কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব -২৩+২৪+২৫

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৩
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

কুয়াশা মাটিতে বসার সাথে সাথে আর্শিয়া লুটিয়ে পড়ে তার কোলে। ঘটনার আকষ্মিকতায় কুয়াশা স্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আর্শিয়ার দিকে। মেয়েটা তাকে বাঁচাতে নিজের জীবন দিতে একবারও ভাবল না। এটা ভেবেই কুয়াশার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রুপাত হতে শুরু করে। কম্পিত কণ্ঠে আর্শিয়াকে বুকে আগলে নিয়ে কুয়াশা বলে,

“এটা কেন করলি তুই?”

ব্যাথায় ছটফট করা মেয়েটা মুহূর্তের মধ্যে হেসে উত্তর দেয়,

“আমার জীবন এমনিতেও ইতি টানত আজ। এরা আমাকে বাঁচতে দিবে না আমি জানি। কিন্তু তোর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারতাম না। আমার জন্য তুই নিজের জীবন দিয়ে দিবি তা আমি চাই না। আচ্ছা আমার মৃ ত্যু র পর আমার সন্তানদের নিজের সন্তানের মত আগলে রাখবি তো তুই?”

“তোর সন্তান মানে আমারো সন্তান। আমি তো ওদের খালামনি। ওদেরকে নিজের সন্তানের মত করে আগলে রাখা আমার দায়িত্ব। কিন্তু তোর কিছু হতে দিব না আমি। এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাব তোকে।”

“না রে বোন, আমার হাতে বেশি সময় নেই। শোন, আমার ব্যাগে একটা লাল ডায়েরি আছে। ওটা সময় করে পড়ে নিস। তাহলে তুই তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।”

“আর্শিয়া ভাইয়া কোথায়?”

“আহনাফ তো আমাদের ছেড়ে আরো আগেই চলে গিয়েছে। পৃথিবীতে আমাকে আর সন্তানদের রেখে সে চলে গিয়েছে দূর আকাশের ঠিকানায়।”

এমন কিছু শোনার জন্য কুয়াশা বিন্দু মাত্র প্রস্তুত ছিল না। নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আহনাফ আর এই পৃথিবীতে নেই।

“আর্শিয়া তোর সাথে এত কিছু হয়ে গেল। তুই আমাকে এসব কিছু জানাসনি কেন?”

“পরিস্থিতি আমার অনুকূলে ছিল না। আমি চেয়েও তোকে কিছু জানাতে পারিনি। আর যখন জানালাম তখন সবকিছু হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। সবই আমার ভাগ্য। আচ্ছা বাচ্চাদের একটু আমার কাছে নিয়ে আয়।”

কুয়াশা ইশারায় মলি আর আদ্রিতাকে বাচ্চাদের নিয়ে আসতে বলে। নিষ্পাপ বাচ্চা দু’টো ভয়ে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের। মায়ের কাছে আসতেই যেন তারা প্রাণ ফিরে পায়। মা বলে ডেকে ওঠে আর্শিয়াকে। আর্শিয়া আলতো হাতে বাচ্চাদের ছুঁয়ে দেয়। অতঃপর কাছে টেনে কপালে চুমু দিয়ে কুয়াশার হাতের মুঠোয় বাচ্চাদের হাত তুলে দিয়ে বলে,

“আজ থেকে তুই ওদের মা। ওদের দেখে রাখিস। ভালো থাকিস তোরা সবাই।”

আর কিছু বলতে পারে না সে। ধীরে ধীরে চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যায় তার। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়েছে আর্শিয়া। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই তার জীবনের আলো নিভে গেল আজ। চলে যাওয়ার আগে কুয়াশার উপর কঠিন একটা দায়িত্ব দিয়ে গেল সে। মা হয়ে ওঠার দায়িত্ব!

নিজের চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে কুয়াশা। মলি আর আদ্রিতা বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। আশেপাশের প্রতিটা মানুষের চোখে পানি চিকচিক করছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এসে সবাইকে ধরে নিয়েছে। সাফওয়ান উপরে আসার পর কৌশলে পুলিশকে কল করে চলে আসতে বলেছিল। আফসোস একটাই! তারা সময় মত আসতে পারেনি। যদি আসতে পারত তাহলে হয়তো আর্শিয়া আজ বেঁচে যেত।

সাফওয়ান কুয়াশার সামনে বসে তাকে শান্ত করে। আর্শিয়াকে পুলিশ অফিসার মর্গে নিয়ে যেতে চাইলে কুয়াশা তাতে বাঁধা দেয়।

“আর্শিয়াকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে না।”

“কিন্তু ম্যাডাম এটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই কেসের জন্য পোস্ট মর্টেম জরুরি।”

“এই মেয়েটা অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে অফিসার। ওকে নিয়ে আর টানাহেঁচড়া করবেন না।”

“কিন্তু তা কী করে হয়?”

“আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি আপনাদের। এখানে সবাই দেখেছে ওকে ওই শয়তানগুলো মে রে ফেলেছে। তাহলে আর কোন প্রমাণের জন্য ওকে কা টা ছেঁড়া করবেন আপনারা? দয়া করুন অফিসার। ম রা র পর অন্তত ওকে একটু শান্তি দিন।”

“এই কেসের প্রমাণ হিসেবে এটা দরকার।”

“ওর কেস আমি লড়ব। তাই প্রমাণের ব্যাপারটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। আপনারা এখন আসতে পারেন।”

অনেক জোরাজুরি করার পরেও কুয়াশা আর্শিয়াকে তাদের হাতে তুলে দিতে নারাজ। পুলিশ অফিসার এক প্রকার বাধ্য হয়েই আর্শিয়ার লা শ না নিয়ে চলে যায়। কুয়াশা সবকিছু সামলিয়ে আর্শিয়াকে নিয়ে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়া হয়। কারণ এই পৃথিবীতে আর্শিয়ার আপন বলতে আর কেউ নেই। তাই যা করার সব কুয়াশাকেই করতে হবে।

বাড়িতে নিয়ে এসে আর্শিয়ার দাফন কার্য শেষ করে কুয়াশা প্রচন্ডভাবে ভেঙে পড়ে। তার চোখের সামনে তার বান্ধবীকে কেউ মে রে ফেলেছে আর সে তাকে বাঁচাতে পারেনি। এই সত্যিটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে কুয়াশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মলি ছোট্ট ওয়ানিয়াকে নিয়ে তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

“কলি বাচ্চাটা অনেক্ক্ষণ যাবত কেঁদেই যাচ্ছে। আমরা সবাই অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছি না। তুই একটু চেষ্টা করে দেখ না।”

কুয়াশা আলতো হাতে আট মাস বয়সী ছোট্ট মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। পরম মমতায় তার কান্না থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে সফলও হয়। নিজের এমন অর্জন দেখে কুয়াশা এত এত অশান্তির মধ্যে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

“মেয়েটা একদম ওর মায়ের মত হয়েছে। মায়ের মতোই মায়াবী। এই বাচ্চাটার কী দোষ বল তো মলি? ওয়ানিয়া আর নিহাল নিষ্পাপ। তবুও একজন আট মাস বয়সে আরেক জন তিন বছর বয়সে অনাথ হয়ে গেল। এমন কেন হলো?”

“সবই নিয়তির খেলা। এতে আমাদের কারোর হাত নেই। আমাদের নিয়তিকে মেনে নিতে হবে।”

“এই বাচ্চাদের আমি মায়ের আদর, যত্ন দিয়ে বড়ো করতে পারব তো?”

“পারবি ইনশাআল্লাহ। আর আমরা সবাই তো আছি। একটা পরিবারের মধ্যে বড়ো হলে ওরা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনই পাবে দেখে নিস তুই।”

“সব পেলেও বাবার ভালোবাসা তো কখনো পাবে না।”

“কেন? তুই কী আর বিয়ে করবি না?”

“আমি বিয়ে করলে এই বাচ্চাদের কেউ মেনে নিবে?”

“তোকে যেকোনো পরিস্থিতিতে একজন নিজের করে নেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত আছে।”

মলির এমন কথায় কুয়াশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“কে সে?”

“সময় হলে ঠিক জানতে পারবি।”

“তুই জানলি কীভাবে?”

“এতকিছু তোর জানতে হবে না। তুই ওয়ানিয়াকে সামলা। আমি নিহালের কাছে যাই। ওকে আন্টি, আদ্রিতা সবাই মিলে কোনোরকমে শান্ত করে রেখেছে।”

“আরে শোন!”

না, মলি কুয়াশার আর কোনো কথা শোনে না। আপনমনে চলে যায় বাইরে। কুয়াশা ছোট্ট ওয়ানিয়াকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

“কুয়াশা আসব?”

সাফওয়ানকে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুয়াশা বলে,

“আরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন? অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে নাকি তুমি? ভেতরে এসো।”

“কারোর ঘরে প্রবেশ করার আগে তার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া এক প্রকার ভদ্রতা।”

“আমার সাথে এত কিছু মেনে কথা বলতে হবে না। তুমি আমার বন্ধু। শুধু বন্ধু নও। খুব ভালো বন্ধু। আর বন্ধুত্বে এসব চলে না। বুঝেছ?”

“হ্যা বুঝেছি। আচ্ছা শোনো, আমি আগামীকাল সকালে ঢাকায় চলে যাব।”

“আরে কী বলছ এসব? এই প্রথম তুমি আমাদের বাড়িতে এলে। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেন? থাকো আরো কিছুদিন।”

“কিন্তু ঢাকায় তো আমাদের অনেক কাজ আছে। তুমি এখন যেতে পারবে না। তাই আমি গিয়ে সব দেখি। আমাদের ওই বাড়িটা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতে হবে তো।”

“এত তাড়া কীসের তোমার? তুমি কী আমাদের ছেড়ে কোথাও চলে যাবে যে এত তাড়াহুড়ো করছ?”

“আরে বোকা মেয়ে, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সব ঠিকঠাক করতে হবে। একটা বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা তৈরি করা এত সহজ নাকি?”

“আচ্ছা তুমি যাবে। কিন্তু আগামীকাল নয়। অন্তত আর দুইটা দিন থাকো। আমি একা হাতে সব সামলাতে পারব না। তুমি থাকলে আমি ভরসা পাই।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে সাফওয়ান কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলে ওঠে,

“কুয়াশা তুমি এই বাচ্চাদের নিয়ে কী ভাবলে?”

“ওরা আমার কাছেই থাকবে আমার সন্তান হয়ে।”

“কিন্তু ওদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যদি ওর দাদু বাড়ির লোকজন আসে?”

“আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাফওয়ান। আমি ওয়ানিয়া আর নিহালকে দত্তক নিব।”

“ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ?”

“হ্যা।”

“সমাজ কী বলবে?”

“সমাজের কথা ভাবলে তো আমি তুরাবকেও ডিভোর্স দিতাম না।”

“মানলাম তুমি ওদের মা হয়ে উঠবে। তবে ওদের কী বাবার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই?”

সাফওয়ানের এই কথাটা কুয়াশাকে ভাবিয়ে তোলে। সত্যিই তো! ওদের কী বাবার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই? কুয়াশা একা হাতে ওদের সব দিতে পারবে কী? সব দিলেও বাবার ভালোবাসা কীভাবে দিবে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পায় না কুয়াশা।

চলবে??
#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৪
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

বন্ধুদের সাথে বসে ইচ্ছামত মদ্যপান করছে তুরাব। ইতিমধ্যে এত বেশি মদ্যপান করে ফেলেছে যে নিজের পায়ে দাঁড়াতেও অক্ষম সে। চারপাশটা কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে তার চোখে। নিজ জ্ঞানে না থাকা ছেলেটা হঠাৎই বন্ধুদের সামনে বলে বসে,

“আমি কিছুতেই কুয়াশাকে ভালো থাকতে দিব না। আমি ভুল করেছি। মাফও চেয়েছি। কিন্তু সে আমাকে মাফ না করে অহংকার দেখাল। ওর অহংকার শেষ না করা অবধি আমার শান্তি মিলবে না।”

পাশে থাকা একজন তার এমন কথা শুনে বলে ওঠে,

“কী করবি তুই? তোদের তো ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তুই ডিভোর্স পেপারে সেদিন রেগে সই করে দিলি। এটাই ভুল করেছিস। ওকে শায়েস্তা করার জন্য হলেও বিয়েটা টিকিয়ে রাখার দরকার ছিল তুরাব।”

“ডিভোর্স হওয়ারই ছিল। কুয়াশা যখন একবার ডিভোর্স চেয়েছে তখন সেটা হবেই স্বাভাবিক। কারণ ওর মত জেদি মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি।”

“তুই যে এত কথা বলছিস, দোষ কী তোর নেই? সব দোষ তো তোর নিজের। মেয়েটা আর কত সহ্য করত ভাই? এখনো কী তোর মেয়ের নেশা কেটেছে? কাটেনি তো!”

বন্ধু মিরাজের কথায় তুরাবের বিরক্তির সীমানা থাকে না।

“এই একদম চুপ থাক তুই। তুই কে বল তো? আমার বন্ধু নাকি শত্রু? সারাক্ষণ কুয়াশার হয়ে কথা বলিস। ওর প্রতি তোর নজর আছে নাকি?”

“মুখ সামলে কথা বল তুরাব। কুয়াশাকে আমি কখনো অন্য নজরে দেখিনি। তবে হ্যা, ওর মত মেয়েকে নিজের ভালোবাসা হিসেবে পেলে যত্ন করে রাখতাম। তোর মত ছেড়ে দিতাম না। এমন একজন মেয়ে বউ হিসেবে থাকতেও তোর বাইরের মেয়ে কেন লাগে ভাই? এটাই তো বুঝতে পারি না আমি।”

“আমি তো চেয়েছিলাম ওর সাথে আবার সংসার করতে। কিন্তু সে তো তাতে রাজি না। তাহলে আমি কেন ওর জন্য নিজের জীবন নষ্ট করব? আমার জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই আমি। একজনের প্রেমে পাগল হয়ে দেবদাস হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”

তুরাবের কথায় যেন এবার তুরাবের প্রতিটা বন্ধুই ভীষণ বিরক্ত হলো। একজন তো মনে মনে বলেই ফেলল,

“তুই কুয়াশার মত মেয়ের জন্য যোগ্য না ভাই। তার থেকে তোরা আলাদা হয়েছিস, এটাই ভালো হয়েছে।”

মনে মনে কথাটা বললেও সিয়ামের এই কথাটা মুখে বলার সাহস হলো না। হাজার হলেও তুরাব তার অনেক বছরের পুরোনো বন্ধু। একজনের হয়ে কথা বলতে গিয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট করার মানে হয় না।

আচমকা তুরাব সবার মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঠিকমতো দাঁড়াতে না পারলেও হেঁটে হেঁটে বাইরে চলে আসে। পেছন থেকে বাকি সবাই ডাকলেও তাতে সাড়া দেয় না সে। গাড়িতে বসে আনমনে বলে ওঠে,

“তুমি যদি আমার না হও তবে আর কারোর নও। তোমাকে আমি অন্য কারোর হতে দিব না কুয়াশা!”

সময় বহমান। সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। আর্শিয়া চলে যাওয়ার পর বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। কুয়াশা আজও তার চলে যাওয়ায় চোখের পানি ফেলে। আর্শিয়ার বাচ্চাদের বুকে আগলে রেখেছে সে। সে তো একা। তার জীবনে সংসার নামক কিছু নেই। সংসার না থাকলেও সন্তান আছে। ঘুমন্ত শিশুদের দিকে তাকিয়ে কুয়াশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

“তোরা আমার জীবনে এসে আমার রঙহীন জীবনটাকে রঙিন করে তুলেছিস। তোদের জন্যই এখন আমি শান্তিতে থাকি। তোদের নিষ্পাপ মুখ দেখলে আমার মন খারাপেরা পালিয়ে যায়। তোরা দু’জন এখন আমার ভালো থাকার কারণ!”

কুয়াশার ভাবনায় ছেদ ঘটে তার মা মিসেস নাহারের আগমনে। মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে তিনি বলেন,

“তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”

কুয়াশা মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,

“হ্যা মা বলো।”

“বাচ্চাদের নিয়ে কী ভাবলে তুমি?”

“ওরা আমার কাছেই থাকবে মা আমার সন্তান হয়ে।”

“কুয়াশা, আমি বলব না ওদের অনাথ আশ্রমে রেখে আসতে। ওদের ছেড়ে দিতেও বলব না। কিন্তু তোমারো তো জীবন আছে মা। তোমার ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে।”

“কী বলতে চাও তুমি?”

“আমি চাই তুমি আবার বিয়ে করে সুখে, শান্তিতে সংসার করো।”

“এটা সম্ভব নয় মা।”

“কেন?”

“আমি সংসারের সুখ আট মাসের জন্য হলেও পেয়েছি। সত্যি বলতে যে আট মাস আমি তুরাবের সাথে ছিলাম সেই মাসগুলোতে আমি তেমন কোনো কষ্ট অনুভব করিনি। তুরাব অভিনয় করলেও আমাকে কষ্টে রাখেনি৷ ভালো স্বামী হওয়ার অভিনয়ে সে দশে দশ পাবে। তাই সংসার সুখ আমি অনুভব করেছি। দ্বিতীয় বার আর কারোর সাথে জড়ানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার।”

“স্বামী সুখ, সন্তান সুখ চাও না তুমি?”

“স্বামী সুখ চাই না। যতটুকু পেয়েছি তাতেই শুকরিয়া আদায় করি। আর সন্তান সুখের কথা বললে আমি বলব সেই সুখ ওয়ানিয়া আর নিহালই আমাকে দিবে। মা একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি। বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়নি এতদিন।”

“কী কথা?”

“আমি এমনিতেও বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হলো না। কারণ আর্শিয়া নিজেই আমার কোল ভরিয়ে দিয়েছে ওর দুই সন্তানকে আমার কাছে দিয়ে।”

“তোমার কী নিজের বাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছা হয় না?”

“এমন ইচ্ছা কার না হয় মা? আমিও ব্যতিক্রম নই। কিন্তু সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। আমাকে এই সুখ নিতে হলে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে হবে। যা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

“কেন সম্ভব নয়? একজনের জন্য সম্পূর্ণ জীবন নষ্ট করে দিবে তুমি? মা হয়ে এটা কীভাবে মেনে নিব আমি?”

“মা ওয়ানিয়া আর নিহালকে আমি জন্ম দিইনি ঠিকই, কিন্তু আর্শিয়ার র ক্ত আমার শরীরে আছে। আমার যেদিন অসুস্থতার কারণে র ক্তে র প্রয়োজন হলো তখন আর্শিয়া আমাকে ওর নিজের র ক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিল। আমার রক্ত সহজেই পাওয়া যায়। ওও না দিলে অন্য কেউ দিত। কিন্তু বিপদের সময় সবার আগে আর্শিয়া এগিয়ে এসেছিল। ছোটবেলা থেকেই অনেক সাহায্য করেছে মেয়েটা আমাকে। সে যখন মৃ ত্যু র আগে আমাকে তার বাচ্চাদের দায়িত্ব দিয়ে গেল তখন সেটা রক্ষা করা কী আমার দায়িত্ব নয়?”

“আচ্ছা তুমি ওদের সাথে নিয়েই থেকো। এতে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?”

“প্রথমত ওদের আমার বাচ্চা হিসেবে মেনে নিয়ে কেউ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। সে যত ভালো মানুষই হোক না কেন। দ্বিতীয় এবং প্রধানত আমি ডিভোর্সী হয়ে থাকতে রাজি আছি। কিন্তু দ্বিতীয় কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেতে রাজি নই। আমি বিয়ে করতে চাই না মা। একটু তো বোঝার চেষ্টা করো আমার দিকটা। আমি আর কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না। দয়া করে আমাকে আর জোর করো না।”

মেয়ের কথায় হতাশ হয়ে মিসেস নাহার মেয়ের ঘর ত্যাগ করেন। তার মেয়ে যেহেতু পূর্ণবয়স্ক, সুতরাং নিজের ভালো সে নিজে বুঝে নিতে পারবে। মা হিসেবে মেয়ের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো দরকার। কারণ ছোট থেকেই কুয়াশা কখনো তার অবাধ্য হয়নি। তাই আজ তাকে তার মত করে ছেড়ে দেওয়ায় ভালো। হয়তো এতেই তার ভালো হবে। এসব ভেবে তিনি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন।

মা চলে যাওয়ার পর কুয়াশার আর্শিয়ার বলা সেই লাল ডায়েরির কথা মনে পড়ে। এতদিন ডায়েরির কথা তার মাথাতেই ছিল না। সে নিজের আলমারি থেকে আর্শিয়ার ব্যাগ বের করে। এতদিন বেশ যত্ন করেই ব্যাগটা তুলে রেখেছিল সে। ব্যাগ থেকে ডায়েরি বের সে হাতে নেয়। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে ছাদের এক কোণে বসে সে ডায়েরি খোলে। প্রথম কয়েকটা পাতায় আর্শিয়া আর আহনাফের ভালো মুহূর্তগুলোর কথা লেখা আছে। যেগুলোর প্রায় নব্বই শতাংশ কুয়াশা জানে। তাই সেসব না পড়ে সে পাতা ওল্টায়। পাতা ওল্টানোর এক পর্যায়ে তার চোখ আটকে যায় একটা বাক্যে!

“নিজের স্বামীর মৃ ত্যু নিজ চোখে দেখার মত দুর্ভাগ্য আর কোনো নারীর না হোক!”

চলবে??#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২৫
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“ভালোবাসার বিয়ে ছিল আমাদের। আহনাফ পরিবারের সবার আদরের ছেলে ছিল। ছোট থেকেই সব ভাই-বোনের থেকে ওকে বেশি ভালোবাসা দিত সবাই। এই নিয়ে বাকি ভাই-বোনদের রাগের সীমানা ছিল না। বিয়ের পর প্রায়ই দেখতাম আহনাফের বড়ো বোন আর দুই ভাই আহনাফের সবকিছু কেড়ে নিত। আহনাফ কিছু বলত না। চুপ করে থাকত। আমিও কিছু বলতাম না। কারণ আমাদের কম কিছু ছিল না। তাই অল্পস্বল্প নিলে আমাদের আহামরি ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তখন, যখন আহনাফ ধীরে ধীরে অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার বলেছিল ওকে নাকি আগে থেকেই এমন কিছু খাওয়ানো হচ্ছে অল্প অল্প করে যার জন্য ওর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”

এক পাতায় এতটুকুই লেখা ছিল। কুয়াশা পাতা উল্টিয়ে আবার পড়তে শুরু করে।

“আজ এক চরম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি আমি। বাড়ির বাইরে বাগানের ধারে আহনাফের তিন ভাই-বোনের কথা শুনে আমি স্থির থাকতে পারছি না। আহনাফকে তারা ইচ্ছা করে মৃ ত্যু র দিকে ঠেলে দিয়েছে। কেন না আমার শ্বশুর আর শাশুড়ি মা রা যাওয়ার আগে আহনাফের নামে যেটুকু সম্পত্তি লিখে দিয়ে গিয়েছে সেই সম্পত্তি দরকার তাদের। আমি তো আগেই জানতাম ওরা আহনাফকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু তার জন্য এমন করবে তা আমি ভাবিনি। দুর্ভাগ্যবশত ওরা আমাকে ওদের কথা শুনতে দেখে নেয়। আমি ছুটে গিয়ে আহনাফকে সব বলে দিই। আমার বলা শেষ হওয়ার আগেই আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার সামনে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এরপর আমার হাত ধরে বলে ওঠে, আমাদের সন্তানদের নিয়ে বহুদূরে চলে যাও। ওদেরকে বাঁচাও আর্শিয়া। আর কিছু বলতে পারেনি সে। নিজের স্বামীর মৃ ত্যু নিজের চোখে দেখেছি আমি। ওরা আমার স্বামীকে মে রে শান্ত হয়নি। আমাকে আর বাচ্চাদেরও মা র তে চেয়েছে। আমি কোনো রকমে পালিয়ে বেঁচেছি।”

আর কিছু পড়ার শক্তি হয় না কুয়াশার। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে অনর্গল। পৃথিবীতে এমন মানুষও হয়? এ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না সে। আজ তার একটা কথা ভীষণ বলতে ইচ্ছা করছে,

“পৃথিবীতে ভাই-বোনের সম্পর্ক ততদিনই সুন্দর, যতদিন তাদের মধ্যে লোভ জন্ম না নেয়!”

আবারো পাতা ওল্টায় সে। পড়তে শুরু করে পুনরায়।

“বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু আর কতদিন? এবার আমার কিছু একটা করতে হবে। অন্তত বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে। আমি বাঁচব কিনা জানি না। এমনিতেও আমি তো মনের দিক থেকে সেদিনই ম রে গিয়েছি যেদিন নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে খু ন হতে দেখেছি। সেটাও কিনা আপন মানুষদের হাতে। আমি জানি ওরা আমাকে বাঁচতে দিবে না। কারণ ওদের সকল পাপকর্মের কথা আমি জানি। এমনকি ওদের খু ন করার দৃশ্য আমার কাছে আছে। সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করতে তারা ভুলে গিয়েছিল। তাই সব প্রমাণ আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি।”

কুয়াশা প্রমাণের কথা শুনে চমকে যায়। সমস্ত প্রমান তার মানে আর্শিয়ার কাছে ছিল। কিন্তু কোথায়? সেই মুহূর্তে কুয়াশার চোখে পড়ে একটা ধাঁধা। এবং তার নিচে লেখা,

“এই ধাঁধার মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে। প্রমাণ কোথায় আছে সেটা এখানেই লেখা আছে।”

দেখতে দেখতে শেষ পাতায় চোখ বুলায় কুয়াশা। শেষ পাতায় শুধুমাত্র একটা বাক্য লেখা।

“আমার স্বামীর খু নি দের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। তবেই আমার আ ত্মা শান্তি পাবে।”

আর কিছু লেখা নেই। ডায়েরির পরের পাতাগুলো একদম ফাঁকা। কুয়াশা ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নেয়। তার কাছে এখনো সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে। মানুষ কি সত্যিই এতটা নিচে নামতে পারে? মনুষ্যত্ব আজ কোথায়? এটাই কি তবে পবিত্র সম্পর্কের বন্ধন?

আর কিছু ভাবতে পারে না সে। ফোনের রিংটোনের শব্দ পেয়ে কুয়াশা ফোন হাতে নেয়। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম দেখে খানিকটা অবাক হয় সে।

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছিস বোন?”

তিন্নির ভেজা কন্ঠস্বর শুনে কুয়াশা পাল্টা প্রশ্ন করে,

“কী হয়েছে? আর তুমি আমাকে কল দিয়েছ কেন?”

“আমার সংসার ভেঙে যাচ্ছে কুয়াশা। জানিস? আমি একটুও ভালো নেই। আমার সংসারটা তুই বাঁচা বোন। আমি জানি একমাত্র তুই পারবি কিছু একটা করে আমার সংসারকে বাঁচাতে।”

এমন কথা শোনার জন্য বেচারি মেয়েটা একদম প্রস্তুত ছিল না। তিন্নির কথাগুলো তার বোধগম্য হতেই অনেকটা সময় লেগে গেল।

“মানে কী? কী বলছ এসব? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”

“ফয়সাল আমাকে আগের মত আর ভালোবাসে না। সে আমার দিকে ভালো করে তাকায় না পর্যন্ত। আমি একা হাতে সব সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। আর পারছি না এভাবে চলতে।”

কুয়াশা মনে হয় তিন্নির কথায় ভারি মজা পেয়েছে। কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক স্বরেই বলে,

“এত মধুর প্রেম জানালা দিয়ে পালিয়েছে বুঝি? মৌমাছি কি এখন অন্য ফুলে মধু খুঁজতে গিয়েছে নাকি?”

“তুই মজা নিচ্ছিস? অবশ্য আমি তোর সাথে যা করেছি তাতে করে তোর রাগ করে থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোর রাগ তো আমার উপর। আমাদের বাচ্চার উপর তো রাগ নেই। ওও তো তোর মেয়ের মত তাই না? আমার সংসার ভেঙে গেলে আমাদের মেয়েটা বাবা-মায়ের সমান ভালোবাসা পাবে না। আমরা আলাদা হয়ে গেলে ওর কী হবে বল? ওর কথা ভেবে হলেও আমাকে সাহায্য কর। দরকার হলে তুই যা বলবি আমি তাই করব। কিন্তু খালি হাতে আমাকে ফিরিয়ে দিস না বোন।”

কুয়াশা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,

“ঠিক দুর্বল জায়গায় আঘাত দিলে। জানো আমি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসি। সেটারই সুযোগ নিলে তুমি। যাইহোক, বলো কী করতে হবে আমাকে?”

কুয়াশার এহেন কথায় তিন্নি খুশিমনে উত্তর দেয়,

“তুই এমন কোনো বুদ্ধি দে আমাকে যাতে করে ফয়সাল আগের মত আমাকে ভালোবাসে। ওর ভাষ্যমতে আমার সৌন্দর্য আগের মত নেই। তাই আমার কাছে আসার আগ্রহ জন্মায় না ওর মধ্যে।”

“জটিল সমস্যা। তা দেখা করতে পারবে একদিন? ফোনে এতকিছু বলা সম্ভব না। আর আসার সময় আমার মনি মা’কে নিয়ে এসো। জন্মের পর একদিনই দেখেছিলাম। তারপর আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।”

“আচ্ছা। আমি আগামীকাল তোর সাথে দেখা করব। তুই বগুড়াতেই আছিস তো?”

“হ্যা। আগামী পরশু ঢাকায় ফিরব।”

“ঠিক আছে। বাবু কাঁদছে। আমি এখন রাখি?”

“মানা করেছি নাকি আমি?”

অপর পাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে না। কল কে টে গিয়েছে। কুয়াশা ফোন একপাশে রেখে আনমনে ভাবে,

“একেই বুঝি নিয়তি বলে? যে বোনের জন্য আমার জীবনের সমীকরণ এত জটিল হয়ে গেল আজ তার জীবনও একই পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বামী সুখ না পেলে কেমন লাগে এটা এখন আমার বোনও অনুভব করতে পারছে। আচ্ছা, আমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি কি তবে পেতে শুরু করেছে সে? তাই হবে হয়তো। নিরব প্রতিশোধ তো এটাকেই বলে!”

এদিকে তুরাব বেচারা বউ হারানোর শোকে একদম ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। সারাদিন মদ নিয়ে বসে থাকা ছেলেটার এখন উচিত ছিল নিজেকে দেবদাস বানিয়ে ফেলা। কিন্তু সে তা না করে শয়তানি বুদ্ধি বের করছে তার অলস মস্তিষ্ক থেকে। যে মস্তিষ্ক থেকে কখনো ভালো কোনো বুদ্ধি বের হয় না। হবে কী করে? মানুষটা তো নিজেই আস্ত একটা শয় তা ন। তার মস্তিষ্কে থাকা বুদ্ধিগুলোও এমনই হবে স্বাভাবিক। বদ্ধ ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে বিরবির করে যাচ্ছে।

“কুয়াশা আমি তোমাকে ছাড়ব না। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছ তুমি। জীবনে প্রথম কাউকে মন থেকে একটু ভালোবাসতে চাইলাম। আর সেই কিনা আমাকে একলা ফেলে চলে গেল। এই মেয়ে শোনো, তোমার না কখনো ভালো হবে না। একদম ভালো হবে না।”

আচ্ছা শকুনের দোয়ায় কী গরু ম র বে? থুক্কু তুরাবের এমন বদদোয়ায় কী কুয়াশার কোনো ক্ষতি হবে?

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here