কুঁড়েঘর পর্ব -০৪+৫

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ০৪ ।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ করে বেড়িয়ে পড়লো। আজ ভার্সিটিতে যাবে না। একা থাকার মতো একটা বাসা খুঁজতে হবে এই মাসের মধ্যে।
রিধিশা টুলেট দেখে দেখে কিছু বাসায় গেলো কিন্তু সবই দুই রুম আর ড্রইংরুমের ফ্ল্যাট। একটা অপরিচিত এলাকায় ঢুকে সেই বাড়ির দেয়ালে টুলেট ঝুলানো দেখতে পায়।
দ্বিতীয় তলায় গিয়ে নক করতেই এক মহিলা দরজা খুলতেই রিধিশা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে বাড়িওয়ালা কোন ফ্লোরে থাকে। মহিলা হেসে বললো
” এখানেই থাকে। ভেতরে এসুন!”

রিধিশা আলতো হেসে ভেতরে ঢোকে। মহিলা রিধিশাকে বসিয়ে তার বাসার কাজের মেয়েকে ডেকে চা দিয়ে যেতে বললো। ভেতরে থেকে একটা অর্ধ বুড়ো লোক লাঠিতে ভর দিয়ে বেরিয়ে এসে সিঙ্গেল সোফায় বসে। রিধিশা মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” আমি টুলেট দেখে এসেছিলাম।” মহিলা মাথা নেড়ে বললো
” তা তো বুঝতেই পেরেছি নাহলে অপরিচিত কারো তো আসার কথা না। আসলে সেই রুমটার জন্য ভাড়া দেবো সেটা কেউ নিতে যায় না কারণ এক রুম তো তাই। এক রুমের সাথে রান্নাঘর আর ওয়াসরুম আছে তবে এখন তো সবাই ফ্যামিলি থাকে তাই এই রুমের ভাড়াটিয়া থাকে না বেশিদিন।”

রিধিশা আলতো হেসে বললো
” আন্টি আমি একাই থাকি। গ্রাম থেকে এসেছিলাম পড়াশোনার জন্য। ফ্রেন্ডের সাথে থাকতাম তবে ফ্রেন্ড ভার্সিটির হোস্টেলে থাকে এখন তাই একা থাকার জন্য বাসা খুঁজছিলাম।”
মহিলা উৎফুল্ল গলায় বললো
” বাহ তাহলে তো ভালোই। আমার নাম সাজেদা। তা মা তোমার নাম কি?”
” আমার নাম রিধিশা। আন্টি রুমটা কি দেখতে পারবো?”
” হ্যা চলো!” রিধিশা সোফা থেকে উঠে সাজেদা বেগমের সাথে যেতে গেলো।

ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় তলারই অন্য একটা দরজায় নক করে। ভেতর থেকে একজন মহিলা এসে দরজা খুলে। রিধিশা সাজেদা বেগমের সাথে ভেতরে গেলো। একটা রুম হলেও রিধিশার জন্য যথেষ্ট বড়। রান্নাঘর আর ওয়াসরুমও দেখে নিলো। সব দেখে আবার সাজেদা বেগমের সাথে তার বাসায় আসে। রিধিশা আমতা আমতা করে বললো
” আন্টি ভাড়া কত পরবে?” সাজেদা বেগম হেসে বললো
” ভাড়া নিয়ে চিন্তা করো না। ফ্যামিলি ভাড়া ৫ হাজার টাকা তবে তুমি যদি আসো তাহলে সব মিলয়ে ৪ হাজার টাকা রাখবো কারণ এইরুমের ভাড়াটিয়া ১মাসের বেশি থাকে না। তুমি একা তাই কমিয়েই নাহয় রাখবো।”
রিধিশা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো
” ধন্যবাদ আন্টি তাহলে আমি দুই দিন পরই চলে আসবো। আপনি আমাকে আপনার নাম্বারটা দিয়ে দিন।”

রিধিশা কিছুক্ষণ বসে থেকে সাজেদা বেগমের সাথে কথাবার্তা বলে বাড়িতে ফিরে আসে। ১২টা বেজে গিয়েছে তাই রিধিশা রান্না বসিয়ে দিলো দুপুরের।
ভাবলো তীর্ণ আর তারাকে পড়িয়ে ফেলবে এখনই পড়ে মনে পড়লো ওরা এখন স্কুল থেকে আসবে মাত্র। এখনই পড়তে চাইবে না।
রিধিশা মাকে কল দেওয়ার জন্য মোবাইল নেয় কিন্তু হুট করে জোতির ভাইয়ের ফোন আসলো। রিধিশা রিসিভ দিয়ে সালাম দিয়ে বললো
” কেমন আছেন ভাইয়া?” জোয়ান গম্ভীর গলায় বললো
” ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আর থাকতে দিচ্ছিস কই তোরা দুই বান্ধবী? একজন না বলে নিজের ইচ্ছায় হোস্টেলে উঠে যাচ্ছে আরেকজন নাকি এখন একা থাকার জন্য বাসা খুঁজছে। তোদের সমস্যা কোথায় বলবি আমাকে?”

রিধিশা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো
” আসলে ভাইয়া জোতি তো নেই তাই এতোবড় বাসা দিয়ে আর কি করবো আমি তাই বলেছিলাম ছেড়ে দেবো।” জোয়ান রাগি গলায় বললো
” বাসা ছোট হোক আর বড়! এখন যদি আমি হুট করে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসি তখন যদি মা,বাবা তাড়িয়ে দেয়। আমি বউ নিয়ে কোথায় যাবো বল! ফ্ল্যাটটা থাকলে তো সেখানে এসে থাকতে পারবো নাকি?”
রিধিশা শব্দ হেসে দেয় জোয়াবের কথায়। ওপরপাশে জোয়ানও নিঃশব্দে হাসলো, বললো
” হাসিস কেনো সিরিয়াস কথা এটা। আর ভাড়া তো আমিই দেবো। তোকে এতো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। জোতিরও তো ঠিক নেই কখন এসে পড়ে হোস্টেল থেকে।”

রিধিশা নিচু স্বরে বললো
” ভাইয়া আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাইছি না। আমার একার জন্য তোমরা কেনো বাড়তি ১৫ হাজার টাকা দেবে? আমি এখন নিজের খরচ নিজে বহন করতে পারছি। তোমরা এক বছরে যা করেছো তারই ঋন চুকানোর সাধ্য হবে না আমার। এখন এসব করে আর আমাকে নিজের কাছে ছোট করো না।”
জোয়ান শক্ত গলায় বললো
” বেশি বড় হয়েছিস তোরা। নিজেরটা নিজেই বুঝতে শিখেছিস তাহলে আর আমাদের দরকার কি? যা ইচ্ছে কর।” টু টু টু শব্দ আসতেই রিধিশা মুখ ফুলিয়ে সরায় কান থেকে। দৌঁড়ে রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি নেড়েচেড়ে আবার রুমে এসে মাকে ফোন দিলো। দুইবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ হয়নি দেখে রিধিশা মন খারাপ করে।

.

” আজকে একবারও দেখলাম না রিধিশাকে। আসেনি নাকি?” বিরবির করে বলে এদিক ওদিক চোখ বুলায় নিশাদ। জোতিকে একটা মেয়ের সাথে বসে থাকতে দেখে কিন্তু রিধিশার দেখা পেলো না। আজকে চোখ জোড়া বারবার মেয়েটাকেই খুঁজে যাচ্ছে।
সূর্য নিশাদের কাছে এসে ভ্রু কুঁচকে বললো
” কিরে তুই আসার পর থেকে কাকে খুঁজে যাচ্ছিস?”
নিশাদ শান্ত গলায় বললো
” কাউকে না তো ! দেখছিলাম ভার্সিটিটা দিনদিন সুন্দর হচ্ছে শুধু।”
সূর্য অবাক হয়ে ক্যাম্পাসে চোখ বুলিয়ে নিশাদকে জিজ্ঞেস করলো
” কই রে কোনদিক দিয়ে সুন্দর হয়েছে? আমার তো চোখেই পরছে না!”

নিশাদ বিরক্ত হয়ে তাকায়। সাদি বললো
” আরে আমার তো মনে হয় নিশাদ ভাই তার নতুন শত্রুকে খুঁজছে।”
নিশাদ নাকচ করে বললো
” আমি ওই মেয়েকে কেনো খুঁজবো? আমার তো কোনো কাজ নেই রিধিশাকে দিয়ে।”
সাদি আর সূর্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে সূর্য বললো
” আমরা তো রিধিশার নামও তুললাম না। শত্রু বলাতেই বুঝে ফেলেছিস?” নিশাদ কোণা চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” ও ছাড়া আপাতত আর কোনো শত্রু আছে নাকি আমার?
.
রেহান ছুটে এগিয়ে আসে নিশাদদের দিকে। রেহান দোকানে গিয়েছিলো একটু আগেই। রেহান নিশাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো
” ভাই তোমার নেওটা পাগলা পুতুল, তোমার জরিনা, সকিনা, বাবু সোনা মিলি এসেছে।”
সূর্য আর সাদি জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।
সাদি বলে
” ভাই এখন যদি বলি তোর একটা শত্রু হয়েছে তখন রিধিশাকে আর তোর টাইট দেওয়া লাগবে না মিলিই টাইট দিয়ে দেবে।”
নিশাদ চোখ রাঙিয়ে তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললো
” তুলেও যেনো ওই মেয়ের কথা ওর কানে না যায়। আমার ব্যাপার আমি হেন্ডেল করবো। এই মেয়ে ঢুলকে ঝামেলা হবে অযথা।”
.

নিশাদের মুখটা করলার রস খাওয়ার মতো তেতো করে তাড়াহুড়ো করে জ্যাকেট টেনে, চুল ঠিক করতে করতে বাইকে বসে বাই স্টার্ট দিতে দিতে মিলি ছুটে আসে নিশাদের কাছে। এসেই বাইকে বসা অবস্থায় গায়ের সাথে লেপ্টে গেলো। নিশাদ বিরক্ত হয়ে নিজেকে মিলির থেকে ছাড়িয়ে বললো
” মিলি এসব পছন্দ না কতোবার বলবো?”

মিলি ন্যাকা স্বরে বললো
” বেবি এমন করছো কেনো শুধু তো জড়িয়েই ধরেছি। তোমাকে কতো মিস করেছিলাম জানো? তোমাকে তো ফোন দিলেও পাওয়া যায় না আর না তুমি আমাকে ফোন করো কখনো!” নিশাদ সানগ্লাস পড়ে বাউক স্টার্ট দিয়ে বললো
” মিলি এখন আমাকে যেতে হবে। আমার এক আত্মীয় হসপিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে তাকে দেখতে যাচ্ছি।”
” ঠিকাছে আমিও যাবো নিশু বেবি..”
নিশাদ মিলির কথা না শোনার ভান করে বাইক স্টার্ট
দিয়ে একটানে চলে গেলো।

মিলি মুখ ফুলিয়ে এবার সূর্যদের কাছে গেলো। তাদের জিজ্ঞেস করে
” আচ্ছা তোমরা কি জানো কালকে ট্যুরে যাওয়ার সময় নিশাদ কোন কালার শার্ট পরবে? জানলে আমাকে বলো প্লিজ আমিও মেচিং করে ড্রেস পড়বো।”
রেহান দাঁত বের করর বললো
” আমি তো জানতাম তবে তোমার মেচিং ড্রেস পড়ার
সুযোগ নেই কারণ ভার্সিটি থেকে সবাইকে টি-শার্ট দিয়েছে। তুমি টি-শার্ট টা পড়ে এসো।”

মিলি উৎফুল্ল কন্ঠে বলে
” তাহলে তো আমার আর নিশাদের মেচিং ড্রেসই হবে। ঠিকাছে আমি গিয়ে নিয়ে আসছি একটা।”
মিলি দৌঁড়ে চলে গেলো রেহান পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে দিলো কোথায় রাখা আছে সেগুলো।
সবাই হেসে দেয়। নিশাদ তো একদমই টি-শার্ট পরবে না কারণ সে ক্যাপ নিয়েছিলো।

.

সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেই রিধিশা তৈরি হয়ে ৮টার আগে বেড়িয়ে পড়লো। হেটে ভার্সিটিতে আসতে আসতে ৮টা পেড়িয়ে ৮টা ১৫ বেজে গেলো। রিধিশা ছুটে বাসের কাছে যায়। তিনটা বাস যাচ্ছে এরমধ্যে কোনটায় যেতে হবে বুঝলো না রিধিশা। রিধিশা এগিয়ে যেতে দ্বিতীয় বাসের কাছে নিশাদকে দেখে। নিশাদ ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের ভেতরে যেতে বলছে। রিধিশা মুখ বাকিয়ে এগিয়ে যায়

নিশাদের দায়িত্ব পরেছে সবাইকে ঠিক মতো বসানোর। নিশাদের রিধিশার দিকে চোখ পড়তেই আরো জোড়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে
” সারারাত ঘুমিয়েও কারো ঘুম শেষ হয় না। ৮টা পর্যন্ত ঘুমালে আর ট্যুরে যাওয়ার কি দরকার? স্বপ্নেই ট্যুরে গিয়ে আসলে হয়। তাড়াতাড়ি উঠো সবাই! বাস এখনই ছেড়ে দেবো পরে কেউ কিছু বলতে পারবে না। ৮টায় আসতে বলা হয়েছে এখনও অর্ধেক বাস খালি।”
রিধিশা বাসে উঠে দেখে পুরো বাসই ভরা।
” ছেলেটাকে কানা নাকি? ভরা বাসকে বলছে খাকি বাস!”

রিধিশা ভেতরে যেতেই জোতিকে দেখলো রেহানের সাথে বসে রয়েছে। রিধিশা চোখ কপালে তুলে বললো
” তুই কি এখানে বসবি?” জোতি আমতা আমতা করতে থাকে। রিধিশা দুজনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” থাক বুঝেছি।” রিধিশা ভেতরে গিয়ে অন্য একটা খালি সিটে বসে পড়ে। রিধিশা জানলার পাশে বসে জানলা খুলে দিলো।

নিশাদ বাসে উঠে কোনো সিট খালি না পেয়ে রিধিশার পাশে দাঁড়িয়ে জ্যাকেট টানতে টানতে থাকে
” এই মেয়ের পাশের সিটই খালি থাকতে হলো? ধুর!”
নিশাদ ঠাস করে বসে পড়লো।
রিধিশা নিশাদকে দেখে চমকে বললো
” আপনি এখানে কেনো?”
নিশাদ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
” আমি কোথায় বসবো তুমি বলবে নাকি? সিট খালি নেই তাই বসেছি নাহলে। কোনো বেয়াদব মেয়ের সাথে বসি না আমি।”

রিধিশা দাঁড়িয়ে বললো
” আপনার সাথে বসবো না আমি।”
” তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাও। আমারও তোমার পাশে বসে থেকে পুরো জার্নি নষ্ট করার ইচ্ছে নেই।” রিধিশা কোথাও খালি সিট না দেখে বসে পড়তে হলো।
নিশাদ খুঁচিয়ে বললো
” কি হলো যাচ্ছো না কেনো? আমার সাথে বসার ইচ্ছে জাগলো নাকি আবার?” রিধিশা জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশাদি কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যে তিনিটা বাস একে একে বেরিয়ে পড়লো।

চলবে……..#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ০৫ ।

নিশাদের খুব পছন্দের একটা গান শুনতে শুনতে রিধিশার দিকে চোখ পড়লো তার।
সাদা ড্রেস পড়েছে কানে এক জোড়া সিলভার ঝুমকা। চুল গুলো ঝুটি করে ভার্সিটি থেকে দেওয়া ক্যাপ পড়া। সব রঙ বেরঙ্গের মানুষের মধ্যে রিধিশাকে অন্যরকম মনে হলো নিশাদের কাছে।
সাদা মাটার মধ্যে অসাধারণ। বাসের বাইরের বাতাসে রিধিশার বাধা চুল গুলো উড়ছে হালকা হালকা।
নিশাদ চোখ সরিয়ে নিলো রিধিশার থেকে।
একঘন্টার মতো হয়েছে বসেই আছে। কেমন যেনো বোরিং লাগছে তার কাছে।

রিধিশার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে হলো নিশাদের।
নিশাদ রিধিশাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো
” কি যে দিন কাল এলো! যার তার পাশে বসায় পুরো জার্নিটা খারাপ গেলো এবার। এরকম মানুষ কোথা থেকে আসে বুঝিনা”
রিধিশা রেগে নিশাদের দিকে তাকালো।
” এই আমি এখন আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে, আমার পেছনে লাগছেন?”

নিশাদ অবুঝ ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমি তোমার পেছনে লাগলাম? আমি তো তোমার পাশেই বসে আছি আর তোমার সাথে কথা বলারই কোনো ইচ্ছে নেই আমার ঠিকাছে? আমার তো মনে হচ্ছে তুমিই কথা বলতে চাইছো!”
রিধিশা অবাক হয়ে বললো
” আমি কথা বলতে চাইছি? আপনার মতো ছেলের সাথে কথা বলার থেকে ভালো গলায় ফাসি দেই।”

নিশাদ হেসে বললো
” তো দাও না কেনো ফাসি? আমিও শান্তি পাই। তোমাকে দেখলে ইচ্ছে করে পানিতে চুবিয়ে দেই।”
রিধিশা তাচ্ছিল্য স্বরে বললো
” আপনার তো সবাইকেই পানিতে চুবাতে ইচ্ছে করে।”

নিশাদ আবারও কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। কখন যে পৌঁছবে গন্তব্যে! জ্যামের জন্যে কিছুক্ষণ পর বাস থেমে যায়। রিধিশা বিরক্ত হলো জ্যামের জন্য। এমনিতেই বাসের বিরক্তির গন্ধের জন্য জার্নি বিরক্ত লাগে তার কাছে তার উপর জ্যাম! রিধিশা ডানে, বায়ে দু-দিকেই চোখ ঘুরিয়ে দেখলো কি কি দেখা যায়।
নিশাদ মুখে মাক্স পড়ে বসে আছে। সাথে অসহ্য এক গরম লাগছে নিশাদের।

ধীরেধীরে বাস এগোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জ্যাম সরলে বাস ছাড়ল। রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকালো আবারও। জোতির উপর বিরক্তও লাগলো। বান্ধবীকে রেখে অপরিচিত ছেলের সাথে বসে রয়েছে। একটু খোঁজ নিলো না মেয়েটা!

.

বাসের ঝাঁকিতে শান্ত হয়ে বসা যাচ্ছে না। শক্ত হয়ে বসে থাকতেই চাইলেও সামনের দিকে ঝুকে যাচ্ছে।
বাসের ঝাঁকিতে নিশাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ বড় বড় করে নিশাদ কাধ ঝাঁকিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বারবার নিশাদের দিকে তাকাচ্ছে।
নিশাদ কিছুক্ষণ খেয়াল করে বললো
” কি এভাবে কি দেখো তুমি? আমার মুখে কি স্টিকার লাগানো?”

রিধিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
” বাস কি থামবে সামনে বা পড়ে?”
নিশাদ মেকি হেসে বললো
” না ম্যাম কারো জন্য এই বাস থামবে না।” রিধিশা মুখ বাকালো। পানি পিপাসার সাথে খুধাও পেয়েছে। খাবার না খেলেও পানিটা আবশ্যক তার জন্য।
নিশাদ রিধিশার শুকনো মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি? এভাবে মুখ শুকিয়ে বসে আছো কেনো? কিছু দরকার?”

“দরকার তবে সেটা আপনার ভাবতে হবে না। বাস থামাতে পারলে এক্তু থামাতে বলুন!”
নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“তোমার মতো মেয়েদেরই উপকার করতে নেই। বেয়াদব মেয়ে! না বললে বাস থামানোই হবে না।”
রিধিশা রেগে বললো
” পানি চাই, পানি। আমি পানি আনতে ভুলে গিয়েছি। এবার দয়া করে থামান!”

” তো এটা বললে কি তোমার পানি খেয়ে ফেলতাম নাকি আমি? যত্তসব Uncultured মেয়ে একটা পানির বোতল আনতে ভুলে যায় আবার ভাবের ভার কমেনা তাদের।”
রিধিশা রেগে বললো
” আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন! আপনাকে আমি পানি কিনে দিতে বলিনি।”

নিশাদ রিধিশার কথায় পাত্তা দিলো না। উঠে সামনে গেলো। রিধিশা ভাবলো বাস থামাতে গিয়েছে কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। নিশাদ দুটো ছোট পানির বোতল নিয়ে আসলো। রিধিশাকে বললো
” এই যে বোতলটা দিচ্ছি! এটা কিন্তু ভার্সিটি থেকে দেওয়া। তোমার জন্য আনিয়ে রেঝেছিলাম আমি, এসব ভুলেও ভাববে না। আমি আমার শত্রুদের হেল্প করি না কখনো।”
রিধিশা বিরক্ত হয়ে তাকালো। নিশাদ নিজের সিটে রাখলো একটা আরেকটা রিধিশার কাছে এগিয়ে দেয়। রিধিশা কেড়ে নেয় বোতলটা।
নিশাদ তার জ্যাকেট ঠিক করে সিটে বসে বিড়বিড় করে বললো
” মনে হচ্ছে সব পানি খেয়ে ফেলছি আমি!”
.

রিধিশা ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। একটু আগেও একটা ঝাঁকিতে মাথায় বারি খেয়েছে জানলার সাথে কিন্তু তাতে কি? ঘুমের ঘোর তো একদমই ছাড়ছে না রিধিশাকে।
আরেকবার বারি খেতেই নিশাদের রিধিশার দিকে চোখ পড়লো। রিধিশার মাথাটা জানলার কাছ থেকে সরিয়ে সোজা করে রাখতেই রিধিশার মাথাটা নিশাদের কাধে পড়লো।
” এখন পর্যন্ত ইচ্ছে করে কাউকে হাত ধরার সুযোগ দিলাম না আর মেয়েটা শত্রু হয়েও কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গার আগেই মাথা সরিয়ে ফেলবো নাহলে ভাব নিয়ে বলবে আমি ওর ঘুমের সুযোগ নিয়েছি।”

____________

দুঘণ্টা পর তিনটে বাস থামলো।
রাঙ্গামাটি এসে পড়েছে সবাই। নিশাদ বাইরে বেরিয়ে একে একে সবাইকে নামতে বলছে। রিধিশা বাস থেকে নেমে একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো। চারপাশে থাকা পাহাড় গুলো দেখে মনে মনে প্রজাপতি উড়তে শুরু করেছে।

রিধিশার পাহাড় খুবই পছন্দের। রিধিশা কাছ থেকে সাগর বা পানি দেখলে খুব ভয় পায় তাই তার মা, বাবা আগে সব সময় পাহাড়ে ঘুরতে নিয়ে যেতো।
রিধিশা মনে মনে হাসলো এখন সব আগের স্মৃতি হয়ে রয়েছে। দেড় বছর হলো এখন আর অহরহ পাহাড় দেখা হয় না।

” কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তুই?”
রিধিশা জোতির ধাক্কায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
রিধিধা ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই এতোক্ষণ পর কোথা থেকে আসলি? তোর ওই পার্টনার কোথায়?”
” তুই রাগ করেছিস রিধি! আরে সে বসেছিলো তো তাই আর না করতে পারিনি। যাক বাদদে, তোকে কিন্তু আজকে খুবই সুন্দর লাগছে। ড্রেসটা কবে কিনেছিস? আমাকে দেখাসনি তো!”

রিধিশা জোতির সাথে হাটতে হাটতে বললো
” পরীক্ষা শেষে ঢাকা আসার আগে আম্মু অনেক কিছু কিনে দিয়েছিলো। পড়া হয়নি তাই দেখানো হয়নি তোকে।”
” হ্যা তাই তো! তুই যে এসেছিলি তুই কতো বড় এক ব্যাগ নিয়ে এসেছিলি আমি পড়ে জিজ্ঞেস করবো ভেবে একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক তোকে দারুণ লাগছে।”

” এখানে দাঁড়িয়ে কি গল্প করতে এসেছো? সবার সাথে না থেকে হারিয়ে গেলে কি তোমাদের খোঁজার জন্য সোর্স লাগাবো নাকি?” নিশাদের কথায় রিধিশা রেগে জোতিকে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে সবার কাছে চলে গেলো।
নিশাদ চারপাশ দেখতে দেখতে একা একা হাটছিলো শান্তিতে। হঠাৎ কোথা থেকে মিলি ছুটে আসলো।

” নিশু! তোমাকে আমি এসে খুঁজেই পেলাম না কোথায় ছিলে তুমি? জানো কতো প্ল্যান করেছিলাম আমি। আমি তুমি পাশাপাশি বিসে পুরো জার্নি ফিল করবো আরো কতো কি, কিন্তু তোমাকেই পেলাম না।”
নিশাদ জোরপূর্বক হেসে বললো
” আমিও তোমাকে দেখিনি কোথায় যে ছিলে তুমি!”
মিলি আহ্লাদী স্বরে বললো
” আরে নিশু কষ্ট পেয়ো না যাওয়ার সময় আমরা একসাথেই যাবো।”

নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে উপরে মুচকি হাসলো। এই ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই এই মেয়ে চিপকে আছে নিশাদের সাথে। কতোশত চেষ্টা করেও এই মেয়েকে দূড়ে সরাতে পারেনি। নিশাদ মিলির উপর বিরক্ত ছাড়া আর কিছুই না। মিলি আহ্লাদীপনা ইগনোর করার চেষ্টা করে সব সময়। মিলি বাস ছাড়া এক মিনিট আগে এসেছিলো দৌঁড়ে দৌঁড়ে। মিলিকে দেখেই নিশাদ বাসে উঠেছিলো তাড়াতাড়ি।

সবাই আগে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। খাওয়া দাওয়া করতে থাকে সবাই সবার মতো। কিন্তু নিশাদ শান্তিমতো খেতে পারছে না। তার সব ছেলে বন্ধুদের মাঝেও মিলি নিশাদের পাশে বসে একবার ছবি তুলছে তো খাচ্ছে। নিশাদ ভেবে পাচ্ছে একে সরাবে কিভাবে?
নিশাদ রেহানকে ইশারা করে অনেকবার কিন্তু রেহানও বুঝতে পারেনি প্রথমে। সূর্য ফিসফিস করে বলার পর বুঝতে পারে।
” আরে মিলি আমি আসার সময় দেখেছিলাম রেস্টুরেন্টের বা পাশে একটা খুব সুন্দর জায়গা আছে। এখানে তো অনেক ছবি তুললে তাহলে এখন সেখানে গিয়েও ছবি তুলে এসো! আমাদের তো পরে যাওয়া হবে না সেখানে তাই বললাম আরকি।”
রেহানের কথায় মিলি খুশি হয়ে তার ফ্রেন্ডদের নিয়ে বেরিয়ে গেলো লাফিয়ে লাফিয়ে।

নিশাদ সস্তির নিশ্বাস ফেলে বন্ধুদের সাথে আনন্দে মেতে উঠে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here