কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব -০২

“বড়ো বোনের প্রাক্তনকে বিয়ে করার পর জানতে পারি সে আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে শুধুমাত্র তার প্রাক্তন তিন্নি আপুকে কষ্ট দেওয়ার জন্য!”

কুয়াশার কথা শুনে মিসেস শামসুন্নাহার শিউলির ভ্রূদ্বয় কুঁচকে আসে। মেয়ের কথার কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি।

“এসব কী বলছ তুমি?”

“আমি ঠিকই বলছি মা। তোমার কাছে আমি সব কথা ভাগ করলেও কিছু কথা তোমাকে বলা হয়নি। তিন্নি আপুর বিয়ের আগে যে ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল সে আর কেউ না মা। সে তুরাব! হ্যা, আমার বর তুরাব তৌহিদই সেই ছেলে।”

“এই কথাগুলো তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি?”

“তিন্নি আপু মানা করেছিল।”

“কেন?”

হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠার কারণে কুয়াশা আর কিছু না বলে দরজার সামনে চলে যায়। দরজা খুলে দেখে তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী মল্লিকা দাঁড়িয়ে আছে।

“মলি ভেতরে আয়।”

মল্লিকাকে সংক্ষেপে সবাই মলি বলে ডাকে। মলি ভেতরে ঢুকে কুয়াশাকে প্রশ্ন করে,

“তুই এখন এখানে কেন? আর হঠাৎ জরুরি তলব? কিছু কী হয়েছে?”

“আগে তুই বস তারপর বলছি।”

এই বলে দু’জন মিসেস নাহারের দু’পাশে বসে। অতঃপর কুয়াশা বলে,

“তুরাবের সাথে তিন্নি আপুর প্রায় বছর খানেকের সম্পর্ক ছিল। আপু তুরাবকে ভীষণ ভালোবাসত। কিন্তু তুরাব অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে থাকায় আপু রাগ করে তুরাবের বন্ধু ফয়সাল ভাইয়াকে বিয়ে করে। ফয়সাল ভাইয়ার শুরু থেকেই আপুর উপর নজর ছিল। আপুকে এত তারাতাড়ি নিজের করে পেয়ে সে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল। নিজের বন্ধু আর প্রেমিকার এমন সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি তুরাব। এতে করে তুরাব রেগে যায়। সেই রাগ গিয়ে পড়ে আমার উপর। তিন্নি আপুর উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সে আমাকে বিয়ে করে।”

মলি অবাক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে। মিসেস নাহার নিজেও প্রচন্ডভাবে অবাক হয়েছেন মেয়ে কথায় সেটা তার চাহুনিই বলে দিচ্ছে। কুয়াশা কিছুক্ষণ থেমে পুনরায় বলে,

“তুরাব যেদিন আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে এই বাসায় আসে সেদিন আমি না বলতেই যাচ্ছিলাম,সেই মুহূর্তে!”

“সেই মুহূর্তে কী?”

আপু আমাকে ডেকে বলে,

“দেখ কুয়াশা যা হচ্ছে হতে দে। আমি তো ফয়সালের সাথে সুখেই আছি। তুই বরং তুরাবকে বিয়ে করে নে। এতে করে সবারই ভালো হবে। আমি তোর মামাতো বোন হলেও কখনো তোর খারাপ চাইনি। তুই অন্যরকম একটা মেয়ে। আমার বিশ্বাস তুই তুরাবকে পাল্টাতে পারবি।”

এসব কথা শুনে আমি তোমাদের সামনে এসে তুরাবের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাইলাম। তোমরা সবাই অনুমতি দিলে।

“তারপর কী কথা হলো তোদের মধ্যে?”

“মলি জানিস তো, তুরাব মেয়েদের কথার জালে ফাঁসাতে পটু অনেকটা। আমি তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করি, আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন আপনি?”

তুরাবের সোজাসাপ্টা উত্তর,

“তিন্নির প্রতি আমার ভালো লাগা ছিল। আর তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। তিন্নি সুখে থাকতে পারলে আমি কেন পারব না কুয়াশা? তোমার মধ্যে যে চঞ্চলতা আছে সেটা আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তিন্নি আমাকে যে কারণে ছেড়ে চলে গিয়েছে সেইসব বাদ দিয়ে দিব আমি। কেন জানো? শুধুমাত্র তোমার জন্য। তোমার আপু আর তোমার সাথে তো আমার প্রায় একইসাথে পরিচয়। শুরু থেকেই তোমার কথাগুলো আমার ভালো লাগে। তোমার আপুর সাথে সম্পর্কে ছিলাম বিধায় তোমাকে কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু এখন তো আর কোনো বাঁধা নেই।”

“কত সহজে এসব বলে দিলেন তুরাব ভাইয়া। কিন্তু আমি কেন আপনাকে বিয়ে করব? নিজের বোনের প্রাক্তনকে বিয়ে করলে তো আমার চরিত্রের উপর আঙুল উঠবে।”

“কেন আঙুল উঠবে? আমাদের সম্পর্কের কথা হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া তো কেউ জানে না।”

“তবুও তুরাব ভাইয়া, আমি এই বিয়ে করতে পারব না।”

“মানুষ কী আজীবন এক থাকে? একটা সুযোগ কী আমার প্রাপ্য না? আমার কী ভালো থাকার অধিকার নেই? আমি তোমাকে ভালোবেসে বদলাতে চাই। দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।”

সেই মুহূর্তে আমার ফোনে আপুর কল আসে। কল রিসিভ করার পর আপু আমাকে পাশের ঘর থেকে বলল,

“তুই তুরাবের সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে যা বোন। দেখ আমি তো সুখে আছি তাইনা? তুই ওকে বিয়ে করলে আমি একদম কষ্ট পাব না। আর আমি যা পারিনি সেটা তুই পারলে খুশি হব আমি। তুই তুরাবকে পাল্টে দিবি। ওর বাজে স্বভাবগুলো ধীরে ধীরে কমিয়ে আনবি তুই। এমনিতে তুরাব ভালো ছেলে। আমাদের এক বছরের সম্পর্কে তুরাব আমার হাত স্পর্শ করে দেখেনি। ওর স্বভাব মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা। এছাড়া ওর আর কোনো বাজে দিক নেই। নির্দ্বিধায় তুই ওকে বিয়ে করতে পারিস। সত্যি বলতে আমিও তুরাবের থেকে সরে আসতেই চাচ্ছিলাম। ফয়সালকে নিয়ে আমি বেশ ভালো আছি। তাই আমার কষ্ট হবে ভেবে এই বিয়ে ভেঙে দিস না কুয়াশা। আর আমাদের সম্পর্কের কথা অন্য কেউ যেন না জানে এটা অনুরোধ আমার।”

তুরাব আর আপুর কথা শুনে আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মামাতো বোন হলেও তিন্নি আপুকে নিজের বোন ভাবতাম। তার প্রাক্তনকে বিয়ে করলে আমার চরিত্রের দিকে আঙুল উঠবে এই ভেবে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তুরাব আমাকে আশ্বস্ত করে বলে,

“তিন্নি আর আমার সম্পর্কের কথা আর কেউ জানবে না কথা দিচ্ছি। আর বিশ্বাস কর মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করলেও কখনো তাদের স্পর্শ পর্যন্ত করিনি আমি। তুমি আমাকে বিয়ে করলে ঠকবে না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করব আমি। একটা সুযোগ দাও আমাকে।”

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বের হতেই শুনতে পাই তোমাদের সবার তুরাবকে পছন্দ হয়েছে। সবকিছু ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিই ওকে বিয়ে করার। ভেবেছিলাম আমার জন্য কোনো ছেলে সঠিক পথে আসলে ক্ষতি নেই। আর আমার জীবনেও তখন কেউ ছিল না। তাই আমি রাজি হয়ে যাই এই বিয়েতে।

কুয়াশা কথাগুলো বলে থেমে যায়। মিসেস নাহার এবার মেয়েকে প্রশ্ন করেন,

“তাহলে সমস্যা কোথায় হলো? তুরাব কী বদলায়নি?”

এমন কথা শুনে কুয়াশার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।

“মা, তুরাব আর তিন্নি আপু দু’জন নিজেদের স্বার্থে আমাকে এসব বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করায়। আসল কাহিনি তো সম্পূর্ণ আলাদা।”

মলি অস্থির হয়ে বলে,

“ধুর, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তুই সবটা পরিষ্কার করে বল তো আমাদের।”

“বলছি। বিয়ের দিন রাতে যখন আমি তুরাবের ঘরে বসে ছিলাম তখন আপু আমাকে কল দেয়। কল দিয়ে আমাকে বলে,
তুই তুরাবের কাছে যাবি না। এই বিয়েটা একটা নাটকের অংশ। তুরাব হয়তো সত্যি তোকে ভালোবাসে। তবে তুই তুরাবকে ভালোবাসার নামে কষ্ট দিবি। ওই ছেলে তোর আপুকে কষ্ট দিয়েছে। তুই তার প্রতিশোধ নিবি না বোন?”

“কী? তিন্নি আপু তোকে এসব বলেছে?”

“হ্যা, আপু নিজ স্বার্থে আমাকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু সেদিন প্রথমবার আমি আপুর কথা শুনিনি। এমনিতে ঠিক আছে বললেও আমি তুরাবকে কাছে টেনে নিই। আপুর উপর জেদ চেপে গিয়েছিল আমার। ওর জন্য কম কিছু তো করিনি আমি। আর সেই বোন কী করল আমার সাথে? আমাকে প্রতিশোধ নেওয়ার অ স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করল। আমি ভেবেছিলাম তুরাবকে সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলব, তোমার যেমন সুখে থাকার অধিকার আছে তেমন আমারো সুখে থাকার অধিকার আছে আপু। তুমি চাইলে ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তুরাবকে বদলাতে পারতে। কিন্তু তুমি তা করোনি। উল্টো মাঝপথে কিছু কারণ বশত ওকে ছেড়ে চলে গেলে। এই দেখ, আমি তুরাবকে পাল্টাতে পেরেছি। কীভাবে পেরেছি জানো? আমার ভালোবাসা আর যত্নের দ্বারা।”

কথাগুলো বলে কুয়াশা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মিসেস নাহার মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে বলে,

“আমার মেয়ে না খুব ধৈর্যশীল। তাহলে আজ কাঁদছ কেন মা?”

“আমি যে এই কথাগুলো বলতে পারলাম না মা। তুরাব আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। এই যন্ত্রণা মেনে নেওয়া কী খুব সহজ?”

চলবে??
#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

বিকালে বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগানোর আশা নিয়ে ছাদে উঠতেই শুনতে পাই তুরাব কাউকে কলে বলছে,

“শোনো তিন্নি তুমি হেরে গিয়েছ। তুমি নাকি কখনো হারতে শেখোনি? আজ দেখ তুমি আমার কাছে হেরে গেলে। তোর ফুপাতো বোনকে ব্যবহার করে তোমাকে হারিয়ে দিলাম আমি। কীভাবে জানো? তুমি আমাকে স্পর্শ করার জন্য অপেক্ষা করেছ। কিন্তু আমায় ছুঁতে পারোনি। আর তোমার বোন কোনো অপেক্ষা ছাড়ায় আমাকে কাছে পেয়েছে। কতটা কাছে পেয়েছে জানো? স্বামী-স্ত্রী যতটা কাছে আসতে পারে ঠিক ততটাই কাছে এসেছি আমরা দু’জন। আজ কোথায় গেল তোমার জেতার অহংকার? ফয়সাল নিশ্চয়ই আমার মতো সবদিক দিয়ে সেরা নয়। তুমি অপরূপ সুন্দর হয়েও আমার মতো সেরা একজনকে পেলে না। আর তোমার বোন তোমার মতো আহামরি সুন্দর না হয়েও আমাকে পেয়ে গেল। তবে কী জানো তিন্নি? তোমার থেকে কুয়াশা অনেক ভালো। ওর সাথে এতদিন ভালোবাসার নাটক করলেও এটুকু বুঝেছি যে তুমি ওর মতো সবদিক দিয়ে সুন্দর নও। অন্তত ওর মন তোমার থেকে অনেক সুন্দর। তাহলে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা তার প্রাক্তন প্রেমিক এবং ফুপাতো বোনের কাছে হেরে গেল। শেষ হাসি আমিই হাসলাম হাহাহাহাহ!”

আরো অনেক কথা হয় ওদের মধ্যে। আপু ওকে কি বলেছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি তুরাবের প্রতিটা কথা শুনে চমকে গিয়েছি। ওকে মন থেকে বিয়ে না করলেও প্রায় আট মাস একসাথে থাকার পর আমার মনের কোণে কিছুটা হলেও সুপ্ত অনুভূতি তৈরি হয়েছে ওর জন্য। ভেবেছিলাম আমি ওকে একটু হলেও পাল্টাতে পেরেছি। আফসোস! সে একটুও পাল্টায়নি। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে। তুরাব অভিনয়ের দিক থেকে অসাধারণ একজন। অভিনয়কে নিজের কর্মক্ষেত্র বানাতে পারলে অভিনেতা হিসেবে নিজের যোগ্যতা ভালোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে সে।

কুয়াশার কথা শুনে মলি কিংবা মিসেস নাহার কেউই বুঝে উঠতে পারে না যে কিভাবে কুয়াশাকে স্বান্তনা দেবে। মলি কুয়াশার পাশে বসে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“কলি কষ্ট পাবি না একদম। তুই না মলির কলি। তোকে তো ভেঙে পড়া মানায় না দোস্ত।”

কুয়াশার চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ে। কয়েকবার লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে সে। অতঃপর হেসে বলে,

“আমি কষ্ট পাব না। তবে এত বড়ো ধাক্কা মেনে নিতে সময় তো লাগবে। কিছুটা সময় দরকার আমার। চিন্তার কিছু নেই। আমি নিজেকে ঠিক সামলে নিব। আমি একটু ঘরে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে কুয়াশা নিজের ঘরে চলে যায়। এখন রাত প্রায় নয়টা। কুয়াশার বাবা আর ভাইয়ের বাড়িতে আসার সময় হয়ে গিয়েছে। মিসেস নাহার মলিকে আজ রাতে কুয়াশার সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করে রান্নাঘরে চলে যায় খাবার তৈরি করার জন্য। মেয়ের এমন অবস্থায় তার কোনোকিছুই ভালো লাগছে না। একমাত্র মেয়ের সামান্য কষ্ট হলেও তার বুকের ভেতর ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সেখানে এত বড়ো সত্যি মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপারই বটে!

কুয়াশা বিছানায় শুয়ে আছে। মলি কুয়াশার মা থা র পাশে বসে আলতো হাতে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। এমন সময় কুয়াশার ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে,

“তিন্নিপু”

কুয়াশা ফোন হাতে নিয়ে উঠে বসে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিন্নি চিৎকার করে বলে,

“লজ্জা করল না তোর এসব করতে? নিজের আপুর সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা কীভাবে করলি তুই?”

কুয়াশা কিছু বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করে,

“কী বলছ কী এসব তুমি?”

“একদম না বোঝার ভান করবি না কুয়াশা। বিয়ের দিনই তোকে আমি বলেছিলাম তুরাবের কাছে না যেতে। অথচ তোরা এতটা কাছাকাছি চলে গেলি যে,,,”

“থাক আপু তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। বুঝেছি আমি তুমি আসলে কি বলতে চাও। কিন্তু তোমার কথা কেন রাখব আমি? নিজে তো ঠিকই প্রাক্তনকে ভুলে প্রাক্তনের বন্ধুর সাথে সংসার করছ। শুনলাম তুমি নাকি আবার মা হতে যাচ্ছ। এতকিছুর পরেও প্রাক্তনের দিকে চোখ দিতে লজ্জা করে না তোমার? তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমাকে ব্যবহার করলে তুমি। কেন বলো তো? আমি তোমার আপন বোন নই বলে এত বড়ো চক্রান্ত করলে? আরে তোমার যদি নিজের প্রাক্তনের উপর এত রাগ তাহলে আমাকে আগেই সব বলে দিতে পারতে। বিয়ের আগে এসব বললে আমি তুরাবকে বিয়েই করতাম না।”

“এজন্যই তো বলিনি। তোর তো সবার সামনে ভালো সাজতে হবে। একদম নিষ্পাপ মেয়ে সেজে ঘুরে বেরাস। আমি যদি আগেই সব বলে দিতাম তাহলে তুই তুরাবকে বিয়ে করতি না। আর আমার পরিকল্পনা ভেস্তে যেত।”

“বাহ আপু বাহ! কতটা স্বার্থপর তুমি এটা ভাবতেই লজ্জা করছে আমার। আর কী বললে? আমি নিষ্পাপ হয়ে ঘুরে বেড়াই? সত্যি বলতে আমার নিষ্পাপ সাজতে হয় না। আমি এমনিতেই কারোর ক্ষতি চাই না। কিংবা নিজের চরিত্রকে নিলামে তুলি না তোমার মতো। তাই আমি বরাবরই এমন। নাটক করে ভালো সাজার প্রয়োজন হয় না আমার।”

“মুখ সামলে কথা বল কুয়াশা। তোর মতো বোনের প্রাক্তনের সাথে ঘনিষ্ঠ হইনি আমি।”

“বিয়ে করা বরের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছি আপু। তোমার মতো একসাথে দুইজনের সাথে সম্পর্ক চালাইনি আমি। আগে নিজেকে দেখ। তারপর আমাকে এসব বলতে আসবে। যার নিজের চরিত্র ঠিক নেই সে আমাকে এসব বলার অধিকার রাখে না।”

“কুয়াশা!”

“চিৎকার করে লাভ নেই। সত্যি মেনে নিতে কবে শিখবে? তোমার জন্য আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। তোমার কথা শুনে তুরাবকে বিয়ে না করলে আজ আমি খুব সুখে থাকতে পারতাম। আমার সাথে যা করেছ তারপর তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। তুমি আমার সুখ সহ্য করতে না পারলেও আমি বরাবরই চাই, ভালো থাকো তুমি। অনেক সুখী হও নিজের বিবাহিত জীবনে। আর কখনো আমাদের কথা না হলেই ভালো হয়।”

কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিয়ে কুয়াশা মলির কাঁধে মা থা রাখে। খারাপ সময়গুলোতে মায়ের পাশাপাশি এই মেয়েটা ছায়ার মতো তার সাথে থাকে।

“মলি জানিস, আমি তিন্নি আপুকে নিজের বোনের চোখে দেখতাম। কখনো ওর খারাপ চাইনি। ওর যেকোনো বিপদে নিজের সমস্যা হলেও ওর পাশে থেকেছি। আর সেই বোন আমার সাথে কী করল? তুরাব একা আমাকে কষ্ট দিলে মেনে নিতাম। এত বেশি কষ্ট হতো না যতটা এখন হচ্ছে। আপন মানুষের থেকে পাওয়া আঘাত হয়তো এমনই হয়। যে আঘাত একজনকে ভেঙে দেয়।”

মলি কিছু বলে না। এই অবস্থায় প্রিয় বান্ধবীকে শান্ত করার উপায় তার জানা নেই। তবুও কিছু একটা ভেবে কুয়াশাকে জিজ্ঞাসা করে,

“আচ্ছা তুই তুরাব ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক রাখবি নাকি রাখবি না?”

কুয়াশা শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,

“এত জঘন্য একজনের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা কী সম্ভব?”

“এজন্যই প্রশ্নটা করলাম। তুই এখন কী করতে চাচ্ছিস? তুরাব ভাইয়াকে ডিভোর্স দিবি?”

মলির কথায় কুয়াশা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। যেন মলি খুব মজার কিছু বলেছে।

“কী হলো? তুই হাসছিস কেন? এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তোর হাসি পাচ্ছে?”

“হাসির মতো কথা বললে হাসব না? আমি কোন দুঃখে ওকে ডিভোর্স দিতে যাব? আমি তো তুরাবকে ডিভোর্স দিব না।”

“তুই ওর সাথে থাকবি না। তাহলে এই সম্পর্ক রেখে কী করবি?”

“ওকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করে দিব? আমি গুমরে গুমরে শেষ হয়ে যাব আর সে মুক্ত পাখির ন্যায় আকাশে উড়বে? আমি এটা কখনোই হতে দিব না মলি, কখনোই না!”

চলবে??

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১’২
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here