চরিত্রহীনা পর্ব ৬

‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-৬
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের ৫ পর্ব কমেন্টে লিঙ্ক দেওয়া হবে।
.
তিন্নির স্পর্শে জাভেদের মনেহতে থাকে বজ্রপাতটা আশেপাশে কোথাও হয়নি বরং তার শরীরের উপর বজ্রপাত হয়েছে। তিন্নির শরীর বেশ গরম হয়ত জ্বর। জাভেদ একেবারে চুপচাপ শক খেয়ে দাড়িয়ে থাকে। তিন্নি নিজের আচরণে বেশ লজ্জা পায় বাধ্য হয়ে জাভেদের কাছ থেকে সরে আসে। চুপচাপ দরজাটা আটকিয়ে দেয় তিন্নি। জাভেদ বেশ শোকাহত হয়ে ঘরে চলে যায়।
.
বৃষ্টিতে ভিজে তিন্নির হালকা জ্বর উঠেছে,হালকা মাথাব্যাথাও হচ্ছে। মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে।
.
– ছেলেটা আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি এভাবে না করলাম এটা কি উচিত ছিল? আমার ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকার। রনি কবে আসবে কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাবা মা কখনো মেনে নিবে না। ঘরে মাত্র ১৩০০-১৪০০ টাকা আছে এই টাকা আর কয়দিন থাকবে? আমি কিভাবে কাটাব আগামী দিনগুলো? আমার সাথে আরো একটা জীবন ! কিন্তু আরেকটা মানুষের বোঝা হয়ে কেন থাকব? আর জাভেদ যদি জানতে পারে সেও আমাকে চরিত্রহীনা বলবে আর কি! হয়ত তার এই আবেগ মুহূর্তে আকাশে হাওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে বসে থাকা ঠিক না কিন্তু মোবাইলটাও তো ভেঙে গিয়েছে এখন যে বৃষ্টি তার মধ্যে সামিয়াদের বাসায় যাওয়াও অসম্ভব। সামিয়ার চাচাত ভাইটার নাকি টিচার লাগবে তাও নাকি ইংলিশে।
.
ইংলিশে তিন্নির অসাধারণ দক্ষতা আছে।
.
– সামিয়ার চাচাত ভাইটাকে যদি পড়িয়ে কিছু টাকা অর্জন করা যায় তাতে অসুবিধা কি? অন্যের বোঝা হয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভালো।
.
তাছাড়া জাভেদের একটা কথা বারবার মাথায় ভাসে,
.
” আর যদি বাবা-মা’র সাথে আমার মত অভিমান করে থাকতে চান তাহলে নিজেকে শক্ত করুন, প্রতিকূলতার সাথে লড়াইয়ের চেষ্টা করুন। ”
.
(১৪)
.
নিজেকে চরম অপমানিত মনেহতে থাকে জাভেদের।
.
– ধুর! আমি আসলেই পাগল। অযথা চালাকি করে অন্য মানুষের জীবনে নাক গলাতে গেলাম কেন? সে যদি অসাহয় থেকেই সুখি থাকে আমি অযথা চালাকি করতে গেলাম কেন? ৫-৬ মিনিট রিক্সায় উঠেছে, একটু একসাথে পার্কে গিয়েছে তাতেই গলে গেলাম!? আসলেই আমি পাগল।
.
বাইরে বৃষ্টি আরো প্রবল রুপ ধারণ করতে লাগল। জাভেদ জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকে। বৃষ্টি সচারচর জাভেদের খুব একটা ভাললাগে না কিন্তু আজকে বৃষ্টি অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। মোবাইলটা বের করে,নিজের বেশ প্রিয় গান,” 500 Miles ” শুনতে থাকে।
.
– বৃষ্টিটা আসলেই সুন্দর। তিন্নির গা হালকা গরম হয়ত জ্বর হয়েছে। এমনিতে যে বৃষ্টিতে ভিজেছে তাতে জ্বর আসা অস্বাভাবিক না। যার জ্বর সে চিন্তা করুক। আজকে আর কোনো জায়গা পড়াতে যাব না। একটার পর একটা গান শুনব আর বৃষ্টি দেখব।
.
টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে একটা সিগারেট বের করে, চেয়ারটা টেনে একদিকে গান শুনতে থাকে আর অন্যদিকে মহানন্দে সিগারেট টানতে থাকে।
.
– আহ! বৃষ্টিটা আসলেই সুন্দর।
.
(১৫)
.
সারা রাত তিন্নির বেশ জ্বর ছিল পাশাপাশি তীব্র মাথাব্যাথাও ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে জ্বর আর মাথাব্যাথা দুটোই যথেষ্ট কমে যায়। আজকে প্রথম কাজ, সামিয়াদের বাসায় যাওয়া। কপাল যদি ভালো থাকে টিউশনিটা জুটে গেলে অনেক উপকার হবে।এমনিতে আকাশ মেঘলা বৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তাড়াতাড়ি রওনা দিতে হবে। তাই সকাল সকাল উঠে কোনোরকম এক কাপ চা পান করে সোজা সামিয়াদের বাসায় রওনা।
.
সামিয়াদের বাসা খুব একটা দূরে না মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই সামিয়াদের বাসায় পৌঁছে গিয়েছে তিন্নি। যদিও হালকা লজ্জা লাগছিল কিন্তু উপায় নেই, এই চরম সময়ে কোনোভাবে লজ্জাবোধ করলে হবে না। সামিয়ার বাসায় গিয়ে দরজায় বেল দেওয়া মাত্র সামিয়া দরজাটা খুলে দেয়।
.
– তিন্নি তুই?
.
তিন্নিকে বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে সামিয়া।
.
– কি ব্যাপার কেমন আছিস? আজকাল তুই কোথায় থাক? ফেইসবুকেও দেখা যায় না।
.
– মোবাইল ভেঙে গিয়েছে তো তাই।
.
– আয় ভিতরে বস।
.
– না বসতে আসি নাই। একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
.
– কি কথা?
.
– তোর চাচাত ভাই সিয়াম, ওর জন্য কি ইংলিশ টিচার পেয়েছিস?
.
– না, কিন্তু কেন?
.
– আমি পড়াতে ইচ্ছুক তাই জিজ্ঞেস করলাম?
.
– তিন্নি তুই সিরিয়াস নাকি জ্বর উঠেছে গায়ে?
.
– ফাজলামি করিস না ভাই, আমার অনেক প্রয়োজন টিউশনিটা।
.
– আচ্ছা তুই আমার সাথে চল। চাচ্চু ৫ তলায় থাকে। চাচ্চু বাসায় নেই, চাচি আছে তার সাথে কথা বলে দেখ।
.
-ঠিক আছে চল তাহলে।
.
তিন্নিকে সামিয়া ৫ তলায় তার চাচার বাড়িতে নিয়ে যায়। বেশ অল্পতে মহিলা তিন্নির কথা মেনে নেয়। মেয়ে অথবা অল্পবয়স্ক দেখে খুব একটা সঙ্কোচ করে না।
.
– ঠিক আছে আজকে থেকেই তাহলে পড়ানো শুরু কর। সপ্তাহে চার দিন মিনিমাম পড়াতে হবে আর সাড়ে ৪ হাজার টাকা পাবা।
.
কৃতজ্ঞতায় তিন্নির দুচোখে প্রায় পানি চলে আসে। সে কোনোদিন নিজ যোগ্যতায় এত কিছু করতে পারবে এটা তার কাছে স্বপ্ন থেকেও বেশি।
.
– ঠিক আছে আন্টি, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
.
– না ধন্যবাদ বলার কিছু নেই। এই সিয়াম এদিকে আয় আর হ্যা ওকে একেবারে কড়া শাসনে রাখতে হবে। ও কিন্তু একটু ফাঁকিবাজ টাইপের। আর আমার একটু বাইরে যেতে হবে ও জানি কোনোরকম ফাঁকি না দেয়, ঠিক আছে?
.
– আন্টি আপনি কোনো টেনশন নিয়েন না।
.
– আচ্ছা।
.
সিয়ামকে তিন্নি পড়াতে থাকে। সিয়াম যে যথেষ্ট ঘাড় ত্যাড়া টাইপের ছেলে তা বোঝা তিন্নির বাকি নেই। একের পর এক অহেতুক প্রশ্ন,
.
“আপু আপনার এফবি একাউন্টের নাম কি? ”
.
“আপনি এত ভাল ইংলিশ পারেন কিভাবে? ”
.
“আপুর বাসা কোথায়? ”
.
একের পর এক অদ্ভুত প্রশ্ন। ইংলিশে ‘ই’ পর্যন্ত পারে না। কিভাবে ক্লাস টেন পর্যন্ত এসেছে তিন্নি সেটা ভাবতে থাকে। প্রথম দিন যথেষ্ট ধমকের উপর রাখতে হয় ছেলেটাকে।
.
ধীরে ধীরে ছেলেটার বেয়াদবির মাত্রা বাড়তে থাকে। তিন্নির পায়ের উপর বারবার খোচা দিতে থাকে। ইচ্ছা করে চেয়ার টেনে তিন্নির একেবারে গা ঘেঁষে বসে। রাগে তিন্নির মাথা আগুন হতে থাকে এখানে এতক্ষণ বসে থাকত না। হয়ত নিজের চরম অসাহয়ত্বের কারণে বসে আছে। এক পর্যায় ছেলেটা নিজের সব বেয়াদবির মাত্রাকে অতিক্রম করে তিন্নির হাত ধরে বলে,
.
“আপু তুমি খুব কিউট। ”
.
তিন্নির সহ্যের সীমা একেবারে শেষ হয়ে যায় নিজের হাতটা জোরে একটা টান দিয়ে সিয়ামের হাত থেকে মুক্ত করে স্বজোরে সিয়ামকে ২ টা থাপ্পর লাগিয়ে দেয়।
.
– অসভ্য,শুয়ার জানি কোথাকার!
.
রাগে তিন্নি হাটা শুরু করে। সিয়াম চেয়ার থেকে উঠে দৌড়ে তিন্নির চুল ধরে জোরে টান দেয়, তিন্নির উপর সে সমানে নির্যাতন চালাতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে তিন্নিকে সোফায় ফেলে দেয়। তিন্নি কোনোভাবে নিজেকে এই নরপিশাচের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করে।
.
হয়ত তিন্নি যথেষ্ট সৌভাগ্যবতি ছিল মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে মধ্যে কে জানি বেল বাজায়। ভয়ে সিয়াম তিন্নির মুখ স্বজোরে চেপে ধরে, হয়ত তিন্নিকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালাতে থাকে। তিন্নি সিয়ামের আঙ্গুলে বেশ জোরে একটা কামড় বসিয়ে, সিয়ামের হাত থেকে নিজেকে কোনোরকম বাচিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খুলে দেখে সিয়ামের বাবা। তিন্নিকে এই অবস্থায় কাদতে দেখে সিয়ামের বাবার কিছু বোঝা বাকি ছিল না।সিয়াম দৌড়ে অন্যরুমে পালানোর চেষ্টা করে তার আগেই সিয়ামের বাবা কোনোরকম সিয়ামকে ধরে ফেলে। ধরেই একেবারে কুকুরের মত মারা শুরু করে।
.
তিন্নির এসব দেখার সময় নেই সে কাদতে কাদতে নিচে রাস্তায় চলে যায়।
.
তুমুল বৃষ্টি বাইরে,তাতে তিন্নির কিছু যায় আসে না। দৌড়ে বাইরে চলে যায়। বাইরে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেন তিন্নি নিজেকে বিশুদ্ধ করে। বৃষ্টির পানির সাথে তিন্নির কেটে যাওয়া গাল থেকে রক্ত মিশে মাটিতে পড়তে থাকে। সমানে কাঁদতে থাকে তিন্নি। সারা শরীর ব্যাথায় নাড়াতে পর্যন্ত পারে না। একটা রিক্সা নেই কিছু করার নেই চুপচাপ হাটতে থাকে তিন্নি। আশেপাশে বিভিন্ন লোকজন তিন্নির অবস্থা দেখে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না তিন্নিকে সাহায্য করতে। তিন্নি যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অসাহয় মানুষ। কিন্তু তিন্নি নিজেকে নিয়ে যতটা ভাবতে থাকে তার থেকে বেশী পেটে থাকা নিজের মহামূল্যবান সম্পদ নিয়ে ভাবতে থাকে। নিজের পেটে বারবার হাত বুলাতে থাকে।
.
তিন্নির মধ্যে এখন কোনো লজ্জা নেই, কোনো ভয় নেই, আশেপাশের মানুষ তাকে এভাবে জামা কাপড় ছেড়া অবস্থায়, নাক-মুখ আহত অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজতে দেখছে কিন্তু তিন্নির কোনো খেয়াল নেই সেদিকে।
.
(১৬)
.
এই বৃষ্টি জাভেদের সুদিন এনে দিচ্ছে। আজকেও টিউশনি মিস দিয়ে বাসায় একটু আরাম করতে পারবে।
.
– যাক ছাতাটা এনে ভাল করলাম। অযথা ভিজতে হবে না।
.
রিক্সার পর্দার পিছনে বসে বেশ আরামে ভ্রমণ করতে থাকে। বাসার সামনে এসে রিক্সাটা থামা মাত্র জাভেদ ছাতা বের করে হাতে ছাতাটা নিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে রিক্সাওয়ালাকে টাকাটা দিয়ে দেয়। বৃষ্টি আরো ভয়ানক রুপ নিতে থাকে। মাথাটা ডান দিকে ঘুরতেই জাভেদ দেখে তিন্নি এই অস্বাভাবিক বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে। জামাটা অনেক খানি ছিড়ে গিয়েছে, নাক মুখে বিভিন্ন জায়গা ভয়াবহ আহত। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তিন্নি বৃষ্টিতে ভিজতেছে। জাভেদ দৌড়ে গিয়ে তিন্নির কাছে দাড়ায়। ছাতাটা দিয়ে তিন্নির মাথা ঢেকে দেয়।
.
– এই যে, আপনি কি পাগল? এভাবে বোকার মত বৃষ্টিতে ভিজতেছেন কেন? আপনি কি এক্সিডেন্ট করেছেন? নাক মুখের এরকম অবস্থা কেন? এদিকে আসুন।
.
জাভেদ তিন্নির হাতটা টান দেওয়া মাত্রই তিন্নি নিজের দেহকে পাথরের মত শক্ত করে ফেলে।
.
– না,আমি যাব না। আমি এখানে থাকব।
.
– মাথা নষ্ট কি রকম বৃষ্টি হচ্ছে খেয়াল করেছেন? এখানে দাড়িয়ে থাকলে মারা যাবেন।
.
– অসুবিধা কি?
.
– আরে ফাজলামি পরে করেন আগে ভিতরে চলেন।
.
– আমি কি ফাজলামি করি আপনার মনে হচ্ছে? আপনি আমাকে এভাবে জ্বালান কেন?
.
– মানুষত্ব নামের একটা শব্দ আছে জানেন।
.
– না,আমি জানি না।
.
– আচ্ছা বৃষ্টিতে ভিজে হবে কি?
.
– পাপ মুছে যাবে।
.
– কিসের পাপ?
.
– আপনাকে বলা প্রয়োজন মনেকরি না। আর ১০ টা পুরুষের মত আপনিও একই চিন্তা করবেন।
.
– ঠিক আছে না বললে না বলুন, ভিতরে চলুন অন্তত।
.
– নাহ!
.
নিজের ছাতাটা নিচে রাখে জাভেদ। এবার তিন্নির পাশে গিয়ে দাড়ায়।
.
– কি ব্যাপার?
.
– ভাবলাম বৃষ্টিতে একটু ভিজি। আমিও জীবনে কম পাপ করিনি একটু পবিত্র হই।
.
তিন্নি বেশ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে বাসার ভিতর চলে যায়। জাভেদের মুখে একটা মুচকি হাসি। ছাতাটা হাতে তুলে জাভেদও বাসার ভিতর ঢোকে। তিন্নি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে।
.
– আরে এক সেকেন্ড দাড়ান।
.
দৌড়ে জাভেদ সিঁড়ি বেয়ে তিন্নির কাছে গিয়ে দাড়ায়।
.
– কি ব্যাপার, পবিত্র হয়ে এসেছেন?
.
– জানি না।
.
– আরে বাবা দাড়ান।
.
– কি?
.
– অনেক কৌতূহলী একটু বলবেন কি হয়েছে আপনার সাথে?
.
– বলার ইচ্ছা নেই।
.
– আচ্ছা আপনার বাসায় চা খেতে ইচ্ছুক, খাওয়াবেন?
.
– না।
.
– আরে বাবা এত রাগ কেন আপনার?
.
– কারণ আমার পুরুষদের ভাললাগে না। খুব একটা বিশ্বাসও করি না।এত প্রিতী করে কথা বলছেন কেন? আর এত খেয়াল রাখার চেষ্টা করছেন কেন? ঐ তো ফ্লার্টিং নাকি? আরে বাবা আমি তো ক্যারেক্টারলেস চরিত্রহীনা মেয়ে।
.
– মানে!?
.
– আমি প্রেগন্যান্ট, রেইপ ভিক্টিম, লিভ টুগেদার করি, বাবা মায়ের অবাধ্য,সিগারেট টানি আর কিছু জানা প্রয়োজন?
.
জাভেদ অদ্ভুত ভাবে তিন্নির দিকে চেয়ে থাকে।
.
– কি ব্যাপার ওভাবে কি দেখছেন? আহ্লাদ, প্রিতী সব বেরিয়ে গিয়েছে তাই না? প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য একটা অক্ষর মিথ্যা বলিনি।
.
বেশ রেগে গিয়ে তিন্নি উপরে চলে যায়। তিন্নির ভেজা দেহ থেকে ফোটা ফোটা পানি সিঁড়িগুলোকে হালকা ভিজিয়ে দেয়। একেবারে নির্বাক পাথরের মত দাড়িয়ে থাকে জাভেদ। একটা জোরে নি:শ্বাস ছেড়ে হাটা শুরু করে।
.
বাসায় গিয়ে গোসল করে জামা কাপড় পরিবর্তন করে সোফায় বসে থাকে।
.
– তাহলে তিন্নি একজন চরিত্রহীনা?তিন্নি প্রেগন্যান্ট! এজন্য হয়ত এত খিটখিট করে। কিন্তু চরিত্রহীনার সংজ্ঞা কি? কে জানে! কিন্তু মেয়টা হেব্বি ডেয়ারিং অন্যকোনো মেয়ে হলে হয়ত সুইসাইড করত অথবা এবরশন করত। কারো সাহায্য নিতেও নারাজ! প্রচন্ড ডেয়ারিং একটা মেয়ে। কিন্তু আজকে মেয়েটার নাকমুখে যে ভয়াবহ আঘাত, জামা ছিড়ে যাওয়া…. মেয়েটা কি সত্যি কোনো কুকুরের ভিক্টিম হয়েছে নাকি?আহারে! এত ছোট একটা মেয়ে কিন্তু জীবনটায় কত কষ্ট!
.
জাভেদের মাথায় তিন্নির নির্দোষ, মায়াবী চেহারাটা ভাসতে থাকে।
.
– নাহ! মেয়েটাকে একবার দেখে আসি। জানি ইচ্ছামত চিল্লাচিল্লি করবে কিন্তু অভ্যাস হয়ে গিয়েছে অসুবিধা নেই।
.
জাভেদ গিয়ে তিন্নির বাসার দরজায় বেল দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তিন্নি দরজাটা খোলে।
.
– কি ব্যাপার?
.
– কিছু না। এমনি দেখতে এলাম আপনাকে, একজন সাহসী নারীকে।
.
– মানে?
.
– আপনাকে চরিত্রহীনা মনেহয়নি আমার। একজন ডেয়ারিং মেয়ে মনে হয়েছে। একটা ছেলে হয়ে সামান্য বাবা মায়ের সাথে রাগ করে একাএকা থাকি তাতে বুঝতে পারি কষ্ট কাকে বলে। সেখানে একজন মেয়ে হয়ে তাও এত অল্পবয়সে এত কষ্ট সহ্য করেন। আপনি আসলে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আর হ্যা আপনি একজন শক্তিশালী মা হতে পারবেন। আপনাকে এত সাহায্য করতে চেলাম বারবার না করে দিলেন, আপনি আসলে নিজের সন্তানের জন্য যুদ্ধ করতে পারবেন, নাক মুখে এখনো রক্ত জমাট বেধে আছে। আপনার বাসায় ফার্স্ট এইড কিট নেই? আমার আছে, এনে দিব? প্লিজ এবার আর না বলবেন না।
.
জাভেদের কথাগুলো শুনে তিন্নির চোখ থেকে শুধু পানি ঝড়তে থাকে।
.
– আচ্ছা কেঁদে দিলেন কেন? এত শক্ত মেয়ে কাদে নাকি?
.
– নাহ! কান্নাকরি না এমনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি,প্লিজ মাফ করুন।
.
– হাহাহা ক্ষমার কিছু নেই। আপনি চিন্তা করবেন না,আজকে থেকে আপনার যাবতীয় খরচ, যত ধরনের ডাক্তার, হসপিটাল খরচ সব আমার। আপনার সন্তান পৃথিবীতে আসবে কিন্তু কোনো চরিত্রহীনার সন্তান হিশেবে না, একজন বীরাঙ্গনার সন্তান হিশেবে।
.
তিন্নি শুধু চেয়ে থাকে জাভেদের দিকে।
.
“আসলেই কি ছেলেটা মানুষ? ”
.
– ওহ সরি! ফার্স্ট এইড কিটের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। দাড়ান আমি ২-৪ মিনিটের মধ্যে আনতেছি।
.
তিন্নি শুধু চেয়ে থাকে জাভেদের দিকে,তিন্নির চোখ ছলছল করতে থাকে আর নিজের পেটে হালকা হাত বুলাতে থাকে।
.
– সত্যি আমি চরিত্রহীনা না?
.
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here