#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব১০
(কপি করা নিষেধ)
…
অরন্য বাসায় এসে নিজের রুমে চলে গেলো কারো সাথে কোন কথা না বলেই।অরন্যের রুমটি বেশ পরিপাটি আর গোছানো।ছেলেদের রুম সচরাচর এমন গোছানো থাকে না।তার বিশাল রুমের দেয়ালে জুড়ে রয়েছে তার ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি বেশ কিছু ছবি,হরেক রকমের রঙ বেরঙের পেইন্টিং। রুমের প্রতি কোনায় রয়েছে কৃত্রিম ফুলের টব।অন্য পাশে সোফা,কাবার্ড,এক সুবিশাল খাট,একটা বুকশেলফ যেটা বিভিন্ন বিখ্যাত রাইটারদের বই দিয়ে ভরতি। রুমটা বেশ খোলামেলা। রুমের সাথেই রয়েছে এক বেলকনি।বেলকনিতে রয়েছে ক্যাকটাস, সাকুলান্ট,পাতাবাহার, হাসনাহেনা,গোলাপ গাছ।
অরন্য আজ ফ্রেশ না হয়েই সোফায় গা এলিয়ে বসলো।তার অনেক ক্লান্ত লাগছে।কোর্ট খুলে বিছানায় ঢিল মারলো।টাই টা খুলে পাশে রাখলো।এরপর শার্টের দুইটা বোতাম খুলে দিলো।চোখটা বন্ধ করা মাত্রই অনন্যা আসে রুমে।মুখ ফুলিয়ে বলে,
-ভাইয়ু তুমি মুখ গোমড়া করে বসে আছো কেন?
অরন্য বোনের দিকে একবার চেয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে দেয় সোফায় আর বোনকে ক্লান্ত স্বরে বলে,
-ক্লান্ত লাগছে আর কিছুনা।একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
অনন্যা অন্য কিছু বলতে এসেছিলো কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।একবার জিজ্ঞেস করে দেখবে কি প্রান ভাইয়ার ব্যাপারে? অনন্যাকে বিড়বড় করতে দেখে অরন্য ভ্রু কুঁচকায়। অন্যন্যা তো কখনো এতো সময় নেয় না কিছু বলার জন্য।যা বলার ফটাফট বলে দেয়।সে সন্দিহান হয়।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে
জিজ্ঞেস কররেই ফেললো,
– কিছু হয়েছে কি?
অনন্যা সাথেই সাথেই মাথা দুলালো ডানে মানে।তার মানে এই যে কিছু হয়নি।জড়ানো গলায় দ্রুত বলে ফেললো,
-ভাইয়ু খেয়ে নিয়ো ফ্রেশ হয়ে।
এটা বলেই রুম থেকে চলে গেলো অনন্যা।আর এক মুহুর্ত দেরি করেনি।দ্রুত যাওয়ার পথে পায়ে পায়ে বারি খেয়ে একবার হোচট অবধি খেলো।
অরন্য আজ বোনের মধ্যে অস্থিরতা বেশ লক্ষ্য করলো।তাকে বিষয়টা ভাবাচ্ছে।সে বুঝতে পেরেছে তার কাছেই কিছু জানতে এসেছিলো। সাহসের অভাবে এগোতে পারেনি। সেটা কি?এই বয়সটা বেশ ভয়ংকর। সে পার করে এসেছে তাই জানে।বোনের সাথে এতো গম্ভীর না হয়ে আরেকটু ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিত।একটু সময় এইবার নিজের ফ্যামিলিকেও দেওয়া উচিত।গোসল করা দরকার।আজকাল বেশ গরম পড়েছে।ঘামে জবুথুবু অবস্থা।কাবার্ড থেকে একটা ট্রাউজার আর গেঞ্জি বের করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।
…
অনন্যা রুম থেকে বের হতেই দেখলো ড্রয়িংরুমে বসা আকাশকে একধ্যানে একটা কানের দুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে।অনন্যা ছু মেরে কানের দুলটা নিয়ে নিলো।এরপর দাঁত কেলিয়ে হাসলো সব ভুলে।
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে ভাইয়ু এই মেয়েদের কানের দুল তোর কাছে কেনো?
একটা ক্রুর হাসি দিয়ে পুনরায় বলে,
-প্রেম করে বেড়াচ্ছিস মা,বাবা,ভাইয়া জানে?
আকাশের ধ্যান ভাঙলে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।আর হাত দিয়ে কানের দুলটা নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।আর রাগী শাসানোর কন্ঠে বলে,
-দেখ ভালো হচ্ছে না অনু।খুব খারাপ হয়ে যাবে।দুলটা ফেরত দে।
এই বলে অনন্যার পিছনে দৌঁড়ানো শুরু করে।পুরা বাসা জুড়ে অনন্যা দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে।এক পর্যায়ে জেসমিন বেগম দৌঁড় ঝাপ আর চিল্লাচিল্লির শব্দে রুম থেকে বের হয়ে আসে।
আর আকাশকে ঝারি দিয়ে বলে,
-ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন?
অনন্যা মাকে কিছু বলতে যায় কিন্তু আকাশ হাত দিয়ে বোনের মুখ চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
-পিলিজ বইন কইস না।যাহ এর বদলে যা চাস তাই মঞ্জুর।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে।
অনন্যা একটা শয়তানি হাসি দিলো যাক এই গাধাটাকে জব্দ করতে পেরে বেশ আনন্দ পাচ্ছে।
অনন্যা দাঁত কেলিয়ে বললো,
-ওকে ডিল।
জেসমিন বেগম দুই ভাই বোনকে রামধমক দিয়ে অরন্যের জন্য খাবার গরম করতে গেলো।এই দুটোর জন্য বাসায় শান্তিতে একদন্ড বসা দায়।খালি হাতে পায়েই বড় হয়েছে।মাথায় বুদ্ধি আর হয়নি, নিজে নিজেই এই কথা গুলো বলে খাবার গরম করতে লাগলো।আর কাজের মেয়ে রিমাকে ডাকতে লাগলো খাবার গুলো টেবিলে রাখার জন্য।
…
ছায়া বাড়ি এসে দেখে নীলা রাগী রাগী মুখ করে ফুস ফুস আওয়াজ করছে।
ছায়ার বিষয়টা ভালো ঠেকছে না।তার চোখে মুখে উৎসুকভাব।
-কি হয়েছে নীলা?
নীলা একবার চোখ বুলিয়ে ছায়াকে দেখে নেয়।তার মন মেজাজ ঠিক লাগছে না।ভীষণ রাগ লাগছে।নাকের ডগা ফুলাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর।ভরাট গলায় উত্তর দিলো,
-এক ছেলে আজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
মুহুর্তেই নীলার সব রাগ দূরে সরিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলে।এর থেকে বড় দূর্ঘটনা যেনো হতেই পারে না।এটাই যেনো তার জীবনের সব চাইতে ভয়ংকরতম দূর্ঘটনা। ঘটনায় আরেকটু মশলা মাখিয়ে খুলে বলার জন্য নীলা উদ্যত হলো।
-মেডিকেল কলেজ থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।পাচ্ছিলাম না একটা রিকশাও তাই একটু সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম।আমার মনে হচ্ছে আমার এই ভয়ংকরতম দূর্ঘটনার সাথে রিকশাওয়ালারাও ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।আমি যখন দিক বেদিক দিশেহারা হয়ে রিকশার জন্য হাপিত্যেস করছিলাম সেই মুহুর্তেই ঝড় এলো।
ছায়া অবাক হয়ে বললো,
-ঝড়?
নীলার কাহিনী বলায় যেনো ভাটা পড়লো।কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বললো,
-ঝড় ইজ ইকুয়াল টু অ্যাকসিডেন্ট।এরপর ছেলেটা আমাকে সেই গরম পিচ ঢালা রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।কতো বড় শয়তান।তুই একবার ভেবে দেখ!
ছায়ুরে আমার হাত-পা ভেঙে গিয়েছে রে।পাজি ছেলের জন্য দেখ আমার শরীর ধুলাবালিতে একাকার হয়ে গিয়েছে।
ছায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।একদিনই একা একা পাঠালো মেয়েটাকে আর একদিনই এই অবস্থা।
সে নীলার কাপড় ঝেড়ে দেয়।
-ছেলেটা পরে কি বললো?তুই কি ঝগড়া করেছিস?
নীলা একটা শুকনো হাসি দিলো।তার মনে পড়লো সে কি কি করেছে ছেলেটার সাথে। এক এক করে বলতে লাগলো,
পিছন থেকে এক ছেলের আওয়াজ আসে,
-সরি গার্ল। আই এম ভেরি ভেরি সরি।আপনার লাগেনি তো?
নীলা আবারো বলে,
-আমার যা রাগ হয়েছিলো রে ছায়ু।আমাকে ফেলে দিয়ে দরদ দেখানো হচ্ছে।অসভ্য।
সেই ঝারি দিয়েছি।আর কোনদিন কোন মেয়েকে ধাক্কা দিবে না।
ছায়ু এইসব শুনে হেসে দিলো।সে সিরিয়াস কিছু ভেবেছিল। এখন দেখছে যে ভুলবশত ধাক্কা লেগে গিয়েছে।
স্নিগ্ধ হেসে নীলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আমাকে দেখানোর জন্য এই এতক্ষণ এই ময়লা জামা কাপড় পড়ে বসেছিলিস?পাগল মেয়ে।যা গোসল করে আয়।একসাথে খাবো।
বলার সাথে সাথে নীলাও এক অলিম্পিকের দৌঁড় দিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।
ছায়াদের ফ্ল্যাটটা মোটামুটি বড়ই। ২ টা বেডরুম,২ রুমের সাথে অ্যাটাচড বাথরুম, ১টা ড্রয়িংরুম, ১টা কিচেন,২ রুমে ২ টা বারান্দা।
দুইজনের বেশ ভালোই চলে যায়।
..
আজ ৭ টার দিকে ছায়াকে হসপিটালে যেতে হবে। ছায়া রেডি হয়ে যায়।৭ টা বাজতে ৪০ মিনিট বাকি।১৫ মিনিটে রেডি হয়ে ২৫ মিনিট আগেই বের হতে হবে।২০ মিনিট লাগবে রিকশা দিয়ে যেতে।৫ মিনিট রিকশা খুঁজতে খুঁজতেই লাগবে।
জিন্সের সাথে একটা কুর্তী পড়ে উড়না দিয়ে মাথা ঢেকে দেয়।একটু আগে গোসল করার দরুন চুল শুকায়নি।
তাই চুল না বেধেই উড়না দিয়ে দিয়েছে মাথায়।
বাসা থেকে বের হতেই সিড়ির কাছে দেখা হয় বাড়িওয়ালার ছেলে বিজয়ের সাথে।
ছেলেটা বেশ বিনয়ী আর ভদ্র।বিজয় ছায়ার জুনিয়র। ছায়া আর নীলার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখে।
বিজয় ছায়ার সাথে কুশল বিনিময় করলো।এর পরে ছায়াকে একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিলো।ছায়া যদিও মানতে চায়নি।কিন্তু যাদের বাসায় থাকে,যারা সেইফটি দিচ্ছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা ঠিক হবে না।
…
আকাশ নিজের রুমে বসে কানের দুলটা দেখছে আর একুটু পর পর মুচকি হাসি দিচ্ছে।
আজ তার একটি মেয়ের সাথে দেখা হয়েছে।মেয়েটা মেজেন্ডা কালারের একটি থ্রি-পিস পড়েছিলো। মেয়েটা রাস্তায় একা একা হাটছিলো।হয়তো রিকশা খুঁজছিলো।
মেয়েটা হাতে উড়না নিয়ে হাত দিয়ে নাড়ছিলো আবার তা আঙুলে পেঁচাচ্ছিল। মেয়েটা বেশ চঞ্চল বুঝা যাচ্ছিলো।মৃদু বাতাসে তার সামনের চুল গুলা কপালে এসে পড়ছিলো।সে হাত দিয়ে চুলগুলো কানের পিছনে হাত দিয়ে গুঁজে দিচ্ছিলো।সে এই মায়াবিনীকে দেখে তার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলো।তাই কথা বলার একটা সুযোগ খুজছিলো।ঠিক সেই সময় খেয়াল করে একটা বাজে ছেলে মেয়েটিকে চোখ দিয়ে তার চোখের ক্ষুধা মিটাচ্ছিলো।তাই সে মেয়েটিকে ধাক্কা দেয়।মেয়েটি পড়ে যাওয়ার সময় তার কানের দুলটাও পড়ে যায়।তখনই বুঝতে পারে মেয়েটি যেমন চঞ্চল সেই সাথে বেশ ঝগড়ুটেও বটে।
মেয়েটির ঝগড়াটাও বুঝি তার কাছে মধুর মতোই লাগছিল।সে এটা ভেবে খুশি হলো যাক কাউকে তো মনে ধরলো তাই নো ছাড়াছাড়ি। ইটস ফাইনাল।#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব১১
( কপি করা নিষেধ)
….
ছায়া হসপিটালে এসে অরন্যের কেবিনে যায়।কিন্তু কেউ ছিলো না কেবিনে।কিছুক্ষণ পায়চারি করে অস্থিরচিত্তে।সময় যতো বেশি গড়াবে বাড়ি ফিরতে ততো দেরি হবে।একবার হাত ঘড়িয়ে চোখ বুলালো।নাহ এইবার একজন সিস্টারকে জিজ্ঞেস করলোলো,
– ডক্টর অরন্য স্যার কোথায় আপা?দেখেছেন কোথাও।
সিস্টার ছায়াকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে ত্বরান্বিত হয়ে বললো,
– স্যারের আসতে একটু দেরি হবে।একটু অপেক্ষা করুন।
ছায়া মাথা নাড়িয়ে কেবিনের ভেতর গিয়ে বসে।অসময়ে গোসল করে যেনো ঝামেলায় পড়তে হলো।
এইদিকে ছায়ার চুল ভেজা থাকলে মাথা ব্যথা করে।মাথাটা কেমন যেনো চিনচিন করছে যেনো মাথার ভিজে পানি বাষ্প হয়ে মাথার প্রতিটা নার্ভে অভিযান চালাচ্ছে।তাই দরজা চাপিয়ে উড়না মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে।এরপর সুইচ টিপে ফ্যান অন করে। ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে চুল শুকানো শুরু করলো।চুলগুলো হাত দিয়ে বিলি কেটে কেটে চুলগুলো ঝরঝরা করছিল যাতে বাতাস মাথার প্রতিটা চুলের গুঁড়ায় পৌঁছায়।
এইদিকে জানালা কিঞ্চিৎ খোলা থাকায় একটা ওয়ার্ড বয় ছায়ার দিকে পা থেকে মাথা অবধি লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।বিশেষ করে বুকের দিকটায়।যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাবে।যা স্বশরীরে পারছে না তা যেনো অদৃশ্যভাবে কল্পনাশক্তি দিয়ে তা করছে।
অরন্য নিজের কেবিনে ঢুকতে গিয়ে কাউকে নিজের কেবিনে উকিঁ দিতে দেখে।অরন্যের সূচালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেইদিকে।দেখতেও খুবই দৃষ্টি কটু লাগে একটা ডক্টরের কেবিনে এইভাবে উঁকিঝুঁকি দেওয়া।অরন্য বিষয়টা বুঝার জন্য যেই না ভিতরে দৃষ্টিপাত করলো ভিতরে ছায়াকে দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।স্তিমিত রাগে কাঁপলো। ঝড়ের বেগে সেই ওয়ার্ড বয় এর কলার ধরে টেনে কষিয়ে এক ঘুষি দেয় নাক বরাবর।সাথে সাথে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো গলগল করে।সেইসাথে রক্তরঞ্জিত হলো অরন্যের হাতও।
সে এই ছেলেকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে উচ্চস্বরে রাগে দাঁত পিষে রি রি করতে বলে,
-তোর সাহস কম না আমার কেবিনে উঁকি দিয়ে হসপিটালের স্টুডেন্টদের দিকে বাজে নজর দিতে।তোর চাকরির আজই শেষ।
ক্রোধ যেমন চোক মুখ উপচে পড়ছে।
ওয়ার্ডবয় এইটা আশা করেনি।কখনো ভাবতেই পারেনি অরন্য চলে আসবে।তার আরও কিছুক্ষণ পর আসার কথা ছিলো।
সে আকুতি মিনতি করে মাফ চাইছে।বারবার পায়ে পড়ছে।চোখের ক্ষুদা মেটাতে গিয়ে শেষ অবধি তার জীবনের সম্বল চাকরিটাই চলে যাবে তা যেনো কল্পনাতীত ।সে পায়ে ধরে কেঁদে দিলোযাতে তার চাকরি না নেওয়া হয়।বাড়িতে অসুস্থ মা আছে।
অরন্য নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলো।কি সেই তেজ তার চাহনিতে।একবার চোখ বন্ধ করে এক গভীর শ্বাস নেয় যেনো ভেতরে থেকে সব রাগ সেই প্রশ্বাসে বের করার চেষ্টা।
সে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।মেজাজ তার বিগড়ে আছে ভীষণ ভয়ংকরভাবে।
– মিস ছায়া! যে আমাকে অ্যাসিস্ট করে তার চরিত্র যে এতো খারাপ জানতাম।কিন্তু সে যে টিস্যু পেপারের মতো ছেলে পালটায় জানা ছিলো না
খুবই শান্ত কন্ঠে কথাটি বললো অরন্য ছায়াকে উদ্দেশ্য করে।
আরেকটু অপমান করতে ছায়াকে পুনরায় বলে,
-আপনাকে কি এইজন্য পে করা হয়? আই থিংক আপনি বুঝতে পারছেন হুয়াট আই মিন।
ছায়ার গা রিরি করে উঠলো রাগে।তাকে কাল আকির ভাইয়ের সাথে দেখেই যে এই কথাটা বলছে সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।
ছায়া তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,
-মানুষের স্বভাব কোনদিন পরিবর্তন হয় না।ব্যক্তিগত কোন কিছু যাতে প্রফেশনাল লাইফে না আসে।
ছায়ার এমন কথা শুনে অরন্যের রাগ হলো প্রচুর।কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করলো। সে ছায়াকে কঠিন স্বরে শাসালো,
-মিস আপনি আমার দায়িত্বে আছেন এই মুহুর্তে। তাই না চাইতেও সব আমার সাথে জুড়ে যাচ্ছে।তাই ভালোভাবে বলছি।নয়তো পরিণতি খুব খারাপ হবে।কেদেঁও কূল পাবেন না।আর সেই ব্যবস্থা এই ডক্টর অরন্য চৌধুরী করবে।মাইন্ড ইট।
এইটা বলে অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলো।কিচ্ছুক্ষণ বাদে ছায়ার ডাক এলো।ছায়া এলোমেলো পায়ে সেই দিকে অগ্রসর হলো নিজেকে প্রস্তুত করে।
..
সে বাইরে গিয়ে সবার মুখে সব শুনতে পেয়ে বড়সর ঝটকা খেলো।চিৎকার চেঁচামেচি সে শুনেছিলো কিন্তু চুল শুকানোটা বেশি জরুরি ছিলো তাই বের হবার প্রয়োজন বোধ করেনি।অরন্য যে এমন করবে সে ভাবতে পারেনি।সে অপারেশন থিয়েটারে গেলো।সে অপারেশন না করলেও অরন্য সব করলো আর সাথে সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে বুঝিয়ে দিলো।ছায়ার দায়িত্ব পড়লো এর উপর একটি অ্যাসাইনমেন্ট যাতে ২ দিনের ভেতর জমা দেয়।
ছায়া অরন্যকে ধন্যবাদ দিলো মনে মনে।সামনাসামনি ধন্যবাদ বলার মুখ নেই ছায়ার।
খুব রাত হয়ে গেলো।রাত ৯ টা খুব বেশি রাত না হলেও মেয়েদের জন্য এইসময় বাইরে থাকা সেইফ না।আজকাল মেয়েরা রাত বিরাতে কত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে,কতো হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছে।কয়টা ঘটনার বিচার হয়? সেই টাকা দিয়ে তো বের হয়েই যায় অপরাধীরা।ছায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
অরন্যেরও ডিউটি শেষ।সেও বাড়ি যাবে।বাইরে বের হতেই ছায়াকে দেখলো।রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে।কেন জানি ছায়াকে একা ছাড়তে মন চাইলো না।তার দায়িত্বে যেহেতু আছে মেয়েটা।
কিন্তু ছায়া তার গাড়িতে উঠবে নাকি সে জানে না।মেয়েটার তেজ মারাত্মক।কেমন হিসাব করে করে কথা বলে।সে ছায়াকে ডাক দিলো।ছায়ার মতামত জানতে না চেয়েই আদেশের স্বরে বললো,
-গাড়িতে উঠুন মিস।
ছায়া অরন্যের দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।সে না বলতেই যাচ্ছিলো এমন সময় অরন্য আবার বলে,
-আপনার তেজ দেখানোর সময় এখন না।রাত হয়ে গিয়েছে।আপনার জন্য অনিরাপদ।দায়িত্ব আমার বিবেকে বাধা দিচ্ছে।তাই চলুন।
ছায়া কিচ্ছুক্ষণ ভেবে বললো,
-আমি রিকশা দিয়ে যেতে পারবো।আপনি চলে যান স্যার।
অরন্য জানতো এমনটাই হবে।আর হলোও তাই।সে নিজের মেজাজ কন্ট্রোল করলো।
ছায়ার হাত ধরে টেনে গাড়ির ডোর খুলে ধাক্কা মারলো।একটা কথাই বললো,
-আপনি পারেন কিভাবে? অপরাধবোধ জাগ্রত হয় না আপনার মনে?
ছায়ার চোখ লাল হয়ে গেলো।কেঁদে দিবে এমন অবস্থা।সে কিছু বললো না।সিনক্রিয়েট করতে চাইছে না।আর যাই হউক তার ক্ষতি হবে না।এইটুকু বিশ্বাস তার আছে অরন্যের উপর।
অরন্য সেইফলি ড্রাইভ করছে।কেউই কোন কথা বললো না।গাড়ির ভিতর পিনপতন নীরবতা।কারো মনের ভিতর আকুলতা তো কারো ভিতর অপরাধবোধ।
বাড়ির কাছে আসতেই অরন্য ছায়াকে বললো,
-গেট আউট মিস।আমার দায়িত্ব শেষ।
ছায়া ব্যথিত হলো।ছায়া অরন্যের গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর চলে গেলো।একবার পিছনে তাকানোর প্রয়োজন অনুভব করলো না।অরন্যকে ধন্যবাদও বললো না।এতো পাষাণ মানুষ হয়?
…
ছায়া বাসায় গিয়ে দরজায় নক করতেই নীলা সেটা খুলে দেয়।
নীলার মুখটা কেমন যেনো থমথমে হয়ে আছে।ছায়া সেটা বুঝলেও কিছু বললো না।অপেক্ষা করলো নীলার নিজ থেকে বলার।
ছায়া ফ্রেশ হয়ে আসতেই নীলা এসে তার বিছানায় বসে।
নীলা কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,
-ছায়া আজ আহান এসেছিলো তোর সাথে দেখা করতে।
ছায়া ভিতর কেপে উঠলো। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।সে কি ঠিক শুনলো?নাকি শুনার ভুল।
নীলা আবারো বললো,
-আহানের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে অবন্তীর সাথে সেটা নিশ্চয় জানিস? তবে আমাকে কেন বললি না? আমাকে কি নিজের কেউ মনে করিস না?
ছায়া এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নীলার পানে।জ্বিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে বললো,
-আমি জানতাম না।কাল মা ফোন দিয়ে সব বলেছে।বাসায় বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছে।বাসায় খুব ঝামেলা হয়েছে।মা আমাকে দায়ী মনে করছে এরজন্য।অবন্তী নাকি আমাদের বাসায় গিয়েছিলো।বেশ কান্নাকাটি করেছে।
নীলা এইসব শুনে অবিশ্বাসের কন্ঠে বললো,
-আমি তোর বান্ধবী তো ছায়া? এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে বললি না।
ছায়া বেশ বুঝলো মেয়েটা অভিমান করেছে।কিন্তু সে এইসব আর বাড়াতে চায়নি।তার এই বিষাক্ত অতীত আর বর্তমানে টেনে আনতে চায়নি।ভুলতে চায় সব।
কিন্ত চাইলেই কি সব ভুলা যায়?বিষাক্ত অতীত কাউকে ছাড় দেয় না।তা ঠিক বর্তমানে তার রেশ রেখে যায় যেমটা সাদা স্বচ্ছ কাগছে এক ফোটা পানি পড়লে শুকিয়ে যাবার পরও তার দাগ রেখে যায়।
#চলবে
(