কুড়িয়ে পাওয়া পদ্ম পর্ব -০২ ও শেষ

#কুড়িয়ে_পাওয়া_পদ্ম
#পর্ব_০২
#লেখনীতে : #Sharmin_Akter_Borsha

গভীর চিন্তায় বর্ষার মুখ ভারl সন্ধ্যে হয়ে আসছে পাশাপাশি ছাঁদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা ও অভ্র।শান্ত দৃষ্টিতে বর্ষা’র দিকে,তাকিয়ে আছে অভ্র। দাঁতের মধ্যে হাত রেখে বুড়ো আঙুলের নখ কামড়াচ্ছে বর্ষা। ভীষণ নার্ভাস ফিল হচ্ছে। মিনিট দশেক হবে অভ্রর সামনে খা’ম্বার মতো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কিয়ৎক্ষণ অভ্রর দিকে তাকিয়ে হাফ ছাড়ে বর্ষা। জিহ্বা দিয়ে শুঁকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে মলিন কণ্ঠে বলে,

— অভ্র ভাইয়া তুমি এই বিয়েটা করো না।

অভ্র চোখ জোড়া ছোটছোট করে এক নজর বর্ষার দিকে তাকালো,বাম হাতের শাহাদাত আঙুল কপালে রেখে খানিক কপাল চুলকে শান্ত কণ্ঠে বলে,

— কেনো? অভ্রর কথার পিঠে বর্ষা মাথা নিচু করে ফেলে। হাত কচলাচ্ছে সে। মনের মধ্যে উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে। কিছুক্ষণ আগেই পরিবারের সবাই একত্র হয়েছিল আর তখনই বর্ষা জানতে পারে অভ্রর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আগামীকাল তার বিয়ে আর অভ্রর বিয়ে উপলক্ষেই ফ্যামিলির সবাই একত্র হয়েছে এবং গ্রামের বাড়ি এসেছে। নিজস্ব কোনো পছন্দ না থাকাই পরিবারের পছন্দ মেনে বিয়েতে রাজি হয়েছে অভ্র। অভ্রর শর্ত ছিল ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে ওত ঘটা করে সে বিয়ে করবে না। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে খানিক আয়োজন না করলেও তো চলে না। বাড়িতে কোনো আয়োজন হবেনা। হলুদের অনুষ্ঠান হবে না,ডিরেক্ট বিয়ে বলে কথা তাই বিয়েটা সামাজিক ভাবে কমিউনিটি সেন্টারে হবে। একথা বাড়ি সদ্য সবাই জানলেও বর্ষা জানে না। অভ্রর বিয়ের খবর শুনে রীতিমতো চমকে ওঠে বর্ষা। বিচলিত হচ্ছিল তার মন,পারছিল না পরিস্থিতির সাথে নিজের মনকে মানাতে,না পারতে সন্ধ্যে হতে ছাঁদে চলে আসে। আর এসে দেখে আগে থেকে অভ্র এখানে দাঁড়িয়ে আছে। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে বর্ষা। কিন্তু কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না। আগামীকাল যার বিয়ে তাকে কিভাবে বলবে,সে তাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে। বর্ষা ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে নির্ভীক তাকিয়ে থাকে অভ্রর দিকে,অভ্র ভ্রু কুঁচকে বর্ষার দিকে তাকালো। ছাঁদে লাইট আছে সেজন্য সে লাইটের আলোয় দেখতে পায় বর্ষার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা অশ্রু। বর্ষাকে কান্না করতে দেখে অভ্র মলিনকণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

— কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন? তোকে কী কেউ কিছু বলেছে?

বর্ষা শব্দ করে কান্না করে ফেলে। দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ডানেবামে মাথা নাড়িয়ে এক দৌঁড়ে অভ্রর সামনে থেকে চলে যায়। এতে অবশ্য অবাক হল অভ্র। বর্ষার কি হয়েছে জানার জন্য পিছু আসতে যাবে তখনই তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরে অভ্র,মাথা থেকে বেরিয়ে যায় বর্ষার কথা। রুমের মধ্যে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় বর্ষা। চোখ যে আজ বাঁধা মানছে না। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুকণা অঝোরে গড়িয়ে পরছে। রাতে খাবার খাওয়ার জন্য কয়েকবার ডাকা হয়েছিল কিন্তু বর্ষা খাবেনা বলে নাকচ করে দেয়।
_____________
বাড়ির বড়রা নিজেদের মত কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে,দুপুরের আগে কমিউনিটি সেন্টারে যেতে হবে,ছেলেরা বিয়ের গাড়ি সাজানো নিয়ে ব্যস্ত, আর মেয়েরা কয়েকজন পার্লারে চলে গেছে আর কয়েকজন বাড়িতেই সাজগোছ করছে। অভ্রকে তার বন্ধুরা ঘিরে আছে, সে তাদের সাথে রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।দরজার আড়াল থেকে অভ্রকে হাসতে দেখে মলিন হাসলো বর্ষা। সে সময় কাঁধে কারও হাতের স্পর্শ পায়,পিছনে ঘুরে দেখে রিমা তার চাচাতো বোন দাঁড়িয়ে আছে। রিমা ও বর্ষা দুজনে সেম বয়সী দু’জনের মধ্যে বন্ধুর মত মিল। রিমা বর্ষার ছলছল নয়নে দেখে শুধালো,

— কি হয়েছে তোর চোখে জল কেনো? বর্ষা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,

— তেমন কিছু হয়নি। চোখে কি জেনো পরেছে। রিমা বর্ষার হাত ধরে বলে,

— সবাই তো রেডি হচ্ছে তুই এখনো হসনি কেন? চল দু’জনে একসাথে রেডি হব। বর্ষা রিমার হাত ছাড়িয়ে ক্ষীণকণ্ঠে বলে,

— আমার ভালো লাগছে না,শরীর টা ভালো না। আমি কোথাও যাবো না মা’কে বলেছি। তোরা যা আনন্দ কর। এসবে আমাকে টানিস না প্লিজ। রিমার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে হেঁটে চলে গেলো বর্ষা।
ঘন্টা খানেকপর, বরযাত্রী সকলে বেরিয়ে গেলো, তিন তলায় একা রয়ে গেলো বর্ষা। বারান্দায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সকলের আনন্দ নিজ চোখে দেখলো সে। মলিন হেসে বর্ষা বলে,

— ভালো থেকো তুমি ভালোবাসা,অন্য কারো ভালোবাসায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো বাড়ি নিঘুম হয়ে গেলো,সম্পূর্ণ নিস্তব্ধে মোড়া একটা বাড়ি। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বর্ষা তার বোরকা হিজাব পরতে লাগে। এক ঘন্টা পর, একটা চিঠি লিখে সে বাড়ি ছাড়ে।
________
কমিউনিটি সেন্টার, স্টেজে বসে আছে অভ্র। প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেছে পার্লার থেকে এখনও মেয়ে মানে বিয়ের কনে আসেনি। সকলে মেয়ের আসার অপেক্ষায় আছে। অনেকটা সময় লাগছে বলে ছেলের বড় ভাইকে পার্লারে পাঠানো হল, সে ওখানে গিয়ে ঘন্টার মধ্যে বোনদের সাথে নিয়ে ফিরে আসে। সকলের মুখ ভার, রুহুল কে ডেকে কনের বাবা প্রশ্ন করে, মেয়ে কোথায়? তখন সে ধীর কণ্ঠে বলে,

— বোনুকে কোথাও পাইনি বাবা। ও পার্লার থেকে পালিয়ে গেছে। ছেলের কথা শুনে রেগে যায় আমেজ উদ্দিন। কিন্তু এতে কোনো ফায়দা নেই। যে যাওয়ার সে চলে গেছে। মেয়েপক্ষ লোকের মুখ ফ্যাকাসে দেখে নূর ইসলাম ও তার বড় ছেলে তাদের কাছে গেলেন। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায় উনারা আমতা আমতা করে জানান তাদের মেয়ে পালিয়ে গেছে। মেয়ে বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে গেছে শুনে উপস্থিত সকলে কানা ফুঁসি শুরু করে দিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করছে অভ্র। কনে পালিয়ে গেছে বিয়ে হয়নি লোক সমাজে জানাজানি হলে সম্মান নষ্ট হবে। সম্মান বাঁচাতে, মেয়ের বাবা অভ্রর সাথে নিজের ছোট মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব রাখেন। এতে অনেক বিবেচনা করতে লাগলেন নূর ইসলাম। নূর ইসলাম বিয়ের জন্য সম্মতি দিতে যাবে তার আগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অভ্র। বিয়ে করতে আসছে বড় বোন কে আর এসে বিয়ে করতে হবে ছোট বোনকে। এখানে কি সিনেমা হচ্ছে? সে এটা কিছু তেই মানবে না। বৈকি দাদা ও বাবার সাথে কথা রাগারাগি করছে। অন্য দিকে রিমা এখানকার খবর বর্ষাকে জানানোর জন্য তার নাম্বারে কল দিলো কিন্তু কল ঢুকলো না। প্রতিত্ত্যরে আসলো, নাম্বার টি তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রিমা কল কেটে অভ্রকে ডেকে ফিসফিসে আওয়াজে বলে,

— ভাইয়া বাড়িতে তো বর্ষা একা। ওর নাকি শরীর খারাপ তাই আমাদের সাথে আসেনি। এখন ওকে কল দিলাম ওর নাম্বার বন্ধ বলছে আমার খুব ভয় করছে।

রিমার কথা শুনে থমথমে হয়ে গেলো অভ্র। তার মস্তিষ্কে হানা দিলো কাল রাতের ঘটনা। হঠাৎ বর্ষার তার কাছে আসা, বিয়ে করো না বলা, বিয়ের দিনই অসুস্থ হওয়া, একা বাড়িতে থেকে যাওয়া, এখন ফোন বন্ধ বলা। সব কিছু কেমন জেনো গোলকধাঁধার মত লাগছে। মাথা থেকে বিয়ের মুকুট টা খুলে ফ্লোরে ফেললো অভ্র, কোনো কিছু না বলে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।অভ্রর ছুটে যাওয়া দেখে সকলে রিমাকে এসে প্রশ্ন করে তাকে এমন কি বলেছে যে সে এভাবে দৌঁড়ে চলে গেছে। রিমা বর্ষার কথা বলতে বাকিরাও কমিউনিটি সেন্টার থেকে দৌঁড়ে বের হয়।

বাড়ির সদর দরজা লাগানো দারওয়ানের কাছে চাবি দিয়ে চলে গেছে বর্ষা। দারওয়ান অভ্রকে দেখে চাবি দিতে আসে। দারওয়ান চাচার থেকে বর্ষার খোঁজ করলে সে বলে,

— বর্ষা মনিকে দেখছি বোরকা পরে অটো তে ওঠে কোথায় জেনো গেলো। আর আমাকে বলছে চাবিটা তোমাদের দেখা মাত্র দিতে।

অভ্র শুঁকানো ঢোক গিলে বর্ষার ফোনে কল লাগালো।ফোন এখনও বন্ধ বলছে। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো তারপর একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে আসে। অভ্র তাদের বর্ষার যাওয়ার কথা বলে। কেউই বুঝতে পারছে না বর্ষা হঠাৎ গেলো কোথায়?

বাড়ির ভেতরে ঢুকে অভ্র বর্ষার রুমে গেলো তার পিছু অনেকে ঢুকলো। রুমের মধ্যে তেমন কিছুই নজরে পরলো না। বর্ষার বাবা রুমে এসে মেয়ের বিছানার উপর বসলেন। উনার মেয়েকে উনি ছোট থেকে চিনেন। বর্ষা তার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সব সময় বিছানার ডান পাশে বালিশের নিচে রাখে। তিনি বালিশ সরাতে দেখলেন একটা কাগজ। কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে তাতে লিখা কিছু শব্দ। শুকনো ঢোক গিলে বর্ষার লিখা তিনি পড়তে লাগলেন,

— প্রিয় বাবা! ছোট থেকে আমি যা চেয়েছি তুমি আমাকে তাই দিয়েছো,কখনো আবার না চাইতেই পছন্দের জিনিস এনে দিয়েছো। এবারও ভেবে ছিলাম তুমি আমার মুখ দেখে বুঝে যাবে আমি কি চাই। কিন্তু বাবা তুমি বুঝলে না,আর আমি হতভাগী মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না। দেখো তোমার মেয়ের সব থেকে প্রিয় মানুষ টা আজ অন্য কারো হয়ে গেছে। আমি মানতে পারছি না বাবা, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আমি পারছি না বাবা। আমি পারছি না কাঁদতে আর না কাউকে বলতে পারছি।
আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বাবা আমি অভ্র ভাইয়া কে ভীষণ ভালোবাসি। যেখানে ভাইয়া অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে সেখানে আমি থাকতে পারবো না। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি বাবা। তোমরা কেউ আমাকে আর খুঁজো না।

মেয়ের নিজ হাতে লিখা চিঠি পড়ে বুকের মধ্যে ছ্যাত করে ওঠে হাসান মিরাজের তিনি অশ্রু সিক্ত নয়নে অভ্রর দিকে তাকালেন। সকলে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও হাসান কিছু বলছে না দেখে চাচার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নেয় অভ্র। এবং সকলের সামনে শব্দ করে বর্ষার লিখা চিঠিটা পড়ে। চোখের কোণে জমছে জল, মন হচ্ছে উতলা। সে এত টাই নির্বোধ কিভাবে হল, যে বর্ষার এতদিনের আচরণ তার কাছে কোনো রকম লাগেনি। কেনো লাগেনি? এখন তার সব মনে পরছে, বর্ষা অদ্ভুত আচরণ শুধু তার সাথে ই করতো আর তাকে ভালোবেসে করতো। মুখ ফুটে বলতে না পারায় আচরণে বুঝাতে চেয়েছিল। চিঠি হাতে ফ্লোরে বসে পরলো অভ্র। মেয়ে চলে গেছে শুনে শব্দ করে কান্না জুড়ে দেয় বর্ষার মা। তাকে সামলাচ্ছে দুইজন। অভ্র ও তার বন্ধুরা মিলে বর্ষাকে খুঁজতে বের হয়। অপূর্ব নাহিদ নাঈম রিমাকে সাথে নিয়ে বর্ষার বান্ধবী দের বাড়িতে যায়। হাসান মিরাজ ও তার বড় ভাই থানায় যায়। কোনো কিছু তেই কোনো ফায়দা হয়নি,তারা বর্ষাকে কোথাও খুঁজে পায়নি।
____________
দুই মাস পর, কাজের সূত্রে এক গ্রামে আসে অভ্র। সেখানে এসে ও দূর থেকে দেখতে পায় একটা মেয়েকে। মেয়েটাকে থেকে দেখে ভীষণ ভালো লাগে ওর তারপর ড্রাইভার কে বলে মেয়েটার পিছু নেয়, গ্রামের এক কাঁচা পথ দিয়ে মেয়েটা যেতে লাগে। ওই পথে গাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। বৈকি গাড়ি থেকে নেমে পরে অভ্র।
সে গ্রামে এসেছিল একদিনের জন্য কিন্তু মেয়েটাকে দেখে ভাবে কয়েকদিন থেকে যাবে। পরপর তিনদিন সে আড়ালে লুকিয়ে মেয়েটার ওপরে নজর রাখে, চতুর্থ দিন সে ভাবে মেয়েটাকে প্রপোজ করবে। মেয়েটা রোজ একই পথ দিয়ে যায়। আজও যাবে, মেয়েটার যাওয়ার পথে একটা পুকুর পরে, সাথে এক সারিতে কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ। পুকুরে ভাসছে পদ্ম ফুল।
মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে শতশত কৃষ্ণচূড়া ফুল।

অভ্র তিনদিনে মেয়ের সব খবরাখবর নিয়েছে। মেয়ের নাম পদ্ম, এখানে এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। এক বয়স্ক মহিলার সাথে থাকে। সম্পর্কে মহিলা পদ্মর দাদী হয়। মেয়েটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে অভ্রর, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করে এক্কেরে সাথে নিয়ে যাবে। তাই আজ বিয়ের প্রস্তাব দিবে। প্ল্যানিং অনুযায়ী সবকিছু করে ফেলেছে অভ্র এখন শুধু এই রাস্তা দিয়ে পদ্ম মেয়েটার যাওয়ার প্রতীক্ষা।

মিনিট দশেক পর, এই রাস্তা ধরে আসছে পদ্ম তাকে দেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরে অভ্র।কলাপাতা রঙের একটি কাপড় পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটে এদিকেই আসছে। কৃষ্ণচূড়া ফুল বেশ পছন্দ তার, ফুল গুলো পায়ের নিয়ে পরে পিষে যাবে ভেবে খুব সাবধানে হাঁটছে সে,এমন সময় দেখলো, রাস্তার মাঝখানে কৃষ্ণ চূড়া ফুল দিয়ে লাভ আঁকা। লাভের মাঝে নীল আর সাদা পদ্ম ফুল রাখা। পদ্ম মেয়েটি ভ্রু যুগল কুঁচকে আশে পাশে তাকালো এদিকে সচরাচর কেউ আসে না। তাহলে এটা কে বানিয়েছে আর কার জন্য? ভেবে পাচ্ছে না, আশে পাশে কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না। নীল ও সাদা পদ্ম ফুলের পাশে একটা কাগজ চারভাজ করে রাখা আছে। পদ্ম হাত বাড়িয়ে পদ্ম ফুলগুলো কুড়িয়ে নিলো,সাথে পাশে থাকা কাগজটা নিয়ে তা খুলে দেখে, তাতে কিছু লেখা আছে, ত্রস্তকণ্ঠে পড়তে শুরু করে পদ্ম,

— তুমি আমার ভালোবাসার প্রতীক। আমার রাখা পদ্ম ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এখন থেকে হলে আমার কুড়িয়ে_পাওয়া_পদ্ম । তোমাকে কখনো একথা বলতে পারবো আমি ভাবিনি। সামনে এসে বলার সাহস হয়নি তাই এই চিরকুটে লিখে দিয়েছি আমার মনের কথা,তুমি সযত্নে পড়ে নিও। তুমি আমার শুধু আমার,আমার কুড়িয়ে পাওয়া পদ্ম। আমি পৃথিবীর বুকে লিখে দিবো তুমি শুধু আমার, আমি শুধু তোমার।
ভালোবাসি! অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই তোকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি বর্ষ্যু!

চিঠির প্রথমাংশ পড়ে ভীষণ রাগ উঠছিল কিন্তু শেষাংশে বর্ষ্যু নাম দেখে হাত কেঁপে ওঠে পদ্মর। চক্ষু জোড়া ছলছল করে ওঠে, শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে, হাত দুটি কাঁপছে। মনে হচ্ছে এখনই পরে যাবে।
বার বার চোখের পলক ফেলছে,ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে। মসৃণ কণ্ঠে আমতা আমতা করে পদ্ম বলে ওঠে,

— অভ্ অভ্ অভ্র ভাইয়া।

বিড়বিড় করে অভ্রর নামটি নিয়ে পিছনে ঘুরতে দেখলো অভ্র গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। কেঁদে ফেললো পদ্ম নামক বর্ষা। বর্ষাকে কাঁদতে দেখে ছুট্টে আসে অভ্র। দু হাত বাড়িয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে নেয়। অভ্রকে এতদিন পর দেখে শব্দ করে কাঁদতে লাগে বর্ষা। আলতো ভাবে ধরে আছে অভ্র বর্ষাকে। কানের কাছে ফিসফিসে আওয়াজে বলে,

— ভালোই তো আমাদের ছেড়ে এখানে এসে ছদ্মনামে দিন পার করছিস। কি ভাবছিলি তোকে আমরা কখনো পাবো না?

বর্ষা উত্তরে কিছু বলে না। অভ্রর বুকের উপর থেকে মাথাও সরালো না। অভ্র বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। বর্ষা এখনও ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অভ্র বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

— ভালোবাসিস কিন্তু একবারও মুখ ফুটে বলতে পারলি না। যদি একবার সাহস করে বলতি তাহলে তো আর আমাদের এতদিন,মাস কষ্ট করতে হত না। তোকেও বাড়ি ছাড়তে হত না। ওইদিন রাতে যখন বিয়ে করতে মানা করলি তখন সাথে ভালোবাসি বলতে পারলি না? কেন বললি না ওইদিন বললে তো আমি ওইদিনই তোকে বিয়ে করে নিতাম তাহলে তো এই দুইমাস আমাকে সিঙ্গেল জীবন কাটাতে হত না। অভ্রর কথা শুনে নাক টেনে বর্ষা অভ্রর দিকে তাকালো। অস্ফুটস্বরে বলল,

— তুমি ওইদিন বিয়ে করোনি?

অভ্র বর্ষার কাঁধের ওপর দুই হাত রাখে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে ডানে-বামে মাথা নাড়ায়। না বোধক ইশারা করতে বর্ষা খুশিতে ফিক করে হেসে ফেলে। অভ্র বর্ষার গাল ছুঁয়ে বলে,

— আমার কুড়িয়ে পাওয়া পদ্ম বিয়ে করবি আমাকে?

বর্ষা শব্দ করে হেসে ফেলে। আকস্মিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ায়ে,অভ্রর ঠোঁটের উপর বর্ষা তার শাহাদাত আঙুল রেখে মৃদু সহাস্যে বলে,

— আমি তোমাকে ভালবাসি, অভ্র ভাইয়া।
একবিন্দু ভালোবাসা,একবিন্দু সুখ,যেন খুঁজে পাই দেখে তোমার মায়বী মুখ। তুমি আমার জোসনা রাতের ফুল, তোমায় আমি দেখবো বলে, হয়ে আছি বেকুল, তুমি আমার জীবন, তুমি আমার মরন, তুমি আমার আশা, তুমি আমার ভালোবাসা, তুমায় ছাড়া বাচতে পারব না।

বর্ষার কথা প্রেমকাব্য শুনে অভ্র বর্ষাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কপালে আলতো চুমু দেয়। বর্ষা লজ্জা পেয়ে অভ্রর বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে। অভ্র ফিক করে হেসে বলে,

— তুই আমার লাজুক বতী, তুই আমার সন্ধ্যালতী, তুই আমার প্রথম অনূভুতি, তুই আমার কুড়িয়ে পাওয়া পদ্ম।

__________সমাপ্ত__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here