খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ১০+১১+১২

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_৯

— তাসনু অনু নুসরাত অনেক সাবধানে আয়ানের ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু অবাক করার বিষয় আয়ানের রুমের দরজা শুধু ভেজানো ছিল। এতে তাসনু মহাখুশি বেশি কষ্ট তাদের করা লাগলো না এই ভাবে।

“” আয়ানের ঘরে ঢুকে তাসনু আর অনু নুসরাত ঘরের বাইরে দাড়িয়ে আছে। তাসনু ঘরে ঢুকে দেখে আয়ান পা থেকে মাথা পর্যন্ত চাদর টেনে ঘুমিয়ে আছে। তাসনু একটু ভ্রু কুচকে ভাবে এই গরমে কেউ এই ভাবে ঘুমাতে পারে আগে জানতাম না।

—- তাসনু এবার আস্তে আস্তে আয়ানের দিকে যায়। তারপর চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ফোনটা দেখার চেষ্টা করে কিন্তু কোথাও ফোন আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাসনু এবার আয়ানকে মনে মনে ১০১ গালি দিয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। কোথায় রাখতে পারে ফোনটা। তারপর তাসনু আয়ানের বালিশের নিচে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে দেখে এখানেও নাই।

— তাসনু এবার চিন্তাতে আয়ানের পাশেই বিসানায় বসে পড়ে। কোথায় রাখছে এই শহরে বিড়ালটা ফোন। বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাইছে এমন ভাব৷ যে আবার অমুল্য জিনিস তো আবার হু তাই বলে মুখ বাকাই তাসনু। তারপর তাসনু খেয়াল করে আয়ানের জানালার পাশে ধোঁয়া উড়ছে। আস্তে আস্তে ধোঁয়া বাড়তে আছে। তাসনু চোখ কপালে উঠে যায়।

— এতো রাতে ধোঁয়া কোথায় থেকে আসলো। এবার তাসনুর মনে একটু ভয় আসতে শুরু করে। তারপর তাসনু দেখে ধোঁয়ার মধ্যে একটা ছায়া সাদা পোশাক পড়ে দেখা যাচ্ছে। তাসনুর এবার জান যায় যায় অবস্থা। তাসনু চোখ বন্ধ করে ফেলে আবার খুলে এবার দেখে এক সাথে দুইটা ছায়া দাঁড়িয়ে জানালার পাশে। তাসনু এবার জোরে চিৎকার করে উঠে অনু নুসরাত চমকে উঠে হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে।

— অনু বলে কি হয়ছে আপু চিৎকার করছো কেনো জেগে যাবে তো সবাই।।তাসনুর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। হাত দিয়ে ইশারা করে দেখাই জানালার বাইরে। নুসরাত বলে কি ওইদিকে তাই বলে যেই না তাকিয়েছে জানালার বাইরে ওদের চোখও কপালে।

–অনু আর নুসরাত দুজন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে। তারপর ওরা ওরে মারে বলে এক দৌড়ে তাদের রুমে চলে যায় গিয়ে দরজা লক করে দেয় আর তাসনু এবার পড়ে গেছে একা ওইখানেই। তাসনু এমনি ভুতে ভীষণ ভয় পাই তার উপর নিজ চোখে যা দেখেছে তাতে নড়াচড়া করার শক্তি যেন আর নাই। তাসনু এবার চোখ মুখ খিচে দৌড় দেয় আয়ানের ঘর থেকে। আয়ানের ঘর থেকে বের হতেই সামনে ধাক্ক খায় কারো সাথে। তাসনু চোখ তুলে যা দেখে তাতে অবস্থা শেষ সাথে সাথে জ্ঞ্যান হারায় সেখানে।

— আয়ান সাথে সাথে তাসনুকে ধরে ফেলে। তারপর ভুতের মুখোশ পড়াছিল ওইটা খুলে ফেলে। রিক তুর্য দোড়ায় আসে ওদের কাছে। রিক বলে একটু বেশি হয়ে গেছে মনে হয় আমাদের। আয়ানও মন খারাপ করে ফেলে বলে সত্যি আমারও তাই মনে হচ্ছে। তাসনু এতো ভয় পেয়ে যাবে ভাবিনি। তুর্য বলে কথা রাখ আগে ওকে ঘরে রেখে আসি চল কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে। আয়ান এবার তাসনুকে কোলে করে নিয়ে ঘরে যায় তাসনুর।

— আসুন আয়ানরা কেনো এমন করলো জেনে নিই।

“”” তাসনুকে ফোনের কথাটা বলার পর তাসনুর চিন্তিত মুখ দেখে আয়ান বুঝে গিয়েছিল তাসনু দমে যাওয়ার মেয়ে না। কিছু একটা করবে আর আজ রাতেই করবে। তাই আয়ান রিক তুর্যকে বলে প্লান করে ভুত সেজে তাসনুদের ভয় দেখাবে। যা ভাবা তাই কাজ। আয়ানের বিসানার কোল বালিশ রেখে তারা বাইরে অপেক্ষা করে তাসনুদের আসার। যখন তাসনু আয়ানের ঘরে আসে আয়ানরা জানালা দিয়ে সব দেখছিল। তারপর ওই দুইটা ছায়া ছিল রিক আর তুর্যর।

— আয়ান তার ঘরের বাইরে এসে অপেক্ষা করতে ছিল তাসনু বের হলে ভয় দেখাবে তাই। আর তাসনু বের হয়ে আয়ানকে দেখে ওইভাবে ভুতের সাজে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় দেখে।

“”আয়ান তাসনুকে ঘরে দিয়ে এসে চিন্তায় পড়ে যায়। রিক বুঝতে পেরে বলে চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে। একটু ভয় পেয়ে জ্ঞ্যান হারিয়েছে এই যা। আয়ান বলে না রে ভাই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে রাতে যদি ওর ঘুম ভেঙে যায় আর আবার ভয় পাই তখন। তুর্য বলে তো কি করবি এখন ওর সাথে জেগে পাহাড়া দে গিয়ে।

— রিক বলে আচ্ছা অনুদের বললে কি হয় আজ রাত টা না হয় তাসনুর পাশে থাকবে ওরা। আমরা না হয় সব বলব ওদের। আয়ান একটু কি ভেবে ঘর থেকে বের হয়ে যায় রিক তুর্য ও যায় সাথে। অনুরা ঘরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে তাদের হাত পা এখনো কাপছে ভয়ে। আয়ান গিয়ে ওদের ঘপ্রের দরজা টুকা দিতেই ভুত ভুত বলে চিল্লাই উঠে ওরা আবার দুজন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে। আয়ান এবার জোরে বলে অনু আমি আয়ান দরজাটা খুলো দরকার আছে তোমাদের সাথে।

— নুসরাত বলে আয়ান ভাইয়ার গলা না এটা। অনু বলে না ভুত এটা আয়ান ভাইয়ার রুপ নিয়ে এসেছে। গ্রামে এমন কত কাহিনী হয় শুনিস নি কত জনের রুপ নিয়ে আসে৷ নুসরাত বলে ঠিক বলেছিস তুই। এখন কি করব কি বিপদে পড়লাম আমরা। অনু বলে আচ্ছা তাসনু আপু কই ওর কি অবস্থা। নুসরাত বলে সত্যি তো ভুলেই গিয়ছিলাম আপুর কথা। আল্লাহ জানে কি করছে এখন৷ এমনি আপু ভুতে ভীষণ ভয় পাই।

— আয়ান আবার ডাকে অনুদের৷ ওরা এবার চুপ মেরে যায়। রিক বলে কিরে দাঁড়িয়ে কেন। আয়ান বলে দরজা খুলছে না ওরা৷ কি করব এখন৷ রিক বলে সর আমি দেখছি। তারপর অনুকে ডাকে রিক অনু এবার চমকে উঠে নুসরাত বলে এবার রিক ভাইয়ার রুপ নিয়ে আসছে ভুতটা। জোরে বলে নুসরাত যা রিক আর আয়ানের কর্ণপাত হয়। রিক হেসে উঠে ওদের কথায়। আয়ান বলে শালা আমার চিন্তা হচ্ছে আর তোর হাসি পাচ্ছে। সর দেখি তারপর দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। আয়ান বলে অনু আমি আয়ান দরজা খুলো খু৷ দরকার আছে তাসনু জ্ঞ্যান হারিয়েছে ভয়ে। নুসরাত অনু এবার সাথে সাথে এসে দরজা খুলে দেয়।

— আয়ান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আয়ান বলে তাসনু অজ্ঞান হয়ে গেছে অনু। তোমরা আজ রাতটা ওর কাছে থাকবে। সরি আসলে আমরা বুঝতে পারিনি তোমরা এতোটা ভয় পেয়ে যাবা। নুসরাত বলে তার মানে আপনারা ছিলেন ওই ভাবে। রিক বলে হ্যাঁ আমরা ছিলাম তোমাদের একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা যে এতো ভিতু জানতাম না।

— অনু বলে ওই রকমের ভুতের মতো ঘুরলে কে না ভয় অয়াবে সেখানে আমরা তো বাচ্চা মেয়ে। রিক ভ্রু কুচকে বলে সিরিয়াসলি তোমরা বাচ্চা। কিন্তু কাজ তো একবারে পাকা বুড়িদের চেয়ে উত্তম। আয়ান বলে থামবি তুরা। এখন ঝামেলা করার সময় না। অনু নুসরাত এবার দৌড়ে তাসনুর ঘরে যায়।। গিয়ে দেখে তাসনুর এখনো জ্ঞ্যান আসেনি৷ নুসরাত তাসনুর গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে কারণ তাসনুর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। নুসরাত আয়ানকে বলে ভাইয়া আপুর তো ভীষণ জ্বর গায়ে। আয়ান দেয়ালে একটা পাঞ্চ মেরে বলে সিট আমি এই ভয়টা পাচ্ছিলাম তাই হলো।

— রিক তুর্যর এবার খুব খারাপ লাগছে। তুর্য বলে নুসরাত একটা কিছুতে পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আসো ফ্রেস যাও। তারপর জলপট্টি দাও। সকালে না হয় ডাক্তার ডাকা হবে। অনু দৌড়ে চলে যায় জোগাড় করতে সব। আয়ান মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। রিক আয়ানের কাধে হাত রেখে বলে মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷

— অনু একটা পাত্রে পানি আর একটা সাদা কাপড়ের অংশ নিয়ে আসে৷ তারপর ভিজায় তাসনুর কপালে দিতে থাকে। অনু বলে ভাইয়া মন খারাপ করবেন আপু আসলে ভুতে খুব ভয় পাই তাই আর কি এটা নিতে পারেনি। সামনে থেকে দেখেছে তো তাই অনেক ভয় পেয়ে গেছে। সকালে দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে। আপনারা ঘরে যান আমরা আছি। রিক বলে চল ভাই ওরা দেখে নিবেনি চিন্তা করিস না। আয়ান একবার তাসনুর দিকে তাকায় কতটা মায়াবী লাগছে দেখতে এই ভাবে তাসনুকে। তারপর তারা ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

—————————

— সকালে…….

“”তানু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে একবার সামিরাকে ফোন করে নেয় সে৷ সামিরা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি তানুর ফোন পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর ঘুম ঘুম চোখে দেখে তানুর ফোন। ফোনটা কানে ধরে চোখ বুজে হ্যালো বলে। তানু বলে সাকচুন্নি তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাইছিস ক’টা বাজে খেয়াল আছে তোর কলেজ যেতে হবে সে খেয়াল আছে আপনার মহারানী। সামিরা বলে আজ এত কলেজ যাওয়ার তাড়া যে তোর। সব সময় তো আমি তোকে টেনে তুলি ঘুম থেকে আর আজ সুর্য কোন দিকে উঠেছে দেখে আয় যা।৷

— তানু বলে আমার দেখা লাগবে না তুই উঠে দেখে আয় বজ্জায় ছেড়ি একটা। নয়টা অলরেডি বাজে সাড়ে ন,টা ক্লাস আছে একটা সামিরা এবার লাফ দিয়ে উঠে বলে কিইইই তানু ফোন টা কান থেকে দূরে সরিয়ে বলে কানটা আমার শেষ করবি নাকি। ষাড়ের মতো চিৎকার না করে তাড়াতাড়ি রেডি হ যাওয়ার পথে তুলে নিচ্ছি আমি। সামিরা ফোনটা রেখে এবার চলে যায় ওয়াসরুমে।

— তাসনুর রাত থেকে ধুপ জ্বর। বাড়ির সবাই জেনে গেছে এতখনে তাসনুর জ্বরের কথা। কিন্তু কেনো হঠাৎ করে জ্বর আসা তা কেউ জানে না। ডাক্তার এসে দেখছে তাসনুকে। তাসনুর ভোর রাতে জ্ঞ্যান ফিরে তারপর ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে আবার অনি নুসরাত সামলায় তাসনুকে৷ তারপর নাহিদা বেগমও আসে তাসনুর ঘরে চিৎকার শুনে। এসে দেখে তাসনুর অনেক জ্বর।

— ডাক্তার তাসনুকে দেখে ওষুধ দিয়ে যায়। আয়ানরাও ছিল ওইখানে৷ কিন্তু আয়ানের কাল রাত থেকে মুখে হাসি নেই। খুব অনুশোচনায় ভুগছে সে। তার জন্য তাসনুর আজ এমন অবস্থা। হাসি খুশি থাকা একটা মেয়ে তার জন্য আজ বিসানায় শুয়ে আছে ভাবতেই খারাপ লাগছে। রিক তুর্যর একি অবস্থা।

— তাসনু এবার পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। জ্বরে চোখ জ্বালা করছে তাই চোখ খুলে রাখতে পারছে না সে। আবছা চোখে দেখে সামনে আয়ান দাঁড়িয়ে মন খারাপ করে। তাসনু আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১০

“”” তানু আর সামিরা দুজনেই প্রায় দৌড়ায় আসছে কলেজে কারণ তাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে ক্লাসে স্যার চলে গেছে অলরেডি। ওই টাকল মজিদ স্যার ভীষণ নাকউঁচু স্বভাবের। একটু দেরি করে কেউ ক্লাসে আসলে তারে কথা শুনাতে শুনাতে কানের পোকা নের করে দেয়। তার উপর তানু ভীষণ দুস্টু স্বভাবের তাই ওর উপর দৃষ্টি থাকে প্রখর।

— তানু সামিরার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে উদ্দেশ্য ক্লাসে যাওয়া। আশেপাশে কেউ আছে নাকি নেই তা দেখার সময় তাদের নেই এখন। হঠাৎ তানুর উড়নায় টান অনুভব করে। তানু সামিরার হাত ধরে থেমে যাই। সামিরাও থেমে যায়। তানু বলে এই কে রে উড়না ধরে টান দিস। তোরে তো আজ আমি বলে যেই পিছে ঘুরেছে৷ সাথে সাথে তানুর চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে যায় সাথে সামিরারও।

— সামনে তুহিন দাড়িয়ে আছে আর তানুর উড়না তুহিনের ঘড়ির সাথে আটকে গেছে। তুহিন তানুর কথার অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সামিরা বলে দোস্ত তুই আয় আমি ক্লাসে যায় নাহলে ওই টাকলা মজিদ আজ কথা শুনায় শেষ করে দিব। তাই বলে তানুর হাত ছাড়িয়ে দৌড় দেয়৷ আর তানুর সেদিক কোনো হুস নাই৷ তুহিনকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তুহিন এবার গলা খ্যাকাড়ি দিয়ে বলে সরি আসলে বুঝতে পারি নি এই ভাবে উড়না ঘড়িতে বেধে যাবে। তুহিন মনে মনে ভাবছে সকাল সকাল আবার এই মেয়ের সাথে দেখা না জানি কি আছে আজ কপালে। এই সকল কথা ভাবছে আর ঘড়ি থেকে উড়না ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

— তানু বলে আমি কিছু মনে করি নাই ভাইয়া। চিন্তা করবেন না। দেখুন না আপনার ঘড়ি কেমন আপন মানুষ চিনে নিয়েছে এখন আপনি শুধু বুঝতে পারলে হয়। তুহিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে মানে৷ তানু বলে নাহ কিছু না। তাই বলে একটা হাসি দেয়। তুহিন বিরক্ত নিয়ে উড়নার অংশ ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু উড়নাও জেন আজ প্রতিজ্ঞা করেছে ঘড়ি ছাড়বে। তুহিন মনে মনে বলে ওই মেয়ের সব কিছু তার মতো বেহায়া। ধুর 😤।

“” তানু তুহিনের কান্ড দেখছে আর মনে মনে হাসছে। তার বেশ ভালোই লাগছে। তুহিন বলে তোমার উড়না তুমি ছাড়িয়ে নাও আমার তাড়া আছে । তাড়া আছে কথা শুনে তানুর ক্লাসের কথা মনে পড়ে তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে সামিরা নেই। তানু কপালে একটা বাড়ি দিয়ে বলে ইসস রে আমি তো ক্লাসের কথা ভুলেই গেছি৷ এই রাখেন আপনার ঘড়ি আমারে ক্লাসে যেতে হবে তাই বলে জোড়ে উড়নার আটকে যাওয়া অংশ টান মারে চলে যায় তানু। আর তুহিনের ঘড়ির সাথে উড়নার একটুকরো বেধে থাকে।

— তুহিন বলে আজব মেয়ে। কার পাল্লায় যে ফেলেছো আল্লাহ রক্ষা করো৷ তাই বলে সেও তার গন্তব্যে চলে যায়।

_____________________________

“” চলে গেছে চার দিন…..
— আজ তাসনু মোটামুটি ভালো। এই চার দিন তাসনু ভীষণ জ্বর নিয়ে ভুগেছে। আয়ান সেদিনের পর আর তাসনুর সামনে আসেনি। সব সময় অনুশোচনায় ভুগেছে সে। তাসনু অনেক বার আয়ানের খোজ করেছে মনে মনে কিন্তু তার দেখা মিলেনি। আয়ান তাসনুকে প্রতিদিন দেখে যেতো এসে কিন্তু সেটা আড়াল থেকে। যা কারো দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু একজন ঠিকই বুঝতে পারে তাকে কেউ গভীর ভাবে দেখছে। রিক তুর্য এসে খোজ নিয়ে যেতো তাসনুর। আর এই কয়দিনে নুসরাত তুর্য আর রিক অনুর বেশ ভাব হয়ে গেছে। তারা আর আগের মতো ঝগড়া করে না। অনু তো রিককে দেখলে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠে এখন৷ তা দেখে রিকও মুচকি হাসে।

— আফজাল শেখ তাসনুস পাশে বসে আছে। সাথে আছে নুরজাহান বিবি নাহিদা বেগম অনু নুসরাত রিক তুর্য ছিল কিন্তু আফজাল শেখ আসায় তারা ঘর থেকে বের হয়ে যায়৷

— আফজাল শেখ বলে হঠাৎ এমন জ্বর কি করে বাধালি মা তুই। কত চিন্তায় ছিলাম আমি জানিস। এমনি তোকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়৷ সারাদিন সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াস নিজের যত্ন নাই কোথায় কি করিস৷ সাথে হয়েছে সঙ্গী গুলো তেমন। তাসনু বলে আহ বাবা এদের কিছু বলো না তো। তাছাড়া আমি এখন একদম সুস্থ আছি। আবার দেখো সারা গ্রাম ঘুরে কি করে সবাইকে জ্বালিয়ে মারি 😁।

— আফজাল শেখ বলে এবার আর সে সুযোগ হচ্ছে না মামনী। তাসনু ভ্রু কুচকে বলে মানে। কেনো হবে না। আফজাল শেখ এক গাল হেসে বলে সামনে সপ্তাহে আমার বন্ধুর ছেলে আসছে আমেরিকা থেকে। আর তার সাথে আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি। আমেরিকা থেকে সরাসরি আমাদের এখানে আসবে সে। তাসনু বিয়ের কথা শুনে বুকের মধ্যে ধক করে উঠে। অনু নুসরাত অবাক হয়ে যায়। নুরজাহান বিবি হেসে বলে তার মানে আমাদের জল্লাদ রানীর বিয়ে। অন্য সময় হলে তাসনু এটা নিয়ে নুরজাহান বিবির সাথে তুমুল ঝগড়া বাধাই দিত কিন্তু এখন যেনো কোনো কথা তার কানে যাচ্ছে না। ওই একটা শব্দ যেন তার সব কিছু বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে।

— তাসনু মাথা নিচু করে বসে আছে। আফজাল শেখ বলে খুশি হোসনি তুই। তাসনু বলে বাবা আমি এখন বিয়ে করব না। তুমি ওদের আসতে বারন করে দাও। আফজাল শেখ বলে শুনো মেয়ের কথা। বিয়ে তো যেদিন হোক দেওয়া লাগবে মা৷ তাছাড়া রনি খুব ভালো ছেলে। ছোট থেকে আমি তাকে দেখেছি।

— অনু বলে তার মানে ওই ভাইয়ার নাম রনি বড়বাবা। আফজাল শেখ হেসে বলে হ্যাঁ। রনি খান৷ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তারা সবাই আমেরিকা থাকে। নুসরাত বলে তার মানে তাসনু আপুকে তারা বিয়ের পর আমেরিকা নিয়ে চলে যাবে। আফজাল শেখ হ্যাঁ বলে। সবার মন খারাপ হয়ে যায় এবার। আর তাসনুর তো চোখের কোণে পানি চলে এসেছে অনেক আগেই।

— বাইরে থেকে সব কিছু শুনছিল আর একটা মানব। তাসনুর বিয়ে শুনে তার মনে শুরু হয় তোলপাড়। এমন মনে হচ্ছে তার খুব দামি কিছু একটা পেয়েও যেনো হারিয়ে ফেলছে। বুকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে যেনো।

— আয়ান তাসনুকে দেখতে আসতে ছিল কিন্তু আফজাল শেখকে দেখে সে ঘুরে যেতে নেয় তখনই তার কানে তাসনুর বিয়ের কথা আসে। আর থেমে যায় আয়ান সেখানে।

— আয়ান সেখান থেকে চলে আসে। কোনো কিছু যেনো ভালো লাগছে না তার আর। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে তার। রিক বলে কি ব্যাপার এমন ছটফট করছিস কেনো। শরীর খারাপ নাকি। আয়ান মাথা নাড়িয়ে না বলে। তুর্য বলে কোনো সমস্যা। আয়ান এবার মুখ গোমড়া করে বলে তাসনুর বিয়ে ঠিক করেছে বড় মামা। ছেলে আমেরিকা থাকে। তুর্য বলে সেতো ভালো খবর এতে মন খারাপ করার কি আছে। রিক বুঝতে পারে আয়ানের ব্যাপারটা কারণ এই কদিন রিক আয়ানকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে তাসনুকে নিয়ে আয়ানের চিন্তা ভাবনা গভীর ভাবে লক্ষ্য করেছে । আয়ান কিছু না বলে চুপ থাকে। রিক বলে তুই কি তাসনুকে ভালবাসিস আয়ান। আয়ান এবার চমকে রিকের দিকে তাকায়।

— আয়ান বলে কি যাতা বলছিস। এটা হতে পারে না। রিক বলে তুই না বললেও তোর সব কিছু জানান দিচ্ছে তুই তাসনুকে ভালবাসতে শুরু করেছিস কিন্তু সেযতা তুই বুঝতে চাচ্ছিস না। নাহলে তাসনুর বিয়ের কথা শুনে তোর মন খারাপ হবে কেন। আয়ান বলে তেমন কিছু না। এমনি জাস্ট মন খারাপ হয়ে ছিল আর ঝগড়া করতে পারব না এই ভেবে। কেমন দুস্টু একটা মেয়ে ভাব ।

— তুর্য বলে তুই তো আর সারাজীবন এখানে থাকবি না। যে সারাজিবন এখানে থেকে তাসনুর সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবি। এমনি তো তোকে তাসনুর থেকে দূরে যেতে হবে। আয়ান এবার করুণ চোখে তাকায় তুর্যের দিকে। রিক বলে এখনো সময় আছে ভাই মনের কথাটা বুঝ৷ পরে কিন্তু আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না। তাই বলে রিক তুর্য চলে যায়।

— আয়ান ভাবে সত্যি কি আমি তাসনুকে ভালবেসে ফেলেছি। না এমনটা হতে পারে না। আমি আর কোনো ভুল করতে চায় না।।আমার মাকে আমি কথা দিয়েছি নানুভাইয়ের কাছে তাকে ফিরিয়ে আনবো সেখানে আমি না না। এই সব থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। তাই বলে আয়ান মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে। কোনো কিছু আর ভাবতে পারছে না সে।

— তাসনু মন মরা হয়ে বসে আছে। নাহিদা বেগম বলে কিরে এমন ঘাপটি মেরে বসে কেনো। বাইরে যা তুই তো ঘরে থাকতে পারিস না। তোর নাকি ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন তো সুস্থ যা বাইরে থেকে ঘুরে আয়। তাসনু এবার নাহিদা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় নাহিদা বেগম হতবাক হয়ে যায়। খুব কম কান্না করতে দেখেছে তাসনুকে সে। নাহিদা বেগম বলে কি হয়েছে মা। কোনো সমস্যা আমাকে বল।

— তাসনু এবার নাক টেনে বলে ছোটমা তুমি বাবাকে বলো না এই বিয়ে আমি করব না। আমি তোমাদের ছেড়ে যাব না। নাহিদা বেগম এবার হেসে বলে পাগলী মেয়ে এই নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে কেউ। তাছাড়া সে ছেলে আসতে ধেঢ় দেরি। আগে ছেলে আসুক। তাসনু বলে না না আমি কিছু শুনতে চায় না। তুমি বলো না বাবাকে। তাই বলে কেঁদে দেয় আবার তাসনু।

— নাহিদা বেগম বলে মা রে আমরা মেয়েরা যে হাত পা বাধা। আমাদের পরের ঘরে যেতে হবে এটাই নিয়ম। তাছাড়া আমি বললে কেউ শুনবে এমন কেনো ভাবছিস। আর ভাইজান তো তোর ভালো চায়। তাই মন খারাপ করিস না যা হয় হতে দে।তাই বলে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায় নাহিদা বেগম। তাসনু এবার ফুফিয়ে কান্না করে উঠে। তাসনুর মনেও কিছু একটা হারানোর ভয় চলছে। মনে হচ্ছে খুব কাছে এসেও যেন দূরে চলে যাচ্ছে আবার….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১১

“” আঁখি আজ ভীষণ খুশি কারণ দীর্ঘ ২৬ বছর পর সে তার মা নুরজাহান বিবির সাথে কথা বলেছে ফোনে। নুরজাহান বিবি সেও ভীষণ খুশি আজ। আবেগে দুজনেই কেঁদে দেয়। আঁখি সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে তোর নানুর সাথে কথা বলে আমার কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। আচ্ছা ধর তোর নানাভাই মামারা সবাই সব কিছু মেনে নিয়ে যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে কেমন হবে সেই মুহূর্তটা। আঁখি আজ এমন বিহেভ করছে যেনো ছোট একটা বাচ্চা খুব মুল্যবান কিছু পেয়েছে। সামিরা দুই চোখ ভরে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে তার মায়ের প্রাণ উজার করে আসা খুশি।

— আমজাদ চৌধুরী বাড়ি এসে আঁখিকে এমন খুশি দেখে সেও আজ ভীষণ খুশি। আঁখি সব সময় হাসি খুশি থাকত ঠিকই কিন্তু ভেতরে তার একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে রাখতো যেটা কারো সামনে বুঝতে দিত না। কিন্তু আমজাদ চৌধুরী ঠিকই বুঝতেন কিন্তু কিছু বলতেন না। কারণ বলে কোনো লাভ নেই৷ সেতো কিছু করতে পারবে না।

— কিন্তু আজ আঁখিকে এমন আনন্দে দেখে আমজাদ চৌধুরীর চোখের কোণে এক ফোটা পানি চলে আসে। সামিরা আমজাদ চৌধুরী কে দেখতে পেয়ে বলে বাবা জানো আজ নানু কথা বলেছে মায়ের সাথে।।দেখো না তাই মা কত খুশি। আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে। তাই বলে হাসতে হাসতে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আমজাদ চৌধুরীও সামিরাকে জড়িয়ে ধরে হেসে দেয়। তারপর আরেক হাত দিয়ে আঁখিকে আগলে নেয়। আঁখি এবার কান্না করে দেয় আনন্দে আমজাদ চৌধুরীকে ধরে।

“” নুরজাহান বিবির ঠোঁট থেকে আজ হাসি যেনো সরছে না। আঁখির সাথে কথা বলার পর তার কি এক্সাইটমেন্ট৷ আয়ান তো হেসে দিয়েছে এদের বাচ্চামো দেখে। সাথে রিক তুর্য তাসনু অনু নুসরাত নাহিদা বেগম সবাই আছে। নাহিদা বেগম বলে মা আসতে৷ শরীর খারাপ করবে আপনার এতো লাফালাফি করলে।।এই বয়সে এসেও আপনি পারেন বেশ। তবে বাবা যদি জানতে পায় না আপনি আপুর সাথে কথা বলেছেন তাহলে কিন্তু রক্ষে নেই। এর মধ্যে আসে আসরাফ শেখ বলে কি বাবাকে জানাচ্ছো না তোমরা। আসরাফ শেখের কথা শুনে সবাই চমকে উঠে তার পিছে ঘুরে আসরাফকে দেখে সবাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

— আসরাফ শেখ বলে আরে আমি অন্য কেউ না এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আয়ান বলে নানু আজ মায়ের সাথে কথা বলেছে তাই যেনো নানাভাই না জানে সেটাই বলছিল মামি। আসরাফ শেখ অনেক উল্লাস নিয়ে বলে আপায়ের সাথে কথা হয়েছে তোমার মা। কেমন আছে আপাই৷ ভালো আছে? ইসস কত দিন কথা বলি নাই আর দেখি নাই আপাই কে৷ আচ্ছা আয়ান তোর মা এখন কেমন হয়েছে রে দেখতে নিশ্চয় সব চুল পেকে গিয়েছে। বুড়ি হয়ে গেছে।

— আয়ান বলে একদম না। আমার মা তো এখনো সুন্দরী। ইচ্ছে করলে আবার বিয়ে দেওয়া যাবে। নুরজাহান বিবি আয়ানের পিঠে একটা মেরে বলে যা দুস্টু ছেলে। তাসনু অনু নুসরাত রিক তুর্য সহ সবাই হেসে দেয় এদের কান্ডে।

— নুরজাহান বিবি বলে আমার আঁখি ছিল খুব মায়াবী। যেমন গায়ে আলতা রঙ তেমন গড়ন। তবে ছিল খুব সাদাসিধে। হাতের কাজ বরাবরি খুব ভালবাসতো আর খুব ভালো কাজ জানত। আফজাল এই নিয়ে কত রাগারাগি করত আঁখির সাথে। কিন্তু আঁখি কারো কথা শুনত না। সময় ফেলে কাঁথা বা অন্য কিছু নিয়ে বসে যেতো সেলাই করতে। তারপর তখন আফজাল দেখে ফেলতো তখন কথা বলত না। আঁখি কি ছাড়ার পাত্রী না। সেও ভাইয়ার পেছন পেছন পড়ে থাকত যতখন না আফজাল রাগ ছেড়ে তাকে আদর করেছে।

— সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে নুরজাহান বিবির কথা। এর মাঝে তাসনু বলে তার মানে বাবা ভীষণ ভালবাসতো ফুফিতে তাই না দাদিমা। নুরজাহান বিবি হেসে বলে ভীষণ মানে অনেক ভীষণ। কেউ যদি একটু বকা দিত তোর ফুফিকে তাহলে তার খবর ছিল। তোর মতোই ছিল তোর ফুফি ভীষণ দুস্টু সারাদিন গ্রামেএ মেয়েদের নিয়ে টইটই করে ঘুরে বেরানো গাছের ফল পেরে খাওয়া নদীতে সাঁতার কাটা। তবে আঁখিকে একমাত্র শাসন করার অধিকার তোর বাবারই ছিল৷। আদর দিবে সে আবার বকা নাকি সেই দিবে৷ বকা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। সবাই বেশ মজা নিত এটা নিয়ে। আবার সবাই খুব হিংসে করত ভাই বোনের এমন ভালবাসা দেখে।

————————-

“” রিক বলে আচ্ছা বড় মামা যখন এতো ভালবাসে আন্টিকে তাহলে ক্ষমা করতে পারলো না কেনো। আন্টি তো ভীষণ কষ্ট পায় তোমাদের ছেড়ে থাকতে। আফজাল শেখ এতখন দরজার আড়ালে দাড়িয়ে সব শুনছিলেন। তার চোখেও পানি চলে এসেছিল অতীতের স্মৃতি মনে করে। কিন্তু এবার তার ভীষণ রাগ হয় রিকের কথা শুনে৷ সে মনে মনে বলে ক্ষমা কখনো পাবি না তুই আঁখি। আমার ভালবাসা যেমন খাটি ছিল আমার ঘৃণাও তত খাটি। তুই আমার ভালবাসার অমর্যাদা করেছিস এর ক্ষমা কোন দিন হবে না এই বলে চলে যায় সেখান থেকে সে।

— তুর্য বলে আচ্ছা আন্টির সাথে আংকেলের পরিচয় কি করে হয়েছিল আর তাদের লাভ হলো কি করে নানু। সবাই এবার উৎসাহ নিয়ে চেয়ে থাকে নুরজাহান বিবির দিকে। নুরজাহান বিবি হেসে বলতে শুরু করে অতীত।

–” ২৬ বছর আগে….

আঁখি ছিল ভীষণ দুস্টু স্বভাবের কিন্তু সে ছিল অনেক মেধাবী ছাত্রী। আঁখির বড় গুন ছিল সে সেটা করত একদম মন দিয়ে নিখুঁত ভাবে সেটা শেষ করত। ইন্টার পাশ করার পর আঁখিকে বিয়ে দিতে চায় রায়হান শেখ তার বন্ধুর ছেলের সাথে কিন্তু আফজাল শেখ বারন করেন। সে চাই তার বোন পড়াশোনা করুক আরো নিজ পায়ে দাড়াক। আঁখিও ছিল পড়াশোনার উপর ভীষণ নেশা। কিন্তু এতে সবার মত ছিল না। এক প্রকার জোর করে আফজাল শেখ সবাইকে রাজি করায় আঁখি শহরে গিয়ে ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবে। ওইখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবে সে।

— সব ফর্মালিটি শেষ করে ভর্তি কাজ শেষ করে একটা হোস্টেলে আঁখিকে রেখে চলে আসে আফজাল। প্রথম প্রথম আঁখির মন খারাপ হতো ভীষণ সবাইকে ছেড়ে থাকতে। কিন্তু থাকতে তো হবেই তাই আস্তে আস্তে মানিয়ে নেয় আঁখি। অবশ্য আফজাল সপ্তাহে একবার আসতেন বোনের সাথে দেখা করতে।

— এই ভাবে পার হয় ছ’মাস…

–আঁখি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে একটা অংক সমাধান করার চেষ্টা করছিল কিন্তু যতবার করে ততবারই ভুল হয় তাই আঁখি রাগে হাতে থাকা কলমটা ছুড়ে মারে আর কলম গিয়ে পরে একটা একটা সুদর্শন যুবকের পায়ের কাছে। যুবক টা অন্য কেউ না আয়ানের বাবা আমজাদ চৌধুরীই ছিল। পায়ের কাছে কলম পড়ায় আমজাদ থেমে যায়। তারপর কলমটা তুলে আঁখির দিকে এগিয়ে যায়। আঁখির সেদিকে খেয়াল নেই।

— আমজাদ আঁখির সামনে এসে এই যে মিস এটা কি আপনার কলম। আঁখি মাথা উঁচু করে সামনে তাকিয়ে দেখে লম্বাচওড়া সুঠাম দেহ শ্যামবর্ণের একটা ছেলে। আঁখি সাথে সাথে দাড়িয়ে যায়। তারপর আমজাদের থেকে কলমটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বলে আমার কলম আপনার কাছে কেনো। আমজাদ আঁখির কথায় থ মেরে যায়। নিজে কলম ছুড়ে মারছে আবার বলে তার কলম আমার কাছে কেনো।

— তারপর বলে দেখুন মিস.. আঁখি বলে কি তখন তখন মিস মিস করছেন আমার নাম আঁখি, আঁখি শেখ ভাব নিয়ে বলে কথাটা। আমজাদ ভ্রু কুচকে বলে সে আপনি আঁখি হোন বা পাখি হয়ে উড়াল দিন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনি কলম এই ভাবে ছুড়ে মারছেন কেনো তাই বলেন তাও পাবলিক প্লেসে।যদি কারো লেগে যেত তাহলে।

— আঁখি এবার কোমরে হাত রেখে বলে লেগে যেত লাগে তো আর নাই। তাহলে আপনি কেনো পায়ে অয়া লাগিয়ে ঝগড়া করতে আসছেন শুনি উজবুক একটা। আমজাদ তো অবাক ভীষণ রকম অবাক। বলে কি এই মেয়ে একে তো অন্যায় করেছে আবার বলে আমি নাকি ঝগড়া করতে এসেছি তার সাথে। আর আমাকে উজবুক বলা 😡।

— শুনেন মিস পাখি আপনি বেশি বেশি বলছেন ওকে। আপনার কলম নিজে হেটে আমার পায়ের কাছে পড়েছে ভাগ্য ভালো গায়ে লাগেনি। তাই আপনাকে বলতে এসেছি আর আপনি উল্টো আমাকে কথা শুনাচ্ছেন 😐।

— আঁখি বলে তো আমি কি করব আমার কলম হেটে আপনার কাছে গিয়েছে আমি তো যাই নাই। আমজাদ বেকুব বনে যায় আঁখির কথায়। এই মেয়ের সাথে যে পারবে না সে খুব ভালো করে বুঝে গেছে তাই আমজাদ আর কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। আঁখি বলে এখন পালিয়ে যাচ্ছেন কোথায় হুম৷ আমজাদ বলে তোমার মতো ঝগরুটে মেয়ের থেকে যে কেউ পালাবে। সেখানে আমি তো নিরিহ বেচারা একজন। আঁখি ভ্রু কুচকে বলে কি বলে গেলো সে ভালো নিরিহ আর আমি ঝগরুটে 😲😳।

— আঁখির বান্ধবী মিরা এসে দেখে আঁখি দাড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে৷ মিরা হলো আঁখির ক্লাসমেট আবার এক সাথে হোস্টেল থাকে। এখানে আসার পর আঁখির সাথে তার খুব ভাব হয় তারপর ফ্রেন্ডশিপ। এখন তারা খুব ভালো বন্ধু দুজন। মিরার একটু কাজ থাকায় দেরি করে আসছে বাদ বাকি দিন এক সাথে আসে দু’জন।

— মিরা বলে কি রে এমন সং মেরে দাড়িয়ে কেন ক্লাসে যাবি না। আঁখি মিরার দিকে তাকিয়ে বলে আমাকে দেখে কি তোর ঝগরুটে মনে হয়৷ মিরা আঁখি উদ্ভট কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে কি সব আবলতাবল বকছিস। মাথা গেছে নাকি তোর। আঁখি বলে না বল তুই আমাকে কি ঝগরুটে মনে হয় কোনো দিক থেকে। মিরা হেসে বলে একদম না তুই খুব কিউট একটা মেয়ে। আঁখি বলে তাহলে ওই ছেলে যে বলে গেলো আমি নাকি ঝগরুটে খুব 😒।

— কোন ছেলের কথা বলছিস আর কে কি বলেছে তোকে। এই চল তো ক্লাসে দেরি হচ্ছে কার কথায় কি কান দিস। আমি বলছি তুই ভীষণ ভালো ওকে চল আঁখি এবার হেসে দেয় তারপর ক্লাসে উদ্দেশ্য চলে যায়।

— আসুন আমজাদের পরিচয় দিয়ে নিই ততখনে।

“” আমজাদের দুনিয়াতে কেউ নেই। তার আপন বলতে সেই। আমজাদ একটা এতিমখানায় মানুষ হয়। আর তার পড়াশোনা সব সেখান থেকে করা। আমজাদ অত্যন্ত মেধাবী স্টূডেন্ট। তাই সে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি থেকে স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। আর তাতেই তার থাকা খাওয়া পড়াশোনার খরচ খুব ভালো ভাবে চলে যায়। আমজাদ একটা বাসা নিয়ে একা থাকে। খুব সাধারণ তার বাসাটা কিন্তু সে খুব গোছানো একটা মানুষ তাই নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখে। সবার সাথে খুব নম্রভদ্র হয়ে চলে। তার বন্ধুর সংখ্যা খুবই কম। হয়ত সে গরীব বলে আর আমজাদ ছোট থেকে একা থাকতে পছন্দ করে তাই তার তেমন কেউ বন্ধু হয়ে উঠেনি। কিন্তু ইউনিভার্সিটি আসার পর একটা বন্ধ পায় ভাগ্য করে নাম আশিক।। আমজাদ সকল কথা তার সাথে শেয়ার করে আবার চলাফেরা তার সাথেই।

— আমজাদ ইইউনিভার্সিটির লাস্ট ইয়ারে আছে। অল্পদিনের মধ্যে সে দেশের বাইরে যাবে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে। তারপর আল্লাহ চাইলে সেখানে সেটেল হবে এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে সে আপাতত দিন যাপন করছে……

চলবে……..

( ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here