খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ১৩+১৪+১৫

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১২

–” আঁখি ক্লাস শেষ করে এসে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে। সাথে আছে মিরাও। দুজন গল্প করছে আর রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। আমজাদও এসে দাঁড়ায় তাদের থেকে কিছু হাত দূরে কিন্তু কেউ কাউকে খেয়াল করে না। একটা রিক্সা আসতে দেখে আঁখি আর আমজাদ দুজনেই হাত উঠাই। তারপর দুজন দু’জনকে দেখে বলে আপনি। আমজাদ বলে তুমি। আঁখি বলে হ্যাঁ আমি আর এই রিক্সা আমি ডেকেছি আগে তাই আমি যাব। আমজাদ বলে বললেই হলো। আমি ডেকেছি আগে। তাছাড়া আমার তাড়া আছে আজ।যেতে হবে তোমরা পরের কোনো রিক্সা দেখে আসো।

— আঁখি এবার বেশ রেগে বলে। আমি যাব বলেছি মানে আমি-ই যাব। এই মামা চলেন তো। রিক্সাওয়ালাকে বলে আঁখি। মিরা দাঁড়িয়ে দুজনের কান্ড দেখছে অবাক হয়ে। আঁখি না চিনলেও মিরা ভালো করে চিনে আমজাদ কে। কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখেনি তাকে। তাছাড়া এই ইউনিভার্সিটির টপ বয় সে। কত মেয়ে তার জন্য পাগল যদিও আমজাদের টাকা পয়সা নাই। তাও আমজাদের লুক আর ক্লাসে টপ বয়ের জন্য অনেক মেয়ে পাগল কিন্তু আমজাদ ওই সবে পাত্তে দেয় না।

— আমজাদ বলে আজব ঝগড়ুটে মেয়ে তো তুমি। বলছি না আমায় যেতে হবে ইমপোর্টেন্স একটা কাজ আছে আমার। প্লিজ তুমি পরের রিক্সায় আসো এবার নরম স্বরে বলে আমজাদ। আঁখি কোমরে হাত রেখে বলে খুব না। যেই এখন নিজের দরকার এসেছে তখনই খুব ভালো সাজা হচ্ছে। আমাকে ঝগড়ুটে বলার সময় মনে ছিল না। থাকুন এবার বসে৷ এই মিরা আয়তো তাই বলে মিরার হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠে চলে যায়। আর আমজাদ ওইখানেই দাঁড়িয়ে আঁখিকে বকা দিতে থাকে মনে মনে।

— মিরা বলে আচ্ছা তুই ছেলেটা কে চিনিস কে উনি। আঁখি বলে ওই সব ছেলেকে চিনে আমার কাজ নেই। তাছাড়া ওর সাথে আমার সাথ নেই। বজ্জাত ফাজিল ছেলে একটা। মেয়েদের মতো ঝগড়া করে কেমন করে পায়ে পা লাগিয়ে দেখেছিস। মিরা কিছু বলতে যাবে আঁখি হাত উঠিয়ে থামিয়ে বলে ওই ছেলেকে নিয়ে আর একটাও কথা না। মেজাজটাই খারাপ করে দিয়েছে। মিরাও আর কিছু বলে না। চুপ করে বসে থাকে রিক্সায়।

— পরের দিন ইউনিভার্সিটিতে..

আঁখির গতকালের অংকটা কিছুতেই সমাধান করতে পারে নাই। তাই বাধ্য হয়ে স্যারের কাছে এসেছে হেল্প নিতে।৷ কিন্তু স্যার ব্যস্ত থাকায় তাকে বলে লাইব্রেরিতে ইউনিভার্সিটির টপ বয় আছে নাম আমজাদ তুমি তার কাছে গিয়ে এটা সমাধান করে নিয়ে আসো আঁখি। আঁখি আর কি করবে স্যারের কথা মতো লাইব্রেরিতে হাটা ধরে।

–” আঁখি লাইব্রেরিতে এসে দেখে একটা ছেলে ধুসর রঙের একটা শার্ট পড়ে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মনোযোগ সহকারে বই পড়ছে উল্টো দিক ঘুরে। আঁখি এদিক ওদিক তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু কাজ হয়না। তাই আর কিছু না ভেবে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে এক্সকিউজ মি। আমজাদ পরিচিত গলার স্বর শুনে চট করে ঘুরে তাকায়। আঁখি আর আমজাদ দুজন দু’জনকে দেখে চমকে উঠে বলে তুমি।। আঁখি বলে আপনি এখানে কি করছেন। সব জায়গা আমার পিছু না নিলে আপনার হয়না তাই না।।

— আমজাদ বলে ও হ্যালো মিস পাখি। আমি না বরং তুমি আমার পিছু নিয়ে উড়তে উড়তে এখানে চলে এসেছো। আঁখি এবার মনে মনে ভাবে সত্যি তো আমি তো এসেছি।কিন্তু আমি তো আসছি দরকারে হুহ ওই ছেলে বললেই হবে নাকি। তারপর গলা ঠিক করে রেগে বলে মোটেও না। আমি এসেছি এখানে দরকারে।

— আমজাদ বলে তো দরকার শেষ করো আমার কাছে কি৷ লাইব্রেরিতে আরো অনেক জায়গা আছে তো। আঁখি বলে আমি এখানে ইউনিভার্সিটির টপ বয় আমজাদ ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম।

— আমজাদ এবার অবাক হয়ে বলে ভাইয়া। বাবা তুমি মিস্টি করে কথা বলতেও পারো আগে জানতাম না। আঁখি রেগে বলে দেখুন বেশি হচ্ছে কিন্ত। ধুর আপনার সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করছি না। আচ্ছা আমজাদ ভাইয়া কোথায় আছে বলতে পারবেন। নাকি বলবেন জানি না 😏।

— আমজাদ হেসে বলে অবশ্যই জানি। তার খবর যদি আমি না জানি তাহলে আর কে জানবে। আঁখি বলে মানে।

— আমি আমজাদ এই ইউনিভার্সিটির টপ বয় 😎। ভাব নিয়ে বলে আমজাদ।

— আঁখি.. 😳😳😳😳

— এইভাবে কি দেখছো বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি। আঁখি একবার হ্যাঁ বলে আরেকবার না বলে। আমজাদ এবার হেসে দেয় আঁখির কাজে। তারপর বলে যেকোনো একটা বলো। আঁখি নিজেকে সংযত করে বলে৷ আচ্ছা আপনি আমজাদ সত্যি তো।🤨🤨🤨

— কেনো এখন কি প্রমাণ করার জন্য আমার জন্ম সার্টিফিকেট নিয়ে আসা লাগবে। আঁখি বলে না না তা বলিনি। মনে মনে বলে কি বিপদে পড়লাম রে বাবা। শেষে কিনা এই ছেলের থেকে সাহায্য নিতে হবে ধুর কপালটাই খারাপ 🤦‍♀️।

— আমজাদ আঁখির মুখের দিকে তাকিয়ে ভাব ভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে। তারপর বলে আচ্ছা কি দরকার আমার কাছে তোমার শুনি। আঁখি এবার মুখে একটু হাসি এনে বলে আসলে আমার একটা অংক সলভ করার ছিল। তাই আসা আর কি। আমজাদ বলে ওও। এই জন্য এতো মিস্টি বুলি আসছে মুখ দিয়ে। আঁখি রেগে যায় কিন্তু প্রকাশ করে না। তারপর আমজাদ বলে বসো আমি করে দিচ্ছি। দুজনেই বসে পড়ে।

———————

“” আঁখি মিরার কাছে এসে বলে তুই আগে বলিস নাই কেন কাল যার সাথে এত গর্ব করে ঝগড়া করছিলাম সেই ছেলে এই ইউনিভার্সিটির টপ বয়। যদিও তাতে আমার কিছু যাই আসে না। তাও একটা ভদ্রতা আছে না।।

— মিরা একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে আমার কি দোষ কাল তো বলতেই চেয়েছিলাম তুই তো বললি ওই ছেলের কথা শুনতে চাস না। আঁখি কপাল চাপড়ে বলে সবই কপাল। মিরা বলে ক্যান কি হয়েছে। আঁখি বলে আর কি হয়েছে তারপর সব খুলে বলে মিরাকে। মিরা মুচকি হেসে বলে এই জন্য বলি একটু ভেবে কাজ কর। আচ্ছা তুই তো কারো সাথে ঝগড়া করিস না। তাহলে হঠাৎ আমজাদ ভাইয়ার সাথে তোর ঝামেলা কি নিয়ে হলো।। আখি বলে কাল অংক মিলাতে পারছিলাম না তাই মাথাটা গরম ছিল। কলম ছুড়ে মারি আর সেটা তার পায়ের কাছে পড়ে এই নিয়ে আর কি।

— মিরা বলে আচ্ছা যা হওয়ার হয়েছে চল।

— আঁখি প্রায় আমজাদের থেকে সাহায্য নিত। কারণ স্যারদের আদেশ কোনো সমস্যা হলে তার কাছে যেতে। আমজাদও সবাইকে সাহায্য করত। তার ভালো লাগতো কারো উপকার করতে পারলে।

— এই ভাবে চলতে চলতে আমজাদ আর আঁখির মধ্যে বেশ ভাব হয়ে যায়। দুজন দু’জনকে পছন্দ করত কিন্তু বলতে পারত না কেউ। বন্ধুর মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল তাদের।

— আঁখি মিরাকে বলে সে আমজাদকে ভালবেসে ফেলেছে। আর আমজাদও আশিককে বলে সে আঁখিকে ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু বলতে পারছে না। আশিক সব শুনে বলে আঁখিকে মনের কথা জানিয়ে দিতে পরে যা হয় হবে। মিরাও একই কথা বলে আঁখিকে। তারপর দুজন ঠিক করে কাল তাদের মনের কথা বলে দিবে।

— আমজাদ ইউনিভার্সিটি এসে আঁখিকে খোজে। আঁখি সেম কাজ করে। তারপর দুজনের দেখা মিলে। আমজাদ খুব নার্ভাস হয়ে আছে। আখির অবস্থাও এক।

– আমজাদ বলে তোমার সাথে আমার কথা আছে আঁখি ইউনিভার্সিটি শেষে দাঁড়াবে প্লিজ। আঁখি বলে আমারও কথা আছে তোমার সাথে। তাহলে দেখা হচ্ছে পরে। দুজন হেসে হ্যাঁ বলে চলে যায়। ভীষণ অস্থিরতার মধ্যে কাটে তাদের সময় গুলো। তারপর আসে কাঙ্খিত সময়। আঁখি আর আমজাদ একটা পার্কে বসে কিন্তু দুজনেই চুপচাপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই।৷ ভীষণ রকম নার্ভাস দুজনে। নীরবতা ভেঙে আখি বলে আমজাদ আমি তোমাকে ভালবাসি। জানি না কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু এটা বলতে পারি খুব ভালবাসি তোমায়। তাই বলে চোখ বন্ধ করে ফেলে আখি। আর আমজাদ তো চরম অবাক হয়ে আঁখির দিকে তাকায়। আঁখিও তাকে ভালবাসে সে ভাবতেই পারছে না।

— আঁখি আমজাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে আমজাদ হাসি মুখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আঁখি এবার পুরো চোখ খুলে বুঝার চেষ্টা করে আমজাদের মুখভঙ্গি। আমজাদ কিছু না বলে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে। আঁখি প্রথমে অবাক হলেও পরে মুচকি হেসে সেও জড়িয়ে ধরে আমজাদকে।

— এই ভাবে চলতে থাকে তাদের প্রেম কাহিনী।
একসাথে ঘুরতে যাওয়া বেড়ানো। সব কিছু নিয়ে বেশ ভালো দিন চলছিল তাদের। হঠাৎ একদিন আফজাল শেখ আসে আঁখির সাথে দেখা করতে। এসে দেখে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মাঠের এক প্রান্তে আঁখি আর একটা ছেলে হাসাহাসি করছে। আমজাদ আঁখির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর আঁখি গল্প করছে আর হাসছে। এদের প্রেম কাহিনী ইউনিভার্সিটির সবাই জেনে গেছে প্রায়। আফজাল শেখ রেগে ফিরে আসে সেখান থেকে। আঁখির সাথে আর দেখা করে না সে।

— বাড়ি এসে রায়হান শেখকে বলে আঁখির বিয়ে ঠিক করতে তার বন্ধুর ছেলের সাথে। সবাই এতে বেশ অবাক হয়। কারণ জানতে চাইলে আজফাল কিছু বলে না কাউকে। কিন্তু বিয়ে অল্প দিনেই হবে এটা জানিয়ে দেয়। রায়হান শেখ আফজালের কথা মতো আঁখির বিয়ে নিয়ে কথা বলে তার বন্ধুর সাথে। যেহেতু তারা আগেই দেখেছে আঁখিকে৷ তাদের এই নিয়ে কোন আপত্তি নেই।

— আফজাল শেখ আঁখিকে ফোন দিয়ে বলে বাবা অনেক অসুস্থ। তাই আঁখি যেনো ইমিডিয়েট চলে আসে। আঁখি বাবার অসুখ শুনে আর কোনো কিছু ভাবেনি ছুটে চলে আসে গ্রামে বাবাকে দেখতে। আসার সময় আমজাদের সাথে দেখা করে সব বলে আসে আখি…….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১৩.

“” আঁখি বাড়ির গেটের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে রায়হান শেখ বসে সাথে কিছু মানুষ আছে। আঁখিকে দেখে রায়হান শেখের মুখে হাসি ফুটে।

— আঁখি রায়হান শেখকে জড়িয়ে ধরে বলে বাবা তুমি ঠিক আছো। কি হয়েছে তোমার। ভাইয়া বলল তোমার নাকি অনেক শরীর খারাপ। তাই তো ছুটে আসলাম আমি। আঁখির কথায় রায়হান শেখ সহ বাকি সবাই হাসছে৷ কিন্তু আফজালের মুখে হাসি নেই। গম্ভীর ভাবে বসে আছে৷

– রায়হান শেখ সামনে থাকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে। দেখেছেন মেয়ের কান্ড। কেমন পাগলামি করছে। আরে আমি ঠিক আছি মা। আমার কিছু হয়নি। আঁখি এবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে। সত্যি তোমার কিছু হয়নি বাবা। রায়হান শেখ মাথা নাড়িয়ে না বলে হাসতে হাসতে।

— তাহলে ভাইয়া যে বলল তোমার খুব শরীর খারাপ তাই আমি কত চিন্তা করছিলাম সারাপথ জানো।

“”” রায়হান শেখ বলে কিরে আফজাল মামনিকে আমার শরীর খারাপ বলেছিস কেনো। আফজাল এবার মুখে খুলে। বলে তাড়াতাড়ি যেনো চলে আসে সেই জন্য।

— আখি এবার অভিমান স্বরে বলে। কি রে ভাইয়া তুই এই ভাবে চিন্তা দেয় কেউ।। আর কি এমন জরুরি কাজ যে আমাকে এই ভাবে মিথ্যা বলে নিয়ে আসলি এতো জরুরি।

— নুরজাহান বিবি বলে আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি আঁখি। তাই হয়ত তোর ভাইয়া এমন জরুরি তলব জানিয়েছে।

“” বিয়ের কথা শুনে আঁখি চমকে উঠে বলে বিয়ে মানে। কার বিয়ে কিসের বিয়ে। ভাইয়া তুই কিছু বলছিস না কেনো। সামনে থাকা ভদ্রলোক বলেন আফজাল কি বলবে৷ সেই তো তোমার বিয়ে ঠিক করেছে মামনি।

— আঁখি সামনে থাকা লোকটাকে চেনার চেষ্টা করছে কিন্তু পারে না। তাই বলে আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। লোকটা হেসে বলে তোমার যার সাথে বিয়ে হবে তার বাবা আমি। মানে তোমার একমাত্র শ্বশুরমশাই। বলে হো হো করে হেসে দেয় সাথে বাকিরাও। কিন্তু আঁখির এই সবের কিছুই ভালো লাগছে না।

— আঁখি বলে আমি এই বিয়ে করব না। সবার মুখ এবার থমথমে হয়ে যায়। আফজাল বলে ঘরে যা আঁখি এই নিয়ে পরে কথা হবে। আঁখি বলে কিন্তু ভাইয়া.. আফজাল হাত উঁচিয়ে আঁখিকে থামিয়ে দিয়ে বলে ঘরে যেতে বলেছি। নুরজাহান বিবি এবার আঁখিকে ধরে নিয়ে ঘরে যায়। চোখ তার অশ্রুসিক্ত হয়ে।

— আঁখি নুরজাহান বিবিকে বলে আমি এই বিয়ে করব না মা। তুমি বাবা ভাইয়াকে বারন করো। নুরজাহান বিবি বলে কেনো করবি না। ভালো ছেলে আর আমাদের জানা শোনা সব। সমস্যা কি বিয়ে তো একদিন করাই লাগবে কিনা। আঁখি বলে আমি এতকিছু জানি না। আমি এই বিয়ে করতে পারব না।

– নুরজাহান বিবি এবার ভ্রু কুচকে আঁখির দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে বলে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস আঁখি। আঁখি এবার মাথা নিচু করে ফেলে।মুখে আসে লজ্জার লাল আভা। নুরজাহান বিবি বলে কি হলো বল কাউকে কি তুই।

— আঁখি এবার নিচু স্বরে বলে আমি একজনকে ভালবাসি মা। তখনই পেছন থেকে আফজাল বলে ওইসব ভালবাসা ভুলে যা আর বিয়ের জন্য নিজেকে তৈরি কর। আর তিনদিন পর তোর বিয়ে। আঁখি অবাকের পর অবাক হচ্ছে। তার বিয়ে তিনদিন পর আর সে জানে কিছু। আর না মতামত নেওয়ার প্র‍য়োজন মনে করছে কেউ।

— আখি বলে কিন্তু ভাইয়া আমি একজনকে ভালবাসি আর তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। রায়হান শেখ বলে এই জন্য কি ওকে শহরে নিয়ে পড়তে দিয়েছিস তুই আফজাল। ছেলেদের সাথে প্রেম ভালবাসা করার জন্য কি শহরে দেওয়া হয়েছে নাকি পড়াশোনার জন্য।

— আঁখি মাথা নিচু করে থাকে কিছু বলে না। রায়হান শেখ আফজালকে রেগে বলে সব দোষ তোমার আফজাল। আজ তোমার জন্য আঁখি আমাদের মুখের উপর কথা বলার সাহস পাচ্ছে। আর এই সব প্রেম ভালবাসায় যেতে পেরেছে।

— আমার ভুল হয়েছে বাবা। আমি বুঝতে পারিনি আমার ভালবাসা বিশ্বাসের সুযোগ আমার বোন এই ভাবে নেবে৷ আমি তো চেয়েছিলাম ও নিজের পায়ে দাড়াক। পড়াশোনা শেষ করুক।কিন্তু ও যে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এমন কিছু করবে আসা করিনি। সেদিন ওর সাথে দেখা করতে না গেলে তো আমি কিছু জানতেই পারতাম না।

— আফজালের কথায় সবাই ভ্রু কুচকে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আঁখি বলে কি জেনেছো তুমি?

— আফজাল এবার সেদিনের কথা খুলে বলে সবাইকে। রায়হান শেখ তো ভীষণ রেগে যায়। নুরজাহান বিবি ভয়াতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। না জানি আজ কি হয় বাড়িতে।

— সব দোষ তোমার আফজাল।।তোমার জন্য আজ এই মেয়ে উচ্ছনে গিয়েছে। তুমি যদি শহরে যেতে না দিতে তাহলে এত বাড় বাড়ত না ও। আফজাল বলে আমার ভুল হয়েছে মানছি বাবা। তাই তো আমি আমার ভুল সংশোধন করতে চাই। আঁখির বিয়ে দিয়ে৷ তাই সেদিন বাড়ি ফিরেই তোমাকে বলি আঁখির বিয়ের আয়োজন করতে।

— আঁখি বলে ভাইয়া ও খুব ভালো ছেলে। তোমরা এমন করো না প্লিজ৷ আমি ওকে ছাড়া থাকবে পারব না। নুরজাহান বিবি আঁখিকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না। রায়হান শেখ এবার জোরের সাথেই ধমকে উঠে বকে৷ চুপ করো। আর একটা কথাও শুনতে চাই না।

— আঁখি কান্না করতে থাকে। আফজাল বলে ছেলের বংশ পরিচয় কি? কোথায় থাকে? তার বাবা মাকে আসতে বল তাহলে।

— আঁখি আফজালের কথায় থমকে যায় এবার। আমজাদের তো কেউ নেই আর না আছে কোনো বংশ পরিচয় কি বলবে এখন সে।

— আঁখি বলে ভাইয়া আসলে ওর বাবা মা নেই। ও ছোট থেকে এতিমখানা বড় হয়েছে। তবে খুব ভালো ছাত্র ও। আর অনেক মেধাবী। স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে পড়াশোনার জন্য।। ভালো কিছু করবে ও দেখো।

— আফজাল এবার হেসে উঠে আঁখির কথায়। তারপর হাসি থামিয়ে বলে আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে আমার বোন কিনা একটা বংশ পরিচয়হীন ছেলেকে ভালবেসেছে। তার কোনো পরিচয়ই নেই। সেকি সৎ মায়ের কোনো সন্তান নাকি অবৈধ কোনো… তখনই আঁখি জোরে চিৎকার করে বলে ভাইয়া। দেখ না জেনে যাতা বলতে পারিস না কারো নামে। তাছাড়া আমি আমজাদকে ভালবাসি এটাই শেষ কথা। আমার কোনো বংশ পরিচয় লাগবে না। কিন্তু আমার লাগবে রায়হান শেখ বলে।

— আমাদের একটা সম্মান আছে সমাজে সেটা তুমি ভুলে যাচ্ছ আঁখি । কিন্তু আমরা ভুলিনি তাই ওই সব প্রেম ভালবাসা ভুলে যাও। তাই বলে রায়হান শেখ চলে যায় সাথে আফজাল শেখ ও বের হয়ে যায়। আঁখি নুরজাহান বিবির বুকে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে উঠে।

— নুরজাহান বিবি বলে সবাই তোর ভালো চাই আমরা মা। তাই ওই ছেলেকে ভুলে যা আর সবার মতামত মেনে নে। আঁখি মাথা তুলে বলে কি করে ভুলি মা। আমি যে মন থেকে ভালবেসেছি তাকে। আমার মন প্রাণ সব কিছু উজার করে ভালবেসেছি। এত সহজে কি করে ভুলে যায় বলো। আচ্ছা তুমি কি পারবে বাবাকে ভুলতে বাবাকে ছেড়ে থাকতে বলো মা।

— নুরজাহান বিবি থমকে যায় আঁখির কথায়। কি বলবে তার জানা নেই এর উত্তরে। তাই আর কিছু না বলে বের হয়ে যায় সেও। আর আঁখি বসে কান্না করতে থাকে।।

———————

— জমিদার বাড়িতে বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। সবাই অনেক খুশি কারণ আঁখিও বিয়েতে মত দিয়েছে। আর আঁখি চাই তার বিয়েতে তার বন্ধু বান্ধব সবাই আসুক। যেহেতু আঁখি বিয়েতে রাজি তাই আর কেউ আপত্তি করেনি। সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে বলেছে আফজাল। আঁখি সবার আগে মিরার সাথে যোগাযোগ করে আর সব খুলে বলে। কারণ এখন একমাত্র ভরসা মিরায়।

— মিরা সব শুনে আমজাদকে বলে। আমজাদ আঁখির বিয়ের কথা শুনে ভেঙে পড়ে অনেক। কি করবে মাথায় আসে না তার। তারপর আশিক মিরা আর আমজাদ তিনজন মিলে প্ল্যান করে আঁখিকে কি ভাবে নিয়ে আসা যায়। তার জন্য মিরাকে আগে ওইখানে যেতে হবে। আর মিরা যেহেতু নিমন্ত্রিত তাই আর কোনো বাধা নেয়।

— আমজাদ আশিকের হাত ধরে বলে ভাই সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো। আমি আঁখিকে ছাড়া বাঁচব না। আশিক বলে চিন্তা করিস না। সব ভালো হবে। তারপর মিরা চলে আসে সেখানে থেকে৷ কারণ তাকে গোছগাছ করতে হবে গ্রামে আসার জন্য

— এইদিকে আঁখি অধির আগ্রহ নিয়ে পথ চেয়ে আছে মিরার। কারণ মিরা আসলে আঁখি আমজাদের খবর পাবে। আঁখি আসার পর থেকে আমজাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আর না তেমন সুযোগ পেয়েছে।

-” মিরা গ্রামে এসে পৌছায়। মিরাকে নেওয়ার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আফজাল। আঁখি নিজে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আফজাল বলে গাড়ি গিয়ে নিয়ে আসবে মিরাকে তার যাওয়ার দরকার নেই। তাই আর আঁখির বাইরে যাওয়া হলো না।

— মিরা জমিদার বাড়ি এসে। ভেতরে যায় সামনে তাকিয়ে দেখে আঁখিকে৷ দৌড়ে গিয়ে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে মিরা। আঁখিও মিরাকে জড়িয়ে ধরে দুইহাত দিয়ে। তারপর কানে কানে বলে ওই দিকের কি খবর। মিরা বলে ঘর চল তারপর সব বলছি। আঁখি মুচকি হেসে বলে চল চল ঘরে। অনেক ক্লান্ত নিশ্চয় তুই। নুরজাহান বিবি বলে হ্যাঁ মা ঘরে দিয়ে বিশ্রাম নাও। কাল তো বিয়ে অনেক কাজ আছে কিন্তু তোমার। মিরা বলে সে আর বলতে আন্টি৷ অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছি ঠিকঠাক শেষ করতে পারি যেনো দোয়া করেন।

— নুরজাহান বিবি বলে তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না মা। আঁখি এবার মেকি হাসি দিয়ে বলে ও কিছু না মা। আমরা ভেতরে যায়। তাই বলে আর এক মুহুর্ত দেরি না করে তারা ঘরে চলে যায়।…..
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১৪

–” আজ আঁখির বিয়ে। মিরা আঁখি খুবই চিন্তায় আছে। সাথে আমজাদ আশিকও। কাল মিরার আসার পর। মিরার ফোন থেকে আমজাদ কথা বলেছে আঁখির সাথে। আমজাদ আঁখিকে আস্বস্ত করে যে বিয়ে আমজাদের সাথেই হবে অন্য কারো সাথে না। আঁখি সেই ভরসায় বসে আছে। আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে সব যেন ঠিকঠাক হয়।

— আঁখিকে সাজানো হচ্ছে। গ্রামের কিছু মেয়ে সাথে মিরাও আছে। আঁখি চিন্তায় ঘেমে নেয়ে শেষ। যার ফলে বারবার সাঁজ নষ্ট হচ্ছে।৷ মিরা আঁখির হাত চেপে ধরে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে সব ভালো হবে চিন্তা করিস না। আঁখি ছলছল চোখে বলে খুব ভয় করছে রে যদি ধরা পড়া যায় তখন।

— এমন কিছু হবে না। আমরা আছি তো। তাছাড়া আশিক আর আমজাদ ভাইয়া তো চলে এসেছে। তারা কাজিকে বলে সব মেনেজ করে রেখেছে৷ শুধু আমরা ঠিক মতো বের হতে পারলে হবে।

— আঁখির বিয়ে সন্ধ্যার দিকে হবে। বরপক্ষ একটু পর চলে আসবে। আঁখি আর মিরা পায়চারি করছে সারা ঘরময়।

— চারিদিকে মানুষজনে ঘেরা। এর মধ্যে থেকে বের হওয়া খুব কঠিন কাজ। এর মধ্যে মিরার ফোন বেজে ওঠে। মিরা আঁখি চমকে উঠে। তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে মিরা একটা মুচকি হাসি দেয়।

— আঁখি বুঝতে পারে কার ফোন। তাই তাড়াতাড়ি করে মিরার থেকে ফোন নিয়ে নেয় আঁখি রিসিভ করে বলে। কি করে বের হবো কিছু বুঝতে পারছি না। চারিদিকে অনেক মানুষ। মাথায় আসছে না কিছু। আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত বাঁচতে পারব না। আমাকে বের করো প্লিজ আমজাদ।

–” আমজাদ ফোনের ওপারে থেকে মুচকি হাসে। তারপর বলে আরে রিলাক্স পাগলী। আমি আছি তো নাকি। আর আমি ছাড়া কেউ নিতে পারবে না। আমার ঝগড়ুটে রাণীকে।

–আঁখি এবার ফিক করে হেসে দেয়। এর মধ্যে বাইরে থেকে সবাই বলে বর আসছে। আঁখির বুক ধক করে উঠে।

— বরপক্ষ চলে আসছে এবার কি করব। কিছু করো আমজাদ। আঁখি ছটফট করতে থাকে বর আসার কথা শুনে। আমজাদ বলে তোমার ঘরের পিছে আমি আর আশিক দাঁড়িয়ে আছি। আর মই বাধানো আছে একটা দেখো। তুমি আর মিরা জলদি নেমে আসো। আমরা অপেক্ষা করছি।
“” আঁখি আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে মিরার হাত ধরে ঘরের সাথে বারান্দায় চলে যায়। এটা মুলত আঁখির ঘরের সাথে করা। তবে বাড়ির পেছন সাইড এটা। আঁখি ঘরের পেছনে একটা সুন্দর পুকুর আছে। ওই সাইডে মানুষের চলাচল খুবই কম বলতে। আর সন্ধ্যার পর কেউ তেমন আসা যাওয়াও করে না।

— আঁখি আর মিরা খুব সাবধানে নেমে যায়। আঁখি নেমে আমজাদকে জড়িয়ে ধরে। আশিক বলে ভাই তোদের রোমান্স করার সময় পরেও পাবি এখন জলদি চল। যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে সব শেষ। আশিক আর মিরা এক সাথে যায়। আঁখি আর আমজাদ একসাথে দৌড় লাগায়।

— এইদিকে…..

“”” আঁখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু মেয়ে সাথে নুরজাহান বিবিও আসে। এসে দেখে ঘর ভেতর থেকে লক করা। নুরজাহান বিবি আঁখিকে ডাকতে থাকে।কিন্তু কোনো সাড়া পায় না। সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আফজাল আসে।

— কি ব্যাপার তোমরা বাইরে দাড়িয়ে কেনো। আঁখিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসো। একটা মেয়ে বলে ভাইয়া। আঁখি দরজা খুলছে না। ভেতর থেকে বন্ধ। আফজাল বলে সরো দেখি তোমরা। তাই বলে আজফালও বেশ কয়েকবার ডাকে আঁখিকে। কিন্তু কোনো কাজ হয়না।

— আচ্ছা আঁখির যে বান্ধবী কি যেনো নাম মেয়েটার?

“” মিরা নুরজাহান বিবি বলে। ও হ্যাঁ মিরা সে কোথায় আফজাল বলে। তখন একটা মেয়ে বলে ওই মেয়ে তো আঁখির সাথেই ছিল। আমাদের বলল একটু বাইরে যেতে তাদের নাকি একটু কাজ আছে। তাই আমরা বাইরে চলে যায়।

— আফজাল তখন একজনকে ডেকে বলে দরজা ভেঙে ফেলার জন্য। তারপর দরজা ভেঙে ভেতর গিয়ে দেখে কেউ নাই। আফজাল বলে ঠিক জানতাম এমন কিছু হবে। ওই মেয়ে যেদিন আসছে সেদিন থেকে আমার সন্দেহ ছিল। তাই চোখে চোখে রেখেছিলাম তাদের। এতো সতর্ক থাকার পরও পালিয়ে গেলো দুজন কি করে।

— এবার বরপক্ষকে কি জবাব দেব আমরা। দেরি দেখে রায়হান শেখও চলে আসেন। এসে দেখে আঁখি ঘরে নেই। তিনি সাথে সাথে বসে পড়েন বিসানার উপর। আফজাল লোক পাঠায় আঁখিদের খুজতে।

— আঁখি আমজাদ মিরা আশিক সোজা গিয়ে উঠে কাজি অফিস। সব কিছু তারা ঠিকঠাক করে এসেছিল আখিকে নিয়ে যেতে। তাই আর বিয়েতে কোনো ঝামেলা হয়নি। বিয়ে শেষ করে তারা কাজি অফিস থেকে বের হয়।

— আঁখির এবার ভীষণ মন খারাপ করে বাড়ির জন্য। না জানি কি হচ্ছে সেখানে। হয়ত তার জন্য অপমানিত হয়েছে তার পরিবার। আমজাদ বুঝতে পেরে বলে। মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। চলো আমার সাথে।

— আঁখি জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে আমজাদের দিকে। আমজাদ মুচকি হেসে বলে তোমার বাড়িতে যাব আগে আমরা তারপর এখান থেকে বিদায় নেব।

— আঁখি আমজাদের হাত শক্ত করে ধরে বলে না। আমি যাব না। আমাকে কেড়ে নিবে তোমার কাছ থেকে। তোমাকে দেখলে মেরে ফেলব ওরা। আমি জানি ওদের। আশিক বলে থাক না ভাই কি দরকার অযথা ঝামেলা করার। মিরা বলে আমি যতটা দেখেছি খুব ডেঞ্জারাস এরা। ভাইয়া থাক আমরা চলে যায় চলেন।

— আমজাদ বলে আমাকে একটা শেষ চেষ্টা করতে দাও। নাহলে সারাজীবন অনুশোচনায় ভুগতে হবে আমাকে। আর কোনো কথা না বলে আঁখির হাত ধরে জমিদার বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় তারা

———————

–“বিয়ে বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া। নিস্তব্ধ চারিপাশ। কোনো আওয়াজ নেই। আর নেই কোনো কোলাহল। শুধু আলোকৃত বাতি গুলো জ্বলছে নিভছে। আঁখিরা এসে দাঁড়ায় জমিদার বাড়ির সামনে।

— আমজাদ আঁখিকে আস্বস্ত করে ভেতরে নিয়ে যায়। সবার বুকে চলছে নিঃশব্দ ভয়। মিরা তো ভয়ে শেষ। কারণ আফজাল যে আগে থেকে তাকে সন্দেহ করছে সেটা বুঝতে পেরেছিল সে।

— আঁখি ভেতরে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে চুপচাপ হয়ে। রায়হান শেখ কপালের উপর হাত রেখে বসে। আফজাল মাথা নিচু করে বসে। একজন আঁখিকে দেখতে পেয়ে জোরে বলে উঠে ওইতো আঁখি আপামনি। সবাই এবার আঁখিদের দিকে তাকায়।

— আঁখি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আফজাল আখির সাথে আমজাদকে দেখে আরো রেগে যায়। তারপর তেড়ে আসে আমজাদের দিকে। তখনই আঁখি আমজাদকে আড়াল করে বলে খবরদার ভাইয়া ওর গায়ে হাত দেওয়ার চিন্তাও করবে না৷ ও এখন আমার স্বামী তোমাদের বোন জামাই তাই অন্তত এইটুক সম্মান দাও

__ আফজাল এবার ফিসেল হেসে বলে বোনই নেই আমার তো বোন জামাই। তোর মত বোন থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো। আর যাই হোক অপমানিত হতে হতো না। আমরা তো তোকে অনেক ভালবাসা দিয়েছিলাম তাই হয়ত এই প্রতিদান দিলি আমাদের।

— একবার বাবার সম্মানের কথাটা ভাবলি না তুই। দুইদিনের ওই ছেলেটা তোর কাছে বড় হয়ে গেলো। আসলে কি বলতো দুধকলা দিয়ে আমরা কালসাপ পুষে ছিলাম এতো যে আজ আমাদের সোবল দিয়ে চলে গেছে।

— আঁখি বলে ভাইয়া আমি… আঁখিকে বলতে না দিয়ে বলে খবরদার ওই মুখ দিয়ে আমাকে ভাইয়া বলবি না। আমার কোনো বোন নেই। আজ থেকে আমি মনে করব আমার কোনো বোন ছিল না আর না আছে। এতদিন তুই আমার ভালবাসা দেখেছিস আজ থেকে থাকবে শুধু ঘৃণা হ্যাঁ শুধু ঘৃণা আছে তোর জন্য। তোর মুখও দেখতে চাই না আমি।৷

“”আঁখির চোখ দিয়ে পড়ছে অঝর ধারায় পানি। এবার আমজাদ বলে যা বলার আমাকে বলুন। ওকে দয়া করে কিছু বলবেন না। ওর কোনো দোষ নেই। যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন ওকে মাফ করে দিন দয়া করে ।

-; আফজাল বলে তোর সাথে একটাও কথা বলতে চায়না আমরা। ঠিকই বলেছিস সব দোষ তোর। যা দেখেছিস জমিদার বাড়ির মেয়ে বড়লোক বাড়ির জামাই হওয়ার স্বপ্ন দেখে আর লোভ সামলাতে পারিস নি। তাই তো আমার বোনটাকে এই ভাবে ফাসিয়েছিস। তোদের মতো ছোটলোককে খুব ভালো করে চেনা আছে।

— আঁখি এবার রেগে যায়। তাই রেগে বলে ভাইয়া অনেক শুনেছি তোর কথা। আর না। আমাকে অপমান করছিলি কিছু বলিনি। কিন্তু না জেনে আমার স্বামীকে কিছু বলতে পারিস না তুই। আমি ওকে ভালবাসি তাই নিজ ইচ্ছেতে চলে গেছি ওর হাত ধর। এতে ওর কোনো দোষ নেই৷ আর ভালবাসা দোষ না।

— এবার রায়হান শেখ হুংকার দিয়ে উঠেন। আফজাল এদের সবাইকে বের হতো বলো আমার বাড়ি থেকে। আর এটাও বলে দিও জমিদার বাড়ির দরজা তাদের জন্য বন্ধ চিরকালের জন্য। কখনো যেনো আদার চেষ্টাও করে না। আমার কোনো মেয়ে নেই আজ থেকে। তাই বলে চলে যেতে নেয় ওইখান থেকে তখনই নুরজাহান বিবি বলে এমন কথা বলো না। আমার একটা মাত্র মেয়ে। ওকে ছাড়া কি করে থাকব। ভুল করে ফেলেছে মাফ করে দাও এবারের মতো।

— রায়হান শেখ বলে বেইমানের কোনো ক্ষমা নেয়। আর তুমি এমন কোনো আবদার করো না নুর যেটা আমি রাখতে পারব না। এটা তোমার স্বামীর আদেশ। নুরজাহান বিবি আর কিছু বলতে পারে না। কান্না করতে করতে ওইখানে বসে পড়ে। সাথে আঁখিও কান্না করতে থাকে। একে একে সবাই চলে যায়৷ থেকে যায় শুধু আঁখি আমজাদ মিরা আশিক আর নুরজাহান বিবি।

— আঁখি ছুটে এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। নুরজাহান বিবির ও আজ চোখ যেনো বাধ মানছে না।

— আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। আমার জন্য তোমাদের অনেক অসম্মানিত হতে হয়েছে আজ। আমি কি করতাম বলো৷ ওকে ছাড়া আমি যে থাকতে পারতাম না। ভালবাসি যে ভীষণ। নুরজাহান বিবি বলে ঠিক করেছিস তুই মা। ভালবাসার মানুষটা কে এই ভাবে আগলে রাখিস সব সময়। আর ভালো থাকিস তোরা যেখানে থাকিস এই দোয়া করি।।

— আমজাদের হাত ধরে নুরজাহান বিবি বলে আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো বাবা। কোনো দিন কোনো কষ্ট দিও না। খুব আদরে বড় হয়েছে সে৷ আজ এমন দিন আসছে ওর জন্য কিছু করতে পারলাম না।৷ আমজাদ বলে আপনি কিছু চিন্তা করবেন৷ আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব আঁখিকে ভালো রাখার।।

— তারপর তাকে সালাম করে সবাই বের হয়ে আসে জমিদার বাড়ি থেকে।

“” এরপরে থেকে ঘোষণা করে দেয় শিমুলপুর গ্রামে কেউ কোনো দিন প্রেম ভালবাসা করতে পারবে না। আর যে করবে তার জন্য কঠিন শাস্তি রাখা হবে ”

— নুরজাহান বিবি চোখের পানি মুচে বলে। এরপর আর কোনো খোঁজ পাইনি তোদের। একবার শুধু শুনেছিলাম তোর বাবা নাকি আঁখিকে নিয়ে বিদেশ চলে গেছে।

— সবার চোখে পানি ছলছল করছে। তাসনু বলে বাবা বেশ ইনস্টারেস্টিং প্রেম কাহিনী। ফুফি যা দিয়েছে না। একবারে ঠিক কাজ করেছে। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বলে। তাসনুর কথায় সবাই মুচকি হাসে। আয়ান মুগ্ধ হয়ে তাসনুর দিকে তাকিয়ে। আর তাসনুও আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

— রিক বলে যাক বাবা অবশেষে শেষ হলো আমাদের দ্যা গ্রেট আন্টি আর আংকেলের প্রেম কাহিনী। এই আয়ান তোর বাবা তো নায়ক ছিল রে সে যুগের। আয়ান রিকের পেটে একটা টুকা দিয়ে বলে এখনো নায়ক আমার বাবা বুঝলি। সবাই জোরে হাসে এবার।

— এর মাঝে বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচি শব্দ আসে। তুর্য বলে বাইরে এতো চিৎকার হচ্ছে কেনো। আয়ান বলে চলতো দেখি কি হয়েছে তাই বলে সবাই বাইরে চলে আসে……..

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here