অজানা অনুভূতি পর্ব -০১

নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে নিজের বড় বোনের বিয়ে, বিষয়টি হয়তো কারোর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। অবাধ্য চোখের জল যেন আজ শুকিয়ে গেছে। শুধু ভাবছি আমার জীবনটা এমন হলো কেন? হয়তো কাউকে কখনো অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম যার ফল এখন ভোগ করছি। যার সামনে ২বছর ধরে যাই নি তার সামনেই আজ পড়তে হলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আমার পরিচয়টা দেওয়া যাক। আমি আদ্রিতা খান। পরিবারের ছোট সন্তান। পরিবারে মা বাবা দি আর আমি। আমার আপুর নাম, সামিরা খান। আমি এইবার ইন্টার ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট। কলেজের টপ স্টুডেন্ট। আর আপু হচ্ছে অনার্স ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট। আমি আপুর ঠিক বিপরীত। আমি অনেক চঞ্চল আর আপু হচ্ছে অনেক শান্ত। আপু যতটা সহজ সরল আমি ঠিক ততটাই কঠিন। অল্পতেই আপুর চোখে পানি আসে অপরদিকে আজ পর্যন্ত কেউ আমার চোখের পানি দেখে নি। সবাইকে আমাকে শক্ত মনের মানুষ হিসেবেই চিনে। সবাই জানে আদ্রিতা খান কান্না করতে জানে না। কিন্তু এইটা কি সত্যি? হয়তো, আমি ও জানি না। কিন্তু আজ শক্ত হতে পারছি না। ২ বছর আগে যেই আঘাত পেয়েছিল আজ যেন তার দ্বিগুণ আঘাত পেলাম।
হঠাৎ আমার কাঁধে কেউ হাত রাখল আমি জানি কে রেখেছে তাই কিছু বললাম না।

আদ্রিতা এগুলো কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। পিছনে ফিরে দেখলাম আপুর চোখে পানি। মুচকি হাসলাম, আপু যা হচ্ছে হতে দে। যা হবে ভালোই হবে। আপুর চোখে জল আমার কষ্টের জন্যই যে আপুর চোখে জল তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার কিছু বলার নেই। আপু আমি বাইরে যাচ্ছি এ-ই কথাটা বলেই বেরিয়ে পড়লাম। আর ভাবতে থাকলাম আজকের দিনের কথা

সকালে ~

সকাল থেকেই বাসায় অনেক আয়োজন করা হয়েছে। আজ আপুকে আপুর ফিউচার হাসবেন্ড দেখতে আসবে। তাদের সাথে আগে থেকেই সব কথা ছিল। বাবা সব কিছু আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। আজকে তারা আপুকে দেখতে এসেছিল। তাই সকাল থেকেই অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু কে জানতো আমার খুশি বেশিক্ষণ এর জন্য নই? আপুর ফিউচার হাসবেন্ড হিসেবে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম। আগের সব তিক্ততার সম্পর্ক গুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। খুব কষ্ট হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপুর হাসবেন্ড হিসেবে মেনে নিতে। কিন্তু কি করব আপুর সাথে তার বিয়ে ঠিক করা। এখন চাইলেই কিছু করা সম্ভব না। আর তাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না। আসলেই কি ভালোবাসে না? জানা নেই কি সত্যি। এ-ই অজানা অনুভূতির শেষ কোথায় জানা নেই। এইসব ভাবছি আর রাস্তায় হাঁটছি। জীবনটা বিষাদময় লাগছে।

অপরদিকে সকাল থেকে খুব চিন্তিত সাজ্জাদ। সাজ্জাদের পরিচয়টা দেওয়া যাক সাজ্জাদ হোসেন। মা বাবার একমাত্র সন্তান। দেশের নামকরা বিজনেসম্যান। সাথে আর ও কিছু পরিচয় আছে যা সবার থেকে গোপনীয়। তার চিন্তার কারন হচ্ছে যেই মেয়েটি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো তার বড় বোনের সাথেই নাকি সাজ্জাদ এর বিয়ে ঠিক করছে তার মা। বিষয়টি সাজ্জাদ কোনোভাবেই মানতে পারছে না। অজানা এক অনুভূতি কাজ করছে সাজ্জাদ এর মধ্যে। বিষয়টি স্বাধীন এর সাথে শেয়ার না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। স্বাধীন হচ্ছে সাজ্জাদ এর বেস্ট ফ্রেন্ড। সে ও একজন বিজনেসম্যান। আর সাথে স্বাধীনের ও কিছু গোপনীয় তথ্য রয়েছে। স্বাধীন এর সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে সাজ্জাদ।

আশে পাশে মানুষ কমই। সকাল থেকে কিছু পেটে পড়ে নি। মাথাটা ও কেমন জানি করছে তাও বাসায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বাসায় গেলে এখন সবাই আপুর বিয়ে নিয়ে কথা বলবে। কিভাবে পারবো নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে আপুর বিয়ে দেখতে?

তোমার মেয়েটার কি বুদ্ধি হবে না। দুপুর হয়ে গেল এখনো বাসায় ফিরে নি। আরে সামিরার মা এতো টেনশন করো না। আদ্রিতা চলে আসবে।
টেনশন করবো না মানে? মেয়েটা সকাল থেকে কিছু খায় নি। এমনিই ও অনেক সময় অসুস্থ থাকে। থাক টেনশন করো না। সামিরা, আদ্রিতা কোথায় গেছে জানিস?

বাবা ও একটু ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে। বলেছে আসতে একটু সময় লাগবে। আদ্রিতা যে কি কারনে বাসায় নেই তা মা বাবাকে বলা যাবে না (মনে মনে)

গাড়ি চালানোর অবস্থায় সাজ্জাদ দেখতে পেলো একটি মেয়ে তার গাড়ির সামনে এলোমেলো অবস্থায় হেঁটে যাচ্ছে। সাজ্জাদ এর মাথা যেন আর ও গরম হয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে বললো, এই মেয়ে রাস্তায় দেখে চলতে পারো না। এখন তোমার কিছু হলে ত সবাই আমাকে ধরবে।

সেই প্রিয় কন্ঠ শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম।
এই মেয়ে শুনতে পাও না নাকি? কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার সামনে এসে থমকে গেলো। অপলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে। সাজ্জাদ খেয়াল করলো। আগে থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে আদ্রিতা । তার মুখের মিষ্টি হাসিটা আর নেই। চোখের নিচে ও কালো দাগ। হয়তো তার জন্যই হয়েছে।
এইভাবে তার সাথে দেখা হবে ভাবতে পারি নি।
সাজ্জাদের খুব মায়া হচ্ছে আদ্রিতার জন্য। সাজ্জাদের ভাবনার মাঝেই আদ্রিতা বলে উঠলো
সরি আমি খেয়াল করি নি।
আদ্রিতা…
কথাটি বলে চলে যেতে নিলেই সাজ্জাদ ডাক দিলো।
খুব কষ্ট হচ্ছে, ইচ্ছে করছে তাকে জিজ্ঞেস করি আমাকে কি একটু ও ভালোবাসা যায় না? খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলাম
জ্বি কিছু বলবেন?
কেমন আছো?
আমি বেশ আর কিছু বলার আগেই খেয়াল করলাম মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।

হঠাৎ করে আদ্রিতা পড়ে যেতে নিলেই সাজ্জাদ আঁকড়ে ধরে ফেলল। হঠাৎ এমন কিছুর জন্য সাজ্জাদ প্রস্তুত ছিলো না। আজকে সকালে এই দেখলো মেয়েটি সুস্থ আছে তাহলে এখন কি হলো। সাজ্জাদ তার গাড়িতে আদ্রিতাকে বসালো একটু সামনেই একটি হসপিটাল আছে সেই হসপিটালে নিয়ে গেলো। আর আদ্রিতার বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিল।

চোখ খুলেই নিজের অবস্থান দেখে বুঝতে পারছি হসপিটাল এ আছি। পাশেই আপু বসে আছে। উঠে বসলাম। সকাল থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল। আপু কিছু বলছে না। আমি জানি আপুর মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। কিন্তু আপুর ত কোনো দোষ নেয়। আপু নিজে বিয়ে করতে চাই নি। বাসা থেকে ঠিক করেছে। এখানে আপুর কিছু করার নেই।

আপু, মা – বাবা কি বাসায়?

হ্যাঁ এসেছিলো হসপিটালে সাজ্জাদ তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

কথাটা শুনে আর কিছু বললাম না। তার মানে সাজ্জাদ এখনো হসপিটালে আছে। এমন সময় একটি ভাইয়া কফি হাতে রুমে আসলো।

আরে আদ্রিতার জ্ঞান এসেছে আগে জানাবেন না, মিস সামিরা। আপু কিছুটা বিরক্ত হলো। আপু এমনি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না। আপু বলে উঠলো, কেন ওর জ্ঞান এসেছে আপনাকে কেন জানাবো?

আরে মিস সামিরা রেগে যাচ্ছেন কেনো, বাইরে সাজ্জাদ চিন্তা করছে অনেক তাই আরকি বললাম।

আদ্রিতা আমার পরিচয় ত জানো না, আমি স্বাধীন, সাজ্জাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।

ও আচ্ছা। ভাইযা আপুকে কফি দিয়ে আমার জন্য কফি আনতে চলে গেলো। দি তোর সাথে কিন্তু স্বাধীন ভাইয়াকে ভালোই মানাবে। দেখ ভাইয়া কত হাসি খুশি আর তুই কতো গম্ভীর। সাজ্জাদ ও গম্ভীর। দুজন গম্ভীর হলে সংসার ভালো হবে না। বলেই হেসে উঠলাম। এমন সময় সাজ্জাদ আর স্বাধীন ভাইয়া রুমে আসলো।

#চলবে
#অজানা_অনুভূতি
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here