#চাতকের_তৃষ্ণা_তুমুল_বর্ষা -২
ক্যালকুলাস, ভেক্টর জিওমেট্রি, এলজেবরা, থার্মোডায়নামিকস, নাম্বার গ্রুপিং এইসব হাবিজাবি বই বাদে একটাই গুরুত্বপূর্ণ বই পড়েছেন মিতাভাই, সেটা হলো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর দেবদাস; তাও পুরোপুরি না, ওরকম রসকষহীন বই পড়ার ধৈর্য্য তার হয়নি, তিনি বিরক্ত হয়ে দূর দূর করে হাত ঝেড়েছিলেন। দেবদাসে যার বিরক্তি লাগে সে কিভাবে প্রেমে পড়ে আমি বুঝিনা। অবশ্য এই দুনিয়ায় অসম্ভব শব্দটা শুধু ডিকশনারিতেই পাওয়া যায়!
দেবদাসে, দেবদাস মুখুয্যে, পার্বতির বিয়ে হয়ে গেলে মদ খেয়েছিল আর আমাদের মিফতাহুল ইসলাম মিতাভাই, কনক আপার বিয়ের শোকে মদের অভাবে কফসিরাপ খেয়েছেন দুইবোতল, হাতের কাছে পেয়েছেন তাই। এমন কিছু হয়নি তাতে, ঘুমটা গাঢ় হয়েছিল শুধু। সে তার ঘুম সবসময়ই গাঢ়। বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায় আর হাজার ডাকাডাকিতেও চোখ মেলেনা। রমজানে তাকে সেহেরি করতে ওঠানো একটা যুদ্ধের সামিল। প্রতি রোজায় তাকে সেহরিতে ডেকে উঠানোর পুরস্কার হিসেবে আমাদের ভাইবোনদের জন্য বেশ ভালো রকম বাজেট করা থাকে বড়চাচার। থাকবে না কেন, তাকে ওঠানো কি কম কষ্ট? পানিতে চুবিয়ে রাখলেও ওঠেনা, তুলে দাঁড় করিয়ে দিলেও চোখ খোলে না!
তবে আজন্ম শীত-বসন্তে ভোর ছয়টায় বিছানা ছাড়া মানুষের সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমানোটা ভয়ের আর তা যদি নট নড়নচড়ন হয়ে থাকে সেটা আরও ভয়ের। সেই ভয় ভয়াবহ হয়ে যায় যদি বিছানার উপর খোলা চিঠিতে কেউ ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ লিখে রেখে দেয়। এমন কিছু যদিও তিনি লেখেননি তবে তার মা বিছানায় খোলা নোটবুক আর কলম দেখে বাকিটা ভেবে নিয়েছেন আর ফলাফল ঘুমন্ত মিতাভাইর এই হাসপাতাল ভ্রমণ।
আমি, পিউ আপা, বুবু, মা, মেজচাচি আর মিজাভাই যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম বড়মা তখন বসে বসে বারোভাজা খাচ্ছেন আর মিতাভাই লাজুক মুখে একপাশে কাত হয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে। আমরা যেতেই বড়মা খাওয়া বাদ দিয়ে আঁচল টেনে মুখে দিয়ে কাঁদতে লাগলেন ‘আজরাইল রেখে গেছে আমার ছেলেটারে গো, আমার নামাজ-রোযার ফল দিয়েছে হাতে হাতে। আল্লাহ গো!’ মা আর মেজিচাচি কী স্বান্তনা দেবেন ভেবে পান না।
বড়চাচা এসে হুংকার ছাড়েন কেবিনের ভেতরেই ‘মিজবাউল?’ মিজাভাই কেঁপে ওঠেন। বড়চাচা আবার বলেন ‘গাধার বাচ্চাটারে জিজ্ঞেস কর, কেন গাধাটা এমন করল? আর কফসিরাপ খেতে গাধাটাকে কে বলেছে? ডাক্তার তো ডাক্তার, ওয়ার্ডবয়গুলো পর্যন্ত মুখ টিপে হাসছে আমাকে দেখে।’
মিজাভাই সহ কেবিনে থাকা সবাই শব্দ করা দূরে থাক নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেলো।
বড়চাচাকে সবাই ভয় করে। শুধু আমি বাদে। আমি সবার ছোটো তাই আহ্লাদ পাই। ছোট ছোট করতে করতে আমার আসল নাম পালটে ছুটি হয়ে গেছে। আর ছুটি ডাকটা বড়চাচার দেওয়া। আমি এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে সবাইকে উদ্ধার করলাম। ‘বড়চাচা, ফুচকা খাবো। আসার সময় দেখে আসলাম হাসপাতালের গেইটে ফুচকার গাড়ি। এখন ফুচকা না খেলে আমি মরে যাব।’
বড়চাচার চোখরাঙানি কমল কিন্তু হুংকার থামল না। কিছুটা অবাক হয়ে তিনি বললেন ‘তুই এখন ফুচকা খাবি? সেটা কি এমন জিনিস যে না খেতে পারলে তুই মরে যাবি? তো, মরে যা। গাধার বাচ্চা কফসিরাপ খেয়েছে, তুই মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া খা। কয় বোতল লাগবে? আমি এনে দিচ্ছি।’
আমি নাছোরবান্দা। বড়চাচাকে ঠান্ডা করতে হবে। পরিবারপ্রিয় মানুষ। সবাইকে একসাথে খেতে দেখলে,আনন্দ করতে দেখলে তার মাথা ঠান্ডা হবে। আমি আবার বললাম ‘যানতো বড়চাচা, আমার জন্য ফুচকা আনেন আর এদের সবাইকে চা খাইয়ে আনেন। মুখ শুকিয়ে গেছে সবার। বড়মাকে দেখেন, না খেয়ে কী অবস্থা! হালকা স্ন্যাকস খাইয়ে দিয়েন।’ বড়মা তাড়াতাড়ি বারোভাজার ঠোঙাটা সরিয়ে মুখ করুণ করে তাকালো।
বড়চাচা বললেন ‘তাহলে তুইও চল।’
‘না, আমি থাকি মিতাভাইর কাছে।’
‘কেন, ওই গাধা কি দুধের শিশু যে কোলে নিয়ে বসে থাকবি? ফুচকা খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছিস, একটু পরেই তোর জান কবচ করা হবে, চল পেট ভাসিয়ে খেয়ে আসবি?’
‘আহ, বড়চাচা? এটা হাসপাতাল। আপনি চিৎকার করছেন কেন? আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাব না এখন। বসে বসে জমিয়ে খাব। টক আনবেন বেশি করে। আর এদের সবাইকে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে নিয়েন না। হাসপাতালের ক্যাফেটেরিয়াটা ভালো, ওখানে নিয়ে যান।’
‘ভাব দেখো, যেন রোগী দেখতে হাসপাতালে না, রেস্ট্যুরেন্টে পার্টি করতে এসেছে। কি খাবে, কে খাবে সেইসব মেন্যুলিস্ট দিচ্ছে আমাকে। চল খাবি সব, গুষ্ঠির পিন্ডি খাবি।’ বড়চাচা গজগজ করতে করতে নিয়ে গেলেন সবাইকে। আমি জানি বড়চাচার সাথে কারোরই যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তবুও বড়চাচাকে না বলা যায়না বলেই ভয়ে ভয়ে সবাই গেলো।
আমি মিতাভাইর পাশে গিয়ে বসলাম। ট্রাউজার আর সাদা টিশার্টে কী ভালো লাগছে মিতাভাইকে। আমি যদি উকিল হতাম তো হাইকোর্ট থেকে রায় আনতাম, মিতাভাইকে যেন সবসময়ই সাদা পরে থাকার অর্ডার দেওয়া হয়। আমি মুগ্ধ গলায় ডাকলাম ‘মিতাভাই?’
‘হুম’
‘ও মিতাভাই?’
‘হু?’
‘এটা কী করলেন বলেন তো?’
‘কী?’
‘বলছেন কী? আপনি বুঝছেন না আপনি কী করেছেন?’
‘কী করেছি আমি?’ নড়েচড়ে উঠে সোজা হয়ে বসলেন মিতাভাই।
‘সর্বনাশ করেছেন।’
‘কী সর্বনাশ?’
মিতাভাই ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমার বড় ভালো লাগে ভয় পাওয়া মিতাভাইকে দেখতে।
‘কনক আপার কতবড় ক্ষতি করলেন বলেন তো?’
‘কনকের ক্ষতি? কিভাবে? আমি কনকের কী করেছি? আমিতো কোনোদিন কথাই বলিনি ওর সাথে।’
‘সে তো আমি জানি; আপনি জানেন আর কনক আপা জানে। কিন্তু লোকে কি তা জানে? কনক আপার স্বামি কি তা জানে? তার শশুরবাড়ির লোকেরা কি তা জানে? এইযে রাত পোহালে কনক আপার বিয়ে। এখন আপনি সুইসাইড এটেম্পট করে হাসপাতালে..’
আমাকে মিতাভাই থামালেন ‘আমি মোটেই সুইসাইড করার চেষ্টা করিনি। ঘুম আসছিল না, রকিব বলল কফসিরাপ খেলে ঘুম আসবে, কাশিও ছিলো হালকা, চারচামচ খেলাম তাও কাশি কমলো না তাই আরও এক বোতল এনে নিলাম। থিসিস রেডি করছি, মন বিক্ষিপ্ত ছিলো, একটু ভালো ঘুমের দরকার মনে হচ্ছিল…’ অনেকগুলো কথা একসাথে বলে দম ছাড়লেন।
‘আহাহা সেকথা লোকে শুনলে তো! তারা তো বলবে পাশাপাশি বাড়ি, আপনাদের প্রেম ছিলো, প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই আপনি আর বাঁচতে চাননি বলেই বিষ খেয়েছেন। এলাকায় অলরেডি চাউর হয়ে গেছে। আমাকেই তো গুণে গুণে সাতজনে জিজ্ঞাসা করল।’ একটু মিথ্যাই বললাম, কারণ সত্যি বলে ঘি পাওয়া যায়না তা আমি বেশ জানি।
‘বলিস কীরে ছুটি?’
‘তো? আর বলছি কী? বেচারা কনক আপা! এখন বিয়েটা না ভেঙে যায়? বিয়ে ভাঙলে কত নোংরা নোংরা কথা শুনতে হবে ওকে। সহ্য করতে না পেরে যদি গলায় দড়ি দেয়?’
মিতাভাই অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। আমার কথা তিনি ফেলতেও পারছেন না। গিলতেও পারছেন না। আমি আবার বললাম ‘বা ধরেন বিয়েটা হলো। তাতেও কি রক্ষা হবে। উঠতে বসতে কনক আপাকে আপনার কথা তুলে খোঁটা শুনাবে না ওরা? কত মানসিক অত্যাচার, শারীরিক অত্যাচার, যদি একদিন কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ওর গায়ে?’ কল্পনা করে শিউরে উঠলাম আমি। গায়ে কাঁটা দিয়েছে মিতাভাইরও। তিনি প্রায় ভগ্নগলায় বললেন ‘এখন উপায়? কী করব ছুটি?’
‘একটা উপায় আছে মিতাভাই?’
‘কী? বল?’ কঠিন কঠিন থিওরেম নিমেষে সলভ করে দেওয়া মিতাভাইর দুর্দশা দেখে আমার মায়া লাগল। আহারে!
‘আপনি এখন বিয়ে করে ফেললে একটা উপায় হতো।’
‘কিইই?’
‘হ্যাঁ মিতাভাই। আপনি সবাইকে জানিয়ে দেন যে আপনি যে সুইসাইড করতে গিয়েছিলেন তা কনক আপার জন্য না, অন্য কোনো মেয়ের জন্য। আর সেই মেয়েকে বিয়ে করেন ফেলেন আজই। তাহলে এলাকার সবাইও বুঝবে কনক আপার কোনো দোষ নেই।’
‘আমি বিয়ে করব? এখন?’
‘আর তো কোন উপায় দেখছি না, মিতাভাই।’ উদাস হলাম আমি। ‘আপনার কাছে কোনো সলিউশন আছে? বলেন বলেন? দেখি কোনটা বেটার হয়?’
মিতাভাই অসহায় ভঙ্গিতে ডানেবামে মাথা নাড়ান। কোনো উপায় নেই ওনার কাছে। আমিও চুপ করে ভাবতে থাকি।
মিতাভাই নিরবতা ভাঙেন।
‘এখন মেয়ে পাবো কোথায় ছুটি?’
‘মেয়ে? মেয়ে দিয়ে কী করবেন?’ চমকে উঠি আমি।
‘তুই না বললি বিয়ে করতে?’
‘আমি? আমি কখন বললাম বিয়ে করতে?’
‘এইমাত্রই তো বললি?’
‘বিয়ে করতে বলিনি, বলেছি বিয়ে করলে উপায় হতো। সাজেশন দিয়েছি। দেখেন, বিয়ে আপনার, সিদ্ধান্ত আপনার, জীবন কনক আপার। পরে বলবেন না যেন আমি আপনাকে কিছু করতে বলেছি। করলে করবেন না করলে নাই। আমার কী? যা হবে, কনক আপার সাথে হবে।’
নিরাশায় ভেঙে পড়লেন মিতাভাই। ‘না, না, বিয়ে করব। তবে বিয়ে করার জন্য মেয়েব কোথায় খুঁজব?’
‘তাইতো। এটাও বিরাট সমস্যা।’ গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। ‘এমন কাউকে খুঁজতে হবে মিতাভাই, যে আপনাকে খুব ভালো করে চেনে, আপনি তাকে ছোটবেলা থেকে চেনেন, পরিবারের ভিতর চেনাশোনা আছে। আজ বিয়ে করতে চাইলে আজই দুইপরিবার এক হয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে, চেনাজানা, খোঁজখবর করার দরকার হবে না। যে বিয়ে করবে কিন্তু বউয়ের অধিকার চেয়ে আপনাকে বিরক্ত করবে না, আপনার সবকিছু জানবে, জেনে কোনো সমস্যা করবে না, আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবে… উহ, এমন মেয়ে কোথায় পাবো এখন? না পেলে তো সর্বনাশ….’
মিতাভাইর চোখ চকচক করে উঠল। লাফ দিয়ে উঠে বসলেন। তারপর কুন্ঠিত গলায় বললেন ‘আমাকে বিয়ে কর ছুটি?’
আমি তিড়িং করে লাফ দিলাম। ‘কি বলছেন কি মিতাভাই? পাগল হয়ে গেছেন আপনি? আমি কিভাবে?’
‘তুই, তুই, তুই। একমাত্র তুইই পারবি আমাকে বাঁচাতে। প্লিজ, আমাকে বিয়ে কর।’
‘আপনার মাথা খারাপ, মিতাভাই? আমরা অন্য মেয়ে খুঁজব।’
‘অন্য মেয়ে দরকার নেই। আমাকে বিপদ থেকে বাঁচা ছুটি?’
আমি বড় দুঃখ দুঃখ মুখ করে একটু বেশি তাড়াতাড়ি রাজি হলাম এই অসম্ভব প্রস্তাবে!
মিতাভাই জানলেন না, আমার অতিবুদ্ধি করে সাজানো ছকেই পা ফেললেন তিনি। আমি তার বোকামিতেও মুগ্ধ হলাম। দিনরাত সংখ্যার যুক্তি নিয়ে যার কাজ, যার ধ্যান-জ্ঞানই লজিক, দুইয়ে দুইয়ে চারের ব্যত্যয় হয়না কোনো সমীকরণে সে কিভাবে আমার ছেলেমানুষি বুদ্ধিতে বিভ্রান্ত হলো! রজনীকান্তের রোবোট সিনেমায় চিঠঠি নামের রোবোটটা বলেছিল ‘প্রেম বড় বড় মানুষের স্ক্রু ঢিলা করে দেয়…।’
ঠিক তাই। মিতাভাইর মতো আমারও তো তাই হয়েছে। সবগুলো নাটবল্টু, পার্টস খুলে পড়ে গেছে! সেই কবে একদিন, বই চোখের সামনে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নর্দমার ভেতর পড়ে গেলেন মিতাভাই। আমি ফিরছিলাম স্কুল থেকে। হঠাৎ শুনি মিহিগলায় কে ডাকছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি নর্দমায় নেমে ভুত হয়েছেন মিতাভাই। বুকের কাছে বায়োফ্লুইড ডায়নামিক্স এর বই। এই বইটা তুলতেই নাকি ড্রেনে পড়ে গেছেন। আমি বলেছিলাম ‘মিতাভাই, একটা বইই তো!’ সেই দুর্গন্ধ নোংরার ভেতর দাঁড়িয়েও সে হেসে বলেছিল ‘আসলেই তো। বইয়ের পাতা বা অক্ষর তো মূল্যহীন। দামি তো ভেতরের জ্ঞানটুকু। সে তো আরেকটা বই কিনে নিলেই হতো। কিন্তু খুব ইম্পরট্যান্ট একটা চ্যাপ্টারে এসে আটকে গিয়েছিলাম!’
মাথা থেকে পা অবধি নোংরা, ময়লা কাঁদা মেখে ভুত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল মিতাভাই আমার দিকে ‘ছুটি, তোলনা একটু আমাকে?’ আমি হাতটা বাড়িয়ে টেনে তুলেছিলাম তাকে আর নিজে ডুবে গিয়েছিলাম অসহায় চোখে পিটপিট তাকিয়ে থাকা মানুষটার সরল হাসিতে…
চলবে…
afsana asha
(কপি করা যাবে না, শেয়ার করতে পারেন। )