ক্যাসিনো পর্ব -১১

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১১

মরিয়ম উৎকণ্ঠা থেকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে মহুয়ারকে। তুমি এর বেশি আর কিছু কি জানতে পেরেছো নিশানের থেকে??
নাহ আপু আমি প্রথমে জিঙ্গাসা করেছিলাম,, কিন্তু তখন শুধু ঐ টুকুই বলেছিল। তার আর কোন কথা বলেনি। আর আমিও এক দিনের পরিচয়ে এতো কিছু জানতে চাইলে হয়তো এটাকে বেয়াদবি মনে করবেন। আর যে রাগ দেখেছি আমি তাতে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি, আমার মনে হয় মেহমেত সাহেবের থেকেই বাকি টা উত্তর হয়তো পেয়ে যাবেন। মরিয়ম এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, আনমনা হয়ে পড়লো। মহুয়া তখন উদ্বিগ্নতার সাথে বললেন, আমার মনে হয় উনি মিথ্যা বলছেন না। কোন এক প্রতিশোধের আগুনেই মেহমেত সাহেবের সাথে এমন করেছিলেন। তার অতীতে হয়তো কোন ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। উনি বলেছেন শাহানা উনার স্ত্রী ছিলেন। তাহলে ধর্ষন এবং খুনের দায়ে জেলে কেন গেলেন এই রহস্যের পিছনে নিশ্চিত কোন ঘাবলা রয়েছে। মরিয়ম মহুয়া কে ধন্যবাদ জানালো সাথে শাপলা কেউ।

আমি নিশ্চই এই রহস্যে উদঘাটন করার দৃঢ় চেষ্টা করবো। মেহমেত কয়েক দিন ধরে যে স্বাভাবিক আচারণ করছে তাতেও কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে। সে ঢাবিতে যাবে এক বার এবং এর সত্যতা কত খানি তাও শুনে জেনে আসবে।

মরিয়ম কিছু ক্ষন এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে শাপলার উদ্দেশ্য বললেন,, আম্মা আমি কিছু বলতে চাই,,???
শাপলা চোখে মুখে হাসি টেনে বললেন,, হ্যাঁ বল কি বলবে!! আমি বলেছিলাম যে এখান থেকে কিছু মেয়ে কে আমি আজাদ করতে চাই।

মরিয়মের কথা টা শুনে মূহুর্তেই হাস্যজ্বল চেহারা টা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আশে পাশের মেয়ে গুলো ও অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল মরিয়মের দিকে। এই মেয়ে গুলো শাপলা চিনে এক জন পাথর হৃদয়ী মহিলা নামে। যার ভিতরে কোন মায়া মমতা বলতে কিছুই নেই। তার কাছে টাকা টাই মূল। কিন্তু মরিয়মের সাথে এমন সুন্দর ব্যাবহারে তারা নিজেরাও স্তম্ভিত হয়ে গেছে। এত কঠোর মহিলা কে তারা কখনো নরম হৃদয়ে দেখেনি।

শাপলা ফ্যাকাশে মুখে শুকনো হাসি টেনে বললেন,,এটা আমি কখনো করতে পারবো না। তোমার এই চাওয়া কখনোই পূরণ হবে না।
মরিয়ম হতাশা মুখে শাপলার চোখে চোখ রাখলো তারপর নিজের জায়গা থেকে উঠে শাপলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আলতো করে হাত দুটো ধরলো। কেন হবে না আম্মা!! এক জন নারীর সব থেকে মূলবান জিনিস তার অহংকার তার সতীত্ব। সেই সতীত্ব বিক্রি করার মাঝে থেকে যদি আমি কাউকে বেরিয়ে নিয়ে আসি তাহলে সেটা দোষের কি?? আমি জানি তুমি এখানকার একেকটা মেয়েকে অনেক টাকা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছো। আমি তার দুগুন টাকা দিবো,,যদি তাতেও না বলো তাহলে বলবো আমি তিনগুণ দিতেও রাজি!!

শাপলা হতভম্ভের মত মরিয়মের কথা শুনছে,, মেয়েটার মধ্যে এক অদ্ভুত শান্তি রয়েছে। যখন আম্মা তার মিষ্টি কন্ঠে বলে ডাকে তখন বুকের ভিতর এক হিমশীতল হাওয়া বয়ে যায় যেন, খুব আফসোস হয় নিজের এই জীবনের জন্য,যদি ঠিক বয়সে তার সাধারণ মেয়ের মত তার ও বিয়ে হতো তাহলে এমনি মেয়ের মা হতে পারতো। এতো বছর পর মা হওয়ার ইচ্ছা টা যেন তীরের মত তার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করে মাথা চারা দিয়ে উঠতে চাচ্ছে। নিমিষেই তার অন্ধকার অতীতের সব কথা মনে পড়ে গেল এই সমাজ তো তাকে শান্তির কোন জায়গা দেয়নি বলে আজ সে পতিতাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করছে। ঘৃনা ধরে যায় এই মুখোশ ধারী ভালো সমাজের উপর।

মরিয়ম শাপলার হাত ঝাঁকি দিয়ে অসহায়ের মতো মুখ করে আবার বলে কি আম্মা কিছু বলেন না ??
আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো। তুমি কেন ওদের আজাদ করতে চাচ্ছো এটা করে তোমাদের কি লাভ হবে?? আর সব থেকে বড় কথা তুমি এখান থেকে কাউকে বের করে নিয়ে গিয়ে তাদের যথাযথ কেউ সম্মান দিতে পারবে??? তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে শাপলা আবারো বললেন,,কেউ তাদের যথাযথ অধিকার সম্মান কিছুই দিতে পারবে না। না এই সমাজ দিতে পারবে না কোন পুরুষ জাতি। মরিয়ম মুচকি হেসে জবাব দিলেন,, ভালো কাজে নিজেকে গুটিয়ে নিতে নেই, খারাপ কাজে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়,লালকুঠিরেই বা তাদের কিসের সম্মান অধিকার দেওয়া হয় আম্মা?? এর মত নিকৃষ্টতর কাজে তাদের কিসের সম্মান আছে?? আর উনাদের আজাদ করে আমার কিসের লাভ?? এই কলুষিত সমাজের কিছু টা কালি ধুয়ে দিয়ে এই সমাজের বুকে আমি চাই আমার সব বোনেরা শান্তিতে বসবাস করুক। আর জানেন কোন কিছু কে আজাদে যা শান্তি আছে তা হাজার সাদকা তেওঁ নেই। ওদের সব রকম অধিকার আমি নিজে দেওয়ার চেষ্টা করবো। এখানে কোন মেয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে আসেনি। সবাই কোন না সমস্যার কারণে এমন নিকৃষ্টতর কাজে তারা নিয়োজিত হয়েছে। কেউ ধোকা পেয়ে আবার এখানে বিক্রি হয়ে গেছে। আবার কেউ প্রিয় মানুষের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে চলে আসে তার হাত ধরে,তার পর বেইমানী করে তাকে এখানে ছেড়ে গেছে টাকার জন্য।

প্রতি টা মেয়ে কে জিজ্ঞেস করে দেখেন তো কেউ এখানে মানসিক শারিরীক বাহ্যিক ভাবে ভালো রয়েছে কিনা??? প্রাচীন কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের সতীদাহ নামে এক প্রথা ছিল যেখানে স্বামী মারা গেলে যেই চিতায় তাকে পুড়ানো হয় ঠিক সেই চিতায় সেই স্ত্রী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতো। যেন তাদের সতীত্ব অন্য কাউকে না দিতে হয়। বিষয় টা তাজ্জবের সাথে সাথে বোকামিও। ঠিক সেভাবেই এখানকার সবাই কে লাগছে আমার পেটের দায় সব থেকে বোকামি একটা কাজে জীবন শেষ করছে। দুইটার মধ্যে বোকামি রয়েছে শুধু প্রেক্ষাপট টাই ভিন্ন। কেউ সতীত্ব রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছে। আর কেউ সতীত্ব দিয়ে ধুকে ধুকে মরছে।

শাপলার কোন ভাবান্তর নেই,সে আলতো ভাবে নিজের মুষ্টিবদ্ধ হাত মরিয়মের থেকে ছেড়ে নিল। মরিয়ম আশাহত হলো। সাথে ভিষন কষ্ট ও পেল। ভেবেছিল হয়তো সে কিছু মেয়ে কে এই নর্দমা থেকে উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু তা হয়তো হলো না আর।
মরিয়মের কোথায় লালকুঠিরের সকল মেয়েদের বুকে এক শীতল অনুভূতি ছেয়ে গেল। সব থেকে বেশি আশাবাদী ছিল মহুয়া। তার কিছু ক্ষনের জন্য মনে হয়েছিল সে এই নরক থেকে উদ্ধার পাওয়ার এক আশার আলো টিমটিম করে জ্বলছিল। কিন্তু পরক্ষনেই তা বিষাক্ত হাওয়ায় নিভে গেল।

মরিয়ম আরো এক বার অনুরোধ করলো, এবং বললেন, কখনো খুব বেশি অস্থির হতাশা লাগলে কোন পাখি কে আজাদ করে দিয়েন তার পর তার উরে যাওয়ার পানে এক বার চেয়ে দেখবেন। সকল দুঃখ গ্লানি এক নিমেষে ভুলে যাবেন। আমার আব্বা এমন করতো,যখনি খুব বেশি কষ্ট পেতেন, বাজার থেকে কবুতর কিনে আনতেন,তার আমাকে নিয়ে সেই কবুতর টা আকাশে উরিয়ে দিতেন। তখন কি যে আনন্দ লাগতো বলে বুঝাতে পারবো না আম্মা
শাপলা কোন কথা না বলে স্থান ত্যাগ করলো। মরিয়ম মর্মাহত হলো। এক দীর্ঘশ্বাস বুকচিরে বেরিয়ে আসলো। মেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকালো। তার ভিষন মায়া হলো তাদের জন্য। মহুয়া হাসি হাসি মুখে মরিয়মের কাছে এসে তার হাত ধরে বললেন। আপু তুমি মন খারাপ করো না। তুমি আমাদের জন্য যা ভেবেছো তা বা কম কিসে। নিয়তি যা লিখেছে তাই হবে আমরা এটা মেনে নিয়েছি, নিয়তি কখনো খন্ডানো যায় না তো আপু। কষ্ট হয় মেনে নিতে এমন জীবন কিন্তু আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। পতিতা বলে আড়চোখে দেখোনি। কত সুন্দর করে সম্মান দিলে। এটাই অনেক পাওয়া আমাদের কাছে।

মরিয়ম মহুয়া কে জরিয়ে ধরলো। মরিয়মের চোখে পানি। খুব সঙ্গ পণে তা মুছে নিল। মরিয়ম চলে যাচ্ছে, মহুয়ার চোখ টা ছলছল করছে। মরিয়ম যাওয়ার আগে আবার তাদের আশা দিয়ে গেছে সে আবার আসবে তাদের ছাড়াতে।

বাসায় যেতে যেতে ৬টা পার হয়ে গেল। মিহিরিমা কে নেহাল দের বাসা থেকে নিয়ে আসলো। মরিয়মের মন টা ভিষন খারাপ,, কিছুই ভালো লাগছে না। নিশানের বিষয় টা সঠিক ভাবে না জানা অব্দি শান্তি পাবে না যেন। মেহমেতের কাছে থেকেই জানতে হবে কি হয়েছিল তার সাথে!!

মরিয়ম মাথা টা বড্ড ঝিমঝিম করছে । তাই ভাবলো গোসল দিলে হয়তো একটু ভালো লাগবে। মিহি কে হালকা পাতলা খাবার খাইয়ে পড়ার টেবিলে তাকে বসিয়ে বাথরুমে চলে যায়। প্রায় অনেক ক্ষন শাওয়ার নিয়ে ভিজা চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে। তখনই কোথায় থেকে যেন মেহমেত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ঘরে প্রবেশ করে। তার পর উত্তেজিত গলায় বলল…..

চলবে _____????

কেমন লাগলো এই পর্যন্ত গল্পটা…? সবাই পেজটা ফলো করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here