ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -০৩

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৩

দশ-টায় ইন্টারভিউ থাকলেও জ্যামের কারণে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দশ-টা বিশ বেজে গেছে। কোনমতে অফিসে এসে উপস্থিত হয়েছে মিহি। রিসিপশনে থাকা মেয়েটি বললো,সরি ম্যাম আজকের মতো ইন্টারভিউ শেষ। স্যারের জরুরি কাজ আছে। তাই আপনি আবার সাতদিন পর আসুন।

– আপনার স্যারের কাজ আছে আর আমদের কোন কাজ নেই। ওনার সময় মূল্যবান আমাদের সময়ের কোন মূল্য নেই?

– ম্যাম টাইম মতো আসতে দেরি করেছেন আপনি। অতএব আপনি এখন আসতে পারেন।

খালি পেটে মানুষের মেজাজ পুরো একশো ডিগ্রি গরম থাকে। পেট ভরা থাকলে হয়তো এখন মেজাজ থাকতো দশ ডিগ্রি। মিহি রাগী কন্ঠে বলে, আমি তো শখ করে দেরি করেছি তাইনা? সাইনবোর্ড থেকে উত্তরা দূরত্ব খুব কম মনে হয় আপনার। তার উপর রাস্তার জ্যাম সম্পর্কে ধারণা আছে তো নাকি? তো এখানে আমার ফলট কোথায়?

-সরি ম্যাম । এখন আমি কিছু করতে পারবো না আসতে পারেন আপনি।

– আপনাকে কিছু করতেও হবেনা মিস। তবে আপনার স্যারকে বলে দেবেন, সবার-ই সময়ের মূল্য আছে। বলেই সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে একজন ডেকে উঠলো মিহি।

______________________________________________
মোর্শেদ চৌধুরী একটা রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে এমন সময় একজন সার্ভেন্ট এসে বললো স্যার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আপনি যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই। মোর্শেদ চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাতের ইশারায় সার্ভেন্টকে চলে যেতে বললেন, সার্ভেন্ট চলে যেতেই, মোর্শেদ চৌধুরী দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,মমতা আমাকে ক্ষমা করে দিও! তোমার ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারিনি। তবে এবার তাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে। তুমি চলে যাওযার পর আমি তাকে নিয়েই বেঁচেছিলাম।তবে আমেরিকার বিলাসিতায় সে বিগড়ে গেছে। তাই তাকে সুধরাতে বাংলাদেশের ভার্সিটিতে ভর্তি করালাম। সেখানে যেয়ে সে আরো বিগড়ে গেছে।তার সব আবদার আমি পূরন করেছি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। কিন্তু কোন মেয়ের সাথে অসম্মান হতে দেবো না। তোমার ছেলেকে এবার বুঝতে হবে জীবনটা এতো সহজ নয়।
_____________________________________________
শাফিন হাত থেকে ফোনটা ছুড়ে মেরে বলে চাইনা আমার আপনার টাকা মিস্টার মোর্শেদ চৌধুরী। এই শাফিন চৌধুরী চাইলে নিজেই এরচেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারে। কিছুক্ষণ পূর্বে ক্লাব থেকে কল করে ক্লাবের ম্যানেজার বললো, স্যার আমাদের বিলটা কখন পে, করবেন?

শাফিন অবাক হয়ে বলে, কেন উদয় পে করেনি!

– জ্বি না স্যার।

– ওকে আমি দেখছি। ফোন রেখে উদয়কে কল করতেই উদয় রিসিভ করলো। শাফিন বললো কিরে ক্লাবের বিল পরিশোধ হয়নি কেন এখনো।

– আঙ্কেল তোর সব কার্ড ব্লক করে দিয়েছে। এমনকি তোর একাউন্টে কানা কড়িও নেই। এখন তিনলক্ষ টাকার বিল আমি কোথা থেকে পে করবো।

– দেখেছিস আমি তোকে আগেই বলেছি, ওই লোকটার বাবা হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। প্রথমে আমার মাকে শেষ করেছে। এখন আমাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করছে। দরকার নেই ওই লোকের টাকা।বলেই কল কেটে দিলো। আবারো ফোনটা বেজে উঠলো, রিসিভ করে কানে তুলতেই ড্রাইভার কবির বললো, স্যার আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন।

– চলে যাচ্ছি মানে কি?

– বড় সাহেব বলেছেন এখন থেকে আপনাকে এই গাড়ি ব্যবহার করতে না। শফিন চিৎকার দিয়ে বলে না এটা হতে পারেনা। বলেই হাতের মোবাইলটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে।

মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় বসে থাকে। হুট করে মনে পরে যায় মিহির বলা কিছু কথা।

তুমি কি এভাবেই বসে বসে খাবে?আইমিন কোন কাজ করবে না। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এভাবে বসে থাকা ঠিক হচ্ছে? তারচেয়ে নিজের কোম্পানিতেও জয়েন করতে পারো।

– আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি চৌধুরী পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী তাই তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তোমার মতো দশটা বৌ যদি, আয়েসি জীবন কাটায় তবুও তাদের বিলাসিতায় কোন কমতি হবে না।

– নিজের বাবার সাথে তো কথা বলো না। তবে তার ইনকামের টাকায় ফুর্তি করতে পারো। কোনদিন যদি টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়! তখন বুঝবে দুনিয়া কত কঠিন।

– একদম বাজে কথা বলবে না যাও যেয়ে নিজের কাজ করো। আমার দুনিয়া কঠিন হলে আমি তার সাথে ডিল করবো। তোমাকে নাক গলাতে হবে না।

চোখ তুলে উপরে তাকিয়ে বলে,একেই বলে খাল কেটে কু*মি*র আনা ওই মিহি হয়তো মোর্শেদ চৌধুরীকে ভুলভাল বুঝিয়েছে। তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। মার্শিয়া জাহান মিহি। আমি শান্তিতে থাকবো না মানে তোমাকেও শান্তিতে থাকতে দেবো না।( মানুষ নিজেকে নিয়ে যখন ব্যস্ত হয়ে পরে তখন নিজের সহজ ভুলগুলো চোখে পরেনা। বরং আশেপাশের মানুষকেই তারা দোষী ভাবতে থাকে।)

উঠে এসে কিচেনে গেলো, কিচেনের অবস্থা যাচ্ছে তাই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর হাফ হাতার টিশার্ট পড়ে। বক্সে মিউজিক অন করলো।

সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। তাই মানুষ বিয়ে করে নিজের সুখকে জলে ফালায়।

সুখ তুমি উড়ে আসো এসে আমার পাশে বসো।

জানি আমি ডাকলেও তুমি আসবা নায়য়য়য়
আর আমার ঘরে।

বিয়ে করে আমি তোমায় বিদায় করেছি চিরতরে।

ওওওও সুখে থাকতে ভুতে কিলায়।

তাই মানুষ বিয়ে করে নিজের সুখকে জলে ফালায়।

যদিও গানটি শাফিনের স্বরচিত। আর নিজেই রেকর্ড করেছিলো।
ইউটিউব বাসন মাজার টিউটোরিয়াল দেখে, দেখে বাসন মাজতে মাজতে গান শুনছে। কোনমতে থালা বাসন পরিস্কার করে মেজেতেই ধপাস করে বসে পরলো, মনে পরলো কিছু পুরোনাো কথা।

ফ্লাশব্যাক……

সারাদিন তুমি এতো কি কাজ করো? শুয়ে বসেই তো খাও শাফিনের কথা শুনে মিহি বলে, শুয়ে বসে খাও মানে? রান্না বান্নাসহ সংসারের যাবতীয় কাজ কি তোমার আরেক বউ করে দিয়ে যায়।

– এমন ভাবে বলছো যেনো এভারেস্ট জয় করে ফেলেছো। এতটুকু কাজ আমি মূহুর্তেই করে দিতে পারি।

– তো করতে মানা করলো কে? মনের সুখে করতে পারো। তখন বুঝবে, কত চালে কত ভাত।

– এতো বোঝাবোঝির কি আছে?যতটুকু চাল ততটুকু ভাত।

– ওলে তাই নাকি বাবু তাহলে এক কাজ করো আজ থেকে রান্নাবান্নার কাজ তুমি করো। আর আমি তোমার মতো শুয়ে বসে আড্ডা দিয়ে দিন পার করি।

– এহহহহহ শখ কত বেবি। এসব কাজ চাইলেই করা যায় তবে তুমি থাকতে আমি ইম্পসিবল।

– যেদিন নিজের ঘাড়ে পরবে তখন বুঝবে এসব কাজ করা কেমন সহজ।

নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে, বলে এসব কাজ কোন ব্যপার না হু। এসব শাফিনের বা’হাতের কাজ।
ফ্লোরে হাত, পা ছড়িয়ে।বেসুরো গলায় গেয়ে উঠলো, করবো না করবোনা বিয়া আর করবো না। এক বিয়ে করে জীবন আমার ত্যানা ত্যানা।
নিজেই নিজেকে বলছে বাহহহ শাফিন আর কিছু না হোক তুইতো এই সব উদ্ভট গান গেয়ে ভাইরাল হয়ে যাবি! তখন তোর আর কোন টাকার অভাব হবেনা। আজকাল তো মানুষ খেয়ে আর ন্যাকামি করেও ভাইরাল হয়। সব চিন্তা বাদ দিয়ে সেভাবে বসে থেকেই একটা ব্লগ বের করলো, যেখানে ক্যাপশন লেখা আমার মিনি ব্লগ। সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম,তারপর টয়লেটে গেলাম। তার ব্রাশ করলাম, হেন তেন বলছে। সাথে সাথে ভিডিও অফ করে বলে, এখন এসব করে খেতে হবে নাকি? না, না এস আমার দারা হবে না। মিনি ব্লগ বলে পুরো দিনের সব দেখানো শেষ। ওই ভিডিও পাল্টে অন্যটা দিলো সেখানে একজন প্রচুর খাবার খাচ্ছে। অবাক হয়ে শাফিন বলে, এটা হয়তো সহজ। তবে এই খাওয়ার ভিডিও কে দেখবে? ভিউয়ার্স থেকে শাফিনের চোখ কপালে ওয়ান মিলিয়ন প্লাস ভিউ। মনে মনে বলছে, কাজ না থাকলে মানুষ আর কি করবে। অন্যের খাওয়া দেখেই দিনপার করে। দূর এটাও হবে না। অন্য কিছু এমন করে বেশ কিছু ভিডিও দেখে।কোনটাই মন মতো হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মোবাইল রেখে বেসিনের সামনে এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে বলে, শাফিন তোকে দিয়ে সত্যি কিছু হবে না। মানুষের থেকে কিছু শেখ শাফিন কিছু তো শেখ।
______________________________________________
মিহি অপরিচিত কন্ঠে নিজের নাম শুনে পেছনে ঘুরে অবাক কন্ঠ বলে,ফাহিন তুই!

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here