জলচক্ষু পর্ব ১

শিমুলকে আমি দু’ বছর আগে বিয়ে করেছি গোপনে। এখন আমার পেটে শিমুলের চার মাসের সন্তান। ভুলে নয় জেনে শুনেই কনসিভ করেছি আমি। কারণ শিমুল গড়িমসি করছিলো আমায় ছেড়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে চলে যেতে। কিন্তু আমি ভাবলাম যদি ওর সন্তানকে আমার পেটে ধারণ করি তবে যদি ওর সন্তানের জন্য হলেও আমার প্রতি মায়া হয় ওর!
কিন্তু শিমুল যখন শুনলো আমি কনসিভ করেছি তখন সে প্রথমে আমায় নরম ভাবে বুঝালো।বললো,’দেখো, বিয়ের কথাই তো এখনও প্রকাশ করতে পারিনি। তাহলে বেবির কথা কীভাবে প্রকাশ করবো! তারচেয়ে বেবিটা নষ্ট করে ফেলো প্লিজ!’
আমি তখন রাগে বললাম,’মরে গেলেও না।আমি আমার বাচ্চাকে কিছুতেই নষ্ট করতে দিবো না!’
শিমুল এবার বেশ রেগে গেলো। রেগে গিয়ে সে আমার গালে ঠাস ঠাস করে চার চারটে চড় বসিয়ে দিলো।
এমনিতেই আমার শরীর আজকাল খারাপ যাচ্ছে।কোনকিছু খেতে পারি না।ঘুম হয় না ঠিক মতো। শরীর দূর্বল।বমি হয় বারবার।
অবশ্য বাঁচা গেলো যে আমি হোস্টেলে আছি এখন। বাসায় থাকলে সর্বনাশ হতো।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। মধ্যবিত্তদের টাকা পয়সার টানা পুড়েন থাকলেও মান সম্মানের টানা পুড়েন নাই। কারণ তারা নিজেদের মান বাঁচাতে সব সময় ব্যাস্ত থাকে।
বাসায় থাকলে এতো দিনে ঠিক ধরা পড়ে যেতাম।আর ধরা পড়ে গেলে মা নিজেই বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতো আমায় কবেই!

শিমুলের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম বক্ষ্মপুত্রের পাড়ে। এখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছে সময়।অগ্রাহায়নের শীতল বাতাস এসে কাঁপিয়ে তুলছে আমার শরীর।
আমি ওর হাতের চড় খেয়ে জলভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’শিমুল,তুমি না আমায় তোমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালো বাসতে তবে এখন আঘাত করলে কী করে আমায়?’
শিমুলের চোখ লাল টকটকে। রাগে এমন হয়েছে বোধহয়।সে এবার তেজমাখা গলায় বললো,’এতো সোহাগ মার্কা কথা আমার ভালো লাগে না। বাচ্চা নষ্ট করবা কি না বলো?’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,’বাবা হয়ে কী করে নিজের সন্তানকে খুন করার কথা বলছো তুমি শিমুল?এই কথাটা বলতে কী তোমার একটুও বুক কাপলো না!’
শিমুল থুউক করে একদলা থুথু ফেললো বক্ষ্মপুত্রের জলের উপর। তারপর বললো,’তোমায় কতবার বলেছিলাম পিল খেতে!খাওনি কেন তুমি?’
আমি ভয়মাখা গলায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম,’ভুল হয়ে গিয়েছিল আমার।ভুলে খাইনি!’
শিমুল এবার হা হা করে হেসে উঠলো। হেসে সে বললো,’ভুল কোন কিছু টিকিয়ে রাখতে নেই। এই বাচ্চাটা আমার না। তোমার ভুলের।একে নষ্ট করে দাও তুমি। তোমার এতে মঙ্গল হবে!’
‘আর যদি নষ্ট না করি?’
‘তবে তোমার পথ তুমি দেখবে।আমি এর দায়ভার নিবো না।আমি এখন ইচ্ছে করলে তোমার চেয়ে সুন্দরী একশো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো। কিন্তু তুমি? তোমার মতো পেট হয়ে যাওয়া মেয়েকে কে বিয়ে করবে?নটি বাড়িতে যেতে হবে বুঝেছো!’
শিমুলের মুখ থেকে শেষ কথাটি শুনে আমার এমন ঘেন্না হলো! সঙ্গে সঙ্গে তখন আমি হড়হড় করে বমি করে ফেললাম। সেই বমির খানিক গিয়ে ছিটকে পড়লো শিমুলের জামার উপর।
শিমুল তখন দূরে ছিটকে গিয়ে বললো,’ছিঃ ছিঃ ছিঃ! তোমার সাথে আর একদন্ড সময়ও আমি নেই।রাবিশ মেয়ে!’
শিমুল কথাটি বলে দ্রুত পায়ে আমায় নদীর পাড়ে একা ফেলে রেখে চলে গেল।
আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।আর কাঁদতে কাঁদতে ভাবতে লাগলাম, এই যে কাউকে না জানিয়ে ভালোবেসে গোপনে বিয়েটা করেছি আমি,আর এখন সন্তানের মা হতে চলেছি, কীভাবে এই মুখটা দেখাবো মানুষদের?
শিমুল তো যেকোন সময় আমায় অস্বীকার করে বসবে।ও যদি অস্বীকার করে আমায় ছেড়ে চলে যায় তখন আমার কী হবে?
.
.
চলবে…………
.
গল্প :- #জলচক্ষু
পর্ব :- ০১
লেখক :- অনন্য শফিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here