চড়ুই সংসার, পর্ব:১

#চড়ুই সংসার
১.
আব্বার রিটায়ারমেন্টের পর সংসারে অভাব দেখা দিতে শুরু করলো। সংসারের খরচ জুগিয়ে আমাদের চার ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ চালানো আব্বার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিল। সবচাইতে বেশি টাকা যেত বড় ভাইয়ার পেছনে। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ট্রিপল ই নিয়ে পড়ত ও । সেমিস্টার ফীতে যা টাকা লাগতো তা দিয়ে আমাদের একমাস আরামসে চলে যাবে এমন অবস্থা! যদিওবা ভাইয়ার পর বাকি আমরা তিন ভাইবোন সরকারি স্কুল কলেজ গুলোতে পড়তাম! তবুও, আব্বা একা হাতে এত খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তারউপর বাড়তি কোনো ইনকাম সোর্সও ছিল না আমাদের। আমি সবেমাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি। এডমিশন এক্সামের জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া দরকার। কিন্তু আব্বার অবস্থা অনুধাবন করতে গেলে কোচিংয়ের কথা বলতেও কুণ্ঠাবোধ হয়।
অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম নাহ্ কোচিং করবো না বাসায় পড়েই পরীক্ষা দেবো। কিন্তু এডমিশনের পড়া কি আর যে সে জিনিস! কোনো গাইডেন্স ছাড়া এমনি এমনি বাসায় পড়ে হয়! এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম একা একা হবেনা, কোচিং লাগবেই। কুন্ঠাবোধ দূরে ঠেলে দিয়ে এক সন্ধ্যায় আব্বাকে বললাম, কোচিং-এ যে ভর্তি হতে হতো আব্বা। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হলে তো সেরকম প্রিপারেশন চাই। আমার কথা শুনে আব্বা খানিক নীরব থাকলেন তারপর হাসিমুখে বললেন, কালকেই আমি কোচিং-এ গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসবো মা, চিন্তা করোনা। হবে সব হবে।
আব্বা যে এত সহজে রাজি হয়ে গেলেন, আমি জানতাম বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। বান্ধবীদের থেকে খোঁজ নিয়েছিলাম, কোচিংয়ে ভর্তি ফি- ১১ হাজার টাকা। কয়েকদিন আগে ডিসকাউন্টে যদিও তা ৬ এ নেমে এসেছিল কিন্তু ডেট ওভার হয়ে যাওয়ায় এখন পুরো ১১ হাজারই দিতে হবে।
সবে মাসের দশ তারিখ। আব্বার হাতে কেবল সাড়ে বারো’শ টাকা আছে। কোথা থেকে আনবেন তিনি ১১ হাজার!
ছোটো ভাই-বোন দুটোর পরীক্ষা চলছে। টাকার অভাবে ওদের গাইড কেনা হয়নি। গাইড নেই বলে প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে বেশ পরিশ্রম করতে হচ্ছে ওদের। বই ঘেঁটে উত্তর বের করা আবার রাত জেগে তা খাতায় লিখে মুখস্থ করে পরীক্ষা দেয়া, সহজসাধ্য ব্যাপার কি!
বাচ্চাদুটো ঠিকমত ঘুমায় না বোধহয় একমাস হবে৷
ওদের এত কষ্ট দেখলে আমারই কান্না আসে। মা সারাদিন মুখ কালো করে থাকে। একটুও হাসেনা। মন ভালো না থাকলে হাসি আসবে কি করে! সবসময় আল্লাহর কাছে নালিশ করে, “কি পাপ করেছিলাম প্রভু, এত পরীক্ষা নিচ্ছ”
আমিও ভাবি কি পাপ করেছিলাম আমরা! জীবনটা এত অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে। “অভাব” আমার কাছে একটা অভিশাপ বৈ আর কিছু নয়।

যাহোক কথামতো আব্বা পরদিন কোচিংয়ের খোঁজ নিয়ে আসলেন। এসে থেকেই ওনার মন খারাপ দেখছিলাম। আমি জানতাম এটাই হবে। আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলোনা। একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক কদম পরে একটা শান বাঁধানো পুকুরঘাট। ওতে বসে নিজের ভগ্ন জীবনটা নিয়ে ভাবছিলাম, হঠাৎ রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় করতে করতে কয়েকটা মোটরসাইকেল আসা শুরু হলো। দামি দামি পোশাক পরে সুন্দর সাজগোজ করা ছেলেমেয়ে ওতে চেপে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আমি কয়েক মুহুর্ত নিষ্পলক তাকিয়ে দেখলাম৷ চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে প্রায়ই ছোটোখাটো অনুষ্ঠান হয়। শহর থেকে লোক আসে। কি জমকালো আয়োজন হয় তাদের জন্য! বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপারস্যাপার।
আমাদের আজকাল কেউ দাওয়াত করেনা।না আত্নীয় স্বজন আর না পাড়া প্রতিবেশী। সবাই যেন জানে এদের পক্ষে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। বাড়িতেও তেমন কোনো ভোজের আয়োজন হয়না। তিনবেলা পেট পুরোনো খাবারই যোগানো কষ্টসাধ্য আর তো..
পুকুরপাড়ে আর ভাল্লাগছিল না। মনের ব্যথা মনেই লুকিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম।
গেট পেরুতেই আব্বার সাথে দেখা। মনে হয় খেয়েদেয়ে উঠোনে বসেছেন। আমায় দেখে ডাকলেন,
— মা রে আয় কাছে আয়। পিঁড়ি নিয়ে একটু বস দেখি এখানটায়।
আমার একদমই ইচ্ছে করলো না আব্বার মুখোমুখি হতে। কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। এমনটা হওয়ার কথা নয় তবুও…
আব্বা পুনরায় ডাকলেন,
— প্রজ্ঞা মা?
— আসছি বাবা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্নাঘর থেকে পিঁড়ি নিয়ে এসে বসলাম আব্বার পাশে। আব্বা সোজা হয়ে বসলেন। আমার মাথায় হাত রেখে হাসবার চেষ্টা করে বললেন,
— কোথায় গেছিলি এই ভর দুপুরবেলা? তোর মা তোকে ডেকে ডেকে হয়রান।
— গেছিলাম একটু পুকুরপাড়ে।
— ওহ্ আচ্ছা আচ্ছা।
— কিছু বলবে আব্বা?
— হ্যাঁ তোর ঐ এডমিশনের ব্যাপারটা। কোচিং-এ তো খোঁজ নিলাম। যত টাকা চাচ্ছে! কোচিং ওয়ালারাও এখন ডাকাত হয়ে গেছে রে। তোর ভাইয়ার সময় তো এত টাকা লাগেনি। বছর ঘুরছে আর ওরা ফি ডাবল করে দিচ্ছে।
— তাহলে কোচিং আর হলো না!
— এই দুর্মূল্যের বাজারে…
— অন্ততপক্ষে বই তো এনে দাও আব্বা।
— হ্যাঁ বইয়ের ব্যাপারটা ভেবেছি। তোর মা বলল প্রতীকের ভর্তির সময় যে বইগুলো কিনে দিয়েছিলাম ওগুলো এখনও ওর ঘরে ট্রাঙ্কে রাখা আছে। ওগুলো দিয়েই হবে না মা? প্রশ্ন তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই আসে।
আব্বার কথা শুনে আমার এবার কেন যেন কান্না পেয়ে গেল। কান্না চাপিয়ে বললাম,
— হবে মনে হয়। দেখি সন্ধ্যায় সেজ্যোতির সাথে একটু দেখা করবো। ওর বইগুলো দেখে আসতে হবে।
— হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো বুদ্ধি বের করেছিস। দেখ তো ওর বইগুলো৷ যদি হয় তাহলে তো হলো নইলে প্রতীককে কল করে বলতে হবে, ওখানে পুরাতন লাইব্রেরি থেকে যদি বই টই কমে পাওয়া যায়!
একটু হাসবার চেষ্টা করে বললেন আব্বা।
একটা বই কেনারও পয়সা নেই আমার! কান্নাগুলো কোনোভাবেই চাপিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না আর। তবুও বহুকষ্টে বললাম,
— আব্বা আমি ঘরে যাই?
আমার এমন কন্ঠস্বর শুনে কিছু বুঝলেন কি না আব্বা! মন খারাপ করা গলায় বললেন,
— যা মা। আর কিছু খেয়ে নে। উঠতি বয়স। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম করলে তো সমস্যা ।
— হু
মৃদু জবাব দিয়ে আমি এক ছুটে ঘরে চলে এলাম। দরজা আটকে শান্তিমত কাঁদা যাবে একটু। কাঁদলে একটু হালকা লাগতে পারে। এছাড়া আমার কষ্ট দূর করার আর কোনো উপায় নেই।
________

সেজ্যোতি আমার স্কুল-কলেজ জীবনের সবচাইতে কাছের বন্ধু। চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে দু বাড়ি পরেই ওরা থাকে। চেয়ারম্যান সাহেবের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে ও। ওর বাবা মালয়েশিয়াতে থাকে। মাসে মাসে বিদেশি টাকা আসে ওদের। সেই টাকায় টিভি, ফ্রিজ, স্মার্টফোন সবই কিনে ফেলেছে। নতুন কিছু কিনলেই সেজ্যোতি খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখায়। আমার অবশ্য ভালোই লাগে দেখতে। নিজে কিছু কিনতে পারিনা ওর থেকে দেখেই চোখ জুড়াই।
আমার ওপর সেজ্যোতির দরদটা একটু বেশিই। মাঝেমধ্যে মনে হয় ওর এই দরদ শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে নয়। অন্য ব্যাপার আছে এখানে। আমার ভাইয়াকে ও পছন্দ করে। ভাইয়ার এতে সায় আছে কি না জানিনা তবে ওর অনেক আচার আচরণে মনে হয় ভাইয়ার সাথে কিছু চলে ওর।
এইচএসসির পর পরই সেজ্যোতি আমায় বলেছিল ওর সাথে কোচিং-এ ভর্তি হতে। কিছু টাকা না-হয় ও-ই দিবে। মায়ের ব্যাগ থেকে টাকা সরানোর অভ্যেস আছে ওর। এই করে করে পাঁচ ছয় হাজার টাকা জমিয়ে ফেলেছে। আমি যেন তা দিয়েই ভর্তি হই। ওই টাকার ওর দরকার নেই। স্রেফ অভ্যসবশত সরায়। ফেরত না দিলেও চলবে। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। আমাদের নিম্নমধ্যবিত্তদের টাকাপয়সা না থাকতে পারে কিন্তু মানসম্মান অনেক।
রাজি হইনি বলে সেদিন থেকে ও কথা বলেনা আমার সাথে। অভিমান করে আছে। নিজ দুঃখে মুহ্যমান আমার ইচ্ছেও হয়নি ওর মান ভাঙানোর। তবে আজ যেতে হচ্ছে। কাজ আছে বলেই যাচ্ছি। নিজেকে ছোটো লাগছে, এতদিন যাইনি আজ কাজ বেরিয়েছে তাই যেতে হচ্ছে। কি ভাববে ও আমার সম্পর্কে!
আকাশ কুসুম চিন্তা করতে করতে অবশেষে সেজ্যোতিদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। নতুন রঙ করেছে বোধহয় বাড়িটা। রঙের গন্ধে ম ম করছে পুরো বাড়ি।
সন্ধ্যেবেলা সিরিয়াল দেখতে বসার অভ্যেস আছে সেজ্যোতির মায়ের। ফুল সাউন্ড দিয়ে সে সিরিয়াল দেখে। এইতো দরজা থেকেই শোনা যাচ্ছে টিভির আওয়াজ। ডাকলে শুনবে কীভাবে?
সংকোচ নিয়ে সেজ্যোতির নাম ধরে মৃদুস্বরে একবার ডাকলাম। নাহ্ ওপাশ থেকে কোনো শব্দ নেই। দ্বিতীয়বার ডাকার পাশাপাশি লোহার দরজায়ও মৃদু চাপড় দিলাম একবার। উঁহু এবারেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। মনে হয় আজ দেখা করা সম্ভব নয়।
চলে আসতে নেবো এমন সময় ব্যালকনি থেকে সেজ্যোতির গলা,
— ও কি দুবার ডেকেই চলে যাচ্ছিস?

আমি গলা বাড়িয়ে ওদিকে তাকালাম।
— তুই এখানেই আছিস?
— হ্যাঁ দেখছিলাম তোর কর্মকাণ্ড।
— সাড়া দিবিনা আমার ডাকে?
— এতদিন এলিনা যে। রাগ করেছি তো আমি। দু’বার ডাকলেই সে রাগ পড়বে?

সেজ্যোতির অভিমানী স্বর শুনে হেসে ফেললাম আমি।
— কি করলে রাগ কমবে আপনার শুনি?
— কি আর করবি! যা বলবো তা তো আর শুনবি না। আপাতত ভেতরে এসে পাটিসাপটা খা। নিজ হাতে বানিয়েছি আমি।
— তাই বুঝি? বেশ রান্নাবান্না হচ্ছে আজকাল। ঘটনা কি?
— ঘটনা আর কি! পাত্র দেখছে বাবা। তাই মা রান্নাবান্না শিখে ফেলতে বলছে।
— সে কি এখনই বিয়ে!
অবাক হলাম আমি।
— হু। আয় ভেতরে আয়। তারপর বলছি বাকি কথা।
ব্যালকনির দরজা খুলে দিলো ও। ওপাশ দিয়েই ভেতরে ঢুকে বসতে বসতে বললাম,
— তোর না কত স্বপ্ন! সেগুলো পূরণ না করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবি?
— স্বপ্ন কি বিয়ের পর পূরণ করা যায়না?
— আসলেই যায়!
— যে ছেলেটাকে দেখেছে ও নাকি বাবাকে বলেছে আমায় পড়াবে।
— বিয়ের আগে অনেকেই ওরকম বলে। বিয়েটা হয়ে গেলে আর সে কথা মনে থাকেনা।
— থাকবে থাকবে। থাকতে বাধ্য। ও ছেলে যদি কথার নড়চড় করে তাহলে আমার ভাইয়েরা ওকে ছাড় দেবে?
পিঠের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে এক প্রস্থ হেসে বলল সেজ্যোতি।
— তোর আবার ভাই কোথা থেকে আসলো?
— কেন আসিফ ভাই, ইনতিসার ভাই। বড়আব্বার ছেলেরা। নিজের ভাই নেই তো কি হয়েছে! ওরাই তো আমার ভাই। ছোটোবেলা থেকে নিজের বোনের মতো মানুষ করে এসেছে আমাকে। এখন ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বও ওদের।
— আরে হ্যাঁ ওনাদের কথা তো ভুলেই গেছিলাম।
— ওরা এসেছে তো গতকাল গ্রামে। বাবা পাত্র দেখছে শুনেই ছুটতে ছুটতে এলো।
আবারও হাসলো সেজ্যোতি। বিনিময়ে আমিও হালকা হাসলাম। তাহলে ভাইয়ার সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই? জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো খুব। তারপর কি ভেবে আর জিজ্ঞেস করা হলো না। ও বলল,
— তা কি ব্যাপারে এতদিন পর বান্ধবীর খোঁজ?
— আসলে আমি তোর বইগুলো দেখতে এসেছিলাম। আব্বা বললেন ভাইয়ার বই দিয়েই হবে কি না! এখন তোর বই দেখে যাচাই করতে হবে নতুন সংযোজন হয়েছে কি না!
— সংযোজন তো অবশ্যই হয়েছে। অত আগের বই দিয়ে কীভাবে পড়বি তুই?
— উপায় নেই রে।
— উপায় আছে। বস তো একটু।
পিঠের বাটি হাতে ধরিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল সেজ্যোতি। ফিরলো মিনিটখানেক পর।
এক সেট বই আর কয়েক হাজার টাকা এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
— এই নে তোর প্রিপারেশনের উপায়।
— সে কি! এসব কোথা থেকে এলো!
— কোথা থেকে আবার। আমি বই কেনার সময় তোর জন্যেও এক সেট কিনে রেখেছিলাম।
— আমি এগুলো নিতে পারবো না রে।
— চুপ এগুলো চুরির টাকায় নয়। আমার উপবৃত্তির টাকায় কেনা। সেই এইট থেকে উপবৃত্তি পাই। কখনো খরচ করিনি। প্রয়োজন পড়েনি। তবে আজ যখন সবচাইতে বেশি প্রয়োজন তখন বের করে খরচ করে ফেললাম।
— তোর টাকা আমি কীভাবে..
— ধার হিসেবে নে। পরে চুকিয়ে দিস।
— সম্ভব না রে। এক পয়সা হাতে থাকেনা আমার। এতগুলো টাকা ধার নিলে ফেরানো অসম্ভব আমার পক্ষে।
— কিচ্ছু অসম্ভব নয়। চাইলেই তুই ফেরাতে পারবি।
— কীভাবে?
— চাকরি করে।
— চাকরি কি এখন! চাকরি হতে আরো ৫/৭ বছর বাকি।
— কে বলেছে! এখনই সম্ভব। টিউশন করালেই তো পারছিস।
— টিউশন! এই যোগ্যতায় কে দেবে আমায় টিউশন!
— কে দেবেনা বল! এখন সবাই তাদের ছেলেমেয়েদের শহরের স্কুলে পড়ায়। ওখানে কত কম্পিটিশন। আমাদের এলাকায় তেমন টিচার আছে নাকি! তোদের মত ভালো ভালো স্টুডেন্টরাই তো ওদের একমাত্র সম্বল।
তুই শুধু একবার রাজি হ। আমি দুদিনের মধ্যে কম সে কম তিন চারটা স্টুডেন্ট খুঁজে দিতে পারবো তোকে।
— কিন্তু..
— কোনো কিন্তু নয়। নে তো বই আর টাকাগুলো। আগামীকাল আমার সাথে কোচিং-এ গিয়ে ভর্তি হবি। আর চিন্তা করিস না আমি তোর স্টুডেন্ট খুঁজে দিবো।
— বাড়িতে কি বলবো?
— সেটা তোর কাজ। সব আমিই করে দিবো নাকি হুহ?
— তোর এই উপকার আমি কোনোদিন ভুলবো না রে।
সেজ্যোতির হাত ধরে অশ্রুসজল হয়ে বললাম আমি। ও হাসতে হাসতে বলল,
— হয়েছে হয়েছে আর কান্নাকাটি করে নাকের পানি চোখের পানি এক করতে হবে না।
জানিস তো জীবন যত মুশকিল তত আসান। শুধু আসান উপায় গুলো চট করে ধরে ফেলতে হয়।
সেজ্যোতির মুখে এত পরিপক্ব কথা আমি কোনোদিন শুনিনি। আজ যেন আমার অবাক হওয়ার দিন । সবার জীবনের কঠিন সময়গুলোতে কি এমন সেজ্যোতিদের চট করে পাওয়া যায়?

চলবে,
sinin tasnim sara

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here