গ্যাংস্টার পর্ব ৭

#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ০৭
।।
তারপর দুজন মিলে মলের ভেতরে গেল। রানি বোরকার দোকানে গেল।
এত দেখেও কালো সুন্দর বোরকা পাচ্ছে না।

“রানি তুমি পর্দা করবে? এখন থেকে সত্যিই তুমি বোরকা পড়ে নিজেকে ঢেকে রাখবে?”

রানি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।

রাজ খুব খুশি হয়। তারপর হাত ধরে বলে,
“কাম ডেয়ার।”
রাজ রানি কে নিয়ে উপরে উঠে। সে যেতেই দোকানের লোক সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে।

রাজের যা লাগে এই দোকান থেকেই নেয়। বাকি কাস্টমারদের একটু পরে আসতে বলে দোকানদার।

“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”
“ওয়ালাইকুম আসসলাম।”
“স্যার কি লাগবে বলুন।”

রাজ কিছু না বলে দেখছিল আশপাশ তাকিয়ে।

রাজের এমন কান্ডে রানি অবাক হয়।
দোকানদার বলে উঠে,
“স্যার ম্যডাম নাকি?”

রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।
“ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।”
“স্যার কার জন্যে লাগবে? আপনার নাকি ম্যামের?”
“ম্যামের জন্যে খুব ভালো বোরকা বের করো।”
“ওকে স্যার।”

দোকানদার ভালোভালো সব বোরকা রানির সামনে রাখে। রানি বোরকা দেখছে।

রাজ তিন টা কালো বোরকা হাতে নিল। তারপর একটা নেয় অনেক রঙএর মিশ্রণের। আর একটা সাদার মাঝে ছোট ছোট হাল্কা সবুজ রঙ এর ফুল সাথে লতা পাতা আর মেরুনের মিশ্রণের বোরকা নিল।

দোকানদারের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এইগুলি প্যাক করে দিন।”

রানি এত বোরকা দেখে অবাক হয়ে রাজ কে বলে,
“এত বোরকা? আমি এত বোরকা নিব…”

রাজ গরম চোখে রানির দিকে তাকায়। তারপর রানি ঠোঁট উল্টিয়ে আর কিছু বলে না।

রাজ অনেক গুলি স্কার্ফ আর হিজাব, খিমার প্যাক করতে বলে।

তারপর রানির দিকে এগিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
“যখন সেটা পড়তে ইচ্ছে করবে সেটাই পড়বে।”
“কত এলো।”
“তা জেনে তুমি কি করবে?”
“ও মা না হলে দোকানদার আমায় বেঁধে রাখবে।”
“ননসেন্স কোথাকার।”
“কেন কি করলাম?”
“আমি প্রে করে দিব।”
“কেন বোরকা কি আপনি পড়বে যে আপনি প্রে করতে যাবেন।”

রাজ রাগে দাঁত কটমট করে চোখ লাল করে রানির দিকে ঝুঁকে। আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের উপর রেখে রানি কে চুপ থাকতে বলে।
রানি ভয়ে একটু পিছিয়ে যায়। ঠোঁট উল্টিয়ে ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে চুপ থাকে।

রাজ কার্ডে প্রে করে সানগ্লাস পড়ে নেয়।

ইসস মানুষটা কে সানগ্লাসে এত যে সুন্দর লাগে। তাও আবার আজ কালো শার্ট পড়েছে। চুল গুলিতে জেল দেওয়া। কালো চাঁপ দাঁড়ি গুলি মুখের সৌন্দর্য টা দিগুন করে দিয়েছে। এর উপর কালো সানগ্লাস টা যেন বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

তারপর রানি কে নিয়ে বের হয় দোকান থেকে।

মলের নিচে নামলে রাজের নজর যায় এক জায়গায় অনেক লোকের সমাগম। চেঁচামেচির শব্দও শুনা যাচ্ছে।

রাজ এড়িয়ে রানি কে চলে যেতে চাইলে রানি থেমে যায়।
“কি হলো? চলো।”
“ওখানে কি হয়েছে?”
“জানি না। চলো।”
“যদি কারো কোনো প্রবলেম হয়।”

কথাটা শুনে রাজ আর নিজেকে সামলাতে পাড়ে নি। রানির প্রোটেকশনের কথা ভুলে সেখানে গেল শপিং গুলি রানির হাতে দিয়ে।

এক ছেলে ড্রাংক অবস্থায় এক মেয়ের হাত ধরে বাজে ব্যবহার করছিল।

ছেলের মুখ দেখে রাজের বুঝা বাকি নেই এটা সেই নেতার ছেলে। বকে যাওয়া ছেলে। নেতার ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। রাজ আরো একবার তার কু কীর্তির কথা শুনেছে। তার গ্যাং এর ছেলে ছবিও দেখিয়েছে। রাজ থমে ছিল। আজ এমন একটা দৃশ্য দেখে রাগে রক্ত মাথায় উঠে তার। রক্ত রাগে টগবগ করছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। মেয়ে টার ওড়না নিয়ে টানাটানি করছে।

রানি ভিড় ঠেলে সেখানে যায়। পিছনে রানিও যায়।

রাজ সরাসরি গিয়ে সেই ছেলের হাত ধরে।
ছেলেটা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আর নেশার কন্ঠে বলে,
“হো আর ইউ ম্যান।”
“তোর জম।”
“হোয়াট?”
“মেয়ে টা কে ছাড়।”
“আরে কে রে তুই?”
“বললামই তো তোর জম।”

রাজ তাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ছেলে কে মারতে থাকে। মেয়ে টা তাড়াতাড়ি দূরে চলে যায়। রাজ তাকে মারছে তো মারছেই। সবাই হা করে দেখছে।

রানি তো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে দেখছে আর ঢুক গিলছে। মানুষটা এত টা রাগি?

রাজ মারতে মারতে ছেলের অবস্থা বেহাল করে তুলে। শেষে দুপায়ের মধ্যবর্তী তে ছেলেটার নিম্নাঙ্গে লাথি দেয় বেশ জোরে। ছেলে ছিটকে নিচে বসে গোঙাতে থাকে।

তারপর পুলিশ কে কল দেয়। পুলিশ এসে একে দেখে ভয়ে ভয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। রাজ নিজের পরিচয় পুলিশ কে দিলে তারা নির্দ্বিধায় ছেলে টা কে গ্রেফতার করে।

রাজের সাথে হাত মিলিয়ে দারোগা বলে,
“ধন্যবাদ স্যার। আমরা চাকরিতে থাকলেও কিছু মানুষের কারণে নীরব থাকতে হয়। নিজেকে নিয়ে ভয় না পেলেও বউ বাচ্চার কথা তো বাদ দিতে পাড়ি না। আপনার জন্যে খুব সাহস পাচ্ছি।”
“উপর থেকে কল আসলে আমার কথা বলবেন। বেশি সমস্যা হলে না হয় আমাকে জানাবে আমি দেখে নিব।”
“ওকে স্যার।”
“আরেকটু ডলা দিবেন ওকে যেন আর এমন না করে।”

রাজ ছেলে টার গালে শক্তে এক চর দেয়। রানি ভয়ে কেঁপে উঠে। ভেতর তার শুকিয়ে আসছে।

পুলিশ ছেলে টা কে নিয়ে যায়।

লোক গুলির মাঝ থেকে একজন বলে উঠে উনি বিজনেসম্যান রাজ চৌধুরী। এই কথা শুনা মাত্র সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মেয়েরা তার গায়ে এসে পড়ছে একটা ছবি তুলার জন্যে। বিষয় টা রাজের বিরক্ত লাগল। বিষয়টায় রাজ বুঝতে পারছে না।

রানির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো রানির মুখটা কাচুমাচু হয়ে আছে।
সে বেশ বুঝতে পারছে রানির এই গুলি একদম ভালো লাগছে না। রাজ জোরে এক ধমক দেয়। তাতেই সবাই দূরে চলে যায় তার থেকে।

রানিও এক পা পিছিয়ে পড়ে।

রাজ রানির হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।

গাড়ি তে উঠে রানি আরো ভয় পাচ্ছে। রাজের রাগি রাগি মুখ আর এলোপাথাড়ি মারের কথা মনে হচ্ছে আর সে ভয়ে কেঁপে উঠছে। শুকনো ঢুক গিলছে।

সিটবেল না লাগিয়ে ভয়ে গুটিয়ে বসে আছে সে।

রাজ বিষয় টা বুঝতে পারছে যে রানি তাকে ভয় পাচ্ছে। সে একটু এগিয়ে গেলে রানি নিজের মাথা পিছনে এলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে। রাজ কিছু না বলে মনে মনে হেসে সিটবেলটা লাগিয়ে দেয় রানির। তারপর পানির বোতল তার দিকে এগিয়ে দেয়।

“খাও।”
“এ্যা?”
“পানি খেতে বললাম।”

রানি তাড়াতাড়ি পানির বোতল মুখে তুলে নেয়। গরগর করে অনেক টা পানি খেয়ে নেয়।

রানির এই অবস্থা দেখে রাজ আর সামলে থাকতে পাড়ে না। একটু শক্তে হেসেই দেয়। তবে শব্দ করে নয়। এই হাসি কে অনেক টা মুচকি হাসি হিসেবেও ধরা যায়।

“প্রেয়সী বুঝি আমায় ভয় পাচ্ছে?”
“আ আমি বাসায় যাবো।”
“আমি ভালোর খুবই ভালো। আর শক্তের জম। তাই কথা মেনে চললে আমার অন্য রূপ দেখতে পাবে না। কিন্তু কথা না শুনলে…”
“আম্মু।”
“হোয়াট?”
“আ আম্মু আমার জন্যে চি চিন্তা করছে।”
“ননসেন্স মেয়ে।”

রানি আর একটা কথাও বলে না পুরো রাস্তায়। চুপ করে ছিল। রাজও তার ভয় ভাঙ্গাতে চায়নি। ভয় কি সহজ ভাবে ভাঙ্গানো যায়? ভয় এই ভাবে ভাঙ্গা যায় না।
“ভয় ভাঙ্গাতে হলে যে গভীর মুহূর্ত তৈরি করতে হয়।”
।।
বাসায় গিয়ে রানি যেন ভাবতেই পারছে না তার সাথে কি না হয়ে গেল। এটা সত্যিই ছিল? নিজেকেও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার।

হঠাৎ তার ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে।
“প্রেয়সী বুঝি আমার কথা ভাবছে?”

ম্যাসেজ টা পড়ে রানি মুচকি হেসে দেয়। রাজের নাম্বার টা নতুন নাম দিয়ে সেভ করে “ড্রিমবয়”। ফেন টা রেখে দেয়। ম্যাসেজের রিপ্লে আর দেয় না।

ওযু করে এসে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে।

অন্য দিনের মতো আজ আর ঘুমের মাঝে রাজ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে না। আজ বাস্তবে একটু আগে রাজের দৃশ্য গুলি চোখে ভাসছে। কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে সে নিজেও তা হয়তো জানে না।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে যায়। মায়ের সাথে গলাগলি করে কিছুক্ষণ বসে থাকে।

ঘর থেকে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসলে তাড়াতাড়ি চলে যায়।

তার “ড্রিমবয়” কল দিয়েছে।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসলাম। কি করছিলে?”
“আম্মুর সাথে ছিলাম।”
“ওও”
“নামাজ পড়েছেন?”

কথাটা রানি বলেই নিজে লজ্জা পায়। কি ভাবে অনায়াসে কথা বলছে সে। চুপ করে থাকে।
ওপাশ থেকে রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।
“পড়ব।”
“…
“কথা কি উড়ে গিয়েছে?”
“…
“কাল কলেজে যাওয়ার সময় কল দিও। ইনফেক্ট আমিই থাকব ওখানে।”
“ক্লাস করাবেন?”
“না আর কলেজে ক্লাস করাব না। কাল তোমায় কিছু শীট দিয়ে দিব সে গুলি কমপ্লিট করবে।”
“ঠিক আছে।”
“মন দিয়ে পড়বে। আমার মতো হতে হবে। পরে আমাকে হ্যাল্প করবে।”
“….

রানি চোখ গুলি বড় করে ঢুক গিলে শব্দ করে,
“এই ভীতুর ডিম। এত ঢুক গিললে চলবে?”

রাজের কথায় রানির বিষম খাওয়ার উপক্রম। চোখ গুলি ডিমের মতো বড় বড় করে চেয়ে আছে।

“ওই ওই মুখে মশা ঢুকবে।”
রাজ এই কথা বলে ওপাশ থেকে জোরে হেসে দেয়। রানি মুখ বন্ধ করে চোখের পাতা ফেলে।

“আমার কাজ আছে। রাতে কথা হবে। পড়তে বসো। বাই।”

রাজ ফোন কেটে দিলে রানি ভাবতে থাকে,
“লোকটা এত টা বুদ্ধিমান কি ভাবে? আন্দাজেও ডিল ছুড়লে লেগে যায়। আসলে কি লোক টা মন পড়তে জানে? আল্লাহ জানে এমন শক্তি উনাকে দিয়েছে কি না।”

এমন করে দিন যাচ্ছে। ফোনে কথা বলা, পড়ার টিপস দেওয়া, শীট দেওয়া, উপদেশ সব মিলিয়ে রাজ রানি কে ব্যস্ত আর নজরে রাখে।

সেদিন রাতে রাজ কল করে বলছিল,
“যে গুলি পড়তে বলেছিলাম সেগুলি শেষ হয়েছে তো?”
“আচ্ছা আমাকে কি আপনার রোবট মনে হয়? এত এত পড়া উপদেশ দেন কি করে? একটুও কি ভাবেন না যে আমার মতো এত ছোট একটা মেয়ে কি করে সব গুলি মেনটেন্ট করবে? এত গুলি যে দেন আপনিও কি একটু বোর হন না?”
“হোয়াট দ্যা। কি বলছো তুমি?”

রাজের ধমক সুরে কড়া কথা শুনে রানি ভয় পায়। সত্যিই তো কি কথা বলে ফেলেছে। জিহ্বায় কামোর দিয়ে রাখে রানি। না জানি কি শুনতে হয় তার।

ওদিকে রাজের একটু রাগই হলো বৈকি। বেচারা মুখের উপর কথা একদম বরখাস্ত করতে পারে না।

“এএ আ আসলে আমি না বাদ দিন। কি কি করছেন?”
“আসতে হবে?”
“কি?”
“তোমার বাসায় আসতে হবে?”

রানি ভয়ে বলতে থাকে,
“কে কেন?”
“মুখের উপর কথা বলার শাস্তি দিতে।”
“….
“কি হলো?”
“আ আসলে আমি বলি না। কিভাবে যে বলে ফেললাম বুঝতে পারছি না।”
“ও তুমি বলো নি? তো কে বলল?”
“আ আসলে সত্যিই আমি বলি নি। বলেছে তো আমার ঠোঁট আর জিহ্বা। এখানে আমার দোষ কি বলুন?”

রানির এমন ভীতু সুরে কথায় রাজ জুরে হেসে দেয়। রানির ভয় টা একটু কমে।

একটা মাস এমন করেই চলে গেল।

সেদিন রাজ জানাল।
“শুনছেন আপনি?”
“হুম বলুন।”
“আমি চলে যাচ্ছি।”

রাজের কথায় রানি খুব ভয় পায়।
“যাচ্ছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন? আপনি চলে গেলে আমার কি হবে?”
“….
রানি নিজের কথায় খুব লজ্জা পায়। আমতাআমতা করে বলে,
“ন না আসলে আ আপনি কোথায় যাবেন আমি আসলে সেটাই জি জিজ্ঞাস করছিলাম।”
“ও তাই?”
“হুম তা তা নয় তো কি?”
“আমি তো ভাবলাম…”
“আ আপনি কি ভাবলেন?”
“আমি লন্ডন যাচ্ছি।”
“…
“কয়েক দিন পরই চলে আসব।”
“…..
“আমি জানি প্রেয়সী আমার মাঝে ডুবে থাকে। ইনশাল্লাহ এটা হয়তো আর বেশি সময়ের জন্যে হবে না।”
“….
“চিন্তা করো না ৪/৫ দিনের একটা মিটিং আছে। না গেলেই নয়। তাই তো..”
“কবে যাবেন?”
“কাল।”
“কখন?”
“দুপুরের ফ্লাইটে।”
“ও”
“হুম।”
“কল দিলে নিচে নামবে একবার দেখে যাবো।”
“….
“মন খারাপ বুঝি?”
“সাবধানে যাবেন।”

রানি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। খুব খারাপ লাগছে তার। তাই আর কথা বলতে চায়নি। গলাও ধরে আসছিল কষ্টের ঘোরে।

ওদিকে রাজ মুচকি হেসে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বলে দিল, “পাগলি একটা।”

পরের দিন রাজ রানি কে কল দিল। রানি ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উপরের ব্যালকুনিতে গেল। রাজ একবার দেখে নিল তার প্রেয়সী কে। তারপর একটু হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

রানির চোখের কোণায় এক ফোটা পানি চলে হলো।

ফোনের ম্যাসেজ টোন বাজলে রানি ব্যালকুনি ছেড়ে রুমে যায়। হ্যাঁ রাজ ম্যাসেজ দিয়েছে।
“পাগলি কান্না করার কিছু নেই। চোখের পানি টা মুছে নিও। সাবধানে থেকো আমি হয়তো এই কদিন বিজি থাকব। একদম বেখেয়ালি হবে না। নিজের খেয়াল রাখবে আর সময় মতো পড়বে। কাঁদে না পাগলি আমার। পিচ্চির জন্যে চকলেট নিয়ে আসব।”

রাজের ম্যাসেজ পড়ে রানি এক গাল হেসে দেয়। লোকটা পারেও বটে। আস্তো একটা পাগল।
।।
পরপর ৪ দিন কেটে যায়। সত্যিই রাজ একবারও রানির সাথে যোগাযোগ করেনি। একটা বার কল দেয় নি।
তবে গিয়ে একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, সে সাবধানে গিয়েছে। সে যেভাবে বলেছে রানি যেন সে ভাবেই চলে, সাবধানে যেন থাকে।

রানি দুপুরে খেয়ে শুয়ে ছিল। কিন্তু তার ঘুম আসছিল না।

তখন ঘড়িতে ৩ টা বেজে ১৫ মিনিট। সে ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকুনিতে যায়। যদি রাজ ফোন করে। সে বলেছিল ৩/৪ দিন লাগবে। আজ ৪ দিন হলো এলোই না। একটা বার কথাও বলল না। রানির খুব অভিমান হলে। পাহাড় সমান অভিমান।

মন খারাপ করে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে।

তার একটু পর ফোন বেজে উঠে। রানি স্কিনের দিকে নজর দিলেই দেখে রাজ কল দিয়েছে,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসলাম। প্রেয়সী বুঝি খুব রেগে আছে?”
“….
“আমার প্রেয়সী কে বলে দিও তো তার স্বপ্নের মানুষটা স্বপ্ন পূরণ করতে খুব ব্যস্ত ছিল। মিটিং এর জন্যে এক দন্ড দম নিতে পাড়ি নি।”
“….
“কি হলে বলো আমার প্রেয়সী কে জানাবে তো?”
“….
“সরি প্লিজ সরি। বিশ্বাস করো খুব ব্যস্ত ছিলাম।”
“সেটা আমাকে বলছেন কেন?”
“এটা বুঝি অভিমান?”
“আমি আপনার উপর অভিমান করব কেন?”
“কারণ আমি যে তোমার মনে অবস্থান করি।”

“এত যখন বুঝেন একটু খোঁজখবর নিলে আপনার কোন ডিল টা মামার বাড়ির আদর খেতে চলে যেত?”
কথা গুলি রানি নিজের মনে মনেই বলে।

“প্লিজ সরি। এই কান ধরছি।”
“…
“প্রেয়সীর জন্যে এতগুলি চকলেট নিয়েছি।”
“….
“তবুও মন ভরেনি?”
“….
“কাল আসছি।”

কথাটা শুনে রানি খুশি হয় মনে মনে। কিন্তু তা বাহিরে প্রকাশও করে না। রাজকেও বুঝতে দেয় না। চুপ থাকে।

“কাল দেখা হচ্ছে কিন্তু।”
“লাগবে না।”
“ওকে অভিমান না হয় সামনাসামনি ভাঙ্গব।”
“….
“ওই।”
“কখন আসবেন?”
“সকালে।”
“সাবধানে আসবেন।”
“ও…”

রাজের কথা শেষ করার আগেই রানি ফোন কেটে দেয়। রাজের রাগ হয়।

রানি ঘরে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।

ফোন তুললেই ওপাশ থেকে একটা সুরেলা কন্ঠ শুনা যায়।
“আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো কে বলছেন?”
“আমার সাথে একটু দেখা করতে হবে তোমায়।”
“কে বলছেন আপনি?”
“সেটা পরেই বুঝতে পাড়বে। আমি তোমার বাসার সামনের ক্যাফে তে বসে আছি। চলে এসো। আর যদি না আসো জীবনে ঠকে যাবে।”

এই টুক বলেই অজ্ঞাত ফোন কেটে দেয়।

রানি বুঝতে পাড়ে না কি করবে। তার যাওয়া ঠিক কি না। উনি বা কে? কিসের ঠকার কথার বলল? বেশি দূর নয় তাই রানিও কৌতূহলের জন্যে বোরকা পড়েই নিল।

পরের দিন সকালে রাজ বাংলাদেশে নেমেই আগে রানির বাসার সামনে যায়।

রানি কে বার কয়েক ফোন দেয়। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না। রাজ খুব অবাক হয়। রানি তার কল ধরছে না? এটাও সম্ভব? যে মেয়ের মনে সর্বক্ষণ সে থাকে সেই মেয়ে কি না তার কল পিক করছে না। ভেবেই রাজের অবাকের সাথে রাগ হয়।

১০ টার উপরে কল দিয়েও কল রিসিভ হয় না।

রাজ একটা ম্যাসেজ পাঠায়।
“রানি রাগ না উঠিয়ে নিচে নামো। হাড়িআপ।”

রানি ম্যাসেজ সিন করেও কিছু বলে না চুপ করে বইয়ে মুখ দেয়।

রাজ আরো কয়েকবার কল দেয় রানির কোনো সাড়াশব্দ নেই।

“২ মিনিটের মাঝে নিচে না নামলে আমি কিন্তু তোমার নাম ধরে চিৎকার করব।”

রানি বেশ বুঝতে পাড়ছে। এই লোক কে দিয়ে সব সম্ভব। তাই রানি না পেরেই নিচে নামল।

রাজ দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,
“কোথায় ছিলে তুমি? আমার কল কেন ধরছিলে না?”

রানি শান্ত গলায় বলল,
“কিছু বলবেন?”
“হোয়াট ডো ইউ মিন?”
“আমি জিজ্ঞাস করেছি আপনি কিছু বলবেন আমায়?”
“তোমায় আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি না?”
“বলুন।”
“কোথায় ছিলে?”
“আমার ঘরে।”
“কল কেন ধরছিলে না?”
“এটা আমার ইচ্ছে।”
“ইচ্ছে মাই ফুট।”
“…

“এনিওয়ে এই গুলি নাও।”
“কোনো দরকার নেই।”
“মানে?”
“মানে আমি এই গুলি নিব না।”
“কেন?”
“একজন অপরিচিত লোকের কাছ থেকে আমি কিছু নিব না। নিতে চাইও না।”
“দেখো রানি আমার রাগ উঠিও না।”
“তো আপনায় কে রাগতে বলল? প্লিজ গো।”

রাজ দাঁত কটমট করে গাড়িতে সজোরে একটা কিল দেয়। রানি ভয়ে কেঁপে উঠে।

রানির দিকে ঝুঁকে কিছু বলতে গিয়েও বলে না। চুপ করে চলে যায় গাড়ি নিয়ে।

রাজ বাথটাবে বসে আছে। শাওয়ার থেকে পানি পরছে তার সারা গায়ে। রানির কথার ধরন আর তার ব্যবহার নিয়ে সে চিন্তিত। কি হলো? এক রাতে এক টা মানুষের এতটা পরিবর্তন কেন?

রাজ কিছুই ভেবে উঠতে পারছে না। না হদিশ মিলছে না এই কথার উত্তর গুলি।

দীর্ঘ একটা শাওয়ার নিয়ে রাজ ওয়াশরুম থেকে বের হলো। মাথা টাও বেশ ঠান্ডা আছে। রানির কাছ থেকে জানতে হবে কি হয়েছে।
তাই রানি কে কল দেয় সে।

রানি কল না ধরে কেটে দেয়।
রাজ ম্যাসেজ পাঠায়, “প্লিজ পিকআপ দ্যা ফোন।”

রানি কল ধরে না। এই মানুষটার কল ধরে কি হবে তার?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here