গুমোট অনুভুতি পর্ব ৩

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩

সামনে থাকা মেয়েটিকে মাথা চেপে বসে থাকতে দেখে সায়ান কিছুটা হতাশ হলো, ওকে দেখে আশেপাশের মেয়েরা হা করে তাকিয়ে, প্রশংসা করে কিন্তু এই প্রথম কোন মেয়েকে দেখলো যে ওর দিকে সেভাবে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। বিষয়টির সাথে খুব অপরিচিত সায়ান। আফটার অল সায়ান জামিল খান নামটা শুনলেই মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে,ঢাকা শহরের নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট যে কিনা মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে গোটা একটা কোম্পানির সিইও যেটার ব্রাঞ্চ শুধু বাংলাদেশ আরো অনেক কান্ট্রিতে আছে। এশিয়ার টপ টেন কোম্পানির একটি। তার উপর দেখতে মাশাল্লা অনেক হ্যান্ডসাম তাই অনেকের স্বপ্নের পুরুষ সে!

সায়ান কিছু না বলে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো তারপর চেয়ার টেনে রুশির ঠিক সামনাসামনি বসলো।কিছু একটার স্মেইল পেতেই রুশি মাথা তুলে তাকালো, বাদামি চোখ জোড়ার পরপরই চোখে পড়লো জলন্ত সিগারেট। রুশির চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্ক ফুটে উঠলো, ভয়ে জড়োশড় হয়ে বসে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেললো। কাঁপাকাঁপা হাতে বিড়বিড় করে কিছু বলতে লাগলো আর হাত দিয়ে কিছু একটা সরানোর ইশারা করছে। সায়ান রুশির কথা শুনতে না পেরে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে শুনতে পেলো মেয়েটি বিড়বিড় করে বলছে

“আগুন! আগুন! সব শেষ করে দিবে। সব শেষ!আগুন!”

সায়ান পরিস্থিতি বুঝতে পেরে হাতে থাকা সিগারেট ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে আগুন নিভিয়ে ফেললো, তারপর কিছু শান্ত গলায় বললো

“কাম ডাউন! কিছু হয়নি। সি কোন আগুন নেই”

কিন্তু মেয়েটি অনবরত কেঁপেই যাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে, সায়ান বুঝতে পারলো মেয়েটি ট্রমার মধ্যে আছে। কিন্তু এই ধরনের আচরণ মানুষ তখনি করে যখন সে ভয়ংকর কিছু ফেস করে,কথায় আছে না
“ঘর পোড়া গাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়”
সায়ান কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো, এই মুহুর্তে সিগারেট না জালালেও পারতো। কিন্তু মেয়েটিকে শান্ত করা দরকার তাই কিছুনা ভেবেই জড়িয়ে ধরলো মেয়েটিকে যদিও এটাই প্রথমবার নয়। পিঠে হালকা হাত রেখে শান্তনা দিচ্ছে,মেয়েটি ভয়ে ওর শার্ট খামচে ধরে বুকে লুকিয়ে আছে যেনো ছোট্ট খরগোশ ছানা লুকোচুরি খেলছে। মেয়েটির কাঁপুনি কিছুটা কমতেই সায়ান ওকে ছেড়ে দিলো তারপর অভয়ের স্বরে বললো

“সি কোন আগুন নেই, আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন”

কিন্তু মেয়েটি ভয়ে তাকাচ্ছে না দেখে সায়ান কিছুটা ধমকের স্বরেই বললো

“লুক এট মি! তাকান আমার দিকে, তাকান!”

ঠান্ডা কন্ঠের ধমক খেয়ে রুশি হচকিয়ে গেলো আর প্রায় সাথে সাথেই তাকালো আর সামনে সাথা ব্যাক্তির চোখে একরাশ আশ্বাস ছিলো যেনো চোখ দুটি বলছে “রুশি ভয় পেয়োনা, সত্যিই কিছু হয়নি”

রুশির কেনো যেনো এই বাদামি চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো তাই পাশে তাকানোর সাহস না থাকলেও তাকালো। ফ্লোরে চোখ যেতেই ছাই হওয়ে যাওয়া সিগারেট চোখে পড়লো, নাহ আগুন নেই, সত্যিই নেই!

রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পাশে তাকালো,এতোক্ষন একটা ছেলের অনেকটা কাছে ছিলো তাতেই যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নখ খুটতে লাগলো। ওর এখনো স্পষ্ট নয় ও ঠিক এখানে কেনো? কেনো নিয়ে আসা হয়েছে ওকে এখানে? তাও আবার সায়ান জামিল খান ওর সামনে বসে আছে! রুশি মনে মনে ভাবছে প্রশ্ন গুলো কি করে করা যায় তার মাঝেই সামনের ব্যাক্তি প্রশ্ন করলো

“আমি জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আর থাকাটাই স্বাভাবিক। আমিই আপনাকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছি”

রুশি ফট করে বলে ফেললো

“ও তাহলে আপনিই আমাকে কিডন্যাপ করেছেন?কিন্তু কেনো! আমার থেকে না টাকা পয়সা পাবেন না অন্যকিছু তাহলে আবার অন্য জন ভেবে ভুল করে তুলে আনেন নি তো?এই আপনি কি আমার কিডনি বিক্রি করে দিবেন নাকি বিদেশে প্রাচার করে দিবেন?সাংঘাতিক লোক তো আপনি!”

বেশি কথা বলা সায়ানের কোন কালেই পছন্দ ছিলো না আর না কারো ননস্টপ কথা শুনতে তাও আবার এইরকম ননসেন্স কথাবার্তা! লাইক সিরিয়াসলি?ওর টাকার পয়সার কি এতোই অভাব যে এই কিডনি বিক্রি করতে হবে আর বিদেশে প্রাচার!রাবিশ, সায়ানের রাগ লাগলেও সেটা চেহারায় প্রকাশ করলো না, কারণ ঠান্ডা মাথায় সবকিছু হেন্ডেল করার অভ্যস আছে ওর নাহয় এতো বড় কোম্পানি একা হাতে সামলানো চারটিখানি কথা নয়।কয়েকবার জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ সংযত করলো তারপর চেহারায় হালকা হাসি টেনে বললো

“তেমন করার ইচ্ছে নেই আপাদত মিস.রুশানি, আপনি যদি সোজা কথায় গার্ডদের সাথে চলে আসতেন তাহলে এমন কিছুই করতে হতোনা আমায়। যাইহোক আপনার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলতেই এখানে ডাকা হয়েছে আপনাকে। আশাকরি আপনার ননসেন্স কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করবেন না”

রুশি কথাটা শুনে কিছুটা রেগে গেলেও কিছু বললো না, ওর কি হয়েছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না। এই ধরনের ফাউল কথা বললো কি করে সেটাই ভাবতে পারছেনা। এতো বড় বিজনেস ম্যান ওর কিডনি বেচতে যাবে কোন দুঃখে! কিন্তু হঠাৎ করে কথা বলতে ইচ্ছে করেছিলো তাই বলে দিলো নাহয় এমনিতেই কথা কম বলে ও তারউপর এই ধরনের যুক্তিহীন কথা বার্তাতো বলারই কথা না। তাহলে এটা কি মুডসুইং?যার জন্য হঠাৎ ওর অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে!

রুশির ভাবনার মাঝেই সায়ান গলা খাঁকারি দিলো,এই মেয়ে হুটহাট কোথায় গায়েব হয়ে যায় তাই খুজে পাওয়া যায় না। রুশি ওর দিকে তাকাতেই কিছুটা সিরিয়াস ভংগিতে বললো

“দেখুন আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা, আপনাকে এখানে ডেকে আনা হয়েছে কারণ আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই!”

সায়ান আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো, পরের কথাটা ঠিক কিভাবে বলবে ও বুঝতে পারছে না। এদিকে রুশি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান প্রোপোজ করছে ওকে তাও বিয়ের জন্য! এটা হয়তো ওর জন্য সৌভাগ্য হতো আর যাইহোক যে নরকে ও আছে সেটা থেকে মুক্তি পেতো ও কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, ও এখন একা নয় বরং ওর মাঝেই অন্য একটি প্রান ভেসে উঠছে। রুশি মাথা নিচু করে ফেললো আর কিছুটা শান্ত স্বরে বললো

“আমি আপনাকে করতে পারবো না, বলতে পারেন আমি আপনার যোগ্য নই, কোনদিক থেকেই না। আমার পক্ষে হ্যাঁ বলা সম্ভব নয়”

রুশির কথা শুনে সায়ান কিছু বললো না, উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ডেস্কের উপর থেকে কিছু একটা নিয়ে রুশির দিকে এগিয়ে দিলো। রুশি বুঝতে না পেরে সেটা নিয়ে দেখা শুরু করলো আর খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারলো এটা ওর প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট।কিন্তু এটাতো ও নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে তাহলে এই লোকের কাছে কি করে এলো?ভয়ার্ত কন্ঠে সায়ানের দিকে তর্জনি আংগুল দিয়ে বললো

“আপনি কি করে জানলেন?এটা আপনার কাছে কি করে আসলো? আমি নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি এটা। আপনার কাছে কেনো এটা?”

“উইথ মাই পাওয়ার একটা রিপোর্ট বের করা করা কোন কঠিন কাজ নয় আমার জন্য”

রুশি ঢোক গিলে বললো

“এই নিউজ দিয়ে আপনি কি করবেন?আপনার কি যায় আসে এতে?”

“অনেক কিছু যায় আসে কারণ আমি এই বাচ্চার বাবা!”

রুশি অবাক করা চাহনিতে তাকালো,এতোক্ষন এই ব্যাক্তির জন্য যে শ্রদ্ধা আর সম্মান কাজ করেছিলো তা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।মুখে একরাশ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পেলো না । আজ ওর লাইফ যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে তার জন্য একমাত্র দায়ী হচ্ছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি, সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত এই ও শুধু একটাই উইশ করে গেছে যে এই জঘন্য লোকের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা না হয়। আর যাই হোক ও এটা ডিজার্ভ করতো না,ওর লাইফ নষ্ট করে দিয়ে এখন আদিক্ষেতা দেখাতে এসেছে।ও কাউকে ক্ষমা করবে না, না এই লোকটিকে আর না..

#চলবে

(সবাই নাইস, নেক্সট না লিখে গঠনমূলক কমেন্ট করলে আমি নিজের ভুল ত্রুটিগুলো বুঝতে পারবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here