কুঁড়েঘর পর্ব -১২+১৩

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১২ ।

শপিং শেষ করে তিনজন রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করতে চলে যায়। নিশাদ বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
জোয়ান তিনজনের খাবার অর্ডার করে। রিধিশা জোয়ানকে বললো
” ভাইয়া থাকবে কোথায় ?”
” আরে এক হোটেলে থাকবো দুদিন। একে তো প্রমোশন হয়েছে তার সাথে সাথেই কাজ দিয়ে দিয়েছে।”

জোতি আর রিধিশা একে অপরের দিকে তাকায়। জোতি অবাক হয়ে বললো
” তোমার প্রমোশন হয়েছে? আমাদের জানালে না?”
জোয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো
” না জানালে জানলি কি করে? এখনই তো জানালাম।” রিধিশা বলে উঠে
” আচ্ছা বলো কবে প্রমোশন হয়েছে।” জোয়ান হেসে বললো
” গতকালই অফিসে যেতেই বস সবার সামনে প্রমোশন এর কথা জানালো। আর ঢাকায় কিছু কাজও সপে দিলো। কালকে থেকে কাজ শুরু তাই আজকে তোদের সাথে দেখা করতে চলে এলাম।”

জোতি, রিধিশা, জোয়ান কিছুক্ষণ গল্প করে কিছুক্ষণ। খাবার আসতেই তিনজন খাওয়া শুরু করে। জোতি সবসময়ই ভাইয়ের নেওটা বলা যায়। ভাইয়া বলতেই পাগল সে। খাবার আসতেই ভাইয়ের কাছে বসে আবদার করে খাইয়ে দিতে। জোয়ান মুচকি হেসে জোতিকে খাইয়ে দিতে থাকে।
দুজনকে দেখে রিধিশা আলতো হাসলো। বাড়ির কথা মনে পড়তেই মাথা নিচু করে খেতে থাকে। বাড়িতে আগে মা নাহয় বাবা এভাবে খাইয়ে দিতো তাকে।

ডিনার শেষে তিনজন বেরিয়ে পরে। জোয়ান চলে যাবে এখন তাই জোতি কেঁদে দিয়েছে। জোয়ান জোতি আর রিধিশাকে আইসক্রিম, চকলেট সহ অনেক কিছু কিনে দেয় তাও জোতির কান্না থামে না। জোতি জোয়ানের সাথে চলে যেতে চায় দেখে রিধিশা হাসতে থাকে। জোয়ান জোতিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কান্না থামায়। চলে যাওয়ার আগে রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” বারবার বাড়ির কথা মনে করে কষ্ট পাস না। শক্ত হয়ে যখন দাঁড়িয়েছিস বাড়ির কথা মনে পড়ে ভেঙ্গে পরিস না, ভালো থাকিস।” রিধিশা শুধু জোয়ানের কথা গুলো নিঃশব্দে শুনে যায়। জোয়ানের চাহনি আজকে অন্যরকম ছিলো। যদিও আগে এতো খেয়াল করতো না কিন্তু অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় আজকে কিছুটা খেয়াল করেছে। হয়তো প্রথম থেকেই সেই চাহনি ছিলো কিন্তু আগে কখনো খেয়াল করেনি রিধিশা।
জোতি আর রিধিশা রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
.

নিশাদ বাসায় ফিরতেই বাকি তিনজন চেপে ধরলো। কোথায় ছিলো এই ২ঘন্টা? তাদের আসছি বলেই উধাও হয়ে গিয়েছে। মোবাইলও সাইলেন্ট করে রেখেছে। নিশাদের মাথায় আসলো না কি বলবে। তখন মাথায় আসলো আসার পথে ভার্সিটি সাজান্তে দেখেছে তাই বললো
” কালকের নবীনন বরণের জন্য ভার্সিটি কেমন করে সাজিয়েছে সেটাই দেখতে গিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালোই সাজাচ্ছে।”
সাদি ভ্রু কুঁচকে বললো
” মজা করিস? এতো রাতে ভার্সিটি খোলা রাখবে তোর জন্য? ভার্সিটি তো বিকেলেই হয়তো সাজিয়ে রেখে গিয়েছে।”

নিশাদ রুমে যেতে যেতে বললো
” ফুল দিয়ে সাজালে তো এখনই সাজাবে। বিকেলে সাজালে তো মরেই যাবে। এখনই সাজাচ্ছে গিয়ে দেখে আয়।” সূর্য তাগাদা দিয়ে বললো
” চল তো দেখে আসি কেমন সাজিয়েছে। নিশাদ ব্রো, যাওয়ার আগে আমাদের বললো কি হতো একসাথে দেখে আসতাম।”
” আমি তো হাটতে হাটতে চলে গিয়েছে। আগে থেকে প্ল্যান থাকলে কি আমি একা যাই কখনো তোদের ছেড়ে?” সূর্য মাথা নেড়ে না জানালো।

তিনজনকে যেতে দেখে নিশাদ বললো
” তোরা যখন যাচ্ছিস আমিও যাই তোদের সাথে!”
তিনজনই সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদের দিকে। নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” কি এভাবে কি দেখিস?”
” তুই সত্যি ভার্সিটিতে গিয়েছিস তো নাকি মিথ্যা বলছিস?” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” আমি মিথ্যা বলবো তোদের? বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখবিই তো এখন। একা ভালো লাগেনি তাই তোদের সাথে আবার যেতে চেয়েছি। আমি কি না গেলে মরে যাবো নাকি? যা তোরাই যা।”

নিশাদ রাগ দেখিয়ে রুমে চলে যেতে নেয় সূর্য নিশাদকে আটকে বললো
” আচ্ছা, সরি ভাই। চল, তুই না গেলে আসল মজাই পাবো না।” সূর্যরা নিশাদকে টেনে নিয়ে গেলো।
রাস্ততায় হাটতে হাটতে চারজন হাসি মজা করছে।
নিশাদ ভাবছে কি করে ওই ছেলের সম্পর্কে জানা যাবে। রেহানের থেকে হয়তো জানতে পারবে কোনোভাবে।
নিশাদ সুযোগ পেয়ে রেহানকে জিজ্ঞেস করলো
” আজকে আসার সময় জোতিকে দেখলাম একটা ছেলের সাথে ছিলো সাথে রিধিশাকেও দেখলাম। তোদের কি ব্রেকাপ হয়েছে? আমাদের জানালি না কিছু।”

রেহান চোখ বড় বড় করে বললো
” আমার ব্রেকাপ হবে কেনো? জানিস তুই জোতিকে কত্তো ভালোবাসি?”
” তো ওই ছেলেটা কে ছিলো? চিনিস নাকি?”
রেহান মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, জানিই তো। জোতি আমাকে বলেছিলো নবীন বরণের জন্য শাড়ি কিনতে যাবে। ওর ভাইও আজকে আসবে ঢাকা। জোতির ভাই হয়তো ছেলেটা।”
” ওও তাহলে ভুল ভাবছিলাম।”
নিশাদ নিজের ভুলের জন্য হেসে দিলো। সূর্যদের সাথে ভার্সিটিতে গেলো।

★★

জোতির ধাক্কাধাক্কিতে রিধিশার সকাল ৬টা বাজেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। জোতি তাড়াহুড়া শুরু করে তৈরি হওয়ার জন্য। রিধিশা জোতির উদ্দেশ্যে বললো
” আস্তে ধীরে কর বাবা। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাচ্ছে না তোর জন্য। মাত্র সকালের আলো ফুটেছে মাত্র।”
জোতি মাথা নেড়ে বললো
“তোর কি হয়েছে। তৈরি হতে হবে না? পরে দেড়ি হয়ে গেলে তো সমস্যা।”
রিধিশা বিরক্ত ভঙ্গিতে বসে থাকে। জোতি ফ্রেশ হয়ে এসে রিধিশাকে টেনেটুনে ওয়াসরুমে পাঠালো।

শাড়ি পড়তে গিয়ে দুজনকে বিপাকে পড়লো। দুজনের কেউই শাড়ি পড়তে পারে না। রিধিশা কখনো পরেই নি আর জোতি শাড়ি পড়লেও তাকে তার মা পড়িয়ে দিয়েছে। জোতি অর্ধেক শাড়ি পেঁচিয়ে বললো
” এখন কি হবে? ইউটিউব দেখেও তো পারছি না।”
রিধিশা সাজেদা বেগমকে ডেকে আনার কথা বললো।
রিধিশা সাজেদা বেগম আর তার ছেলের বউ কে নিয়ে আসে।

দুজন মিলে রিধিশা আর জোতিকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। সাজেদা বেগমের ছেলের বউ হেনা রিধিশাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে
” বাহ! রিধিশা তোমার শাড়িটা বেশ সুন্দর। তোমাকে দারুণ মানিয়েছে।” রিধিশা আলতো হেসে মনে মনে বললো
” পুরো দু হাজার টাকার শাড়ি। মনে হচ্ছে শরীরের একটা অংশ কেটে কিনেছি। বাড়িতে হাজারটা ড্রেস কিনলেও গায়ে লাগতো না আর এখন একটা কিনতেই কলিজা ছিরে যায় আমার। কি দিন এলো!”

জোতি আর রিধিশা শাড়ি পড়ে সুন্দর করে তৈরি হলো। জোতি তার পছন্দ মতো মেকাপ করতে থাকে। রিধিশা এক জোড়া কানের দুল পড়ে চুল ছেড়ে রাখে।
রিধিশা সাজার প্রয়োজন মনে করলো না। জোতি রিধিশাকে দেখে বললো
” তুই সাজবি না? একটু সাজ।” রিধিশা নাকচ করে দেয়। জোতি তাও টেনে টুনে বসিয়ে বললো
” কিছু না দিলেও লিপস্টিক দিতেই হবে। নাহলে মরা মরা লাগবে।” জোতি রিধিশাকে জোড় করে লিপস্টিক দিয়ে দেয়
” যা, চোখে আইলাইনার দিলাম না। তোর চোখ এমনি তেই সুন্দর।”

নিশাদ, রেহান, সূর্য, সাদি চারজন একসাথে সাদা পাঞ্জাবী পড়েছে। দুই বাইক নিয়ে চারজন ভার্সিটিতে ঢুকলো। সবাই হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশাদের ক্লাসমিট তানিম এগিয়ে এসে বলে
” নিশাদ ব্রো! দারুণ লাগছে আজকে তোমাকে।”
নিশাদ হেসে ধন্যবাদ জানায়।
একটা ছেলেকে দিয়ে ম্যাম নিশাদ’দের ডেকে পাঠায়। নিশাদকে দেখে বললো
” নিশাদ ফার্স্ট ইয়ারের সব ছেলে মেয়েদেরকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানাবে। আর প্রিন্সিপ্যাল স্যার আসার সময়ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। সব কাজ সুন্দর ভাবে করার দায়িত্ব তোমার।”
” ওকে, ম্যাম।”

নিশাদ রেহানদের সাথে গিয়ে দেখে সব ফুল ইতিমধ্যে আনা হয়ে গিয়েছে।
নিশাদ সূর্যকে বললো
” বাকি ছেলে মেয়েরও বলে দে সবাইকে স্টেজের কাছা কাছি থাকতে আমরা ফুল নিয়ে আসছি।” সূর্য চলে যায়।

একে একে সবাই আসা শুরু করে। নিউ স্টুডেন্টদের প্রত্যেককে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম দিতে থাকে। নিশাদ আর তানিম সব ছেলেদেরকে ফুল দিচ্ছে আর রেহান আর একটা মেয়ে, মেয়েদেরকে ফুল দিচ্ছে। আর কোনো ছেলে মেয়েকে পাওয়া যায়নি। মেয়েরা কেউ গেটের এসব করবে না বলে দিয়েছে। আর ছেলেরা অন্যেন্য কাজে রয়েছে তাই তাদেরই করতে হচ্ছে।
নিশাদ ফুল দিতে দিতে সামনে তাকাতেই নিশাদের চোখ আটকে যায় রিধিশার দিকে।

লেভেন্ডার কালার শাড়িতে রিধিশার গায়ের উজ্জ্বল শ্যামলা রঙটা যেনো আরো জ্বলজ্বল করছে। নিশাদ হা করে তাকিয়ে থাকে।
পাশ থেকে তানিম নিশাদকে খোঁচা দিয়ে বললো
” নিশাদ ব্রো! ফুল দিচ্ছো না কেনো?”
নিশাদের কানেই ঢুকলো না তানিমের কথা। নিশাদ এক দৃষ্টিতে রিধিশার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিধিশা দূর থেকেই নিশাদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ সরিয়ে নেয়। জোতি রিধিশাকে নিয়ে রেহানের কাছে যেতেই রেহান মুচকি হেসে জোতিকে ফুল দিলো। রিধিশাকেও দিতে যাবে তখন নিশাদক এসে বললো
” তোরা ওইদিকে যা তো। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে বোর হয়ে গিয়েছি।” রেহান মাথা নেড়ে মেয়েটাকে নিয়ে সেখানে গেলো।
নিশাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে রিধিশাকে দেখতে দেখতে ফুল দিলো। তানিম আরেক মেয়েকে ফুল দিচ্ছিলো, রিধিশা তানিমের হাত থেকে ফুল নিয়ে বললো
” নিয়েছি আমি আর লাগবে না।” তানিম বোকার মতো রিধিশার দিকে তাকালো।

নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” ও কি তোমাকে ফুল দিয়েছে? আমি দিয়েছি আমারটা নেবে তুমি। বেয়াদবের মতো আরেক জনের টা কেড়ে নিচ্ছো কেনো?” নিশাদ আবার রিধিশার হাত থেকে ফুলটা কেড়ে নিয়ে তানিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের ফুলটা রিধিশার হাতে দিয়ে বললো
” যাও এখন, দেখছো না মানুষ আসছে? তাড়াতাড়ি সরো!”
তানিম এবার বোকার মতো নিশাদের দিকে তাকায়।

রিধিশা নাক ফুলিয়ে চলে গেলো জোতির হাত ধরে।
জোতি রিধিশাকে বললো
” কিরে তুই! সব সময় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করিস!”
রিধিশা চোখ বড় বড় করে বললো
” কি! আমি ঝগড়া করি? তুই দেখলি না মাত্রই আমার সাথে কেমন করলো!”
” তা তো করবেই। ভাইয়া তোকে ফুল দিয়েছে তুই সেটা না নিয়ে অন্যজনের থেকে নিয়েছিস কেনো?”
রিধিশা মুখ ফুলিয়ে বললো
” হ্যা, সব দোষ আমার।”

চলবে…..#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১৩ ।

রিধিশা আর জোতি ক্যাম্পাসের ডেকোরেশন দেখতে থাকে ঘুরে ঘুরে। জোতি খুশি হয়ে বললো
” কি দারুণ সাজিয়েছে রে রিধি!”
জোতি হাতে থাকা ফুল নিয়ে বললো
” আমার কয়েক ছবি তুলে দে।” রিধিশা জোতিকে ছবি তুলে দিতে থাকে।

দূড় থেকে নিশাদ রিধিশাকেই দেখে যাচ্ছে। আর কোনোদিকে চোখ যাচ্ছে না তার। যেদিকেই তাকাচ্ছে ঘুরে ফিরে রিধিশার উপরই পরছে।
পাশ থেকে রেহান নিশাদকে ধাক্কা দিয়ে বললো
” কিরে ভাই তোর ভাবসাব ভালো ঠেকতেছে না আমার কাছে। বারবার ওইদিকে কই তাকাস? ওইদিকে তো জোতি আর রিধিশাকে দেখা যায়।”
নিশাদ চোখ সরিয়ে বললো
” আমি ওইদিকে তাকাবো কেনো। আমি তো ডেকোরেশন দেখি।” রেহান খুঁচিয়ে বললো
” হ্যা, দেখতেছি। কালকে থেকে তোর ডেকোরেশন দেখা আর শেষ হয় না।” নিশাদ রেহানের মুখ বন্ধ করতে সেখান থেকে চলে গেলো।
.
নবীন বরণের অনুষ্ঠান শুরু হয় কিছুক্ষণের মধ্যে।
একে একে সবাই চেয়ারে বসে পড়ে। জোতি দ্বিতীয় সারিতে এখনও খালি দেখেই রিধিশাকে নিয়ে বসে পড়লো। রেহান এসে জোতির পাশে বসে আর নিশাদ গিয়ে রিধিশার অপর পাশে বসে পড়ে। রিধিশা ভ্রু কুঁচকে একবার নিশাদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামনের সারিতে প্রিন্সিপ্যাল স্যাররা সহ অনেক টিচার এসে বসছে একে একে তাই বলতে পারলো না কিছু।
.
সূর্য নিশাদকে বলে উঠলো
” নিশাদ তোমার পাগলা প্রেমিকা কোথায়?” নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” পার্লারে গিয়েছিলো সাজতে।” নিশাদের কথায় সূর্যদের সবার হাসির রোল পড়লো। পাগলা প্রেমিকা শুনে রিধিশা বুঝতে পারলো মিলির কথার বলছে তাই চোখ মুখ শক্ত করে রাখে।

জোতিও ফিকফিক করে হেসে বলে উঠে
” বিয়ে বাড়িতে আসবে নাকি? পার্লারে সাজছে!”
সাদি হেসে বললো
” তাই মনে হয়। মিলি আজকে কেমন সাজ দিবে ওই জানে। হরর সাজ না দিলেই হয়।” সবাই হাসিমজা করতে থাকে।
কিন্তু নিশাদের দৃষ্টি রিধিশার দিকেই। রিধিশা এক মনে সামনে তাকিয়ে আছে রোবটের কতো মাঝে মধ্যে জোতির সাথে কথা বলছে। নিশাদের দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখছেও না।

তানিম পানি খেতে খেতে গেটের দিকে চোখ পড়তেই পানি নাকে মুখে উঠে কাশতে থাকে বেচারা। সাদি উঠে তানিমকে ধরে। সাদিরও গেটের দিকে চোখ পড়তেই বলে উঠে
” নিশাদ! তোর ক্যাটরিনা কাইফ এসেছে।”
নিশাদ চমকে চোখ বড় বড় করে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে মিলি এসেছে। মিলিকে দেখে সবাই হা করে দেখে যাচ্ছে তাকে।
স্লিভলেস ব্লাউজ, পাতলা একটা শাড়ি এমনভাবে পড়েছে যে শরীরে কাপড় আছে কিনা বোঝা মুশকিল।
.
নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। এসব সাজ তার কাছে অশ্লীলতার সাজ মনে হয়। মিলি এসেই সূর্যকে উঠিয়ে দেবে তাই সূর্য আগেই উঠে দাঁড়ায়। মিলি এসে নিশাদের পাশে বসে পড়ে গা ঘেঁষে। মিলি হেসে বললো
” নিশাদ আমাকে কেমন লাগছে?”
নিশাদ শুনেও না শোনার ভান করে পাশে রিধিশার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। মিলি আরেকবার জিজ্ঞেস করলো একই কথা। নিশাদ বিরক্ত লুকিয়ে বললো
” ভালো।”

মিলি মুখ কালো করে বললো
” শুধু ভালো? যানো আমি তোমার জন্য সেই সকাল থেকে পার্লারে বসে সেজে এসেছি। এখনও কিছু খাইনি আমি।”
রেহান বললো
” নিশাদের মাথাই তো খাচ্ছো, এটা খেয়ে পেট ভরছে না তোমার?” রেহানের কথা জোতি, রিধিশা শুনতে পেয়ে হেসে দেয়। নিশাদও শুনলো তবে রিয়েক্ট করলো না মিলির জন্য। মিলির কানে হালকা হাসির শব্দ আসতেই মিলি শান্তর পাশে তাকায়। রিধিশাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।
.
রিধিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” এই মেয়ে তুমি নিশাদের পাশে কি করছো?”
রিধিশা ভ্রু কুঁচকে একবার নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললো
” কেনো দেখছেন না বসে আছি?”
রিধিশার খাপছাড়া কথা শুনে মিলি রেগে গেলো। রেগে বললো
” কোনো ম্যানারস নেই তোমার? সেইদিন এতো কিছু বলার পরও এখানে ছ্যাঁচড়ার মতো নিশাদের পাশেই বসে আছো?”
নিশাদ মিলিকে ধমকে বলে উঠে
” মিলি আর একটাও বাজে কথা বললে খারাপ হয়ে যাবে। তোমার সমস্যা কোথায় ও এখানে বসলে?”
নিশাদের ধমক শুনে অনেকেই তাকায় ওদের দিকে।
মিলি চুপ হয়ে যায়।

নিশাদ সেখান থেকে চলে যায় রেগে। মিলি রেগে রিধিশার হাত চেপে বাইরে নিয়ে আসে। জোতি, রেহানরাও মিলির পেছন পেছন আসলো। সূর্য ঝামেলা হবে বুঝতে পেরে নিশাদকে খুঁজতে যায়।
মিলি রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” তোমার মতো মেয়ে আমি একটাও দেখিনি। সেইদিন এতো কথা শোনানোর পরও আজকে নিশাদের পাশে বসে ছিলে, লজ্জা বলতে কিছু আছে? নাকি নিজের ছ্যাঁচড়ার পরিচয়টা সবাইকে দেখাতে চাও?”

রিধিশা রেগে বললো
” আমাকে ছ্যাঁচড়া বলার আগে একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমি কি অন্ধ নাকি? আপনি নিজেই তো ছ্যাঁচড়ার মতো নিশাদের গা ঘেঁষে ঘুরে বেড়ান। উনি তো আপনাকে দেখলেই চোখ ঘুরিয়ে নেয়। কে ছ্যাঁচড়া আর কি তার পরিচয় সেটা দূড় থেকে দেখলেই বোঝা যায়। আর সেইদিন যেই কথা গুলো শুনিয়ে এসেছে সেগুলো তো আপনাকে শোনানো উচিত ছিলো। সপ্তাহে দুদিন পার্লারে সেজেই নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী মনে করেন নাকি?”
রেহান, সাদি হা করে রিধিশার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলির বাবার দাপটের কারণে কেউ ভয়ে কখনো মিলির সাথে এভাবে কথা বলেনি। সাদি বিড়বিড় করে বললো
” সাহস আছে মেয়েটার।” সূর্যও নিশাদকে নিয়ে এসে পরেছে।

মিলির রাগের মাত্রাও বেড়ে যায়।
” তুমি নিজেকে কি মনে করো? তুমি তো নিশাদের পায়ের নখেরও যোগ্য নও আবার বড় বড় কথা। আমি তো দুদিন পার্লারে সাজি আর তুমি নিজেকে দেখেছো? পাগলের মতো চলে এসেছো। আমি কি জানি না তোমার ব্যাপারে? দু একটা টিউশনি করিয়ে দিন চালাও আবার নিশাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াও। আমি নিশাদকে ভালোবাসি আর নিশাদও আমাকে ভালোবাসে। তোমার মতো মেয়েরা নিশাদের আশেপাশে আসার আগে দশবার ভাবে।”

মিলির কথা শুনে রিধিশা কষ্ট পেলো খুব কিন্তু কাঁদলো না। নিজেকে শক্ত রেখে বললো
” আমি টিউশনি করাই আর যাই করাই নিজের টাকা নিজে উপার্জন করে খাই। তোমার মতো দাপট নিয়ে ঘুরে বেড়াই না। নিজের আত্মসম্মান বজার রাখার চেষ্টা করি।” রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়।
নিশাদ এগিয়ে এসে মিলির হাত চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো
” তোমার এতো সাহস আসে কোথা থেকে? এতোদিন চুপচাপ তোমাকে সহ্য করেছি বলে কি মাথা কিনে নিয়েছো? কি ভাবো তোমার বাবার ভয়ের দাপটে তোমাকে বিয়েও করে নেবো আমি? আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গো না। নিশাদকে কেনার সামর্থ কারো নেই। আজকে কাজিটা ঠিক করোনি।”

নিশাদও বেরিয়ে যায় ক্যাম্পাস থেকে। মিলি পেছন থেকে নিশাদকে ডাকতে থাকে কিন্তু নিশাদ তো মিলির ডাক শোনার মানুষ নয়। জোতি মিলির সামনে এসে বললো
” আমার বান্ধবী পাগলের মতো সেজে এসেছে না?
রিধিশা তো কোথায় কিভাবে সেজে যেতে হয় জানে তুমি তো তাও জানো না। তুমি যে নিজে একটা হরর মুভির চরিত্র সেজে এসেছো জানো? টিচারদের মাঝে কিভাবে শালীনতা বজার করে চলতে হয় জানো না?” মিলি রেগে বললো
” এই মেয়ে একদম মুখ সামনে কথা বলবে। তোমাদের মতো মেয়েরা এসব সাজ কি বুঝবে? কখনো তো পার্লারে গিয়ে এভাবে সাজোনি।”
জোতি হেসে বললো
” নাহ পৃথিবীতে তুমি একাই পার্লারে গিয়ে সাজো আর সবাই তো মাটি দিয়ে মেকাপ করে। তোমার থেকে দ্বিগুণ স্টেন্ডার পার্লারে যাই আমরা। এসব ভূত সাজতে যেই সেই পার্লারে যাই না।”
রেহান আর সাদি জোতিকে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজের কাছে। মিলি এতো অপমান হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে গিয়েছে, কি করবে বুঝতে পারছে না।

রিধিশা লেকের পাশে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর চোখ মুচছে বারবার।
নিশাদ রিধিশার পেছন পেছন চলে এসেছে। রিধিশাকে কাঁদতে দেখে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। কিভাবে কথা বলবে? তার জন্যই তো এতো অপমানিত হয়েছে।
নিশাদ অনেক সময় নিয়ে রিধিশার পাশে গিয়ে বসে পড়লো। রিধিশা নিশাদকে দেখে চোখ মুছে নেয়। নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” সরি। আমার জন্য তোমাকে আবারও মিলির কাছে অপমানিত হতে হয়েছে।”

রিধিশার হিচকি উঠছে কান্না কারণে। নিশাদের কথা শুনে আবারও কেঁদে দিলাও রিধিশা। নিশাদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আপনার জন্যই তো। আপনি বারবার কেনো আসেন আমার কাছে? আমি আপনাকে বলেছিনা আমার থেকে দূড়ে থাকবেন?”
নিশাদ অনুতপ্ত স্বরে বললো
” সব কিছুর জন্য দুঃখিত আমি। তবে মিলি আর আমার মধ্যে সত্যি কিছু নেই। তুমি আজকে যেভাবে মিলির কথায় প্রতিবাদ করেছো আমার খুব ভালো লেগেছে।”
রিধিশা নাক টেনে বললো
” আপনার ভালো লাগার জন্য আমি করিনি। এটা আমার অভ্যাস তাই করেছি।” নিশাদ আলতো হেসে মাথা নাড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
” মিলির আর কোনো কথায়ও কিন্তু কষ্ট পেয়ো না। তো..তোমাকে আজকে সত্যি সুন্দর লাগছে।”

রিধিশা নিশাদের দিকে অবাক চোখে তাকালো। নিশাদ ঢোক গিললো রিধিশার তাকানো দেখে। রিধিশা হুট করে বাচ্চাদের মতো কাঁদোকাঁদো গলায় আহ্লাদী হয়ে বললো
” সত্যি বলছেন নাকি আমার কান্না থামানোর জন্য বলছেন?” নিশাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাথা নেড়ে বললো
” একদম না। তিন সত্যি বলছি।” রিধিশা মুচকি হেসে চোখ মুছে নিলো। নিশাদ রিধিশার হাতের দিকে তাকিয়ে বললো
” তোমাদের যেই ফুল দেওয়া হয়েছিলো যেটা কোথায়?” রিধিশা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে পাশে তাকায় সেখানেও না দেঝে পার্সের ভেতর খুঁজে দেখে বললো
” আসার সময় চেয়ারে রেখে এসেছিলাম হয়তো।”
নিশাদ রাগি চোখে রিধিশার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলো।

রিধিশা পাত্তা দিলো না নিশাদের রাগকে। নিশাদকে কাঠ গোলাপের গাছের কাছে যেতে দেখে। রিধিশা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটার দিকে তাজালো। ওমা আজকে এটাতে ফুল নেই একটাও। যাও আছে গত রাতের হয়তো যেগুলো মাটিতে পড়ে পায়ের পা’রা খেয়ে ভরতা হয়ে আছে।
নিশাদ ফুল হাতে এগিয়ে আসে। রিধিশার কানে ফুল লাগিয়ে দিতে চাইলে রিধিশা মাথা পিছিয়ে নেয়।
নিশাদ মুখ ফুলিয়ে রিধিশার কান টেনে এগিয়ে আনলো।
কানের পিঠে কাঠগোলাপ লাগিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো
” এবার আরো সুন্দর লাগছে একদম ফুলের মতো। কিছু ফুলের সৌন্দর্য আগলে রাখা যায় তবে অনুভব করা যায় না কিন্তু তুমি ফুলের সৌন্দর্য আগলে রাখা আর অনুভব করা দুটোই যাবে।” রিধিশা মাথা নিচু করে হাসলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here