গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -৩২+৩৩+৩৪

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বত্রিশ

–আপনার লজ্জা করলো না। যে মানুষ’টা আপনাকে ভাই এর আসন দিলো। সেই মানুষ’টার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে আপনার বিবেকে বাধলো না……..

ফাইজা চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। শরীর থেলে প্রচুর রক্ত ঝড়ে যাওয়ায় ফলে ওর শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। চোখ মেলার শক্তি অব্দি নেই। বুকের ক্ষত’টা ব্যান্ডেজ করা। কাল থেকে না খাওয়া সব মিলিয়ে নিরবের দম ফুরিয়ে আসচ্ছে। তিথী’র অবস্থা বেশি খারাপ না হলেও অভুক্ত থাকায় সেও দূর্বল হয়ে পড়েছে। তিথী নিরব দুজনেই খুব কষ্ট চোখ খোলা রেখেছে। আর সামনেই ফারদিন মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফাইজা’র চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও ভয়ংকর রেগে আছে। ফাইজার কথার জবাবে নিরব ওর দিকে অসহায় চোখে তাঁকিয়ে রইলো। কিছু বলার মতো শক্তি নেই ওর। তিথী অস্পষ্ট স্বরে “পানি” চাইতে ফারদিন গার্ড’দের ইশারা করতে একজন এক গ্লাস পানি এনে দিতেই তিথী এক চুমুকে’ই সব পানি খেয়ে ফেললো। তাও ওর তৃষ্ণা ফুরাচ্ছেনা। শরীরে কিছু’টা শক্তি ফিরে পেতে তিথী হালকা হেসে নিঁচু স্বরেই বলে উঠলো……

–তোর মা_বাবা’কে প্রথমে উপরে না পাঠিয়ে তোকে উপরে পাঠানো দরকার ছিলো। তোর পাশে আমার ফারদিন’কে একটুও মানাচ্ছে না। মন চাচ্ছে একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তোকে খন্ড বিখন্ড করে ফেলি……

তিথী’র কথা শুনে ফারদিন রেগে ওর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে’ই ওর কানে থা’প্প’ড় এর শব্দ ভেসে আসলো। তা দেখে ফারদিন হালকা হেসে আবার থেমে গেলো। তিথী কথা বলা শেষ না করতে’ই ফাইজা ওর গালে পর পর দুইটা থা’প্প’ড় দিয়ে উঠলো। তারপর তিথী’র গাল চে’পে ধরে অগ্নী ঝড়া চাহনী দিয়ে বলে উঠলো……

–আমাকে খুব বোকা মনে হয় তোর। লজ্জা করছেনা একটুও। দুইটা মানুষ তোর জন্য নিজেদের জীবন হারালো। তোর মধ্যে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা হচ্ছে না……….

ফাইজার কথা শুনে তিথী শব্দ করে হাসতে লাগলো। এখনো তিথী’কে হাসতে দেখে ফারদিন ফাইজা দুজনে’ই বেঁকুব হয়ে আছে। তিথী হাসতে হাসতে বলে উঠলো…….

—অনুশোচনা মাই ফুট। পৃথিবী থেকে দুইটা আবর্জনা দূর হয়েছে এতে অনুশোচনা হওয়ার কি আছে। আমি ত…..

আর বলতে পারলো তার আগে’ই ফারদিন একটা ধারালো ছু’ড়ি সোজা তিথী’র মুখে ঢুঁকিয়ে দিলো। চোখের পলকে তিথীর দুই ঠোঁট কে’টে থেতলে গেলো। মুখ দিয়ে গলগল করে র’ক্ত পড়তে লাগলো। তাতে তিথী চিৎকার করে উঠলো না। ফাইজা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারদিন ছু’ড়ি’টা ওর মুখ থেকে বের করে এনে সোজা গলায় বসিয়ে দিলো। এতে তিথী এইবার যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। ফারদিন এইবার দাতে দাত কড়মড় করতে করতে বলে উঠলো…

–তোর শাস্তি’টা কম হয়ে গেলো। তোকে আরো ভয়ং’কর ভাবে মা-রতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তোর মুখ’টা এই মুহূর্তে বন্ধ করা খুব দরকার ছিলো…….

বলে রিভলবার নিয়ে তিথী’র মাথা বরাবর শুট করে দিলোম তিথী ছটফট করতে করতে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নিরব দশর্ক হয়ে সব’টা দেখছে নিশ্চুপ। ফাইজা ভয়ে কাঁপছে দেখে ফারদিন ও’কে এক হাতে বুকের মধ্যে চে’পে ধরলো। নিরব এতক্ষনে এইবার অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো……..

–তিথী মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলো। তাই ওর বিহেভিয়ার এমন ছিলো…….

কথা’টা শুনে’ই ফারদিন ফাইজা দুজনে’ই বিস্ফোরিত চোখে নিরবের দিকে তাঁকালো। ওদের প্রশ্নোত্তর চোখে তাঁকাতে দেখে নিরব মাথা নাড়ালো।
ফাইজা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে করুন স্বরে প্রশ্ন করলো……

–আপনি কেনো এমন করলেন নিরব ভাইয়া? আপনি তো আমাকে বোনের মতো আগলে রেখেছিলেন। তাহলে কেনো এমন করলেন?

ফাইজার প্রশ্নের উওরে নিরব একটু হাসলো। সাথে সাথে ওর চোখ দিয়ে অশ্র ফোটা গড়িয়ে পড়লো। নিরব করুন স্বরে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…….

–চার বছর আগে তোমাকে দেখেছিলাম নিজের বাবার সাথে হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলে। একটা বাচ্চা’ মেয়ে’টা হাতে আইস্ক্রিম খেতে খেতে লাফাতে লাফাতে বাবার সাথে হাটছিলো। দেখে চোখ ফেরাতে পারিনি৷ মেয়ে’টা সৌন্দর্য আমাকে ঘিরে ধরেছিলো ভীষন ভাবে। সেদিন থেকে চেয়েও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনি। প্রতিদিন তোমাকে দেখার জন্য ছুটে যেতাম। এভাবেই কেটেছিলো সময় যেদিন ফারদিনের থেকে শুনলাম আমি যাকে ভালোবাসি। সেই বাচ্চা মেয়েটা’কেই ফারদিন ভালোবেসে বিয়ে করে নিয়েছে। সেদিন প্রচন্ড আঘাতেও শুধু ফারদিনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে নিজের ভালোবাসা’কে ভুলে ছিলাম। অনেক মাস পর যখন তোমাকে আবার হসপিটালে দেখলাম তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। ফারদিনের প্রতি রাগ আর তোমাকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খায় তিথীর সাথে হাত মিলিয়ে সবার আগে তোমার বাবা-মা কে সরিয়ে দেওয়ার প্লান করলাম। এতে তুমি ভেঙে যাবে আর যখন জানবে এসব তিথী করেছে তখন ফারদিনের প্রতি রাগে ওর সাথে সম্পর্ক’টা নড়বড়ে হয়ে যাবে। আর এই সুযোগ’টা কাজে লাগিয়ে তোমাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টায় আমি মগ্ন থাকতে পারব। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি…….

এতক্ষন চুপ করে শুনলেও ফারদিন এখন আর সহ্য করতে পারলো না। ফাইজা ঘৃনা ভরা চোখে নিরবের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফাইজা কিছু বলে উঠার আগেই ফারদিনের বুকে আঘাত করা স্থানে আবারো আঘাত করে উঠলো। এতে নিরব এইবার গলা ফাটিয়ে আতৎনাদ করে উঠলো। ফাইজা ভয়ে চোখ হাতে দিয়ে কাঁপছে। ফারদিন ছু’ড়ি’টা নিরবের গলায় ধরে বলে উঠলো….

–তুই পেছন থেকে আঘাত করেছিলি। আমি সামনে থেকে করলাম……

বলেই এক টান দিতেই গলার দিক’টা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। ফিনকি দিয়ে লাল র’ক্ত স্রোতের মতো বের হতে লাগলো। নিরবের ছটফটা’নি দেখে ফারদিনের চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ফারদিন নিরবের সামনে ধপ করে বসে পড়ে কান্নারত স্বরে বলে উঠলো….

–আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ। তোকে তো নিজের ভাই ভাবতাম। কেনো এমন করলি বল? যদি তুই ফাইজা’কে এত’টা কষ্ট না দিতি তাহলে আজ তোকে ও এত’টা আঘাত করতাম না আমি…….

বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো ফারদিন। সত্যি নিরব’কে তো ও নিজের ভাই ভাবতো৷ খুব ভালোবাসতো৷ আর সেই মানুষ’টার থেকে পাওয়া আঘাত কিছু’তেই সহ্য করতে পারছেনা ও। ফাইজা ফারদিনের পাশে বসে ফারদিন’কে আগলে নিলো। দুজনেই নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলছে।
____________________________________________
পূর্নিমার চাদ’টা থালার মতো হয়ে চারদিকে আলোয় আলোকিত করে রেখেছে। ছাদের এক কোনে দোলনায় বসে আছে ফারদিনের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে আছে ফাইজা। আজ সকালেই ফাইজা’কে নিয়ে ফারদিন চলে এসেছিলো। এখন ফারদিনের বাসায় আছে ফাইজা। ওদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। ১৫ দিন পরে’ই দুজন সারাজীবনের জন্য একসাথে হবে। ফারদিন আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–আমি কিছু’তেই মেনে নিতে পারছি না। আমি খুব খারাপ মানুষ তাইনা জান। নিজের হাতে চার’টা জীবন নিয়েছি। অপবিত্র হয়ে গেছি আমি৷ নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে। যাদের আমি শাস্তি দিলাম এখন ওদের আর আমার মাঝে কোনো তফাৎ রইলোনা। আমিও ওদের মতোই খু’নী হয়ে গেলাম। আমি নিরব’কে মা/রতে চাইনি বিশ্বাস করো। ও’কে তো খুব বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু ওর বিশ্বাস-ঘাতকতা’টাও মেনে নিতে পারছিলাম না। আমার উপর তোমার ঘৃনা হচ্ছে তাইনা। হবেই তো আমার জন্য আন্টি, আংকেল’কে হারাতে হলো।
নিজের বাবা’কে যে ছেলে খু/ন করতে পারে সে কাউকে ভালোবাসতে পারেনা। কাউকে না……

বলে ফারদিন হুট করে উঠে নিচে নেমে এলো। ফাইজা ও’কে আটকালো না। নিশ্চুপ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। মানুষ’টা নিজে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে ফাইজা। কাছের মানুষ’গুলোর থেকে সেই ছোট থেকে ধোকা খেয়ে আসচ্ছে। আর কত বার ঠকতে হবে ছেলে’টাকে?
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তেত্রিশ

–তুমি যদি আমাকে ছেড়ে না যেতে তাহলে আজ আমার জীবন’টা এমন হতো না মা। তুমি স্বার্থপরের মতো কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? ছোট থেকে ধোকা খেতে খেতে আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি মা। আর পারছিনা। যাকে ভাই ভেবেছিলাম দেই সব থেকে বড় আঘাত’টা দিলো আমাকে। আমি সত্যি পারছিনা মা। অপরাধবোধে ধুকে ধুকে ম’রে যাব। আমি খু/নী হয়ে বাঁচতে পারব না মা। আবার ম’রতেও পারব না। তাহলে আমি কি করব মা? প্লিজ বলে দাও তুমি?

ফারদিন ওর মায়ের ছবির সামনে দাড়িয়ে কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। নিঃশব্দে চোখের পানি টুপটাপ করে পড়ছে ওর। বুকের ভেতরের যন্ত্রনা অপরাধ বোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মন’কে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না যে, ও অন্যায় কারীদের নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছে। তাহলে, কেনো নিজেকে অপরাধী ভাবছে? ফারদিনের প্রতি মুহূর্ত মনে হচ্ছে ও খু’নী। অন্যায় করেছে৷ শাস্তি পাওয়া দরকার। শাস্তি পাওয়া দরকার কথা’টা মাথায় আসতে’ই ফারদিন পাগলের মতো উঠে রুমে কিছু খুঁজতে লাগলো। ড্রয়ার খুলতে’ই একটা ধারালো ছু’ড়ি নিয়ে চোখ বন্ধ করে হাতের তালুতে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। তাও থামছে না। ফাইজা নিচে নেমে ফারদিনের রুমের সামনে এসে এই দৃশ্য দেখে ওর হার্টবিট থেমে গেলো। ভয়ার্ত স্বরে চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে ফারদিনের হাত থেকে ছু’ড়ি’টা ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–কি করছেন আপনি? পাগল হয়ে গেছেন? মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার? কি করব এখন? কত রক্ত বের হচ্ছে।

ফারদিনের হাত থেকে রক্ত পড়া দেখে ফাইজা’র মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেলো। ভয়ে হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। মাথা কাজ করছেনা। আর ফারদিন নিশ্চুপ হয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রয়েছে একই ভাবে। আর ফাইজা চারপাশে কিছু খুঁজে না পেয়ে ওড়না দিয়েই হাত প্যাচানো শুরু করলো। গলা ফা’টিয়ে চিৎকার করে সায়মা খানম’কে ডাকতে লাগলো। ফারদিন’কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফাস্ট এইড বক্স বের করলো। সায়ম খানম চেঁচামেচি শুনে হন্তদন্ত হয়ে প্রানের টুকরো নাতি’কে এই অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো।

—কি করে হলো এসব? কত র’ক্ত বের হচ্ছে। কি করে হলো এসব নানুভাই?

সায়মা খানমের অস্থিরতা দেখে ফারদিন বড়ো একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর ঠোঁট চেপে নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলো…..

–আমি ঠিক আছি দীদা।

সায়মা খানম চিন্তায় অস্থির হয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি ঠিক নেই। আমি এক্ষুনি ডাক্তার’কে ফোন দিচ্ছি…..

বলে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো….

–তুমি একটু দেখো রক্ত পড়া’টা অফ করতে পারো কিনা….

বলেই হন্তদন্ত পায়ে আবারো বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। সায়মা খানম চলে যেতে ফাইজা ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে সেভলন আর সামান্য তুলো নিয়ে ক্ষত স্থানে চেপে ধরলো। ফারদিন ব্যাথায় আর জ্বালায় চোখ মুখ খিচে আছে। ফাইজা টলমলে চোখে একবার ফারদিনের দিকে আরেক বার ক্ষত স্থানে ভালো করে সেভলন লাগাচ্ছে কিন্তু কিছু’তেই রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছেনা। ফাইজার মনে হচ্ছে ওর কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। ছেলে’টা খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছে? ফারদিনের হাতে মনে মচ্ছে কেউ মরিচের গুড়ো ঢেলে দিছে। ওর এই সামান্য আঘাতে’ই এত’টা যন্ত্রনা হচ্ছে তাহলে নিরব’কে যেভাবে আঘাত করেছিলো ওর কত’টা যন্ত্রনা হয়েছে। ভাবতে’ই ফারদিন আবারো এক টানে ফাইজার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। পাগলের মতো উঠে রুমের সব জিনিস পত্র ভাঙ্গতে লাগলো। ফাইজা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে টলমলে চোখে সব’টা দেখছে কিন্তু ফারদিন’কে থামানোর চেষ্টা করছে না। ফারদিন শেষ ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় একটা ভাজ ছুড়ে মা’রতেই আয়না’টা ভেঙে চূর্নবি-চূর্ন হয়ে গেলো। ফারদিন তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে একটা কাচ নিয়ে আবারো নিজের হাতে আঘাত করার জন্য প্রস্তুত হতে’ই এইবার আর ফাইজা চুপ করে রইলো না। ছুটে গিয়ে ফারদিনের থেকে কাচ ‘টা ফেলে দিয়ে সজোরে ফারদিনের গালে একটা থা’প্প’ড় মে/রে বসলো। ফারদিন অশ্রু ভর্তি চোখে নিচে তাঁকিয়ে আছে। ফাইজা এইবার রেগে ফারদিনের দুই গালে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো……

–আমার দিকে তাঁকান।

ফারদিনের দৃষ্টি এখনো নিচের দিকে। এইবার ফাইজা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে বললো…..

—আমার দিকে তাঁকাতে বলছি৷ আপনি শুনতে পাচ্ছেন না। নাকি শুনেও না শোনার ভান করছেন। তাঁকান আমার দিকে….

ফারদিন ফাইজার দিকে করুন চোখে তাঁকাতে’ই ফাইজা চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–কি চান আপনি? কেনো এমন করছেন? ম’রে যেতে চান?

ফাইজার রাগী স্বর শুনে ফারদিন ফাইজা’কে আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর হাতের রক্ত দিয়ে ফাইজার জামা র’ক্তে ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই। ফারদিন ফাইজা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা স্বরে বলে উঠলো….

–আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার এইটুকু আঘাতে যন্ত্রনায় ছটফট করতে মন চাচ্ছে। আর আমি পা’ষানের মতো নিরব’কে কতগুলো আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছি। ওর খুব কষ্ট হয়েছিলো। আমি এইসব থেকে বের হতে পারছিনা। বার বার চোখের সামনে নিরবের চেহারা’টা ভেসে উঠছে। আমি কিছুতে’ই এইসব ভুলতে পারছিনা। দম আটকে যাচ্ছে আমার। আমি এই বোঝা বয়ে বেড়াতে পারছিনা। কিছুতেই পারছিনা। পারছি……

আর কোনো শব্দ কানে আসলো না ফাইজা। ফারদিন শান্ত হয়ে যেতেই ফাইজা সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারলো অতিরিক্ত চাপে ফারদিন সেন্সলেস হয়ে গেছে। এত ভারী একটা শরীর ফাইজার একার পক্ষে সামলানো কষ্টকর। সারা ঘরে জিনিসপত্র ভর্তি। কাচ গুলো পায়ের সামনে যেকোনো সময় কে’টে যেতে পারে। সামনে খাট ছিলো বিধায় ফাইজার একটু সুবিধা হলো। কষ্ট করে খুব সাবধানে ফারদিন’কে বিছানায় সুয়ে দিলো। হাত’টা’কে কোনো মতে রক্ত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ প্যাঁচাতে লাগলো। যে করে হোক ডাক্তার আসা অব্দি তো র’ক্ত পড়া বন্ধ করা লাগবে। ফারদিনে অবস্থা দেখে ফাইজার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তাও নিজেকে সামলে ফারদিনের হাত’টা কোনোমতে ব্যান্ডেজ প্যাচিয়ে রেখে সারারুম গুছানো শুরু করলো। কয়েক মিনিটের মাথায় একজন সার্ভেন্ট’কে ডেকে এনে দুজনে মিলে রুম’টা গুছিয়ে নিলো। রুম’টা গুছানো শেষ হতে না হতে সায়মা খানমের সাথে একজন ডাক্তার ভেতরে ঢুকলো। ফাইজা আর সায়মা খানম দুজনে’ই এক কোনে দাড়িয়ে আছে৷ দুজনের চোখেই পানি। সায়মা খানম ফাইজা’কে এক হাতে জড়িয়ে রেখেছে নিজের সাথে। ফারদিনের হাতে দুইটা সেলাই লেগেছে। ডাক্তার ফারদিন’কে ভালোভাবে চেক করে বলে উঠলো…..

–হয়তো ও কোনো ট্রোমার মধ্যে আছে। এই অবস্থায় ওর মেন্টালি সার্পোট দরকার। সব সময় ও’কে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করো৷ নয়তো এমন কয়েকদিন থাকলে ও সু’ই’সা’ইডের মতো ভয়ংকর ডিসিশন নিতেও একবার ভাববে না।

কথাগুলো শুনে ফাইজা কেঁপে উঠলো ভয়ে। ছেলে’টাকে আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে। ছোট থেকে তো কম কষ্ট পায়’নি। আর কত কষ্ট পাবে। ডাক্তার সব ওষুধ বুঝিয়ে চলে যেতে’ই সায়মা খানম তার সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো ফাইজা’কে রেখে। সবাই যেতেই ফাইজা ফারদিনের মাথায় সামনে বসে ওর মাথায় আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ছেলে’টা সত্যি এই আঘাত’টা সহ্য করতে পারছেনা। সর্বশেষ নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড নামক ভাই’টা এভাবে ভেঙে দিবে ও’কে ভাবতেও পারেনি ছেলে’টা। ফাইজা ফারদিনের মুখ পানে তাঁকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

–আপনি প্লিজ ঠিক হয়ে যান। আপনাকে এভাবে আমি দেখতে পারছিনা। কষ্ট হচ্ছে আমার। সব ভুলে খুব শিঘ্রই আমরা নতুন করে সব শুরু করব। আপনি ঠিক হয়ে উঠুন প্লিজ……..
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চৌত্রিশ

জ্ঞান ফিরতে’ই ফাইজা’কে খাটের সাথে মাথা হেলিয়ে ঘুমান্ত অবস্থায় দেখে ফারদিনের কিছু’টা মায়া হলো। মেয়ে’টা সারারাত বোধহয় জেগে থেকে সকালের দিকে ঘুমিয়েছে। হাতের মধ্যের এখনো ব্যাথায় টনটন করছে। মাথায় ও যন্ত্রনা অনুভব করছে। ফাইজা’র মুখের দিকে তাঁকিয়ে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ওর? মেয়ে’টা পর পর সব ধাক্কা গুলো সামলাতে পারছেনা। ফারদিন এক হাতে ভর করে উঠে বসে ফাইজার মাথা’টা বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাইজা ও ঘুমের ঘোরে ফারদিনের বুকে জড়োসড়ো হয়ে রইলো। ফারদিন ব্যান্ডেজ প্যাচানো হাত’টা ফাইজা’র মাথায় রাখলো। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো ঘন কালো চুলে। তারপর করুন স্বরে নিজে নিজে বলতে লাগলো……

—আর কষ্ট দিব না তোমাকে জান। খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা। নিজেকে ঠিক করে নিব। তুমিই তো আমার বেঁচে থাকার সম্বল।

বলে নিজেও ফাইজার মাথার সাথে নিজের মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে নিলো। কিছুক্ষন পর দরজায় কেউ নক করতে’ই ওরা দুজন ধড়ফড়িয়ে উঠলো। ফাইজা ঘুম ঘুম চোখে তাঁকিয়ে দেখলো ও ফারদিনের বুকে। ফারদিনের জ্ঞান ফিরেছে ভেবে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটলো। ফারদিন ও ঘুমে চোখ মেলতে পারছেনা। ওষুধের কড়া ডোজের কারনে ঘুম যেনো চোখের থেকে নড়ছে’ই না। ফাইজা ঘুম জড়ানো কন্ঠে’ই বললো….

–আপনি ঠিক আছেন?

ফারদিন ঠিক করে বিছানায় সুয়ে পড়তে পড়তে বললো…

–তুমি পাশে থাকলে আমি এমনিতেই খুব বেশি ভালো থাকি…..

বলে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফাইজা ও আর কথা না বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা তো খোলা রয়েছে তাও কে নক করলো? ফাইজা দরজার সামনে যেতে’ই জেহের কে দেখে মুখে হাসি টেনে জেহের কে একটু জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো…..

–তুই কখন আসলি ভাই?

জেহের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো….

–আমি মাত্র’ই এসেছি। আর এখন থেকে এখানেই থাকব আই মিন আমাদের বাড়ি’তে।

প্রতি উওরে ফাইজা হাসি ছাড়া আর কোনো উওর দিলো না। কারন আগে’র থেকেই জানতো জেহের চট্রগ্রাম থেকে এখানে চলে আসবে। জেহের আবারো প্রশ্ন করে উঠলো….

–ফারদিন কেমন আছে? দীদার কাছ থেকে শুনলাম সব’টা…

ফাইজা একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো…

–ছোট থেকে একটা মানুষ ধোকা খেতে খেতে বড় হয়েছে। আর সেই স্কুল লাইফ থেকে যাকে এত বছর ধরে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখে এসেছে তার থেকে এই ধাক্কা’টা সে সামলাতে পারছে না ভাইয়া। খুব বেশি ভালোবাসতো নিরব ভাইয়াকে তাই এসব কিছু থেকে সে বের হতে পারছে না……..

জেহের কিছুক্ষন চুপ করে থেকে চিন্তিত স্বরে বললো….

–তোদের বিয়ে’টা ভালোয় ভালোয় মিটে যাক। তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। চিন্তা করিস না…..

বলতে না বলতে ওর ফোনে মেসেজের আওয়াজ ভেসে উঠতে’ই জেহের ফাইজা’কে বলে নিচে নেমে এলো। আর ফাইজা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলো।
____________________________________________
ভরদুপুরে ফুটপাতে দাড়িয়ে আছে আরজা। রোদের জন্য ঠিক করে তাঁকানো যাচ্ছেনা। বিরক্তি’তে চোখ মুখ কুচকে রেখেছে। হাতের বই’টা মাথার উপর ছাতার মতো ধরে রেখেছে। অনেক ক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত চলে এসেছে ওর। মনে মনে একজনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে। ঘড়ি দেখতে দেখতে পেছনে ফিরে’ই ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে নিলে ভয়ে চিৎকার করে সামনের ব্যাক্তি’টার শার্ট খামচে ধরলো। চোখ মুখ খিচে’ই বলে উঠলো….

–এই আপনি চোখে দেখতে পারেন না। রাস্তা ঘাটে মেয়ে দেখলে খালি ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে। আজব….

আরজা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তাই সামনের ব্যাক্তি’টাকে না দেখেই এইসব বলে উঠলো। সামনের ব্যাক্তি’টা ওর কথা শুনে রাগী স্বরে বলে উঠলো….

–তুমি বোধহয় রাস্তা ঘাটে ছেলে দেখলে এভাবেই ঝাপিয়ে পড়ো……

চেনা কন্ঠ পেয়ে আরজা ফট করে চোখ খুলে জেহের’কে দেখে আরো ভয় পেয়ে শার্ট ছেড়ে দিলো। এবার ও পড়ে যেতে নিলে জেহের এক টানে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় আরজা’কে। ঘটনার আকস্মিকতায় আরজা বড় বড় চোখ করে আছে। জেহের নিজেকে সামলে আরজা’কে পাশে দাড় করিয়ে আবারো রাগী স্বরে বললো……

–রাস্তা ঘাটে দেখে শুনে চলতে পারো না।

আরজা তোতলানো স্বরে বলে উঠলো….

–আপনি হুট করে এভাবে এসে দাড়ালেন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম…..

আরজার মুখ’টা দেখে জেহেরের খুব হাসি পাচ্ছে। তাও নিজের হাসি’টা চে’পে রেখে ওর দিকে রাগী চাহনী দিয়ে রইলো। আরজা ঢোক গিলে বলতে লাগলো….

–দেখুন আপনার সাথে ঝগড়া করার জন্য আমি আপনাকে আসতে বলিনাই।

জেহের এইবার ভ্রু কুচকে বললো…..

–তাহলে আপনি কেনো আমাকে এই ভর দুপুরে এখানে ডাকলেন?

আরজা চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে জেহের দিকে তাঁকালো। ওর চাহনী’তে অন্য কিছু খেয়াল করে জেহের ও শান্ত হয়ে তাঁকিয়ে রইলো। আরজা জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে শান্ত স্বরেই বলে উঠলো…..

–আমি নিজের মনের কথা চেপে রাখতে পারিনা জানেন তো৷ তাই সোজাসুজি বলছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি জেহের ভাইয়া……

আরজার কথা শুনে জেহের একটুও চমকালো না। মনে মেনে তৃপ্তির হাসি হেসে নিলো। তাও মুখ গম্ভীর করে বলে উঠলো…..

–ভালোবাসি বলছো আবার ভাইয়া বলছো। আমি ঠিক কোন’টা ধরে নিব বলো তো?

জেহেরের খাম খেয়ালি কথা শুনে আরজা অসহায় ভাবে ওর দিকে তাঁকাতে’ জেহের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো…..

–যাক এসব বাদ দেই। আসল কথায় আসি। এইসব ভালোবাসা টালোবাসার ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলো। আমার জীবনে একজন আছে যাকে আমি নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। বুঝেছো বাচ্চা। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। তুমি এখনো অনেক ছোট তাই বুঝতে পারছো না। ভালো লাগা’কে ভালোবাসা নাম দিচ্ছো। কয়েকদিন পর ঘোর কেটে যাবে। তাই এইসব বাদ দিয়ে এইবার বাড়ি যাও বাচ্চা।

বলেই আরজার নাক’ হালকা করে টেনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে’ই আরজা ওর হাত’টা টেনে ধরলো। টলমলে চোখে বিস্ফোরিত চাহনী দিয়ে কান্না ভেজা স্বরে বলতে লাগলো…..

–বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে মেনে নিতে না পারেন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার ভালোবাসা’কে অপমান করবেন না……

আরজার অসহায় স্বরে কথা গুলো শুনে জেহেরে বুকের ভেতর’টা মুচড়ে উঠলো। তাও একটু আরজা’কে টাইট দেওয়ার জন্য মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো…..

–চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই। সাথে আন্টি আংকেল’কে বলে আসি তোমার জন্য খুব শিঘ্রই পাত্র রেডি করতে……

বলে আরজা’কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসালো। আরজা নি’শ্চুপ হয়ে চোখের পানি ফেলছে। ওর বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে কেউ পাথর দিয়ে আঘাত করেছে। জেহের সব বুঝতে পেরে ও মুখের কোনে রহস্যময় হাসি টানলো।
____________________________________________
একটা পার্কে দোলনায় বসে ফারদিনের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে ফাইজা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে চারদিকে। সারাদিন ঘুমিয়ে কেটেছে ফারদিনের। বিকেল দিকে শরীর’টা বেশ ফুরফুরে লাগছিলো বলে ফ্রেশ হয়ে ফাইজা’কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। ফারদিন এক হাতে ড্রাইভিং করতে পারবেনা তাই ওরা হাটতে হাটতে সামনের একটা পার্কে এসে বসে পড়লো। কিছুক্ষনের নিরবতা ভেঙে ফাইজা বলে উঠলো…..

–নিজেকে সামলে নিতে কতদিন লাগবে শুনি?

ফারদিন এইবার ফাইজা’র মাথা’টা উঠিয়ে ওর দুই গালে হাত রাখলো আলতো করে। মুখে মুচকি হাসি রেখে বলে উঠলো….

–তোমার জন্য আমি সব পারি। আজকের পর আর অতীত নিয়ে ভাববো না। বরং, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববো। ওরা দোষী তাই শাস্তি পেয়েছে। আর আমি নিজের হাতে ওদের শাস্তি দিয়েছি৷ নিজেকে আর অপরাধী ভাববো না। জীবনের কালো অধ্যায় শেষ করে রঙিন অধ্যায় শুরু করবো।

বলেই ফাইজার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফাইজা খুশিতে ফারদিনের দুই হাতে পাগলের মতো কয়েকবার চুমু খেয়ে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলো…..

–আমি আজ কত’টা খুশি আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না। আমরা সব ভুলে দুজনে মিলে নতুন সংসার শুরু করবো…….

ফারদিন এইবার একটু দুষ্টুমি ভঙ্গী’তে বলে উঠলো….

–আমরা ফুলশয্যা ও কিন্তু করব জান। আর…….

বলতে পারলো না। তার আগেই ফাইজা ওর মুখ চে’পে ধরে চারদিকে চোখ বুলিয়ে রাগী স্বরে বললো……

–চুপ একদম চুপ। অসভ্য লোক একটা। কোথায় কি বলতে হয় এখনো শিখলেন না আপনি।

ফাইজার রাগ দেখে ফারদিন হাহা করে হেসে দিলো। অনেকদিন পর ছেলে’টাকে মন খুলে হাসতে দেখে ফাইজা তৃপ্ত চোখে তাঁকিয়ে আছে ওরদিকে। ছেলে’টা আবার আগের রুপে ব্যাক করছে। আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা তারপর সারাজীবনের জন্য দুজন বাঁধা পড়বে একি গাটছড়ায়। মনের প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে ফাইজা’র। কালো অধ্যায় গুলো আজ এখানে’ই সমাপ্ত হোক মনে মনে এটাই দোয়া করতে লাগলো……

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here