চরিত্রহীনা পর্ব ৩

‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-৩
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের ২ পর্বের লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া হবে 🙂
.
এই প্রচন্ড মাথাব্যাথা নিয়ে তিন্নি কোনোরকম ঘরের ভিতর ঢোকে। আর এই ব্যাথা সহ্য হয় না তিন্নির। কিন্তু উপায় কি? কার কাছে যাবে? কে তাকে এই বাজে অবস্থায় সাহায্য করবে? কার কাছে নিজের মনা কথা বলবে? এই প্রশ্ন তিন্নিকে প্রায় উম্মাদ করে তোলে। কোনো মানুষের সান্তনা পাওয়ার জন্য তার মন ছটফট করতে থাকে, যদি তার চরম শত্রুকেও এখন কাছে পেত তাহলেও হয়ত তিন্নির উত্তপ্ত হৃদয় মৃদু হাওয়ার সংস্পর্শ পেত। নাহ! এখন এই পৃথিবীতে তিন্নির কোনো শত্রু নেই এখন শুধু কোনো মানুষের সংস্পর্শ পেতে চায়। আর এই যন্ত্রনা সহ্য হয়না, হয়ত মৃত্যু এর চেয়ে উত্তম ছিল। মোবাইলটাও কাছে নেই,যেন বিপদ আর ঝামেলা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছে।
.
এখনো এক রাত, গভীর এক রাত! মাথাব্যাথা আরো ভয়ানক রূপ নিচ্ছে, কেউ নেই তিন্নির পাশে, যন্ত্রনার প্রতিটা মুহূর্ত যেন ১ দিনের সমান, লাইটের আলো সহ্য হয় না। বাধ্য হয়ে লাইট অফ করে দিতে হয়। অন্ধকার চরম গভীর হয়ে ওঠে। কেউ নেই এই রাতে শুধু একটা ঘরে একা একজন নারী হয়ত তার পাপের ফল, অথবা নিজের তরুণ বয়সের ভুল। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ব্যাখা দিবে কিন্তু কষ্টে ছটফট করা এই নারীকে দেখলে যেকোনো ব্যক্তির চোখের পানি বেরিয়ে আসতে বাধ্য। কেউ নেই তিন্নিকে সাহায্য করার। শুধু আছেন এক ঈশ্বর। এই ভয়াবহ লম্বা রাত কাটাতে ঈশ্বর তার একমাত্র সঙ্গি। কিন্তু এরকম আর কত রাত তাকে কাটাতে হবে তা ঈশ্বর ভালো জানেন। কে জানে? হয়ত ঈশ্বর তাকে প্রস্তত করছে আগামী দিনগুলোর জন্য ।
.
(৯)
.
সারারাত জাভেদের খুব একটা ঘুম হয়নি, সেই অসাহয় মেয়েটার চেহারা বারবার জাভেদের মাথায় আঘাত করছিল। মেয়েটাকে দেখার জন্য মন প্রচুর ছটফট করছিল।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়েছে তাই ১ টা টিউশনি মিস হয়েছে। কালকে রাতে মেয়েটার ওরকম ভয়াবহ অবস্থা দেখে কোনো কিছুতেই মন বসে না। কিন্তু হাত পা বাধা, জীবন চালাতে হলে পরিশ্রম করতেই হবে। আবেগ দিয়ে কিছুই হবে না। মনে সামান্য ইচ্ছা নেই তবু মনের বিরুদ্ধে গিয়েই রেডি হতে হল। নাস্তা বানানোর ইচ্ছা নেই, বাহির থেকেই খেয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দরজাটা খুলে বাহিরে বের হয়ে প্রায় ৩-৪ টা সিঁড়ি পার করে কেন জানি মেয়েটার সাথে দেখা করার ইচ্ছা জাগতে থাকে জাভেদের।
.
– মেয়েটা কি ভালো আছে? কালকে রাতে যে অবস্থায় ছিল ! কিছু আবার উল্টাপাল্টা হয়নি তো! মেয়েটার বাসাতে গিয়ে জিজ্ঞেস করব? আবার মাইন্ড করবে নাকি?
.
মেয়েটাকে না দেখে যাওয়া জাভেদের কাছে বেশ অমানবিক মনেহতে থাকে। কিন্তু মেয়েটা যদি বিষয়টা অন্যভাবে নেয় সেই বিষয়টাও জাভেদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে, যথেষ্ট বেজেছে যা ডিসিশন নেওয়ার তাড়াতাড়ি নিতে হবে।
.

অবশেষে বহু সাহস জুটিয়ে মেয়েটার বাসায় গিয়ে বেল বাজায়, বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখে মেয়েটা দরজা খোলে না। হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে এইভেবে দ্বিতীয়বার আর দিতে চায় না। কিন্তু তবুও মনের অস্থিরতার জন্য বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বার বেল বাজায়। শেষমেশ
মেয়েটা দরজা খোলে।
.
একরাতে মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়,ঘুম থেকে মাত্র উঠেছে সেটা বোঝা খুব একটা কঠিন না। কিন্তু নাক মুখে অদ্ভুত পরিবর্তন। নাক-মুখ বেশ শুকিয়ে গিয়েছে। কালকে সারা রাত যে প্রচুর কষ্টের সাথে কাটিয়েছে তা বোঝা খুব একটা কঠিন না।
.
– আসসালামু আলাইকুম।
.
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
– কেমন আছেন? কালকে রাতে আপনাকে বেশ খারাপ অবস্থায় দেখেছিলাম তাই দেখতে এলাম। কেমন আছেন? শরীর কি এখন সুস্থ?
.
– জ্বী মোটামুটি সুস্থ।
.
– বেশ ভালো। আপনি এখানে একা থাকেন?
.
– না! আমার হাজবেন্ড থাকে সাথে।
.
‘হাজবেন্ড’ শব্দটা শুনে জাভেদ প্রায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
.
– এতটুক একটা মেয়ে তার হাজবেন্ড আছে? বাবা! কত বয়স হবে বেশি জোর ১৮-১৯ বেশি বাড়ালে ২০।
.
– আচ্ছা আমি তাহলে আসি ভালো থাকবেন । আল্লাহ হাফেজ।
.
– আল্লাহ হাফেজ।
.
মেয়েটা দরজা আটকিয়ে দেয়। কিন্তু জাভেদের মনে এই অদ্ভুত প্রশ্ন ঘুরতে থাকে।
.
– কত সৌভাগ্যবান ছেলেটা এত সুন্দরি একটা স্ত্রী পেয়েছে, ছেলেটার বয়স আর কত হবে? এরকম ১৯-২০ হয়ত। আজকাল ছেলে পেলেরা কত অল্প বয়সে এসব কাজ করে। আর আমাকে এখন পর্যন্ত ফেইসবুকে একটা মেয়ে চ্যাটে পর্যন্ত ঠিক মত পাত্তা দেয় না আর এসব পোলাপান বিয়েও করে ফেলেছে।
.
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে বেশ শোকাহত হয়ে একটা নি:শ্বাস ছেড়ে ঘড়ির দিকে তাকায় জাভেদ।
.
– বাপরে! দেরি হইয়্যা যাইতেছে, এসব ইমোশোন দিয়া আর টাকা হবে না। এমনিতে একজন বাদ গেছে আরেকজনকে কোনোভাবে বাদ দেওয়া যাবে না।
.
বেশ তারাহুড়া করে গেট থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করে।
.
(১০)
.
বিকাল হয়ে এসেছে আবার সূর্য তার নিয়মানুসারে পশ্চিমের দিকে চলে যাচ্ছে। আরো একটা দিন সমাপ্তির পথে, কিন্তু তিন্নির ভয়াবহ দিনগুলোর সমাপ্তি কোথায় তা এখনো অজানা। যদি সূর্য অস্তের সাথে তিন্নির সব দু:খ গুলো অস্ত যেত? পুরো ঘরে মাত্র ১৬০০ টাকা আছে। এই ১৬০০ টাকা আর কয়দিন থাকবে? এই ১৬০০ টাকাই এখন তিন্নির জীবন নিয়ন্ত্রন করছে।
.
– এই ১৬০০ টাকা যদি শেষ হয়ে যায় আর রনি যদি না আসে?
.
চোখের পানিগুলোর আকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে, এই টাকাগুলো শেষ হয়ে গেলে কোথায় যাবে তিন্নি? কে আশ্রয় দিবে এই চরিত্রহীনাকে?
.
– কিভাবে এতদিনের সম্পর্ককে রনি এভাবে মাটি দিতে পারে? ও তো কোনোসময় এরকম ছিল না। হঠাৎ ছেলেটার এমন কি হল? ও কি আর কখনো আসবে না? এমন হতে পারে না যাবার পথে কোনো বিপদে পড়েছে? এমন হতে পারে না, আমার থেকে বড় বিপদে রনি আছে?
.
এরকম মিথ্যে সান্তনা দিয়েও নিজের অশ্রুগুলোকে থামাতে পারে না। আকাশের রঙ আজ বেশ অদ্ভুত। যদি এই সুন্দর আকাশে পাখিদের মত উড়তে পারত তিন্নি।
.
– পাখিগুলো আসলে পৃথিবীতে সবথেকে সুখী।
.
হঠাৎ বেলটা বেজে ওঠে।
.
– এই বিকালে কে আসবে?
.
বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে তিন্নি, বেশ তারাহুড়া করে দরজাটা খোলে।
.
– তানিয়া তুই! ভিতরে এসে বস।
.
– না বসতে আসি নাই। একটা কথা সত্যি করে বল।
.
– কি?
.
– তোর আর রনির মধ্যে কি কোনো ঝামেলা হইসে?
.
– না, কেন?
.
– মিথ্যা বল কেন? রনি মিনিমাম ১০-২০ বার আমাকে ফোন দিয়েছে তোর সাথে নাকি কি জরুরি কথা বলবে। তোর মোবাইল তো নষ্ট। আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিল তোর কাছে মোবাইল নিয়ে যেতে। তাই এলাম
.
মুহূর্তে সব দু:খ যেন পুড়ে ছাই। আল্লাহ যেন এই চরিত্রহীনার উপর দয়া করেছে। সব আতঙ্ক যেন হাওয়ায় মিলে গিয়েছে, তানিয়ার হাত থেকে কোনোরকম মোবাইলটা হাতে নিয়েই রনির নাম্বারটা টাইপ করে। শেষমেশ রনিকে যেন ফিরে পেয়েছে। কল করার মুহূর্তের মধ্যে রনি ফোনটা ধরে।
.
– হ্যালো।
.
এই হ্যালো শব্দটা তিন্নির কাছে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পুরষ্কার।
.
– হ্যালো রনি।
.
– তিন্নি?
.
– তুমি কোথায় প্লিজ বল। প্লিজ আজকে আসো প্লিজ আমার আর ভালো লাগে না। প্লিজ আসো প্লিজ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
.
– আমাকে মাফ কর তিন্নি। আমাকে মাফ কর প্লিজ।
.
– কেন কি হয়েছে?
.
– আমি আর কবে আসব বলতে পারি না। সেদিন আমি মিথ্যা বলেছিলাম তোমাকে, তোমার দু পা ধরে মাফ চাই। বাবা আমাদের কথা কিভাবে জানি জানতে পেরেছিল। কে জানি ওনাকে এসব বলে দিয়েছে। বাবা রাগে আগুন হয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন বারবার মা ফোন দিচ্ছিল, ঢাকায় আসার জন্য। বাবা নাকি এখানে আসতে চেয়েছিল কোনোভাবে মা, বাবাকে ঠেকিয়েছিল। আমার আর কী করার ছিল, বাধ্য হয়ে তোমাকে মিথ্যা বলে ঢাকায় আসতে হয়। ভেবেছিলাম পরিস্থিতি সামলানো যাবে কিন্তু বাবা রাগে উম্মাদ, আমাকে মেরেই ফেলবে। বহুকষ্টে সবাই বাবাকে থামিয়েছে। মোবাইল বাবা ভেঙে ফেলেছে, টাকা পয়সা সব নিয়ে গিয়েছে। টাকা পয়সাও আর দিতে চায় না। আমি কিভাবে আসব বল? প্লিজ মাফ কর। প্লিজ! তোমাকে ধোকা দেওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে। আমাকে মাফ কর প্লিজ। একদিন তোমার কাছে আসব বিশ্বাস কর।
.
কিছু বলার শক্তি নেই তিন্নির মধ্যে। ফোনটা কেটে দেয়। মুহূর্তেই সব আশা ধুলোতে পরিণত হল। চুপচাপ মোবাইলটা তানিয়ার হাতে দিয়ে দেয়।
.
– কী ব্যাপার কী কথা বললি?
.
– কিছু না।
.
তিন্নির চেহারায় শোকের ছাপ বেশ স্পষ্ট। তিন্নিকে আর অযথা জ্বালাতে চায় না।
.
– আমি তাহলে আসি।
.
– আচ্ছা।
.
তানিয়াকে দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে তিন্নির আর নিজেকে দাড় করিয়ে রাখতে পারে না। দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ে আর চিৎকার দিতে থাকে।
.
– আমি তো একা না। আমার সাথে আরো একটা জীবন আছে, হে আল্লাহ আমি কী করব? আমাকে আর কত কষ্ট দিবা?
.
বিভিন্ন বাজে চিন্তা ঘুরতে থাকে মাথায়।
.
– এই ঝামেলাটাকে শেষ করলে হয় না? এবরশন! নাহ! আমার পাপের শাস্তি কেন একটা নিষ্পাপ পাবে। কিন্তু কে দেখবে আমাদের?
.
(১১)
.
আজকে নয়টার মধ্যে বাসায় আসতে হল জাভেদের। স্টুডেন্ট নাকি বাহিরে কোথায় গিয়েছে। যাক বেশ ভালো বাসায় গিয়ে একটু আরাম করা করা যাবে।
.
সিঁড়ি দিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে উপরে উঠতে থাকে জাভেদ, কিন্তু হঠাৎ গতি বেশ মন্থর হয়ে যায়। বাড়িওয়ালা লোকটাকে বেশ চিল্লাচিল্লি করতে থাকে মেয়েটার উপর। মাসের আজকে ১৫ তারিখ এখনো ভাড়া দেয়নি হয়ত সেকারণে । বেটা বেশ মেজাজে ছিল। মেয়েটা একেবারে চোরের মত চেয়ে আছে, যেন সে বিশাল অপরাধি। লোকটা চিল্লাচিল্লি করে, বাসা দিয়ে বের করার হুমকি দেয়। মেয়েটা একেবারে মুখ নিচু করে চেয়ে আছে, কিছু জবাব দিচ্ছে না শুধু চুপচাপ মোটা লোকটার কথাগুলো সহ্য করে নেয়। মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে জাভেদের বেশ করুণা হয়।
.
– লোকটা বেশ নিষ্ঠুর। এত সুন্দরি একটা মেয়েকে কিভাবে কেউ এরকম যা তা বলে? মেয়েটার চেহারা দেখেও কি ব্যাটার করুণা হয় না? কিন্তু মাসের ১৫ তারিখ কেউ ভাড়া না দিয়ে কিভাবে পারে? মেয়েটার হাজবেন্ড কি বোকা?
.
বেশ অন্যমনস্ক হয়ে দরজার তালাটা খুলে ফেলে জাভেদ। ঘরে ঢুকে শার্টটা খুলে একটা পাতলা গেঞ্জি পরে সোফায় বসে পড়ে। মাথায় শুধু মেয়েটার নিরীহ চেহারাটা ঘুরপাক খায়।
.
– মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে! লোকটা কি পাগল? ভালোভাবে বলতে পারত না? এরকম রাগ দেখানোর কি মানে হল? টাকাতো যথেষ্ট আছে বাসায়, মেয়েটার ভাড়া আমি দিয়ে দিব? কিন্তু মেয়েটা যদি বিষয়টা নেগেটিভলি নেয়?
.
মেয়েটাকে নিয়ে জাভেদের মনে প্রচুর বিতর্ক চলতে থাকে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেয়,
.
– থাক মানুষকে সাহায্য করায় ক্ষতি কি? একটা অসাহয় মানুষকে সাহায্য করলে কি অসুবিধা? কিন্তু না জিজ্ঞেস করে সাহায্য করা উচিত হবে না। থাক একবার জিজ্ঞেস করি। কিন্তু.. এই রাতে এরকম বাসায় যাওয়া উচিত হবে?
.
প্রচুর সাহস জুটিয়ে শেষমেশ মেয়েটার ফ্লাটের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজালো। মুহূর্তে মেয়েটা দরজা খোলে। মেয়েটার মুখে শোকের ছাপ বেশ স্পষ্ট।কেমন জানি অদ্ভুত লাগে মেয়েটাকে!
.
– আসসালামুআলাইকুম।
.
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
– জ্বি আশাকরি বিষয়টাকে নেগেটিভলি নিবেন না কিন্তু বাড়িওয়ালা লোকটাকে আপনার উপর বেশ রাগে দেখলাম, বাসা ভাড়া সম্ভবত সাড়ে ৪ হাজার। টাকাটা রাখুন। নেগেটেভলি নিবেন না। প্রতিবেশী হিশেবে সাহায্য করাটা উচিত মনে করলাম আর কিছু না।
.
– আপনার টাকা আমি নিব কেন?
.
– না মানে লোকটা বোধহয় টাকা নিয়ে বেশ ঝামেলা করছিল। তাই ভাবলাম…
.
– নো থ্যাঙ্কস।
.
– আপনার হাজবেন্ড কি করেন জানতে পারি?
.
– আমি কি বলতে বাধ্য?
.
– আমি কি বলেছি? এমনি জানতে চেলাম আর কিছু না। আপনি তো দেখছি রাগ করলেন।
.
– ঠিক আছে সরি, আসলে আমি মিথ্যা বলেছি আমার কোনো হাজবেন্ড নেই। বয়ফ্রেন্ড নিয়ে থাকতাম। এখন সে আর নেই কবে আসবে তাও জানিনা। জেনে ভালো লাগল?
.
– তাহলে আপনি থাকবেন কিভাবে? আপনি কি চাকুরীজীবী না পারিবারিক ভাবে টাকা পান?
.
– আপনি শুধু অকারণে ফালতু প্রশ্ন করতেছেন কেন?
.
– ঠিক আছে সরি কিন্তু টাকাটা নিবেন না?
.
– আপনি কানে কম শোনেন?
.
চরম উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলে। রাগে মেয়েটার নাক মুখ দাড়িয়ে যায়। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে রাগ যেন গলে যায়, হঠাৎ মেয়েটার নাক মুখে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। হয়ত বেশ অসুস্থ বোধ করছে। মেয়েটা নিচে পড়ে যাওয়া শুরু করে, জাভেদ মেয়েটাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে কোনোভাবে রক্ষা করে। মেয়েটার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। টেবিলের উপর থেকে জগ দিয়ে একগ্লাস পানি এনে দেয় মেয়েটাকে।
.
– ঠান্ডা হয়ে পানিটা খেয়ে ফেলুন। মাথা থেকে সব চিন্তা, রাগ নামিয়ে ফেলুন।
.
বেশ ধীরে সুস্থে মেয়েটা একগ্লাস পানি পান করে।
.
– আপনাকে ধন্যবাদ। আমি দু:খিত আপনার সাথে ওরকম বাজে ব্যাবহারের জন্য। আসলে ব্যক্তিগত জীবনে আমি প্রচুর ঝামেলায় জর্জরিত, তাই আজকাল কিছু ভাললাগে না।
.
– রাগে মানুষ এরকম অনেক কিছুই করে। নো প্রব্লেম।
.
– আপনার টাকাটা আমি নিতে পারব না। কারণ, আপনাকে টাকা ফেরত দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।
.
– আরে বাবা! আমি আপনাকে একবারো ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি? আমি তো বললাম, প্রতিবেশী হিশেবে আপনাকে সাহায্য করতে চেয়েছি আর কিছু না। টাকাটা নিন। একেবারে নিশ্চিন্তে নিন। বাই দ্যা ওয়ে আমি সুদের ব্যবসা করি না।
.
অশ্রুসিক্ত চোখে মেয়েটা জাভেদের দিকে চেয়ে রইল। হয়ত জাভেদের প্রতি প্রচুর কৃতজ্ঞ সে।
.
– কাদলে মেয়েটার গাল বেশ লাল হয়ে ওঠে। কি অদ্ভুত সুন্দরি মেয়েটা। কত নিষ্ঠুর মানুষ হলে এত সুন্দরি একটা মেয়ের বিশ্বাস ভাঙা সম্ভব? কত বড় হারামজাদা ছেলেটা!
.
– আপনাকে ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার কাছে চিরঋণী।
.
– নাহ! ঋণী হওয়ার কিছুই নেই। আচ্ছা আমি আসি।
.
উঠে চলে যাওয়া শুরু করে। কিন্তু আবার থেমে যায়।
.
– আচ্ছা আপনার নামটা কি?
.
– তিন্নি।
.
এত সুন্দর নাম যেন জাভেদ কখনো শোনেনি। কী মায়াবী নাম! নামটার মধ্যে কেমন জানি অদ্ভুত একটা চাঞ্চল্যতা আছে। যেকোন পুরুষকে আকর্ষনের জন্য মেয়েটার নামই যথেষ্ট।
.
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here