ক্রমশ ব্যভিচার পর্ব ১

“তোমার বউ তোমাকে সন্দেহ করে না?

(শেলি কাব্যর বুকে আঙুল দিয়ে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করল)

–কিহ্ “সন্দেহ!” (কাব্য হাসলো)

“তাকে সন্দেহ করবে তার বউ!
কাব্য এতদিনে একটা কথা বুঝে নিয়েছে যে মানুষ মানুষকে যতবেশি বিশ্বাস করে তাকে ফাঁকি দেওয়ার তত বেশি সুযোগ। আর যে মানুষ সাজিয়ে অবলীলায় মিথ্যে বলতে পারে, তাকে ধরা অতটাও সহজ নয়।কারন মিথ্যে কথা সবাই বলতে পারেনা, সেটাও একটা আর্ট। আর বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই বোকা বোকা মিথ্যে বলে ধরা পড়ে যায়।

অবশ্য শুধু তার বউ রিচা ই নয়, এই মুহূর্তে যে মেয়েটি তার বুকে হামাগুড়ি খাচ্ছে সেও জানে না কাব্যর আরও একজন প্রেয়সী আছে, আরও একজন শয্যাসহচরী আছে। ব্যাপার টা খুব সহজ। আর সেই হিসেবে কাব্যর যুক্তিও।

“একজন নারীকে নিয়ে তার পক্ষে সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়। নারী অনেকটা সুন্দর সাইড ডিশের মতো। যতই ভালো হোক না কেন একই খাবার রোজ খেলে সেই খাবারের স্বাদ কমে যায়। তাই জন্য পাল্টে পাল্টে খাবার খেতে হয়। কাব্যর কাছে জীবনটাও সেরকম।কেবল যদি সে স্ত্রী কে নিয়ে সুখী থাকতে চাইতো, তাহলে পারতো না। অশান্তি লেগেই থাকতো। আর সেও সুখী হতো না। আর বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য সুখে থাকা নয় কি!

কাব্য তখন শেলির মাথায় বিলি কেটে বললো -“সন্দেহ কেন করবে! তার প্রতি আমি তো কোন অযত্ন নিইনা। যেমন তোমার প্রতিও নিইনা। তোমরা দুজনেই আমার লাইফের একটা ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট। হুম এটা ঠিক ও যদি জানতে পারে, খুব কষ্ট পাবে। হয়তো আমাকে ছেড়ে চলেও যাবে। হয়তো ওকে বোঝাতে খুব কষ্ট হবে।
আর যেহেতু ও আমার স্ত্রী আমাকে ওর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তোমার কাছে আর আসতে পারবোনা। সেটা কি ভালো হবে! (কাব্য)

–“তাহলে তুমি তো ওকে ছেড়ে আমার কাছেও আসতে পারো। পারমান্যান্টলি।”

(শেলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে কাব্যর দিকে তাকালো কথা’টা বলে)

কাব্য তখন তার চোখের ধূর্ততা আড়াল করে হেসে বললো।

–“ধুর পাগলী। তাই হয়। তুমিও যেমন আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট রিচাও তো ইম্পর্ট্যান্ট। আজ যদি ও বলে তোমাকে ছেড়ে দিতে আর আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়! সেটা কি উচিৎ হবে!

কথাটা শুনে শেলি তখন কাব্যকে জড়িয়ে ধরে অভিমানের সুরে বললো। “আমাকে ছেড়ে কোথাও কোনোদিন যেও না প্লীজ।

–“হ্যাঁ বেশ তো”

(বলেই কাব্য ঠোঁট চেপে হাসলো। আর মনে মনে নিজেকে বললো, “মেয়েরা কি বোকা না! দুটো মিষ্টি কথা শুনলে, এবং একটু যুক্তি সাজিয়ে বুঝিয়ে দিলেই বুঝে যায়। কিন্তু খেলাটা ঠিক জমছেনা, মানে কাব্য চৌধুরী এদের থেকে অনেক এগিয়ে। এই বোকা মেয়েগুলোর থেকে। এক তার শান্ত, মিষ্টি বউ রিচা, তারপর এই কলেজের মৌমাছি শেলি (ভালো নাম অবশ্য শেফালি। শেলি নামটা তারই দেওয়া।) আর শেষমেশ সুজান। সুজান যদিও কলগার্ল। বাকি দুজনের মতো না, তার প্রতি ফরমায়েশও আলাদা। তবুও কাব্যর প্রতি তার একটা সফট কর্নার আছে।

এরা প্রত্যেকেই সুন্দরী। প্রত্যেকেই আগুন। কাব্যর বুকে সবাই শান্ত হয়ে যায়। সে তো দিন দিন প্লেয়ার হয়ে যাচ্ছে। নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করা সে পছন্দ করে না তাও, মানে সিরিয়াসলি তার কলিগ রা যারা যারা অ্যাফেয়ার্স এর সাথে যুক্ত তারা একজনের পরে আর একজনকে সামলাতে গিয়েই হিমশিম খেয়ে যায়।তাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই বউরা তাদের সন্দেহ করে। আর করবে নাই বা কেন! বোকার মতো কাজ সবার। বউকে অবহেলা করে অন্য একজনের কাছে ছুটে যায়। বউ তো সন্দেহ করবেই তার উপরে, জলশাতে পেটে মদ পড়লেই সবাই বুক উঁচিয়ে তাদের অ্যাফেয়ার্স এর গল্প বলে। অ্যাফেয়ার্স এর প্রথম শর্ত কাউকে না জানানো, কাউকে না। এ জগতে যারা বিশ্বাস করে তারাই ঠকে। এ যেমন কাব্যকে দেখুক সে তিন বছর ধরে তিনজন কে নিয়ে চলছে, রিচা আজ অবধি কখনো সন্দেহ করেনি। করতে পারবেও না। কারণ কাব্য চৌধুরী একজন জিনিয়াস। নিজের মনে নিজেই তখন হেসে উঠল কাব্য।
.
.
.
তারপর কাব্য শুয়ে শুয়েই ফোনটা হাতে তুলে নিল।ইন্টারনেট কানেকশন টা অন করতেই টুং টুং শব্দে নোটিফিকেশন আর মেসেজ আছড়ে পড়ল।
ক্যাচে ক্লিয়ার করে হোয়াটস-অ্যাপ টা খুলতেই ভুরু কুঁচকে গেল কাব্য চৌধুরীর।

কারন একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।চ্যাট বক্স টা খুলতেই তখন কাব্যর বুক কেঁপে উঠল।অটো ডাউনলোড হয়ে সেই আননোন নাম্বার থেকে যে ছবি গুলো এখন তার ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে।
তার চারটে তার। শেলি আর সুজানের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। তখন হঠাৎ শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল কাব্যর। কারণ সব থেকে উপরের দুটো ছবির একটাতেও সে নেই। সেখানে দুজন স্ত্রী পুরুষের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি রয়েছে। পুরুষ টিকে সে চেনেনা কিন্তু যে মেয়েটি সেই পুরুষটির শারীরিক আবর্তে জড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয়, তার শান্ত – স্নিগ্ধ স্ত্রী রিচা।

“রিচাআয়ায়ায়ায়ায়া!

সাথে সাথেই পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠলো কাব্য। তার চোখে আগুন। যে আগুনে এই মুহূর্তে সবকিছু পুড়িয়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। তার মাথা ঘুরতে শুরু করলো, রিচা! কিন্তু কি করে! রিচাকে সে বিশ্বাস করে।
রিচা তার। কেবল তার। বিয়ে করে আনা বউ।
যে আজ পর্যন্ত একটা কোনো কাজ করেনি কাব্যকে না বলে, যে কাব্যকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে কাব্যর কাছে সব সঁপে দিয়েছে। কিন্তু এটা রিচা হতেই পারেনা।

তখন কাব্য বার কয়েক দেখল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। উহু যে বউ এর সাথে এতগুলো বছর সে ঘর করেছে। এক বিছানাতে শুয়েছে। তাকে চিনতে ভুল হবার কথা নয়। এ রিচা ই। কিন্তু ছেলেটা কে! আর যে মেসেজ করেছে সেই বা কে! তার কাছে এতগুলো ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এলো কি করে! একের পর এক প্রশ্নে কাব্য জর্জরিত হয়ে পড়েছে, কিন্তু সব প্রশ্নকে ছাপিয়ে যে প্রশ্নটা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা হলো রিচা কেন এরকম করল! কতদিন থেকে এরকম চলছে! সে তো কিছু বুঝতেও পারেনি। রিচা এভাবে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। তার স্ত্রী। অন্য পুরুষের বন্ধনে।তখন আগুন জ্বলে উঠল কাব্যর মাথায়। এরকম চরিত্রহীন মেয়ের সাথে সে আর একমুহূর্ত ও থাকবেনা। হাতের কাছে এখন কিছু পেলে সে কি করতো জানেনা।হয়ত রিচাকে মেরেই ফেলতো। কারন রিচাকে বাঁচিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। কাব্য তাকে বিশ্বাস করেছিল। তার ভালোবাসায় কোনো খামতি রাখেনি। তাহলে এরকম কেন করল রিচা! রিচাকে তো সে খুব ভালোবাসতো।আর রিচা অসম্ভব সুন্দরী।

–“রিচাআয়ায়ায়ায়া!

“আবার চিৎকার করে উঠল কাব্য। শেলি তখন উঠে বসেছে ততক্ষণে। পাশের মানুষটার হঠাৎ এই পরিবর্তনে সে বিস্মিত। পাগলের মতো দিশেহারা হয়ে যাওয়া ঘেরাকলে ফেঁসে যাওয়া ইঁদুরের মতো ছটফট করছে কাব্য চৌধুরী। তখন শেলি জিজ্ঞাসা করলো।

–“কি হলো তোমার! সব ঠিক আছে তো!

“কিন্তু কাব্য তখন হিংস্র চোখে শেলির দিকে তাকালো।তার মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে সবাই দায়ী তার এই অবস্থারর জন্য। সেজন্য কাউকে বিশ্বাস করা যায়না।এই পাশের মেয়েটাকেও না। হয়ত এও জড়িয়ে আছে।হয়ত সব ঘটনার পিছনে এ আছে। মনে মনে কাব্যকে দেখে এখন হাসছে। হয়ত ভেবেছে, এসব দেখে রিচাকে ছেড়ে সে সোজা তার কাছে ছুটে আসবে। এরকম ভেবে থাকলে খুব ভুল ভেবেছে। এরা শুধুই টাইমপাস কাব্যর কাছে। আজ ভালো লাগছে আজ আছে, কাল ভালো না লাগলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে শহরের ডাস্টবিনে।

“হ্যাঁ ডাস্টবিন, ওখানেই এদের স্থান। এরা কখনওই রিচার জায়গা নেবেনা। রিচা ওর নিজের বউ।
রিচার উপর অধিকার আছে ওর। রিচার সবকিছু ওর। রিচা কেবল ওর এবং একমাত্র ওর ই।

কাব্য তখন একটা হ্যাঁচকা মেরে শেলির হাত টা সরিয়ে, বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ঝটপট জামা প্যান্ট গলিয়ে হাতে ব্যাগটা তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগোলো নিঃশব্দে। শেলি তখন ভীষণ রকম আশ্চর্য। এরকম কাব্যকে সে কখনো দেখেনি। কেমন যেন হিংস্র হায়নার মতো। কি এমন হল! ফোন টা হাতে নিতেই..
কেন এরকম হয়ে গেল। সে কি কিছু করেছে। সে তো কোনো খারাপ কথা বলেনি। সে তো রিচাকে ছেড়ে আসার কথাও বলেনি। কিছুই বলেনি। শুধু জিজ্ঞেস করেছে, রিচাকে ছেড়ে আসলে কেমন হয়! তাতে এরকম রিয়্যাক্ট করার তো মানে হয় না। আর তাছাড়া ও তো হেসে হেসেই উত্তর দিল।

কিন্তু কাব্য যখন দরজা ঠেলে বেরিয়ে যাচ্ছিলো,তখন শেষবারের মতো শেলি আর একবার জিজ্ঞেস করলো।

–“কাব্য তোমার কি হয়েছে বলবে!

কাব্য তখন ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো চাহুনি হেনে উত্তর দিল,”তোমার জেনে কাজ নেই। আর শোনো আমি এখন আসতে পারবোনা। কবে আসবো ঠিক নেই। আমাকে একজনের হিসেব মেটাতে হবে।

“কথাটা বলে “দাঁতে দাঁতে চেপে জবাব টা দিয়ে হাঁটতে লাগালো কাব্য। তারপর বারান্দা পেরিয়ে সোজা সিঁড়ির দিকে। সেদিকে চেয়ে একবার শিউরে উঠলো শেলি।

–“কি ভয়ংকর”

হঠাৎ নিজের অজান্তেই শেলির মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।
.
.
চলবে………..♥

গল্প :- ক্রমশ
ব্যভিচারী
পর্ব :- ০১
Writer :- Kabbo Ahammad
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here