কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব -২০+২১+২২

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২১
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“কুয়াশা, আমি তোমাকে ভালোবাসি!”

সাফওয়ানের মুখে এমন কথা শুনে কুয়াশা চকিত দৃষ্টে তাকায় তার দিকে। ছেলেটার কথার সুর বোধগম্য হতেই সে কম্পিত স্বরে বলে ওঠে,

“তুমি আমার অতীত, বর্তমান সবই জানো। তবুও এমন কথা কেন বলছ?”

“তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। তুমি পরিস্থিতির চাপে পড়ে আজ এখানে এসেছ। তুমি লড়াকু একজন মেয়ে। সেই তুমি কেন অতীত নিয়ে ভাবছ? আমরা কি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে পারি না?”

“এক মেয়ের জীবন কয়জন পুরুষ আসতে পারে সাফওয়ান? আমার জীবনে একজন ব্যর্থ প্রেমিক, আরেকজন প্রতারক স্বামীর নাম জড়িয়ে আছে। আমি আরেকজন ছেলের নাম আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাই না। নিজের কাছেই লজ্জা লাগে আমার। যে আমি সব সময় এক পুরুষে আসক্ত থাকতে চেয়েছি তার জীবনে তিনজন পুরুষ? অসম্ভব! আমার দ্বারা আর কোনো সম্পর্কে জড়ানো সম্পর্ক নয়।”

“কুয়াশা একটু ভেবে দেখতে তো ক্ষতি নেই তাই না? আমি তোমাকে খুব সুখে রাখব কথা দিচ্ছি।”

“সাফওয়ান আমার কী মনে হয় জানো? একজন ছেলে আর একজন মেয়ে কখনো একে-অপরের বন্ধু হতে পারে না। যেকোনো একজন দুর্বল হয়ে যায়। আমাদের ক্ষেত্রে সেই একজন হলে তুমি। সুতরাং আমাদের এই বন্ধুত্বের এখানেই ইতি টানা উচিত। নয়তো দেখা যাবে তুমি আমার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। আমি আর কারোর কষ্টের কারণ হতে চাই না। মাফ করে দিয়ো আমাকে। আজ এই মুহূর্ত থেকে আমাদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আমাদের দু’জনের পথ সম্পূর্ণ আলাদা!”

কুয়াশার ডাকে ঘোর কাটে সাফওয়ানের। এতক্ষণ সে কল্পনায় এসব ভাবছিল। তার মন অস্থির হয়ে উঠেছে। তার কল্পনা যদি সত্যি হয় তাহলে সে কোনোদিনও কুয়াশাকে নিজের করে পাবে না। উল্টো বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। ভালোবেসে না হোক, অন্তত বন্ধু হয়ে সে কুয়াশার পাশে থাকতে চায় সারাজীবন।

“এই ছেলে এত কী ভাবছ তুমি? ঘুরতে এসেও কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলে চলবে? এই দেখো সূর্যোদয় হচ্ছে। এই মুহূর্তটা উপভোগ করো। কল্পনা করার জন্য অনেক সময় পাবে। কিন্তু এত সুন্দর মুহূর্ত আর ফিরে পাবে না বুঝেছ?”

সাফওয়ান ছোট্ট করে উত্তর দেয়,

“হুম।”

‘হ্যা’ বোধক জবাব দিয়ে সাফওয়ান কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এসেছে ঠিকই। তবে সে সূর্যোদয় দেখছে না। সে কুয়াশাকে দেখছে। মেয়েটার চোখ দু’টো বড্ড মায়াবী। বড়ো বড়ো চোখ দু’টো যেন মায়ায় ভরপুর। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মেয়েটার পুরো মুখ জুড়েই সৌন্দর্য ঘুরে বেড়ায়। গালের দুই পাশে কিছু ব্রণের দাগ, কপাল জুড়ে নতুন কিছু ব্রণের আবির্ভাব হয়েছে। ঠোঁটের উপরে থাকা ছোট তিলটাও যেন হাসে যখন মায়াবিনীর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। সুদীর্ঘ কেশের অধিকারী এই মেয়ে। বাতাসের তালে তালে তার চুলগুলো যেন আপনমনে নেচে ওঠে। আচ্ছা, সৌন্দর্যের জন্য আর কি কিছুর প্রয়োজন আছে? যার মন সুন্দর, সে তো এমনিতেই সুন্দর। আর যে রূপে, গুণে সবদিক থেকে সেরা, সে তো অনন্য সুন্দর। ঠিক যেমন কুয়াশা!

“তুমি অনন্য সুন্দর কুয়াশা!”

হঠাৎ সাফওয়ানের কন্ঠে এমন কথা শুনে কুয়াশা হেসে উত্তর দেয়,

“মজা করো আমার সাথে?”

“মজা করব কেন?”

“আমার মত মেয়ে সুন্দর হয় কীভাবে? হ্যা, আমার চোখে আমিই সেরা। কিন্তু কোনো ছেলের চোখে আমি অনন্য সুন্দর এটা মানতে বেশ কষ্ট হয় আমার।”

“কেন?”

“ছেলেরা তো সাদা চামড়ার প্রেমে পড়ে বেশি। সেদিক থেকে আমি প্রেমে পড়ার মত সুন্দরী নই।”

“সবাই কী সমান হয়?”

“না।”

“আমার চোখে তুমি সত্যিই অনন্য সুন্দর। তোমার গালের দুই পাশে থাকা ব্রণের দাগ কিংবা কপালে থাকা ব্রণগুলো তোমাকে আরো সুন্দর হতে সাহায্য করেছে। তোমার চোখ দু’টো তোমার সৌন্দর্যের প্রতীক। তোমার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি আর ঠোঁটের উপরে থাকা কালো তিল তোমার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এমন এলোকেশী কন্যাকে কার না ভালো লাগে? এরপরও বলবে তুমি সুন্দর নও?”

“আমি নিজেকে ভালোবাসতে জানি। সবার আগে নিজেকে ভালোবাসা প্রয়োজন। আমি যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারি তাহলে অন্যজনকে কীভাবে ভালোবাসবো? আমি নিজের ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে জানি। বারবার নিজের ছবি জুম করে দেখতে জানি। নিজের প্রেমে পড়তে জানি। নিজেকে নিজেই বলতে জানি, আমি সুন্দর। বাকি সবার থেকে আলাদা হওয়ার নতুনত্ব আমাকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে। আমি নিজেই নিজের প্রশংসা করতে জানি। নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জায় মুখ ঢেকে হাসতে জানি। কিন্তু, একজন ছেলের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হতে জানি না। কারণ, আমার ভালোবাসার মানুষ ব্যতিত আর কোনো ছেলে আমাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুক তা আমার পছন্দ নয়।”

“তুমি এমন কেন?”

“আমি এমনই। জানো? আমার জীবনে ছেলে বন্ধুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। প্রথমবার প্রেমে পড়েছিলাম রায়াদের উপর। তার আগে কিংবা পড়ে আমি অন্য কাউকে দেখে সেই অনুভূতি অনুভব করিনি যা রায়াদের প্রতি করতাম। রায়াদ ব্যতিত কোনো ছেলের সাথে কথা বলার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সে চলে যাওয়ার পর তুরাব আসে আমার জীবনে আমার স্বামী হয়ে। তার প্রতি অনুভূতি জাগ্রত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ তাকে আমি খুব গভীর থেকে দেখেছি। নিজের স্বামীর প্রতি অনুভূতি জন্ম নিতে আমার অনেক সময় লেগেছে। অদ্ভুতভাবে তার প্রতি পুরোপুরি অনুভূতি জন্মানোর আগেই তার সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। আর সর্বশেষ তুমি এলে। তোমাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ আমার সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে তুমি আমাকে সাহস জুগিয়েছ। বন্ধু হিসেবে তোমাকে পাশে পেয়ে আমি অনেক বেশিই খুশি। আমাকে বুঝতে পারো তুমি। যা অন্য আর কোনো ছেলে পারেনি। তুমি চলে গেলে আর কোনো ছেলে আমার জীবনে আসবে না এটুকু কথা দিতে পারি। এখন ছেলেদের প্রতি কোনো টান অনুভব করতে পারি না আমি। হয়তো বারবার ঠকে যাওয়ার ফলাফল এটা!”

কুয়াশার কথায় সাফওয়ানের কল্পনার কথাগুলো মনে পড়ে। সে আনমনে ভাবে,

“তবে কি আমার কল্পনায় সত্যি হবে?”

আর কিছু ভাবতে পারে না সে। ভালো লাগছে না এসব ভাবতে। তার থেকে সবকিছু যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক।

কিছুক্ষণ পর মল্লিকা আদ্রিতাকে সঙ্গে নিয়ে কুয়াশাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কুয়াশা হাসিমুখে বলে,

“প্রেম করা হলো ম্যাম?”

“কাকে বললি?”

“কেন ম্যাম? আপনি প্রেম করেন না বুঝি? শুধু আদ্রিতাকে বলিনি। আপনাকেও বলেছি।”

“ওটাকে প্রেম বলে? সারাক্ষণ বেয়াদবটা আমার সাথে ঝগড়া করে। আদ্রিতাকে দেখ। কত সুন্দর হেসে হেসে দু’জন কথা বলে। আর আমাকে তো চিল্লাতে হয় সারাক্ষণ।”

“এই তোরা বিয়ে করবি কবে বল তো?”

“জানি না।”

“জানিস না মানে কী?”

“এই বিষয়ে কথা বলিনি এখনো।”

“আর কবে বলবি?”

“সত্যিই এবার ওকে বিয়ের কথা বলা উচিত আমার।”

“তাড়াতাড়ি বল। আর কতদিন দূরে দূরে থাকবি? এভাবে থাকলে ঝগড়া ছাড়া আর কিছু হবে না।”

“সম্পর্কের মাত্র আট মাস। এজন্য চাপ দিচ্ছি না। কিন্তু তুই যখন বলছিস তখন এই বিষয়ে আমি ওর সাথে কথা বলব।”

“এই যে মিস আদ্রিতা, আপনার কি বিয়ে করার ইচ্ছা নেই?”

কুয়াশার কথায় আদ্রিতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে উত্তর দেয়,

“থাকবে না কেন? অবশ্যই ইচ্ছা আছে।”

“আমার বিয়ের আগে থেকে তোর সম্পর্ক শুরু হয়েছে। আমি বিয়ে করে কয়েক মাস সংসার করলাম। এরপর আমার বিয়ে ভেঙে পর্যন্ত গেল। অথচ তোর বিয়ের কোনো নামগন্ধ নেই।”

“ওর পরিবার থেকে আমাকে দেখতে আসবে কিছু দিন পর। এই নিয়েই এতক্ষণ কথা বললাম আমরা।”

“বাহ্ ভালো তো। এক কাজ কর। তুই আর মলি দু’জন একসাথে বিয়ের অনুষ্ঠান কর। দারুণ হবে।”

“আমাদের বিয়ে নিয়ে পরে কথা হবে। আগে বল তুই বিয়ে করবি কবে?”

মলির এমন প্রশ্নে কুয়াশা কোনো উত্তর দেয় না। চুপ করে সবার সামনে থেকে চলে যায়। সাফওয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে কুয়াশার যাওয়ার পানে।

“তোমাদের বান্ধবী কি আর বিয়ে করতে চায় না?”

“জানি না ভাইয়া।”

“কুয়াশা তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয় মলি। ওকে জিজ্ঞাসা করো। নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় না সে?”

“কিছুটা সময় দরকার ওর। এসব নিয়ে এখনই এত প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। ওর সাথে যা যা হলো তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ওকে আরো কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন।”

চলবে??

বিঃদ্রঃ সবাইকে রমজানের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। 💙#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২২
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“কুয়াশা আমার বাচ্চা দু’টোকে তুই বাঁচা বোন। ওদের একমাত্র তুই বাঁচাতে পারবি। দরকার হলে ওদের অনাথ আশ্রমে দিয়ে আসিস। তবুও আমার বাচ্চাদের বাঁচিয়ে নে এখান থেকে।”

বাল্যকালের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীকে কাঁদতে কাঁদতে এসব বলতে শুনে চমকে যায় কুয়াশা। সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে মাত্রই আড্ডা দিতে বসেছে এমন সময় কুয়াশার ফোনে কল আসে। কলের অপরপ্রান্তে থাকা মেয়েটা তাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই এক নিঃশ্বাসে উপরোক্ত কথাগুলো বলে ওঠে।

“আর্শিয়া কী হয়েছে তোর? এভাবে কথা বলছিস কেন? আর বাচ্চাদের বাঁচাব মানে? ওদেরই বা কী হয়েছে?”

“প্রায় বছর দুয়েক হলো তোর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। এই দুই বছরে আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। কি কি হয়েছে সেইসব আমার ডায়েরিতে লেখা আছে। তুই সেই ডায়েরি পড়লে সব জানতে পারবি পরবর্তীতে। তবে এই মুহূর্তে তুই আমাদের বাঁচিয়ে নে। আমার হাতে বেশি সময় নেই। যেকোনো মুহূর্তে ওরা আমাকে আর আমার বাচ্চাদের মে রে ফেলবে।”

“কারা এমন করবে?”

“আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন!”

“কী বলছিস এসব?”

“আমি সত্যি বলছি কুয়াশা। আমাকে না হোক, অন্তত আমার বাচ্চাদের বাঁচা বোন।”

“আচ্ছা তুই শান্ত হ। এখন তোরা কোথায় আছিস? আমাকে ঠিকানা বল। আমি এখনই আসছি।”

“আমি এখন বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি রে। কখন কোথায় যাচ্ছি নিজেও জানি না। আপাতত গাজীপুরের একটা হোটেলে আছি।”

“হোটেলের নাম বল।”

“গ্রিন প্যালেস।”

“আচ্ছা শোন, আমি এখন কক্সবাজারে আছি। এখান থেকে সোজা তোর কাছে যাচ্ছি। তুই কোথাও যাবি না। ওখানেই থাক। আর কিছু হলে সাথে সাথে আমাকে কল করে জানাবি।”

“তাড়াতাড়ি আয়।”

“হুম। রাখছি এখন।”

কুয়াশা ফোন রেখে সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“আমাদের এখনই গাজীপুর যেতে হবে।”

সাফওয়ান কুয়াশাকে অস্থির হতে দেখে প্রশ্ন করে,

“কী হয়েছে? কে কল দিয়েছিল? তুমি এমন করছ কেন?”

“আর্শিয়া কল দিয়েছিল। ওও আমার বাল্যকালের বন্ধু। মলি আমার জীবনে এসেছে হাইস্কুলে থাকতে। আর আর্শিয়া আমার প্রাইমারি স্কুলের বান্ধবী। ওর অনেক বিপদ এখন। ওকে আর ওর বাচ্চাদের ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজন মে রে ফেলতে চাচ্ছে।”

“কী বলছিস কী তুই?”

“আমি ঠিকই বলছি মলি। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। যেভাবেই হোক ওদেরকে বাঁচাতে হবে। এখনই বের হতে হবে আমাদের।”

“আচ্ছা আমি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।”

আদ্রিতার কথায় মলিও উঠে সবকিছু গোছাতে শুরু করে। সবাই মিলে যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু গুছিয়ে রওনা দেয় গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে তিন্নি আর ফয়সালের সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। ফয়সাল এখন তিন্নিকে সময় দেয় না। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে সারাক্ষণ ঝামেলা লেগেই থাকে। এখনো দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে।

“তোমার সমস্যা কী ফয়সাল? তুমি এখন আমাকে আগের মত সময় দাও না কেন?”

ফয়সাল মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বিরক্তির সুরে বলে,

“এই রাতের বেলা আমাকে জ্বালিয়ো না তিন্নি। বাচ্চা ঘুমাচ্ছে। তুমিও ঘুমাও এখন।”

“ঘুমাব মানে কী হ্যা? আজ তোমাকে বলতেই হবে। কেন করছ এমন?”

“কী করলাম আমি?”

“জানো না?”

“না, জানি না।”

“মিথ্যা বলবে না একদম। তুমি এখন আর আগের মত আমার কাছে আসো না। আমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করো না। সব সময় দূরে দূরে থাকো। এমন কেন করছ তুমি?”

“এসব তোমার ভুল ধারণা। এমন কিছুই আমি করিনি।”

“তাহলে কেন আমার কাছে আসো না তুমি?”

“ভালো লাগে না তাই।”

“মানে?”

“মানে তোমার কাছে যেতে এখন আমার ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে তোমাকে দেখলে।”

“এই কথা বলতে পারলে তুমি? আমাকে ভালো লাগে না তো কাকে ভালো লাগে তোমার?”

“কাউকেই ভালো লাগে না। হয়েছে? তোমাকে ভালো না লাগার অনেক কারণ আছে।”

“কী কারণ?”

“তোমার মধ্যে তোমার সেই সৌন্দর্য নেই যার প্রেমে পড়েছিলাম আমি। তুমি এখন নিজের প্রতি উদাসীন। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ, কতটা অসুন্দর লাগে তোমাকে। তোমার কাছে গেলে আমি আগের মত কিছু অনুভব করতে পারি না। অনুভূতি কাজ করে না আমার মধ্যে। এখন আমি কী করতে পারি?”

নিজের স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে তিন্নি থমকে যায়। তার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে এমন কথা শুনে নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে তার।

“তুমি সন্তান চেয়েছিলে। আমি তোমার চাওয়াকে সম্মান করেছি। তুমি বলেছিলে তুমি বাবা ডাক শুনতে চাও। তোমার ইচ্ছা পূরন করার জন্য আমি এত তাড়াতাড়ি সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দীর্ঘ নয় মাস একুশ দিন নিজের মধ্যে একজনকে বড়ো করে তুলেছি। অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে অবশেষে তোমাকে একটা রাজকন্যা উপহার দিয়েছি। এরপর বাচ্চাকে একা হাতে সামলানো, সংসার সামলানো, আবার তোমাকে সময় দেওয়া, এসব কিছুর পরে আমি নিজের যত্ন নেওয়ার সময় পাইনি। হ্যা, হয়তো নিজের জন্য সময় বের করতে পারতাম৷ কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ তোমাদের সময় দেওয়া কম হোক এটা আমি চাইনি। যার জন্য এতকিছু করলাম আজ সেই মানুষটা আমাকে এসব বলছে? আমি কি সত্যিই এসব শোনার মত কাজ করেছি ফয়সাল?”

তিন্নি এক নাগাড়ে কথাগুলো বললেও ফয়সাল কিছুই শোনেনি। কারন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তিন্নি নিজের চোখের পানি মুছে পুনরায় বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। যে কান্নার আওয়াজ এই মুহূর্তে ফয়সালের কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না। হয়তো কখনো পৌঁছাবেও না!

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার বাস ভ্রমণ শেষে কুয়াশা, সাফওয়ান, মলি আর আদ্রিতা এসে পৌঁছায় “গ্রিন প্যালেস” হোটেলের সামনে। হোটেলের ভেতরে ঢোকার পর উপরের ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে সবাই ছুটে যায় সেদিকে। চারপাশে মানুষের আনাগোনা দেখে আৎকে ওঠে সবাই।

“কী হচ্ছে ওখানে? আদ্রিতা আর ওর বাচ্চারা ঠিক আছে তো?”

মলির কথায় কুয়াশা দৌড়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। কয়েকজন মুখোশধারী লোক হাতে বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভয়ে কেউ নড়তে পারছে না। সবাইকে ভয় দেখিয়ে এক পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছে লোকগুলো। আর্শিয়া নিজের দুই বাচ্চাকে বুকে আগলে নিয়ে একপাশে জড়সড় হয়ে বসে আছে। কুয়াশা ছুটে ওর কাছে চলে যায়। কুয়াশাকে দেখে মুখোশধারীদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠে,

“এই মেয়ে, কে তুমি? এখানে কেন এসেছ?”

“আমি কে সেটা পরে জানবেন। আগে বলুন আপনারা কারা? আর এখানে কী হচ্ছে এসব?”

“নিজের ভালো চাও তো চলে যাও এখান থেকে।”

“একদম চুপ। একজন মেয়েকে অসহায় পেয়ে তার সামনে নিজেদের শক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে হ্যা? এত সাহস হয় কী করে আপনাদের?”

“এই মেয়ে তো অতিরিক্ত কথা বলছে। বস এটাকেও কি মে রে দিব?”

পাশ থেকে একজনের মুখে এমন কথা শুনে কুয়াশা রাগে চোখ বন্ধ করে নেয়। কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আপনারা কেমন মানুষ বলুন তো? একটা মেয়ে আর তার সন্তানদের এভাবে মে রে ফেলার হুমকি দিচ্ছে কয়েকজন, আর আপনারা সেটা দেখে ভয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাদের এতজনের সাথে এই কয়েকজন কি সত্যিই পেরে উঠবে? নিজেদের প্রতি কী একটুও আত্মবিশ্বাস নেই আপনাদের? সাহস থাকলে রুখে দাঁড়ান এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।”

কুয়াশার কথা শুনে প্রথমে সাফওয়ানসহ কয়েকজন ছেলে এগিয়ে আসে। বাকিরা এটা দেখে মনে সাহস নিয়ে মুখোশধারী লোকগুলোর দিকে এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সবাই হৈচৈ করতে শুরু করলে মুখোশধারী লোকগুলোর মধ্যে থাকা তাদের বস একটা ধারালো ছু রি নিয়ে কুয়াশার দিকে তেড়ে যায়। সবাই হৈচৈ করার ফলে এটা কারোর চোখে পড়ে না। কুয়াশা পেছন ঘুরতেই লোকটা ছু রি সরাসরি তার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। কুয়াশা চিল্লিয়ে ওঠে। কুয়াশার চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকিয়ে চমকে যায়। আকস্মিক এমন কিছুর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। সবাই থমকে দাঁড়ায়। এক মুহূর্তের মধ্যেই যেন চারপাশের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়!

চলবে??#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৩
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

কুয়াশা মাটিতে বসার সাথে সাথে আর্শিয়া লুটিয়ে পড়ে তার কোলে। ঘটনার আকষ্মিকতায় কুয়াশা স্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আর্শিয়ার দিকে। মেয়েটা তাকে বাঁচাতে নিজের জীবন দিতে একবারও ভাবল না। এটা ভেবেই কুয়াশার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রুপাত হতে শুরু করে। কম্পিত কণ্ঠে আর্শিয়াকে বুকে আগলে নিয়ে কুয়াশা বলে,

“এটা কেন করলি তুই?”

ব্যাথায় ছটফট করা মেয়েটা মুহূর্তের মধ্যে হেসে উত্তর দেয়,

“আমার জীবন এমনিতেও ইতি টানত আজ। এরা আমাকে বাঁচতে দিবে না আমি জানি। কিন্তু তোর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারতাম না। আমার জন্য তুই নিজের জীবন দিয়ে দিবি তা আমি চাই না। আচ্ছা আমার মৃ ত্যু র পর আমার সন্তানদের নিজের সন্তানের মত আগলে রাখবি তো তুই?”

“তোর সন্তান মানে আমারো সন্তান। আমি তো ওদের খালামনি। ওদেরকে নিজের সন্তানের মত করে আগলে রাখা আমার দায়িত্ব। কিন্তু তোর কিছু হতে দিব না আমি। এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাব তোকে।”

“না রে বোন, আমার হাতে বেশি সময় নেই। শোন, আমার ব্যাগে একটা লাল ডায়েরি আছে। ওটা সময় করে পড়ে নিস। তাহলে তুই তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।”

“আর্শিয়া ভাইয়া কোথায়?”

“আহনাফ তো আমাদের ছেড়ে আরো আগেই চলে গিয়েছে। পৃথিবীতে আমাকে আর সন্তানদের রেখে সে চলে গিয়েছে দূর আকাশের ঠিকানায়।”

এমন কিছু শোনার জন্য কুয়াশা বিন্দু মাত্র প্রস্তুত ছিল না। নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আহনাফ আর এই পৃথিবীতে নেই।

“আর্শিয়া তোর সাথে এত কিছু হয়ে গেল। তুই আমাকে এসব কিছু জানাসনি কেন?”

“পরিস্থিতি আমার অনুকূলে ছিল না। আমি চেয়েও তোকে কিছু জানাতে পারিনি। আর যখন জানালাম তখন সবকিছু হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। সবই আমার ভাগ্য। আচ্ছা বাচ্চাদের একটু আমার কাছে নিয়ে আয়।”

কুয়াশা ইশারায় মলি আর আদ্রিতাকে বাচ্চাদের নিয়ে আসতে বলে। নিষ্পাপ বাচ্চা দু’টো ভয়ে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের। মায়ের কাছে আসতেই যেন তারা প্রাণ ফিরে পায়। মা বলে ডেকে ওঠে আর্শিয়াকে। আর্শিয়া আলতো হাতে বাচ্চাদের ছুঁয়ে দেয়। অতঃপর কাছে টেনে কপালে চুমু দিয়ে কুয়াশার হাতের মুঠোয় বাচ্চাদের হাত তুলে দিয়ে বলে,

“আজ থেকে তুই ওদের মা। ওদের দেখে রাখিস। ভালো থাকিস তোরা সবাই।”

আর কিছু বলতে পারে না সে। ধীরে ধীরে চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যায় তার। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়েছে আর্শিয়া। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই তার জীবনের আলো নিভে গেল আজ। চলে যাওয়ার আগে কুয়াশার উপর কঠিন একটা দায়িত্ব দিয়ে গেল সে। মা হয়ে ওঠার দায়িত্ব!

নিজের চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে কুয়াশা। মলি আর আদ্রিতা বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। আশেপাশের প্রতিটা মানুষের চোখে পানি চিকচিক করছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এসে সবাইকে ধরে নিয়েছে। সাফওয়ান উপরে আসার পর কৌশলে পুলিশকে কল করে চলে আসতে বলেছিল। আফসোস একটাই! তারা সময় মত আসতে পারেনি। যদি আসতে পারত তাহলে হয়তো আর্শিয়া আজ বেঁচে যেত।

সাফওয়ান কুয়াশার সামনে বসে তাকে শান্ত করে। আর্শিয়াকে পুলিশ অফিসার মর্গে নিয়ে যেতে চাইলে কুয়াশা তাতে বাঁধা দেয়।

“আর্শিয়াকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে না।”

“কিন্তু ম্যাডাম এটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই কেসের জন্য পোস্ট মর্টেম জরুরি।”

“এই মেয়েটা অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে অফিসার। ওকে নিয়ে আর টানাহেঁচড়া করবেন না।”

“কিন্তু তা কী করে হয়?”

“আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি আপনাদের। এখানে সবাই দেখেছে ওকে ওই শয়তানগুলো মে রে ফেলেছে। তাহলে আর কোন প্রমাণের জন্য ওকে কা টা ছেঁড়া করবেন আপনারা? দয়া করুন অফিসার। ম রা র পর অন্তত ওকে একটু শান্তি দিন।”

“এই কেসের প্রমাণ হিসেবে এটা দরকার।”

“ওর কেস আমি লড়ব। তাই প্রমাণের ব্যাপারটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। আপনারা এখন আসতে পারেন।”

অনেক জোরাজুরি করার পরেও কুয়াশা আর্শিয়াকে তাদের হাতে তুলে দিতে নারাজ। পুলিশ অফিসার এক প্রকার বাধ্য হয়েই আর্শিয়ার লা শ না নিয়ে চলে যায়। কুয়াশা সবকিছু সামলিয়ে আর্শিয়াকে নিয়ে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়া হয়। কারণ এই পৃথিবীতে আর্শিয়ার আপন বলতে আর কেউ নেই। তাই যা করার সব কুয়াশাকেই করতে হবে।

বাড়িতে নিয়ে এসে আর্শিয়ার দাফন কার্য শেষ করে কুয়াশা প্রচন্ডভাবে ভেঙে পড়ে। তার চোখের সামনে তার বান্ধবীকে কেউ মে রে ফেলেছে আর সে তাকে বাঁচাতে পারেনি। এই সত্যিটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে কুয়াশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মলি ছোট্ট ওয়ানিয়াকে নিয়ে তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

“কলি বাচ্চাটা অনেক্ক্ষণ যাবত কেঁদেই যাচ্ছে। আমরা সবাই অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছি না। তুই একটু চেষ্টা করে দেখ না।”

কুয়াশা আলতো হাতে আট মাস বয়সী ছোট্ট মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। পরম মমতায় তার কান্না থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে সফলও হয়। নিজের এমন অর্জন দেখে কুয়াশা এত এত অশান্তির মধ্যে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

“মেয়েটা একদম ওর মায়ের মত হয়েছে। মায়ের মতোই মায়াবী। এই বাচ্চাটার কী দোষ বল তো মলি? ওয়ানিয়া আর নিহাল নিষ্পাপ। তবুও একজন আট মাস বয়সে আরেক জন তিন বছর বয়সে অনাথ হয়ে গেল। এমন কেন হলো?”

“সবই নিয়তির খেলা। এতে আমাদের কারোর হাত নেই। আমাদের নিয়তিকে মেনে নিতে হবে।”

“এই বাচ্চাদের আমি মায়ের আদর, যত্ন দিয়ে বড়ো করতে পারব তো?”

“পারবি ইনশাআল্লাহ। আর আমরা সবাই তো আছি। একটা পরিবারের মধ্যে বড়ো হলে ওরা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনই পাবে দেখে নিস তুই।”

“সব পেলেও বাবার ভালোবাসা তো কখনো পাবে না।”

“কেন? তুই কী আর বিয়ে করবি না?”

“আমি বিয়ে করলে এই বাচ্চাদের কেউ মেনে নিবে?”

“তোকে যেকোনো পরিস্থিতিতে একজন নিজের করে নেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত আছে।”

মলির এমন কথায় কুয়াশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“কে সে?”

“সময় হলে ঠিক জানতে পারবি।”

“তুই জানলি কীভাবে?”

“এতকিছু তোর জানতে হবে না। তুই ওয়ানিয়াকে সামলা। আমি নিহালের কাছে যাই। ওকে আন্টি, আদ্রিতা সবাই মিলে কোনোরকমে শান্ত করে রেখেছে।”

“আরে শোন!”

না, মলি কুয়াশার আর কোনো কথা শোনে না। আপনমনে চলে যায় বাইরে। কুয়াশা ছোট্ট ওয়ানিয়াকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

“কুয়াশা আসব?”

সাফওয়ানকে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুয়াশা বলে,

“আরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন? অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে নাকি তুমি? ভেতরে এসো।”

“কারোর ঘরে প্রবেশ করার আগে তার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া এক প্রকার ভদ্রতা।”

“আমার সাথে এত কিছু মেনে কথা বলতে হবে না। তুমি আমার বন্ধু। শুধু বন্ধু নও। খুব ভালো বন্ধু। আর বন্ধুত্বে এসব চলে না। বুঝেছ?”

“হ্যা বুঝেছি। আচ্ছা শোনো, আমি আগামীকাল সকালে ঢাকায় চলে যাব।”

“আরে কী বলছ এসব? এই প্রথম তুমি আমাদের বাড়িতে এলে। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেন? থাকো আরো কিছুদিন।”

“কিন্তু ঢাকায় তো আমাদের অনেক কাজ আছে। তুমি এখন যেতে পারবে না। তাই আমি গিয়ে সব দেখি। আমাদের ওই বাড়িটা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতে হবে তো।”

“এত তাড়া কীসের তোমার? তুমি কী আমাদের ছেড়ে কোথাও চলে যাবে যে এত তাড়াহুড়ো করছ?”

“আরে বোকা মেয়ে, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সব ঠিকঠাক করতে হবে। একটা বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা তৈরি করা এত সহজ নাকি?”

“আচ্ছা তুমি যাবে। কিন্তু আগামীকাল নয়। অন্তত আর দুইটা দিন থাকো। আমি একা হাতে সব সামলাতে পারব না। তুমি থাকলে আমি ভরসা পাই।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে সাফওয়ান কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলে ওঠে,

“কুয়াশা তুমি এই বাচ্চাদের নিয়ে কী ভাবলে?”

“ওরা আমার কাছেই থাকবে আমার সন্তান হয়ে।”

“কিন্তু ওদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যদি ওর দাদু বাড়ির লোকজন আসে?”

“আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাফওয়ান। আমি ওয়ানিয়া আর নিহালকে দত্তক নিব।”

“ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ?”

“হ্যা।”

“সমাজ কী বলবে?”

“সমাজের কথা ভাবলে তো আমি তুরাবকেও ডিভোর্স দিতাম না।”

“মানলাম তুমি ওদের মা হয়ে উঠবে। তবে ওদের কী বাবার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই?”

সাফওয়ানের এই কথাটা কুয়াশাকে ভাবিয়ে তোলে। সত্যিই তো! ওদের কী বাবার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই? কুয়াশা একা হাতে ওদের সব দিতে পারবে কী? সব দিলেও বাবার ভালোবাসা কীভাবে দিবে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পায় না কুয়াশা।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here