গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে পর্ব -০২+৩

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২

“আমার চেঞ্জ করা এখনো হয়নি। বাকি আছে। বাহিরে আছেন বাহিরেই থাকুন।”

ঘরের ভেতর থেকে কোহিনূরের কড়া কন্ঠ ভেসে আসায় পলাশ ও আজিম দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করে রাগিনীর দিকে তাকায়। রাগিনী হালকা কেশে ওঠে। পলাশ ও আজিম দুজন হসপিটালের পেশেন্টদের কেয়ারটেকার। তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন পেশেন্ট। মূলত সেই পেশেন্টকে একপ্রকার ধরে বেঁধে বের করে দিয়েছে কোহিনূর চেঞ্জ করবে বলে। আর খুবই কড়া সুরে বলে দিয়েছে ওই ঘরটায় সে একা থাকবে। অন্যকেউ তার সাথে থাকতে পারবে না। সেই পেশেন্টকে বের করে দেওয়ার পরেও সে এখানেই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। সেও গড়গড় করে বলে উঠল,
“আমিও এই ঘরেই থাকব। খালি দরজাটা খুলে দেক তারপর বুঝিয়ে দেব ঘরটাতে কে থাকবে!”

রাগিনী বুঝতে পারছে কোহিনূর দরজা খুললে বড়সড়ই ঝামেলা হতে চলেছে। এই পেশেন্টদের মন মস্তিষ্ক কি বলে সেটা বোঝাই মুশকিল। তাদেরকে তাদের মতো বুঝিয়ে থামানোই বুদ্ধিমানের। রাগিনী কিছু একটা বলতে চায়। কথাটি বলার পূর্ব মূহুর্তে কোহিনূর দরজা খোলে। সঙ্গে সঙ্গেই সেই পেশেন্টটি হিংস্রভাবে তেড়ে যায় কোহিনূরের দিকে। রাগিনী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তৎক্ষনাৎ সেই পেশেন্ট কোহিনূরকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“শোন এই ঘর আমার। এই ঘরে আমি আগে আসছি। আমাকে তাড়াচ্ছিস! এইতো আসলি কয়দিন আগে। বাহির হ তুই!”

অবস্থা বেগতিক দেখে পলাশ আর আজিম এগিয়ে যায়। দুজনকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দুজন তো থামেনা। ইতিমধ্যে কোহিনূরের শিশুসুলভ আচরণ বেরিয়ে এসেছে। সে পড়েছে ফ্লোরে সে যাবেই না। বসে থেকে হাত কামড়াচ্ছে। সেই পেশেন্টও কোহিনূরের চুল ধরতেই পলাশ বাহিরে এসে একটা লাঠি আনে। রাগিনী তা খেয়াল করে বাঁধা দেয়।
“আশ্চর্য লাঠি আনছেন কেন? মে*রে ওদের দমিয়ে রাখলেই কি সুস্থ হয়ে উঠবে? এখানে কি ডক্টরের কমতি পড়েছে? ইমিডিয়েট একটা ডক্টর ডাকুন। ডক্টরই এদের শান্ত করতে পারবে। জাস্ট গো!”

পলাশ ছুটে যায়। আজিম চেষ্টা চালায়। আজিমকে হঠাৎ ধাক্কা দেওয়া হয়। সে পড়ে যায়। কোহিনূরকে দাঁড় করিয়ে তাকে ইচ্ছেমতো ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে দেখে রাগিনীরও মাথা কাজ করে না। সে ছুটে যায়। সেই রোগীকে সরাতে চায়। কিছু বলতে চায়। তখনি সেই রোগী রাগিনীকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে। কোহিনূর তৎক্ষনাৎ হামলে পড়ে। রাগিনীকে দুহাতে সামলে নেয়। ধমকে উঠে বলে,
“ডোন্ট টাচ হার। আই নো ইউ এ মেন্টাল পেশেন্ট। কিন্তু যখনতখন যা ইচ্ছে সহ্য করব না।”

রাগিনী ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এই কোহিনূর নামক মেন্টাল পেশেন্ট সত্যিই অন্যরকম। এমন বিষয়ে রাগিনী আগে জানত না। অবশ্য সে শুনেছে পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের আচরণ এমনই হয়। একেক সময় একেক আচরণ করে ফেলে। কখনো হিংস্র হয়ে ওঠে। আবার কখনো শিশুসুলভ! আবার কখনো ম্যাচিউরড। রাগিনীর এই তাকিয়ে থাকা দেখে কোহিনূর ঠোঁট উল্টায়। আর হঠাৎ বাচ্চাদের ন্যায় বলে ওঠে,
“তুমি তো আমার বন্ধু। আমি তো তোমাকে বন্ধু মনে করি। আর এই লোকের কত বড় সাহস! আমার বন্ধুর গায়ে হাত দেয়। আমি তো একে ছাড়বোই না।”

কথাটা শেষ হওয়া মাত্র কোহিনূর ছুটে লোকটার গলা চেপে ধরে। আজিমও আটকাতে আসে। রাগিনীও দিশেহারা হয়ে ওঠে। তখনি পলাশ ডক্টর নিয়ে আসে। সবাই মিলে কোহিনূরকে ছাড়াতে সক্ষম হলেও সেই পেশেন্ট এই ঘর ছাড়তে রাজি না। সে বার বার বলে চলেছে,
“এটা আমার ঘর!”

ডক্টর মাঝখানে বলে ওঠেন,
“আপনি এই ঘরে থাকলে এই লোক আপনার গলা আবার চেপে ধরবে। তখন আপনি বাঁচবেন না। তখন কি হবে বলুন তো?”

“তাহলে এই লোকটাকে বের করেন।”

জেদ ধরে বলে পেশেন্ট। রাগিনী নরম সুরে বলে,
“এর থেকে আরো সুন্দর ঘর আপনাকে দেওয়া হবে আপনি যদি এদের সাথে যান তবে।”

রাগিনীর শান্ত কথা সে বিশ্বাস করে। পলাশ আর আজিমের সাথে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাগিনী হাফ ছেড়ে বাঁচে। কোহিনূরের পানে চেয়ে দেখে সে হাত কামড়াতে ব্যস্ত। রাগিনী দৃষ্টি সরিয়ে ডক্টরের দিকে তাকায়। ডক্টরের এপ্রোনের নেম প্লেটে লিখা ডক্টর রাজিন লিখা। রাগিনী স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলে,
“সো ড. রাজিন! এই হসপিটালে আপনি সহ ডক্টর কয়জন?”

ডক্টর রাজিন জবাব দেয়,
“১৫ জন! আপনাকে চিনলাম না। আপনি কার অভিভাবক? মি. কোহিনূরের? কিন্তু আমার জানামতে তো উনার কোনো অভিভাবক নেই!”

“আমি ডক্টর শাহ্ রাশেদের মেয়ে রাগিনী তাজরীন। অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছি। তাই এই হসপিটাল দেখতে এলাম। কিন্তু এখানে যা অবস্থা তা দেখে আমি আশাহত! ১৫ জন ডক্টর। অথচ প্রতিটা পেশেন্টকে কথায় কথায় মা*রার হুম’কি দেওয়া হচ্ছে। একজন সাইকোলজিস্টের কাজ প্রতিটা পেশেন্টকে দিনে একবার মেডিটেশন করানো। তাদের সাথে আলাপ করা। কিন্তু এখানে আদেও তা হয়? আমার বাবা কয়েক বছর ধরে কিছুটা অসুস্থ বলে এদিকটা দেখতে পারে না। তাই বলে এখানে এতো বাজে অবস্থা হবে কল্পনা করিনি। আর কোহিনূরের অভিভাবক নেই মানে?”

“তাকে যে এখানে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেছে সে বলেছে একটা এক্সিডেন্টে তার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সে একা বেঁচে গিয়েছে। তাও অতিরিক্ত আঘা’ত পেয়ে মেন্টাল ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছে। আর সরি ম্যাম, আমাদের এই ব্যর্থতার জন্য।”

রাগিনী কিছুক্ষণ চুপ থেকে শক্ত গলায় উত্তর দেয়,
“সরি বলে লাভ নেই। এখানকার কেয়ারটেকার এবং আপনারা কথায় কথায় লাঠি চা’লানো বন্ধ করুন। নয়ত আমি নিজ দায়িত্বে আপনাদের কাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা করব।”

ডক্টর রাজিনের মাথা নত হয়। কোহিনূর রাগিনীর পাশে চুপি চুপি এসে দাঁড়াল। এক আঙ্গুল দিয়ে রাগিনীর বাহুতে টোকা দিয়ে একটু নিচু হয়ে রাগিনীর সমান হয়ে ফিসফিস করে বলল,
“এই লোকটার সাথে কথা বলবে না তুমি বেশি। লোকটা শুধু ইনজেকশন দিয়ে ব্যথা দেয়!”

রাগিনী কোহিনূরের সাথে কথায় কথা মিলানোর জন্য বলল,
“আচ্ছা বলছি না। আমি এখন যাই? আমার কাজ আছে। আপনার ঘরে আপনি ছাড়া অন্যকেউ থাকতে আসবে না। চিন্তা করবেন। আমি এখন যাই। পরে আবার আসব। ঠিক আছে?”

কোহিনূর রাগিনীর এই কথা শুনে খপ রাগিনীর হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“কি আশ্চর্য! আমি ভাবলাম তুমি আমার সাথে থাকবে। তাই তো কাউকে আমার ঘরে আসতে দিলাম না। তুমি আর আমি থাকব!”

রাগিনী ভ্যাবাচেকা খেয়ে ঘনঘন চোখের পলক ফেলে হাসার চেষ্টা করে। উত্তরে কি বলবে খুঁজে পায় না। বেশ কিছুটা ভেবে বলে,
“আমি এখন না গেলে আমার বাবা চিন্তা করবে। আমি কাল আবার আসব। ঠিক আছে? আজকে যাই?”

কোহিনূর মাথা নাড়ায়। সে যেতে দেবে না। চোখজোড়া সূক্ষ্ম করে তাকিয়ে বলে,
“নো ওয়ে! তুমি গেলে আমার খেয়াল রাখবে কে?”

কোহিনূরের প্রতিটা কথায় থমকাচ্ছে রাগিনী। তার কথায় বাচ্চা ভাবটা নেই। এখন তার কন্ঠে মোটা ভাবটা চলে এসেছে। শিশুসুলভ ভাবটা কেটে গেছে। রাগিনী বলে,
“কাল আমি আবার আসব। আজকে আমাকে যেতেই হবে।”

“তুমি গেলে কিন্তু আবারও আমি তোমাকে আগের মতোই ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে বেঁধে রাখব!”

রাগিনীর বিষম ওঠে। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারছে সে এখন জোর করে যাওয়ার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। রাগিনী ধীর পায়ে এগিয়ে ঘরে থাকা চেয়ারে বসে বলে,
“আচ্ছা যাচ্ছিনা। বসে আছি। আপনি খুশি?”

কোহিনূর উত্তর দেয় না। সেও গিয়ে অগোছালো বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে। রাগিনী চুপচাপ সোজা হয়ে বসে থাকে আর অস্থির হয়। মিনিট দশেক পর রাগিনীর ফোন বেজে ওঠে। রাগিনী হাতের কাছে থাকা ব্যাগটা থেকে ফোন দ্রুত বের করে। কোহিনূর চোখ মেলে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায়। রাগিনী ফোন রিসিভ করার আগেই কোহিনূর তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। আর রাগিনীর হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেডে কেঁড়ে নিয়ে রিসিভ করে নিজের কানে ধরে। রাগিনী বিস্ময় নিয়ে ফোনটা নিজের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেও পারে না। ওপাশ থেকে একটা বয়ষ্ক কন্ঠ ভেসে আসে।
“হ্যালো রাগিনী! সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। এখনো বাড়ি এলে না যে? এতো রাত অবধি বাহিরে থাকা ভালো নয়।”

রাগিনী ফিসফিস করে বলল,
“মি. কোহিনূর রত্ম! আমার ফোনটা দিন। আমার বাবা ফোন করেছে। টেনশন করছে!”

কোহিনূর যেন কোনো কথা কানেও নেয় না। নিজেই উত্তর দেয়,
“রাগিনী এখন তার বন্ধুর সাথে ব্যস্ত। এখন ওকে বাড়িতে ডাকবেন না তো।”

কথাটা শেষ করেই কলটা কেটে দিয়ে নিজের বালিশের নিচে ফোনটা চাপা দিয়ে রাখে কোহিনূর। আর রেগে রেগে বলে,
“তুমি এখানেই থাকবে।”

“কিন্তু…”
রাগিনী চুপ হয়। কোহিনূর আবার শুয়ে পড়ে। খানিকক্ষণ পর খাবার আসে। রাতের খাবার। খাবার দেখে কোহিনূর চোখ হালকা মেলে তাকিয়ে চোখমুখ জড়িয়ে বলে,
“এই খাবার আমি খাব না। বাজে টেস্ট!”

কিছুক্ষণ থেমে কোহিনূর আবারও আদেশের সুরে বলে,
“শোনো রাগিনী নাকি রাগের রানী! কাল আমার জন্য তুমি খাবার নিয়ে আসবে।”

এমন কথা শুনে রাগিনী আকাশভরা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকলেও মৌনতা অবলম্বন করে। আর মাথা দুলায়। কোহিনূর এখন খাবে না মানে খাবেই না। তাকে খাওয়ানো গেল না। রাগিনী খাবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলে।

রাত তখন ৯ টা। কোহিনূর গভীর ঘুমে। রাগিনী আস্তে করে তার ফোনটা বালিশের নিচ থেকে টান দিয়ে নেয়। ঘুমন্ত কোহিনূর নড়েচড়ে ওঠে। তবে ঘুম ভাঙ্গে না। হাতে ফোন নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পা টিপে টিপে দুইধাপ রাখতেই ওড়নায় টান পড়ে তার। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কোহিনূরের এক হাতের মুঠোয় ধরে রাখা তার ওড়না। কি এক বিপত্তি। রাগিনী ফিরে এসে একটা একটা করে আঙ্গুল খুলে ওড়না ছাড়িয়ে নেয় অনেক কষ্টে। ওড়না নিজ হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রাগিনী খানিকটা কোহিনূরের ঘুমন্ত মুখের উপর হেলে পড়ে বলে,
“মি. রত্ম! বুঝতে পারছি আপনি খুব ডিমান্ড করতে জানেন। যাকে তাকে আদেশ দিয়ে বেড়ান। জোকের মতো একেবারে। পেলে একেবারে শুষে নেন দেখছি। সত্যিই সাইকোলজিস্ট হওয়া যে সে ব্যাপার নয়। বাট আমি আপনাকে হ্যান্ডেল করে দেখতে চাই আমি কতটুকু যোগ্য সাইকোলজিস্ট হওয়ার।”

অতঃপর সে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসতেই ডক্টর রাজিন তার সামনে পড়ে। সে কোহিনূরের দিকে একটু তাকিয়ে বলে,
“ম্যাডাম, হি ইজ মেন্টালি ইল। ওর ব্যবহার আপনি সহ্য করতে পারবেন না। তাই নিজের ভালো চাইলে আর এখানে পা রাখবেন না। ওকে না হয় আমরা সামলে নেব।”

রাগিনী ডক্টর রাজিনের উপর চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট সুরে বলে,
“মে’রে সামলে নেবেন?”

ডক্টর রাজিন গলা খাঁকারি দিয়ে ইতস্তত বোধ করে বলে,
“ম্যাডাম আপনি কিন্তু…”

“মি. কোহিনূরকে আমার খুব মিস্টেরিয়াস লেগেছে। এমন পেশেন্ট সম্পর্কে আমি আরো জানতে চাই। তাই যতদিন আমি এখানে আছি আমার আসা যাওয়া চলতে থাকবে! থ্যাংকস ফর ইউর সাজেশন ডক্টর।”

আর দেরি করে না রাগিনী। জবাব দিয়ে ব্যাগটা ভালো করে নিয়ে পাশ কাটিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়।

“বস! সবকিছু রেডি। এখন শুধু ভোরের অপেক্ষা। ভোর ৪ টা বাজবে আর কাজ হয়ে যাবে।”

এক টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে রাখা ঘরে একটা চেয়ারের উপর বসে টেবিলের উপর পায়ে পা তুলে গা এলিয়ে বসে থেকে মনোযোগ দিয়ে নখ পরিচর্যা করা সেই নারীটির মনোযোগ সরে গেল। ঘাড় বাঁকিয়ে তার সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকালো। তার কাছে থাকা কাঁচের পুতুলটা হাতে নিয়ে সেটা নাড়তে চাড়তে বলল,
“তুই সিউর তো কবীর? পরে কোনো ঝামেলা হলে কিন্তু তোদের জানের উপর দিয়ে গাড়ি চা’লিয়ে দেব। এই বস কোনো ঝামেলা পছন্দ করে না।”

“কোনো সমস্যা হইতো না। আপনি দেখেন খালি। আমি নিজে সব সেট করে দিয়ে আসছি।”

“সমস্যা না হলেই ভালো। আমরা যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি সেটা এবার সবাই জানতে পারবে। সব পাবলিকের মনে ভয় সৃষ্টি হবে। সবাই ভয়ের দ্বারা আমাদের ওয়েলকাম করবে।”

বলেই উচ্চস্বরে হেঁসে ওঠে সেই নারী জন। কবীরও তা দেখে হাসে। সে পুতুলটা রেখে ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়িটে ৯ টা ৪৫ বাজে। মনে মনে গুনে নেয় সেই সময়। তারপর উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
“আর তো বেশি সময় নেই। সময় হবে আর ঘুমন্ত অবস্থায় অফিসার আলম সহ তার পুরো পরিবার বো*ম!”

তার হাসি প্রগাঢ় হয়। চেনা চেহারায় সেই হাসিটাও চেনা লাগে। সে কবীরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“যা যা! তাড়াতাড়ি হুইস্কির বোতলটা নিয়ে আয়। এখনি সব রেডি রাখি। ওদিকে আগু’ন জ্বলবে। এদিকে আমরা আনন্দ করব।”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩

“এতো রাত অবধি বাহিরে থাকা ঠিক নয় রাগিনী। ঢাকা শহরটা খুব একটা ভালো নয়। সাবধানে চলতে হবে তোমাকে।”

বাহিরে থেকে সবে বাড়ির হলরুমে প্রবেশ করতেই একটা ভারি কন্ঠ ভেসে আসতেই হাঁটা থামালো রাগিনী। চোখ গোল গোল করে তাকালো ডাইনিং এর দিকে। টেবিলে দুহাত রেখে বসে রয়েছেন এক অর্ধবয়স্ক লোক। চুলগুলো অনেকটা পেকে গিয়েছে। কিছু কিছু কালো চুল অবশিষ্ট! চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। শান্ত দৃষ্টিতে রাগিনীর দিকে তাকিয়ে। লোকটি ডক্টর শাহ্ রাশেদ। রাগিনীর বাবা। রাগিনী হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে ডাইনিং-এ টেবিলের কাছে এগিয়ে আসে। টেবিলের নিকট আসতেই বিভিন্ন খাবার দেখে রাশেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে নরম সুরে জিজ্ঞেস করে,
“বাবা এখনো খাওনি তুমি?”

“তুমি যখন বাড়িতে আসো তখন রাত আর সকালের খাবার একসাথে না খেলে যে আমি শান্তি পাই না সেটা তোমার অজানা নয় তাই না?”

রাগিনী কিছু না বলে হলরুমের বড় ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত সাড়ে দশটা পেরিয়ে এগারোটার দিকে কাঁটা ছুটছে। দৃষ্টি সরিয়ে সে বেসিনের কাছে তাড়াতাড়ি গিয়ে হাতটা ধুয়ে নিয়ে আবারও টেবিলের কাছে এসে প্লেট হাতে নিয়ে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
“আই এম সরি বাবা। আসলে এতো ঘটনা ঘটে গেছে বিকেল থেকে যে আমার আসার মতো কোনো রাস্তায় ছিল না। কিন্তু তোমাকে শরীরটা ভালো নেই বাবা। তোমার রাত ১০ টার মাঝে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত।”

“মেয়ে এতো রাত অবধি বাহিরে থাকলে কোন বাবার ঘুম আসবে চোখে?”

রাগিনী আর কোনো জবাব দিল না। মাথা নত করে রাশেদ সাহেবের কাছে খাবার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি খেতে শুরু করো। আমি ফ্রেশ হয়েই আসছি।”

রাগিনী নিজের ঘরে যাবার জন্য উদ্যত হয়। ফের বাবার এক প্রশ্ন শুনে থেমে যায়।
“ফোন করেছিলাম তখনকার ব্যাপারটা কি হলো কিছুই বুঝতে পারিনি তখন!”

“আমি তো আজকে তোমার হসপিটালে গিয়েছিলাম। সেখানকার একটা পেশেন্ট কোহিনূর। উনি তোমাকে এসব কথা বলেছিল। আসলে ঘটনাটা অনেক বড়। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ঠান্ডা মাথায় বলি?”

রাশেদ সাহেব আর কথা বাড়ান না। মৌনতা অবলম্বন করেন। রাগিনীও ফ্রেশ হতে নিজের ঘরে চলে যায়।

রাতে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে খেতে খেতে রাজ্যের সব গল্পগুজব করতে আরম্ভ করল। রাশেদ সাহেব মানুষটি একা। রাগিনীর মা মারা যাবার পর বিয়েও করেন নি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। রাগিনীও সুযোগ পেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। ফলে মেয়েটার সাথেও সময় কাটানো হয় না তার। ছুটিতে মেয়েকে পেলে গম্ভীর মানুষটিও ভারি গল্পগুজব করেন। হসপিটালের অবস্থা সম্পর্কে কথা কথা বলতে বলতে হুট করে রাগিনী বলে উঠল,
“আচ্ছা বাবা, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের পেশেন্টগুলো কি এতোটাই অদ্ভুত? একসময় একরকম আরেক সময় অন্যরকম। হুট করেই একেবারে বাচ্চা হয়ে যায়। আবার হুট করেই এতোটা গম্ভীর হয়ে যায় যে বোঝাই মুশকিল হয়ে যায়। আবার কখনো আক্র’মণাত্মক হয়ে যায়।”

রাশেদ সাহেব খেতে খেতে জবাব দিলেন,
“হ্যাঁ। এদের কেস হ্যান্ডেল করা বেশ কঠিন ব্যাপার। কারণ এদের রিয়েল পার্সোনালিটি কোনটা সেটা বোঝা যায় না। ওরা সময়ে আসল রূপে আসে।”

“কোহিনূর নামের ওই পেশেন্টকে আমার অন্যরকম লেগেছে। বাবা আমার তো ছুটি আছে। আমি উনার কেসটা দেখতে চাই।”

“তুমি এখন এসবের মধ্যে জড়াতে যেও না। ঝামেলা হবে অনেক।”

রাগিনী রাশেদ সাহেবের এমন কথায় শান্ত হয় না। মুখ ভার করে বলে,
“বাবা, প্লিজ!”

রাশেদ সাহেব মানতে চান না। তবুও মেয়ের কয়েকটা কথায় মেনে যান। উনার ধারণা, এখন থেকে অভিজ্ঞতা থাকলে ভবিষ্যতে রাগিনীর জন্যই ভালো!

ভোরের আলো ফোটেনি তখনও। মেইন রোডে ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে। গাড়িটি বাকি সব গাড়িটিকে ওভার টেক করে দ্রুত চলছে। তবুও গাড়ী ড্রাইভ করা ব্যক্তির অস্থিরতা বিরাজমান। নিজের অগোছালো চুলগুলো একহাতে ঠিক করার পর দ্রুত ব্লুটুথ কানেক্ট করে কাউকে কল দিল সে। ধড়ফড়িয়ে বলে উঠল,
“কি অবস্থা ওদিকের?”

ওপাশে কথা শুনে গাড়িতে থাকা অবস্থায়ই সজোরে একহাতে গাড়ির দরজায় থাবা মেরে বলল,
“ড্যাম ইট! হাউ ইজ ইট পসিবল। আমি সব দিক দিয়ে নজর রেখেছি। এতো বড় ব্লান্ডার…”

একটু থেমে আবারও উত্তেজিত সুরে বলল,
“অফিসার আলম কি সত্যিই মা*রা গেছে? আর ইউ সিউর? পারলে বার বার চেক করে দেখো।”

নির্জন এবার কথা সহ্য করতে না পেরে কলটা কেটেই দিল। এতো বাতাসেও তার কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে। চোখমুখের ধরণটা বেশ কড়া। কপালে তিনটে ভাঁজ পড়েছে। গাড়ির স্পিড আরো বাড়ালো সে।

আ’হত এবং জীবিত পরীক্ষা করে তাদেরকে এম্বুল্যান্সে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এডিশনাল এসপি অফিসারের বাড়িতে বো*ম ব্লা*স্ট হয়ে পুরো বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এসপি স্যারের তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে রয়েছে শুধুমাত্র তার একটা মেয়ে এবং বাড়ির দুটো দারোয়ান। তারাও পুলিশের দল থেকেই স্পেশালি এই বাড়ির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। টেরো’রিস্ট দল তাদের কাজের সূত্রপাত ঘটিয়ে ফেলেছে।

গাড়ি এসে থামে রাস্তায় সাইডে। গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয় নির্জন। বড় বড় পায়ের ধাপ ফেলে আসতেই দেখে এম্বুল্যান্সকে সেখান থেকে বের হতে দেখে। গার্ডেনের ভেতরে ঢুকতেই তার চোখে পড়ে অনেকের ভীড়। ভীড়ের মাঝে সে সকলকে চিনতে পারে। আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে ভালো করে। আশেপাশের সাধারণ লোকজনের সরগম দেখা দিয়েছে। তাদের ঠেকাতে কয়েকজন কনস্টেবল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নির্জন ভীড় ঠেলে সিল মেরে দেওয়া জায়গায় ঢুকে পড়ে। সেখানে ইতিমধ্যে ইনভেস্টিগেশন শুরু হয়েছে। পুরো টিম উপস্থিত হয়েছে। নির্জন সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই তার উপস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ায় এক সুর্দশন পুরুষ। গায়ে তার পুলিশের ইউনিফর্ম জড়ানো। কোমড়ে ঝুলছে বন্দুক। জড়িয়ে রাখা চেহারায় হাসি ফুটিয়ে তুলল। ব্যাঙ্গাত্বক হাসি! নির্জনের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ করে বলল,
“অফিসার নির্জন! কাম কাম। আপনারই অপেক্ষা ছিল। নিজের চোখে দেখুন আপনার ইনভেস্টিগেশনের ফলাফল। অনেক সুন্দর না?”

নির্জন নিরব থাকে। কপালের রগ দপদপ করছে। ঠোঁট দুটো কেমন যেন শুঁকিয়ে এসেছে। তবুও নির্জন জানে কি করে হাসিমুখে সবটা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সেও সেই পুরুষের ব্যাঙ্গাত্বক হাসির বিপরীতে স্মিত হাসি দেয়। আর বলে,
“ইন্সপেক্টর রায়ান, আমার ইনভেস্টিগেশন এখনো শেষ হয়নি। এইতো দুইদিন হয়েছে সবে আমি মাঠে নেমেছি। তার আগে থেকে তো আপনিই এসব ইনভেস্টিগেট করছিলেন তাই না?”

“তাহলে এখন কি এসব কিছুর জন্য আমাকে দায়ী করতে চাইছেন অফিসার নির্জন?”

নির্জন আরো খানিকটা শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বলে,
“জোকস্ অ্যা পার্ট!”

“এই সময়ও আপনার জোকস্ করতে ইচ্ছে করছে?”

“অভিয়েসলি নট। আপনার কথাতে মাঝে মাঝে জোকস্ এমনি এমনি এসে যায়।”

“স্বীকার করে নিন অফিসার নির্জন যে ভুলটা আপনার। আপনার ভুলভাল প্ল্যানিং এর কারণে আজকে বড় বিপত্তি ঘটে গেল। টেরো*রিস্টের দল প্রথম ধাপে জিতে গেল। এডিশনাল এসপি আর তার পুরো পরিবারের র*ক্তের মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বাগতম জানিয়ে নিল। সবটা ঘটল আপনারই দৌলতে!”

অন্যরকম কণ্ঠস্বর শুনে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় নির্জন। কথাগুলো ইন্সপেক্টর রায়ানের পারসোনাল কনস্টেবল শেখরের। তবে নির্জনের মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেল না। সে আগের মতোই শান্ত থেকে উত্তর দিল,
“তারা যখন স্বাগতম জানিয়েই দিয়েছে তখন জানাতে দাও। তাদের বিদায়ের ব্যবস্থা তো আমিই করব।”

তখনি হাত থেকে তাড়াহুড়ো করে নির্জনের সাথ দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলো মেহরাজ। আর শেখরের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“তোমাকে এতো কথা বলতে কে বলেছে শেখর? যাও না যাও নিজের কাজ করো।”

কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই নির্জন মেহরাজকে হাতের ইশারায় থামতে বলে। পেছন থেকে গাড়ি থামার শব্দ পেয়ে সকলেই পিছু ফিরে তাকায়। গাড়ি থেমে নেমে আসে এসআই অফিসার। বেশ সিরিয়াস রয়েছেন উনি। দ্রুত পায়ের ধাপ ফেলে কাছে আসতেই সকলে একজোট হয়ে উনাকে স্যালুট জানাতেই উনি মাথা নাড়াতেই সকলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কিছুটা বিস্ময়ের সাথে নির্জন এবং রায়ানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে ওঠে,
“ইন্সপেক্টর রায়ান আর সিক্রেট টিমের লিডার অফিসার নির্জন। তোমরা থাকতে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটল কি করে?”

ইন্সপেক্টর রায়ান মাথা নুইয়ে ফেলে।
“আই এম সরি স্যার। আমরা সতর্ক ছিলাম। ভাবিনি সেই টিম এতো দ্রুত কাজ ঘটিয়ে ফেলবে। পুরো টিমের এক অংশ ধ্বংস হয়ে গেল। তার জন্য ওয়ানস্ এগেইন উই আর এক্সট্রিমলি সরি।”

অফিসার সন্তুষ্ট হলেন না। নির্জনের দিকে তাকালেন। নির্জন চোখে চোখ রেখেই উত্তর দেয়,
“আই এম সরি স্যার। যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে পারব না। তবে এই ক্ষতির জন্য যারা দায়ী তাকে আপনার সামনে হাজির করব। আই প্রমিস!”

অফিসার আর কোনো কথা বললেন না। পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। তৎক্ষনাৎ নির্জন মেহরাজকে বলে উঠল,
“কোনো সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড তো নেই তাই না?”

মেহরাজ মাথা নাড়ায়। নির্জন ব্যস্ত সুরে বলে,
“তাহলে আশেপাশের বিল্ডিং এ সার্চ করো। সেখানকার যত সিসিটিভি ফুটেজ আছে সব নিয়ে এসো। আর সেই সাথে যেই দুজন কনস্টেবল বেঁচে আছে তাদের খোঁজ নাও। ফাস্ট!”

মেহরাজ কাজে লেগে পড়ে তার টিমের সাথে। নির্জন দূর থেকে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বড় বাড়ির দিকে পলকহীন ও কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভেতরের ক্রোধটা বাড়তে থাকে দাবানলের মতো। দাঁতে দাঁত চেপে সেই দাবানলকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তার কালো কোটের পকেট থেকে বের করে একটা মোটা কাগজ। কাগজটা খুলতেই তার চোখমুখ কুঁচকে আসে। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে কাগজ চেপে ধরে। কাগজে এক নারীর স্কেচ আঁকা। নারীটির মুখশ্রী বড্ড চেনা। নির্জন বিরবির করে বলে ওঠে,
“আমি জানি কাজটা তোমার মিস. রাগিনী। সব খোঁজ নেওয়ার পর জানতে পেরেছি তুমি বেরিয়েছো মেন্টাল হসপিটাল থেকে নয়টায়। কিন্তু বাড়ি ফিরেছো সাড়ে দশটার পর। মাঝখানে এতোগুলো সময় কোথায় ছিলে সেটা আমাকে জানতে হবে। আই উইল কি*ল ইউ!”

ভোর তখন ছয়টা। সবে সকালের আলো ফুটেছে। নব্য দিনের সূচনা। আকাশে লাল আভা। খোলা জানালা দিয়ে সেই নতুন দিনের আলো আসায় চোখমুখ কুঁচকে অন্যপাশ ফিরে কোলবালিশটা জড়িয়ে নিল ঘুমন্ত রাগিনী। এলোমেলো চুলে ঘুমটা হালকা হয়ে এলো। চোখ না খুলেই মুখ থেকে চুল সরিয়ে শান্ত হয়ে পড়ল। ঘুমে মগ্ন হবার চেষ্টা করল। কিন্তু বিধি বাম। তার কানে এসে পৌছালো কিছু চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ। তবুও সে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু হলো না। আওয়াজ বেড়ে চলেছে। একসময় বিরক্ত হয়ে চোখ খুলল সে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জানালার দিকে তাকালো। একরাশ বিরক্তির ছাপ তার মুখে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়ল সে। পায়ে সামান্য স্লিপার পড়ে ধীর গতিতে গেল জানালার দিকে। ভালো করে পর্দা সরিয়ে বাহিরের দিকে চোখ দিতেই চোখ চড়কগাছে পরিণত হলো তার। অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
“কো…কোহিনূর!”

ঘুমটা চোখ থেকে এবার ছুটে গেল। আর কিছু না ভেবে বাহিরের দিকে ছুট লাগালো। সিঁড়ি বেয়ে নেমে হলরুম পেরিয়ে সদর দরজার লক খুলে বাহিরে বের হতেই চোখে পড়ল এলোমেলো অবস্থায় কোহিনূরকে। দারোয়ান তার দিকে লাঠি তাক করে আছে। দুজনে তর্কাতর্কি করছিল। রাগিনী ভাবলেশহীন হয়ে সামনে থাকা এলোমেলো সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কোহিনূর সে তো রাগিনীর দেখা পাওয়া মাত্রই রাজ্য জয়ের হাসি দিয়ে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই ছুটে এসে শক্ত করে রাগিনীকে উচ্ছ্বাসের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এইতো রাগের রানীর দেখা পেয়েছি!”

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here