কুঁড়েঘর পর্ব -১০+১১

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১০ ।

নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” কি চাই তোদের?” নিশাদের উচ্চারণ শব্দ গুলো রিধিশার জন্য যেমন স্বস্তির ছিলো তেমনই সেই ছেলেদের জন্য খুব ভয়ঙ্কর ছিলো।
ছেলেদের মধ্যে একজন বললো
” কিছু না ভাই। একটু জিজ্ঞেস করছিলাম কোথায় থাকে।”

নিশাদ চোয়াল শক্ত করে ছেলেটাকে শক্তপোক্ত হাতে থাপ্পড় দিয়ে বসলো। হুংকার দিয়ে বললো
” শু*** বাচ্চা, আমাকে এতো বোকা মনে হয়? আমার এলাকায় কে কি করে আমি কি জানি না? ওর পথ আটকেছিস কেনো? বল, এখন আমার সামনে ওকে কি বলার বল। নাহলে আজকে এখনেই সব কয়টাকে মেরে রাস্তায় কবর দিয়ে দেখবো।”
নিশাদ শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে যায়।

“ভাই মেয়েটা’কে আগে দেখিনি তাই নাম জিজ্ঞেস করছিলাম আর কিছুই না। মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন ভাই।”
নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আমার কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। আমাকে খুব ভালো করে চিনিস তোরা। কিছু করলে ভাবিস না এমনি এমনি ছাড় পেয়ে যাবি।
ছেলে গুলো ঢোক গিলে সেখান থেকে চলে গেলো।
.

নিশাদ রিধিশার হাত ধরে সেই জায়গা থেকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে আসে। নিজের বাসার সামনে এসে রিধিশার হাত ছেড়ে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
” এতো রাত এখানে কি করো তুমি? ভয়ডর কিছু আছে নাকি ভাবো তোমার ভাব দেখে এমনি ছেড়ে দেবে ওরা তোমাকে?”
রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” আপনি এখনও কথায় কথায় আমাকে ভাব নেই বলে খোঁটা দেন কেনো? কি ভাব দেখিয়েছি আমি?”

নিশাদ দাঁত কিড়মিড় করে বললো
” প্রথম দিন থেকে তো কম ভাব দেখাওনি। এখনও তো মনে হচ্ছে না কোনো ভয় পেয়েছো। আমি না আসলে কি হতো ভাবো তো একবার!”
রিধিশা ঢোক গিললো নিশাদের কথায়। ছেলেগুলোকে দেখেই তার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো আর এরপরে তো কিছুই ভাবতে পারছে না। ভাবলেই হয়তো হার্ট এটাক হবে।

নিশাদ নিশ্বাস ফেলে বললো
” এতো রাতে এখানে কি করছো তুমি?”
রিধিশা নিচু স্বরে বললো
” এখানে আমি নতুন এসেছি। টিউশনি শেষ করতে রাত হয়েছে।”
নিশাদ কিছুট অবাক হয় এরপর এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বললো
” এখানে নতুন? তা কোন বাসায় উঠেছো?”
রিধিশা নিশাদের দিকে একবার তাকিয়ে বললো
” আপনাকে কেনো বলবো? আপনি নিজে এখানে কি করছিলেন?”

নিশাদ দাঁত কেলিয়ে হেসে তার পেছনের বিল্ডিং দেখিয়ে বললো
” এটা আমার বাসা। শোনো এবার থেকে রেডি থেকো সুযোগ পেলেই তোমাকে পানিতে চুবাবো।”
রিধিশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আবার মুখ বাঁকিয়ে বললো
” আপনার কি পানিতে জন্ম হয়েছিলো? কথায় কথায় পানিতে চুবান।”
” তোমার এতো ভেবে কাজ নেই। যাও সোজা তোমার বাসায় যাও। আর টিউশনি বা যতো কাজই থাকুক না কেনো সন্ধ্যার পর একা একা একদমই বের হবে না। দরকার পড়লে টিউশনি সকালে পড়িয়ে নেবে। আমি তো আর বারবার তোমাকে বাঁচাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো না। আমারও কাজ আছে।”

রিধিশা মাথা নেড়ে বাধ্য মেয়ের মতো দ্রুত পা চালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।
নিশাদ সাদিকে ফোন করে বললো
” হকিস্টিক গুলো নিয়ে একটু নিচে আয় তো। অনেকদিন হলো খেলা হয় না। মরিচা পড়ে যাবে ওগুলোতে।”
সাদি বিরক্ত হয়ে বললো
” এতো রাতে খেলবি? ধুর আগে বললে আরো মানুষ এরেঞ্জ করে লাইটিং করে সব রেডি করে রাখতাম।”
নিশাদ রেগে বললো
” শা*লা সবই আছে তুই হকিস্টিক, রেহান আর সূর্যকে নিয়ে শুধু নিচে আয়।”
.

পিঠের মধ্যে সজোরে আঘাত করতে ছেলেটা চেঁচিয়ে পিচ ঢাকা রাস্তায় চিত হয়ে পড়লো। বাকি ছেলে গুলো ভয় পেয়ে পেছন ঘুরে নিশাদদের দেখেই উল্টো পাল্টা দৌঁড় লাগায় কিন্তু কেউই পালাতে পারেনা। নিশাদরা চারজন মিলেই সব গুলোকে ধরে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। নিশাদ একজনকে মারতে মারতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” মেয়ে দেখলেই জিভ দিয়ে পানি পড়ে তাই না? ওই মেয়ের দিকে আর কোনো দিন চোখ তুলে তাকালো তোদের চোখ তুলে অন্ধ মানুষকে দান করবো আমি।”
নিশাদ আর সূর্যরা সব গুলোকে মারতে থাকে।

_______

রিধিশা নিজের বাসায় ঢুকেই বড় একটা নিশ্বাস নিলো। হঠাৎ করে দরজায় বারি পড়লো আবার। রিধিশা ভয় পেয়ে যায় শব্দ শুনে। খাটের উপর ব্যাগ রেখে এসে দরজা খুলে দেয়। সাজেদা আন্টিকে দেখতে পায়। রিধিশা আলতো হেসে ভেতরে আসতে বলে তাকে। সাজেদা বেগম ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে চিন্তিত হয়ে বললো
” তোমার চিন্তায় আমি দুবার এসে ঘুরে গিয়েছি। এতো রাতে বাসায় ফিরলে কিভাবে হবে? তুমি একা থাকো তার উপর এখন দিনকাল ভালো না। তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবে বাড়িতে বুঝেছো, মা?”

রিধিশা ঠোঁট কামড়ে বললো
” আন্টি টিউশনি করে ফিরতে লেট হয়ে যায় প্রতিদিন। আগেও এই সময়েই ফিরতাম বাসায়।”
সাজেদা বেগম রিধিশার হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো
” শোনো মা। আগের যেখানে থাকতে সেখানে তো সবাই তোমাকে চিন্তো কিন্তু এখানে তুমি নতুন। আর সত্যি বলতে এই এলাকার কিছু ছেলে আছে যারা একটু উশৃঙ্খল। এলাকায় মানুষদের সাথে কিছু করতে পারে না তারা কিন্তু তুমি তো নতুন তাই একটু সাবধানে চলবে। প্রথম দিন তো তাই চিন্তা হচ্ছিলো তোমার জন্য।” রিধিশা আলতো হেসে মাথা নাড়ালো।

সাজেদা বেগমকে বসিয়ে রেখে রান্নাঘরে গিয়ে চা’য়ের জন্য পানি বসিয়ে তার সাথে কথা বলতে থাকে।
সাজেদা বেগমের স্বামী গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছে। বাড়িতে তার শশুড়, ছেলে,বউ আর নাতি রয়েছে। ছেলে চাকরি করে আর ছেলের বউও চাকরি করে শখের বসে। এসব নিয়ে গল্প করতে থাকে।

রাতে আলিফ, তানহার মার সাথে কথা বলে তাদের পড়ার টাইম আরো এগিয়ে নিয়ে আসে। দুজন একই স্কুলে পড়ে তাই তাদের স্কুলের যাওয়ার আগে রিধিশা ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে দুজনকে সকালে পড়িয়ে যাবে। বাকি দুটো ভার্সিটি থেকে আসার পথে পড়িয়ে আসবে। সব শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসতে পারবে।
রাতের খাবার না খেয়ে রিধিশা তার পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে।

★★

ভার্সিটিতে এসে দেখে সবার মুখে নবীন বরণের উৎসব নিয়ে গল্প চলছে। কে কি পরবে না পরবে এসব নিয়ে। রিধিশা ক্লাসে ঢুকে দেখে জোতি এক কোণায় বসে কথা বলতে ব্যস্ত। রিধিশা জোতিকে ঠেলেঠুলে ওর পাশে বসে পড়ে। জোতির ফিসফিস কথা শুনে বুঝতে পারে রেহানের সাথে কথা বলছে।
রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে বই বের করে পড়তে থাকে তার মতো।

আজ নিশাদদের পরীক্ষা চলছে। নিশাদ মন প্রাণ মিলিয়ে পরীক্ষা দিয়েই চলছে। পরীক্ষা বলে গতকাল সারারাত পড়েছে। কালকে আবার নবীন বরণের জন্য পরীক্ষা নেই কোনো। পরীক্ষার মাঝে নবীন বরণের উৎসব ফেলায় তাদের ক্লাসের অনেক স্টুডেন্টের মন খারাপ। কারো কারো মা, বাবা নাকি পরীক্ষার সময় অনুষ্ঠানে আসতেই দেবে না আবার অনেকেই সারাদিন পড়বে বলে ঠিক করেছে।
.

জোতি ফোন রাখতেই রিধিধা ভ্রু কুঁচকে বললো
” আজকে না মাস্টার্সের এক্সাম চলছে? কথা বললি কিভাবে?” জোতি হেসে বলে
” আরে আজকে ওদের পরীক্ষা তবে অন্য ডিপার্টমেন্টের আর কি। রেহানদের পরশুদিন পরীক্ষা। আচ্ছা কালকের জন্য কি ভেবেছিস কি করবি?” রিধিশা মেকি হেসে বললো
” আমি কাল আসবো না।” জোতি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো
” কি! তুই না আসলে আমি একা একা কি করবো? তুই আমার আনন্দটা এভাবে মাটি করে দিতে চাস? এই তোর বন্ধুত্ব? আমাকে একটুও ভালোবাসিস না।”
রিধিশা মুখ লটকিয়ে রাখে। জোতি ইমোশনাল ড্রামা
শুরু করেছে।
.

রিধিশা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের নিচে বসে বসে কাঠগোলাপ গাছিটাকে পরখ করছে। আজকে গাছটার মধ্যে একটা ফুলও দেখা যাচ্ছে না। রিধিশা মন খারাপ করে কৃষ্ণচূড়া ফুল কুড়িয়ে নেয়। একটা ফুল কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
রিধিশা দূড়ের খোলা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশটা মেঘলা দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আকাশটাকে। হালকা ঠান্ডা বাতাসও রয়েছে, বৃষ্টি পড়বে হয়তো আজকে।
রিধিশা ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
রিধিশা আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো।

নিশাদ শব্দহীন পায়ে রিধিশার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। রিধিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো। নিশাদ রিধিশার কানের পিঠে থাকা ফুলটা হাতে নিয়ে নিলো। রিধিশা ভাবলো কান থেকে ফুল পড়ে গিয়েছে তাই কানে হাত দিয়ে পেছনে তাকাতে যায়। পাশে নিশাদকে দেখে চমকে ভ্রু কুঁচকে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো
” আপনি এখানে কি করছেন?”

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমি এখানে কি করছি তোমাকে বলতে যাবো কেনো?” রিধিশা নিশাদের হাত থেকে ফুলটা নিতে চাইলে নিশাদ হাত সরিয়ে নিয়ে বললো
” এটা এখন আমার ফুল। ধরলে খবর আছে।”
“অদ্ভুত তো! আমার কান থেকে ফুল নিয়ে বলছেন খবর আছে! বজ্জাত ছেলে ফুল দিন আমার।”
নিশাদ মুখ বাঁকিয়ে বললো
” দেবো না কি করবে তুমি? দেখাও তো আমাকে।”
রিধিশা আর কিছু বলতে গিয়েও নিশাদের কপালের একপাশে ব্যান্ডেজ থেকে চমকে বললো
” আপনার মাথায় কি হয়েছে?”

নিশাদ এদিক ওদিক তাকালো। কালকে ছেলেদের মারার সময় বেখেয়ালি হয়ে যাওয়ায় নিজেই নিজের লাঠি দিয়ে ব্যাথা পেয়েছে খেয়ালই করেনি। বাসায় যাওয়ার পর সূর্য ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।
নিশাদ চোখ ছোট করে বললো
” আমার মাথায় যাই হোক তোমার কি? তোমার নিজের মাথায়ই তো এখনও ঠিক হয়নি আবার আমার কথা বলো। এতো কিপ্টামো করো কেনো? মাথায় তো ঔষধ দাও বলে মনে হয় না। মাথায় দাগ পরে গিয়েছে দেখেছো?”

রিধিশা রেগে উঠে গেলো
” আমার মাথায় দাগ পড়ুক বা ময়লা পড়ুক আপনার দেখতে হবে না। নিজের মাথা নিয়ে ভাবুন। শান্তিময় সময়টা অশান্তিপূর্ণ করে দিলো।”
নিশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো
” বলেছিলাম না এখন সুযোগ পেলেই তোমাকে পানিতে চুবাবো! আমি দয়ালু মানুষ তাই একটু জ্বালিয়ে ছেড়ে দিলাম।” রিধিশা চলে যেতে নিলেই নিশাদ রিধিশার হাত ধরে আটকালো। গাছের ডাল টেনে একটা ফুল ছিড়ে রিধিশার কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বললো
” নাও তোমার ফুল। আমি কারো ধার রাখি না। বাই দ্যা ওয়ে, কালকে কি পড়ে আসবে?”

রিধিশা কোণা চোখে তাকিয়ে বললো
” কলা পাতা পড়ে আসবো।” নিশাদ অবাক হয়ে বললো
” কলা পাতা? ওয়াও ইন্টারেস্টিং। তা কলা পাতার শাড়ি পড়বে নাকি ওই জঙ্গলিদের মতো করে পড়বে?”
” আপনার মাথার মতো করে পড়বো।”
রিধিশা মুখ ফুলিয়ে নিশাদকে বকতে বকতে চলে গেলো।
#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১১ ।

টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরতেই জোতি ফোন করে জানায় একটু পর শাড়ি কিনতে শপিং এ যাবে। জোতি এসে নিয়ে যাবে তাকে। রিধিশা চিন্তায় পড়ে গেলো, কি করবে এখন?
রিধিশা ড্রয়ার থেকে টাকা বের করে দেখে পুরো মাস চলার মতো টাকাই নেই তার। আজই যেই একজনের টিউশনির বেতন বাকি ছিলো সেটা দিয়েছে।

রিধিশা মুখ শুকিয়ে বিড়বিড় করে বললো
” এখন শাড়ি কিনলেও তো কম টাকা লাগবে না। মায়ের টাকা গুলো যাও বাঁচিয়ে রেখেছিলাম তাও খরচ হয়ে যাবে আজ। আবার ভার্সিটি ফিস দিতে হবে কয়েকদিন পর ”
রিধিশা নিশ্বাস ফেলে ৪ হাজার টাকা বের করে নেয়।
তৈরি হতে হতে জোতি এসে পড়ে। আসার আগে এড্রেস দিয়েছিলো জোতিকে। আজকে রিধিশার সাথেই থাকবে তারপর সকালে দুজন একসাথে যাবে বলে ঠিক করেছে জোতি।

জোতি রুমে ঢুকে পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখে বললো
” তোর অসুবিধা হয়না এখানে থাকতে?”
রিধিশা মলিন হেসে বললো
” একটা মাথা গুজার ঠায় পেয়ে বেঁচে আছি এটাই তো অনেক। অসুবিধা আবার কিসের?” জোতি ভ্রু কুঁচকে বললো
” এই তোর একটা স্বভাব। কথায় কথায় এসব উল্টো পাল্টা কথা বলিস। ইচ্ছে করে মেরে ফেলি তোকে।”

রিধিশা শব্দহীন ভাবে হাসলো। কিছুক্ষণ বসে জোতি আর রিধিশা বেরিয়ে গেলো। বাসা থেকে বের হতেই সাজেদা বেগমকে দেখতে পেয়ে রিধিশা জোতিকে সাজেদা বেগমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আর তাকে বলে বেরিয়ে যায়।
রিধিশা জোতির সাথে নিশাদের বাসার সামনে দিয়ে চলে যায়।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো নিশাদ। দুজনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
” আরে, এটা ওই রিধিশা আর জোতির মতো দেখতে না? এই মেয়ে দেখি মারাত্মক বেয়াদব। কালকে একা বের হতে না করেছি তাই আজ বান্ধবীকে নিয়ে বেড়িয়েছে।”
নিশাদ রুমে এসে জ্যাকেট পড়ে নেয়। সাদি, সূর্য, রেহান ড্রইংরুমে বসে মুভি দেখছিলো। নিশাদকে দেখে সূর্য বললো
” কিরে এখন কই যাস?”
নিশাদ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
” কালকের ঘটনার পরও মেয়েটা এই রাতে বেরিয়েছে। আজকে দুটো থাপ্পড় না দিয়ে ছাড়ছি না।”

সাদি ভ্রু নাচিয়ে বললো
” মেয়েটাকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা কিসের? তোর কথা না শুনে আবার বেড়িয়েছে। এখন কোনো বিপদ হলে নিজেই বুঝবে। তুই ভাবিস কেনো এতো ওকে নিয়ে?”
” আমি কেনো ভাববো! আমি ভাবি না ওকে নিয়ে। আচ্ছা আমি দেখে আসি কালকের ছেলে গুলো আজ আছে কিনা।” নিশাদ দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো।
অনেকটা দৌঁড়ে তারপর দুজনকে ধরতে পারলো নিশাদ।

জোতি একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে। নিশাদও রিকশা নিয়ে নেয়।
” মনে হচ্ছে অন্য কাজে যাচ্ছে। আমার আসার দরকার ছিলো না। এসেই যখন পরেছি দেখে আসি কোথায় যায়।”

রিধিশা জোতির দিকে তাকিয়ে বললো
” সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে এখন শপিং মলে গেলে বাসায় ফিরতে কতোক্ষণ লাগবে বলতো!”
” তো কি করবো? কালকেই তো নবীন বরণ। আর গতকাল তো অসুস্থই ছিলাম। এখন না কিনলে তো কালকে আর পড়তেই পাড়বো না।”
রিধিশা বিরক্ত হয়ে বললো
” কালকে শাড়িই পড়তে হবে এমন কোনো কথা আছে? অন্য ড্রেস পারলেও তো হবে।”

” আরে সবাই শাড়ি পড়বে আমরা না পড়লে কেমন দেখায় না!” রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেমন দেখায় আবার কি? শাড়ি নেই তো পড়িনি এতে কেমন লাগার কি আছে?”
জোতি রাগি গলায় বললো
” তুই চুপ করতো! বেশি কথা বলিস। আমি যা বলবো তাই করবি নাহলে আর কখনো কথা বলবো না আমি।” রিধিশা মুখ কুঁচকে বসে থাকে।

শপিং মলের সামনে দুজন গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। নিশাদও রিকশা থেকে নেমে মাস্ক পড়ে নিজের চেহারা ঢেকে নেয়।
রিধিশা মলের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতুকি করতে থাকে। রিধিশা জিজ্ঞেস করলো
” তুই ভেতর না ঢুকে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? তাড়াতাড়ি চল তো!”
জোতি রিধিশাকে ইশারায় সামনে তাকাতে বললো। রিধিশা সামনে তাকিয়ে চমকে যায় জোয়ানকে দেখে। জোয়ান হাসিমুখে এগিয়ে আসে দুজনের কাছে।

রিধিশা বিস্ময়ের স্বরে বললো
” ভাইয়া! ভাইয়া কোথা থেকে এসেছে?” জোতি মিটমিট করে হেসে বললো
” কোথায় আবার বাড়ি থেকে এসেছে।” রিধিশা অবাক চোখে জোয়ানের দিকে তাকালো আবারও।
জোয়ান শব্দ করে হেসে বললো
” কিরে তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? দেখে মনে হচ্ছে আমাকে দেখে চোখ বের করর ফেলবি।”
জোতিও জোয়ানেত যাথে তাল মিলিয়ে হাসলো। রিধিশা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
রিধিশা গলা ঝেড়ে বললো
” তুমি আসবে আমি জানতাম না। আমাকে তোমরা দুজন কেউই জানাওনি!”

জোয়ান হেসে বললো
” আমিই জোতিকে জানাতে না করেছিলাম। তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে।”
” আমাকে সারপ্রাইজ দেবে? সারপ্রাইজ তো জোতিকে দেওয়া দরকার ছিলো।” জোয়ান মাথা নেড়ে বললো
” ঠিক বলেছিস। কিন্তু আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম আজকে আসবো তাই সারপ্রাইজ দেয়া হয়নি পড়ে ভাবলাম তুই জানিস না যখন তোকেই সারপ্রাইজ দেই।” রিধিশা আলতো হাসলো। জোতি দুজনকে ভেতরে যাওয়ার জন্য তাড়া দেয়।

এদিকে নিশাদ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে এতোক্ষণ সব পর্যবেক্ষণ করেছে। নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” এই ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছে তাহলে! আমিও দেখবো কে এই ছেলে।” নিশাদ হনহন পায়ে মলের ভেতরে ঢুকে গেলো। রিধিশাদের পেছন পেছন, যদিও তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে।

জোতি শাড়ির দোকানে ঢুকে বসে পড়লো। রিধিশা আর জোয়ানও গিয়ে বসলো। জোতি বিভিন্ন শাড়ি
দেখতে থাকে। রিধিশা চুপচাপ বসে আছে। তার এসব দেখতে ইচ্ছে করছে না। তার মাথায় তো অন্যসব কথা ঘুরছে। জোয়ান একটা শাড়ি নিয়ে বললো
” তুই চুপচাপ বসে আছিস কেনো? নে, শাড়ি দেখ।”
রিধিশা মাথা নেড়ে শাড়ি হাতে নেয়।

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে রিধিশার দিকে তাকালো। মেয়েটার মধ্যে কোনো ভাবগতি দেখতে পাচ্ছে না সে। জোতির ভেতর যতোটা উৎসাহ দেখতে পাচ্ছে তার এক ফোটাও রিধিশার মাঝে নেই। নিশাদ ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বললো
” মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেনো?”
রিধিশা শুধু দেখেই চলছে মুখ দিয়ে কথা নেই তার।
জোতি দেখতে দেখতে প্রায় তিনটা পছন্দ করলো। এরমধ্যে থেকে একটা নিবে সে।
রিধিশা জোতির তিনটা শাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয়। কেনার ইচ্ছেই তো নেই পছন্দ তো দূড়।

জোয়ান জোতিকে একটা শাড়ি পছন্দ করতে বলে, রিধিশাকে বলল
” তুই কি বসেই থাকবি? একটা তো শাড়ি দেখবি! নাকি আজ বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই?”
রিধিশা এদিক ওদিক তাকিয়ে আরো শাড়ি দেখা বললো। নিশাদ গিয়ে বসে কয়েকটা শাড়ি হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। সে তো কখনো মেয়েদের জন্য কিছু কিনেইনি তাই বুঝতে পারছে না কিছু।

ভেতর থেকে একটা লেভেন্ডার কালার শাড়ি খুঁজে বের করলো নিশাদ। চোখে লাগার মতো একটা শাড়ি। নিশাদ হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে রিধিশার সেটার উপর চোখ পড়ে। রিধিশা শাড়িটার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
” এটা একটু দেখতে পারি?” নিশাদ মাস্কের আড়ালে আলতো হাসলো। রিধিশার দিকেও তাকালো না। শাড়িটা রিধিশার দিকে ছুড়ে দিয়ে উঠে গেলো।
রিধিশা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো নিশাদের যাওয়ার পানে।

জোতি অবাক হয়ে বললো
” কেমন লোক রে বাবা, একটু দেখবে বলেছে তাতেই রাগ দেখিয়ে চলে গেলো!”
রিধিশা বিড়বিড় করে বললো
” লোকটার ব্যাবহার মনে হচ্ছে একদমই বজ্জাত নিশাদের মতো।”
জোয়ান জোতিকে বললো
” রাগ দেখাবে কেনো? হয়তো পছন্দ হয়নি। এতো বেশি ভাবিস কেনো তুই?”

রিধিশা শাড়িটা খুলে দেখতে থাকে। শাড়িটা চোখে লেগে থাকার মতো সুন্দর। রিধিশা মুচকি হাসলো শাড়িটা দেখে। দোকানের লোকটা শাড়িটা নিয়ে বকবক জরে যাচ্ছে। রিধিশা প্রাইজ জিজ্ঞেস করতেই ৫হাজার টাকা বললো।
রিধিশা শাড়িটা রেখে দিলো পাশে। জোতি মাথায় হাত দিয়ে বললো
” এই যে মজা করছেন? এই শাড়িটা তো আমি অনলাইনেই আরো কম প্রাইজে অর্ডার দিয়েছি আর আপনি বলেন ৫ হাজার? মানে আমাদের দেখে গাধা মনে হয়? প্রাইজ কি জানি না নাকি?”

রিধিশা চোখ বড়বড় করে তাকালো জোতির দিকে। জোয়ান মুখে চেপে হেসে যাচ্ছে। জোতি দোকানদারের সাথে দামাদামি করতে থাকে। রিধিশা জোতিকে টেনে এনে বললো
” তুই কি শুরু করলি? দামাদামি করে লাভ কি? এতো টাকা দিয়ে আমি শাড়ি কিনতে পারবো না। দরকার পড়লে আমার জন্য অন্য শাড়ি দেখছি চল তুই।”
জোতি থামিয়ে বললো
” তুই থাম, কিছু তো বুঝিস না। এতো বছর তো খালামনির আচল ধরে ঘুরেছিস আর নেচেছিস।
শপিং তো করিস নাই। খালামনিই সব করতো। শপিং এর কি বুঝিস তুই? তুই শুধু দেখতে থাক।”
জোতি গিয়ে আবারও দোকানদারের সাথে দামাদামিতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

রিধিশা একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জোয়ান এসে বললো
” রিধু! চল আমরা চলে যাই। মনে হচ্ছে এখানে থাকলে জোতির জন্য মান-সম্মান যাবে আজ।”
রিধিশা হেসে দিলো জোয়ানের কথায়।
জোয়ান কিছুক্ষণ রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” তুই সব সময় এভাবে হাসিস না কেনো? আগে সবাই তোর বেশি হাসার কারণে সবাই বলতো তুই খুব হাসিস আর এখন সেই হাসিটাই বিলীন।”
রিধিশা জোয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। নিচু স্বরে বললো
” অন্যের হাসি বা সুখ দেখলে অনেক মানুষের বুকের আগুন ধরে। সেই আগুন নেভাতে গিয়েই হয়তো আজকে আমার মুখের হাসি নেই।”

রিধিশার কথায় জোয়ান হাসলো আর বললো
” আজকাল তোর কথা শুনলে তোকে খুব বড় মনে হয়।” রিধিশা হেসে বললো
” হুম বড়ই তো। ছোটদের ছোট থাকা হয় না সারাজীবন। সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে বড় করে দেয়।” জোয়ান রিধিশার দিকে তাকিয়ে থাকে।
জোয়ান আর রিধিশা কথাগুলো নিশাদ তাদের কাছে দাঁড়িয়েই শুনলো। রিধিশার পেছনেই পিঠ ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো নিশাদ। রিধিশার কথা শুনে নিশাদের মনে হাজারটা প্রশ্নের ডানা সৃষ্টি হয়েছে।

এরমাঝে জোতি এসে বড় একটা হাসি দিয়ে বলল
” বান্ধুপ্পী! তোর শাড়ি কেনা হয়ে গিয়েছে। চল দুজনেরটা নিয়ে আসি।”
জোতি রিধিশাকে টেনে নিয়ে গেলো। রিধিশা আর জোতির সামনে শপিং ব্যাগ দেয়।
দোকানদার রিধিশাকে বললো দুই হাজার টাকা দিতে। রিধিশা হা করে জোতির দিকে তাকালো। জোতি বড় একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। ৫হাজার টাকার শাড়ি ২হাজারে এনে ঠেকিয়েছে এই মেয়ে।

২হাজার টাকাও অনেক বেশি রিধিশার জন্য কিন্তু এখন আর কিছি করার নেই। রিধিশা তার টাকা জোতির হাতে দেয়। জোতি নিজের আর রিধিশার পেমেন্ট করে বেরিয়ে গেলো শাড়ির দোকান থেকে।

চলবে……

[ দুঃখিত দেড়ি করার জন্য। লিখতে একটু দেড়ি হয়েছে আর কারেন্ট চলে যাওয়ায় পোস্ট করতে আরো দেড়ি হলো। ]
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here