে না তাজ,আমার মন যে আপনার এইসব কাজের কারণে আপনার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে।আমি কি আপনাকে নিজের করে পাবোনা?কি করিলে বলো পাইবো তোমারে প্রিয়?” মনে মনেই চিন্তা করে আস্থা।
” জ্বালা করছে?”
তাজের প্রশ্ন শুনে আস্থা নিজের ভাবনা বন্ধ করে।
” না ঠিক আছে।”
” এই নাও মুভটা ধরো।রাতে ঘুমানোর আগে আরেকবার দিয়ে দেবে মনে করে।১/২ দিনের মধ্যে হাত ঠিক হয়ে যাবে।”
” হুম।”
তাজ কাজের কথা বলে চলে যায়।তাজ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আস্থাও নিজের বাসায় চলে আসে।
কয়েকঘন্টা পর,
আজ আবারো আস্থার মা নতুন একটা আইটেম রান্না করছে আর আস্থাকে ডেকেছে সেগুলো যেন তাজের বাসায় দিয়ে আসে।এটা শুনে তো আস্থা খুব খুশি।সে খুশি মনে ট্রে-টা নিয়ে তাজদের কলিং বেল চাপ দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই তিথি এসে দরজা খুলে দেয়।তিথি আস্থাকে ভেতরে নিয়ে আসে।ট্রে-টা রান্নাঘরে রেখে এসে তিথি আস্থার পাশে বসে তার সাথে গল্প জুড়ে দেয়।কথার মাঝে আস্তে জানতে পারে তাজ তার রুমেই আছে।আস্থা তিথির চোখে ফাঁকি দিয়ে বারবার তাজের রুমে উঁকি মারছে কিন্তু পর্দা থাকার কারণে সে ভেতরে দেখতে পাচ্ছে না।
” মা আমাকে কিছু খেতে দাও,আমি বের হবো।”
হুট করে নিজের খুব কাছ থেকে তাজের আওয়াজ শুনে কেঁপে উঠে আস্থা।সে পাশ ফিরে দেখে তাজ তার থেকে দুহাত দূরেই দাঁড়িয়ে আছে।তাজকে দেখে আস্থা মাথা নিচু করে ফেলে।
” এই নে এটা খেয়ে নে আপাতত।”
” এটা আবার কোথা থেকে এলো?তুমি তো এতো তোড়জোড় করে বিশেষ দিন ছাড়া কিছু বানাও না।” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে তাজ।
” আরে আমি কেন বানাবো এটা তো ভাবী বানিয়ে পাঠিয়েছে।”
” কোন ভাবী?”
” আরে আস্থার মায়ের কথা বলছি।তুই তো জানিস ভাবী প্রতিদিন নতুন নতুন আইটেম রান্না করবে আর আমাদেরও খাওয়া জন্য পাঠাবে।”
” আন্টির হাতের রান্না কিন্তু আসলেই খুব ভালো কিন্তু প্রতিদিন পাঠানোর কি দরকার?মাসে ছ’মাসে একবার পাঠালেই তো হয়।”
” আমিও সেটাই বলি কিন্তু কে শুনে কার কথা।”
” শোন তুমিও একদিন আন্টিকে নতুন কিছু বানিয়ে দিও,দেখবে আন্টি একদম চমকে যাবে।আর আস্থা আন্টিকে বলো একটা রেস্টুরেন্টে খুলে ফেলতে।ভালো ইনকাম হবে কিন্তু।হাহাহা….”
তাজের কথা শুনে আস্থা একবার আড়াচোখে তার দিকে তাকিয়ে আবারো মাথা নিচু করে ফেলে।এরিই মধ্যে আবারো কলিং বেল বেজে উঠে।সবাই আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।সবার মনে একটাই প্রশ্ন,
” কে এসেছে?”
#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” আবির তুই এখানে!”
তাজ দরজা খুলে আবিরকে দেখে চমকে যায়।আবির তাজের বাসায় দুই বা তিন বার এসেছিলো।হঠাৎ করে আবিরকে এই সময় তাজ মোটেও আসা করেনি।
” কিরে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবি নাকি?”
” না না ভিতরে আয়।”
তাজ দরজা সামনে থেকে সরে আবিরকে ভিতরে আসার পথ করে দেয়।ভেতরে এসে আবির কিছু বলতে যাবে কিন্তু আস্থাকে দেখে সে চুপ হয়ে যায়।
” তুলি!তুমি এখানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবির।
” তুলি?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে তিথি।
” এই তুলিটা আবার কে?” তাজ প্রশ্ন করে।
” আরে ওই তো তুলি।” আস্থাকে ইঙ্গিত করে বলে আবির। ” তো তুলি তুমি এখানে কি করছো?”
” আমার বাসাও এই বিল্ডিং এ।” কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে আস্থা।
” ও আচ্ছা,তাই বলো।”
” আস্থা মা এখন যাস না,তিথি ওকে যেতে দিসনা।আরে আবির বাবা যে কেমন আছো তুমি?”
” আমি ভালো আছি আন্টি।আপনি কেমন আছেন?”
” আমিও বেশ ভালো আছি বাবা।তুমি বসো বাবা,আমি এখুনি আসছি।আস্থা তুই কিন্তু যাস না।”
তাজের মা আবারো রান্নাঘরে চলে যায়।তাজ আবিরকে বসতে বলে।আবির আস্থার পাশে থাকা সিঙ্গেল সোফাটাতে বসে পড়ে।আবির বসলে আস্থা কিছুটা সরে বসে।
” তা তুলি কেমন আছো তুমি?”
” এই তুলিটা কে ভাইয়া?”
” আরে ও তোদের বিল্ডিংই থাকে আর তুমি ওর নামই জানোনা।” কিছুটা হেসে বলে আবির।
তিথি ভ্রু-কুচকে আস্থার দিকে তাকায় তারপর চোখের ইশারায় তাজকে জিজ্ঞেস করে আবির এসব কি বলছে।তাজ চোখের ইশারায় তিথি শান্ত থাকতে বলে।
” আস্থা তুমি তিথির সাথে ভিতরে গিয়ে বসো।তিথি ওকে ভিতরে নিয়ে যা।”
” চলো আস্থা।”
তাজের কথা শুনে আস্থা হাফ ছেড়ে বাঁচে।আরেকটু হলেই তো সে অস্তিত্বতে মরেই যেতো।আস্থা তাড়াতাড়ি করে তিথির সাথে তিথির রুমে চলে আসে।
” কিরে তাজ তোরা সবাই ওকে আস্থা বলে ডাকছিস কেন?ওর আরেকটা নাম কি আস্থা?”
” না ওর একটাই নাম আর সেটা হচ্ছে আস্থা।” সোফায় বসতে বসতে বলে তাজ।
” তাহলে সেদিন যে ও আমাকে বললো ওর নাম তুলি।” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবির।
” জানিনা কিন্তু ওর নাম আস্থা।আচ্ছা তুই বস আমি আসছি।”
তাজ উঠে রান্নাঘরে চলে যায়।আবির বসে বসে এটাই চিন্তা করছে কেন আস্থা তাকে মিথ্যা কথা বলেছে।
এদিকে তিথির রুমে,
” আস্থা আবির ভাইয়া তোমাকে তুলি বলছিলো কেন?”
” আসলে সেদিন তিনা আপুর বিয়েতে উনি আমার নাম জিজ্ঞেস করেছিলো।কেন যে আমার ওনাকে নিজের নাম বলতে ইচ্ছে করেনি তাই তুলি বলেছিলাম।কিন্তু আমি তো জানতাম না উনি তোমার ভাইয়ের বন্ধু।” অস্বস্তি নিয়ে বলে আস্থা।
তিথি এদিক-ওদিক তাকিয়ে আস্তে আস্তে আস্থাকে বলে,
” শোন আস্থা তোমাকে একটা কথা বলি কাউকে বলোনা কিন্তু।”
” বলো।”
” আমারও না ওই আবির ভাইকে পছন্দ না।কিরকম যেন।অদ্ভুত ধরনের লাগে আমার।”
” আমারো ওনাকে অদ্ভুত ধরনের লেগেছে।সেদিক নিজে সেধে সেধে কথা বলছিলো।ভাগ্যিস তাজ চলে এসেছিলো,নয়তো আমার মাথা খেয়ে ফেলতো।”
” আমার ওনাকে দেখলে মনে হয় ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে টপকে পড়েছে।”
তিথির কথা শুনে আস্থা হেঁসে ফেলে।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিজের বাসায় ঢুকতে যাবে সেই সময়ই পেছন থেকে কেউ আস্থার নাম ধরে ডাকে।আস্থা পেছন ফিরে দেখে আবির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে দেখে আস্থা ভড়কে যায়।
” আমাকে সেদিন মিথ্যা কেন বলেছিলে তোমার নাম তুলি?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে আবির।আস্থা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
” কি হলো বলো?”
” আ…আমার কিছু কাজ আছে।”
এটা বলেই আস্থা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।এদিকে আবির আস্থার কাজে থতমত খেয়ে যায়।
অন্যদিকে,
ক্লাসের পড়া রেডি করছে নাইরা।হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে।ফোনটা নিয়ে নাইরা দেখে আননোন নম্বর,তাই আর সে রিসিভ করেনা।ফোন কেটে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারো বেজে উঠে।
” হ্যালো কে বলছেন?”
” আমি।”
” আমিটা কে?” বিরক্ত নিয়ে বলে নাইরা।
” আমি অগ্নি বলছি।”
” ও আচ্ছা।কেন ফোন করেছেন?আর আমার নম্বর কোথা থেকে পেয়েছেন?”
” তোমার নম্বর আমার কাছে আগে থেকেই ছিলো কিন্তু ভয়ে তোমাকে ফোন করিনি আগে।”
” ও আচ্ছা।”
” কেমন আছো?”
” বিকালেই তো দেখলেন কেমন আছি।তাহলে এখন আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?” বিরক্তি নিয়ে বলে নাইরা।
” তোমাকে কি বিরক্ত করলাম?”
অগ্নির কথা শুনে নাইরা চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
” না সেরকম কিছু না।বলুন কি বলবেন?”
” কি করছো তুমি?”
” কিছু না।”
” কাল আসবে ভার্সিটিতে?”
” হুম।”
এরপর কিছুক্ষণ কেউ আর কোন কথা বলেনা।
” আচ্ছা আমি এখন রাখছি আমার কিছু কাজ আছে।আর হ্যাঁ আমাদের মাঝে বিকেলে যে কথাগুলো হয়েছে সেগুলো যেন অন্য কেউ জানতে না পারে।”
” তুমি টেনশন করোনা আমি কাউকে কিছু বলবোনা।তু….”
অগ্নি আর কিছু বলবে তার আগেই নাইরা ফোনটা কেটে দেয়।অগ্নি ফোনের দিকে তাতে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।এদিকে ফোন কেটে দিয়ে নাইরা টেবিলের সাথে মাথাটা লাগিয়ে দেয়।তার এখন সবকিছু অসহ্য লাগছে।
পরেরদিন,
” চল না কথু বেপি।”
” না আস্থু আমি ওখানে যাবোনা।তোর যেতে হলে তুই যা।”
” আচ্ছা যেতে হবে না তোকে আমি নাইরাকে নিয়ে যাচ্ছি।নাইরা চল।”
” আরে আস্থা… ”
কিন্তু আস্থা কারো কথা শুনেনা।সে নাইরাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।
সাবধানে হেঁটে হেঁটে সামনে এগোচ্ছে নাইরা আর আস্থা।তারা সেই বিল্ডিংটাতে এসেছে যেখানে কাজ চলছে।ভার্সিটিতে আসার পর আস্থার হুট করেই ইচ্ছা জেগেছে সে তাজকে দেখবে আর আস্থা জানে তাজকে কোথায় পাওয়া যাবে।আস্থার একা যেতে ভয় লাগছিলো তাই সে জোর করে নাইরাকে নিয়ে এসেছে।
” আস্থু চল এখন।দেখ এখানে কেউ নেই,কেউ আমাদের দেখলে আস্তো রাখবেনা।”
” আরে কিছু হবেনা।”
আস্থা আগে আগে আর নাইরা তার পেছন পেছন হাঁটছে।হুট করেই নাইরা নিচে বসে পড়ে।
” আ….আস্থা।”
নাইরার কন্ঠ শুনে আস্থা তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।সে দেখে নাইরা তার পা ধরে নিচে বসে আছে।আস্থা তাড়াতাড়ি নাইরার কাছে আসে।
” নাইরু কি হয়েছে তোর?”
” আস্থা আমার পায়ে প্রচুর ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে পা মচকে গিয়েছে।”
” কি বলছিস তুই?দেখি আমি।”
আস্থা নাইরার পায়ে হাত দিলে নাইরা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে।
সেইসময় সেদিক দিয়ে নিজের কলিগের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো তাজ।নাইরার আওয়াজ শুনে তারা দুজনেই সেদিকে তাকাই।তাজ তাড়াতাড়ি তাদের দু’জনের কাছে এসে দাঁড়ায়।
” তোমরা এখানে কি করছো?আর কি হয়েছে ওর?”
” পড়ে গিয়ে পা মচকে গিয়েছে।”
” কি বলছো?যাও তাড়াতাড়ি ওকে স্টাফ রুমে নিয়ে যাও।”
নাইরা উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না বিধায় তাজ তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে।এরপর নাইরা আস্থার কাঁধে ভর করে ওখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
কিছুদূর গিয়েই তারা অগ্নির দেখা পায়।আস্থা নাইরাকে ধরে আছে দেখে অগ্নি হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে?”
” আসলে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে।”
” কি বলছো!দেখি দাও ওকে আমাকে দাও।”
” না থাক ঠিক আছে।আস্থা চল।”
আস্থা একবার অগ্নির দিকে তাকিয়ে নাইরাকে ধরে ধরে স্টাফ রুমে নিয়ে আসে।সেখানে একজন স্টাফ নাইরার পায়ে কিছু ওষুধ লাগিয়ে দেয়।
” ঠিক আছিস এখন?”
” হুম।”
” সরিরে আমার জন্য তুই আজ ব্যথা পেলি।” মাথা নিচু করে বলে আস্থা।
” আরে ধুর ব্যথা তো কত পায়,এর এটা সামান্য মোচ এসেছে আর কিছু না।এতো মন খারাপ করার কিছু নেই।কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
নাইরার কথা শুনে আস্থা হালকা করে হাসে।
আস্থার কাঁধে ভর করে বাইরে বেরিয়ে আসে নাইরা।নাইরাকে দেখে হন্তদন্ত হয়ে অগ্নি জিজ্ঞেস করে,
” কেমন লাগছে?”
” ঠিক আছি আমি।আস্থা চল ক্লাসে নয়তো স্যার বকা দেবো।”
আস্থা আর কোন কথা না বাড়িয়ে নাইরাকে নিয়ে চলে যায়।অগ্নি একদৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নাইরার এধরণের ব্যবহারে অগ্নি কষ্ট পেয়েছে।
চলবে…..
চলবে…..