গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে পর্ব -০৪+৫+৬

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪

আকস্মিক কোহিনূরের এমন জড়িয়ে ধরাতে হতবাক হয়ে কোনোরকম কথা ছাড়াই চোখ গোল গোল করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাগিনী। সকাল সকাল এমন চমক পেয়ে মাথা ঘুরছে তার। সেই সাথে গিজগিজ করছে বেশ কিছু প্রশ্ন! কোহিনূর কি করে তার বাড়ি চিনলো? আর এলোই বা কিভাবে? সব মিলিয়ে রাগিনী কি বলবে বা করবে ভেবে পাচ্ছে না। অন্যদিকে দারোয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কখন যেন চোখ দুটো বের হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে তার ঠিক নেই। একটা শুঁকনো ঢক গিলে কোহিনূরকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সরে আসার চেষ্টা করল রাগিনী। তবে কোহিনূর তাকে ছাড়তে চাইলে তো? বরং সে নিজের গায়ের জোর দিয়ে এতোটাই শক্ত করে চেপে ধরে যেন রাগিনী হাড় মাংস কখন যেন এক হয়ে যাবে। চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম রাগিনীর। পিঠের হাড় কখন যেন ভেঙে যায়। এতো জোরে ধরার কি আছে? ব্যথায় হঠাৎ চোখমুখ খিঁচে ফেলে সে। বিরবির করে বলে,
“ইশশ… কোন জন্মের শত্রুতা পালন করছে কে জানে!”

যখন রাগিনীর দম বন্ধ হয়ে আসার পরিক্রম তখনি রাগিনী চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“কোহিনূর, আপনি এটা কি করছেন? এটা কেমন ধরণ জড়িয়ে ধরার? ছাড়ুন আমাকে!”

“না! তোমাকে ছাড়লে তুমি আবার এই বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়বে। আবার আমি একা হয়ে যাব।”

রাগিনীর চোখমুখ অন্ধকার হয়ে আসছে। তবুও সে ক্ষুদ্ধ হলো না কোহিনূরের উপর। আসলে হওয়া যায় না তার উপর ক্ষুদ্ধ। তার শিশুসুলভ কথা ক্রোধকে যেন নিমিষেই গলিয়ে ফেলে। এভাবে কাউকে রাগ দেখানো যায় নাকি? রাগিনী দাঁত চেপে বলে,
“আমি বাড়ির ভেতরে যাব না। আই প্রমিস! কাল যেমন আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। আজকেও তেমন আমাকে বিশ্বাস করে ছেড়ে দিন। আমার শ্বাস নিতেও যে কষ্ট হচ্ছে। আপনার বন্ধুর কষ্ট হক আপনি কি চান?”

কোহিনূর বোধহয় এবার আশ্বস্ত হয়। আস্তে আস্তে হাতের বাঁধন হালকা করে। রাগিনী সরে আসে। মাথা নিচু করে। এই মূহুর্তে তার লজ্জা করছে ভীষণ! কারণ সামনেই তার থেকে বয়সে বেশ বড় লোক দাঁড়িয়ে। দারোয়ানকে মামা বলেই ডাকে সে। তার সামনে একটা অযাচিত পুরুষ তাকে নিমিষেই আবদ্ধ করে দেহের সঙ্গে যে মিশিয়ে নিয়েছিল। দারোয়ান মামার দিকে আর তাকাতে পারছে না সে। তবে তিনি নিজেই বলে ওঠেন,
“এই পোলাডা একটা পাগল। আপনি ভেতরে যান রাগিনী মনি। আমি কয়েকজন লোক ডাইকা এরে বের করার ব্যবস্তা করতেছি। কত্ত বড় সাহস! রাগিনী মনির সাথে এমন ব্যবহার করে।”

রাগিনী এবার কিছুটা বিচলিত হয়। দ্রুত উত্তর দেয়,
“না মামা। এমন কোনো কিছু করার দরকার নেই। এই লোকটাকে আমি চিনি। এমন কিছু করবেন না।”

“রাগিনী! তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে না?”

থতমত খেয়ে কোহিনূরের নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকায় রাগিনী। কোহিনূর এমন একটা করে কথা বলে যে উত্তর দিতে বেশ সময় লেগে যায় তার। বাড়িতে তার বাবা আছে। নিয়ে গেলে হয়ত প্রশ্ন করবেন। তবুও মুখে একটা ছোট্ট হাসি বজায় রেখে রাগিনী পাল্টা প্রশ্ন করে,
“অবশ্যই নিয়ে যাব। তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো! ওখান থেকে মানে আপনি যেখানে থাকেন সেখান থেকে কিভাবে আমার বাড়ি চিনে এলেন?”

কোহিনূর চুপ হয়ে যায়। মাটির দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর অগোছালো আর শুষ্ক চুলে হাতে দিয়ে চুলকায়। রাগিনী উৎসুক নয়নে তাকিয়ে থাকে উত্তর শুনতে। তবে তাকে নিরাশ করে দিয়ে কোহিনূর ঠোঁট উল্টিয়ে মিনমিন করে বলে ওঠে,
“মনে নেই।”

রাগিনী হতাশা পূর্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে এক ধ্যানে। কোহিনূর পুরো বড় সাদা সুন্দর বাড়িটা দেখতে থাকে আপনমনে। তারপর নিজ মনেই হেঁসে উঠে বলে,
“তুমি এতো সুন্দর বাড়িতে থাকো? তুমি বলেছো আমাকে নিয়ে যাবে ভেতরে। চলো তাহলে! আমাকে বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে।”

রাগিনীর উত্তর না নিয়েই কোহিনূর নিজ থেকে বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে কৌতূহলের সঙ্গে প্রবেশ করে। রাগিনী তা দেখে তার পিছু পিছু ছুটে যায়।
“আ…আপনি দাঁড়ান!”

কে শোনে কার কথা? রাগিনীর কথা যেন কোহিনূরের কান অবধি পৌঁছালো না। হলরুমে পা রাখল কোহিনূর। তখনি সিঁড়ি দিয়ে ধীর পায়ে নামছিলেন রাশেদ সাহেব। চশমাটা পড়তে পড়তে উনি কিছুটা জোর সুরেই বলে উঠলেন,
“এতো চেঁচামেচি কীসের হচ্ছিল বাহিরে? সায়েদুল! কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি?”

বাড়ির দারোয়ান সায়েদুলকে ডেকে উঠলেন উনি। তখনো তিনি কোহিনূরকে খেয়াল করেন নি। শেষ সিঁড়িতে নেমে হঠাৎ সোফার কাছে অচেনা মুখ দেখে স্বাভাবিকভাবেই চমকে উঠলেন,
“এই কে তুমি? আমার বাড়িতে কি করছো? সায়েদুল! আমার বাড়িতে কাকে ঢুকতে দিয়েছো অনুমতি ছাড়া?”

পিছু পিছু কিছুটা দৌড়েই এসে কোহিনূরের কাছে দাঁড়ায় রাগিনী। যা ভয় পাচ্ছিল তাই হয়েছে। তার বাবার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। রাগিনী রাশেদ সাহেবকে শান্ত করার জন্য বিচলিত সুরে জবাব দেয়,
“বাবা, শান্ত হও। উনি কোহিনূর! মনে আছে? কাল যার কথা বলছিলাম!”

রাশেদ সাহেবের উত্তেজনা কমলো কিছুটা। উনার হার্টের সমস্যা আছে। একটুতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এজন্যই রাগিনী ভয় পাচ্ছিল। রাশেদ সাহেব কিছুটা গাম্ভীর্য ধারণ করে বললেন,
“হ্যাঁ মনে আছে। কিন্তু ও এখানে কি করে?”

রাগিনী মাথা নিচু করে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ সে নিজেও জানে না। রাশেদ সাহেব আর কোনো প্রশ্ন করেন না। দৃঢ় দৃষ্টি রাখেন কোহিনূরের দিকে। তবে কোহিনূরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। সে বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ দেখতে মগ্ন। উপরে বড় ঝাড়বাতি, সোফা, কাঁচের চকচকে জিনিসপত্র বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে সে। রাশেদ সাহেব শুধু তার অঙ্গিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং অপেক্ষায় আছেন রাগিনী কি করে তাকে সামলায় সেটা দেখার জন্য। কারণ সে নিজ থেকে কোহিনূরের সুস্থতার দায়িত্ব নিয়েছে। আর রাশেদ সাহেব নিজেও একজন ডক্টর। তাকে শেখানো হয়েছিল একটা পেশেন্টকে কখনো অবহেলা করা উচিত না। তাই সে কোনোরকম রিয়েক্ট করছে না। কোহিনূর সব দেখে দেখে রাগিনীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে উঠল,
“এতো বড় বাড়িতে তুমি একা থাকো?”

“না। আমার বাবা থাকেন। ওইযে আমার বাবা।”

কোহিনূর এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি সামনে থাকা রাশেদ সাহেব কে। দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে দেখে মাথা নাড়ালো সে। তারপর আচমকা সে বলে উঠল,
“আমার অনেক খিদে পেয়েছে। যেহেতু তোমার বাড়ি এসে গেছি! তুমি এখন রান্না করে খাওয়াবে!”

আবারও অবাক হয় রাগিনী। বাবার দিকে তাকায় একবার। রাগিনীর চুপ থাকা দেখে কোহিনূর আবারও বলে,
“তোমার রান্না করা খাবার না খেয়ে কিন্তু আমি যাব না!”

বলেই ফ্লোরে জেদ ধরে বসে পড়ল কোহিনূর। রাগিনী দোটানায় কিছু বলতে পারছেও না আবার সহ্যও করতে পারছে না। বাবার দিকে আবারও অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সে। রাশেদ সাহেব মেয়ের দৃষ্টি বুঝতে পারেন। আর চোখ বুঁজে ইশারা করে মেয়েকে আশ্বাস দেন। বাবার এমন ইশারা দেখে রাগিনী সাহস পায়। আর তড়তড় করে বলে ওঠে,
“আমি আপনাকে রান্না করে খাওয়াব। কিন্তু এটা তো বসার জায়গা নয়। আপনি উঠুন। সোফায় বসুন। আমি রান্না ঘরে যাই?”

কোহিনূর খুশি হয়। হাসিটা বেড়ে যায়। ঘন চাপ দাড়িপূর্ণ গালে হালকা টোল সৃষ্টি হয়। তার হাসিটা যেন রাগিনীর তার প্রতি করা কাজ করতে বাধ্য করে। তবে কোহিনূর আবারও বলে বসে,
“আমি এখানে না। তোমার ঘরে যাব। নিয়ে চলো। সেখানে চুপচাপ বসে থাকব প্রমিস!”

এবার রাগিনী তাকে মানা করতে গেলেও রাশেদ সাহেব বারণ করেন তাতে। তিনি সৈয়দ অর্থাৎ বাড়ির কর্মরত কাজে সাহায্যকারীকে ডেকে বলেন কোহিনূরকে রাগিনীর ঘরে নিয়ে যেতে বলে। আর কোহিনূরের দিকে চেয়ে বলেন,
“তুমি ওর সাথে যাও। ও রাগিনীর ঘরে নিয়ে যাবে তোমাকে।”

কোহিনূর তাড়াতাড়ি করে সৈয়দের সাথে যেতে প্রস্তুত হয়। সৈয়দের সাথে বেশ আনন্দের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায়।

কোহিনূর যাবার পরপরই রাগিনী রাশেদ সাহেবকে কিছু বলতে চায়। রাশেদ সাহেব সেটা বুঝে তার কিছু বলার আগে বলতে শুরু করে,
“তার যা কন্ডিশন আমি দেখলাম তার কথা না মানলে বা তাকে শান্ত না রাখলে হিতে বিপরীত হবে। তাকে হ্যান্ডেল করা তোমার পক্ষে সহজ হবে না। তোমার জন্য বিপদ হতে পারে। আমার মনে হয় তোমার এসব থেকে দূরে থাকা উচিত!”

“বাবা আমি এখন থেকেই যদি ভয় পাই তবে কি করে ভবিষ্যতে আমি পেশেন্ট হ্যান্ডেল করব? আমার একটা সুযোগ চাই।”

রাশেদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলেশহীন হয়ে পড়েন। অতঃপর শেষে জবাব দেন,
“ঠিক আছে। তবে সাবধানে থাকবে। তুমি যখন এতো করে বলছো তখন চেষ্টা করতে পারো।”

তা শুনে কৃতজ্ঞতা মূলক হাসি দেয় রাগিনী। আর বলে,
“ঠিক আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি। তারপর তোমাকে কফি বানিয়ে দিচ্ছি।”

সকালের খাবার নিজ হাতে বানাচ্ছে রাগিনী। গায়ে এপ্রোন জড়িয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার বানাচ্ছে সে। ব্যস্ত হয়ে রান্নাঘরের এদিক ওদিক তোলপাড় করছে। হাত দিয়ে আটা মাখতে মাখতে হাতে আটা লেগে যাওয়ায় বেশ বিরক্ত সে। যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ এটা। কোনোমতে আটা মাখানো শেষ করে হাতটা ধুয়ে নিয়ে উদ্যত হয় সে। তৎক্ষনাৎ কোনো ভারি বস্তুর সাথে মাথা ঠুকে গেলে বিরক্তির সীমা পার হয় তার। আটা মাখা হাতে তা ঠেলে দিয়ে বলে,
“ধুর ধুর! এটা আবার কি জিনিস?”

কিছুটা দূরে যেতেই তার মনে হয় এটা একটা প্রশস্ত বুক। মাথা উঁচিয়ে তাকায় সে। কোহিনূরের চেহারা দেখামাত্র ভড়কে দুই পা পিছিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“একি আপনি!”

কোহিনূর এবার হাসে। তার এবারের হাসিতে সেই শিশুসুলভ ভাবটা দেখতে পেল না রাগিনী। ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে। তারপর কোহিনূরের শীতল সুর বেজে ওঠে রাগিনীর কানে,
“মে আই হেল্প ইউ, রাগিনী?”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫

আবারও কোহিনূরের এমন শান্ত এবং লাটসাহেবের মতো কথাবার্তা শুনে বিষম খায় রাগিনী। জোরে জোরে কেশে ওঠে সে। সাথে সাথে পাশ থেকে একটা গ্লাস নিয়ে দ্রুত কাঁচের জগ থেকে পানি ঢেলে তার দিকে পানি এগিয়ে দেয় কোহিনূর। আর বলে ওঠে,
“আমার সামান্য কথায় বিষম খেলে কি করে চলবে? টেক ইট!”

পানিটা কাঁপা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পান করল রাগিনী। বড় বড় শ্বাস ফেলে এই ভিন্ন কোহিনূরের দিকে দৃষ্টি রাখল সে। এই কোহিনূরের দিকে তাকাতে তার কেমন যেন লাগে! সংকোচ বোধ হয়। লোকটির মুখে বর্তমানে হাসি অনবরত না ঝরলেও হাসির সামান্য ছিটেফোঁটা যেন সবসময়ের জন্য লেগে থাকে। চোখ সরিয়ে নিল রাগিনী। বেসিনের কাছে গিয়ে হাত ধুয়ে নিতে নিতে বলল,
“আমার হেল্প লাগবে না। আপনি বরং অপেক্ষা করুন। তাতেই আমার হেল্প হয়ে যাবে।”

“আর ইউ সিউর?”

“ইয়েস।”

কোহিনূর এবার ফলমূলের ঝুরি থেকে ফট করে ছুরি নিতেই ঘাবড়ে গেল রাগিনী। নেত্রপল্লবজোড়া বড় বড় করে বলল,
“হঠাৎ করে ছুরি হাতে নিলেন কেন? ও…ওটা রেখে দিন!”

রাগিনীর এমন আমতা আমতা কথা শুনে মুখের হাসিটা আবারও ফুটে ওঠে কোহিনূরের। ছুরিটা ঘুরিয়ে অন্যহাত দিয়ে ধা*রালো জায়গাতে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বলে,
“তুমি কি ভয় পাচ্ছো মিস. রাগিনী?”

রাগিনী উত্তর দেয় না। কোহিনূরের মতিগতি সে বুঝতে পারছে না। কোহিনূর তার ক্ষতি করে দিতে পারে। সে ভাববে না। কারণ তার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে ছুরিটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিয়ে রাগিনীর ভয় পাওয়াটা দেখে মজা নিয়ে বলে ওঠে,
“রিল্যাক্স! আমি তোমাকে বন্ধু বানিয়েছি। আর নিজের বন্ধুর কেউ ক্ষতি করে বুঝি? ছুরি ধার আছে কিনা পরীক্ষা করছিলান। তুমি তো দেখছি মৃ*ত্যু ভয় পেয়ে গেছো।”

রাগিনী এবার নিজেকে সামলে নেয়। শুঁকনো ঢক গিলে সেও না চাইতেও তাল মিলিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। কোহিনূরের দৃষ্টি তার থেকে সরছেই না। তাই বলে মন খুলেও হাসা যেন সম্ভব হচ্ছে না। কোহিনূর তার দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,
“অবশ্য মৃ’ত্যু ভয়কে কেউ তো উপেক্ষা করতে পারে না। যারা প্রা’ণ নেয় তারাও একসময় মৃ’ত্যু ভয়ে কাঁপতে থাকে। আর তোমার মতো একটা সুইট গার্লের এমন ভয় পাওয়া স্বাভাবিক!”

রাগিনী এবার ভেবে নেয়, এই লোকটা যতক্ষণ থাকবে তার আত’ঙ্কের কারণ হয়ে থাকবে। তার থেকে কোনোমতে তাকে বের করে দিতে পারলে সে শান্তিতে শ্বাস ফেলতে পারবে। কিন্তু রাগিনীর ভাবনাতে পানি ফেলে দিয়ে কোহিনূর আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার বাড়িতে পাস্তা আছে?”

“হোয়াট?”
হতভম্ব হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল রাগিনী। কোহিনূর আগের মতোই জবাব দিল,
“পাস্তা! আই ওয়ান্ট টু ইট পাস্তা। সো আমি জিজ্ঞেস করলাম পাস্তা আছে কিনা।”

রাগিনী তড়িঘড়ি করে একটা ড্রয়ার থেকে পাস্তা বের করে নিয়ে বলল,
“পাস্তা খাবেন আপনি? তাহলে গিয়ে ওয়েট করুন। একটু পর আমি রেডি করে নিয়ে আসছি।”

কোহিনূর মাথা নাড়িয়ে তার থেকে পাস্তার প্যাকেট নিয়ে বলল,
“ইয়াপ! ওখানকার একই খাবার খেতে খেতে আমি বোর! সো অন্যকিছু ট্রাই করতে মন চাইছে। আর রান্নাটা আমি করব। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। তুমি যা করছো তা করো। ভুলে যেও না আমি কিন্তু তোমার হাতের রান্না খেতে চেয়েছি।”

চোখজোড়া গোল গোল হয়ে আসে রাগিনীর। কোহিনূরের হাত থেকে প্যাকেট কেঁড়ে নিতে চাইলে কোহিনূর হাত উঁচু করে তা ধরে রাখে। ফলাফলস্বরূপ রাগিনী হুমড়ি খেয়ে আবারও মাথাটা ঠুকে যায় তার বুকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় তার খোঁপা খুলে। রাগিনী নাকে ব্যথা পায়। চিনচিন করে ওঠে। কাতর ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
“এটা কোনো মানুষের দেহ? নাকি কোনো দেয়াল?”

কোহিনূর এবার উচ্চস্বরে হেঁসে ওঠে। তার হাসি দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকায় রাগিনী। আশ্চর্যজনকভাবে লোকটার হাসি চমৎকার লাগছে রাগিনীর। বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে সে। হাসির শব্দও সুন্দরভাবে যখন তার কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে তখন বারংবার তা ঝংকারের মতো বেজে উঠছে। রাগিনীর ভাবনায় ছেদ পড়ে কোহিনূরের কথায়।
“রাগের রানীকে ভূতের মতো দেখাচ্ছে এই মূহুর্তে।”

তার কথার মানে না বুঝে ভ্রূ কুঁচকায় রাগিনী। কোহিনূর কিছুটা ঝুঁকে ফুঁ দিয়ে আশেপাশের ছোট ছোট চুলগুলো যেসব রাগিনীর মুখ আবৃত করে ছিল সেসব সরিয়ে অন্য হাতে চুলগুলো পেছনে দিয়ে বলে,
“নাউ ইটস ওকে!”

নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাগিনীর। দ্রুত দুহাত দিয়ে খোঁপা করে নিয়ে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়ায় সে।

সোফায় বসে রান্নাঘরে থাকা কোহিনূরকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে রাগিনী। কিছু বলার মতো শব্দ পাচ্ছে না সে। আসলেই বা কি বলা উচিত। হুটহাট করে এমন আচরণ পরিবর্তন করতে থাকলে কখন যেন রাগিনী কনফিউজড হয়ে জ্ঞানই হারাবে। হাতে খবরের কাগজ নিয়ে এসে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বসে পড়েন রাশেদ সাহেব অন্য সোফায়। রাগিনীকে চুপচাপ সোফায় বসে থাকতে দেখে তিনি প্রশ্ন করেন,
“রাগিনী, খাবার কি রেডি? তাহলে দেরি করছো কেন যাও টেবিলে সাজিয়ে ফেলো।”

রাগিনী মাথা নাড়িয়ে মিনমিন করে জবাব দেয়,
“আর রেডি! কিচেনের দিকে দেখো বাবা।”

রাশেদ সাহেব কিচেনে তাকিয়ে নিজেও নির্বাক হয়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে তার বিস্ময় কাটাতে। তারপর নিজেকে সামলে বিস্ফো’রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ও কিচেনে! কিন্তু…”

“পাস্তা খেতে মন চেয়েছে উনার। তাও নিজ হাতে রান্না করে। আমাকে রীতিমতো কিচেন থেকে ঠেলে বের করে দিয়ে মনের সুখে রান্না করে চলেছেন।”

রাশেদ সাহেব আর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। কোহিনূরের দিকে তাকিয়ে একমনে বলে উঠলেন,
“সে আসলে সৌখিন মানুষ। তার পরিবারের লোকজন হয়ত শিক্ষিত আর বেশ উন্নত ফ্যামিলির। তাই যখন সে আগের অবস্থায় ফেরে সেই স্বভাব গুলো ফিরে আসে।”

রাগিনী বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। অন্যকিছু বলে না। রাশেদ সাহেব সেই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলেন না। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বেশ সাবধানে বলে উঠলেন,
“রাগিনী শোনো, বাহিরে সাবধানে চলাফেরা করবে। বাহিরের পরিবেশ বিপদজনক হয়ে উঠছে। কখন কি ঘটতে পারে কেউ বলতে পারে না।”

শেষ কথাগুলো বেশ চিন্তিত কন্ঠে বললেন রাশেদ সাহেব। রাগিনী কিছুটা ফিচেল গলায় বলল,
“কিছু ঘটেছে বাবা?”

“খবরের কাগজে নিউজ বেরিয়েছে। শহরে একটা ভয়া’নক টেরো’রিস্টের টিম এসেছে। তারা শহরে আত’ঙ্ক সৃষ্টি করতে এসেছে। আর তারা এতো কনফিডেন্টলি সব কাজ করছে যে পুলিশের সব টিম মিলেও তাদের ধরতে সক্ষম হচ্ছে না। অলরেডি তারা এডিশনাল এসপি অফিসারের বাড়িতে হা’মলা করে সেটার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। আরো ক্ষতি করতে সময় লাগবে না।”

রাগিনী সেসব কথা শুনে চুপ করে থাকে। তারপর স্বাভাবিক সুরে বলে ওঠে,
“এটা নতুন কি বাবা! চট্টগ্রামে এমন অহরহ ঘটনা শুনে শুনে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। এখন আর ভয় লাগে না। আমার জানামতে সেই চট্টগ্রামের সব ধ্বংস করে তারাই আবার ঢাকায় এসেছে। যাতে এখানেও তারা ধ্বংসের মাধ্যমে রাজত্ব করতে পারে। এই পুরো টিম টাকে কেউ ধরতে পারছে না।”

রাশেদ সাহেব মেয়ের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকান। হকচকিয়ে বলে উঠলেন,
“তুমি কি করে জানলে? চট্টগ্রামের ওই টিমই তারা?”

বাবার এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রাগিনী। ধীরস্থিরভাবে উত্তর দিল,
“ইন্টারনেটে দেখলাম সেদিন। আমি যাই উনি রান্না করতে পারলেন কিনা দেখে আসি!”

বলেই এক মূহুর্ত আর বসলো না রাগিনী। উঠে জোর কদম হেঁটে কিচেনে গিয়ে ঢুকল। রাশেদ সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন খবরের কাগজ পড়তে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে অবশেষে কোহিনূরকে হসপিটালের লোকজন এসে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় আবারও তার শিশুসুলভ আচরণ প্রকাশ পেয়েছিল। সে জেদ ধরেছিল রাগিনীর কাছে থাকার জন্য। রাগিনী পরে তার কাছে যাবে বলে আশ্বাস দিয়ে কোনোরকমে হসপিটালে পাঠিয়েছে। কোহিনূর অতঃপর শান্ত হয়ে হসপিটালের লোকগুলোর সাথে যেতে রাজি হয়।

হাতে ল্যাপটপ নিয়ে টেবিলের উপর দুটো পা তুলে রেখে সিসিটিভি ফুটেজ ব্যস্ত ভঙ্গিতে চেক করছে নির্জন। কপালে তিনটে দৃঢ় দাগ স্পষ্ট! কোনোরকম ক্লু না পেয়ে অতিষ্ট হচ্ছে সে। দাঁত কিড়মিড় করে ল্যাপটপটা বিরক্ত হয়ে থাবা দিয়ে বন্ধ করে টেবিলে রেখে দিয়ে সোজা হয়ে বসল। আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাজের উদ্দেশ্যে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
“ওই দুটো কনস্টেবলের জ্ঞান ফিরেছে?”

মেহরাজের উত্তর পেল না সে অপেক্ষা করে। বরং চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেল। মাথা উঠিয়ে চোখ দুটো সরু করে মেহরাজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“এতো হাসি কীসের?”

“স্যার একটা প্রশ্ন করি?”

নির্জন কথা ছাড়া হাত উঠিয়ে ইশারা করে তাকে বলতে বলে। তারপর মেহরাজ ফট করে বলে ওঠে,
“তা কেমন ইনজয় করছেন স্যার?”

মেহরাজের কথার মানে না বুঝে তার হালকা মোটা ভ্রু এবং গোলাপি ও ধূসর বর্ণের সংমিশ্রণের চিকন ঠোঁট বাঁকিয়ে তাকালো সে। তখন মেহরাজ গলা খাঁকারি দিল। আর নির্জনের দৃষ্টি দেখে সোজা তাকিয়ে বলল,
“সরি স্যার!”

এবার হাসে নির্জন। হাতে রিভ’লবার নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেহরাজের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সরি বলছো কেন? সরি বলার কি আছে এতে?”

নির্জনের হাসির বিপরীতে মেহরাজও দাঁত কেলিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে রিভ’লবারের আগা দিয়ে তার পেটে জোরে গুঁতা দিতেই হাসি বন্ধ হয়ে যায় তার। পেট ধরে চোখমুখ খিঁচে হালকা আর্তনাদের সুরে বলে,
“স্যার…”

“আমি এভাবেই ইনজয় করছি।”
কথাটা বলেই রিভ’লবার রেখে দিয়ে সেখানে থাকা বড় আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নির্জন। পরনে কালো কোট টা ফাঁক করে নিজের বুকে হাত মুঠ করে ধীরে কয়েকবার আঘাত করে বলে ওঠে,
“আচ্ছা মেহরাজ, আমার জিম করা কি বেশি হয়ে গেছে? মানে আমার দেহ কি স্টিলের মতো হয়ে গেছে?”

মেহরাজ হেঁটে এগিয়ে এসে নির্জনের কাছে দাঁড়ায়। নির্জনের কাঁধে হাত দিয়ে কোট ঠিক করে দিতে দিতে বলে,
“একদমই না। আপনার এতো সুন্দর ফিটনেস! হ্যান্ডসাম লুক! যে কোনো মেয়ে ফিদা হয়ে যাবে।”

নির্জন পরবর্তীতে বিরবির করে কিছু বলে ওঠে। তবে তা বুঝতে পারে না মেহরাজ। না বুঝতে পেরে কান এগিয়ে প্রশ্ন করে,
“কিছু বললেন স্যার?”

“নাথিং!”

ঘুরে গিয়ে চেয়ার বসে নির্জন। মাথার চুলগুলো উপরে উঠিয়ে দিয়ে আবারও ল্যাপটপ খোলে সে। তৎক্ষনাৎ মেহরাজ খানিকটা জোরে বলে ওঠে,
“স্যার একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি যখন ছিলেন না তখন মিস. আহমেদ ফোন করেছিলেন ল্যান্ডলাইনে। আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন। আর বলেছেন…”

থামে মেহরাজ। মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয়,
“বলেছেন আপনি কল ব্যাক না করলে উনি আমাকেই অবস্থা খারাপ করে দিবেন।”

চোখমুখ জড়িয়ে তাকায় নির্জন। জোর সুরে বলে ওঠে,
“ইউ আর অ্যা অফিসার ওফ সিক্রেট টিম মেহরাজ! একটা দুই আঙ্গুলের মেয়ের হু*মকির জবাব দিতে পারো নি?”

“উনাকে কি করে জবাব দেব স্যার? উনি তো…”

নির্জন মুখের উপর জানিয়ে দেয়,
“আমি তাকে কল ব্যাক করছি না। এবার ও আমার কাছে একই বাহানা নিয়ে এলে ওর খবর আছে।”

জায়গাটি লন্ডন। লন্ডন টাওয়ার থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত জনবহুল শহর। তবে শহরটি বেশ শান্ত। সেখানকার লোকজনের মাঝে নেই এতো কোলাহল! সকাল সকাল সকল পরিশ্রমী মানুষজন নিজ কর্মে মগ্ন! সুন্দর শহরে সকলে ব্যস্ত। সেখানেই একটা মাঝারি আকারের বাড়ির মাঝে নিজ ঘরের বেডে গড়াগড়ি খেয়ে চলেছে এক নারী। পরনে একটা শার্ট আর লম্বা প্যান্ট। অর্থাৎ নাইট ড্রেসটা এখনো ছেড়ে উঠতে পারেনি। মাথায় ব্যান্ড। চুলগুলো খুব একটা বড় নয় বেশ ছোট ছোট! ঘাড় থেকে খানিকটা দূরে পড়ে আছে। তার মাঝে আবার কোঁকড়ানো। নাম তার নয়নতাঁরা। ছোট বাচ্চাসুলভ চোখ দুটো বেশ মায়াবী। নাক খানিকটা বোঁচা হলেও গাল দুটো মোটা মোটা। হাতে ফোন নিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ফোন ঘেঁটে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“বিগ ব্রাদার আজকেও আমার কল ইগনর করেছে! আমি কল করছি কল ধরছেও না। নিজেকে কি ভাবে সে?”

বলে আবারও হম্বিতম্বি করে কল লাগায় নয়নতাঁরা। কল না ধরাতে বেডের আরেক প্রান্তে ফোন ছুঁড়ে মেরে বালিশে থুঁতনি রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে সে বিষণ্ণ মনে। খানিকক্ষণ পর তার বালিশের নিচ থেকে একটা ছোট্ট ছবি বের করে সেটা দেখে লজ্জা পেয়ে হাসি দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলে সে। ছবিতে একটা পুরুষ রয়েছে। তার পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম। সাইড থেকে লুকিয়ে তোলা ছবি। ছবিতে হাত বুলিয়ে নয়নতাঁরা বলে ওঠে,
“ডোন্ট ওয়ারি, রায়ান স্যার! আমি খুব তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসছি। আমি জানি আমার বিগ ব্রাদার পছন্দ করে না। তাতে কি? আমি তো করি! আই এম কামিং…!”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৬

হাতে খবরের কাগজ নিয়ে ঘরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকল কবীর। সময়টা দিন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তবে ঘরটাতে রীতিমতো অন্ধকার ছাড়া কোনো আলো নেই। দিনের কোনোরকম আলো পৌঁছায় না সেই ঘরে। জানালা থাকা সত্ত্বেও তা সবসময় বন্ধ রাখা হয়। অগোছালো ঘর। মাকড়সা জাল বুনেছে। শুধু টিমটিম করে কোনো রকমে লাল রঙের একটা ল্যাম্পশিট জ্বলে। আর কখনো কখনো মাথার উপর হালকা লাইট। সেখানেই অবস্থান করে কবীরের পুরো টিমের লেডি বস। কবীরের দরজা দিয়ে ভেতরে আসার শব্দ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় সেই নারীটি। ডাগরডাগর দুটো আঁখি ভয়ানক রূপ ধারণ করে। চোখ দুটো ফুলে রয়েছে তার। সোফায় কোনোরকমে কাঁত হয়ে ছিল সে। চোখটা লেগে এসেছিল। কবীরের এমন প্রবেশে দাঁত কটমট করে উঠে বসে দ্রুত তার সামনে থাকা নেশা রেখে দেওয়া গ্লাসটা ধরে কবীরের দিকে ছুঁড়ে মারে সে। মূহুর্তেই তরল হুইস্কি কবীরের গা ভিজিয়ে দেয়। সৃষ্টি হয় এক বিশ্রী গন্ধের। নেশাময় গন্ধ। কবীর কাঁচুমাচু হয়ে তার বসের দিকে তাকাতেই নারী কন্ঠে হিংস্রভাবে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“ব্লাডি বিচ! কি এমন তাড়াহুড়ো লাগছে তোর? দরজায় হালকা টোকা দিয়ে আসতে পারিস না? ভুলে যাস নাকি আমি তোর বস?”

“মাফ করে দেন। আমি আসলে উত্তেজনা ধরে রাখতে পারিনি। তাই…”

কবীরের কথার মাঝখানে বাগড়া দিয়ে তার বস সন্দিহান হয়ে বলে,
“এতো কীসের উত্তেজনা জাগছে তোর?”

কবীর খবরের কাগজ এগিয়ে দেয়। যদিও তা অনেকটা ভিজে গিয়েছে। তবুও হাত দিয়ে ধরে বিরক্তি নিয়ে খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজের দিকে তাকাতেই বিরক্তিকর দৃষ্টি উধাও হয় সেই রাগান্বিত নারীর। ঠোঁটের কোণে হাসির ফোয়ারা দেখা যায়। খবরের কাগজটা আবার কবীরের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে ওঠে,
“খুশির খবর। আমাদের কার্যক্রমের কথা অলরেডি খবরের কাগজ ছাপতে শুরু করে দিয়েছে। এটা তো সবে শুরু। এখন এমন একটা দিনও বাদ যাবে না যেখানে আমাদের কথা লিখা থাকবে না।”

কবীরও তাল মিলিয়ে হাসে। তার বসকে এবার প্রশ্ন করে,
“বস, আমাদের নেক্সট টার্গেট কি?”

“এবার খুব একটা ঝামেলা করব না। ওইযে সবথেকে বড় যেসব ফ্যাক্টরি আছে তার মধ্যে দুটোকে টার্গেট করব। সেই দুটো আমি ভেবেও রেখেছি। আর এই কাজটা আমি নিজহাতে করব। যা বাকিদের গিয়ে বল জিনিসপত্র রেডি রাখতে। আজ সন্ধ্যায় বের হবো আমি।”

কবীর মাথা ঝাঁকায়। তারপর যেখান থেকে যেতে ঘুরে দাঁড়ায়। পিছু ডাকে সেই ভয়া’নক মানবী। শান্ত তার কন্ঠস্বর। কাঁচের বাটির নিচ থেকে পাঁচশ টাকা বের করে কবীরের দিকে উড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।
“সন্ধ্যে না। আমি এখনি বের হচ্ছি। এই নে। বস খুশি হয়ে তোকে দিল। এতো পারফেক্ট কাজ করেছিস কিছু পাওনা থাকে তোর। আর শোন, কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দে। বাহিরের কেউ যেন তোকে খুঁজে না পায়। মাইন্ড ইট।”

বলেই হাতে একটা পার্স নিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সেই মানবী। কি ভয়ানক তার রূপ! সেই সাথে কথাবার্তার ধরণ মহা ভয়ংকরী!

বিকেলের আকাশ। রঙবেরঙের মেঘের ভেলা মুক্তভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে সীমাহীন আকাশে। নেই কোনো বাঁধা। মাঝে মাঝে একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। ব্যস্ত শহরের এক প্রান্ত থেকে ছুটে আবারও সেই হসপিটালে ছুটে এলো রাগিনী। এলোমেলো লম্বা চুলগুলো কোনোরকমে বেঁধে রাখা। তাও অর্ধেক খুলে গিয়েছে। যেন খুব তাড়াহুড়োয় বেরিয়েছে। গলার ওড়নাটা খুব ভালোভাবে জড়িয়ে দ্রুত মেইন গেট দিয়ে ঢুকে পড়তেই বড় গার্ডেনে অনেক পেশেন্টকে চোখে পড়ল তার। কেউ বাচ্চাদের মতো খেলছে। কেউ একজন আরেকজনের সাথে নিজেদের মাথায় যা আসে তা গল্প করছে। বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করছে কেউ কেউ। রাগিনীর মনে হয় সে কোনো মেন্টাল হসপিটাল নয় একটা শিশুদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। সে তাদের কর্মকান্ড দেখে মুচকি হাসে আর ধীরে ধীরে এগোয়। আচমকা কারোর দৌড়ে আসায় আকস্মিকভাবে ধাক্কা লাগে রাগিনীর। একটুর জন্য নিজেকে সামলে নেয় সে। খেয়াল করে তার ওড়নায় আবারও টান পড়েছে। চোখ পিটপিট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা কোহিনূরকে। সে হতাশ হয়ে বলে,
“আপনি আবারও?”

কোহিনূর ওড়না থেকে মাথাটা বের করে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। রাগিনী ওড়নাটা টেনে নেয়। কোহিনূরের দিকে ফিরে তাকিয়ে একটা হাত কোমড়ে রেখে মুখচোখে রাগ এনে বলে,
“কীসের থেকে লুকাচ্ছেন এখন শুনি?”

কোহিনূর আগের মতোই ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“আমি এখানকার খাবার খাব না। কিন্তু ওরা আমাকে জোর করছে। আমার পেছন পেছন আসছে খাওয়াতে।”

বলেই হাতটা তুলে আঙ্গুল দিয়ে পেছন দিকে ইশারা করে কোহিনূর। রাগিনী সেই অনুযায়ী লক্ষ্য করে দেখে হসপিটালের কেয়ার টেকার পলাশ হাতে খাবার নিয়ে কিছুটা দূরত্বে কোহিনূরকে খুঁজছে। রাগিনী হেঁসে উঠে হাত একহাতে থাকা টিফিনবক্স দেখিয়ে বলে,
“এখানকার খাবার না হয় খাবেন না। কিন্তু রাগিনী তাজরীনের হাতের খাবার তো খাবেন নাকি?”

কোহিনূরের মুখেও রাজ্যের সকল খুশিরা যেন প্রবেশ করে। ভুবন ভোলানো হাসি দেয় সে আর খপ করে রাগিনীর অন্যহাত ধরে বলে,
“আমার খুব খিদে পেয়েছে। চলো চলো!”

রাগিনীর হাতটা ধরে টেনে হাঁটতে শুরু করে কোহিনূর। পিছু পিছু কোহিনূরের সোজা রাগিনীও হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে রাগিনী হঠাৎ বলে ওঠে,
“মেয়েদের ওড়না টেনে ধরতে নেই এভাবে। আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে আপনাকে…”

এবার রাগিনীকে ছেড়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় কোহিনূর। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে জানতে চায়,
“তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে কি?”

রাগিনী কথা খুঁজে না পেয়ে বলে উঠল,
“দিয়ে দিতো কয়েকটা চর থাপ্পর ফ্রীতে!”

“আমি তো তুমি ছাড়া তুমি ছাড়া অন্যেদের সাথে এমন কিছু করব না!”

বিস্মিত চোখে তাকায় রাগিনী কোহিনূরের হাসোজ্জল চেহারার দিকে। তখনি কোহিনূর শব্দ করে হেঁসে ওঠে। যেন রাগিনীর এমন অবাক হওয়ায় সে মজা পেয়েছে। রাগিনী দৃষ্টি নামিয়ে নেয় আর হাঁটার দিকে মন দেয়। মেইন বিল্ডিং এর পেছনে বড় গাছের নিচে থাকা একটা বেঞ্চে এসে ধপ করে বসে পড়ে কোহিনূর। তার পাশে কিছুটা দূরত্বে রাগিনী বসে হাতে থাকা টিফিনবক্স খুলে কোহিনূরের সামনে ধরে বলে,
“ধরুন আপনার জন্য। বিকেল হয়ে গেছে। চটপট খেয়ে নিন।”

কোহিনূর দ্রুত টিফিনবক্স ধরতে যাবে তৎক্ষনাৎ খাবার নিয়ে এসে হাজির হয় পলাশ। তাকে দেখামাত্র আবারও একহাতে রাগিনীর মেরুন রঙের ওড়না চেপে ধরে কোহিনূর। রাগিনী হকচকিয়ে ওঠে। পলাশ রূঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
“সেই তখন থেকে তোর পেছন দৌড়াইতেছি খাবার নিয়ে। গায়ে লাগে না? এখানে এসে ভদ্র লোকের মতো খেয়ে নেয়। স্যার বলছে সময় মতো খেতে দিতে। নয়ত মেন্টালি ফিট থাকতে পারবি না।”

কোহিনূর চরম বিরক্ত হয়। রাগিনীর পাশ ঘেঁষে বসে তার এক কাঁধে যেন শক্তি দিয়ে চেপে ধরে কর্কশ গলায় বলে,
“আমি এগুলা খাবার খাব না। যত্তসব বাজে খাবার তোমরা খাও। আমি রাগের রানীর হাতের খাবার খাব।”

পলাশ আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় রাগিনীর ইশারায়। রাগিনী বলে ওঠে,
“আমি উনার জন্য খাবার এনেছি। আপনাকে খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনি বরং উনার জন্য পানি আর যেসব মেডিসিন লাগে সেসব নিয়ে আসুন।”

পলাশ আর কথা না বাড়িয়ে কোহিনূরের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরবির করতে করতে খাবার নিয়ে ফিরে যায়।

অন্যদিকে যেন ক্ষুদ্ধ হয়ে রাগিনীর কাঁধ চেপে ধরেছে কোহিনূর। যেন রাগিনীই পলাশ সেটা ভেবেই ইচ্ছে মতো শক্তি প্রয়োগ করছে কাঁধে। না জানি কখন মটমট করে কাঁধ ভেঙে পড়ে। রাগিনী কোহিনূরের হাতের উপর হাত রেখে দূরে সরে যেতে গিয়েও থেমে যায়। তার ওড়নায় টান পড়েছে। যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে বলে,
“পলাশ চলে গেছে। আপনি আমাকে ছেড়ে খেতে শুরু করুন। এভাবে কেউ কাউকে জড়িয়েও ধরে না কোহিনূর। আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে গেলে দায় কি আপনি নিবেন?”

“তো কিভাবে জড়িয়ে ধরে? শিখিয়ে দাও। পরের বার থেকে তোমাকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরব।”

খুব সহজেই কথাটা বলে দিল কোহিনূর। তবে কথাটা শুনে বিষম খেলো রাগিনী। গলা খাঁকারি দিয়ে দৃষ্টি নিচে নামিয়ে বলল,
“আপনাকে শিখতে হবে না। আপনি খেতে নিন। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

কোহিনূর কিছু না বলে খেতে শুরু করে। আর খেতে খেতে বলে ওঠে,
“প্রতিদিন আমার জন্য খাবার আনবে তুমি। নয়ত না খেয়ে বসে থাকব।”

রাগিনী কিছু না বলে হেঁসে ওঠে নিঃশব্দে। আসলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীরা কত সরল এবং সহজ হয়। তাদের কথার ধরনই সরল। তারা মনে যা আসে তাই বলে। যেমন একটু আগের জড়িয়ে ধরার ব্যাপারটা! ভাবতেই কান গরম হয়ে গেল রাগিনী। চুপচাপ একমনে কোহিনূরের খাওয়া দেখতে লাগল গালে হাত দিয়ে। তাকে সূক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। লোকটার মাঝে যেন অদ্ভুত কিছু লুকায়িত। চুলগুলো কেমন যেন বেশি এলোমেলো। সামনের চুলগুলো বেশিই বড়। হঠাৎ করে তার মনে হয় চুলগুলো কিছুটা স্টাইল নিয়েই কাটা। সামনের দিকটা বড় আর পেছনের দিকটা ছোট। চোখ দুটো বেশ গভীর। উপরের পাপড়িগুলো বেশ ঘন আর যেন সুন্দর করে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে পাপড়ি। বেশ লাগে তার। একারণেই তার চাহনি বুঝি এতোটা সুন্দর এবং মন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো হয়? খোঁচা দাড়িগুলো বড় হয়েছে কিছুটা। নাকের নিচে কিছুটা দূরত্বে চিকন ঠোঁটগুলোর রঙ গোলাপী বললে ভুল হবে। খানিকটা ধূসর মাখা রঙ এবং গোলাপী রঙ মেশানো। হঠাৎ করেই কোহিনূর খেতে খেতে রাগিনী মুখের কাছে খাবার ধরাতে ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় রাগিনীর। সোজা হয়ে বসে সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই কোহিনূর তাকে আরেকবার অবাক করে দিয়ে বলে ওঠে,
“বুঝতে পারছিলাম না তোমার এই সুগভীর নয়নের দৃষ্টি দ্বারা কোহিনূর রত্মকে খাচ্ছিলে নাকি খাবার খাচ্ছিলে। আমাকে তো আর সত্যিই খেতে পারবে না তাই খাবার এগিয়ে দিলাম।”

শূন্য অনুভূতি হয়ে যায় রাগিনীর মনের অভ্যন্তরে। দৃষ্টিটা নিমিষেই নামিয়ে নেয়। মাথা নুইয়ে যায়। ভাবতে থাকে, এই মূহুর্তে ছুটে পালিয়ে গেলে কি তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করা হবে? আর এই সময়েই কেন কোহিনূরকে আগের রূপে ফিরতে হবে? চোখটা লজ্জায় খিঁচে বন্ধ করে মাথা নুইয়ে ফেলে সে।

“কি হলো? আর ইউ অলরাইট?”

চোখমুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে আসে রাগিনীর। সে কোনোমতে মাথা নাড়ায়। চোখটা আগের মতোই মতোই বন্ধ রাখে। কোহিনূর খাবারটা মুখে নিয়ে ব্যস্ত সুরে বলে ওঠে,
“আমার একটা কথার ইফেক্ট তোমার এই অবস্থা করছে? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাগিনী নামের মতোই ধমকে উঠবে।”

এবার চোখটা খোলে রাগিনী। আধো চোখে কোহিনূরের দিকে তাকায়। লোকটা খেতে ব্যস্ত। কোহিনূর একটা রত্মের নাম হলেও তাকে ঝড়ের সাথে তুলনা করা যায়। সে যখন আগের মতো হয়ে ওঠে তখন রাগিনীর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। হয়তবা রাগিনীর মনের উপর দিয়েও ঝড় বয়ে গিয়েছে কখনো কখনো! সে কি তা টের পেয়েছে?

“হ্যালো স্যার!”

মেন্টাল হসপিটালের ঠিক বাহিরে থেকে ফোনে কথা বলছে এক লোক। তবে রয়েছে কিছুটা দূরত্বে। রাস্তার পাশে এক বড় গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে। অপর পাশ থেকে কথা শুনতে পেয়ে সে বলে ওঠে,
“ইয়েস স্যার আমি বাহিরেই আছি। মিস. রাগিনী তাজরীন বের হলেই তাকে ফলো করতে শুরু করব।”

সে আবারও থামে। অপর পাশ থেকে কথা শুনে উত্তর দেয়,
“ইয়েস স্যার। চোখের আড়াল হবে না সে।”

বলে ফোনটা কেটে দেয়। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সতর্ক হয় সেই কাঙ্ক্ষিত লোক। ফোনটা পকেটে ঢুকায়। সম্ভবত কোনো মেয়ে মানুষ আসছে। কারণ জুতার আওয়াজ তীব্র। পায়ে হাই হিল। তাই তাকে দেখার জন্য দৃষ্টি দিতেই একটা মাস্ক পড়া মেয়েকে দেখতে পায় সে। চুলে খোঁপা করা উঁচু করে। সামনের চুল ছোট করে স্টাইল করে কাটা। বেরিয়ে রয়েছে শুধু চোখ দুটো। লোকটির পাশ কাটিয়েই চলে যায় সেই মেয়েটি। দ্রুত লোকটি তার পকেট থেকে একটা ছবি বের করে। ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখে। অতঃপর ভড়কে যায় সে। এটাই তো সে। দ্রুত পিছু নেয় তার। বেশ তাড়াতাড়ি হাঁটা দেয় মেয়েটির পিছু পিছু।

দিনের আলো নিভে অন্ধকার হয়ে এসেছে। সন্ধ্যে হয়েছে। অর্ধ চাঁদকে আকাশের বুকে দেখা যাচ্ছে। খুব একটা দেখা যাচ্ছে না কিছু ভালো করে। তবুও মাঝে মাঝে স্ট্রিট লাইটের আলোয় হাঁটা যাচ্ছে। বেশ কিছুদূর হাঁটতে হাঁটতে থেমে যায় মেয়েটি। সে হয়ত কিছু আন্দাজ করেছে। পিছু ফিরে তাকাতেই একটা বাড়ির দেয়ালের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে সেই লোক। কিছুক্ষণ পর উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই কাঙ্ক্ষিত মেয়েটিকে না পেয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সে। আশেপাশে পাগলের মতো তাকায়। দ্রুত সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। দরদর করে ঘামতে থাকে তাকে না পেয়ে। চিন্তার চোটে বলে ওঠে,
“কোথায় গেল এই রাগিনী তাজরীন!”

অনেকটা দূর হেঁটেও যখন তাকে পায় না তখন এক সময় দাঁড়িয়ে পড়ে সে। একটা ফ্যাক্টরির সামনে এসে পড়েছে। অনেকটা হাঁটা হয়ে গিয়েছে। এদিকে কাজ ছাড়া তেমন কোনো লোক আসে না। ফ্যাক্টরিতে যেসব লোক কাজ করে তারা ভেতরেই রয়েছে। এবার হতাশ হয় লোকটি। ফিরতে হবে। স্যার হয়ত তাকে কথা শোনাবে। তবে কিছু করার নেই। এই ভাবনা নিয়ে যখন সে ফিরতে উদ্যত হবে তখনি কেউ তার উপর আক্রমণ করে। মাথায় শক্ত কিছুর আঘাতে গলগল করে র’ক্ত বেরিয়ে আসে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ে। টের পায় কোনো নারী অবয়ব। কেউ তার কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে রেখেছে। এক নারী এবং হিংস্র কন্ঠ ভেসে আসে কানে,
“আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া এতোটা সহজ হবে না।”

যন্ত্রণা সহ্য করে হাতিয়ে নিজের কাছে থাকা রিভলবার বের করতে যায় লোকটি। তবে লাভ হয় না। তার মাথায় ঠেকিয়ে রাখা রিভলবার তার কাজ করে দেয়। মাথার চামড়া ভেদ করে ঢুকে যায় গু’লি। নিস্তেজ হয়ে পড়ে পুরো শরীর। গলগল করে বেরিয়ে আসে লাল র’ক্ত। র’ক্ত দেখে আনন্দিত হয় সেই নারী। হাসিটা আগের মতোই ফুটে ওঠে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here