ক্রাশ ডাক্তার বউ পর্ব ৮+৯

8+9

#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:8
সারা : কি চাই?( ঝাঁঝালো কন্ঠে )
.
মাহির : তোমার কাছে একটা অনুরোধ আছে বউ!
.
সারা : বউ? ( তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে )
.
মাহির : প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনো!
.
সারা : আমার কথাও সেদিন কেউ শুনেনি। তাহলে আমি কেনো শুনবো?
.
মাহির : প্লিজ বউ তুমি এত নিষ্ঠুর হয়ো না। একবার শুধু।
.
সারা কিছুক্ষণ ভেবে বলে।
.
সারা : বলুন কি বলবেন?
.
মাহির : আমাদের সন্তানদের আমি একটু কোলে নিয়ে আদর করতে চাই। দেবে?
.
সারা : আমাদের সন্তান? ও হ্যালো মিস্টার খান ওরা শুধু আমার সন্তান।আর সব থেকে বড় কথা আমার মত চরিত্রহীনরার গর্ভে আপনার সন্তান জন্ম নিবে?( ঝাঁঝালো কন্ঠে )
.
মাহির সারার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে।
.
মাহির : বউ আমি জানি আমি যা করছি তা ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য।তুমিও জানো আর আমিও জানি ওরা আমাদের সন্তান। একবার শুধু একবার ওদের মন ভরে আদর করতে চাই প্লিজ বউ শুধু একবার।
.
মাহিরের চোখের বিন্দু বিন্দু পানি গাল বেয়ে ফ্লোরে আছরে পড়ছে। সারা মাহিরের চোখে পানি দেখে ওর মন কিছুটা নরম হয়। হাজার অন্যায় করুক মাহির তো ও সন্তানদের বাবা ও ভালোবাসার মানুষ। সারা ওর মুখ থেকে মাহিরের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে।
.
সারা : রোদ আর রোদ্রি ঘুমিয়ে পড়েছে।কাল সকালে আমি ওদের আপনার কাছে নিয়ে যাবো। এখন প্লিজ এখানে থেকে যান।
.
এই বলে সারা মাহিরের মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। মাহির সারার কথা শুনে আশার এক বিন্দু আলো দেখতে পায়। মাহির জানে সারা মাহির কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সারা নিজেকে কষ্ট দিতে পারে কিন্তু মাহির কে কষ্ট দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না। মাহির চোখ মুছে স্থিরর একটা হাসি দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।মাহিরের এখন শুধু সকালে অপেক্ষা। সারা দরজা বন্ধ করে দিয়ে চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। এখন শুধু নতুন ভোরের অপেক্ষায় আছে দুটো মানুষ।
.
পরেরদিন সকালে সারা শাওয়ার নিয়ে, নামাজ পড়ে নেয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছে সারা। এরমধ্যে রোদ আর রোদ্রি ঘুম থেকে উঠে গেলে সারা ওদের ফ্রেশ করিয়ে,রেডী করে নিচে নামে। মিথিলা ফোন করে সারা কে তাড়াতাড়ি রিসোর্টের বাগানে আসতে বলছে।আজ সবাই একসাথে বাগানে ব্রেকফাস্ট করবে। সারা আস্তে আস্তে রোদ আর রোদ্রির হাত ধরে হেঁটে লিফটে উঠে। লিফট থেকে বেরিয়ে দেখে মাহির ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মাহির সারা কে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করে ও বাচ্চাদের কাছে যেতে পারবে কি না। সারা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মাহির আর দেরি না করে দৌড়ে রোদ আর রোদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে চেপে ধরে। রোদ আর রোদ্রি কিছুই বুঝতে পারছে না। সারা বাবা সন্তানদের মিলন দেখে চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে।কারো চোখে পড়ার আগেই সারা চোখের পানি মুছে ফেলে। মাহির খুশিতে পাগল হয়ে গেছে রোদ আর রোদ্রি সারা মুখে চুমু দিচ্ছে। রোদ আর রোদ্রি দুজনের হাতে চুমু দিয়ে কেঁদে ফেলে মাহির।
.
রোদ্রি : কানু করছো তেনো?তুমার মাম্মা তুমাকে বকছে?( ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে )
.
মাহির হেসে দিয়ে চোখ মুছে বলে।
.
মাহির : না মা আমাকে কেউ বকেনি।
.
রোদ : তাহুলে কানু করছো তেনো?
.
মাহির : হারানো দুই রত্ন ফিরে পেয়েছি তাই খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে।
.
রোদ্রি : দুল বাবা আমি এতো থকতো থকতো কথা বুদি না কি।
.
রোদ্রির কথা শুনে সারা ফিক করে হেসে দেয়।
.
রোদ : আথা তুমি কে? আমলা তুমাকে কি বলে ডাকবু?
.
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে মাহিরের মুখটা চুপছে যায়।কি বলবে মাহির সারা তো এখনো ওকে মেনে নেয়নি তাহলে? সারা মাহির কে অবাক করে দিয়ে বলে।
.
সারা : রোদ,রোদ্রি উনি তোমাদের পাপা।
.
সারার কথা শুনে মাহির আজ যেনো খুশিতে মরেই যাবে এমন অবস্থা। রোদ আর রোদ্রি একবার ওদের মাম্মা মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার মাহিরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মাহির মুখ কালো করে বলে।
.
মাহির : আমাকে পাপা বলে ডাকবি না?
.
রোদ : আমলা তুমার উপর নাগ করছি?
.
মাহির : কেনো?
.
রোদ্রি : এতদিন তোতায় ছিলে? আমাদের তু একটুও ভালুবাসো না তাই না?
.
মাহির কেঁদে ওদের জড়িয়ে ধরে বলে।
.
মাহির : না মা আমি তোদের খুব ভালোবাসি।প্লিজ তোদের পাপা টাকে এবারের মত ক্ষমা করে দে।আর কখনো এমন ভুল করবো না।
.
রোদ : সত্যি তো?
.
মাহির : একদম সত্যি!
.
রোদ্রি : তাহলে আমালে আল ভাইকে ইয়া বলো বলো( হাত দিয়ে দেখিয়ে ) তেডি কিনে দিতে হবে। আতক্রিম আর তকলেট ও নাগবে।
.
মাহির ফিক করে হেসে দিয়ে বলে।
.
মাহির : আচ্ছা আমি তোমাদের ইয়া বড় বড় দুটো টেডি কিনে দেবো।
.
রোদ আর রোদ্রি খুশি হয়ে মাহিরের দুই গালে দুজনে চুমু দেয়।মাহিরও টুপ করে ওদের গায়ে চুমু খায়।
.
রোদ : ও মাম্মা আমাল থিদে পেয়েছে?
.
সারা : চলো বাবা আমি তোমাদের খাইয়ে দিচ্ছি।
.
মাহির : বলছি কি আমি ওদের কোলে নিয়ে আসি?
.
সারা : ঠিক আছে।
.
মাহির আর কিছু না বলে বাচ্চাদের কোলে তুলে নেয়। রোদ আর রোদ্রি মাহিরের গলা জড়িয়ে ধরে। সারা আর মাহির ওদের বাচ্চাদের নিয়ে রিসোর্টের বাগানে দিকে পা বাড়ায়। ওদের চারজনকে একসাথে দেখে মামনি, জারা, আরফিন ওদের চোখ দিয়ে খুশিতে পানি পড়তে থাকে।আজ কত বছর পর সারা আর মাহির একসাথে। মামনি চোখ মুছে মাহিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে।
.
মামনি : দে দাদুভাইদের আমার কোলে দে।
.
রোদ আর রোদ্রি যাবে না বলে মাহিরের গলা জড়িয়ে ধরে সারার দিকে তাকিয়ে থাকে। সারা ওদের সামনে এসে মিষ্টি হেসে বলে।
.
সারা : রোদ,রোদ্রি উনি তোমাদের দিদা হয়।যাও উনার কোলে।
.
সারা বলতেই ওরা লাফ দিয়ে মামনির কোলে পড়ে। জারা আর আরফিন ওদের দিকে এগিয়ে আসলে সারা ওদের দেখিয়ে বলে।
.
সারা : রোদ,রোদ্রি উনি তোমাদের বড় খালামনি ( আরফিন কে দেখিয়ে ) আর ও তোমাদের ছোট খালামনি।( জারা কে দেখিয়ে )
.
এরমধ্যে বাবাই, মাহি,আরাফ এরা সবাই এলে সারা সবার সাথে রোদ আর রোদ্রি পরিচয় করিয়ে দেয়। রোদ আর রোদ্রি কে নিয়ে কারা করি চলছে কে বেশি আদর করতে পারে।রোদ্রি এসব সহ্য করতে না পেরে বলে।
.
রোদ্রি : ও মাম্মা তুমার এতু লিলেটিভ আমাল এই থটু মাথায় কি কুরে এতু নাম মুনে রাখবো?( বিরক্তভাব নিয়ে )
.
রোদ্রির কথায় সবাই ফিক করে হেসে দেয়।

To be continue…🍁

#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:9
এরমধ্যে বাবাই, মাহি,আরাফ এরা সবাই এলে সারা সবার সাথে রোদ আর রোদ্রি পরিচয় করিয়ে দেয়। রোদ আর রোদ্রি কে নিয়ে কারা করি চলছে কে বেশি আদর করতে পারে।রোদ্রি এসব সহ্য করতে না পেরে বলে।
.
রোদ্রি : ও মাম্মা তুমার এতু লিলেটিভ আমাল এই থটু মাথায় কি কুরে এতু নাম মুনে রাখবো?( বিরক্তভাব নিয়ে )
.
রোদ্রির কথায় সবাই ফিক করে হেসে দেয়।
.
সবাই যে যার মত ব্রেকফাস্ট করে নেয়। রোদ আর রোদ্রি কে মাহিরের বাবাই মামনি নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। সারা ওর পরিবারের লোকদের সাথে তেমন কোনো কথা বলেনি কিছু জিজ্ঞাসা করলে হা বা না এর মধ্যে উত্তর দিয়েছে। মাহির সারার সাথে আর কথা বলেনি ও রোদ আর রোদ্রি কে নিয়ে মেতে আছে।রাজ সবাইকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যায়। বিয়েতে এখনো অনেক দিন বাকি আছে বিধায় দুই তিন দিন ওরা কক্সবাজারে ঘুরা ঘুরি করবে।রোদ রাজের কোলে আর রোদ্রি আরফিনের কোলে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারা ওদের থেকে একটু দূরে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে এসে নিজ মনে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে। মাহির এসে কখন যে সারার পিছনে দাঁড়িয়েছে সেদিন সারার খেয়াল নেই ও তো প্রকৃতির সাথে নিজের কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে ব্যস্ত। মাহির ধীর কন্ঠে সারা কে বলে।
.
মাহির : বউ!
.
সারা চমকে উঠে পিছন ফিরে মাহির কে দেখে পুনরায় আবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
.
সারা : বউ?( তাচ্ছিল্য করে ) মিস্টার খান আপনি কোথাও ভুল করছেন।
.
মাহির : আমি কোথাও ভুল করছি না বউ। তুমি ই আমার বউ। তুমি….( বলতে না দিয়ে )
.
সারা : পাঁচ বছর আগে আমি কারো বউ ছিলাম।কারো বাড়ির পুত্রবধূ ছিলাম।কারো বাড়ির মেয়ে ছিলাম।কারো ভাবী ছিলাম।কারো বোন ছিলাম।কারো ভালোবাসার মানুষ ছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর আগে এক অভিশপ্ত রাতে আমি আমার আপনজনের কাছে মৃত হয়ে যাই। এখন শুধু আমার একটাই পরিচয় আমি রোদ আর রোদ্রি মাম্মা। সুতরাং আমাকে মিথ্যা কোনো সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধার চেষ্টা করবেন না।( শান্ত গলায় )
.
মাহির সারার সামনে গিয়ে বলে।
.
মাহির : আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। ঐদিন তোমার কথা না শুনে আমি অনেক বড় ভুল করেছি তার শাস্তি আমি পাঁচ বছর ধরে পাচ্ছি।প্লিজ ( সারার হাত ধরে ) বউ আমাকে শেষবারের মত ক্ষমা করে দাও। কথা দিচ্ছি কখনো অভিযোগ করার সুযোগ দেবো না।
.
সারা মাহিরের হাত সরিয়ে দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে।
.
সারা : আমি আমার সন্তানদের আপনাদের সাথে মিশতে দিয়েছি মানে এই নয় আমি আপনাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কেনো মিশতে দিয়েছি জানেন? আর পাঁচ টা বাচ্চার মত ওদেরও পাপা ছিলো একটা বড় পরিবার ছিলো এসব জানান জন্য। মাত্র পনের দিন ই তো আমরা এখানে আছি ততদিন না হয় আপনি ওদের কাছে একজন ভালো পাপা হয়ে থাকলেন। তারপর আপনি আপনার রাস্তায় আর আমরা আমাদের রাস্তায়।আর সবথেকে বড় কথা আমার মত খারাপ মেয়ের সাথে আপনার জীবন সুতোয় বাঁধতে হবে না।
.
সারা আরো কিছু কড়া কড়া কথা বলে ওখান থেকে চলে যায়।সারার বলা কথাগুলো মাহিরের বুকে তীরের মত বিঁধে।মাহিরের অজান্তেই চোখ দিয়ে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যায়। মাহির সারার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত সারা ভিরের মধ্যে হারিয়ে না যায়। সারা মাহিরের চোখের আড়াল হলে মাহির এক পা এক পা করে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। সমুদ্রের এক একটা ঢেউ আছড়ে পড়ছে মাহিরের গায়ে।মাহিরের চোখের পানি আর সমুদ্রের পানি এক হয়ে যাচ্ছে। মাহির এক দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবে।মাহিরের একটা আঘাতে সারা কতটা বদলে গেছে।যে সারা কখনো মাহির কে কষ্ট দিয়ে কথা বলতো না সে সারা আজ মাহির কে কষ্ট দিতে দুইবার ভাবে না।এসব ভেবে মাহিরের ইচ্ছে করছে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিতে। কিন্তু ওর ভালোবাসার মানুষটা যে ওর উপর অভিমান করে আছে।যে করেই হোক ওকে সারার মান ভাঙাতে হবে।

To be continue…🍁

জানি আজকে পার্টটা খুব ছোট হয়ে গেছে। আমি কিছুদিন ধরে অসুস্থ তাও নিয়মিত গল্প দেওয়া চেষ্টা করেছি। কিন্তু কালকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন গল্প লিখতে গেলে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।তাও আজ অনেক কষ্ট করে এই পার্ট টা লিখলাম।একটু সুস্থ হলে আবার গল্প continue করবো। ততদিন সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here