গ্যাংস্টার পর্ব ৬

#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ০৬
।।
রানি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মুখের কথাও হারিয়ে গেছে।

বিশ্বাস করতেও পারছে না। এটাই তার সেই রাজ? রানি চোখ বড়বড় করে রাজ কে দেখে।

রাজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকেও বেশ লম্বা চড়া একটা মানুষ। টাওয়াল পেঁচিয়ে দিব্যি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জিম বডি চুলে সদ্য দেওয়া পানি টপটপ করে পড়ছে। চুল সামনে এলোমেলো হয়ে আছে। বুকের উপর দানাদানা পানি লেগে আছে। লাল ঠোঁটের কোণায় এক অদ্ভুত হাসি। ঘোর লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

“ক্যান নট ইউ বিলিভ মি?” (বিশ্বাস করতে পারছো না আমায়?)
“আ আপনি?”
“আই এম রাজ। ইয়েস আই এম রাজ চৌধুরী। আর এটা ১০০% ঠিক নয় সঠিক।”
“….

রানি অবাক চোখ নিয়েই রাজের খুব কাছে যায়। পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নেয়।

“আ আপনি সত্যিই রাজ চৌধুরী?”

রাজ মুচকি হেসে রানির হাত ধরে নিয়ে দরজার কাছে যায়। লক অন করে তাকে নিয়ে একটা রুমে যায়। রুম টার মাঝে শুধু ইয়া বড়বড় ছবি।

রাজ রানি কে নিয়ে খুব বড় একটা ছবির সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়া করায়।

রানির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সেখানে থাকা পর্দা টা সরিয়ে নেয়। রানি অবাক হয়ে দেখছে।

প্রিন্টিং করা রাজের ছবি। যেখানে রাজ নেশা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সাদা একটা শার্ট গায়ে দেওয়া। রানি ছানাবড়া চোখ নিয়ে ড্যাবড্যাব করে দেখছে। নিচে গুটাগুটা অক্ষরে লেখা “রাজ চৌধুরী”।

সারা ঘরে এমন অনেক ছবি। রাজের একেকটা ছবির দিকে যে কেউ এইভাবে তাকিয়ে থাকবে।

“এই গুলি আমার ড্যাড এঁকে গিয়েছিল। জন্মের কয়েক বছর পর মা মারা যায়। ড্যাড সব টা দিয়ে আমায় মানুষ করেছে। ছোট থেকে বড় করেছে। আমেনা আন্টি আমায় লালনপালন করেছে। ড্যাডও সেই আমায় একা করে ২ বছর আগে চলে গেল। এই প্রিন্টিং গুলি ৩/৪ বছরের আগের। ড্যাড যখন জানলেন ছবি আঁকা মহাপাপ। সেদিন থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। আর সে দিনই এই ছবি টা প্রিন্টিং করে শেষ করেছিল।”

রানি মোহ নিয়ে একেক টা ছবি দেখছে ঘুরে ঘুরে আর ছবির মাঝে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কি নিখুঁত অঙ্কন। শিল্পকৌশল চুয়েচুয়ে পরছে।

“কাম ডেয়ার।”

রাজ আলতো হাতে রানি কে টেনে তার বেড রুমে নিয়ে গেল। রানি শুধু রাজ যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে যাচ্ছে। তার চোখের চাওনি রাজের দিকে স্থির।

তাকে নিয়ে রাজ নিজের রুমে গেল। ওয়ালেট থেকে আইডি কার্ড টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“জাস্ট লুক এট ইট মাই কুইন।”

রাজের হাত থেকে রানি আইডি কার্ড টা নেয়। সেখানে দেখতে পায় রাজের ছবি আর নামের জায়গায় স্পষ্ট অক্ষরে লেখা “রাজ চৌধুরী” তার মানে এই মানুষটা সত্যিসত্যি রাজ? তার সেই আকাঙ্ক্ষিত রাজ?

তার এখন কি রিয়েক্ট করা উচিৎ সে সেটা বুঝতে পারছে না।

পাথরের মতো ঠাই দাঁড়িয়ে বারবার রাজ কে দেখছে। রানির এই পরিস্থিতি দেখে রাজ মিটিমিটি হাসে। তারপর বলতে থাকে,
“তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে তো? আমি এত বড় একজন বিজনেসম্যান হওয়ার পরেও কলেজের টিচার কি ভাবে হলাম? কলেজেই কেন গেলাম? আর তোমার সাথে কেন আষ্টে থাকতাম তাই তো?”

রানি চোখের পাতা ফেলতে ফেলতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।

“হুম আমি একজন টপার বিজনেসম্যান। কিন্তু নট এ টিচার। আমি আসলে প্রোফেসর পথে যুক্ত ছিলাম না তোমার কলেজে। আমি প্রিন্সিপালের সাথে শুধু চুক্তি করেছিলাম। দেশের সব স্কুল কলেজে আমি টাকা দেই। তোমাদের কলেজেও দেই। সেই জন্যে প্রিন্সিপালও রাজি হয় আমার সর্তে। আর বড় কথা ইকনোমিকস ডিপার্টমেন্টে আমি অনেক কিছুই দিতে পাড়ি নিজ থেকে। কিছু টিপস তোমাদের দিলে তা ফিউচারে কাজে আসবে তোমাদের। সেই কারণে আমি জাস্ট কিছু দিনের জন্যে তোমাদের কলেজে গিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিউ প্রোফেসর হিসেবে পরিচিত হলাম।”

রাজের কথা শুনে রানি রাজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

রাজ এতক্ষণ রানির দিকে তাকিয়ে কথা গুলি বলছিল। এবার সে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে একটু দূরে গিয়ে বলে,
“এখন মনে মনে ভাবছো আমি কেন এমন টা করলাম। কেন ওই কলেজে পরিচয় গোপন করে গেলাম এই তো?”

রানি কিছুই বলতে পারছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজের কথার উপর হুম না বলার শক্তি টাও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে।

রাজ নিজেই আবার বলা শুরু করে,
“আসলে আমি তোমাকে ঠিক আগেই দেখেছিলাম। হুম আমার মনে তুমি অনেক আগে জায়গা করে নিয়েছিলে। তোমাদের কলেজে গেলাম মাত্র ১ মাস হয়েছে। কিন্তু তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলে আরো ৩ মাস আগে। হ্যাঁ তিন মাস আগে আমি তোমায় প্রথম দেখেছিলাম একটা বাচ্চাদের স্কুলে। তুমি তখন তাদের চকলেট দিচ্ছিলে। তাদের সাথে খেলছিলে নাচানাচি করছিলে। তখন তুমি নিজের মাঝে ছিলে না। তোমার মাঝে বাচ্চামি একটা স্বত্বা দেখা গিয়েছিল। আর সেটাই আমার মন টা কেড়ে নেয়। আমি তখন সেই রাস্তা দিয়েই ড্রাইভ করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এই রকম দৃশ্য দেখে আমার চোখ সেখানে আটকে যায়। তোমাকে মনের পিঞ্জরে আটকে নেই। চেয়ে ছিলাম তোমার সামনে যাবো কিন্তু সে দিন আর কি জন্যে যেন পাড়ি নি।”

রাজ রানির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে,
“ইউ নো তোমার কারণে আমি খুব বড় একটা ডিল মিস করেছিলাম।”

রানি তখন রাজের দিকে চোখ আরো বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। যেন এই তার চোখ বের হয়ে এলো।

রাজ নিজের ব্যালকুনিতে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
“সেদিন তোমাকে দেখতে দেখতে তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে যেতে আমি এত ইমপটেন্ট একটা মিটিং মিস করাল। যার কারণে ডিল টা হলো না। অথচ এটা আমাদের জন্যে খুব দরকার ছিল। বিশ্বাস করো এত কষ্ট করলাম ডিল টার কারণে বাট সেটা হলো না তার জন্যে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট বা খারাপ লাগেনি। সে রাত টা তোমার ছবি চোখে নিয়েই কেটেছে আমার। মনে মনে তোমাকে মনের রানী করব ভেবে নিয়েছিলাম। তোমার ছবি তুলেছিলাম। যার জন্যে তোমাকে খুঁজতে আমার এক দিনও সময় লাগেনি। আমি আমার গ্যাং এর সব চেয়ে কাছে মানুষ টা কে ছবি টা পাটিয়ে দেই। তারা তোমার ডিটেল্স আমায় দেয়।”

রাজের প্রতিটা কথা রানির দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম করছিল। নিশ্বাস ফেলাও তার জন্যে দায় হয়ে উঠছিল। ক্রমশ দম আটকে আসছিল রানির।

“তখন থেকে আমি তোমায় নজর বন্ধি করে রাখি। বলতে গেলে তুমি কখন কি করছো না করছো তার হিসাব রাখতাম। তার দুদিন পর আরেক টা ডিলের কারণে আমায় আমেরিকা চলে যেতে হয়। সেখানে প্রায় ২৫ দিনের মতো ছিলাম আমি। কিন্তু একটা সময়ও একটা মুহূর্ত ছিল না তুমি আমার চোখের আড়াল হয়েছো। ঠিক কি ভাবে ওই সময়ে আমি ডিল টা সামলেছি আমি জানি। এত বড়বড় কাছ করেও আমি কখনো নার্ভাস ফিল করিনি। কিন্তু তুমি মনে থাকায় অনেকটা নার্ভাস ছিলাম। পরে তোমার কথা ভেবেই মনে শক্তি নিয়েছিলাম। ভেবেছি ডিল টা হয়ে গেলেই তোমার সামনে যাবো। তুমি আমার লাইফে হয়তো একটা আলো। তাই ডিল টা পেয়ে গেলাম। তোমার কারণে যেটা হারিয়ে ছিলাম। তার থেকেও বড় ছিল এই ডিল টা। ডিল হওয়ার পরের দিন আমি চলে এলাম। ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম রাজ অন্তঃ প্রাণ তুমি। তাই আমি আমার পরিচয় লুকিয়ে তোমার কলেজে গেলাম। যেহেতু তুমি আমায় দেখো নি। ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম লোক মুখে আমার নাম শুনেই নাকি তুমি আমাতে প্রাণ হারিয়েছো”

রাজ একটু নিশ্বাস নেয়। আবার বলে,
“হ্যাঁ রিক মাফি কে আমিই মেরেছিলাম। আমার একটা গ্যাং আছে আর সেই গ্যাং এর গ্যাংস্টার আমি। আমার গ্যাং টা কোনো রকম খারাপ কাজ করে না। বরং অসহায় মানুষদের সাহায্য করে। তার জন্যে যত টাকা লাগে আমি প্রে করি। কারণ এত এত সম্পদ আমাদের বেবির কেন তার ছেলে মেয়েদেরও লাগবে না।”

রাজের এই কথা শুনে রানি ভীষণ লজ্জা পায়। গাল লাল হয়ে উঠে।

রাজ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ টিপি দেয়।

রানি লজ্জায় মাথা নিচু করে।
রাজ বলে,
“এই কারণেই আমি আমার প্রাইভেসি বজায় রাখতাম। কখনো কোনো ক্যামেরার সামনে যেতাম না। মিডিয়ার সামনে যেতে আমার মুটেও ভালো লাগত না। আড়াল থেকে আমি আর আমার গ্যাং সবাই কে হ্যাল্প করি। আমাকে অনেক সময় অনেক বাজে লোকের সামনে যেতে হয়। অনেক লোকের সাথে মারামারি তেও যেতে হয়। আমাকে চেনা থাকলে অনেক প্রবলেম হতে পাড়ে তাই নিজেকে আড়ালে রাখি। তোমার কাছেও আড়াল রেখেছিলাম। কিন্তু তুমি সেই আমার পিছু নিয়ে চলেই এলে এখান অবধি। যে আমি রাজ কে এত বড়বড় মানুষ হাতের নাগালে পায়নি। সেই আমি রাজ নাকি একটা পিচ্চির সামনে।”

রাজ রানির দিকে ফিরে মুচকি হাসে।

রানি তো লজ্জায় লাল হয়ে আছে। রাজ এগিয়ে তার সামনে যায়।

“ময়লায় তো পুরো ড্রেস শেষ করে দিয়েছো। আলমারি তে আমার শার্ট আছে আর একটা টাউজার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। কাপড় গুলি আমাকে দিও আমি ওয়াশিং মেশিনে ওয়াশ করে দিব।”
“….

রানি ঠিক কি বলবে না বলবে ভেয়ে পায় না। এমন লোকও দুনিয়ার বুকে আছে ভেবে রানি খুব অবাক হয়। ঢুক গিলে। এই লোক কি না তাকে আগে থেকেই….
তার আকাঙ্ক্ষিত লোক টাই নাকি তাকে ভালোবাসে।

রানি এই অবস্থায় রাজের সামনে থাকতে ইতস্তত বোধ করছে।
তাই না পেরে সে আলমারির কাছে যায়।

কি নিবে ভেবে পায় না।

রাজ তার কাছে যায়। আলমারি থেকে সাদা একটা শার্ট বের করে দেয় সাথে একটা টাউজার।

রানি সেই গুলি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে যায়। রাজের সামনে থাকলে বুঝি সে মরেই যাবে দম আটকে। যেমন অবাক হচ্ছে তেমনি লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় যেন লজ্জাবতী রানির মরণ মুখে উপনীত হয়ে যাবে। এই বুঝি দমটা রাজের সামনেই বের হয়ে যাবে।
..
ঘর যেমন বিশাল ওয়াশরুমও তেমনি।

রানি বিড়বিড় করে বলে,
“লোকটার ওয়াশরুমে এত জায়গা লাগে? এই জায়গায় কি করে যে এত বড় লাগে। এটা তো আমার শুয়ার রুমের মতো। হায় মাবুদ। আল্লাহ জানে এখানে উনি শুয়ে টুয়ে থাকে নাকি।”

রানি ঠোঁট উল্টিয়ে তাড়াতাড়ি শাওয়াল নিয়ে নেয়।

তারপর রাজের দেওয়া জামা কাপড় পড়ে।

খুব অবাক হয় যেই মানুষটার জন্যে আল্লাহর কাছে এত দোয়া করল সে আজ নাকি তার জামা গায়ে জড়ালো? বিষয়টায় রানি খুব অবাক হয়।

রানির চুল এলোমেলো। টপটপ পানি পড়ছে।

রাজ এতক্ষণে প্যান্ট আর কালো একটা শার্ট পড়ে নিয়েছে। হাতা গুলি বোল্ড করা। চুল গুলি উপর তুলে রেখেছে হাত দিয়ে। সেই লাগছে।

রানি ওয়াশরুম থেকে এসে ব্যালকুনিতে যায়। রাজ বিছানা ছেড়ে উঠে সেখানে যায়। রাজের সাদা ঢিলে শার্ট আর টাউজার তার উপর ভেজা চুলের টুপটুপ করা পানি তে রানি কে বলার বাহিরে লাগছে।

হুট করে হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে রাজ।
“ইউ উইল মেরি মি মাই লিটল কুইন?”

রানি হা করে আছে। চোখের পাতাও ফেলছে না। সেই মানুষটার সাথে বিয়ে না হলে ভেবেছে সে কোনো দিন বিয়েই করবে না। সেই মানুষটাই নাকি তাকে বিয়ের প্রোপোজাল দিচ্ছে।

রানির চোখ দিয়ে টপটপ করে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

রাজ উঠে বলে,
“দুনিয়াতে রাজের জন্যেই আল্লাহ হয়তো তোমায় পাঠিয়েছে। সেই আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে না।”

রানি অবাক হয়ে রাজ কে দেখছে।
“ওয়েট করো কফি বানিয়ে আনি।”

এই বলে রাজ চলে যায়। রানি সেখানে দাঁড়িয়ে কান্না করে খুশির কান্না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে কান্না করছে। আল্লাহ তার ইচ্ছে টা পূরণ করেছে। আল্লাহর কাছে চাইলেই পাওয়া যায় সব। রানি মনে মনে ঠিক করে নেয় আর বেপর্দা চলা যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতে হবে। আল্লাহর জন্যে বাকি জীবন টা পার করতে হবে।

ততক্ষণে রাজ চলে এসেছে।

দুজন কফি খাচ্ছে নীরবে। কেউ কথা বলছে না। দুজনের মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব অবস্থান করছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে।

রাজ বলে উঠে,
“মাই লিটল কুইন আর কিছু দিন পর না হয় আঙ্কেলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।”

এই কথা শুনে রানি বিষম খায়। কাশতে থাকে। রাজ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,
“আর ইউ ওকে রানি?”
“…
“পানি দেই?”
“না না ল লাগবে না।”
“শিওর?”
“হুম।”

দুজন আবার কফি খেতে থাকে।

“সাইদুল হয়তো খাবার নিয়ে চলে এসেছে। তুমি ওয়েট করো আমি আসছি।”

রাজ কফির মগ গুলি নিয়ে চলে যায়।

একটু পর ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসে।
“এই গুলি খেয়ে নাও। আমি নিচে আছি। আর ওখানে তোমার ড্রেস রাখা আছে। রেডি হয়ে নাও বাসায় দিয়ে আসব গিয়ে।”

রাজ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
সে থাকলে হয়তো রানির অসুবিধা হবে তাই নিজেকে সামলে চলে গিয়েছে।

রানি ভাবতে থাকে,
“লোকটা অবাকের শেষ সীমানায়। এত মানুষ দুনিয়ায় দিয়েছো আল্লাহ। তোমার সৃষ্টি কত অদ্ভুত। উনার জায়গায় হয়তো অন্য কেউ থাকলে একা একটা মেয়ে কে পেয়ে অনেক কিছুই করতে পারত। কিন্তু উনি? আল্লাহ তোমার কাছে অনেক শুকরিয়া।”

রানি খাবার খেয়ে ড্রেস পড়ে নিচে যায়। রাজ তখন ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছিল।

“আর ইউ রেডি? ওকে ৫ মিনিট ওয়েট করো আসছি আমি।”

রাজ হাত ধুয়ে উপর থেকে চাবি টা নিয়ে এলো। তারপর দুজন বেরিয়ে গেল।

রানি সিলবেল না লাগিয়ে বসে আছে।

“আমাকে মারতে চাইছো নাকি অকালে?
রাজের কথায় রানি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়।

রাজ বলল,
“সিটবেল টা না লাগালে যেকোনো সময় অঘটন হতে পাড়ে। আর তোমার সামান্যা কিছু হয়ে গেলেও এই রাজ বাঁচবে না।”

রাজ নিজেই একটু এগিয়ে রানির সিটবেল টেনে আনে। লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

রানি জানালার বাহিরে মুখ নিয়ে ভাবতে থাকে,
“আল্লাহ লোক টা কে এত টা ভালো কেন বানিয়ে দিয়েছো তুমি? লোক টা এত টা আকর্ষণীয় কেন?”

রানি রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমাকে শপিং মলের সামনে নামিয়ে দিবেন।”
রাজ ড্রাইভ করতে করতে রানির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কেন? কিছু কিনবে?”
“হুম দরকার আছে।”
“ওকে আমিই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।”
“না না লাগবে আমি…”
“সুহহ। একদম চুপ। রাজ চৌধুরীর হবু বউয়ের প্রোটেকশনের একটা ব্যাপার আছে না?”

রাজ রানির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে মুচকি হাসে। রানি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। তারপর মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।

রাজ মলের সামনে গাড়ি থামায়।
রানি নেমে যায়।

“তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি গাড়ি টা পার্ক করেই আসছি।”
“হুম।”

রাজ গাড়িটা পার্ক করে এসে দেখে রানি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

রাজ গিয়ে বলে,
“চলো।”
“….
“কি হলো?”
“আমি ফোচকা খাবো।”
“হোয়াট?”
“হুম।”
“ওমন নোংরা খাবার খেতে হবে না। দেখা যাবে পেটের অসুখের কারণে বিছানা থেকেই উঠতে পারবে না।”
“না এমন কিছুই হবে না। আমি অনেক খাই ”
“আর খেতে হবে না। চলো।”
“আপনি যান আমি খেয়ে আসছি।”
“কি?”
“হুম। আমি ফোচকা খাবো।”
“তার মানে তুমি খাবেই?”
“হুম। আপনিও চলুন না। অনেক মজার।”
“ওকে যাও।”

রাজ রানি দুজনে সেখানে যায়। রানি এক প্লেট ফোচকা হাতে নেয়। রাজ কে বললেও সে এসব খাবে না। তাই রানিই খাওয়া শুরু করে।

“আপনিও নিন না একটা।”
“না আমি তোমার মতো পঁচা খাবার খাই না। তুমিই খাও।”
“উমম মুটেও তা নয়। আপনি খান দেখবেন আপনারও ভালো লাগবে।”

রানির জোরাজোরি তে রাজ একটা মুখে দেয়। সে কি ঝাল। সে একদম ঝাল খেতে পাড়ে না। ঝালে চোখ লাল হয়ে আছে। হুহা করছে ঝালের কারণে।

রাজ কে দেখে রানির ভয় হয়। না জানি কোন বকা দেয় এখন।

দোকানদার পানি দিলে রাজ সে পানি খায় না। তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে যায় সেখান থেকে এক বোতল পানির অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। তবুও ঝাল কমছে না।

পানি খেতে খেতে রাজ রানির দিকে তাকায়। মেয়ে টা কি মনের আনন্দে এক প্লেট শেষ করে আরেক প্লেট নিল। ঝালে শিশি করছে তবুও মন খুলে খেয়েই চলছে। রাজ ঝালের কথা ভুলে রানির দিকে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে করছে এই ঝাল কাটাতে রানির ওই প্রসারিত ঠোঁট কে আঁকড়ে নিতে। কিন্তু তা অসম্ভব এখন। রাজ মুচকি হেসে সেখানে যায়।

রাজ ১০০০ টাকার একটা নোট নিয়ে দোকানদার কে দিলে সে তা নিতে নারাজ হয়।

রাজ তার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“ভাই এই ফোচকা যে কত মেয়ের পছন্দের তা তুমি জানো। কত মানুষকে তুমি এটার দ্বারা খুশি করো বলো তো। সেটা তুমি নিজেও জানো না। বিশ্বাস করো আমি মন থেকে খুশি হয়ে এটা দিলাম তোমায়। কারণ তুমি আমার কুইন কে খুশি করেছো। রাখো।”

দোকানদার খুশি মনে টাকা টা নেয়।
আর রানি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here