#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বিশ
নিজের রক্তের বোন’কে কেউ এত’টা নির্মম ভাবে মা/রতে পারে ভাবতে পারছেনা ফাইজা। নিস্তব্দ হয়ে আছে। চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। উপস্থিত প্রত্যেকের চোখে পানি। ফারদিন আজ নিজের ভেতরের জমানো কষ্ট গুলো চোখের জলে বিসর্জন দিচ্ছে। ফারদিন’কে স্বান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা বা শব্দ ওর জানা নেই। কি স্বান্তনা দিবে এই ছেলে’টাকে? যে ছেলে কিনা সাত বছর বয়সে নিজের মা’কে চোখের সামনে খু/ন হতে দেখেছে তাও নিজের বাবা আর আপন খালার হাতে। তাকে স্বান্তনা বা বুঝানোর মতো ভাষা আদৌ আছে কিনা ফাইজার জানতে ইচ্ছে করছে। তাহলে, অন্তত ছেলে’টাকে ওই ভাষায় স্বান্তনা বানী দিতে পারতো। ফারদিন ফাইজা’র বুকে মাথা রেখে শব্দ করেই ফুঁপিয়ে কাদঁছে। যে ছেলে’টাকে প্রথম দিন থেকে হাসি খুশি দেখেছে সেই ছেলে’টার ভেতর এতটা কষ্ট জমানো ছিলো কেউ বুঝতে পারে’নি। ফাইজার চোখ থেকে জল টপটপ করে পড়ছে। ফাইজা কাঁপা কাঁপা হাত’টা ফারদিনের পিঠে রাখতেই ফারদিন কান্না থামিয়ে দিলো। নিচের দিকে তাঁকিয়ে তড়িঘড়ি করে চোখের জল মুছে নিয়ে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে পড়লো। চোখের জল টুকু লুকাতে একটু দূরে সরে গিয়ে পেছন ফিরে আবারো বলা শুরু করলো..
–সেদিন আমাকে আর আমার মৃত মা’কে ওইভাবে রেখে এই লোক’টা আর এই মহিলা দুজনেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো। একটা সম্পূর্ণ রাত কাঁদতে কাঁদতে আর মুখ বাঁধা থাকায় আমি কখন সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম জানিনা। যখন চোখ খুলি তখন নিজেকে দীদার পাশে আবিস্কার করি। দীদা কাঁদতে ছিলো আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই দীদা আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই আমি কান্না শুরু করে দিয়ে দীদা’কে সব বলতে থাকি। তখন জানতে পারি। সকালে কাজের আন্টি এসে মা’কে মৃ’ত অবস্থায় মেঝে’তে পায় আর আমাকে অন্য রুমে সেন্সলেস অবস্থায় পায়। আর সেই সবাই’কে ডেকে এনে দীদা’কে খবর দেয়। আরো জানতে পারি সেদিনের পর আমার টানা ত্রিশ ঘন্টা সেন্স ছিলোনা। মা’কে যে মা’র্ডার করা হয়েছে তা মা’য়ের লা’শ দেখেই বুঝে গিয়েছিলো সবাই। দীদা আমার বাবা আর খালার বিষয় কিছু জানতো না। এমন’কি এটাও জানতো না যে বাবা মা’কে কত’টা অত্যা’চার করতো। তাই পুলিশ’কে খবর দেওয়া হয়। কাজের আন্টি সেদিন সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো বলেই সবাই আমার বাবা আর খালা’র আসল চেহারা জানতে পেরেছে। পুলিশ ওদের দুজন’কেই এরেস্ট করেছিলো কিন্তু ওই যে আমাদের দেশে এখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেশিরভাগ দোষী ছাড়া পেয়ে যায়। সেদিন ও ঠিক এই জঘন্য মানুষ দুটো টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলো সবার। আমার দীদা একা লড়াই করে পেরে উঠে’নি ওদের সাথে। আর আমি সে তো সাত বছরের একটা বাচ্চা ছিলাম সে কিই বা করতে পারতো বলো তো? ওরা নিজেদের দোষ আড়াল করে দিয়ে দেশ ছেড়েই পালিয়ে গেলো। মা’য়েরা দুই বোন ছিলো। আমার মা’তী ছিলো মাটির মানুষ। যার হাসি’টা ছিলো মুগ্ধ করার মতো। জানো আমার মা চোখ ধাধানো সুন্দর ছিলো কিন্তু এই লোক’টা(রেজওয়ান) আমার মায়ের কদর করতে পারলো না। এই মহিলা(কাকন) ছোট থেকেই উৎশৃঙ্খল ছিলো তাই দীদা সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে আর মায়ের নামে করে দিয়েছিলো। আর অল্প কিছু দীদার নামে ছিলো। তাই রাগে, হিংসায় প্রতিশোধ তুলতে সে আমার মা’কেই কেড়ে নিলো। অপর দিকে এই লোক’টার(রেজওয়ান) বিশাল বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি ছিলো। আবার এই লোক’টার(রেজওয়ান) যে মেয়ের নেশায় পড়ে সব করতে পারে তা এই মহিলা(কাকন) খুব ভালো করে জানতো। তাইতো এই দিক’টাই কাজে লাগালো। দুজন বিয়ে করে নিলো৷ আর সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করে নিলো। তারপর কেটে যায় বিশ বছর। আস্তে আস্তে দীদার সাহায্যে সব ভুলে যেয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। দীদার হাত ধরে বড় হয়ে উঠলাম। কিন্তু ওইযে, চোখের সামনে সব মেয়েদের নোংরা চেহারা দেখে মেয়েদের প্রতি ঘৃনা আমার মনে যে রয়ে গিয়েছিলো সেটা কিছু’তেই ভুলতে পারি। যত বড় হচ্ছিলাম তত মেয়ে শব্দ’টাকে ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম। আমি তো চোখের সামনে যাদের দেখেছি তারা সবাই নোংরা মেয়ে ছিলো। তাহলে আমি কি বিশ্বাস করব বলো তো যে সব মেয়েরা এক না? সেই থেকে বাবা আর মেয়ে এই দুটো শব্দ যেনো আমার কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠলো। জানো স্কুল কলেজ এমন’কি ভার্সিটি লাইফে আমার কোনো মেয়ে বন্ধু ছিলোনা। মেয়েদের থেকে সব সময় দূরে থাকতাম। মেয়েদের দিকে কখনো ঘৃনার দৃষ্টি ছাড়া অন্য দৃষ্টি’তে তাঁকাই’নি। ভার্সিটি শেষ করে দীদার বিজন্যাসে জয়েন করলাম। আমি জয়েন হওয়ার পর একজন মেয়ে’কেও অফিসে রাখি’নি। সাত বছর থেকে যেই চাপা কষ্ট আর ঘৃনা একাকিত্ব নিয়ে আমি বড় হয়েছি তা যেনো কোনো মানুষ’কে ফেস করতে না হয়। সব কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র ভুলি’নি। মনের কোনে ঘৃনা প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলেছে প্রতি মুহূর্ত। ওদের অনেক খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পাই’নি৷ পৃথিবী’টা তো আর ছোট না যে আমি চাইলেই সবাই’কে পেয়ে গেলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে যখন ওরা দেশে ফিরলো তখন বুঝেছিলাম এ দেশে ফেরার একটাই কারন ওরা জানতে পেরেছে যে আমার দূর্বল’তা তুমি। আমার থেকে হয় তোমাকে কেড়ে নিবে নয় আমাকে মে/রে ফেলবে। দেখো তাই হলো প্রথমে আমাকে এক্সিডেন্ট করালো আমি ম’রে গিয়েও বেঁচে ফিরলাম তাই তোমাকে সরানোর কাজে নেমেছিলো। কিন্তু ওরা বোধহয় ভুলে গেছে সেদিনের সাত বছরের ছেলে’টা এখন আটাশ বছরে পা রাখবে কিছুদিন পর…..
বলেই হেসে দিলো ফারদিন। ফাইজা নির্বাক চাহনী’তে তাঁকিয়ে আছে। রেজওয়ান আর কাকনের চোখে ভয় দেখতে পারছে শুধু। কি আশ্চর্য এত কিছুর পর ও এই লোক দুটোর মনে একটু অনুতাপ হচ্ছে না। ঘৃনা হচ্ছে লোক দুটোর উপর। এতটা নিকৃষ্ট পিতা আর খালা যেনো কারোর না হয়। নিজের সন্তান’কে কেউ মে/রে ফেলতে চায়। ভাবতে পারলো না ফাইজা। ছুটে গিয়ে ফারদিন’কে ঝাপটে ধরে কেঁদে দিলো হাউমাউ করে। ফারদিন ও ফাইজা’কে বুকের সাথে চে’পে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। ফাইজার কান্না থামাতে ফাইজা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর দুই গালে হাত রেখে চোখের পানি টুকু মুছিয়ে দিতে দিতে একটু জোরালো কন্ঠে বললো……
–কতদিন বলেছি কাঁদবে না। তাও কাঁদতে হবে তোমার অনেক দিন বুঝি থা’প্প’ড় পড়েনা। থা’প্প’ড় খে’তে ইচ্ছে করছে জান।
এইটুকু বলে ফাইজার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…..
–নাকি চু’মু খেতে ইচ্ছে করছে জানননন……
এই পরিস্থিতিতে কেউ এমন কথা বলতে পারে তা ভাবতেই ফাইজা এক প্রকার ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। ছেলে’টা যে নিজের কষ্ট লুকাতে মজা করছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ওর চোখ দুটো দেখে৷ ফাইজা কোনো শব্দ না করে ফারদিনের দুই গালে আলতো করে হাত রাখলো। ফাইজার স্পর্শ পেতেই ফারদিন মুখে হাসির রেখা টানার চেষ্টা করলো। ফাইজা ফারদিনের গালে হাত দিয়ে ওর চোখে চোখ রাখলো। ফারদিনের চোখের কোন’টা যে রক্তের মতো লাল হয়ে আছে তা স্পষ্ট দেখতে পেলো। চোখে পানি ও টলমল করছে কিন্তু মুখে হাসি। কোন ধাতু দিয়ে গড়া এই ছেলে’টা। এত কষ্ট এত বছর ধরে কি করে সহ্য করলো? ফাইজার টলমল চোখের চাহনী’তে ফারদিনের মুখের হাসি’টা মিলিয়ে যেতে লাগলো। বুকের ভেতরের হাহা’কারের শব্দ গুলো ভেসে আসচ্ছে। ফাইজা করুন স্বরে ফারদিনের চোখে চোখ রেখেই প্রশ্ন করে উঠলো…..
–এত বছর ধরে এই ভয়ংকর কষ্ট গুলো কি করে সহ্য করেছেন?
বলতে বলতেই ওদের দুজনের চোখ বেয়ে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়লো। ফারদিন নিজেকে সামলে নিজের গালে থাকা ফাইজার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো….
–তিন বছর আগে এক গোধূলি লগ্নে তুমি এসে আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছিলে। মা’কে হারিয়ে অতীত ভুলে বেঁচে থাকতে শিখেছিলাম। কিন্তু তুমি হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকা’টা সম্ভব হয়ে উঠবে না……
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_একুশ
একটা ছু”ড়ি আচমকা কাকনের হাতে বসিয়ে দিতেই কাকন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। ফারদিনের চোখের ইশারায় গার্ড’দের মধ্যে একজন আঘাতের স্থানে মরিচের গুড়ো ঢেলে দিয়ে ওর মুখে আবারো টেপ লাগিয়ে দিলো। এতে যেনো যন্ত্রনা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কাকন যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু চিৎকার করতে পারছেনা। চোখ গুলো দিয়ে বাঁচার জন আতৎনাদ করছে। কিন্তু সেই আতৎনাদ কেউ শুনতে পারছে না। তখন ফাইজার সাথে কথা শেষ হতেই ফারদিন ওদের দুজনের সামনে এসে বসে প্রথমে কাকনের মুখ খুলতেই কাকন রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিলো…..
—সেদিন রাতে তোর মায়ের সাথে তোকে শেষ করে দিলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না আমাকে……
কথা বলে আর বলার সুযোগ পায়’নি তৎক্ষনাৎ ফারদিন সামনে থাকা ছু’ড়ি’টা কাকনের হাতে বসিয়ে দেয়। রেজওয়ান ভয়ার্ত চোখে সব’টা দেখছে আর ঢোক গিলছে। ফারদিনের এই রুপ’টা দেখে ফাইজা ভয়াবহ চাহনী নিক্ষেপ করে আছে। ফারদিন কাকনের বদ্ধ ছটফটানি দেখে হালকা হেসে বলে উঠলো……
–সেদিন আমার মা এর থেকেও বেশি ছটফট করছিলো। আপনার ছোট হয়েও আপনার পায়ে ধরেছিলো। আপনি সেদিন আমার মায়ের সংসার ভিক্ষা না দিয়ে আমার মা’কেই মে’রে ফেললেন…..
বলেই দুই হাতে দুটো ছু/ড়ি নিয়ে কাকনের দুই পায়ে গেঁথে দিয়ে বলে উঠলো…..
–এই পা দুটো দিয়ে আপনি আমার মা’কে আ’ঘাতের পর আ’ঘাত করেছিলেন…..
বলেই একটু শব্দ করে হাসলো। আর কাকন চোখ দিয়ে বাঁচার মিনতি করছে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। পা আর হাত দিয়ে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে। রেজওয়ানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওর চোখে ভয় ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে। এইবার ফারদিন রেজওয়ানের দিকে তাঁকিয়ে মলিন হেসে বলে উঠলো….
–আপনার মুখ আমি খুলব না। আপনার বাঁচার আকুতি-মিনতি আমি শুনতে চাইনা। যতই হোক আপনি আমার বাবা আমার শরীরে আপনার রক্ত বইছে। তাই চাইলেও আপনাকে ভয়ংকর’ মৃ/ত্যু দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি তো আর আপনার মতো নির্দয় হার্টলেস নই……….
বলেই সময়ের অপেক্ষা না করে গান’টা নিয়ে সোজা রেজওয়ানের কপালে সু’ট করে দিতেই। রেজওয়ান বাঁধা অবস্থায় চেয়ার নিয়ে ধপ করে নিচে পড়ে গেলো। চোখ দুটো খোলা রেখেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সে শান্ত হয়ে গেলো। রেজওয়ানের দিকে কয়েক সেকেন্ড অসহায় চোখে তাঁকিয়ে থাকলো ফারদিন। ওর চোখ থেকে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। যতই হোক এই লোক’টা তো ওর বাবা। আর বাবা’কে নিজের হাতে মা/রার মতো তীব্র যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। ফারদিন নিঃশব্দে চোখ জোড়া বন্ধ রেখে কাতর স্বরে বললো…..
–আমাকে ক্ষমা করো মা। এই পাষাণ, নির্দয় লোক’টাকে আমি নির্মম মৃ’ত্যু দিতে পারি’নি। যেই লোক’টা তোমাকে হাজার যন্ত্রনা দিয়েছে আমি তাকে খুব অল্প যন্ত্রনা দিলাম। আমাকে ক্ষমা করো……
বলেই মুখ’টা দুই হাতে চেপে ধরলো। ফারদিনের কষ্ট’টা বুঝে উঠতে’ই ফাইজা মুখ চেপে ধরলো। কান্না গুলো বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে আসতে চাইলো। ফাইজার কাকনের দিকে তাঁকাতেই ভয়ে হাত পা কাপছে। মুখে যদি টেপ লাগানো না থাকতো তাহলে কাকনের আতৎনাদের হয়তো পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠতো৷ ফাইজা দেয়াল ঘেষে দাড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। আর ফারদিন মাথা নিঁচু করে চোখের পানি ফেলছে। ওর কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। বুকের ভেতরের জমানো কষ্ট গুলো আজ ভীষন করে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এই দম বন্ধকর পপরিস্থিতি থেকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছে বার বার। নিজেকে সামলে চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে কাকনের দিকে তাঁকালো। কাকন চোখের ইশারায় ফারদিন’কে বাঁচার আবেদন জানাচ্ছে। ফারদিন তা দেখে একটু হেসে গার্ড’দের বলে উঠলো…..
–এই মহিলা’কে প্রানে মে/রে ফেলবে না। ওর পা দুটো হাটু থেকে কে’টে ক্ষত স্থানে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দিবে। জিভ কেটে নিবে যেনো ও আর কোনো দিন কথা বলতে না পারে। তারপর ও’কে একটা ভরা বাজারে রাতের অন্ধকারে রেখে আসবে আর হ্যাঁ, অবশ্যই সামনে একটা ভাঙা থালা দিয়ে আসবে…….
ফারদিনের কথা শুনতেই কাকন, গার্ড আর ফাইজা কেঁপে উঠলো। কাকন মাথা নাড়িয়ে বার বার মুক্তি চাইছে। ফারদিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবারো বললো…..
–আর অবশ্যই ভিডিও করে আমাকে পাঠিয়ে দিবে। যদি কাজ’টা ঠিক ভাবে না হয় তাহলে তোমাদের অবস্থা’টা এর থেকেও খারাপ হবে। গট ইট……
বলেই ফাইজার দিকে কয়েক পা বাড়িয়ে আবারো পেছনে ফিরে বলে উঠলো….
–আর এই (রেজওয়ান) আবর্জনা’টাকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করো। ফাস্ট……
গার্ড গুলো কথা মতো মা নাড়িয়ে সায় দিলো। ফাইজা ভয়ে কাঁপছে। ফারদিন গিয়ে ফাইজার কাঁধে হাত রাখতেই ফাইজা ভয়ে কেঁপে উঠলো। তা দেখে ফারদিন মুখে মুচকি হাসি টেনে বলে উঠলো….
–ভয় পেও না। আমি আছি তো। আর তুমি বলো এদের মতো মানুষ’কে শাস্তি দিয়ে কি আমি ভুল করেছি?
ফারদিনের কথায় ফাইজা চোখের পানি টুকু ওড়না দিয়ে মুছে নিয়ে মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললো…..
–একদম না। পাপের শাস্তি সবাই’কে পেতে হবে। ওরা ওদের পাপের শাস্তি পেয়েছে। এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ। আমার এখানে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে।
ফাইজার করুন স্বরে শেষের কথা গুলো শুনে ফারদিন ওর গালে হাত রেখে বলে উঠলো….
–একদম নার্ভাস হবে না। আমি আছি তো….
প্রতি উওরে ফাইজা হাসলো শুধু। মনে মনে ভাবছে বাসার সবাই নিশ্চয়ই চিন্তায় পা’গল পা’গল অবস্থা? ফারদিন বোধহয় ফাইজার মনের কথা বুঝতে পারলো তাই সে শান্ত কন্ঠেই বললো….
–চিন্তা করো না। বাসার সবাই জানে তুমি আমার সাথে আছো…..
বলেই ফাইজার হাত’টা শক্ত করে আকড়ে ধরে কাকনের সামনে দিয়ে বেড়িয়ে আসলো। দরজার সামনে এসে পেছনে ফিরে একবার মাটি’তে পড়ন্ত নিজের বাবার লা’শ’টার দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাকনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাঁকিয়ে হেসে বেড়িয়ে এলো।
____________________________________________
সারা রাস্তা গাড়ি’তে ফারদিনের বুকে লেপ্টে ছিলো ফাইজা। ফাইজা’দের বাসার নিচে এসে গাড়ি থাম’তেই ফারদিন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…..
–এখনো ভয় লাগছে?
ফাইজা মাথা নাড়িয়ে ক্ষীন আওয়াজে জবাব দিলো….
–উহু ভয় লাগছে না। আপনি আছেন তো…..
বলেই আরেক’টু শক্ত করে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন নিজে মুখ’টা ফাইজার চুলের মধ্যে ডুবিয়ে দিলো। হঠাৎ কিছু একটা মনে করে ফাইজা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…..
–একটা প্রশ্ন করব মিস্টার অভদ্র?
ফারদিন মুখ ডুবিয়েই উওর দিলো…..
–আবার পারমিশন নিতে হয় নাকি…..
ফাইজা পূর্নরায় শান্ত হয়েই বললো…..
–আমি যদি কোনো দিন আপনাকে ছেড়ে যাই তাহলে কি আমাকে ভুল বুঝবেন?
ফাইজার প্রশ্নে ফারদিন আলগা হয়ে বসলো। ফাইজা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর দিকে ভয়ংকর চাহনী দিতেই ফাইজা করুন চোখে তাঁকিয়ে বললো….
–আমি যদি কখনো আপনার থেকে দূরে যাই তাহলে বুঝে নিবেন যে,আপনার ভালোর জন্য’ই আমি আপনার থেকে দূরে গিয়েছি……
ফারদিন ফাইজার কথা শুনে মুখ’টা ঘুরিয়ে নিলো। বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে থমথমে কন্ঠে বললো…..
–বাড়ি যাও……
ফাইজা কোনো কথা না বলে ছলছল চোখে ফারদিনের দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ফারদিন আগের মতোই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। তা দেখে ফাইজা চোখের পানি টুকু মুছতে মুছতে ভেতরে ঢুকে গেলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো…..
“কালকেই আমাকে তনুজা আন্টির কাছে যেতে হবে। একমাত্র সেই আমার প্রশ্নের উওর দিতে পারবে”
#চলবে
[