কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব -২৬+২৭+২৮

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৬
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

বগুড়ার নাম করা একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে কুয়াশা আর তিন্নি। আজ থেকে কয়েক বছর আগে এই জায়গাটা ছিল তাদের দুই বোনের আড্ডা দেওয়া এবং খাওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আজ একই জায়গায় বসে থেকেও কারোর মধ্যে আগের মত সেই উচ্ছ্বাস নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে সব!

“বোন কিছু বলবি না?”

“নিজের প্রয়োজনে এখন মুখ থেকে মধু ঝরছে? বোন? সত্যি বোন ভেবেছ কখনো? ভাবলে তো আমার জীবন নিয়ে এভাবে খেলতে পারতে না।”

“মাফ করে দে না আমায়? আমি কথা দিচ্ছি তোর জন্য সেরা একজনকে খুঁজে আনব আমি।”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি নিজের ভালো এখন নিজেই বুঝতে পারি।”

“মাফ করা যায় না আমাকে?”

“না। কারণ আমি দয়ার সাগর না। যে কেউ আমার কাছে এসে মাফ চাইবে আর আমি মাফ করে দিব? আমি এমন মেয়ে নই।”

“তাহলে তুই আমাকে সাহায্য করবি না?”

“সাহায্য করব বলেই এখানে ডেকেছি। তোমার মত মেয়েকে সাহায্য করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। তবুও আমি রাজি হয়েছি। কারণ তোমার মেয়ে আমার মেয়ের মত। ওও আমার মনি মা। একমাত্র ওর জন্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব। নতুবা যে মেয়ে আমার সংসার সুখ চায়নি তার সংসার বাঁচানোর মত মহৎ কাজ করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না।”

কুয়াশার কথায় তিন্নি কষ্ট পেলেও সহ্য করে নেয়। শান্ত কণ্ঠে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“কী করলে আমার সংসারটা বাঁচবে?”

“নিজেকে সময় দাও। শোনো বাচ্চা হওয়া মানেই নিজেকে বিসর্জন দেওয়া নয়। বাচ্চা হয়েছে জন্য যে তুমি নিজের যত্ন নেবে না তা তো হতে পারে না। বাচ্চা হলে মেয়েদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। এর জন্য একটু যত্নের দরকার। তুমি তোমার স্বামীর যত্ন নেওয়ার সময় বের করতে পারো। বাচ্চার জন্য সময় বের করতে পারো। সংসার সামলাতে পারো। তাহলে নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য কেন সময় বের করতে পারো না?”

“সেটা তো আমাকে ফয়সাল বুঝিয়েও বলতে পারত। সে এসব না করে আমাকে যা নয় তাই বলে কষ্ট দিতে দুইবার ভাবল না।”

“পুরুষ মানুষ এমনই হয়। যদিও সব পুরুষ এক নয়। তবে এখনকার অধিকাংশ পুরুষ নারীর সৌন্দর্যে আটকায়। সুতরাং এসব ভেবে লাভ নেই। কিন্তু এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না।”

“তাহলে কী করব?”

“আমি যতটুকু জানি, ছেলেরা আর সব সহ্য করতে পারলেও অবহেলা সহ্য করতে পারে না। তুমি আগে নিজেকে একটু সময় দাও। সত্যি বলতে তোমার সৌন্দর্য আগের থেকে বেড়েছে। আর একটু যত্ন নিলেই ছেলেরা তোমার থেকে চোখ সরাতে পারবে না। আগে নিজের যত্ন নাও। এরপর ফয়সাল ভাইয়া তোমার কাছে আসতে চাইলে তাকে অবহেলা করা শুরু করবে। কিছুদিন এভাবে একটু শাস্তি দাও। এরপর সব ঠিক করে নিয়ো। আর হ্যা, আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একবার কল দিয়ে একটা ধন্যবাদ দিয়ো। আসি!”

“একি! তুই চলে যাচ্ছিস কেন?”

“তো কী করব? তোমার সাথে এখানে বসে খোশগল্প করব? এত ফালতু সময় আমার নেই।”

তিন্নিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তিন্নির মেয়েকে ওর কোলে দিয়ে কুয়াশা বেরিয়ে আসে। আসার আগে বাচ্চার কপালে চুমু দিয়ে বসে এসেছে,

“মনি মা, তুমি কিন্তু মায়ের মত বাইরে এক আর ভেতরে এক হবে না। ভালো মানুষ হবে তুমি। অনেক বড়ো হও দোয়া করি। তোমার মনি মায়ের দোয়া সব সময় তোমার সাথে থাকবে মা। ভালো থেকো।”

রাস্তায় বের হয়ে রিকশা ডেকে তাতে উঠে বসে কুয়াশা। এর মধ্যে সাফওয়ান তাকে কল দেয়।

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছ সাফওয়ান?”

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো থাকি কী করে? কুয়াশা ম্যাম তো আমাকে মনেই রাখেনি। এই দুঃখে আমি তো শেষ হয়ে যাচ্ছি।”

সাফওয়ানের কথায় কুয়াশা মুচকি হেসে বলে,

“আমাকে পটানোর চেষ্টা করছ নাকি হ্যা?”

“সে তো শুরু থেকেই চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনার মন তো গলছে না ম্যাম।”

“লাভ নেই স্যার। এই মন পাথর হয়ে গিয়েছে। তাই এত সহজে গলবে না। আদৌও গলবে কিনা সেটাই তো জানি না।”

“তাই নাকি?”

“হ্যা তো। অযথা চেষ্টা করে লাভ নেই।”

“চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই তাই না?”

“করে দেখুন স্যার। তবে আমার মনে হয় না খুব একটা লাভ হবে।”

“আচ্ছা শোনো এসব পরে হবে। আমি তোমাকে যে কারণে কল দিয়েছি আগে সেটা বলি।”

“হ্যা বলো।”

“তুমি ঢাকায় ফিরবে কবে?”

“আগামীকাল ফিরব ইনশাআল্লাহ।”

“বাচ্চাদের নিয়ে ফিরবে?”

“না। ওদের আপাতত রেখে যাব। কারণ ঢাকায় ফিরে আহনাফ আর আর্শিয়ার কেস হাতে নিব। সব সামলে উঠে তারপর ওদের নিয়ে যাব। এই সময়ে ওদেরকে মা আর মলি দেখবে।”

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

“সারপ্রাইজ?”

“হ্যা ম্যাম সারপ্রাইজ।”

“কী রকম?”

“সেটা বললে কী আর সারপ্রাইজ থাকবে?”

“তাও ঠিক। আচ্ছা ঢাকায় যাওয়া অবধি অপেক্ষা করি তাহলে।”

“অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। তাই ধরে নিতে পারেন আপনার জন্য মিষ্টি কিছু অপেক্ষা করছে ম্যাম।”

“আচ্ছা আচ্ছা।”

কথা বলতে বলতে রিকশা এসে থামে কুয়াশার বাড়ির সামনে। কুয়াশা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে বলে,

“আমি বাড়ি ফিরলাম মাত্র। ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে কল দিই?”

“ঠিক আছে। কল পরে দিলেও হবে। আগে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও।”

“আচ্ছা।”

কল কেটে দিয়ে কুয়াশা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বাচ্চাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিজের ডায়েরি নিয়ে ছাদে চলে যায়। আজ অনেক দিন পর সে লিখালিখি করতে বসেছে।

“জীবন থেকে প্রায় পঁচিশ বছর কেটে গেল। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই শিখেছি আমি। বারবার ভেঙে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে শিখেছি। বারবার আঘাত পেয়েও নিজেকে শেষ করে দিইনি। বরং শক্ত করে তৈরি করেছি নিজেকে। কারণ, আমার মত মেয়ের ভেঙে যাওয়া মানায় না। আমি তো কুয়াশা! যে বারবার মিলিয়ে যাওয়ার পরে আবার ফিরে আসে। নতুন ভোরের সাথে সাথে সে ফিরে আসে।”

এটুকু লিখেই তার কলম চলা থেমে যায়। কিছুক্ষণ বসে থেকে আনমনে হাসে কুয়াশা। আবারো তার কলম চলতে শুরু করে।

“আমার জীবনে আমি এত কিছু শিখেছি একজন মানুষের জন্য। সে হলো আমার প্রথম ভালোবাসা। হুম রায়াদ, তোমার জন্যই আমি আজ এতটা শক্ত হতে পেরেছি। তোমাকে ভালোবেসে বারবার আঘাত পেয়ে আমি যখন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছি ঠিক তখনই আমি বুঝতে শিখেছি যে তোমার এই আঘাতগুলো আমাকে নতুন করে বাঁচতে সাহায্য করবে। জীবন এত সহজ নয়। এই ছোট্ট জীবনে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমর এগিয়ে যেতে হবে আপন গতিতে। আমি আগে অবুঝ ছিলাম। কথায় কথায় কেঁদে অস্থির হয়ে যেতাম। তুমি আমাকে বদলে দিয়েছ। তবে কী জানো? আমার না এখনো আগের মত চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। ওই যে তোমার সাথে যখন কথা বন্ধ হয়ে যেত তখন যেভাবে চিৎকার করে পাগলের মত কাঁদতাম, এখনো সেভাবেই কাঁদতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। তোমায় নিয়ে লিখতে গেলে আমার লেখা শেষ হবে না। তুমি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছ। তুমি এমন একজন মানুষ যে প্রথমে আমাকে আত্ম হননের পথে নিয়ে গিয়েছে, আবার ছেড়ে যাওয়ার সময় সবকিছু মেনে নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে। তাই তো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না। ঘৃণার আড়ালে আজও তোমাকে ভালোবাসি আমি। জানো? তুমি আমাকে এতটা শক্ত হতে সাহায্য করেছ বলেই তিন্নি আপু, তুরাব, সমাজের মানুষজন আমাকে আর ভাঙতে পারেনি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার ক্ষতি কখনো চাইনি। বরাবরই চেয়েছি যেন তুমি ভালো থাকো। আজও তাই চাই। তোমার প্রতি আমার এক সমুদ্র সমান অভিমান। কিন্তু এই অভিমান ভাঙানোর জন্য আজ তুমি নেই। তুমি যদি আমাকে একটু বুঝতে তাহলে হয়তো আমার জীবনটা এত বেশি জটিল হতো না। তুমি বরাবরই আমাকে কাঁদিয়ে শান্তি পাও। যদিও এখন তুমি আমার চোখের পানি দেখতে পাবে না। তবে আশা করছি, অনুভব করতে পারবে। আচ্ছা আজও কী তুমি আমাকে মনে করো? আজও কী তুমি আমাকে কাঁদিয়ে শান্তি অনুভব করো? হুম, হয়তো করো। আবার এমনও হতে পারে যে তুমি আমাকে মনেই রাখোনি। ভুলে গিয়েছ এই আমাকে!”

কথাগুলো লেখার সময় কুয়াশার চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। সে এই পানি মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করল না। এই মুহূর্তে তার কান্না করে নিজেকে শান্ত করা প্রয়োজন। ভীষণভাবে প্রয়োজন!

চলবে??#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৭
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“মা!”

এই কথাটা শুনে কুয়াশা থমকে দাঁড়ায়। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কুয়াশা বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। এরইমধ্যে নিহাল কুয়াশাকে মা বলে সম্মোধন করে। কিছু মুহূর্তের জন্য সে যেন অন্য এক জগতে চলে গিয়েছিল। নিজ জ্ঞানে ফিরে কুয়াশা নিহালকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর পরম ভালোবাসাময় একটি চুমু এঁকে দেয় পিচ্চি ছেলেটার কপালে। কুয়াশাকে বিদায় দেওয়ার জন্য সবাই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন দৃশ্যের সাক্ষী হতে পেরে সবার মুখেই হাসি ফুটে ওঠে। মিসেস নাহার মেয়ের কাঁধে হাত রাখতেই সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“মা দেখলে? নিহাল আমাকে মা ডাকল। কিন্তু এই ডাক সে আমাকেই কেন ডাকল?”

“আমি শিখিয়েছি ওকে। যে তমি ওদের দুই ভাই-বোনকে এত ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করে তুলছ সেই তোমার মা ডাক শোনার অধিকার আছে। আর্শিয়াও তো এমনই চেয়েছিল। ওর ছেলে আর মেয়ে যেন কখনো মায়ের অভাব বুঝতে না পারে।”

মায়ের কথা শুনে কুয়াশা মা থা নেড়ে হ্যাবোধক জবাব দেয়। প্রথমে নিহাল তারপর ওয়ানিয়াকে আদর করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে সে খুশিমনে বের হয়ে যায় বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। আজ তার অনেক ভালো লাগছে। এই প্রথম সে কোনো বাচ্চার মুখে মা ডাক শুনেছে। এর থেকে তৃপ্তিদায়ক আর কি কিছু হতে পারে? উত্তরটা হয়তো নাবোধক হবে।

পথিমধ্যে কখন সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল তা জানা নেই কুয়াশার। তার ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনে। তিন্নি কল করেছে।

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বোন জানিস? তোর বুদ্ধি কাজে দিচ্ছে। গতকাল তোর সাথে দেখা করে ফিরে আসার পর থেকে আমি ফয়সালকে পাত্তা দিইনি একদম। রাতে ঘুমের ঘোরে খেয়াল করছিলাম ওও আমার দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিল। আমার সাথে একটু কথাও বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি শুনিনি ওর কোনো কথা।”

“এভাবে আরো কিছুদিন চালিয়ে যাও। আর নিজের যত্ন নিয়ো। এখন আমি রাখছি। গাড়িতে আছি তো।”

“আচ্ছা। সাবধানে থাকিস।”

“হুম।”

কথা বলা শেষে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে একটা বই বের করে পড়তে শুরু করে সে। “ইট এন্ড উইথ আস” বইটা পড়ছে সে। কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর তার বেশ ভালো লেগে যায় বইটি। তাই অনেকটা সময় ধরে সে বেশ মনোযোগ দিয়েই বইটা পড়তে থাকে।

অনেকটা পথ অতিক্রম করে দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থেকে কুয়াশা ঢাকায় এসে পৌঁছায়। নিজের ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নেমে একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। বাসায় ঢোকার সাথে সাথে আদ্রিতা কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে,

“দোস্ত তোকে এই কয়েকদিন অনেক মিস করেছি রে। কেমন আছিস তুই?”

“এতখানি পথ বাসে বসে আসার পরে কেমন থাকে মানুষ? ক্লান্ত নিশ্চয়ই?”

“ওহ হ্যা, তাই তো!”

“আমার প্রচুর মা থা ব্যাথা করছে। আমি ঘরে যাচ্ছি।”

“হ্যা তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি তোর জন্য একটু লেবুর শরবত বানিয়ে আনি।”

“আচ্ছা।”

কোনোরকমে ফ্রেস হয়ে আদ্রিতার বানানো লেবুর শরবত খেয়ে কুয়াশা লম্বা একটা ঘুম দেয়। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছয়টার দিকে আদ্রিতার ডাকে তার ঘুম হালকা হয়ে যায়।

“উফ আদ্রিতা ডাকছিস কেন আমাকে? একটু ঘুমাতে দে দোস্ত। আমার কাঁচা ঘুম ভেঙে দিস না।”

“এই মেয়ে এই, এটা তোর কাঁচা ঘুম? প্রায় তিন ঘন্টা ধরে তুই ঘুমাচ্ছিস। আর কত ঘুমাবি?”

“আর একটু!”

“একটুও না। তাড়াতাড়ি উঠে পড়। আমাদের বের হতে হবে?”

কুয়াশা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাব আমরা?”

“গেলেই তো দেখতে পাবি। এখন এত প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি উঠে চোখেমুখে পানি দে।”

“না, আগে বল কোথায় যাবি?”

“এখন বলা যাবে না। তোর জন্য বিশেষ একটা উপহার অপেক্ষা করছে।”

“উপহার?”

“হ্যা উপহার। এখন আর একটা প্রশ্নও করবি না। ওঠ বলছি।”

কুয়াশা বিছানা ছেড়ে উঠছে না দেখে আদ্রিতা এক প্রকার টেনেই তাকে তোলে। তারপর ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। কুয়াশা চোখেমুখে ভালো করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বের হয়ে আসে।

“কী পড়বি? আমি বোরকা পড়ব।”

“হ্যা বোরকা পড়বি। কিন্তু সব সময় যেটা পড়িস সেটা না।”

“তাহলে?”

“তুই এই বোরকা পড়বি আজকে।”

এটুকু বলেই আদ্রিতা তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে খুব সুন্দর কারুকাজ করা গাঢ় নীল রংয়ের বোরকা আর হিজাব বের করে।

“একি! আমি এই বোরকা পড়ব কেন? এটা তো কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তখন পড়ার জন্য মানানসই।”

“আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে একটু সুন্দর করে তৈরি হয়ে যেতে হবে। আমিও সুন্দর একটা জামা পড়ব।”

এই বলে আদ্রিতা ওর জামাও বের করে। হালকা বেগুনি রংয়ের অল্প কাজ করা একটা সুন্দর থ্রি-পিস পড়বে আদ্রিতা। কুয়াশা নিজের ভ্রূদ্বয় কুঁচকে প্রশ্ন করে,

“তুই মার্কেটে কখন গেলি? আর এসব কখন কিনে আনলি?”

“তুই ঘুমানোর পরে গিয়ে এসব নিয়ে এসেছি। এখন চটজলদি তৈরি হয়ে নে।”

“কীভাবে তৈরি হব?”

“আমিই তৈরি করে দিচ্ছি। তুই শুধু এই বোরকা পড়ে নে।”

বান্ধবীর কথামতো কুয়াশা বোরকা পড়ে চুপচাপ আয়নার সামনে থাকা চেয়ারে বসে পড়ে। আদ্রিতা খুব যত্নসহকারে করে কুয়াশাকে সাজাতে শুরু করে। সাজ বলতে আহামরি কিছু নয়। মুখে হালকা করে পাউডার ব্রাশ করে সামান্য একটু ব্লাশঅন লাগিয়ে দেয়। যেন গাল দু’টো গোলাপি হয়ে যায়। এরপর চোখে গাঢ় করে কালো রঙের কাজল আর ঠোঁটে অল্প করে খয়েরী রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়। ব্যাস! কুয়াশার সাজ সম্পূর্ণ। সাজ শেষে কুয়াশা নিজের মা থা য় খুব সুন্দর করে হিজাব পড়ে নেয়। এই সুযোগে আদ্রিতা নিজেও তৈরি হয়ে নেয়। দুই বান্ধবীর তৈরি হওয়া শেষ হতে হতেই ঘড়ির কাঁটায় আটটা বেজে গিয়েছে। আদ্রিতা তাড়া দেখিয়ে বলে,

“তাড়াতাড়ি চল কুয়াশা। এবার কিন্তু আমাদের দেরি হয়ে যাবে।”

“দেরি কে করল? আমি না তুই?”

“তোকে সাজাতে গিয়েই তো আমার তৈরি হতে একটু সময় লাগল।”

“ওহ তাই না?”

“তাই তো।”

“তুই এমনিতেও সব সময় দেরি করিস দোস্ত। এটা নতুন কিছু না।”

“পরে ঝগড়া করিস। এখন বের হ বোন।”

বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগে না তাদের। আধ ঘন্টার মধ্যেই তারা দু’জন পৌঁছে যায় সেখানে। চারপাশে সুন্দর করে সবকিছু সাজানো একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট দেখে কুয়াশা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। মূলত এখানেই কুয়াশার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

“কী? কেমন লাগছে?”

“অনেক সুন্দর। তুই কী এখানে আমাকে খাওয়াতে নিয়ে এলি? তাহলে তো সাফওয়ানকেও ডাকতে পারতিস।”

“কেন রে? ভাইয়াকে মিস করছিস নাকি?”

“আরে ওও আমাদের বন্ধু না? আমরা তিনজন তো একসাথেই বেশিরভাগ সময় ঘুরতে বের হই। এজন্য বললাম। ওকে ডাকলে খুশি হতো।”

“আমাদের বন্ধু না। বল শুধু তোর একার বন্ধু। আমাদের তো ভাইয়া হয়।”

“আমার আর তোদের ক্ষেত্রে আলাদা কেন?”

কথা বলতে বলতে কুয়াশা হঠাৎ খেয়াল করে তার পুরো পরিবার একপাশে বসে আছে। কুয়াশা ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে এটা দেখে। রীতিমতো চিৎকার করে বলে,

“মলি তোরা এখানে?”

সবার কুয়াশার এমন অবস্থা দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়। মলি হেসে কুয়াশার কাছে এগিয়ে আসে।

“এটা হলো তোর জন্য প্রথম সারপ্রাইজ।”

“তোরা এখন এখানে কীভাবে?”

“তুই বের হয়ে আসার এক ঘন্টা পরই আমরা বের হয়েছি। আমরা বগুড়া থেকে এসে সোজা এখানকার পাশের একটা হোটেলে উঠেছি। ওখান থেকে ফ্রেশ হয়ে সুন্দর করে সাজুগুজু করে এখানে চলে এসেছি।”

“কিন্তু এসবের মানে কী? আর প্রথম সারপ্রাইজ মানে? আরো কয়টা সারপ্রাইজ আছে?”

মলি আর কিছু বলে না। চোখের ইশারায় কুয়াশাকে পেছনে তাকাতে বলে। কুয়াশা পেছনে তাকিয়ে আরেক দফা চমকে যায়। আজ যেন তার চমকানোরই দিন!

চলবে??#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৮
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

নীল রঙের শার্ট, কালো রঙের জিন্স, সাথে হাতে বড়ো ডায়ালের একটা ঘড়ি আর চুলগুলো হালকা ব্রাশ করা লুকে সাফওয়ানকে বেশ সুন্দর লাগছে। কুয়াশাকে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে সাফওয়ান কুয়াশার অনেকটা কাছে এসে বলে,

“শুভ জন্মদিন কুয়াশা।”

এতক্ষণে কুয়াশার মনে পড়ে আজ তার পঁচিশ তম জন্মদিন। যা সে একদম ভুলেই গিয়েছিল। সবার “শুভ জন্মদিন” চিৎকারে মুখরিত আজ চারপাশ। সেই সাথে গম্ভীর মুখের অধিকারী মেয়েটার মুখেও আজ প্রাণোচ্ছল হাসি বিরাজমান। এমন সুন্দর মুহূর্তগুলো যদি এখানেই থেমে যেত তাহলে হয়তো পরবর্তী ঝড়ের সম্মুখীন আর কাউকে হতো না।

সাফওয়ান ইশারায় একজনকে কিছু একটা বলে। অতঃপর কুয়াশাকে নিয়ে অপর পাশে চলে যায়। পেছন পেছন বাকিরাও যায়। সাফওয়ান কুয়াশাকে একটা টেবিলের সামনে নিয়ে এসে বলে,

“এই হলো তোমার জন্মদিনের কেক।”

“এটা জন্মদিনের কেক? এটা তো আইসক্রিম কেক।”

“হ্যা আইসক্রিম কেক। সবাই সাধারণ কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করে। তুমি তোমার পছন্দের আইসক্রিম কেক কেটে জন্মদিন স্মরণীয় করে রাখবে।”

“আচ্ছা এই সবকিছুর পরিকল্পনা কার কার?”

মলি কুয়াশার কাছে এগিয়ে এসে এক গাল হেসে উত্তর দেয়,

“আমার, আদ্রিতার আর সাফওয়ান ভাইয়ার। আমরা তিনজন অনেক ভেবেচিন্তে তারপর সবকিছুর আয়োজন করেছি। সাফওয়ান ভাইয়া অবশ্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছে এসবের জন্য। তাই বিশেষভাবে তোর ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।”

কুয়াশা সাফওয়ানের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলে,

“কখনো ভাবিনি আমার জীবনের এত উত্থানপতনের পর আমি এইভাবে কোনোকিছু উদযাপন করতে পারব। সেটাও কিনা আমার জন্মদিন! সবকিছুর জন্য তোমাকে অনেক বেশিই ধন্যবাদ সাফওয়ান।”

“ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য অনেক সময় আছে ম্যাডাম। আগে কেক কাটুন। নয়তো পুরো কেক গেল যাবে এখন।”

কুয়াশা সবাইকে সাথে নিয়ে কেক কাটতে যাবে এমন সময় আদ্রিতা বলে ওঠে,

“এই তুই মোম নিভাবি না?”

“আমার অন্ধকার জীবনটাকে আরো অন্ধকার কেন করব? তার থেকে মোমবাতি যেভাবে জ্বলছে সেভাবেই জ্বলুক।”

“আচ্ছা।”

কুয়াশা কেক কেটে সর্বপ্রথম মা’কে খাইয়ে দেয়। তারপর সাফওয়ান, বাবা, ভাই, বাচ্চাদের, মলি, আদ্রিতা সবাইকে খাইয়ে দেয়। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে তার নিজের কাছেও আজ অনেক ভালো লাগছে।

সবার মাঝ থেকে বের হয়ে হাতে একটা মাইক নিয়ে আদ্রিতা কিছুটা ভাব নিয়েই বলে,

“সবাই একটু শান্ত হয়ে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করুন। কারণ আর কিছু মুহূর্তের মধ্যেই আজকের সবচেয়ে বড়ো ধামাকার সাক্ষী হতে যাচ্ছি আমরা। তাই এখন সমস্ত আলো বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি।”

আদ্রিতার বলতে দেরি, কিন্তু আলো নিভে যেতে দেরি হয়নি। অন্ধকারের মধ্যে কেউ একজন কুয়াশার হাত টেনে ধরে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। কুয়াশার সাথে কি হচ্ছে তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। মলিকে উদ্দেশ্য করে সে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু আলো জ্বলে ওঠে। আবছা আলোয় কুয়াশা নিজের সামনে সাফওয়ানকে আবিষ্কার করে।

“প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় কিনা জানি না। তোমায় যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন শুধুমাত্র কথা বলার জন্যই এগিয়ে গিয়েছিলাম। কেন না আমি খুব বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকতে পারি না। আমি কথা বলার সময় তুমি বিরক্ত হচ্ছিলে সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু তবুও কথা বলেছি। আমরা পাশাপাশি থেকেছি অনেকটা দিন। এখনো আমরা একসাথে আছি। এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। সাথে পরিবর্তন ঘটেছে আমার অনুভূতিগুলোর। কয়েক মাসের ব্যবধানে অচেনা তুমি হয়ে উঠলে আমার মনোহারিণী। ঠিক কবে, কখন, কীভাবে তোমার প্রেমে পড়েছি তা আমি জানি না। আচ্ছা, ভালোলাগা, ভালোবাসা তো হুট করেই হয় তাই না? আমিও তোমাকে হুট করেই ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তোমার সম্পর্কে প্রায় সবই জানি। সবকিছু জেনেই আমি তোমাকে গ্রহণ করতে চাই। কারণ তোমার সাথে যা যা হয়েছে তাতে তোমার কোনো দোষ নেই। আমি তোমাকে করুণা করছি না। বরং তোমার থেকে আমার ভালোবাসা ভিক্ষা চাচ্ছি। তুমি কী হবে আমার? আমার মনকুঠুরিতে কী রাজ করবে তুমি? আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে আমাকে বাঁচাবে কী তুমি?”

এতক্ষণ স্তব্ধ নয়নে নিজের সামনে দুই হাঁটু গেড়ে অসহায় চাহুনি নিয়ে বসে থাকা ছেলেটার কথা শুনছিল কুয়াশা। তার মধ্যে অবাক হওয়ার চিহ্ন মাত্র নেই। হয়তো সে সবকিছুই আন্দাজ করতে পেরেছিল। সাফওয়ান এক দৃষ্টে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করছে তার উত্তর শোনার আশায়। অজানা এক ভয় গ্রাস করে রেখেছে তাকে।

কুয়াশা চারপাশে তাকিয়ে সবার চেহারা দেখে নেয়। সবাই তার উত্তর শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রার্থনা করছে যেন সে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দেয়। কিন্তু কুয়াশা সবার আশায় লবণ ছিটিয়ে বলে ওঠে,

“আমি জানতাম এমন একটা দিন আসবে। তবে সেই দিনটা এত তাড়াতাড়ি আসবে সেটা ভাবিনি। আমি খুব ভালো করেই জানি, একজন ছেলে আর একজন মেয়ের মধ্যে কখনো বন্ধুত্ব হতে পারে না। এইক্ষেত্রে হয় ছেলে দুর্বল হয়। নয়তো মেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। অথবা দু’জনেই দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি সাফওয়ান। আমি চেয়েছিলাম আমাদের বন্ধুত্বটাকে সুন্দর একটা পরিণতি দিতে। তবে এখন হয়তো সেটা আর সম্ভব হবে না।”

“মানে?”

“আমাদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব আছে সেটা আমি আজকেই শেষ করে দিতে চাই!”

“কুয়াশা!”

“আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই সাফওয়ান। এমনিতেই পরিস্থিতি আমার অনুকূলে নেই আর। আমাকে ভালোবেসে তুমি কষ্টের সাগরে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছ। কারণ আমার জীবনে আমি আর কোনো পুরুষকে চাই না। আমি বাকিটা জীবন সঙ্গিহীন থাকতে চাই।”

“কারণ? তুমি কি রায়াদ কিংবা তুরাবের প্রতি এখনো কিছু অনুভব করো?”

“না, আমার কারোর প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না এখন। যে প্রাক্তন প্রেমিক আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে শেষ করার চেষ্টা করেছে তার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা কিংবা যে স্বামী আমাকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে পর মুহূর্তে ছুঁড়ে ফেলেছে তার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে অতি ন্যাকা নারী সেজে সকলের কাছে মহান হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। জীবনটা আমার। এতদিন এই জীবনের সুখ বিসর্জন দিয়ে সবার কথা ভেবেছি। কিন্তু আর নয়। এখন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমি আসলে আর কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি এখন আমি তোমার সাথে জড়িয়ে যায়, তাহলে তুমি আনার সাথে কখনোই সুখী হবে না। এটাই মূল কারণ।”

কুয়াশার কথাগুলো সাফওয়ানের মনে ঝড় তুলছে। সে আকুতিভরা কণ্ঠে বলে,

“আমি তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি কুয়াশা। ভালোবাসা তো বলে কয়ে আসে না। এখানে আমার কি দোষ বলো? ভালোবাসা কি পাপ? আমি কি ভালোবেসে অন্যায় করেছি? আমার কি ভালোবাসার অধিকার নেই?”

“ভালোবাসা পবিত্র। তুমি ভালোবেসে অন্যায় করোনি। তোমার ভালোবাসার অধিকার আছে। কিন্তু তুমি ভুল সময়ে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছ। জানি, এতে তোমার কোনো দোষ নেই। দোষটা হয়তো আমার। তোমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে এই সম্পর্কের পরিণতি পরবর্তীতে কি হবে তা ভাবা উচিত ছিল আমার।”

“কেন এমন করছ তুমি? সঙ্গিহীন কি বাঁচা যায়?”

“যায় তো। এমন কত মানুষ আছে যারা জীবনে কখনো বিয়েই করেনি। তারা কি বেঁচে নেই? ম রে যাওয়ার আগে যারা সঙ্গিহীন ছিল তারা কি সময়ের আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে? না তো তাই না? তাহলে আমি কেন পারব না? তাছাড়া আমার কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব। নিজের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করা, অনেকগুলো মানুষের দেখাশোনা করা, বাচ্চাদের খেয়াল রাখা, পরিবারের বড়ো মেয়ে হিসেবে বাবা-মাকে আগলে রাখা, নিজেকে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে গড়ে তোলা, সবকিছু মিলিয়ে আমি বেশ ভালোই থাকব।”

“তুমি তো ভালো থাকবে। কিন্তু আমার ভালো থাকা নিয়ে তুমি ভাববে না?”

“ভুল মানুষকে ভালোবাসলে বরাবরই কষ্ট পেতে হয়। এটা আমার জীবন সম্পর্কে ধারণা পেয়েও বুঝতে পারোনি তুমি?”

কুয়াশার এমন “না” বোধক উত্তরে আশাহত হয় সবাই। কুয়াশার কাছে এসে সবাই অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যেন সে সাফওয়ানকে মেনে নেয়। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্ত থেকে এক পা পেছনে ফেলতে রাজি নয়!

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here