গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -২২+২৩

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বাইশ

–তুই কোনোদিন মা হতে পারবে না।

কথা’টা শুনতে’ই ফাইজা আঁতকে উঠলো। চোখ থেকে মুহূর্তেই অশ্রুধারা নামতে শুরু করলো। তনুজা ফাইজা’র মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মেয়ের মতো বুকে আগলে নিলো ফাইজা’কে। ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তনুজা ফাইজা’র খালামনি হয়। পেশায় একজন গাইনী ডাক্তার। ছোট বেলায় ফাইজা একটা এক্সিডেন্টে ওর গর্ভধারন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এটা ফাইজা জানত না। তাই আজ নিজের প্রশ্ন গুলোর উওর খুঁজতে’ই ফাইজা সকাল সকাল কলেজে আসার নাম করে এখানে চলে আসে। আর এসেই এত বড় একটা সত্যির মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারছেনা ও। বুকেদ ভেতর ঝড় বইছে। তনুজা স্বান্তনা স্বরে বলে উঠলো…

–মা হতে হলে যে গর্ভ ধারন করতে হবে। নিজের দেহ থেকেই সন্তান জন্ম দিতে হবে এমন’টা নয়। তোর জন্য আমি ফুটফুটে বাচ্চা এনে দিব। দেখবি যা’কে পেয়ে তুই তোর এই যন্ত্রনা নিমিশেই ভুলে যাবি।

বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ফাইজা কান্না মাখা স্বরে বললো….

–যে মানুষ’টা আমাকে পা’গলের মতো ভালোবাসে তাকে আমি ঠকাচ্ছি মনি’মা……

ফাইজার কথায় অনুজা ওর মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে একটু রাগী স্বরে বললো….

–তুই কি করে ভাবলি যে তুই ফারদিন’কে ঠকাচ্ছিস। ফারদিন সমস্ত সত্যি’টা যেনে’ই তোকে ভালোবাসে……..

তনুজার কথায় ফাইজার কান্না থেমে গেলো। ছলছল চোখে তনুজার দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তা দেখে তনুজা একটু হেসে ওর চোখের পানি টুকু মুছিয়ে দিতে দিতে বললো….

—বাচ্চা’দের মতো কাঁদছিস কেনো? আমাদের ফারদিন জামাই বাবা জীবন যদি জানে তার এক মাত্র প্রেয়সী কেঁদে কে’টে একাকার হয়ে আছে। তাহলে কি করবে বল তো?

ফাইজা উচ্ছুক স্বরে প্রশ্ন করে বসলো…..

–উনি সব’টা কি করে জানে মনি’মা?

তনুজা ফাইজার সামনে থেকে উঠে টেবিলে গিয়ে পানি ঢালতে ঢালতে বলে উঠলো…..

–ফারদিন যেদিন তোকে বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে উঠলো। সেদিন তোর বাবা এই একটা ভয়ে ছেলে’টাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তাতে ছেলে’টার চোখে আমি তীব্র যন্ত্রনা দেখেছিলাম। ওর মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম ছেলে’টা তোকে কত’টা ভালোবাসে। ভদ্রতার খাতিরে ছেলে’টা সেদিন তোর বাবার মুখের উপর কথা বলতে পারে’নি। হাতে পায়ে ধরে রিকুয়েষ্ট করছিলো কিন্তু তোর বাবা রাজি হচ্ছিলোনা। সেদিন ও বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। আমিও ওর পেছন পেছন ওর গাড়ির সামনে গিয়েছিলাম। তোর জীবনের বড় সত্যি’টা খুলে বলেছিলাম ও’কে। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে যাই এত বড় একটা সত্যি জেনেও ছেলে’টা এক মুহূর্তের জন্য ভেঙে পড়ে’নি৷ বরং এই বিষয়’টা এক প্রকার পাত্তা না দিয়ে আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলে ছিলো….

“আমি ও’কে ছেড়ে বাঁচতে পারব না বিশ্বাস করুন। নিজের জীবনের সব তিক্ততা ভুলে ও’কে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছি। ওর মা না হওয়া নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই বিশ্বাস করুন। আমার শুধু ও’কেই চাই। আমি কোনোদিন ওর শরীরে এক ফোটা আঁচড় লাগতে দিব না। বাইরের কেউ কোনোদিন এই বিষয় ও’কে কথা শুনাতে পারবে না। একটু বুঝিয়ে বলুন আন্টি আংকেল’কে আমি ও’কে ছাড়া বাঁঁচব না”

বলেই কান্না করে দিয়েছিলো বাচ্চাদের মতো। আমি অবাক নয়নে তাঁকিয়ে ছিলাম৷ একটা ছেলে এতটা ভালোবাসতে পারে কি করে? সেদিন ও’কে কথা দিয়েছিলাম যে করে হোক আমি তোর বাবা-মাকে রাজি করিয়ে তোকে ওর হাতে তুলে দিব। আমি আমার কথা রেখেছি। এত সব কিছুর মাঝে তোর বাবা-মাকে আমি জানাতে পারিনি যে ফারদিন সত্যি’টা জেনেই তোকে মেনে নিয়েছে। ছেলে’টা তোকে খুব ভালোবাসে ফাইজু। তুই খুব ভাগ্যবতী যে এমন কাউকে পেয়েছিস। আর তুই ভাবছিস তুই ও’কে ঠকাচ্ছিস। ব’লদ মেয়ে……

বলেই পানির গ্লাস’টা ওর দিকে এগিয়ে দিলো। ফাইজা কথা না বলে এক দমে পানি টুকু খেয়ে নিলো। ওর এখন নিজেকের সত্যি’ই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যেই ছেলে’টা ও’কে এত বেশি ভালোবাসে আর ও কিনা তাকে’ই ছেড়ে যেতে চাইছিলো। এটা ভেবে নিজের উপর রাগ ও উঠছে। মুখে হাসি ফুটিয়ে তনুজা’কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো…..

–জানো এক বছর আগে আমি তাকে আমাদের স্কুলের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। তখন তো সামনে আমার এস এস সি এক্সাম ছিলো। সেদিন আমার স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে ছিলো। আরজার সাথে কথা বলতে বলতে গেট দিয়ে বের হতে’ই দেখি সে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত ভাঁজ করে দাড়িয়ে ছিলো। ব্লু কালার শার্ট আর ব্লাক জিন্স’এর সাথে ব্লু আর সাদার কম্বিনেশনে সুজ। চোখে ব্লাক সানগ্লাস। মাথায় ব্লাক ক্যাপ ছিলো। একটা মনোমুগ্ধকর লাগছিলো যে আমি হা করে তাঁকিয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করো সেদিন নিজের অজান্তে’ই অনেক ক্ষন দূর থেকে তাঁকিয়ে ছিলাম। তার চোখে সান গ্লাস থাকায় বুঝতে পারিনি সে কোন দিকে তাঁকিয়ে ছিলো। কিন্তু তাও কেনো যেনো আমার মনে হচ্ছিলো ওই মানুষ’টা আমার দিকে তাঁকিয়ে ছিলো। ছোট খাটো ক্রাশ খেয়েছিলাম। তারপর থেকে মাঝে মাঝে দেখতাম সে আমাদের স্কুল গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকতো আবার কখনো দেখতাম গাড়ির ভেতর বসে আছে। তাকে প্রতিদিন দেখার নেশা জন্মেছিলো খুব করে। তাকে যেখানে দেখতাম হা করে তাঁকিয়ে থাকতাম। এভাবে কখন যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেও জানিনা। দিন গুলো কা’ট’তে লাগলো। আমার পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো তখন আর তাকে দেখতে পেতাম না। খুব মন খারাপ হতো জানো। কত দিন কান্না করেছিলাম শুধু তাকে দেখতে পাবোনা ভেবে। তারপর শেষ পরিক্ষার দিন আরজা’কে সাথে করেই স্কুলের সামনে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম তাকে একবার শুধু দেখতে পাবো। কিন্তু, আমাকে তৃষ্ণার্ত চোখ নিয়েই ফিরে আসতে হয়েছিলো সেদিন তাকে দেখতে পাই’নি। আস্তে আস্তে ওই মানুষ’টা আমার মাথায় আঠার মতো লেগে গিয়েছিলো। চাইলেও ভুলতে পারি’নি তাকে একদিনের জন্য। দিন গড়িয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার এক সপ্তাহ পর যখন তাকে নিজের কলেজের নিউ টিচার হিসেবে দেখতে পেলাম। সেদিন আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হয়’নি। মানুষ’টা প্রায় কয়েক মাস পরে দেখে ভেতরের জমানো কষ্ট গুলো চোখের অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়েছিলো সবার আড়ালে। তার এক সপ্তাহ পর ফ্রেন্ড’দের সাথে ইচ্ছেকৃত ভাবে ডেয়ার নিয়ে তাকে রাস্তার মাঝেই নির্ল’জ্জের মতো ভালোবাসি বলেছিলাম। তার বদলে দুইটা থা’প্প’ড় খেতে হয়েছিলো ভরা রাস্তায়। তাও আমার কষ্ট লাগে’নি জানো। শুধু নিজের ফিলিংশ’টাকে ডেয়ার বলে চালিয়ে দিয়েছিলাম। তার যেই রাগ বাবা…..

বলেই আনমনে হেসে উঠলো ফাইজা। অনুজা মন দিয়ে শুনছিলো ওর কথা গুলো। তাহলে মেয়ে’টাও ছেলে’টাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতো। ভাবতেই তার ভালো লাগছে৷ সে হেসে ফাইজার দুই গাল টেনে বলে উঠলো….

–বাবা আমার এই বাচ্চা মেয়ে’টা দেখি অনেক আগেই পেঁকে গিয়েছিলো। এদিকে তার বাবা মেয়ে’ ছোট বলে শুধু শুধু ছেলে’টাকে দূরে থাকতে বলেছিলো…….

কথা’টা শুনতেই ফাইজা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাসতে অনুজা পূর্নরায় বললো…..

–তোরা দুজন সারাজীবন খুব ভালো থাক। কখনো ছেড়ে যাস না ছেলে’টাকে। ভালোবাসা’কে আকড়ে ধরতে হয় ছেড়ে দিতে নেই। ছেড়ে দিলে ভালোবাসা সস্তা হয়ে যায়। অভিমানে ফাটল ধরে সম্পর্কে। তখন না চাইতেও সেই মানুষ’টাকে হারিয়ে ফেলতে হয়….

বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। এই কষ্ট’টা তো তার থেকে ভালো কেউ বুঝতে পারবেনা।
ফাইজা অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠলো….

—এতদিন কেনো সে আমার সাথে মিস বিহেভিয়ার করতো তার কারন’টা বোধহয় আমি বুঝতে পারছি……
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তেইশ

–আমি কোনোদিন মা হতে পারব না জেনেও আমাকে কেনো বিয়ে করলেন? এতটা ভালো কেনো বাসলেন বলেন?

কাল সারারাত ঘুমা’তে পারে’নি ফারদিন অফিসের কিছু কাজ ছিলো। অফিসের সব দায়িত্ব ফারদিন ওদের কোম্পানির ম্যানেজার’কে দিয়ে রেখেছে। শুধু প্রতি সপ্তাহে সব কিছু সঠিক ভাবে চলছে কিনা তা শুধু ফারদিন একবার চেক করে। তার উপর কলেজের এক্সামের খাতা গুলো দেখতে দেওয়া হয়েছিলো। এতদিন ফাইজা’র পেছনে দৌড়ে এইগুলার কথা একদম ভুলে গিয়েছিলো। তাই কাল সারারাত জেগে সব কাজ করে ৬টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ, করেই এক ফোটা জল ওর মুখের উপর পড়েতে’ই ওর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তিকর চাহনী দিতেই ফাইজা’র মুখ’টা ভেসে উঠলো। একবার ভেবেছিলো ও স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ফাইজা যখন ওর বুকের উপর হাত রাখলো তখনি ফারদিনের চোখের সমস্ত ঘুম উবে গেলো। লাফ দিয়ে উঠে বসতে’ই ফাইজা ও’কে আচমকা জড়িয়ে ধরে উপরোক্ত কথাগুলো বলে কান্না করে উঠলো। ফারদিনের চোখ এখনো ঘুমে লাল হয়ে আছে। প্রথমত ফাইজা’কে এইখানে এই সময় আশা করেনি। আর সেকেন্ড, ফাইজা’কে এমন করে কাঁদতে দেখে বিস্মিত হয়ে থম মে-রে আছে ফারদিন। ফাইজার কথা গুলো বুঝে উঠতে’ই ফারদিন ফাইজা’র কান্নার কারন বুঝতে পারলো। তাই নিজেকে সামলে ঘুমকাতুরে কন্ঠেই বলে উঠলো….

–কাঁদছো কেনো এইভাবে?

ফাইজা কান্না ভরা কন্ঠেই আবারো বললো…..

–আপনি বলেন কেনো আমাকে এত’টা ভালোবাসেন?

ফাইজার এমন প্রশ্নে ফারদিন বিরক্তি’তে কপাল কুচকে গম্ভীর কন্ঠে বললো….

–এসব কি প্রশ্ন? সকাল সকাল থা’প্প’ড় খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে নাকি?

ফারদিনের কথায় ফাইজা ফারদিন’কে ছেড়ে ওর দিকে করুন চোখে তাঁকিয়ে বলে উঠলো….

–আমি আপনাকে কোনোদিন বাবা হওয়ার আনন্দ দিতে পারব না তা জেনেও আমাকে কেনো বিয়ে করলেন?

ফাইজার করুন মুখ খানা দেখে ফারদিনের বুকের ভেতর’টা মুচড়ে উঠলো। ফাইজা যে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে তা ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে৷ একটা মেয়ের জন্য মা না হতে পারার কষ্ট কত’টা বিশাল তা ফারদিন বুঝতে পারছে। তাই ফাইজা’কে শান্ত করতে ওর দুই গালে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো….

–বাবা হওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবো কে বললো তোমাকে ব’লদ মেয়ে? আমরা একটা না দুইটা পুরো একটা ক্রিকেট টিম বানাবো দেখো। তারা সারাদিন এই রুমের মধ্যে হাটবে, খেলবে,। আর আমরা দুজন ওদের দেখে চোখ জুড়াব।

বলেই ফাইজার চোখের পানিয়া গুলো মুছিয়ে দিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর কানের পাশে চুল গুলো গুঁজে দিতে দিতে বললো….

–আমার শুধু তুমি হলেই চলবে বুঝলে জান…….

ফারদিনের ভালোবাসা দেখে ফারদিনের প্রতি বিশ্বাস আর সম্মান’টা ওর দ্বিগুন বেড়ে গেলো। একজন পুরুষ কত’টা ভালোবাসতে পারে তা ফারদিন’কে না দেখলে ফাইজা’ বুঝতে পারতো না।
ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো আবারো কেঁদে উঠলো। ফাইজা’কে এমন করে কাঁদতে দেখে কেনো যেনো ফারদিনের হাসি পেলো সাথে ফাইজা’কে রাগানোর জন্য একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এলো। ফাইজা দুই ঠোঁট দুলিয়ে কান্না করে উঠতে’ই ফারদিন টুপ করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। এতে ফাইজার চোখ গুলো আপনা-আপনি বড় হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ফাইজা’র ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ফারদিন মুখ’টা কুচকে বলে উঠলো….

–ছিঃ জান তুমি কান্না করে চোখের পানি দিয়ে এই মিষ্টি ঠোঁট’টাকে লবনাক্ত করে দিয়েছো। কোথায় ভেবেছিলাম সকাল সকাল বউ’য়ের ঠোঁটে’র মিষ্টি খেয়ে দিন’টা শুরু করব। তা না আমার বউ লবন দিয়ে আমার মুখ’টা লবনাক্ত করে দিলো…..

বলে ফারদিন ও দুষ্টুমি করে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলালো। ফারদিনের কথায় আর কাজে ফাইজা চোখ বড় করে ড্যাব ড্যাব করে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তা দেখে ফারদিন আবারো দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বললো…..

-আমাকে আরেক’টা চুমু খাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে লবনাক্ত মুখ’টা মিষ্টি করিয়া দেন ম্যাডাম প্লিজ…..

বলেই ফাইজার দিকে ঝুঁকে আসতে’ই ফাইজা জোরে “নাহহ” বলে পেছনে পিছাতে নিলেই খাট থেকে পড়ে যেতে নিলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলতে’ই দেখলো একটা শক্ত করে ওর হাত দুটো ধরে আছে। চোখ খুলে বড় একটা হাফ ছেড়ে বলে উঠলো….

–বাবা গো এক্ষুনি আমার কোমড়ের সব গুলো হাড় ভে’ঙে গুড়ো হয়ে যেতো।

ফাইজা কথা’টা বলতে’ই ফারদিন এক টানে ফাইজা’কে নিজের কাছে টেনে ওর নাকে নাক ঘ’ষতে ঘ’ষতে বললো….

–আমি থাকতে তোমার হাড় ভা’ঙা তো দূরের কথা তোমার শরীরে সামান্য আঁচড় ও লাগবে না জান….

মুখে একটু মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে ফাইজা ফারদিনের গাল দুটো টেনে বলে উঠলো…..

–তোমার গাল দুটো একদম রসোগোল্লার মতো জান। বড় একটা কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে……

বলেই শব্দ করে হেসে দিলো। ফারদিন বুঝতে পারলো ফাইজা ও’কে নকল করার জন্য কথা’টা বলেছে। তাই ফাইজার সাথে সাথে নিজেও হেসে দিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো……

–তাহলে চলো খাওয়া শুরু করা যাক…..

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা জোরে চেঁচিয়ে খাট থেকে কোমড়ে হাত রেখে রাগী চোখে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বললো…..

–আপনি একটা অস’ভ্য, নির্লজ্জ, বে’হায়া ছেলে। ছিঃ কোনো কথা মুখে আটকায় না। আপনার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে। আমি চললাম ……

বলেই ফাইজা দরজার দিকে পা বাড়াতে’ই ফারদিন তাড়াতাড়ি উঠে এসে ফাইজার হাত টেনে ধরলো। এত ক্ষনে ফাইজা খেয়াল করলো ফারদিন খালি গায়ে। আসলে খাটের উপর যখন ছিলো তখন ফারদিনের গায়ে পাতলা কম্বল ছিলো তাই খেয়াল করে’নি। ফারদিন’কে খালি গায়ে দেখতে’ই ফাইজা চোখে হাত দিয়ে বলে উঠলো…..

–ছিঃ আপনার একটু ও লজ্জা শরম নেই। একদম কাছে আসবেন না। আগে টি-শার্ট পড়ে নিন প্লিজ। আমার খুব লজ্জা করছে…

ফাইজার কথায় ফারদিন হেসে একটা টি-শার্ট পড়ে নিলো ঝটপট। সত্যি বলতে ওর নিজের ও খালি গায়ে ফাইজার সামনে থাকতে অস্বস্তি লাগছে। টি-শার্ট পড়ে নিয়ে নিজেই ফাইজার হাত দুটো সরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো…..

–এত লজ্জা পেতে হবেনা জান। আমি তো তোমার এই বলো। তাই আমার সবেই তোমার…..

ফারদিনের নির্লজ্জের মতো কথা বার্রা শুনে ফাইজার কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। ফাইজা কানে হাত দিয়ে রাগী ফেস করে বললো…..

–আল্লাহ্ রস্তে চুপ করুন। আমার কান দিয়ে সত্যি সত্যি ধোয়া বের হচ্ছে। আপনি কি দিয়ে তৈরি বলুন তো? মুখে লাগাম ছাড়া মানুষ একটা…….

ফারদিন ও ফাইজা’র কথায় শব্দ করে হেসে বলে উঠলো…..

—ইউ আর রাইট জান। তুমি কাছে আসলে আমি পৃথিবীর সব থেকে নির্লজ্জ ব্যাক্তি হয়ে যাই। কি করবো বলো?

ফাইজা প্রসঙ্গ বদলা’তে বলে উঠলো….

–দেখুন সকাল সকাল না খেয়ে বের হয়েছি। আমার জন্য খাবার ব্যবস্থা করুন যান। আপনার বাসায় প্রথম বার এসেছি। কোথায় আপনি চা নাস্তার ব্যবস্থা করবেন তা না করে এইসব করছেন?

ফাইজার কথায় ফারদিন দুষ্টু হেসে বলে উঠলো….

–তুমি কাছে থাকলে আমার চা নাস্তা লাগবে না জান…..

ফারদিনের কথায় ফাইজা মুখ বাঁকিয়ে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। আর ফারদিন রুমের বাইরে চলে গেলো। ফাইজা বেলকনি’তে এসে নিচে তাঁকিয়ে রইলো মুগ্ধ দৃষ্টি’তে। নিচের তাঁকিয়ে রইলো ফুল ভর্তি বাগানের দিকে। কত রকম ফুল দিয়ে ভরা বাগান। আর আকাশে মেঘ জমেছে। চারদিক’টা কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে আছে৷ কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ ভে’ঙে’ নামবে জলধারা।
ভাবতে না ভাবতে হালকা হালকা বাতাস আর টুপ টাপ বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। গ্রীলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে দিলো বৃষ্টির স্পর্শ পেতে। কারোর পায়ের শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরতে’ই দেখলো ফারদিন দুই হাত কফি মগ নিয়ে হাজির। গরম কফির মগ থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। ফারদিন কফির মগ দুটো বেতের টেবিলের উপর রেখে ফাইজা’র দিকে পা বাড়ালো। ফারদিন’কে এগিয়ে আসতে দেখে ফাইজা পিছিয়ে যেতেই গ্লীলের সাথে লেগে গেলো। ফারদিন এসে ফাইজার কোমর দুই হাতে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। বাইরের থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ফোটা এসে ও’দের হালকা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে ফাইজার অবাধ্য চুল গুলো খোলা মনে উড়ছে। আর ফারদিন ঘোর লাগা চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে। দুজন দুজনের চোখে তাঁকিয়ে রয়েছে আনমনে। ফাইজা মনে মনে ভাবছে এই সময়’টা যেনো এখানেই থামকে যায়……

#চলবে

)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here