খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১৪

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৪
#Jhorna_Islam

জীবনে সুখ নেমে আসে যদি সঠিক মানুষ টা জীবনে আসে। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে জীবন। নিজের মানুষ টা যখন পাশে থেকে হাতে হাত রেখে পথ পাড়ি দেয় তখন আর কি চাই।

যুথি সারাক্ষণ মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর কাছে ইরহানের মতো একজন আদর্শ,সৎ, কেয়ারিং হাসবেন্ড পাওয়ার জন্য।

ঘুরতে গিয়ে যুথি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় গুলো পাড় করেছে। মাঝে মাঝে সুখে তার কান্না পায়। নিজের জীবনে এতো কিছু সে কখনো আশা করেনি। দুই হাত ভরে ভালোবাসা উজাড় করে দিচ্ছে ইরহান তাকে।

লোকটার মধ্যে এতো ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছে যুথি বুঝতেই পারে নি।

যুথি শুধু ইরহানের ভালোবাসা গুলো উপভোগ করতে থাকে। যুথি তার ভালোবাসার মানুষ টা কে নতুন করে চিনেছে।

যুথি ইরহান কে বেশিদিন দূরে ঠেলে রাখেনি। আপন করে নিয়েছে। আর কতোদিন দূরে রাখবে। নিজের সব জড়তা কাটিয়ে একান্তে নিজেদের মধ্যে সময় কাটিয়েছে। ইরহান কে নতুন করে চিনেছে।

আজকে নিয়ে পাঁচদিন হতে চলল ইরহান যুথিকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় ঘুড়েছে।নিজেদের আলাদা করে সময় দিয়েছে। ভালোবেসে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে। আগামীকাল সকাল সকাল তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে। হাতে আর কিছু মুহুর্ত সময় আছে। এই সময় টুকু কাজে লাগানোর জন্য দুইজন বেরিয়ে পড়েছে। হাতে হাত রেখে খালি পায়ে সমুদ্রে নেমে পড়েছে।

বাতাসে যুথির খোলা চুল গুলো উড়ে চলেছে। ইরহান তাকিয়ে তাকিয়ে তার যুথি রানী কে দেখছে।এক নজরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে যুথি ইরহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে বুঝতেই পারেনি।

হুট করে শরীরে পানির ছিটা পড়ায় হুঁশ আসে তার। তাকিয়ে দেখে তার যুথি রানী তার দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে।ইরহান কে ভিজিয়ে দিতে পেরে সে খুব মজা পেয়েছে।

ইরহান ও কম যায় কিসে? সেও পানি ছিটিয়ে দিবে বলে হাতে পানি নিতেই যুথি দৌড়। দুইজন মিলে সমুদ্রের পাড়ে হেঁসে হেঁসে দৌড়ে চলেছে। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে যায় যুথি।

আর না। আর না এইবার থামেন। বলেই ধপ করে বালিতে বসে পরে। হাঁপাচ্ছে যুথি। ইরহান ও যুথির পাশে বসে। আরো পানি দিবা আমায়?

না না দিবো না। ভুল হয়ে গেছে।

ঠিক আছে যাও এবারের মতো মাফ করে দিলাম।

যুথি ইরহানের কথায় মুখ ভেঙায়। তারপর বালি নিয়ে ঘর তৈরি করা শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। বার বার সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে এসে পড়ে ভেঙে দিচ্ছে।

দুই তিন বার চেষ্টা করে যুথি ব্যর্থ হয়।ইরহান হাত ধরে আঁটকে দেয়। যুথিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।যুথি ইরহানের কান্ডে হকচকায়।চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখার চেষ্টা করে ওদের দিকে কেউ তাকিয়ে আছে কি না। এইদিকে তেমন একটা মানুষ নেই।যদিও কয়েকজন আছে তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।অন্যদের দেখার সময় কই তাদের?

ইরহান যুথির মুখে এসে বার বার বাতাসে এসে আছড়ে পড়া চুল গুলো সযত্নে কানে গুঁজে দেয়। মুখটা এগিয়ে এনে অনেক সময় নিয়ে যুথির কপালে অধর ছোঁয়ায়। যুথি চোখ খিঁচে বন্ধ করে ইরহানের শার্ট খা’মচে ধরে আছে। ইরহান নিচু স্বরে বলে,,, এই বালিতে ঘর বানাতে না পেরে কষ্ট পেতে হবে না।

” আমার যুথি রানীর জন্য খড়কুটো দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বাঁধিব। দুইজন মিলে পাখির মতো সেথায় থাকিবো।ঝড়-বৃষ্টি তে দুইজন দুইজন কে আ’কড়ে ধরে রাখিব।”

যুথি চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ হয়ে ইরহানের কথা শুনছে।

ইরহান এবার যুথির গালে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। সমুদ্রের বুকে তখন সন্ধা নামছে।চারিদিকে কমলা রঙের আভা ছড়িয়েছে। ইরহানের ছোঁয়ায় যুথি কেঁপে ওঠে।

এখনো এতো লজ্জা? আমার ছোঁয়ায় কেঁপে উঠো।হায় বউয়ের এই লজ্জা কবে শেষ হবে। তার লজ্জা আমি এখনো ভাঙতে পারলাম না কষ্ট।

ইরহানের ঠাট্টার সুর শুনে চট করে ইরহানের বুকে দুই ঘা লাগিয়ে দেয় যুথি।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,অ/সভ্য সবসময় আমায় লজ্জা দেওয়ার ধান্ধা। বলেই এগিয়ে যায়। পিছন থেকে ইরহান বলে উঠে,, ঠিক আছে বউ অ/সভ্য যখন বললা শুধু একবার রুমে চলো তারপর বুঝাচ্ছি।

ইরহানের কথায় লজ্জায় যুথির কান দিয়ে ধোঁয়া মনে হচ্ছে বের হবে। চোখ রাঙিয়ে তারাতাড়ি করে চলে যায় এখান থেকে।

যুথির পিছুপিছু ইরহান ও ছোটে।

——————————
দিনার পড়াশোনা লা/টে উঠেছে। কিছুতেই মন বসে না।বসবে কি করে মনটা তো আর তার কাছে নেই। কবেই আরেকজনের কাছে দিয়ে দিয়েছে। কিছুই ভালো লাগে না।

দিনার মা পাশের বাসার গেছে। বলে গেছে আসতে একটু সময় লাগবে। দিনার বাবা ও কাজে গেছে। এখন সে একা একা বসে আছে। জানালার ধারে বই মেলে কোথায় যেন উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে।

হুট করে কিছুর একটা শব্দ হয়। ভাবনার জগতে থাকায় দিনা বুঝতে পারে না।

হাতের মধ্যে কিছুর খোঁচা পড়ায় হুঁশ আসে। আল্লাহ গো বলেই এক চিৎকার দিয়ে উঠে। এর মধ্যে ভেসে আসে কারো কন্ঠ স্বর।

আরে করছো কি? এটা আমি।না দেখেই কেউ এমন ভাবে চেঁচায়? মা’ইর খাওয়ানোর চেষ্টা করছো নাকি উফফ।

দিনা দেখতে পায় ইশান।

তুমি? কেউ এমন ভাবে ভ’য় দেখায়? আরেকটুর জন্য আমার জান বের হয়ে যাচ্ছিলো। কথাগুলো বলেই বুকে থুথু দেয়।

ইশান দিনার কান্ডে হাসে। তারপর মজা করে বলে,, তুমি একটা ভীতু।

ভালো হয়েছে। এখন এটা বলো তুমি এখন এখানে কি করছো? কেউ যদি দেখে ফেলে?

তোমাকে দেখতে আসছি অনেক দিন হয়ে গেলো দেখি না।

তাই বলে এখন? স্কুলে যাওয়ার সময় ও তো দেখতে পারতে।

কাল পর্যন্ত আমার তর সইছিলো না।

দিনা ইশানের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসে।একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয় অনেক সময় নিয়ে।

এর মধ্যে দিনার মায়ের গলা শোনা যায়। এসে পড়েছেন তিনি। দিনা ঘা’বড়ে যায়। ইশান কে তারাতাড়ি বলে চলে যাওয়ার জন্য। ইশান যেতেই চায় না। অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়ে জানালা লাগিয়ে দেয়।

ভাগ্যিস মা হুট করেই রুমে ঢুকে পড়ে নি। উঠোনে থেকেই ডাক দিয়েছে। স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে মায়ের কাছে এগিয়ে যায় দিনা।

—————————-
কথায় আছে ভালো সময় খুব তারাতাড়ি চলে যায়। বোঝাই যায় না কখন যেনো চোখের পলকে সময় গুলো কেটে যায়।

ইরহান আর যুথি কক্সবাজার থেকে ঘুরে এসেছে আজ প্রায় মাস খানেক হতে চলল।

এর মধ্যে হুট করে তাদের জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে কেউ কল্পনা ও করেনি।

ইরহানের দাদি খুবই অসুস্থ। অনেক দিন ধরেই তিনি অসুস্থ। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় নি। সকলের সাথে হাসি খুশি ভাবেই কথা বলেছে।কিন্তু নিজের রুম থেকে তেমন বের হয়নি।

ইরহান কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে।কিন্তু উনি বলেছে উনি ঠিক আছে। ডাক্তারের কাছে ও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু রাজি হয় নি।

সারাক্ষণ শুধু আল্লাহ কে ডাকে। যুথিকে হাজার বার বলেছে তার বড় ভাইটাকে যেনো দেখে রাখে আগলে রাখে।সবসময় দুইজন পাশাপাশি থাকে।

আজ উনার শরীর টা খুব বেশিই খারাপ। যুথি রুমে এসে দেখে কাতরাচেছ।

যুথি ইরহান কে ডাকতে যাবে তার আগেই একটা খাম এগিয়ে দেন উনি যুথির হাতে।বলে দেয় কেউ যেনো এটা না পড়ে।এমনকি যুথি ও না।এটা ইরহান কে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় যেনো দেয়। আর ঐদেশে গিয়ে যেনো খুলে।

যুথি খাম টা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে ইরহান কে ডেকে আনে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফোলে গেছে। ইরহান আর ইশান ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ডাক্তার দাদির চিকিৎসা করছে।ইরহান চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মনের ভিতর অজানা ভয়ে মোচড় দিচ্ছে।

সব বুঝি শেষ হয়ে যাবে। এতোদিনের বটের ছায়ার মতো যে আগলে রেখেছে তাকে বুঝি হারিয়ে ফেলবে।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here