কৃষ্ণবেণী পর্ব -০৩

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩
#নন্দিনী_নীলা

“ও আল্লাহ গো, সাপ! আমার কাছে আইনেন না‌। আমি খুব ডরাই সাপ দেইখা।” ভয়ে চোখ মুখ অন্ধকার করে বলল তৃষ্ণা।
ভয়ে তৃষ্ণা কাঁপছে অবিরত। থেকে থেকে ঢোক গিলছে। জায়ান হাতের খেলনা সাপটাকে তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,” শোন বাচ্চা মেয়ে। এই খেলনা সাপ দিয়ে আমি ছোট বেলায় খেলতাম‌। ভেবেছিলাম আমার বেবিদের দেখাব তার বাবার প্রিয় খেলনা। কিন্তু বেবি আসার আগে বাচ্চা ব‌উ পেয়েছি তাই এটা তোমাকে দিলাম। ধরো নাও আমার প্রিয় খেলনা তোমায় গিফট করলাম।”
বলেই জায়ান সাপটা তৃষ্ণা দিকে ছুড়ে মারল। ভয়ে তৃষ্ণা চিৎকার করে উঠল। সাপ ওর হাতের উপর পরেছে। ও লাফিয়ে উঠে পরল। আর ভয়ে লাফালাফি, চিৎকার করতে লাগল।
এসব দেখে জায়ান ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসছে।
তৃষ্ণা লাফালাফি করতে গিয়ে শাড়ির আঁচল ফেলে দিছে।
জায়ান তা দেখে ধমক দিয়ে বললেন,,” এই মেয়ে থামো।”
তৃষ্ণা থামছে না ভয়ে চিৎকার করছে। ওইভাবেই দৌড়ে দরজা খুলতে চাইল।
জায়ান শক্ত গলায় বললেন,” বাচ্চা মেয়ে হলেও তুমি খুব অবাধ্য। কথা শোন না‌।”
বলেই হাত ধরে টেনে দরজার সামনে থেকে টেনে এনে বললেন,” লাফালাফি করে শাড়ি খুলে ফেলেছ সেটা বুঝতে পারছ না? আঁচল ঠিক করো।”
তৃষ্ণা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,” আপনি আমাকে ভয় দেখালেন কেন? আমার আত্না বের হয়ে আসছে ভয়ে।”
” খেলনা সাপ তোমায় কামড়ে দিতে পারবে না। তবুও ভয় পেলে কেন? ইডিয়েট। শাড়ি ঠিক করো।”
তৃষ্ণার শরীর ভয়ে কাঁপছে থরথরিয়ে। তৃষ্ণা কাঁপা হাতে ঠিক করতে চেয়েও পারছে না। হাতের উপর সাপ পরেছিল মনে পরতেই হাত কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে ওর।

ও ঢোক গিলে লজ্জা ভয় মিশ্রিত গলায় বলল,,” পারছি না। দেখুন আমার হাত কাঁপছে।”
জায়ান বিরক্তিকর চোখে তাকাল হাতের দিকে সত্যি কাঁপছে। মনে হচ্ছে শীতল হাওয়া দাড় করিয়ে রেখেছি তাই থরথরিয়ে কাঁপছে।
তার ব‌উ এতো ভীতু ভাবতেই জায়ানের লজ্জা লাগছে।‌ সামান্য খেলনা সাপ দেখে এই মেয়ের এই অবস্থা! কপালে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ করে আছে জায়ান।
মন চাচ্ছে ওর এই সাপ এই মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে রাখতে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে গম্ভীরতা বজায় রেখে নিচু হয়ে খয়েরি শাড়ির আঁচল হাতে তুলে উঠে দাঁড়াল।
আর নিজেই গুছিয়ে দিয়ে বললেন,” গেট আউট মাই রুম।”
বলেই রিমোট দিয়ে দরজা খুলে দিল। তৃষ্ণা কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলো‌‌।
এমন ভয়ংকর স্বামী কিনা আমার কপালে ছিল? আব্বা আম্মায় আমারে এমন একজনের কাছে বিয়া দিল। যে কিনা প্রথম দিন‌ই ভয় দেখিয়ে মারতে চাইছিল।
ঢোক গিলে হাঁটতে লাগল। নিজের রুম না পেলেও দেখা হলো আমার দেবর জোভান এর সাথে।
তৃষ্ণা কে দেখেই এগিয়ে এসে বললেন,” ভাবি তুমি কি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে?”
বলেই একবার পেছনে জায়ানের রুমের দিকে তাকাল।
তৃষ্ণা চুপ করে তাকিয়ে আছে। কথা বলছি না দেখে জোভান আবার বললেন,” ভাবি।”
” কিছু ক‌ইবেন?”
” নাহ ভাবি তুমি কি কিছু নিয়ে ভয় পাইছ?”
তৃষ্ণা কাঁপা গলায় বলল,” সাপ।”
জোভান চমকে উঠে বললেন,” কোথায় সাপ?”
এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে। তৃষ্ণা জায়ানের রুমে দেখিয়ে বলল,” উনি আমায় সাপ দিয়ে ভয় দেখিয়েছে।”
বলেই তৃষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। জোভান অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে র‌ইল। তারপর জায়ানের রুমে নক করল।
জায়ান বিরক্তিকর মুখে বললেন,” কি হয়েছে?”
” ভাই তুমি ভাবিকে ভয় দেখিয়েছ?”
” ভয় দেখাব কেন আজব।”
” ভাবি যে এটা বলে কাঁদছিল!”
” দেখ আমাকে ডিস্টার্ব করিস না। এমনিতেই ওই মেয়ে আমার মাথা খারাপ করে গেছে সকাল সকাল।”
বলেই জায়ান ঠাস করে জোভানের সামনে দরজা আটকে দিল।

তৃষ্ণার সাথে দেখা হলো লিয়ার সেই তাকে তার রুমে পৌঁছে দিল।
তৃষ্ণা বিছানায় শক্ত হয়ে শুয়ে র‌ইল।
বেলা গড়াল সকালের নাস্তা করার পর ও বের হয়ে এক অপরিচিত বাচ্চা ছেলে মেয়ে দেখল। দুজনে সেম ডিজাইনের পোশাক পরে আছে। এরা দুজন ছেলে মেয়ে বুঝেছে একজনের মাথা ঝুঁটি করা চুল দেখে আরেকজন এর মাথায় ছোট চুল।
এতো মিল দুজনের ও হা করে তাকিয়ে ছিল।গুলুমুলু মোটা সোটা দুজনেই। ওর দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে ছিল। ও কাছে ডাকতেই দু’জনে দৌড়ে চলে গেল।
যাওয়ার আগে বলেছে,” ওইটা নোংরা মেয়ে মাম্মা তার কাছে যেতে মানা করেছে।”
তৃষ্ণা চমকিত চোখে তাকিয়ে আছে। কথা গুলো ওর কানে বারি খাচ্ছে।
তৃষ্ণা অন্যমনষ্কর হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো হাঁটতে হাঁটতে। এখানে এসে তৃষ্ণা অনেক মানুষ দেখে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে পরল। দূর থেকেই তৃষ্ণা জায়ান কে চিনে ফেলল। ক্লিন সেভ করা ফর্সা মুখটা শক্ত গম্ভীর করে বসে আছে‌ তার পরণে কালো প্যান্ট ও কালো কোর্ট। দূর থেকে তার সিল্কি খাড়া খাড়া কালার করা চুল গুলো ঝিলঝিল করছে। জায়ানের পাশে তার মতোই একটা মোটাসোটা গম্ভীর লোক বসে আছে। তার গায়ে এ্যাশ কোর্ট। তার মাথার চুল লাল‌। সাদা চুলে মেহেদি দিলে যেমন হয়। উনি কে? উনার ছবি‌ই ত ড্রয়িংরুমে টানানো।

দুজনে পাশাপাশি বসা। তাদের সামনে আরো দুজন লোক বসে আছে। তাদের পেছনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিছু পেপারস নিয়ে তারা গভীর মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করছে।
হঠাৎ করেই জায়ান রক্তিম চোখে তৃষ্ণার দিকে তাকালো। চোখের ইশায়ার কিছু বুঝাতে চাইলো তৃষ্ণা মাথা মুন্ডু কিছু বুঝল না। কিন্তু তার তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেছে। তিনি নিজের হাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম তার হাতের আঙুল নাড়িয়ে আমাকে চলে যেতে বলছে ভেতরে। তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি দেখতে পাচ্ছি জায়ানের ফর্সা মুখটা আসতে আসতে রক্তিম হয়ে উঠছে।
তখনি উর্মি আপু আসল আর আমার হাত ধরে বললেন,” এখানে কি করছ? আব্বু ভাইয়া কাজ করছে চলো এখানে থেকে।”
বলেই টেনে নিয়ে গেল সেখানে থেকে ওকে।
” ওখানে থাকলে কি হবে?”
” জানি না। কিন্তু আব্বু ভাইয়া নিজেদের কাজের সময় আমাদের থাকতে মানা করেছে।”
” তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”
” বলো ভাবি।”
” আপু তোমার ভাই আমাকে কেন বিয়ে করেছে?”
” এটা কেমন প্রশ্ন ভাবী?”
” আমি বাড়ি কবে যাব?” অসহায় মুখ করে বলল।
” কাল যাবে হয়তো। আজকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইয়া আজ বিজি তাই কাল যাবে।”
” তোমাদের বাসার সবাই কেমন জানি অদ্ভুত। এমন কেন লাগে।”
” তুমি তো বাচ্চা মেয়ে এজন্য এমন লাগছে‌।” উর্মি চলে গেল‌।

আজ সারাদিনে বুঝতে পারলাম এই বাসায় লোকজনের অভাব নেই। কিন্তু অদ্ভুত কাউকেই আমি চিনি না। তারা সম্পর্কে আমার কি হয় জানি না। তারা ও জানতে চায়না আমার সম্পর্কে অদ্ভুত।
এ আমি কোন রহস্যের দুনিয়ায় এসে পরলাম।
রাতে শুয়ে ভাবছি আমি মনে হয় প্রথম নারী যে শশুর বাড়ী এসেও স্বামীর দেখা পায় না। তার ঘর আমার ঘর আলাদা।
আমার শশুর শাশুড়ি কাউকে চিনি না। প্রথম দিন সেই মহিলা টাকে শাশুড়ি ভেবেছিলাম তার আর দেখা পেলাম না। ননদ, দেবর আর ওই লিয়া ছাড়া কাউকে আমি চিনি না। আজব কারবার।
আর ওই বাচ্চা গুলো আমায় নোংরা কেন বলল আমার শরীরে কি ময়লা আছে?
ক‌ই আমি তো যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছি। গ্রামে থাকাকালীন আমি মাঠে, ঘাটে গাছে উঠে দৌড় ঝাঁপ পারতাম তখন না হয় ময়লা থাকত। কিন্তু এখন এই বন্ধ দালানে আমি ময়লা পা‌ই ক‌ই।
আমাকে নোংরা কেন বলল। বকুল কে খুব মনে পরতাছে।‌দুইবোন গলা জড়িয়ে শুয়ে কতো কথা ‌বলতাম। আজ আমি একা। গতকাল ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। আজ আমি ঘুমাব কি করে। বিছানায় ছটফট করে উঠে পরলাম।

দুইদিন ধরে আমি এই বন্ধ দালানে আটকে বসে আছি। বাইরে প্রকৃতির নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে ডানে হাঁটতে লাগলাম। সকালে বামে গেছিলাম। তখন জায়ানের রুম পেয়েছিলাম।
একটু হাঁটতে আমি পূর্ব দিকে গেলাম। দুই কদম যেতেই দেখলাম আমি একেবারে শেষ মাথায় চলে এসেছি মনে হয়। ফিরে আসতে যাব তখনি সেই বন্ধ কোণার রুমটার দরজার বারি দিল কেউ। তৃষ্ণা চমকে উঠে পেছনে ঘুরতে যাবে তখনি একটা হাত তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে আটকে দিল। তৃষ্ণার বুক ছ্যাৎ করে উঠলো।
ও ঢোক পেছনে ফিরতেই ভরাট গলায় লোকটা বলে উঠলেন,”এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছ?”
তৃষ্ণা কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখনি লোকটা ওকে নিয়ে এলো এক অন্ধকার জায়গায়।
দেয়ালে ঠেসে ধরে লোকটা তৃষ্ণার কোমর চেপে ধরে ফিসফিস করে বললেন,” বাচ্চা মেয়ে এতো দূর আসলে কি করে? তোমাকে তো বোকা, ভীতু ভেবেছিলাম। তুমি এখানে আসার সাহস পেলে কি করে? তবুও এতো গভীর রাতে।”
অন্ধকারে একজন পুরুষালী কন্ঠ স্বর শুনে ও তার হাতের স্পর্শ পেয়ে তৃষ্ণা চমকে উঠল। ছটফট করে ছাড়াতে চেষ্টা করল।
” আজকেও বলবে নাকি স্বামী রাগ করবে?”
বলেই জায়ান আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো তৃষ্ণার সাথে‌।
তৃষ্ণা সত্যি বলে উঠল,” স্বামী রাগ করবে কেন? আপনি‌ই তো স্বামী।”

#চলবে…
( গল্প নিয়ে যত কিন্তু প্রশ্ন আছে সব জট খুলবে আস্তে ধীরে ধৈর্য দিয়ে পরতে থাকুন। একদিনে সব জানলে এটা উপন্যাস হতো না। অনুগল্প হতো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here