গল্পটা_আমারই পর্ব : ২

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ২
(সুরমা)

অর্ণবকে দেখার পর থেকে আমি একজন প্রেমিক পুরুষের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি একজন জীবন সঙ্গীর। অর্ণবকে দেখার আগে কখনও প্রেম করার কথা মাথায় আসেনি। এখন আমি স্বপ্ন দেখি। একজন পুরুষকে কল্পনা করি। যাকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবো। সেদিনের পর থেকে অর্ণবের সাথে আমার আর দেখা হয়নি। আমিও ধীরে ধীরে বিজি হয়ে গেলাম। অর্ণবের কথাও তেমন মনে পড়তো না। এদিকে ভার্সিটি তে সেমিস্টার পরীক্ষা। যার জন্য আমি আরো বিজি হয়ে গেলাম।

আমি প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ি। আমাদের মেসের সামনে ছোট একটা বাগান আছে। বাগানে বিশ রকম ফুলের গাছ আছে। সকাল আর সন্ধ্যার দিকে বাগানের সামনে দাঁড়ালে আমি মাতাল হয়ে যাই। এতো ঘ্রাণ ছড়ায় কি বলবো। তাই আমি প্রতিদিন খুব সকালে উঠে বাগানের সামনে আর সন্ধ্যার দিকে বাগানের সামনে কিছুক্ষণ সময় কাটাই।

কিন্তু পরীক্ষার কারণে আমি কয়েকদিন যেতে পারি নি। আজ যখন পরীক্ষা শেষ হলো তখন

আমি বাগানে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাগানের সামনে গেলে আমার মনটাও খারাপ হয়। এতো ফুল কিন্তু আমি একটাও ফুল তুলতে পারিনা। বাগানের মালি খুব কঠিন লোক। ফুল ছিঁড়লে উপায় নাই। তাই আমি অসহায় মতো ফুল গুলো দেখি শুধু।
বাগানে অসহায় মতো দাঁড়িয়ে থাকার সময় হঠাৎ আমার নজর পড়লো গেইটের দিকে। তখন আমার চোখ ছানাবড়া। আমার ক্রাশ, মানে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা কি সুন্দর হাসি মাখা। এই সময় অর্ণবকে আমার মেসের সামনে দেখে আমি অবাক হলাম। কিন্তু বেশি অবাক হলাম তার মুখের হাসি দেখে। তার হাসিটা জাস্ট আমার হৃদয়ে ছুঁয়ে গেলো। একটা ছেলে মানুষের হাসি এতো ধারালো হয় কিভাবে আমার জানা ছিল না।

আমি ভ্যাবলার মতো অর্ণবকে দেখছিলাম। অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কোঁচকালে আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে যাই। আমি মাথা নিচু করে ফেলি। অর্ণব আমাকে নাম ধরে ডাক দিলে আমি অর্ণবের কাছে এগিয়ে যাই।

-কেমন আছো??
-জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-হুম, আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো??
-করো,,
-আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে???
-তন্বী বলেছিল। আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,
-একবার বলেই কেউ নাম মনে রাখতে পারে আমার জানা ছিল না।

-একবার বলবে কেন?? ওর সাথে কথা বললে কারণে অকারণে তোমার নাম নেয়। আমারতো খুশি খুশি লাগছে। তার মানে তন্বী আপু অর্ণবের সামনে আমার প্রশংসা করে। যা হোক। অর্ণব বললো,,,

-তন্বীকে একটু ডেকে দিবে?? আজকে প্রোগ্রাম আছে। বাট ওকে এত কল করছি রিসিভ করে না। হারামিটা এখনো ঘুমাচ্ছে মনে হয়।

-জ্বি আচ্ছা। আমি ডেকে দিচ্ছি। আমি চলে আসছিলাম। তখন অর্ণব আমাকে পেছন থেকে ডাক দিলে আমি পিছন ফিরে তাকাই। অর্ণব বলে,,,,,

-তোমার নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে?? অর্ণবের কথা শোনে আমি খুশিতে গদগদ হয়ে অর্ণবের কাছে দৌঁড়ে গেলাম। এ যেন আমার অনেক বড় পাওয়া। এতো খুশি আগে কখনও লাগে নি। আমার ক্রাশ আমার নাম্বার নিবে।

নাম্বার দিবো না কেন? অর্ণব যদি আমার ফোনে একটা কল দেয় তাহলে তো আমার ফোনটাও খুশি হবে। আমার ফোনটা কি জন্মের পর অর্ণবের মতো কোনো ছেলের কণ্ঠ শোনিয়েছে আমাকে?? নাকি নিজের সৌভাগ্য হয়েছে এমন কারো কাছ থেকে কল পাওয়ার। আমি গড়গড় করে অর্ণবকে নাম্বারটা বললাম। অর্ণব আমাকে কল দিলে আমি অর্ণবের নাম্বারটা সেইভ করে ফেলি। এবার মহা খুশি খুশি লাগছে। ইশ, এতো সুখ আমার কপালে ছিল। আমি লাফাতে লাফাতে রুমে এলাম। রুমে এসে ইচ্ছে মতো নাচলাম। উড়াধোড়া ডান্স।

হঠাৎ আমি ঘুম থেকে হুরমুর করে উঠলাম। একি আমার শরীর ভেজা কেন? সামনে তাকিয়ে দেখি তন্বী আপু গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আপুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,

-আপু, এটা কি হলো?
-তোকে এক ঘণ্টা ধরে ডাকছি। তুই আজকে এমন মরার মতো ঘুমাচ্ছিস কেন?? আমি চোখ গুলো কচলাতে কচলাতে বললাম,,,,

-আপু, অর্ণব তোমাকে যেতে বলেছে। তন্বী আপু অবাক হয়ে বললো,,,,
-অর্ণবকে তুই কোথায় পেলি??
-গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তন্বী আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,,

-তুই কি এখনও ঘুমাচ্ছিস?? কি সব বলছিস?? তন্বী আপুর কথায় আমার হুশ আসে। ওমা, সত্যি তো আমি ঘুমাচ্ছি। আমি তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম। কোথায় অর্ণবের তো নাম্বার নেই আমার ফোনে। তাহলে কি সত্যি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। তন্বী আপু বলে,,,,

– এবার বলতো তুই অর্ণবের কথা কি বলছিলি??? আমি মুখটা কাঁচুমাচু করে রইলাম। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তন্বী আপু বলে,,,,

– আর তুই অর্ণব অর্ণব বলছিস কেন? অর্ণব তো তোর চেয়ে বয়সে বড়। আমার সমান। অর্ণবকে ভাইয়া ডাকবি। তন্বী আপুর কথা শোনে এবার আমার চোখ দুটি ছানাবড়া হয়ে গেলো। মার্বেলের মতো বড় বড় হলো। আর হৃদয়টা ভেঙ্গেচুরে খানখান হয়ে গেলো। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসতে চাইছে। আমি জোর করে পানিটা আটকে নিলাম। এখন কাঁদলে ঘটবে বিপত্তি। আমি মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে বললাম,,,,

– অর্ণবকে ভাইয়া ডাকতে হবে?
– হুম, অর্ণবতো তোর থেকে বড়। তুই কি নাম ধরে ডাকবি নাকি। আমি মনে মনে বললাম,,,,

– “আমি ভাইয়া ডাকতে পারবো না। কিছুতেই না। দরকার হলে আমি বনবাসী হবো, তবু ভাইয়া বলবো না।”

আল্লাহ, আমি কি পাপ করেছি গো। কেন আমি এমন স্বপ্ন দেখলাম। অর্ণবকে স্বপ্নে না দেখালেও তো তুমি পারতে। এখন আবার নাকি তাকে ভাইয়ার ডাকা লাগবো। একেমন বিচার। এভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছো???

আমি মন খারাপ করে বসে আছি। তখন তন্বী আপু বললো,,,
-তোর কি শরীর খারাপ?
-না আপু, আমার শরীর বিন্দাস আছে। (তবে মনটা খারাপ,মনে মনে বললাম)
-তাহলে রেডি হো, বাহিরে যাবো। আমি মন খারাপ করে বললাম,,,,
-কোথায় যাবো আপু???
-চল গেলেই বুঝবি।
-আমার যেতে ইচ্ছে করছে না আপু।
-চল প্লীজ। আজকে আমরা দুজন অর্ণবের একটা কাজ করে দিবো। তন্বী আপুর মুখে অর্ণবের কথা শোনে আমার শুকনা মুখ তরতাজা হয়ে গেলো। আমি বললাম,,,,
-আপু কি কাজ??
-অর্ণবের একটা শিশুশিক্ষার জন্য ফাউন্ডেশন আছে। আজকে তার কাজ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতি মাসের ১তারিখে আমরা প্রত্যেকটা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কে বই ব্যাগ দেই। কলম দেই। এমাসের এক তারিখেও যেতে হবে। এই নিয়ে আলোচনা হবে। আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না। তুই চল আমার সাথে। যাবি না?? তন্বী আপুর কথা শোনে আমি বললাম,,,,

-যাবো যাবো। আমিও যাবো। আমি যেন আশার আলো দেখলাম। অনেক খুশি খুশি লাগছিল আমার। আবার প্রিয় মানুষটাকে দেখবো। অর্ণবকে দেখার মাঝেও প্রশান্তি আছে। আমি সেদিন তন্বী আপুর সাথে গিয়েছিলাম। ৫০ জন ছেলে মেয়ের এই ফাউন্ডেশন। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল। শুধু আমার সেই কাঙ্খিত মুখটাই দেখলাম না।

আমি বার বার এদিক ওদিক দেখছিলাম। যদি একবার অর্ণবকে দেখতে পারি। আমার বেকুল মনটা সেদিন অনেক অস্থির ছিল। আমি জানি, অর্ণব আমার জীবনে কোনোদিনও সম্ভব না। তবুও মনটাকে বুঝাতে পারছিলাম না। মনটা বলতো,,,,,

“কাউকে ভালোবাসলে তাকে আপন করে পেতে হবে বিষয়টা এমন নয়। মন আর হৃদয় জুড়ে থাকাটাই আপন মনে হয়।”

অর্ণব ছিল আমার জীবনে অপ্রাপ্ত একটা প্রেমের গল্প। যাকে কোনোদিন বলতেও পারবো না এই মনে থাকা অব্যক্ত কথা। আমি জানি অর্ণব দুর্লভ। তবুও তাকে মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। অর্ণব সেরকম একটা ছেলে যাকে মেয়েরা বুকের গহীনে লালন করে। তার পার্সোনালিটি আমাকে মুগ্ধ করে। আমার মতো হয়তো অনেকেই অর্ণবকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।

সেদিন অনুষ্ঠানে আমার মন ছিল না। মনটা ব্যথায় ভরপুর ছিল। চোখের কোণায় জল ভরে এসেছিল। সেদিন ভাঙ্গা মন নিয়ে মেসে ফিরে এসেছিলাম। এটা ছিল অর্ণবের সাথে আমার একটা হৃদয় ভাঙ্গা প্রেমের গল্প। যার সামান্য একটু আভাসও অর্ণব পেলো না।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here